বাঙ্ক তুরান আলেমের (বিটিএ) তিনদিন ব্যাপী কনফারেন্সগুলি অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হত। সে কদিন তাদের ব্যাঙ্কের ভেতরে কোনো কাজ কর্ম হয়েছে কিনা সন্দেহ। কখন কটার সময়ে মূল মঞ্চে প্যানেল আলোচনা, কখন দল ভেঙে নির্বাচিত বিষয় মাফিক ছোট কনফারেন্স রুমে স্বল্প সমাবেশে বিতর্ক হবে – সে সব একেবারে ছকে বাঁধা। সকালের চা কফি থেকে পেস্ট্রি কখনো খসে না, মাঝ সকালের বিরতিতে নোনতা খাবার সাজানো হয়ে যায় ক্লাস শেষের ঘণ্টা বাজার আগেই। তারপর এলাহি লাঞ্চ। বি টি এ ব্যাঙ্কের লোকজন চরকির মতন চারদিকে ঘুরতে থাকেন। ভাষার ব্যবধান আছে – পশ্চিম ইউরোপের প্রায় কেউ রাশিয়ান বলেন না, কিন্তু বিটিএ-র মানুষজনের সঙ্গে জনসংযোগে অসুবিধে হয়নি, মোটামুটি ইংরেজিতে চালিয়ে গেছেন। বরং সেন্ট পিটার্সবুর্গে ভাষা নিয়ে বৃহত্তর সমস্যায় পড়েছি।
সন্ধের দিকে নানান কাজাখি / রাশিয়ান নৃত্যগীত পরিবেশনা – কখনো স্টেজে, কখনো তাঁবুর তলায়। তখন যেন মেলা বসে যায়। দূর পাহাড়ের প্রেক্ষাপটে চলে কখনো ম্যাজিক, নাটক, আগুন নিয়ে কত রকমের খেলা। আমাদের বোধগম্য আধুনিক রক সঙ্গীত পরিবেশিত হয় বিশাল উন্মুক্ত স্টেজে – সেখানে লন্ডনের কিছু ব্যাঙ্কার সানন্দে যোগদান করেন। একবার ব্রেকডান্স দেখিয়ে ডয়েচে ব্যাঙ্কের বেন বিশেষ সুনাম অর্জন করেছিল। সবটাই গালা ডিনারের অঙ্গ। ভোজনের সময়ে থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। বাকিটা একটু বেশি রাতে। সুরা পানে বারণ নেই। পার্টি চলতেই থাকে, ছোটখাটো দল গড়ে ওঠে – এ টেবিলের সঙ্গে ও টেবিল জুড়ে যায় নিজের অজান্তে। রাত্তির দেড়টা-দুটোর আগে কেউ সভাত্যাগ করেছেন বলে মনে পড়ে না। সেপ্টেম্বরের শেষ। সারাদিনের উষ্ণতার পরে এক মধুর আমেজ। সমুদ্র থেকে এ দেশ অনেক অনেক দূরে। তাই কলকাতার ছন্দে বঙ্গোপসাগর বা অন্য কোনো জলাভূমি থেকে চুনি গোস্বামীর মত সহজ সাবলীল বাতাস ভেসে না এলেও পরিবেশ মধুর। রাতে হলের বাইরে বসে আড্ডা দেওয়াটা মজার। ইংল্যান্ডের মতো ঠাণ্ডা দেশে এ সুযোগ কদাচিৎ মেলে।
এমনি গালা ডিনারের পরে আমরা অনেকে বসেছি হল সংলগ্ন ঘাসের লনে আড্ডা দিতে। তৎক্ষণাৎ কোথা থেকে কে বা কারা আমাদের পশ্চাৎদেশে চেয়ার স্থাপন করে দিলেন। বিটিএ-র অক্লান্ত তৎপর সেবক সেবিকা সমানে খেয়াল রাখছেন – গ্লাস খালি দেখলেই দ্রুত দৌড়ে আসেন সেটি ভরে দিতে। বছরের পর বছর এমনি নানা দেশে নানা অনুষ্ঠানে আলাপ হয়েছে কত মানুষের সঙ্গে, পরিচিত মানুষকে পুনর্বার কাছে পেয়েছি। এর হিসেব কড়ায় গণ্ডায় হয় না। কড়ি দিয়ে কেনা যায় না।
সেই সন্ধ্যেয় ছিলাম বেশ অনেকে। বিভিন্ন দেশের, বেশিরভাগ পশ্চিম ইউরোপ এবং পুরনো রাশিয়ান রিপাবলিকের। কীভাবে প্রসঙ্গটি উঠল, ঠিক মনে নেই। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় এক সময় ভাষার দিকে মোড় নিল। ইংরেজের পুরনো কলোনিগুলি ইংরাজি ভাষাটি মাথায় করে রেখেছে। পশ্চিম আফ্রিকায় ফরাসি। দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশ। এগুলো আজকের বিজনেসের জন্য নিতান্ত প্রয়োজন। পরাধীনতার স্মৃতিবহ বটে, কিন্তু আবেগের চেয়ে ব্যাবসা বেশি মূল্যবান।
আজকের চেক, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া, ইত্যাদি দেশ মোটে পাত্তা দেয় না জার্মান ভাষাকে। অথচ নব্বুই বছর আগে সেটা রাজভাষা ছিল বালটিক থেকে সারায়েভো অবধি। বুদাপেস্টের কফি হাউসের আড্ডার ভাষা জার্মান। কাফকা প্রাগে বসে লিখেছেন ডি ফেরভানডলুং (মেটামেরফসিস), ডের প্রোতসেস (ট্রায়াল)। কোপারনিকাস পোল্যান্ডে তাঁর থর্নের বাড়িতে, ক্রাকভ বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মান বলেছেন। স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানা জার্মান লাইবাখ। রোমানিয়ার ব্রাসভ (ক্রোনস্টাড), সিবিউ (হ্যারমানস্তাড) সহ ট্রানসিলভানিয়ার সাতটি বড়ো শহরের পঠনপাঠনের প্রধান ভাষা ছিল জার্মান। আজকের রাশিয়ার এঙ্গেলস নামক শহরটির আদি নাম কসাকেনস্টাড। অসাধারণ বাণিজ্যিক সাফল্য সত্ত্বেও ইংরেজি বা ফরাসির মতন জার্মান লোকমুখে তার আকর্ষণ বজায় রাখতে অক্ষম হয়েছে। রোমানিয়ান নাট্যকার ইউজিন ইওনেসকো (দি চেয়ারস, আমেদে) অথবা মিরচেয়া এলিয়াদে (“লা নুই বেঙ্গলি”! মনে করুন ‘ন হন্যতে’) লিখেছেন ফরাসি ভাষায়। আজ কেউ লেখেন না। এককালে ভেনিসের নৌবহর আদ্রিয়াতিক উপসাগর জুড়ে একছত্র রাজত্ব এবং ব্যাবসা করেছিল। মার্কো পোলো জন্মে ক্রোয়েশিয়ান হলেও, বাড়ির বাইরে ইতালিয়ান ছিল তাঁর কাজের ভাষা। আজ দুব্রভনিক, জাদার, স্প্লিতে সে ভাষার কোনো কদর নেই।
গদ্যময় বাণিজ্যের বাজারে গোয়েথে মঁপাসা বা দান্তের চেয়ে কেনসের ভাও বেশি!
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পনেরো টুকরো হয়েছে। একদা এই পনেরোটি রিপাবলিকের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ছিল রাশিয়ান। কালিনিনগ্রাদে যখন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা বাজে, পুবে দিওমেদ দ্বীপে তখন পরের দিনের ভোর সাড়ে পাঁচটা – সর্বত্র ভাষা এক। লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া থেকে কাজাখ অবদি সবার নিজস্ব ভাষা আছে, ছিল। তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় রাশিয়ান। নইলে রাজ্য শাসন অসম্ভব। যেমন আমাদের শাসকরা চাপিয়েছিলেন ইংরেজি, সেটিকে আমরা আঁকড়ে ধরেছি। বাইরের জগতের পাসপোর্ট এটি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রাঁসোয়া দুপ্লে রবার্ট ক্লাইভকে হারাতে পারলে ফরাসি আমাদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হত!
এই সব নিয়ে কথা চলছে, তার সঙ্গে রক্তিম ওয়াইন। লন্ডনের প্রভূত পান-পিয়াসীদের পাশাপাশি সমবেত কিছু মহিলা – সবার নাম মনে নেই, কিছু আছে। যেমন লাটভিয়ার এভা সয়, ব্যাঙ্ক অফ এস্টোনিয়ার ইয়েরা, ইউক্রেনের অকসানা,বেলারুশের আনাস্তাসিয়া, কাজাখস্তানের একাধিক। আমি সেই ভাষা প্রসঙ্গ তুললাম – আমার দেশ দীর্ঘকাল পরাধীন ছিল। সেই রাজার মুখের বুলি, ইংরেজিকে জীবনের ধ্রুবতারা বলে ধরে বসে আছি। কিন্তু তোমরা কেউ পঞ্চাশ বছর (লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্টোনিয়া), কেউ পঞ্চান্ন বছর (কাজাখ) রাশিয়ান শিখতে বাধ্য হয়েছো আমাদেরই মতন। আজ সোভিয়েত ইউনিয়ন রূপী ভল্লুক তোমাদের ঘাড় থেকে নেমে গেছে। (উপস্থিত কয়েকজন একাধিক রাশিয়ান মহিলা মৃদু হাসলেন)। তোমরা আমার সঙ্গে স্বছন্দে ইংরেজি বলছ। অকসানা জার্মানেও সড়গড়। এবার আমার প্রশ্ন – তোমাদের ছেলে মেয়েকে তোমরা কি রাশিয়ান ভাষা শেখাও, শেখাবে?
আড্ডাটি বেশ জমে উঠেছে। প্রথমে লাটভিয়ার এভা বললে হ্যাঁ। লিথুয়ানিয়ান ও এসটোনিয়ান মহিলাদের নাম মনে নেই বলে দুঃখিত। তাঁরাও কোরাসে যোগ দিলেন। সমবেত রাশিয়ান মহিলারা নীরব দর্শক মাত্র। আরেকজন বললে আমার সবে বিয়ে হয়েছে তবে তোমার প্রশ্নের উত্তরে বলি হ্যাঁ। শেখাব। সার্বজনীন সম্মতি শুনে বললাম কেন শেখাবে? তোমাদের প্রত্যেকের দেশে নিজস্ব ভাষা আছে। ইংরেজি তো শিখছ সেটাই কি লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা নয়? রাশিয়ান কেন?
আমি বিদেশি, ইউরোপিয়ান নই। রং কালো। আমার ধর্ম, ভাষা আলাদা। অথচ ইউরোপ চষে বেড়াচ্ছি কয়েক দশক। যতক্ষণ কেউ বাধা দিচ্ছে না, মনের কথা খুলে বলার অধিকার আমার আছে বলে মনে করে থাকি। বয়েস অনেক – তাতে বেজায় সুবিধে। একেবারে বাজে কথা বললেও পাবলিক মনে করে এর ভেতরে হয়তো কোনো গভীর অর্থ নিহিত আছে! যেমন জার্মানে বলে – নারেনফ্রাইহাইট বা পাগলের স্বাধীনতা।কেউ কি আর কিছু মনে করবে? বড়জোর ভাববে এই বিদেশি মানুষ কিসসু জানে না।
সেদিন আলমাতির মধ্য রাতে এই আলোচনাটি আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। সভায় উপস্থিত মহিলাদের বয়েস চল্লিশের এদিক-ওদিক হবে হয়তো। সালটা ২০০৮। তার মানে সোভিয়েত ইউনিয়ন খুব বেশি দিন দেখেননি। সেই পতাকা নেমে যাওয়ার সময় মেরে কেটে এঁদের বয়েস ২২/২৩ বা আরও কম। তাহলে কীসের প্রীতি? কেন রাশিয়ান? এঁরা প্রায় একই সঙ্গে কবুল করলেন তাঁরা ভাবেননি, হয়তো ঠিক এভাবে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হননি।
কেন রাশিয়ান?
নানাভাবে জবাবটি পাওয়া গেল। সার সত্য এই যে এঁরা বিভিন্ন রিপাবলিক শুধু নয়, বিভিন্ন দেশের মানুষ। এঁদের একত্র করেছে কম্যুনিজম নয়, রাশিয়ান ভাষা। সেই সুতোয় বাঁধা ১৫টি দেশ! এককালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রভুত্ব করেছে সেই ভাষায়। আজ প্রভু বা শাসক হিসেবে নয়, ব্যাবসার জন্যে নয়, এককালের সঙ্গীসাথীর সঙ্গে সম্পর্ক বেঁধে রাখতে চান। ভাষাই একমাত্র মিলন সেতু।
হয়েছেও তাই। আমার পরিচিত মানুষদের সূত্রে, হালের ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের অভিজ্ঞতা থেকে, বলতে পারি সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। আজকের লাটভিয়ান রাশিয়ানে বাক্যালাপ করেন লিথুয়ানিয়ান, বেলারুশি, ইউক্রেনিয়ানের সঙ্গে। ইংরেজি বলেন আমাদের সাথে।
কয়েক বছর বাদে মিউনিকের মহতী বার্ষিক বিয়ার উৎসব, অক্টোবর ফেসটে ইউক্রেনের অকসানার সঙ্গে দেখা। বিয়ে হয়েছে এক জার্মান যুবকের সাথে। আমাকে একান্তে বলল ‘ তোমার মনে আছে আলমাতির সেই সন্ধ্যের কথা? আমার পাঁচ বছরের ছেলেকে জার্মানের পাশাপাশি (‘নেবেনবাই’) রাশিয়ানও শেখাচ্ছি’!
রাশিয়ান ভাষা? নিয়েত!
উত্তরে পোল্যান্ড থেকে দক্ষিণে বুলগারিয়া, ম্যাসিডোনিয়া অবধি বিস্তৃত অঞ্চলের বারোটি দেশ অন্তত চল্লিশ বছর সোভিয়েত প্রভাবিত কমিকন পরিমণ্ডলীর সদস্য ছিল। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি (এই এলাকার এক দেশের মেয়ের সঙ্গে ঘর করছি সিকি শতাব্দী যাবৎ) ১৯৫০ সাল নাগাদ সব স্কুলে – পূর্ব জার্মানি বাদে অবশ্যই – ইংরেজি, ফরাসিকে একটু দূরে সরিয়ে দিয়ে রাশিয়ানকে প্রথম বিদেশি ভাষা হিসেবে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নানান দেশের প্রধানরা যেমন পোল্যান্ডের গোমুলকা, চেকের সভোদা, হাঙ্গেরির ইয়ানোশ কাদার শুধু ক্রুশভ বা ব্রেঝনেভের সঙ্গে নয়, নিজেদের মধ্যেও রাশিয়ানে কথা বলেছেন। বিশ বছর আগে হলে তাঁরা খুব সম্ভব জার্মানে বাক্য বিনিময় করতেন! প্রাক্তন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল (জন্ম হামবুর্গ, ১৯৫৪; তিন মাস বয়েস থেকে পূর্ব জার্মানির বাসিন্দা) একটিমাত্র বিদেশি ভাষায় স্বচ্ছন্দ – রাশিয়ান। সোভিয়েত প্রভাবিত পূর্ব ইউরোপে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া রাশিয়ান ভাষার বিরুদ্ধে এবং ইংরেজি শেখানোর সপক্ষে জনমত জাগ্রত হতে থাকে আটের দশক নাগাদ। আজ যদি এই সব দেশের নাগরিককে জিজ্ঞেস করেন ছেলে মেয়েকে রাশিয়ান শেখাবেন কিনা তার একটাই সবল, বলিষ্ঠ উত্তর পাবেন – না, কখনোই নয়।
কর্ম ও বন্ধুত্বের সূত্রে দীর্ঘদিন এই অঞ্চলের বহু মানুষের সঙ্গে মিশেছি: সাধারণ মানুষ। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য বা কর্মকর্তা নন (হয়ে থাকলেও তা জানাননি)। তাঁদের কয়েকজন মন খুলে যে কথা বলেছেন সেটাই এখানে ব্যক্ত করি – আমি দূত, অবধ্য! তাঁদের মন্তব্য রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে নয়, সাম্যবাদ বনাম পুঁজিবাদের মন্দ ভালো বিচারেরও নয়। প্রশ্ন নৈতিকতার – চার্চিল রুজেভেলটের চালে দেশগুলো আপন স্বাধীনতা রাশিয়ার কাছে বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়েছিল। প্রথমে জার্মানদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুবছর লড়াই করে এবং পরে সেই জার্মানদের খেদিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশাল ভূমির অধিপতি হল। যুদ্ধের শেষে কী হিসেবে সেই অঞ্চল তাদের আপন অংশ অথবা সোভিয়েত প্রতিপত্তির দাস হয়ে গেল? রিব্বেনট্রপ / মলোটোভের গোপন চুক্তিকে মেনে নিয়েছে মিত্রশক্তি, বিনা বাক্যব্যয়ে? পূর্ব প্রাশিয়ার বা পোল্যান্ডের কোয়েনিগসবেরগ কেন আজ রাশিয়ান কালিনিনগ্রাদ? রোমানিয়ান বেসারাবিয়া প্রদেশ আজ তিন টুকরো*। ইয়ালটা, তেহরান, পটসদামে কী কথা হয়েছিল স্তালিন চার্চিল রুজেভেল্টের মাঝে? কেন স্তালিনের হাতে রাংতা মোড়া চকোলেটের মত তুলে দেয়া হল এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল? চেক পোলিশ হাঙ্গেরিয়ানদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কি, তাঁরা কী চান? পঁচিশে এপ্রিল ১৯৪৫ সালে এলবে নদীর তীরে স্ট্রেলা শহরে পতাকা বিনিময় দ্বারা সোভিয়েত ইউনিয়ন আর মিত্রশক্তি কি ইউরোপের পার্টিশন সম্পন্ন করলেন? কোনো অধিকারে?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষোভ, এই ক্রোধ হয়তো মিলিয়ে যাবে। কিন্তু রাশিয়ান ভাষার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা দেখি না! চল্লিশ বছর যে বারোটি দেশের কাঁধে সোভিয়েত ইউনিয়ন সওয়ার হয়ে বসেছিল তাদের কাছে রাশিয়ান ভাষা এই অন্যায়, অবিচার, অত্যাচারের প্রতীক, বিভাজনের হাতিয়ার।
রাশিয়ান শিখিবার কথা বলিও না আর!
নিয়েত!
*সোভিয়েত জবর দখলের কারণে বেসারাবিয়া ভেঙে আজ ইউক্রেন, মলদোভা এবং রোমানিয়া হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা এক বেদনাময় কাহিনি প্রতিশ্রুত রইল পরবর্তী কোনো পর্বের জন্য।