৩
বিদ্যাসাগরের নাতিপুতি
সিগন্যাল কখন লাল হয়ে গেছে। দ্রুত পায়ে রাস্তা পেরিয়ে ঢাকা স্টোর্সের সামনে রিকশাওলাকে জিজ্ঞেস করি-- জোড়াবাগান কত নেবে?
-- কোন জোড়াবাগানে যাবেন? জোড়া-মনসামন্দির ১৬ টাকা, পুকুরপাড়ে নামলে ১৫ আর নতুন পোস্টাপিসে নামলে ১৩।
ও গড়গড় করে বলে যায়।
কোথায় নামলে ঠিক হবে? হাতড়াতে থাকি।
-- আই- ব্লক দিয়ে ঢুকে বিদ্যাসাগর কলোনির ভেতর দিয়ে নিয়ে চল।
আরে বনশ্রী বলে একটা নতুন মাল্টিস্টোরি উঠেছে না, তার গায়ে একটা খুব বড় পুকুর--।
-- বুঝজি বাবু ,বুঝজি! আর কইতে হইব না। হেই পুকুর আর নাই। কবে বুইজ্যা গ্যাছে।
এখন আগাছা আর জঙ্গলে ভর্তি, গোটা পাড়ার জঞ্জাল ফেলনের জায়গা।
তার দখল নিয়া দুই দলে ঝগড়া, বোম মারামারি। এখন মামলা চলছে।
-- তুমি এত কথা জানলে কী করে?
-- আমিও তো বিদ্যাসাগর কলোনির আইজ্ঞা! বাল্যকালে ওই পুকুরের জল খাইয়া তবে সাঁতরাইতে শিখছি।
আপনে চিন্তা কইরেন না, আপনারে ঠিক নামাইয়া দিব। পনেরডা ট্যাহা দিবেন।
বিদ্যাসাগর কলোনি।
ছাঁচ ও দরমার বেড়া দেওয়া ছোট ছোট বাড়ি। টিনের দোচালা, চারচালা ও আটচালা। বেশির ভাগ বাড়ির জানলা গুলো ছোট, কিন্তু অনেকখানি বাগানের জমি।
শিউলি জবা টগর ফুল, নিম আর নারকোল, সজনে ও কাঁঠাল। কিন্তু বেশির ভাগ ঘরে সন্ধ্যেয় হ্যারিকেন জ্বলে, একটু আর্থিক সংগতি থাকলে হ্যাজাকবাতি।
বিজলি নেই কেন?
কী করে থাকবে? বিদ্যুতের খুঁটিগুলো কোথায় পোঁতা হবে?
ঘরগুলোর সামনে রাস্তা নেই, অধিকাংশ গলিপথে মাটির পায়েচলা রাস্তাও নেই। সেগুলো সারাবচ্ছর হাঁটু জলে ডোবা।
অধিকাংশ গলিতে বাঁশের সাঁকো। তার ওপর দিয়ে হেঁটেই সবাই বাঘাযতীন বাজারে যায়, ছেলেমেয়েরা রামগড়, বাঘাযতীন ও নাকতলার স্কুলে যায়।
এই এলাকায় কোন রেশন দোকান নেই, গম পেষানোর কল নেই, কোন ডাক্তারখানা নেই।
শুধু আই -ব্লক দিয়ে আর রামগড় দিয়ে ঢোকার রাস্তায় দুটো টিনের সাইনবোর্ডে লেখা "বিদ্যাসাগর উপনিবেশ"।
এখানে ছেলেমেয়েরা বড় হয় ঐ সাঁকোর ওপর দিয়ে দৌড়ে চোর-পুলিশ খেলে।
কখনও বড়দের অসাবধান হওয়ার খেসারত দিতে কোন ছোট বাচ্চা ঝুপ করে জলে পড়ে যায়। আর ওঠে না।
মা-ভাই-বোন কাঁদে। দেহটি ডুব দিয়ে তোলা হলে আরও কাঁদে, এবার চিৎকার করে বুক চাপড়ে।
অভিশাপ দেয় ভগবানকে , সরকারকে।
যদিও ওদের মনে হয় যে এরা দুজনেই চোখ ও কানের মাথা খেয়েছে।
তবু এখানে বৃহস্পতিবারে ঘরে ঘরে শাঁখ বাজে, লক্ষ্মীঠাকুর জল পায়, বাতাসা, নকুলদানা পায়।
আর শনিবারে পূজো হয় শনিঠাকুরের।
এরা পূজো দেয় তেত্রিশ কোটি দেবতাকে, নজরানা দেয় পুলিশের সেপাইকে, থানার বড়বাউকে ছোটবাবুকে।
এদের বড়রাও চোর পুলিশ খেলে। চাল আর কেরোসিন শুধু দুর্মূল্যই নয়, দুষ্প্রাপ্যও বটে।
গত বছর কাশ্মীরে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পর থেকে বাজারে যেন আগুন লেগেছে।
আমেরিকার থেকে পাওয়া প্যাটন ট্যাংক নিয়ে পাকিস্তান গড়গড়িয়ে ঢুকল বটে, কিন্তু হাজি পীর গিরিপথে ভারতের বৈজয়ন্ত ট্যাংক বাধা দিতে শুরু করল।
আমেরিকান স্যাবর জেট ফাইটার প্লেনের সঙ্গে ভালই লড়ে গেল ভারতের ন্যাট ও ফ্রান্স থেকে পাওয়া মিরাজ বিমান।
কিন্তু যুদ্ধের দামামা থামলে দেখা গেল দু'পক্ষই আগের জায়গায়।
তাশখন্দে গিয়ে ভারত ও পাকিস্তান সন্ধির টেবিলে বসল, পেছনে দাঁড়িয়ে রাশিয়া ও আমেরিকা।
সবকিছু আগের মত হয়েও হল না। খালি যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে বাজারে আগুন লেগে গেল।
বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরা অধিকাংশ ভারত রক্ষা আইনে গ্রেফতার হয়ে জেলে।
র্যাশনের সামান্য দুমুঠো চালে লোকের পেট ভরে না। এবার শুরু হয়েছে চালের কর্ডনিং। এক জেলার চাল অন্য জেলায় যাবে না।
গঙ্গার খালের ওপারে ২৪ পরগণা।
সেখানে চাল অনেক শস্তা। তবে গাঁয়ের চাল শহরে ঢুকতে পারবে না।
তাই খালের ওপর কাঠের পুলগুলোতে পুলিশ পাহারা। এরা চাল ধরে, তাই নাম চাল- পুলিশ।
গম পাওয়া যাচ্ছে বটে, কিন্তু বাঙালী সেদিন "হিন্দুস্থানী"দের মত রোটি/চাপাটি খেতে রাজি হয় নি।
র্যাশনের চাল ব্ল্যাক হয়, খালের ওপারে গাঁয়ের থেকে শস্তায় থলি ভরে ভরে চাল ঢোকে কোলকাতায়।
পুলিশ পয়সা নিয়ে ছেড়ে দেয়, কখনও না নিয়ে লক্ আপে পোরে।
এভাবেই বিদ্যাসাগর কলোনির একটা বড় অংশ সামান্য মজুরির বিনিময়ে চালের চোরাকারবারে পদাতিক হয়ে যায়।
আর বাবা, কাকা, দাদাদের পদচিহ্ন ধরে বাচ্চারাও ভর্তি হয় নারায়ণী সেনার বিগ্রেডে।
এদিকের লোকজন ভয় করে বিদ্যাসাগরের ছেলেমেয়েদের। সবাই বিশ্বাস করে যে ওই এলাকায় ঘরে ঘরে বোমা তৈরি হয়।
ছোট ছোট বাচ্চারাও নাকি বোমা বাঁধতে জানে! মশলার ভাগ জানে। সাদা আর লাল বা সাদা আর হলুদ।
পটাশিয়াম ক্লোরেট আর মোমছাল বা আর্সেনিক সালফাইড। ।পটাসিয়াম ক্লোরেট আর গন্ধক অর্থাৎ সালফার।
মাঝে মাঝেই কানফাটা আওয়াজ।
আমরা মাথা নাড়তাম-- বিদ্যেসাগরে বোম বানাচ্ছে , তার টেস্টিং হচ্ছে। ওই যে তারসপ্তকে কড় কড় কড়াৎ --ওটা লাল আর সাদায় তৈরি।
এর পরে যে গুমম্ গুউম্ করে মন্দ্রসপ্তকে বেজে উঠল-- ওটায় নিঘ্ঘাৎ গন্ধক।
তাই রাতের অন্ধকারে নাকতলা স্কুলের গলিতে উঠতি বয়সের ক'টি ছেলে অচেনা লোকের কাছে সিগ্রেট ধরানোর আগুন চাইলে বয়স্ক লোকটি বলে ওঠেনঃ
- বাপের বয়সি লুকের কাছে বিড়ির আগুন চাইতে লজ্জা করে না? কুন পাড়ার ছাওয়াল?
ভ্যাবাচাকা খাওয়া দলের এক ছোকরার জিভে চটজলদি মিথ্যে জবাব-- বিদ্যাসাগরের।
--- তাই কই! বিদ্যাসাগরের নাতিপুতি না অইলে এত গুণ কার?
রিকশা থেমে গেছে।
-- এইখানেই নামবেন।
নেমে চারদিকে তাকাই।একটা মাঠের মত, তার এককোণায় দুটো পাকা বাড়ি, পুকুর কই?
রিকশাওলা হাসে।
বাকি অংশে বুকসমান উঁচু নানান গাছগাছালি, আগাছা।
একদিকে ডাঁই করা জঞ্জালের স্তুপ। বাতাসে দুর্গন্ধ।
এক কোণে একটি ছোট খুঁটিতে হেলে থাকা নোটিস বোর্ডে 'আদালতের আদেশ' শব্দদুটো পড়া যাচ্ছে।
এইডাই আপনের পুকুর। দ্যান, পনেরডা ট্যাহা দ্যান।
গভীর কালো জল। পুকুর নয়, কাজলাদীঘি। দুই বিপরীত কোণে দুই ঘাটলা।
একটা ঈশান কোণে আর একটা অগ্নিকোণে।
অগ্নিকোণের ঘাটের কাছে দুটি বাড়ির কলাগাছ, নারকোল গাছের ছায়া। কদাচিৎ কেউ জল নিতে আসে। বাড়িদুটোর লোকজন নিজেদের আঙিনায় বসানো টিউবওয়েলের জল ব্যবহার করে। ফলে এদিকের ঘাটলার জল নিস্তরঙ্গ।
ঈশানকোণের ঘাটলায় অন্য ছবি। সেখানে বিদ্যাসাগর কলোনির সীমানা পেরিয়ে জলে ঝাঁপাচ্ছে ছেলেমেয়ের দল।
কিশোর কিশোরী থেকে শুরু করে যুবক যুবতী কেউ বাদ নেই। কয়েক ঘন্টা ধরে চিৎকার চেঁচামেচি হোহোহিহি আর ঝপাং ঝপাং শব্দে অশান্ত জল ও বাতাস।
আর আছে নিষিদ্ধ সম্পর্ক জুড়ে নিজেদের ছোট ছোট দলের মধ্যে উচ্চগ্রামে খিস্তিখেউড়।এ ওকে তাড়া করা।
এ নিয়ে পাশে স্নানরতা মেয়েদেরও কোন ভ্রূক্ষেপ নেই।
কোথাও কোন গর্বিত বাপ তার বছর খানেকের ছোট বাচ্চাকে জলে ছুঁড়ে ফেলছে।
পাড়ে দাঁড়িয়ে বাচ্চার মা তারস্বরে সোয়ামীর চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করছে।
আমোদগেঁড়ে বাপ একটুও না রেগে সাঁতরে গিয়ে জল খেতে থাকা বাচ্চাকে কোলে তুলে হা-হা হেসে উঠছে।
মেয়েরা স্নান করে কাপড় কেচে গামছা নিংড়ে গায়ে জড়িয়ে ঘরমুখো হচ্ছে।
কেউ কেউ সঙ্গে আনা পেতলের কলসি ভরে জল নিয়ে ফিরছে।
আমার সাহস নেই। আমি সাঁতার জানি না। এর আগে কোলকাতার ফুটপাথে ক্রিকেট খেলে বড় হয়েছি।
কখনও কোন দীঘি দেখিনি। কাউকে সত্যি সত্যি সাঁতার কাটতে দেখিনি।
তাই অগ্নিকোণের ঘাটলায় দাঁড়িয়ে দূর থেকে ঈশানকোণের ঘাটলায় জীবনের উৎসব দেখি।
লোভী লোভী চোখে।
আচ্ছা, ছেলেদের সাঁতার কাটার ভঙ্গীটাকে ফ্রি-স্টাইল বলা যেতেই পারে।
এর মধ্যে কেমন কায়দা করে জল টেনে নিয়ে মুখ দিয়ে হুস করে ছাড়ছে।
কিন্তু মেয়েদের ভঙ্গীটাকে কী বলব? ওরা থুতনি অব্দি মুখটা ভাসিয়ে রাখে, হাত জলের তলায়।
পা দুটো পেছনে সামান্য ওঠে, ঠিক যেন হাঁস জল কেটে তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছে। কেউ কেউ আবার কলসি বুকে নিয়ে বেশ মজা করে সাঁতার কাটছে ,
দুজন হাত ধরাধরি করে ডুব মেরে নীচে গিয়ে দম ধরে থেকে খানিকক্ষণ পরে ভুস করে ভেসে উঠছে।
আমার চোখে পলক পড়ে না।
হঠাৎ চমকে উঠি।
পাড়ের কাছ ধরে কম জলে সাঁতরে আমাদের ঘাটের কাছে চলে এসেছে একটি মেয়ে। আমাকে খেয়াল করে নি।
ভিজে কাপড়ে উঠে এসে কুলগাছের তলা থেকে কিছু টোপাকুল তুলে মুখে পুরে চুষতে থাকে ।
আচমকা চোখ যায় ওর ঢেউয়ের দোলায় ক্রমাগতঃ দূরে সরে যাওয়া কলসিটার দিকে। একটা অব্যয়।
ও আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে দ্রুত সাঁতরে কলসিটা ধরে, মাথার খুলে যাওয়া ভিজে চুলে আলতো করে গিঁট দেয়। তখনই দেখতে পায় আমাকে।
লজ্জা পেয়ে দূরে সরে যেতে যেতে আবার তাকায়, মুচকি হাসে।
পদ্মানদীতে কলসি নিয়ে সাঁতরাচ্ছে কপিলা। কুবের লোভী চোখে দেখে কলসী নিয়ে সাঁতরাতে থাকা কপিলার ভারী বুক জলের ওপর দোলে, ডোবে আর ভাসে।
কপিলা হেসে ডাক দেয় কুবেরকে-- ধর মাঝি ধর। আমারে না, আমার কলসীডারে ধর।
কাঁধে কারও ভারী হাতের চাপ। ঘোর কেটে ফিরে তাকাই--বাবা!
--- কী দেখ বাপ?
আমার গলায় থুতু শুকিয়ে যায়।
বাবা আমাকে দেখলেন, চোখ কুঁচকে পুকুরের দিকে তাকালেন।
তারপর বললেন-- এভাবে দেইখ্যা কি লাভ? পুরুষমাইনসে এইভাবে পাড়ে দাঁড়াইয়া তাকাইয়া সময় নষ্ট করে না। সোজা ঝাঁপাইয়া পড়ে। সে সাহস আছে?
-- আমি যে সাঁতার জানি না।
--কেউ মায়ের প্যাটে থাইক্যা সাঁতরাইতে শিখে নাই, আমিও না। কিন্তু পরে বানের সময় গঙ্গায় সাঁতরাইছি।
কী কস্? শিখবি? ত' কাইল থেইক্যা সকাল দশটায় আমার সঙ্গে পুকুরে নামবি, সাতদিনে শিখাইয়া দিয়াম।
নাঃ, সাঁতার শেখা আর এ জীবনে হয়ে উঠল না। সাতদিনে কেন, সাতমাসেও না।বাবা চেষ্টার ত্রুটি করেন নি।
দিনদশেক নিয়ম করে আমাদের তিন ভাই ও ভাইপোকে নিয়ে জলে নামতেন।
ওই ঈশানকোণের ঘাটের দিকে।
সবাই শিখে গেল, আমি ডাহা ফেল।
বুকজলে যাই, মহাবাক্য স্মরণ করি যে মাথাটা সবচেয়ে ওজনদার। তাই মাথা যত জলের তলায় থাকবে পা তত ওপরে উঠবে।
কিন্তু জলের নীচে যে অন্ধকার। অন্ধকারে আমার বড় ভয়।
চারপাশের বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা কেমন নাক টিপে ডুব দিচ্ছে, পালা করে জলের নীচে দম ধরে থাকছে! আমি পারি না।
প্রাণপণে জল ছেটাই হাত দিয়ে,ভান করি সাঁতরানোর।
আসলে জলের নীচে পা দিয়ে হাঁটি।
অভ্যেস খারাপ।
বহুআগেই শিখে গেছি যে মূল টেক্স্ট না পড়েও পাস হওয়া যায়, শস্তা নোটস্ পড়ে, কিছু কায়দা শিখে।
আমি চারপাশের জলে ঝাঁপানো বীরসিংহের সিংহশিশুদের কাছে হাসির পাত্র হয়ে উঠলাম।
কেউ বলল-- খোকা, বেশি আগাইয়ো না। আগে কুমীর আছে।
কেউ বাবাকে বলল-- অরে একটু গরম চা খাওয়ান।
ক্রুদ্ধ পিতা সর্বসমক্ষে পুত্রকে চপেটঘাত করিয়া বলিলেন-- যা, বাড়িত যা। ব্যাডা আউয়াখানা!
সাঁতার শেখানোর ক্লাসের সেখানেই ইতি।
কিন্তু তৃতীয়দিন একটা ঘটনা ঘটল।
বেলা এগারোটা নাগাদ পুকুরের দিক থেকে একটা হল্লার আওয়াজ। ও মাঝে মধ্যেই হয়, ঝগড়া মারামারি। যত্ত বিদ্যেসাগর কলোনির ছেলেছোকরার দল!
এমন সময় কাজের মাসির মেয়েটি দৌড়তে দৌড়তে এলো-- তোমাদের বাড়ির ছোটছেলে ডুবে যাচ্ছে গো! শিগ্গির করে এসো!
ব্যাপারটা বুঝতে লাগল কয়েক সেকেন্ড।
ছোটভাই সাঁতার শিখেছে, মানে জলে ভাসতে শিখেছে। কিন্তু চিৎ সাঁতার শেখেনি।
অল্পবয়েসি ছেলের দল বলল-- কী রে সুনন্দ ?বড় সাঁতার শিখেছিস! পুকুর এপার ওপার করতে পারবি? আমাদের মত?
আচ্ছা, চল তবে।
ওরা একসঙ্গে সাঁতরে এল ঈশানঘাট থেকে অগ্নি।
-- বেশ, চল ফিরে যাই। পারবি?
--পারব।
কিন্তু মাঝপুকুরে এসে সুনন্দর হাত পাথরের মত ভারি, পায়ে যেন সিমেন্টের ঢালাই হয়ে গেছে। আর বুক হয়েছে কামারশালার হাপর।
-- আমি পারছি না! ডুবে যাচ্ছি, বাঁচাও!
দলের ছেলেগুলো কখন পৌঁছে গেছে নিজেদের ঘাটে।
কিন্তু সুনন্দ যে মাঝপুকুরে, সমানে জল খাচ্ছে আর চেঁচাচ্ছে-- বাঁচাও, আমি পারছি না।
কে বাঁচাবে?
বড়রা কেউ এখনও স্নানে আসে নি। বাচ্চারা ভয় পেয়ে গেছে। আর আছে মেয়ের দল।
কাজেই বাতাসে ভেসে এল এক সমবেত হায়! হায়!
গ্যাছে গো গ্যাছে! ছ্যামড়াটা আইজ গ্যাছে।
বাবা দৌড়ে এসে অগ্নিকোণের ঘাটে দাঁড়িয়ে পায়্জামা খুলে আন্ডারওয়ার পরা অবস্থায় জলে ঝাঁপ দিচ্ছেন দেখে চারদিকের হট্টগোল থেমে গেল। সবাই চুপ।
কী আশ্চর্য, বাবা শেষমুহুর্তে দাঁড়িয়ে পড়লেন।
যেন রেডি! অন ইয়োর মার্ক বলার পর স্টার্টারের পিস্তল থেমে গেছে।
মা ডুকরে কেঁদে উঠলেন-- কী হইল? ঝাঁপ দেও!
বাবা সেদিকে কর্ণপাত না করে হুংকার দিয়ে উঠলেন-- কিস্যু হয় নাই! দম ফুরায় নাই। পারবি, পারবি, আর একটু,ব্যস্ --আর একটু , অল্প বাকি, আর একটু।
আর সেই গর্জনে জলে আধডোবা সুনন্দ পারছি না, পারছি না, বলেও হাত পা নাড়তে লাগল। মিনিট পাঁচেক।
তারপর বুকজলে পৌঁছতেই ঘাটের থেকে কিছু ছেলে ওকে ধরে তুলে এনে পাড়ে ঘাসের ওপর শুইয়ে দিল।
বাবা হাঁফ ছাড়লেন।
সবার প্রশ্নের উত্তরে নিজের অদ্ভুত আচরণের ব্যাখ্যা দিলেনঃ
আমি দেখলাম ঝাঁপ দিলেই ছেলে নিশ্চিন্ত হইয়া হাত-পা নাড়া ছাইড়া দিব আর তখনই জলে তলাইয়া যাইব। আমি এই ঘাট থেইক্যা ওর কাছে পৌঁছানোর আগেই।
আর এই কাজলাদীঘির নিকষকালো জল, ডুব দিয়া দেখছি, চইখ্যে কিছুই দেখা যায় না।দুই বাঁশ গভীর।
একবার তলাইয়া গেলে কোন আশা ছিল না। তখন আমি ওর লাইফফোর্সের উপর নির্ভর কইরা অরে ভরসা দিতে লাগলাম। বাপ্, পারবা, তুমি পারবা।
বাড়িতে আনা হলে পরম মমতায় ছোটছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন-- সাবাশ ব্যাডা! তুমি পুরুষমানুষ, মাইগ্যা না।
অপাঙ্গে বড়ছেলের দিকে দেখে বলায় সে বুঝে গেল কাকে মেয়েলি বা মাইগ্যা বলা হচ্ছে।
তবে একটা ভুল করছ। চিৎসাঁতার না শিইখ্যা দীঘি পারাপার -- ব্যাক্কলের কাম।
দম ফুরাইলে চিৎ হইয়া ভাসন লাগে।
আমি গঙ্গায় সান করতে গিয়া বানে পইরা চিৎ হইয়া হাত-পা ছাইড়া দম নিছি।
দম ধইরা রাখা হইল আসল। জীবনের সর্বক্ষেত্রে কাজে লাগে।
মন্ত্র তো এভাবে পেয়েছিলাম, তখন এর তাৎপর্য বুঝিনি। তাই গ্রহণ করিনি।
হ্যাঁ, দম চাই সব ব্যাপারে। সাঁতার হোক, খেলাধূলো বা গানগাওয়া হোক, দম ধরে রাখার কৌশল জানা চাই। খালি উপুড় হতে নয়, মাঝে মাঝে চিৎ হওয়ারও দরকার।
সেই কৌশল জানা চাই, সে জীবনযুদ্ধেই হোক কি প্রিয়সংগমে।
কেমন বাপের ব্যাটা রে তুই!
একদিনে ছোটভাই সুনন্দ বেশ হিরো হয়ে গেল।
দুদিন বাদেই দেখা গেল সে কাজলাদীঘিতে চিৎ হয়ে ভাসছে, উপুড় হচ্ছে, বিদ্যেসাগর কলোনীর ডানপিটেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এপার ওপার করছে।
এর পরে মেজছেলের পালা। সেও উৎরে গেছে।
কিন্তু বড় ছেলে রমেন ?
কৈশোর পেরিয়ে পুরুষ হওয়ার প্রবেশিকায় ডাহা ফেল। বাবার ছুটি ফুরিয়ে এসেছে। আর দুটো দিন, তারপরে ফিরে যেতে হবে ভিলাই।
যেখানে বিশাল ইস্পাত কারখানায় আকরিক লোহা থেকে ইস্পাত তৈরি হয়। ব্লাস্ট ফার্নেস থেকে লাল গলিত লাভা স্রোতের মত লোহা গলে গলে পড়ে ।
রোলিং মিলে গিয়ে সেগুলো ঠান্ডা হয়ে দানবীয় রোলারে পিষে ইস্পাতের চাদরে বদলে যায়।
তারপরে বিলেট মিল , মার্চেন্ট মিলে গিয়ে সেগুলো বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নানান মাপে কাটা হয়ে ব্যবহার যোগ্য হয়।
রেলের পাত, লোহার রড, লোহার তার ও স্টেনলেস স্টিল।
এমন শক্তসমর্থ আবহাওয়ায় কাজ করে যে গর্বিত বাপ, তার ছেলে এমন অপদার্থ!
ব্যাটাছেলে এই বয়সে সাইকেল চালাবে, গাছে চড়বে আর পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে পড়বে।
এ তো খালি কথাসরিৎসাগর! কাজের বেলায় ল্যাবেন্ডিশ।
বাকি দুটো তো ছেড়েই দাও, সাইকেলটাও ঠিক করে চালাতে শেখেনি।
বছর দুই আগে ভিলাইয়ে সাইকেল ধরিয়ে দিয়ে বলা হল সামনের মাঠে প্র্যাকটিস কর, ব্যালান্স ঠিক হলে তবে রাস্তায় চালাবি।
তা সে তিনদিনের মাথাতেই সবার অজান্তে রাস্তায় চালাতে শুরু করল। দুবার বাঁক নিতে গিয়ে আছাড় খেয়ে পড়ে হাঁটুর নুনছাল তুলল, কিন্তু হ্যান্ডেলটি যে বেঁকে গেছে সেটা খেয়াল করল না। ফলে রাস্তায় নিজেদের মধ্যে হাহা-হিহি করতে করতে আসা তিন রাইকিশোরীর মুখোমুখি হয়ে তাল সামলাতে না পেরে সোজা ওদের মাঝখানে ধাক্কা মারল।
আরে, ভুল হয়ে গেছে তো সরি বল আর সাইকেল চালিয়ে চোঁচা কেটে পড়। তা না, ব্যাটা পাক্কা আউয়াখানা , ওদের সামনে দাঁড়িয়ে রইল।
একটা মেয়ে গিয়ে বাড়ি থেকে বাপ-দাদাকে ডেকে আনল।
ওরা সব শুনে ওকে নিয়ে বাড়িতে হাজির।
কী লজ্জা, কী লজ্জা!
কপাল ভাল যে ওর পিঠে হাতের সুখ করে নি। করলে উনি আর কি করতেন!
কানে আসে কিছু মন্তব্য, কিছু ঠাট্টা তামাশা, আর চোখা চোখা কাঠবাঙাল বিশেষণ-- আউয়াখানা, উরুম্বা, অলম্বুষ!
ঘটিতে এর কাছাকাছি মহাধুর, আতাক্যালানে, ন্যাকাষষ্ঠি!
বাবা কাল সন্ধ্যেয় বম্বে মেল ধরবে। বেশ! ধরুক গে! গেলেই ভাল।
হ্যাঁ, ভদ্রলোক কখনো ছুটি বাড়িয়ে নেন না, সেটাই ভরসা। কিন্তু আজকের দুপুর তো আমার।
উঠোনের এককোণাতে গোটাছয়েক কলাগাছ, একটার কাঁদি ক'দিন আগে নামিয়ে নেওয়া হয়েছে। দা দিয়ে সেটা কুপিয়ে কুপিয়ে কেটে ফেলি।
রাঙাকাকা জিজ্ঞেস করলে বলি--- ওখানটায় নতুন একটা চারা লাগানো হবে।
জৈষ্ঠ্যের শেষ। ঝুম ঝুম গরমের দুপুর। মাটি থেকে ভাপ উঠছে। হাওয়ায় কাঁপন।
রাস্তায় একটাও লোক নেই। বাড়িতে সব খেয়েদেয়ে গাঢ় ঘুমে । কাটা কলাগাছের গুঁড়ি নিয়ে আস্তে আস্তে আঙিনার পেছনের আগড় খুলে বেরিয়ে আসি।
অগ্নিকোণের ঘাট। নিকষকালো জল। সামনে কিছু টগর ও শিউলিফুলের গাছে যেন কোলকুঁজো বুড়ির মত জলের উপর ঝুঁকে আছে।
ঘাটের শেষে জলে পা দিই। আঃ, কী ঠান্ডা!
পেছন ফিরে বাড়ির দিকে তাকাই। না , কেউ টের পায় নি।
দুহাতে কলাগাছের গুঁড়ি নিয়ে জলে নামি। জলে ভাসাতেই আর কোন ভার নেই।
ওটা কী হালকা হয়ে গেল। এবার বুক জল।
হ্যাঁ, এখন সময় হয়েছে। সাবধানে হাত বদলে পেছন ফিরি। মাথার কাছে জলে ভাসা কলাগাছের গুঁড়ি দুহাতে ধরে জলের ওপর চিৎ হই।
আর কী মজা! আমার শরীর হালকা হয়ে জলের উপর ভাসছে।
হ্যাঁ, এমনি করেই কোথাও কোথাও হাওয়া ভরা রবারের টিউব দিয়ে সাঁতার শেখানো হয়।
কোথায়? কোথায় আবার ? অ্যান্ডারসন ক্লাবে, ঢাকুরিয়া লেকে।
শুনেছি তার জন্যে মোটা চাঁদা লাগে, আমাদের সাধ্যের বাইরে।
ভাসছি, ভেসে চলেছি। হাওয়া নেই। সামনের গাছ থেকে একটা মাছরাঙা ছোঁ মেরে জল থেকে কিছু তুলে উড়ে গেল।
পা দিয়ে প্যাডল করছি, যেমন অন্যদের দেখেছি। ভারি মজা তো!
একটু পরে চোখ তুলে তাকাই--কোথায় এলাম? ঈশানঘাট কতদূরে?
ধুর! ওই তো আমাদের বাড়ি দেখা যাচ্ছে। আরে আমি ভুল প্যাডল করে খালি গোলগোল ঘুরছি, বেশি এগোতে পারি নি তো!
তখন কি জানতাম যে সারাজীবন পথ হাতড়ে গোলগোল ঘুরে বেড়ানোই আমার ভবিতব্য!
আচ্ছা, আমাদের বাড়িতে কেউ এখনও টের পায় নি। কী আশ্চর্য, আমাকে নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই?
ঠিক আছে, ফিরব না শালা এ’রকম বাড়িতে। জোরে জোরে প্যাডল করে উল্টোদিকের ঘাটে উঠব।
বিদ্যাসাগর কলোনিতে ঢুকে যাব।
সেখানে কারো দোকানে কাজ নেব আর রাতে পড়ে প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে স্কুলের বেড়া টপকাবো।
কাজ পাব না? পেটভাতায় কাজ করব।
সাইকেল সারাই না হোক, কোন চায়ের দোকানে?
বাসন মাজব, উনুন ধরাবো, চা বানাবো। তারপর টেবিলে টেবিলে চা দেব।
কোন খেটে খাওয়া সাধারণ মজদূর, ধর এই কোন রিকশাওলা আমাকে একদিন খুশি হয়ে চার আনা বকশিস দেবে।
যেমন সমরেশ বসুর গল্পে পুনিয়া বলে বাচ্চাটাকে দিয়েছিল।
তবে ছেলেটাকে সন্দেহ করে মালিক উনুনের গরম শিক দিয়ে বেধড়ক ঠেঙিয়েছিল।
আমি কি অমন মার সইতে পারব?
আচ্ছা, আমি যদি বকশিস পেলে মালিককে আগেই জানিয়ে দিই? তাহলে তো আমাকে চোর ভাববে না।
কোথা থেকে একটা আওয়াজ আসছে না? না, না, অনেকগুলো আওয়াজ। আলাদা, আলাদা--আবার একসঙ্গে।
ওসব পাড়ার কিচ্যেন, এসব থেকে আমি বরাবরই দূরে থাকি।
---- আরে ওই তো! মাঝপুকুরে, কলার ডুম ধইর্যা ভাসতে আছে।
-- রমেন, আগাইস না, ফির্যা আয়।
-- না, না; ফিরতে হইব না। তুই যেমন জাইতে আছস তাই থাক। ঈশানঘাট আর বেশি দূর নাই। কলাগাছ্টারে শক্ত কইর্যা ধর, হাত ছাড়িস না।
জোরে জোরে প্যাডল করতে থাকি। কতক্ষণ মনে নেই, মিনিট পনের হবে। হটাৎ আমার হাত থেকে কেউ ঝটকা দিয়ে কলাগাছের ভেলা কেড়ে নেয়।
ভুস করে ডুবে ভেসে উঠি। কোমর জল, ঈশানঘাটে পৌঁছে গেছি।
বাবা আমার হাত ধরে বলেন-- বাড়ি চল।
আমরা পাড় ধরে হাঁটতে থাকি। দেড় পাক ঘুরে তবে আমাদের বাড়ির দোরগোড়া।
আমার ভিজে কাঁধে হাত রেখে নরম স্বরে বলেন-- এইডা কী করতাছিলা?
---- সাঁতার শিখতাছিলাম।
এইভাবে? একা একা? যদি হাতের থেইক্যা ভেলা ছাইড়া যাইতো তো আমরা টেরও পাইতাম না।
ভরাদুপুরে কোন লোকজন নাই। বিকালে এইদিক ওইদিক খামোখা খোঁজাখুঁজি করতাম।
তোমার মায়ের হার্ট ভাল না, বুকের চাপ বাড়ত।
বাড়ি ঢুকলে মহিলারা কান্নাকাটি থামিয়ে গা- মুছিয়ে শুকনো জামাকাপড় দিলেন। তারপরে কাঁসার বাতিতে গরম দুধ।
ওদিকে দাদু সবাইকে তড়পাচ্ছেন-- অরে কেউ কিছু কইতে পারবা না! অরে কেউ বুঝে না, শুধু আমি বুঝি।
ভেতরের ঘর থেকে চাপা হাসির আওয়াজ আর কিছু টুকরো মন্তব্য ভেসে এল।
-- দাদুর আল্লাইদ্যা নাতি।
--অইব না, হিন্দু জয়েন্ট ফ্যামিলির কর্তার বড়ছেলের বড়ছেলে।
---- ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল! প্যাসিভ অ্যাগ্রেসিভ! মিচকা শয়তান!
বাড়ির সবচেয়ে বৃদ্ধলোকটির ভয়ে কলাগাছ এপিসোড নিয়ে কেউ আর বেশি প্যাচাল পাড়লো না।
কিন্তু সেই কালোজল সেই অতল দীঘি বয়ঃসন্ধি থেকে বহুদিন স্বপ্নে তাড়া করে বেড়ায়।
অগ্নিকোণের ঘাটে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যাচ্ছি, কলার ভেলা জলের ধাক্কায় কয়হাত দূরে সরে গেছে।
বাঁচার চেষ্টায় জলের উপর ঝুঁকে থাকা গাছগুলোর একটার ডাল জড়িয়ে ধরি।
বাতাবিলেবুর গাছ। কাঁটায় হাত ছড়ে যাচ্ছে, আমি নিরুপায়।
কিন্তু গাছ কোথায়? ও তো এক নারী, এলোকেশী, গুরুস্তনী।
সে আমাকে ছোট বাচ্চার মত করে দোল খাওয়ায়, ভয় দেখায়।
-- দেব জলে ছুঁড়ে ? দিই ফেলে?
তার স্তন আমার গাল ছুঁয়ে যায়, কিন্তু আমি ভয়ে শিউরে কুঁকড়ে উঠি।
ঘুম ভেঙে যায়, বালিশ ঘামে ভিজে গেছে। কিন্তু-- এমন স্বপ্ন কেন দেখলাম?
ওর মুখের আদল যে চেনা চেনা।
(চলবে)
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।