সরকারি মদতে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার ধ্বংসসাধন!এইভাবে সরকারি স্কুলগুলোকে পরিকল্পনা মাফিক ধ্বংস করা হচ্ছে!
এই সুযোগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা-খুশি-তাই করছে!
বাংলামাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে বাংলাভাষার জন্য কান্নাকাটি চলছে!
-------------------------------------------------------------------
শিক্ষিকা পিয়ালী বন্দোপাধ্যায় লিখছেন।
সরকার অনুমোদিত স্কুলে পড়াশুনা এখন এক অলীক পর্যায়ে নেমে এসেছে। তারা বানান জানেনা। মানেনা। মানতেও হয়না কারণ নম্বর কাটার উপায় নেই। কাটলে তারা পাশ করবে না।
পাশ না করলেও কোনো ব্যাপার নেই, তারা ক্লাসে উঠবেই পরপর। সেকেন্ড লিস্ট, থার্ড লিস্টরাও জানে এগুলো শো অফ। স্কুল আবার জামাই আদরে ডেকে পরের ক্লাসে তুলে দেবে। কিম্বা এই স্কুল ভাগালেও অন্য স্কুল লুফে নেবে।
মুখের ওপর কোনো কোনো মেয়েরা এবং তাদের গার্ডিয়ানরা বলে যাচ্ছেন তাঁরা কন্যাশ্রীর তোয়াক্কা করেন না। প্রামাণ্য ডকুমেন্ট দিতে তাঁরা চিন্তিত নন কারণ জানেন এটা স্কুলের দায়িত্ব। স্কুল বার বার ফোন করে তাঁদের কাছ থেকে আদায় করতে বাধ্য।
মেয়ের দীর্ঘ অনুপস্থিতি পারিবারিক কারণেই হয়েছে। এ'বিষয়ে কোনো স্টেপ নেওয়ার অধিকার স্কুলের নেই। একজন ছাত্রী সে ধরা যাক ক্লাস টেন, সারা বছরে পূর্ন একমাস ক্লাস করে কি না সন্দেহ! তবু সে টেস্টে বসবে এবং এলাও হবেই।
ব্যাংকের বই করানোর জন্যে ছাত্রছাত্রীকে ধরাধরি করা, স্কলারশিপ, পরীক্ষার প্রামাণ্য কাগজ জমা করাতে কালঘাম ছুটে যায়; দায় যেন স্কুলেরই, ডি আই থেকে জবাবদিহি চাওয়া হয় ।
স্থানীয় প্রশাসন এইসব দুর্বিনীত ছাত্রছাত্রীর সাহায্যে এক পায়ে খাড়া। কোনোরকম অভিযোগ হলেই তাঁরা ছুটে আসেন এবং শিক্ষকদের কাঠগড়ায় তুলে ফেলেন।
ছাত্রছাত্রীরা প্রজেক্ট নামক (শর্টকাটে দশ নম্বর পাওয়া) ব্যাপারটি কিছুতেই জমা দিতে চায় না। তারা হয়ত জানে, জমা না দেওয়া ছেলেটিকেও কিছু নম্বর দেওয়া হয়, পোর্টালে শূন্য নেয় না।
কবিতা মুখস্থ, ব্যাসবাক্যসহ সমাস, বাগধারা, এক কথায় প্রকাশ, বিস্তৃত আলোচনা; এ জাতীয় অর্বাচীন প্রশ্নের উত্তর তারা দেওয়ার প্রয়োজনই মনে করেন খাতায়, শুধু জানে টিক মারতে। টিক মারা উত্তর ছাড়া অন্য কিছু লিখতে তাদের প্রবল অনীহা।
পড়াশুনোর কথা বলা আজকাল শিক্ষকদের দণ্ডনীয় অপরাধ। "বাচ্চার মুখটা দেখুন, এভাবে ওকে বললে ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে, এই তো গত সপ্তাহেই হাসপাতাল থেকে এলো।" কিন্তু সেই ছাত্রীর রিলস বানানোর ভিডিও শিক্ষকদের নিউজ ফিডে যখন আসে (এখন করোনার পর স্কুলগুলিতে গ্রুপে খবর দেওয়া চালু হয়ে গেছে তাই ফিডে সবার ছবি আসে), সেই ছাত্র ছাত্রীর সাজপোশাক আচরণ বা স্কুলে না আসা নিয়ে কিছু বলা যাবেনা, পড়াশুনোর কথা তো দূর অস্ত। পরিষ্কার জানিয়ে দেন অভিভাবক, এসব তো এখনকার বাচ্চারা করবেই, বারণ কি করা যায়!
গ্রুপের মেসেজ তারা দেখবেও না, জানবেও না তবু শিক্ষকদের গুরু দায়িত্ব তাদের বাবাবাছা করে খবর কনভে করা।
ছাত্রছাত্রীর গার্ডিয়ান মিটিং এ তাদের চেয়ে বছর দুয়ের বড় দাদা বা পাড়ার দাদা দিদিরা আসবে।কিন্ত তাদের বলা যাবেনা আপনারা কারা! আবার এইসব শিক্ষারত্নদের বাবা মায়েদের সারা বছর দেখা পাওয়া না গেলেও কোনো সমস্যার সময়, যেমন পরীক্ষায় পাস নম্বর না পাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া কিম্বা স্কুলে না এসে অন্য কোথাও চলে যাওয়া; সেসময় বাবা মায়ের সদলবলে উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। যেন শিক্ষকদের দায়িত্ব স্কুলের পরে ওদের বাড়ির পৌঁছে দেওয়া।
আরো কত রকম নাট্যরঙ্গ চলেছে, লিখলে মহাভারত।
ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা।