এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  ইতিহাস  শনিবারবেলা

  • পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – বসনিয়া হার্জেগোভিনা এবং রেপুবলিকা স্রাপসকা ২

    হীরেন সিংহরায়
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ১৮ মার্চ ২০২৩ | ২০৬১ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মস্তারের সন্ধ্যা



    সেতু বন্ধন

    চারিদিকে সবুজ বনানী। তাকে ঘিরে আছে অজস্র পাহাড়ের সতর্ক প্রহরা: তাদের পদতলে একটি অপরূপ সমতল উপত্যকা। অনেক নিচে গাঢ় নীল জল নিয়ে বয়ে চলেছে ক্ষীণকায়া নেরেতভা নদী। তার ওপরে একটি সেতু জুড়েছে পুবের সঙ্গে পশ্চিমকে – বসনিয়া হারজেগোভিনার উত্তর পূর্বে জেলেনগোরা পাহাড় এলাকায় তার উৎপত্তি – দুশো কিলোমিটার বয়ে এসে মেশে আদ্রিয়াতিক সাগরে। নেরেতভা। ভৌগোলিক অর্থে ইস্তানবুলের বসফরাস সেতু, কাজাখস্তানের আতিরাউতে উরাল সেতুর এপারে এশিয়া ওপারে ইউরোপ। কিন্তু উরাল বা বসফরাস পেরুলে কোন অর্থেই দেশান্তরী হতে হয় না – ইমামের আজান শোনা যায় এপারে ওপারে। কেবল মহাদেশের নাম বদলে যায়।

    দিগন্তজোড়া শ্যামলিমার মাঝে, এখানে এই সেতুর পুবদিকে মসজিদের মিনার, অটোমান স্থাপত্য। পশ্চিমে গিরজের চুড়ো। আজানের সঙ্গে মিশে যায় ক্যাথলিক, অর্থোডক্স চার্চের ঘণ্টা। নুড়ি বাঁধানো সরু পথে, দোকানে বাজারে অগুনতি মানুষের ভিড়। শিশুদের কলরব, বাতাস বইছে সুমধুর। দাঁড়িয়ে আছি এক পাথুরে সেতুর ওপরে, তার নাম স্তারি মস্ত।

    পোলিশ, রাশিয়ান,চেক, সারবো ক্রোয়াট – সকল স্লাভিক ভাষায় মস্ত মানে সেতু, স্তারে বা স্তারি অর্থ প্রাচীন – অতএব প্রাচীন সেতু। লাবেম (জার্মান এলবে) নদীর পাশে জলাভূমিতে বসবাসের সুবিধার জন্য কিছু সাঁকো বানানো হয়েছিল, তাই চেক রিপাবলিকের উত্তরে মস্ত নামে একটি ছোটো শহর আছে। আর পাহাড়ের মাঝে এই সেতু বা মস্তের প্রহরীদের (মস্তারি) সম্মানে শহরের নামাঙ্কিত হয়েছে – মস্তার।



    মস্তারের পথে


    সাড়ে পাঁচশ বছর আগে যখন তুরস্কের অটোমান সুলতানরা এ দেশ দখল করেন, নদীর এপাশে ওপাশে মিলিয়ে পনেরোটি বাড়ি, মাঝে একটি কাঠের ব্রিজ। এর অবস্থানের গুরুত্ব বুঝে তাঁরা এই গ্রামের নাম দিলেন কপরুহিসার (সেতুর দুর্গ) যা মস্তারের তুর্কি প্রতিশব্দ! আদ্রিয়াতিক সমুদ্রতট এবং প্রাচ্যের মালবাহী বাণিজ্য পথের যোগসূত্র এই মস্তারের মহিমা বাড়তে দেখে সুলতান সুলেমান দি ম্যাগনিফিসেনট (মুহতেসাম সুলেমান) আদেশ দিলেন একটি শক্তপোক্ত সেতু বানানোর। ১৫৬৬ সালে স্থপতি মিমার হাইরুদ্দিন স্থানীয় মুকসা খনি থেকে আনা তেনেলিয়া পাথর দিয়ে একটি নিখুঁত অর্ধ বৃত্তের আকারে যে অসামান্য সেতুটি সুলেমানকে উপহার দিলেন সেটি সারা ইউরোপে স্থাপত্যের এক অনন্য উদাহরণ বলে পরিগণিত হয়। শুভ্র প্রস্তর; তাতে লোহা দিয়ে ঠুকলে একটা পরিষ্কার আওয়াজ ফিরে আসে, তার যেন অনেক কিছু বলার আছে! দুশো বছর বাদে তুরস্কের পর্যটক চেলেবি লিখেছিলেন, “বহু দেশ দেখেছি, এত উঁচু সেতু দেখিনি কোথাও। এ যেন রামধনুর তোরণ, পাথরে পাথরে পা দিয়ে শিখর থেকে শিখরে, আকাশে উঠে গেছে”।

    এই প্রাচীন সেতু কয়েক শতাব্দী ধরে শুধু পুব পশ্চিমের বাণিজ্যের পথ খুলে দেয়নি, জীবনে জীবন যোগ করেছে। সাম্রাজ্য বা স্থপতি আজ ইতিহাসের কোনো পাতায় বিলীন, কিন্তু সম্রাটের হৃদয়ের ছবি থেকে গেল বসনিয়ার এই সবুজ প্রান্তরে।

    এখান থেকে বসনিয়া প্রদেশের (তুর্কি সনজুক) বৃহত্তম শহর ও রাজধানী সারায়েভো দু-দিনের পথ, সমুদ্র উপকূল থেকে একদিনের। রুপো নুন এবং নানা খনিজ পদার্থ পাওয়া গেল এই অঞ্চলে, মস্তার হয়ে উঠল এক গমগমে শিল্প বাণিজ্যকেন্দ্র। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী (ক্যাথলিক ও অর্থোডক্স – রোমান এবং সিরিলিক অক্ষরে লেখেন) স্লাভ জাতি বিজেতা শক্তির কাছে মাথা নোয়ালেন, ভাষা ধর্ম ভোজন সংস্কৃতি বজায় রেখে। অটোমান সুলতান তাঁদের ধর্মাচরণে বাধা দেননি – প্রজাদের কল্যাণে বানিয়েছেন গিরজে, সিনাগগে দান দিয়েছেন। বিতর্কের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলি – সেন্ট পিটার্সবুর্গের গিরজের দরোজায় সত্তর বছর গজাল মারা ছিল; পোল্যান্ড রোমানিয়া সহ বহু দেশে কমিউনিস্ট যুগে আপন ধর্ম অনুসরণ করার পথে কত বাধা ছিল, তা প্রত্যক্ষ জানি। অটোমানরা এনেছিলেন আপন শাসন ব্যবস্থা – তাঁদের কানুন (একই শব্দ একই অর্থ) স্থানীয় প্রথা প্রচলনকে অবজ্ঞা করেনি, বরং সামঞ্জস্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সাম্রাজ্যবাদীরা উদার হৃদয় মহামানব হন না, শোষণের জন্য শাসন করেন। অটোমানরা তার ব্যতিক্রম ছিলেন না, স্লাভ দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মাত্র – রাজার দেশের মানুষের সামনে ঘোড়া থেকে নামতে বাধ্য হয়েছেন। রাজধর্ম গ্রহণ করলে ভালো চাকরি জুটেছে (সার্বিয়া বসনিয়া মিলিয়ে অধিকৃত বলকানের দেশগুলি থেকে অন্তত বারোজন ধর্মান্তরিত স্লাভ অটোমান সুলতানদের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন) বলকানের তরুন ক্রিস্টিয়ান ছেলেদের বলপূর্বক অটোমান সৈন্যবাহিনীতে ভর্তি করেছেন (জানুসেরি – ইউরোপের প্রথম স্থায়ী সৈন্যবাহিনী – স্ট্যান্ডিং আর্মি)। তেমনি প্রজার ঘাড়ে ইসলাম চাপাননি সেটাও ঠিক। খাজনা পেয়ে খুশি ছিলেন, প্রজাহিতে তাঁদের ভজনালয় বানিয়েছিলেন, ভাঙেননি (মনে রাখা ভালো, কয়েকশো বছর ধরে অটোমান সুলতানরা একই সঙ্গে মক্কা মদিনায় ইসলামের এবং জেরুসালেমে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের সবচেয়ে পুণ্য তীর্থের রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন – ১৯১৮ অবধি)। হাঙ্গেরি রোমানিয়া ক্রোয়েশিয়া সার্বিয়া স্লোভেনিয়াতে পাঁচশ বছর রাজত্ব করেছেন তাঁরা, সেখানে আজ একটা মসজিদ খুঁজে পাওয়া ভার। ব্যতিক্রম বসনিয়া এবং আলবেনিয়া – কোনো কারণে নাগরিকরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, তুর্কি সেনা সামন্ত সরকারি অফিসার পেয়াদা চাপরাশি পদে যোগ দেন হয়তো কিছু তুর্কিক মানুষ এই প্রদেশ দুটিকে ভালবেসে, খানিকটা তুর্কিক মেশানো স্লাভিক ভাষায় বাক্যালাপ করে বলকান সুন্দরীদের হৃদয় জয় করে সংসার পাতলেন।

    আমার কাছে মস্তার এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। সেতুর দু পাশে ছশো বছরের পুরনো নুড়ি বাঁধানো পথের পাশে ছোটো ছোটো ঝাঁপের ভেতরে অনেক দোকান, পুবে বসনিয়াক – সেখানে পাবেন তুর্কি-অনুপ্রাণিত কারুশিল্পের নানান নমুনা, আয়না চিরুনি থেকে টেবিল ল্যাম্প, পশ্চিমে ক্রোয়াট বিক্রেতা সেখানে পাবেন চামড়ার ব্যাগ, চকমকে ছুরি। তাঁদের ভাষা এক, চেহারা এক। পথে অনেক টুরিস্ট। তাঁরা সেতুর এপার থেকে ওপারে আসছেন-যাচ্ছেন, অলিতে-গলিতে কেনাকাটা করছেন। সারি মস্তের ওপর থেকে নেরেতভার জলে দুঃসাহসী বালকদের ঝাঁপ দিতে দেখছেন (ফতেহপুর সিক্রির বুলন্দ দরোয়াজায় যেমন দেখা যায়)। সব মিলিয়ে একেবারে পিকচার পোস্ট কার্ড!



    লেখকের তোলা ঝাঁপ দেওয়ার ভিডিও


    পোশাকে চেহারায় বোঝার কোনো উপায় নেই – কে ক্রোয়াট কে বসনিয়াক। করাচীর আই আই চুন্দ্রিগড় রোডে সিটি ব্যাঙ্ক অফিসের নজর মাহমুদের সঙ্গে রাস্তায় হাঁটছি, সে আমাকে বলেছিল তোমার কি মনে হচ্ছে তুমি বিদেশে আছো?

    গুরকান এনসারির কথা ওঠে।

    বছর পাঁচেক আগে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্কের ইস্তানবুল অফিসের প্রথম ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এথেম তুনচেল একদিন ফোন করে বললেন হালে একটি ছেলে তাঁর কাছে কাজের জন্য দেখা করতে এসেছিল। ছেলেটি ভালো – বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে তুর্কি নৌবহরে ঢুকেছে, সেখানে মন লাগে না তার। ইস্তানবুলে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য লোক খুঁজছিলাম কিন্তু উচ্চশিক্ষিত এমবিএ যে রাখি না, তা এথেম জানতেন! ছেলেটিকে বলেন সরাসরি আমাকে লিখতে। গুরকান তার সিভি-র সঙ্গে যে ছবি পাঠায়, সেটি তার নৌবাহিনীর পোশাকে! সে শুধু কাজেই যোগ দেয়নি, প্রভূত উন্নতি করেছে। এখন সে ব্যাঙ্কে রীতিমত সুপ্রতিষ্ঠিত। আমার কাছে টিমের সবাই ছিল সন্তানবৎ, সকলের বাড়ির, হাঁড়ির খবর নিই। কেহ একা থাকিও না – এই আপ্ত বাক্য আউড়ে বিয়ের ব্যাপারে তাদের কী চিন্তাভাবনা জানতে চাই। আমার বয়েসের এই সুবিধে – পিতৃসুলভ স্নেহে সবাইকে যা খুশি জিজ্ঞেস করা যায়! গুরকান তুরস্কের দক্ষিণে ইজমিরের (গ্রিক স্মিরনা) ছেলে – বাবা জাজ, কাকা সেনাবাহিনীর কর্নেল। সে বলে, বাবা মা কনে খুঁজে যাচ্ছে, গুরকানের পছন্দ হচ্ছে না। রিপোর্ট দেয় মাঝে সাঝে প্রেমে পড়ে হাবু ডুবু খেয়ে আবার উঠে এসেছে ডাঙ্গায়। মনে মনে সে ইউরোপিয়ান বালিকা খুঁজছে যাকে মায়ের পছন্দ হওয়া একেবারে নামুমকিন! মস্তার থেকে ফিরে বলেছিলাম, দেলিকানলি (বাছা) তুমি একবার সেথায় যাও। বসনিয়াক কন্যা দেখতে, পোষাকে, আচরণে ইউরোপিয়ান কিন্তু পাঁচ ওয়ক্ত নমাজ পড়ে, নিষিদ্ধ বস্তু ভক্ষণ করে না। তুর্কি ভাষা তার একেবারে অচেনা নয়, তোমার মায়ের সঙ্গে বাক্যালাপের সুবিধার্থে বাকি টুকু শিখে নেবে!

    আমার সুপরামর্শ গুরকান কানে তোলেনি – শুনি এখনও সে দিনের বেলা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ফ্রাঙ্কফুর্টে কাজ করে, সন্ধেবেলায় নিঃসঙ্গ নায়কের মতন শহরের বেরগারস্ত্রাসে থেকে জাখসেনহাউসেনের বিভিন্ন বারে তরল পদার্থের বিক্রি বাড়ায়।

    জানি, আজকের এই উজ্জ্বল দিনে এইখানে দাঁড়িয়ে নয়ের দশকের বলকান গৃহযুদ্ধ এবং ভেঙে পড়া শ্বেতপাথরের সেতুর ছবিটি কল্পনা করা শক্ত, কিন্তু এখানেই শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপীয় মূল ভূখণ্ডের সবচেয়ে নির্মম ধ্বংস এবং হত্যা লীলা।



    মস্তার - ভুলিও না ১৯৯৩


    স্লোভেনিয়ান মাতা এবং ক্রোয়াট পিতার সপ্তম সন্তান ইওসেপ ব্রোজ ‘টিটো’ জন্মেছিলেন লুবলিয়ানা (স্লোভেনিয়া) আর জাগ্রেবের (ক্রোয়েশিয়া) মাঝামাঝি কুমরোভেচ গ্রামে। স্লোভেনিয়াতে দাদু দিদিমার কাছে বাল্যকাল কাটিয়েছেন – স্কুলের সীমা পার হতে পারেননি। জীবিকা নির্বাহের জন্য নানান বৃত্তি অবলম্বন করে ভিয়েনা, মিউনিক, জাগ্রেব ঘুরেছেন, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অনুগত সৈন্য হয়ে প্রথম মহাযুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে যুদ্ধ বন্দি এবং ওমস্কে নির্বাসিত হয়েছেন, সেখানে তাঁর প্রথম প্রণয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পার্টিজান বাহিনী গড়ে ইয়ুগোস্লাভিয়া থেকে জার্মানদের বিতাড়িত করেছেন কোনো বিদেশি শক্তির শক্তির সাহায্য ছাড়াই। রাশিয়াতে বন্দি দশায় সাম্যবাদে শিক্ষা পেয়ে সেটি আপন দেশে প্রয়োগ করেছেন কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে গলাগলি করেননি – ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরিতে রাশিয়ান অভিযানের বিরোধিতা করে কমিউনিজমের অন্য চেহারা তুলে ধরেন। নেহেরু, নাসের টিটো একটি অপক্ষপাতী ফ্রন্ট স্থাপন করেন (নন অ্যালাইনড মুভমেনট)।

    সাতের এবং আটের দশকে আমার জার্মান বন্ধু অরটউইন ও তার স্ত্রী এলিজাবেথ নিয়মিত ক্রোয়েশিয়ার সমুদ্রতটে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে গেছে। ফ্রাঙ্কফুর্ট সমীপবর্তী টাউনুস পাহাড়ের নয় আনসপাখ থেকে বেরিয়ে একটানা (ইন আইনেম তসুগ) গাড়ি চালিয়ে অস্ট্রিয়া পার হয়ে ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে পৌঁছেছে – “এ আর এমন কী, মাত্র আটশো কিলোমিটার”! অথচ ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে পূর্ব জার্মান সীমান্ত দেড়শ, পোলিশ চারশ, চেক সাড়ে তিনশ কিলোমিটার – কিন্তু কমিউনিস্ট আমলে আমরা কেউ যাইনি। এ সব দেশে যাবার ঝক্কি অনেক। ভিসা লাগে: চেক ভিসা অফিস ফ্রাঙ্কফুর্টের দুশ কিলোমিটার পশ্চিমে কলোনে, পোলিশ ভিসা পেতে আরেকটু দূরে ‘বন’ যেতে হবে। পূর্ব ইউরোপে ইয়ুগোস্লাভিয়া একমাত্র দেশ, যেখানে পশ্চিমের মানুষের ভিসা লাগত না (আমাদেরও নয়)। ইয়ুগোস্লাভিয়ার নাগরিকদের পক্ষে দেশত্যাগ কঠিন হলেও সম্ভব ছিল – আমার ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রবাসকালে চেক পোল্যান্ড রোমানিয়া থেকে পলাতক মানুষ দু-একজন দেখিনি তা নয় – তাঁদের দেশে ফেরা অসম্ভব ছিল। সহকর্মী বা প্রতিবেশী হিসেবে ইয়ুগোস্লাভ পেয়েছি যারা ছুটিতে আপন দেশে যেতেন।

    অন্তত ছটি ভাষায় (জার্মান ও রাশিয়ানসহ) স্বচ্ছন্দ ইওসেপ ব্রজ টিটো ক্যাথলিক ক্রোয়াট, প্রটেস্টাণ্ট স্লোভেন, মুসলিম বসনিয়াক, অর্থোডক্স সার্ব, মনটিনেগ্রিন, ম্যাসিদোনিয়ানকে ছলে বলে কৌশলে এক ঘাটে জল খাওয়ালেন – ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, বসনিয়া হারজেগোভিনা, মনটি নিগ্রো, ম্যাসিদোনিয়া, সার্বিয়া এই ছটি রিপাবলিকের ভাষা, জাতীয়তা, ধর্মের সীমারেখা মেনে নিয়ে সংবিধান তাদের দিল পতাকা, সরকার; এমনকি সংযুক্ত ইয়ুগোস্লাভিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার অধিকার – প্রায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্লু প্রিন্ট। অর্থাৎ থাকো আপন মনে, আপন কোণে কিন্তু আসল কলকাঠি নাড়া হবে সার্বিয়ার এবং দেশের রাজধানী বেলগ্রেড থেকে। সকলেই নিজেকে স্বাধীন মনে করছে করুক, ক্ষতি নেই কিন্তু আসল ক্ষমতা বড়ো ভাই সার্বিয়ান এবং ইয়ুগোস্লাভ কমিউনিস্ট পার্টির হাতে। ইয়ুগোস্লাভ জাতীয় সামরিক বাহিনী মোতায়েন সর্বত্র। ঝামেলা রয়ে গেলো বসনিয়াতে – সেখানকার চল্লিশ লক্ষ অধিবাসীর অর্ধেক মুসলিম বসনিয়াক, তিরিশ শতাংশ ক্রোয়াট বাকি সারবিয়ান – সমজাতীয়তার ভিত্তিতে সে রিপাবলিক সৃষ্টি হয়নি। অন্য সমস্যা হল সারবিয়ান রিপাবলিকের অন্তর্গত দুটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলকে নিয়ে – দক্ষিণে, আলবানিয়ার গা ঘেঁষে কসোভো (৯৫% মুসলিম) এবং উত্তরে ভয়দোভিনা (৯০% অর্থোডক্স)। এদের আলাদা পতাকা তুলতে দেওয়া না হলেও নিজেদের আইন আদালত বিচার ব্যবস্থা রইল। টিটো বেঁচে থাকতে এই ভাগ বাঁটোয়ারার বিরুদ্ধে খুব একটা সশব্দ প্রতিবাদ হয়নি, এমনকি তিনি নিজেকে আজীবন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলেও। টিটোর মৃত্যুর (মে, ১৯৮০) পরেও কমিউনিস্ট পার্টির শাসন চলল যথা পূর্বম তথা পরম। কিন্তু ১৯৮৯ সালের পরে ভাঙ্গা বার্লিন দেওয়ালের ফোকর দিয়ে আসা মুক্তির আলোয় উচ্চকিত ইয়ুগোস্লাভ পরিবারে ভাঙন ধরে। ১৯৯০ সালের প্রথম মুক্ত নির্বাচনে ছটি রিপাবলিকের নানান পার্টি ক্ষমতায় এসে সার্বিয়ার নিরঙ্কুশ শাসন মেনে নিতে রাজি হয় না – সাম্যবাদী আদর্শ আর তাদের কবচ মাদুলি নয়। সদ্য স্বাধীন সোভিয়েত রিপাবলিকগুলির মতন কাস্তে হাতুড়ি বর্জিত আপন পতাকা ওড়াতে চাইল তারা। ইতিমধ্যে নিজেকে আজীবন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট স্লবোদান মিলোসেভিচ – তিনি রুখে দাঁড়ালেন – যেতে নাহি দিব! স্লবোদান কথার অর্থ স্বাধীনতা, এ অধিকার কেবল তাঁর, সেটি তিনি অন্য কাউকে দান করবেন না। শুধু তাই নয় কসোভো এবং ভয়ভোদিনার সামান্যতম স্বাতন্ত্র্যটুকু বেলগ্রেডে স্থানান্তরিত হয়ে গেল!

    ২৫শে জুন ১৯৯১ স্লোভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে। বেলগ্রেডের আদেশে ইউগোস্লাভ জাতীয় সামরিকবাহিনী গুলি ও বোমা বর্ষণ করে তার প্রতিরোধে নামে। চার বছরের ইয়ুগোস্লাভ গৃহযুদ্ধের আরম্ভ।*

    দুবাইতে (১৯৯২) এই প্রসঙ্গে গল্প হয়েছিল এমিরেতস ব্যাঙ্কের জর্জ বুরসালিয়ানের সঙ্গে। জর্জ আর্মেনিয়ান। ইয়ান দিয়ে যে নাম শেষ হয় তার আর্মেনিয়ান হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা নব্বুই শতাংশ এবং কোন কালে তাঁর পরিবার তুরস্কের বুরসা শহরের বাসিন্দা ছিলেন তাই বুরসালিয়ান! তিনি আমাকে বলেছিলেন, “বলকানের হানাহানি সহজে থামবে না। আয়ার্ল্যান্ড ইজরায়েল বা আপনাদের দেশভাগের পেছনে ধর্মের ভূমিকা, যতদূর জানি, খুব বড়ো ছিল। এখানে জাতীয়তাবাদেরও একটা জবরদস্ত রোল আছে – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্রোয়েশিয়ার নাৎসি সমর্থক উশতাসে সরকার সার্ব মেরেছে, টিটোর পার্টিজান দিয়েছে পালটা মার, ধর্মের কথা ভুলে বসনিয়াক, ক্রোয়াট মিলে সার্বদের বাঁচিয়েছে,পরে মার খেয়েছে। চল্লিশ বছরের আপাত শান্তি কালে একটা আগুন টিম টিম (ফ্লিকারিং) জ্বলেছে – এবার সেটাই ঘটাবে অগ্নিকাণ্ড। অনেকদিনের পুরনো হিসেব জমা আছে। এবার পারস্পরিক শোধ তোলার লড়াই” (এ ওয়ার অফ সেটলিং দি ওল্ড স্কোরস)।

    কমন এনিমি সারবিয়ানদের বিরুদ্ধে ক্রোয়াট এবং মুসলিম বসনিয়াক বন্দুক তুলে নেয় ১৯৯২ সালে-সার্বরা পিছু হটলে আরেক বিচিত্র পরিস্থিতির উদ্ভব হল। মস্তারের উত্তরে নেরেতভা নদীর কুল বরাবর বেশির ভাগ বসনিয়াক ক্রোয়াটদের বাস। ইতিমধ্যে স্বাধীন দেশ ক্রোয়েশিয়া ভাবলে সার্বরা দুর হয়েছে, এই ডামাডোলের বাজারে আরও বিঘে দুই জমি নিয়ে একটা বৃহত্তর ক্রোয়েশিয়া বানিয়ে নিলে কে আর বাধা দিচ্ছে। অতএব যাদের কাঁধে কাঁধ দিয়ে তারা লড়াই করেছে, সেই বসনিয়াক মুসলিমদের দিকে ক্রোয়েশিয়া ঘোরাল বন্দুকের নল – মস্তারের অবরোধ চলল দেড় বছর। কয়েকশো বছরের ভাই বন্ধু প্রতিবেশী এবার সম্মুখ সমরে সমবেত।

    ক্রোয়াট আক্রমণের সবচেয়ে মর্মান্তিক দিন ৯ নভেম্বর ১৯৯৩।



    মস্তার সেতু ধংস - ৯.১১.৯৩


    কয়েক দিনের অবিরাম অস্ত্রের আঘাত সামলে দাঁড়িয়ে ছিল যে সারি মস্ত, ক্রোয়াট বোমা সেদিন তার টিকে থাকাটা শেষ করে দেয়। পূর্ব বিচ্ছিন্ন হল পশ্চিম থেকে: ইস্ট ইজ ইস্ট, ওয়েস্ট ইজ ওয়েস্ট! ৪২৭ বছরের ইতিহাস সেদিন ভেঙে পড়ল নেরেতভার নীল জলে। ৪৫৬টি পাথরের ব্লক দিয়ে তৈরি সারি মস্ত ইঞ্জিনিয়ারিং মারভেল বলে পরিচিত ছিল – এটিকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো সিংগল আর্চ সেতু বলে মানা হয়েছে বহুদিন। আজকের মস্তারে ইস্ট ওয়েস্ট বুলেভারের দু-পাশে স্মৃতিচিহ্নরূপে (বার্লিনের কাইজার ভিলহেলম গিরজের মতন) অথবা অর্থের অভাবে সারানো হয়নি এমন অজস্র বুলেট এবং বোমায় বিদ্ধ বাড়িঘর দেখবেন। মানুষজন সাম্প্রতিক ইতিহাসের গল্প করতে সংকুচিত হন না – শুনেছি সারি মস্ত ভেঙে পড়লে তাঁরা কেঁদেছিলেন শিশুর মত। হয়তো এটুকু জেনে ভালো লাগবে, যে ৬ জন এই বোমাবাজির জন্য চিহ্নিত হন তাদের দীর্ঘ দিনের কারাবাস হয়।

    আজ দুব্রোভনিকে পুরোনো শহরের গলিতে ক্রোয়াটরা দেখান ঠিক কোনখানে মনটি নেগ্রিন বিমান বহর বোমা ফেলেছিল। সহজেই ভুলে যান তাঁদের বোমার অস্ত্রলেখা দেড় দশক বাদেও মস্তারে দেওয়াল চিত্র রূপে বিরাজ করছে।




    মস্তার পুব দিক



    সেতুর ওপারে শত্রু

    ১৯৯৪ সালে ওয়াশিংটনে স্বাক্ষরিত যে চুক্তি অনুসারে বসনিয়ার যুদ্ধ শেষ হল, তাতে বসনিয়া হারজেগোভিনাকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করা হয় কিন্তু সেখানে বসবাসকারি বারো লক্ষ সারবিয়ানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র স্বায়ত্ত শাসিত প্রদেশ - রেপুবলিকা স্রাপস্কা স্থাপিত হয়েছে -অব মিল জুলকে রহো।

    ৪৫ লক্ষ মানুষের এই দেশ ইতিমধ্যে ব্রাসিলে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে – একই রঙের জার্সি গায়ে এগারোজন ফুটবল খেলোয়াড় মারাকানা স্টেডিয়ামে পরস্পরের কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছে।

    আর সারি মস্ত?

    শুভচিন্তক মানুষেরা একত্র হলেন একদিন। যা গেছে, তাকে ফেরানো যায় না পূর্বের মহিমায়? ফ্রান্স ইতালি হল্যান্ড তুরস্ক এবং ক্রোয়েশিয়া (হয়তো পাপস্খালনের শুভ বাসনায়) অকাতরে অর্থদান করে। হাঙ্গেরিয়ান ডুবুরি নেরেতভার জলের অতল থেকে তুলে আনলেন অনেক পাথর, নিকটবর্তী মুকোসা খনি থেকে আনা হল তেনেলিয়া পাথর। এগারো বছর বাদে পদচারীদের জন্য খুলে দেওয়া হল সেই সেতু – তিরিশ মিটার লম্বা, পাঁচ মিটার চওড়া, নদীর জল থেকে আঠাশ মিটার উঁচুতে।

    যতই খুঁটিয়ে দেখুন, অটোমানদের বানানো সেতুর সঙ্গে কোনো পার্থক্য চোখে পড়বে না।




    সারি মস্ত কি শুধুই এক অনন্য স্থাপত্যের উদাহরণ? সেতুর উদ্বোধনের দিনে আবগের বন্যা বয়ে যায় – এ কোনো সামান্য সেতু নয়, বিভিন্ন ভাষা ধর্ম সংস্কৃতির এক আশ্চর্য মেলবন্ধনের দৃষ্টান্ত।

    সারি মস্ত আবার তৈরি হয়েছে – কিন্তু সে কি পারে মানুষকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনতে? তিন বছরের গৃহযুদ্ধ বিনষ্ট করেছে পাঁচশো বছরের সহাবস্থান। ক্রোয়াট ও বসনিয়াক ছেলেমেয়েরা একই স্কুলে যায়, কিন্তু আগের মতো এক ঘরে একই ক্লাসে বসে না: সিলেবাস এক, ভাষা এক। কিন্তু ক্রোয়াট ও বসনিয়াক ছেলে মেয়েদের স্কুলে ঢোকার গেট আলাদা – মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। ক্লাসরুম আলাদা। এক নতুন বৈষম্য।

    ইউরোপে বাস করেও বলকান যুদ্ধ সম্বন্ধে জেনেছি খুব সামান্য। আজ স্বীকার করতে কোনো লজ্জা নেই – কোথাও একটা উদাসীনতা ছিল আমাদের, সারা পশ্চিম ইউরোপে। বালটিক দেশগুলো, পোল্যান্ড চেক হাঙ্গেরি রাশিয়া ইস্তক খুলে গেছে, সেখানে বেওসার জন্য ছুটেছি। সকল টিভি ক্যামেরা সেখানেই। মস্কো ওয়ারশ-র ফ্লাইটে জায়গা মেলা ভার। ওই দূর বলকানে কোথায় কী হচ্ছে তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কী প্রয়োজন?

    আজ জানতে চাই। আমার কাছে হয়তো স্বচ্ছন্দ বোধ করেছেন হোটেলের কনসিয়ারজ, পুরোনো শহরের বার কিপার, সরু পথের পাশের দোকানি। শুনেছি তাঁদের মন্তব্য। সারি মস্ত নিয়ে আমার আবেগ উজাড় করে গল্প ফাঁদতে গিয়ে শুনেছি, “কিছু মনে করবেন না, আমি ওই নতুন সেতুতে কখনো পা দিইনি। আমাদের (বক্তা ক্রোয়াট) ওদিকের মুসলিম পাড়ায় আবার কী কাজ?” একই মন্তব্য শোনা যায় পুবের বসনিয়াক পাড়ায়। রোদিকা একটা দোকানে তুর্কি লন্ঠন দেখছিল খুব মনোযোগ দিয়ে। দোকানির সঙ্গে গল্প করছি – যে গোটা দশেক দু-চারটে তুর্কি শব্দ জানা আছে, তার দু-চারটে ব্যবহার করে একটু বাহাদুরি (সেটাও তুর্কি শব্দ) নিচ্ছি। তাঁকে বললাম, ওপারে শুনি তাঁরা এদিকে আসেন না, আপনারাও হয়তো ওপারে যান না। তাহলে সারি মস্তের ওপরে এত ভিড় কেন?

    তিনি মৃদু হেসে বললেন, এফেন্দি (মশায়), এরা সকলেই টুরিস্ট, আপনার মতন।



    মস্তার পশ্চিম


    রেলিঙে ভর দিয়ে নেরেতভার নীল জল, চারিদিকে পাহাড়ের দেওয়ালের দিকে চেয়ে মনে হয়েছিল এই সেতু, এই সারি মস্ত, কেবল মশলা রুপো নুনের পসরা নয়, একদিন পূর্বকে এনেছিল পশ্চিমের কাছে। প্রথম পরিচয়ের পরে করমর্দনের জন্য পশ্চিম তার হাত বাড়ালে পূর্ব তাকে হয়তো আপন আলিঙ্গনের বন্ধনে বেঁধেছিল। আজ এই সেতু কাউকে কাছে আনে না। ক্রোয়াটরা থাকে তাদের পাড়ায়, বসনিয়াকরা তাদের।

    সেতুর ওপারে শত্রু?

    পুনশ্চ: যদি কখনো আমার কাহিনী পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়, তার পরিশিষ্টে ১৯৯১-১৯৯৪ সালে বলকান যুদ্ধের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখার বাসনা আছে।



    ক্রমশ:

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৮ মার্চ ২০২৩ | ২০৬১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit | 193.116.***.*** | ১৯ মার্চ ২০২৩ ০২:৩৭517555
  • অসাধারণ। ব্রিজ টার ছবি দেখেছি শুধু অনেক পোস্টে।এতো  ইতিহাস কিচ্ছু জানতাম না। বলকান কনফ্লিক্ট নিয়েও দু একটা হলিউড মুভি অব্দিই দৌড়। সমৃদ্ধ হলাম। 
     
    এরকম স্ট্রাগল এর মধ্যে দিয়েও  ক্রোয়েশিয়া দুনিয়ার অন্যতম সেরা টেনিস প্লেয়ার , ফুটবল টিম সব তুলে আনছে। অসাধারণ স্পিরিট। 
  • Ranjan Roy | ২১ মার্চ ২০২৩ ১০:২৪517715
  • মাথা নোয়ালাম।
  • শিবাংশু | ২১ মার্চ ২০২৩ ২২:৩৪517727
  • কয়েক বছর ধরে খুব নিকৃষ্ট পাঠক হয়ে গেছি। নিজস্ব লেখালেখির প্রয়োজনের বাইরে বিশেষ কোনও মনোযোগী পাঠ হয়ে ওঠে না আর। কিন্তু আপনার সব লেখাই আপনি আমাকে  দিয়ে পড়িয়ে নিতে পারেন।  বিষয় ও লেখার গুণে। সন্ধানী মনস্কতায়। 
     
    শুধু সতীর্থ বলেই নয় , এক প্রিয়তম লেখক আলীসাহেবের আশীর্বাদ আপনার লেখায় খুঁজে পাই। অভিবাদন রইলো, 
  • | ২৬ মার্চ ২০২৩ ১১:৫৮517865
  • মাত্র তিন বছরে ধ্বংস হয়ে গেল কয়েকশো বছরের সহাবস্থানের ঐতিহ্য। 
    ভারতও সম্ভবতঃ এইরকম বিছিন্ন হওয়ার দিকেই এগোচ্ছে। 
  • সিএস | 49.37.***.*** | ২৬ মার্চ ২০২৩ ১৩:১৫517872
  • এই অঞ্চলটিতে এরকম নদী, তার ওপর ব্রীজ, দুইদিকের মানুষ আর ক্রমশঃ তাদের মধ্যে ভাঙন, সেরকম আরো আছে না ?

    এককালে ইভো আন্দ্রিচের The Bridge On the Drina উপন্যাসটা পড়ার ইচ্ছে হয়েছিল। সেও এক নদী, তার ওপরে অটোমান সাম্রাজ্যের সময়ে তৈরী হওয়া ব্রীজ, আর মানুষজনের গল্প। ক্রমশঃ সংঘাত আর ধ্বংস।

    https://en.m.wikipedia.org/wiki/The_Bridge_on_the_Drina

    https://en.m.wikipedia.org/wiki/Mehmed_Pa%C5%A1a_Sokolovi%C4%87_Bridge

    হীরেনবাবুর লেখাটা একঝলক দেখে মনে হয়েছিল দ্রিনা নদীর কথা লিখছেন, তারপর দেখলাম না, এ আর নদী।
  • জয় | ২৬ মার্চ ২০২৩ ১৪:০৩517878
  • আমার দুই ছাত্র ছাত্রী বুলগেরিয় ভাসিল আর টার্কিশ নেসমিয়ে, একসাথে মন দিয়ে ডাক্তারী শিখছে। একজন জিপি আর একজন সার্জন হবে। চমতকার মানুষ দুটি। বলে আমাদের সব প্রায় এক। 
    কি অসাধারন লেখা হীরেনবাবু। আপনার লেখা বুঝি নেরেতেভার স্রোতের মতই তরতর করে বয়ে চলে- মনে হয় পা ডুবিয়ে বসেই থাকি। মন ভরে না। 
    ব্রাভো! আফ্রিন!!
  • হীরেন সিংহরায় | ৩১ মার্চ ২০২৩ ১০:২৬518050
  • সি এস

    ইভো আন্দ্রিচের নাম শোনা ছিল এবার বইটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।  দ্রিনা নদীর ধারা অনেকখানি সার্বিয়া ও বসনিয়া হার্জেগোভিনার সীমান্ত  নির্দেশ করে  -এপার ওপার তবে অনেক রক্তপাত ও জাতিগত পরিশোধনের পরে ভিসেগ্রাদ এখন রেপুবলিক স্রাপস্কা ! ভিসেগ্রাদের সেতুর প্রধান স্থপতি মিমার সিনান ছিলেন মস্তারের নির্মাতা মিমার হায়রুদ্দিনের শিক্ষক ! দুটো সেতু তৈরি হয়েছে প্রায় একই সময়ে।  পারিবারিক কারণে বলকানকে চেনা- আর সে চেনা আমার ফুরাবে না মনে হচ্ছে ! সঙ্গে থাকুন এখনও অনেক গল্প বাকি।
     
  • হীরেন সিংহরায় | ৩১ মার্চ ২০২৩ ১০:৩০518051
  • জয় 
    ধন্যবাদ ! আমার একই অভিজ্ঞতা হয়েছে । সিটি ব্যাঙ্ক বুলগারিয়ার প্রথম কর্পোরেট ব্যাঙ্ক হেড ছিল ইস্তানবুলের ছেলে আলপার ইউকসেল ( তার গল্প আসবে বুলগারিয়া  পর্বে ) । সে ও  আপনার ভাসিল আর নেসমিইয়ের মতন বলেছিল- এতো মিল ! 
  • যোষিতা | ৩১ মার্চ ২০২৩ ১০:৫০518052
  • হীরেনবাবু 
    স্রাপসকা কোন দেশ? 
    ক্রোয়েশিয়া তো হ্রভাৎস্কা। Hrvatska.
    ওদেশ ঘুরে এসেছি, ওখানেও সকলে হ্রভাৎস্কা ই উচ্চারণ করে। 
  • যোষিতা | ৩১ মার্চ ২০২৩ ১০:৫৬518053
  • হর্ভাৎস্কা
  • হীরেন সিংহরায় | ৩১ মার্চ ২০২৩ ১২:১৮518059
  • যোষিতা

    ইয়ুগোস্লাভ গৃহযুদ্ধের প্রারম্ভে  রেপুবলিক স্রাপস্কা সূচিত হয়, সার্বিয়ার বাইরের সার্বদের স্বার্থ রক্ষার্থে । সেটার আন্তর্জাতিক অনুমোদন ছিল না। প্রায় চার  বছরের রক্তপাত ও জাতিগত শুদ্ধিকরনের শেষে ডেটন ( ওহাইও ) শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ( ১৯৯৫) -  তার শর্ত মোতাবেক যে সার্বভৌম রাষ্ট্র সংগঠিত হয়েছে তার সম্পূর্ণ নাম – সংযুক্ত বসনিয়া হারজেগোভিনা ও রেপুবলিকা স্রাপস্কা।  যদিও আমরা তাকে কেবল বসনিয়া হার্জেগোভিনা নামে চিনি, সে নামেই তারা ফুটবল খেলে! দেশের উত্তরে এবং পূবে এগারো লক্ষ অধিবাসী নিয়ে স্রাপস্কা ( সারবিয়ান ) রিপাবলিক । বসনিয়ায় গাড়ি চালাতে গেলে যেখানে দেখবেন শহর বা গ্রামের নাম সিরিলিকে লেখা, সেটা স্রাপস্কায় পড়ে পালা করে তারা রাষ্ট্রপতি হয় ।  কোন বর্ডার নেই  সেকালের বার্লিনের মতন নোটিস পাবেন – এখন আপনি স্রাপ্সকায় ঢুকছেন !
     
  • যোষিতা | ৩১ মার্চ ২০২৩ ১২:৪১518061
  • বুঝলাম। এটি ক্রোয়েশিয়া নয়।
  • যোষিতা | ৩১ মার্চ ২০২৩ ১৭:১৯518065
  • স্রপ্সকা তাহলে সারাইয়েভো?
  • হীরেন সিংহরায় | ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০০:৫২518098
  • বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো। রেপুবলিকা স্রাপস্কার সদর  শহর বানিয়া লুকা। 
  • যোষিতা | ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০১:৪১518105
  • এতক্ষণে বুঝলাম
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন