এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • ফেরারী ফৌজঃ পর্ব ৯

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • দ্বিতীয় ভাগ

    অলকেশের ডায়েরির কয়েকটি পাতা

    )
    কালো বেড়াল

    বেড়ালটা আবার এসেছিল।কাল রাত্তিরে। জানলা দিয়ে দিব্যি গলে চলে এল। 
    আমার খাটের পাশে ওষুধপত্তর ও নার্সের চার্ট রাখা ছোট সাদামত বিধবা টেবিলটার ওপর কেমন যেন অলস ভঙ্গিতে উঠে বসল। 
    আমাকে দেখতে লাগল। পিত্তি-হলুদ চোখ।

    আমি হাত নেড়ে তাড়া দেব, সে সুযোগ নেই।হাত জোড়া আছে খাটের পাশে স্ট্যান্ড থেকে ঝোলানো রক্তের বোতলে। ব্লাড ট্রানসফিউশন।
     আগের কেমো হয়ে যাওয়ার পর প্লেটলেট কাউন্ট নাকি কমে গেছে। কোথায় কোন ব্লাড ব্যাংক থেকে এই রক্ত এসেছে জানি না। 
    তবে আমার গ্রুপ এ নেগেটিভ; সহজে পাওয়া যায় না।

    আমি হুশ্‌ বলতে পারছি না। কথা বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক মাস।তাই যা বলার হয় ইশারায় বলি, নয়তো কাগজে লিখে। 
    মাথার কাছেই একটা রুলটানা খাতা আছে, আর একটা ডট্‌ পেন। কিন্তু এই অবস্থায় কী করে লিখব? কাকে লিখব? 
    সিস্টার স্নিগ্ধা রক্তধারার স্পিড বেশ কমিয়ে দিয়ে ওদের রেস্ট রুমে গেছে। ঘন্ট-দেড় ঘন্টা পরে এসে দেখে যায়।
    ততক্ষণে বেড়ালটা চলে যাবে।
     

    কালকেও লিখে দিয়েছিলাম ওর কথা, পরশুদিনও। ওরা আমার খাতা দেখে ভুরু কুঁচকে আমার কপালে হাত দিল, প্রেসার মাপল। 
    ঘুম হয়েছে কি না জিজ্ঞেস করল। কীসব বলাবলি করল , কানে এল কোন একটা ওষুধের , হয়ত ঘুমের, ডোজ বাড়িয়ে দেবে।
    দিক গে, বাড়িয়ে দিক। আরও বাড়িয়ে দিক, আরও। এখন আর কিছু ভাল লাগে না। শুধু ঘুমুতে চাই।
     একটা হাতে নিডল্‌ ফুটিয়ে রাখা আছে, সেও কতদিন হয়ে গেল; আগে ডান হাত, এখন বাঁ-হাত।
     আর ভালো লাগে না।

    খেতে ভালো বাসতাম। আমাকে খাইয়ে সবাই খুশি হত। এখন সেই খাওয়াটাও এক তামাশা।
    গলা দিয়ে একটা পাইপ ঢোকানো হয়েছে। লিকুইড স্যুপ, অ্যান্টাসিড সব ওই পাইপের গায়ে একটা মোটা সিরিঞ্জ মতন জুড়ে তার মধ্যে ঢেলে দেয়। 
    জলও খাই ওই ভাবে।

    এইসব আগড়ম বাগড়ম ভাবছি, তখন আমাকে চমকে দিয়ে বেড়ালটা কথা বলে উঠল।
    --- মন খারাপ করে না।তবুও বইটই তো পড়তে পারছ।তাই বা কম কি!

    শালা! তোর--
    --অ্যাই খিস্তি করে না! ভদ্রঘরের লেখাপড়া জানা ছেলে কুলিমজুরের মত মুখ খারাপ করে না!
     
    চোপ শালা! বেশি মাজাখি করলে গাঁঢ় ভেঙে দেব। 
    আমি তো মজদুর হতেই চাই, কোন শালা ভদ্দরলোক হতে চায়?

    বেড়াল এবার ফিকফিকিয়ে হাসে। ল্যাজমোটা হুলো কোথাকার। 
    আমার চোখে সবকটা কালো বেড়াল একই রকম দেখতে,--- কুচকুচে কালো, পিত্তিহলুদ চোখ। 
    অবশ্যি সব চিনেম্যানদেরও আলাদা করে চেনা কঠিন। না, না! মাও আর চৌকে ঠিক ভীড়ের মধ্যে চিনে নেওয়া যায়।
    আর লিন পিয়াও। খেঁকুরে, চোয়ালভাঙা।

    কিন্তু এই বেড়ালটাকে কেন চেনা চেনা লাগছে?আগে এই ছ্যাঁচড়া হাসিটা বন্ধ করুক।
    --- হাসির কথা শুনলে হাসব না? মন চেয়েছে মজদুর হতে!
     মন কত কী চায়, হেমা মালিনীকে বিয়ে করতেও চায়। শখের মজদুর হতেও চায়। চাইলেই হয় নাকি?

    কেন? হো চি-মিন ও তাঁর কমরেড্স হ্যানয়ের রাস্তায় রিকশা চালান নি?
    --- তাতে হো চি-মিন রিকশাওয়ালা হয়ে যান নি।

    তুই শালা কে বল তো? কেন মনে হচ্ছে আগে কোথাও দেখেছি? 
    আর আমার মুখে তো কথা ফোটে না। তবু মনে মনে যা বলছি তা শুনতে পাস কী করে?
    --- ভাবো, ভাবো! ভাবতে ভাবতেই মনে পড়বে। এখন পালাই, সিস্টার স্নিগ্ধা আসছে। বোধহয় বোতলটা চেঞ্জ কারবে। কাল আবার।

    সিস্টার স্নিগ্ধা ঘুম চোখে এসে বোতলটার দিকে তাকিয়ে ভুরু কোঁচকালেন। বিড়বিড় করে স্পীড একটু বাড়িয়ে দিলেন।
     তারপর পাশের টুলটায় বসে পড়ে হাই তুলতে লাগলেন।
    আমি বুঝতে পারছি, ও অপেক্ষা করছে কতক্ষণে বোতলটার শেষ রক্তবিন্দু চুঁইয়ে নিঃশেষ হবে।
     তখন ও নিশ্চিন্ত হয়ে আর এক রাউন্ড গ্লুকোজ চালিয়ে দেবে, একটু স্পীডে; তারপর সব চুকে বুকে গেলে ঘুমোতে যাবে।
     রোজকার রুটিন। যাবার সময় মিষ্টি করে বলে দিয়ে যাবে-- -- আমি পাশেই আছি, চিন্তা করবেন না। 
    কোন অসুবিধে হলে আপনার হাতের পাশে ওই বোতামটা টিপে দেবেন, ব্যস্‌।

    ঘরের মধ্যে একটা ডিমলাইট, টুলের ওপর ঝিমুতে থাকা এক নারী। রাত কত হল? উত্তর মেলে না।
     কিসের ডায়লগ যেন, নাটক না সিনেমার? দুর ছাই! কিছুই মনে পড়ে না।
    আচ্ছা, টুলের ওপরে আধো ঘুম আধো জাগরণে থাকা ওই নারী- - - না , না। নারী নয়, ও একজন নার্স।
     নার্স মানে? মানে যে নার্সিং করে।
    এটা কোন জবাব হল?
    এটাই জবাব।

    বেশ, নার্স কি নারী নয়?
    বলা মুশকিল।
    কেন?
    নার্স, নার্স! নার্সদের স্তন নেই!

    এটা আবার কোত্থেকে গেঁড়িয়েছ?
    গ্যাঁড়াবো কেন? বরানগরের কবি অমিতাভ দাশগুপ্তের লাইন।
    ও শালা! ভালো ভালো কথা মনে পড়ে না? আর এইসব লাইন বেশ মনে আছে মক্কেলের!
    আচ্ছা, আচ্ছা, ঝগড়া করে না, বল ডাব?
    ভাব, ভাব, ভাব!

    এ কিরে শালা? কালো বেড়ালটা আবার এসেছে নাকি?
    না,না! ও আসবে কাল রাত্তিরে।
    উঃ, কখন যে সকাল হবে।
    আচ্ছা, এক কাজ করি। ভেড়া গুণেও ঘুম আসছে না। বরং বোতল থেকে টিপ টিপ করে চুঁইয়ে পড়া রক্তবিন্দুগুলোকে গুণতে থাকি। 
    আরে! ওদের টপকে পড়ার মধ্যে একটা ছন্দ, একটা রিদম আছে। 
    যেন কেউ প্যারেডে মার্ক টাইম বা কদমতাল করছে।
    বেশ, এক দুই, এক দুই, এক দুই-----।


    রক্ত ঝরছে ফোঁটা ফোঁটা।
    ধানক্ষেতের পাশে বনইমলি গাছের গোড়ায় পিঠ ঠেকিয়ে আমি। হাতে একটা দেশি কাট্টা বা পিস্তল। 
    পাশে শুয়ে কমরেড রমনমূর্তি বা রমাইয়া। আসল নাম জানিনা, জানতে নেই। 
    ওর হাতের রক্তমাখা গুপ্তিটা ছোটবার সময় কোথায় যেন পড়ে গেছে।
     কিন্তু বোমাটা ফেটেছে ওর হাতেই, দুটো আঙুল বোধহয় নেই। আর খানিকটা হাতের পাতাও। 
     
    ওর শার্টের নীচে থেকে গেঞ্জি খুলে তাই দিয়ে একটা ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছি। কিন্তু ফোঁটা ফোঁটা রক্ত চুইঁয়ে পড়ছেই।

    ছত্তিশগড়ের ভাটাপাড়া রেলস্টেশন থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম গুটুরিয়া। 
    আজ রাত্তিরে আমরা অ্যাকশনে নেমেছিলাম। এ রাজ্যের প্রথম জোতদার বিরোধী অ্যাকশন।

    পড়াশুনো করুন কমরেড।
     সুবে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার বাইরে কোথাও ভূমি ব্যবস্থায় বৃটিশের চাপিয়ে দেওয়া পার্মানেন্ট সেটলমেন্ট বা বাংলা ইতিহাসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেই।
     এদিকে আছে রায়তওয়ারি ব্যবস্থা। এটা অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশের ছত্তিশগড় অঞ্চল। বা প্রাচীন যুগের দক্ষিণ মহাকোশল
    ।তাই এখানে কোন জোতদার নেই, আছে মালগুজার।

    ধেৎ, যাঁহা পায়েস তাঁহা পরমান্ন।
    এই গুটুরিয়া গ্রামের মালগুজার সুরজমল আগরওয়ালের বাড়িতে আমরা কাল সন্ধ্যেয় আশ্রয় নেই।
     বলি-- শেষ বাস চলে গেছে। রাত্তিরে শুধু শুতে চাই। সকাল বেলায় প্রথম বাস ধরে বিলাসপুর ফিরে যাবো।
     আমরা সাপ্তাহিক হাট-বাজারের গোরু-বাছুর-মোষের দালাল। 
    আজ ১০ কিলোমিটার দুরের অর্জুনী গ্রামের হাট থেকে বিক্রিবাটা ফড়েগিরি করে ফিরছি, কিছু পয়সাকড়ি গাঁটে বাঁধা আছে। 
    তাই রাতটা এখানে কাটিয়ে যেতে চাই। আমরা তিনজন।
    বানিয়া মাড়োয়ারি ব্যাটা কিছুই বোঝেনি। আমাদের বাইরের বারান্দায় খাটিয়া পেতে শুতে দিয়ে ওরা ভেতর থেকে দরজায় খিল তুলে দিল। 
    কিন্তু কালনাগিনীর জন্যে লোহার বাসরেও ছ্যাঁদা থাকে।

    ও জানত না যে ওর ছোকরা চাকরকে আমরা আগেই হাত করে ফেলেছি। 
    তাই মাঝরাতে দরজা খুলে গেল বিনা বাধায়। ইশারায় বুঝে গেলাম ব্যাটা রক্তচোষা কোন ঘরে আছে।
    একে মাড়োয়ারি তায় জনসংঘী। এর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

    কমরেড মূর্তি মশারিটা তুলে সোজা ওর পেটে গুপ্তিটা ঢুকিয়ে দিল। তৃতীয় জন স্থানীয় ছেলে চৌহান বাইরে গার্ড দিচ্ছিল। আমি সিন্দুকের চাবিটা হাতড়াচ্ছিলাম। ওর চুলের মুঠি ধরে হ্যাঁচকা টানে খাটের বাইরে ফেলেছি কি বালিশের নীচে চাবির গোছা দেখতে পেলাম।
    কিন্তু তার আগে একটা বাচ্চার তারসপ্তকে চিৎকার!
    --হায় দদ্দা! দদ্দা কো মার ডালা! ছোড় দো, ছোড় দো হমারে দদ্দা কো।

    কী কান্ড! ব্যাটার নাতি যে দাদুর সঙ্গে ঘুমোয় কে জানতো?
    আমার হাত-পা কাঁপতে লাগলো।
    বাইরে গলার আওয়াজ। 
    চৌহানের আতংকিত আওয়াজ--ভাগো কমরেড্স্‌! গাঁওবালে ঘের লেঙ্গে।
    সত্যিই পালানো সহজ হল না।

    আমার কাঁধে একটা বড় ব্যাগ, তাতে কিছু জামাকাপড়-দূরে গিয়ে পোষাক বদলাবার জন্যে।
     চৌহান কোথায় হাওয়া হয়ে গেছে। মূর্তি আগে আগে, পেছনে আমি।
    কিন্তু দূরত্ব কমে আসছে যে! আমার শ্বাস ফুলে উঠছে, পারছি না। 
    দুটো লোক প্রায় আমাকে ধরে ফেলে আর কি!
     

    মূর্তি দাঁড়িয়ে পড়ল। ওর ব্যাগের থেকে বোমা বের করে ছুঁড়ে দিল ওদের দিকে। দুজন পড়ল ছিটকে।
    বাপ রে! বম মারা! বম মারা!
    কেউ আর তাড়া করছে না।

    কিন্তু দ্বিতীয় বোমটা ফাটল মূর্তির হাতের তালুতে।
    পেছনের দলটা থমকে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। এবার ওরা দ্বিগুণ উৎসাহে ধাওয়া করতে লাগল।
    ওদের আরো কাছে আসতে দিলাম। তারপর আমার কাট্টা থেকে দুটো ফায়ার করলাম। 
    আগুনের হলকা! কারো গায়ে লাগল কি না বুঝতে পরলাম না। কিন্তু নিমেষের মধ্যে মাঠ ফাঁকা।
     
     
    এবার আমাদের রাস্তা ছেড়ে কোথাও রাত কাটাতে হবে। 
    ভোরের শুকতারা দেখে আন্দাজে যেতে হবে পটপর গাঁয়ে। আলো ফোটার আগেই। 
    সেখানে শেল্টার আছে, ডাক্তারের চিকিৎসা পাওয়া যাবে।
    কিন্তু একী! রক্ত বন্ধ হচ্ছে না যে! যারা গুলি চালাতে বোম বাঁধতে শিখিয়েছে তারা তেমন করে ব্যান্ডেজ বাঁধতে শেখায় নি যে। 
     
    রক্ত ঝরছে, ফোঁটা ফোঁটা, টপ টপ।


    লকেট- তাবিজ -মালা?
    আজ সকালে কেউ বাড়ি থেকে আমার খাবার নিয়ে এসেছে। কী আহ্লাদের কথা! 
    যে নিয়ে এসেছে সে নাকি জানতো না যে আমাকে ওইভাবে খাবার দেওয়া বহুদিন বন্ধ হয়ে গেছে। 
    আমি খাই লিকুইড ডায়েট, তাও গলায় ঢোকানো একটা রাবার টিউব দিয়ে,  ওর গালভরা নাম রাইল টিউব।

    --আমি --আমি সত্যিই এসব জানতাম না অলকেশ। কেউ বলেনি।
    --- তোমাকে দোষ দিচ্ছি না চিত্রা, খালি ভাবছি হঠাৎ তুমি! কেন এলে? শেষ দেখা দেখতে?
    চিত্রার মুখটা কেমন বেঁকে উঠে ভেঙে চুরে যায়।
    --ওভাবে বল না অলকেশ! তুমি তো জান--!
    ও কথা শেষ করতে পারে না।

    ওর সত্যিই কোন দোষ নেই। আমরা আলাদা হয়ে গেছি বছর পনের আগে। 
    মধ্যপ্রদেশের এক শহরে প্রবাসী বাঙালী পরিবারের মেয়ে আমার সঙ্গে কলেজে পড়ত।
     আমি কোলকাতা থেকে ছিটকে পড়ে আবার কেঁচে গন্ডুষ করে ছ'বছরের ছোট ব্যাচের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পড়াশুনো শুরু করেছিলাম। 
    সেইসময় কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে স্থানীয় কিছু গুন্ডা কলেজের ক্যান্টিনে আড্ডা জমিয়ে ভর্তি হতে আসা নতুন ছেলেমেয়েদের থেকে তোলা আদায় করত। 
    আমি তোলা দিতে অস্বীকার করে মার খেলাম।

    কিন্তু ওই ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ আরও কিছু ছেলেমেয়েকে সাহস জোগাল। 
    তাদের মধ্যে একজন চিত্রা সরকার। 
    ও নিজে জনাপাঁচেক মেয়েকে একজোট করে প্রিন্সিপাল স্যারের চেম্বারে ঢুকে হল্লা মচিয়ে দিল।
    তারপর ঘটনা কোত্থেকে কোথায় গড়াল ভেবে পাইনি। আমরা থানায় গেলাম, স্টাফ রুমে কথা বললাম। 
    সবাই মৌখিক সহানুভূতি দেখালেন কিন্তু কোন কাজ হল না।
     

    ক্লাস চলছিল। এর মধ্যে একদিন গুন্ডাদের সর্দার লড্ডন খানের ডানহাত রবি তিওয়ারি বটানির এইচ ও ডি ডঃ মন্সরমানীর টাকমাথায় তবলা বাজিয়ে দিল। 
    ওঁর অপরাধ ওঁর মেয়ে শোভা চিত্রার সঙ্গে প্রিন্সিপালের রুমে ও থানায় গুন্ডামির বিরুদ্ধে কমপ্লেন করতে গেছিল। 
    অপমানিত প্রফেসর আমাদের সামনে এসে কেঁদে ফেললেন।

    আমরাও কী করব বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু ঘটনা ঘটে চলল। 
    সেই সময় লড্ডন খান ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে দুই চ্যালার সঙ্গে এদিকে আসছিল। 
    আমাদের দেখে এগিয়ে এল। দাঁত বের করে বলল-- আরে প্রফেসর! শেষে এই হিজড়েদের কাছে সাহায্য চাইতে এসেছেন! তাতে চিঁড়ে ভিজবে না।
     মেয়েকে বলুন থানা থেকে কম্প্লেন ফেরত নিতে। কী রে, ঠিক বলেছি না!

    আমার ভেতরে কিছু একটা ঘটে গেল।
    কলেজ বিল্ডিংয়ের রিপেয়রিং এর কাজ চলছিল। কিছু লোহার ছড়, বাঁশ,খুঁটি ও খোয়া কাছেই পড়ে ছিল। 
    কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা ঢালাই মিস্ত্রির কাঠের পাটা তুলে মারলাম সোজা লড্ডনের মাথায়।
    ও মাটিতে পড়ে গেল।
     
     সঙ্গীরা এগিয়ে আসতেই আমার সঙ্গের ছেলেরা লোহার ছড় তুলে নিয়ে ওদের তাড়া করল। 
    মেয়েরাও বাদ গেল না। ওদের খোয়া বৃষ্টিতে ঘায়েল হয়ে গুন্ডার দল তখনকার মত পালিয়ে গেল। 
    কিন্তু ওদের পেছনে কিছু স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবশালী লোকজন ছিল।
     

    পরের দিন কলেজ প্রাঙ্গণে দাঙ্গা করার অপরাধে আমরা চারজন গ্রেফতার হলাম। ওদের মধ্যে একজন চিত্রা সরকার।
    হাওয়া বদলাতে শুরু করল।বিক্ষোভে ফেটে পড়ল ছাত্রছাত্রীরা। 
    ওদের ধর্না ও অনশন খবরের কাগজে রোজ প্রথম পাতায় জায়গা পেল। 
    প্রিন্সিপালের রুমে গিয়ে কড়া প্রতিবাদ করলেন কিছু অধ্যাপক। তাঁদের মুখিয়া ডঃ মন্সরমানী।
    শেষে আমরা ছাড়া পেলাম।
     ক্লাস শুরু হল। লড্ডন খান আর কলেজে ঢোকেনি।
     অজান্তেই আমি এবং চিত্রা অনেক কাছাকাছি এলাম। কলেজে আমরা প্রায় লিজেন্ড।

    পাশ করে দুজনেই চাকরি পেলাম এবং বিয়ে করলাম। দু'বছরের মাথায় অরুণ জন্মাল। 
    আমাদের মত সুখী বোধহয় কেউ ছিল না।
    কিন্তু আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলাম যে আমাকে ফুলটাইম রাজনীতি করতে হবে। নইলে গতি নেই। 
    চাকরি ছাড়লাম। চিত্রা প্রথমে মৃদু আপত্তি করেছিল।
    -- ওসব উগ্র লাইন কবে চুকেবুকে গেছে। তুমি ওদের সাপোর্ট কর, চাঁদা দাও, প্রবন্ধ লিখে দাও। 
    ব্যাস্‌, হোলটাইমার কেন হতে চাও? আর আমাদের একটা ভবিষ্যৎ আছে না?

    আমরা বন্ধুর মত হ্যান্ডশেক করে আলাদা হয়ে গেলাম।
     তবে ওর ইনকাম ট্যাক্সের রিটার্ন বানানো হোক কি অরুণের স্কুলের ফর্ম ফিল আপ করা-- সব ব্যাপারেই আমি থাকতাম। 
     
    আর যেতাম অরুণের জন্মদিনে। আমাদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে কথাবার্তা তর্কবিতর্ক আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেল। 
    যোগসূত্র বলতে শুধু অরুণ।
    কিন্তু স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিকে রামঝর্নায় সাঁতার কাটতে গিয়ে ডুবে গেল অরুণ, আমাদের আট বছরের ছেলে।
    কয়েকদিন নিয়মিত ওর ঘরে গেলাম। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম যে চিত্রা আমাকে আর সহ্য করতে পারছে না। 
    আকারে ইঙ্গিতে বলতে লাগল যে আমার খামখেয়ালিপনার জন্যেই নাকি আমরা অরুণকে হারিয়েছি।

    ও ট্রানসফার নিয়ে শহর ছেড়ে চলে গেল। আমিও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
    তারপর আজকে এই ব্যাপার। কেন এসেছে? যার শেষদিন ঘনিয়ে এসেছে তাকে করুণা করতে? আমি তো কারও করুণা চাই না।
    ও চলে গেলেই ভাল।

    এই সময় রোজ ঘুম ভেঙে যায়। আসলে ঘুম জিনিসটি কখনই ঠিক মত আসে না। 
    কোত্থেকে আসবে! সারাদিন এত সব ওষুধ! বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি সব নাম। তারপর আছে কেমোথেরাপির এফেক্ট
     --সিসপ্ল্যাটিন, এপসোমাইড, ভিমব্লাস্টিন--- আরো কি সব! মনে রাখতেও চাই না। 
    তারপর সারাদিন শুয়েই থাকি তো!

    একটা আচ্ছন্ন ভাব, একটু তন্দ্রামত, ও তো প্রায় সারাদিন চলে। কিন্তু রাত্তিরে ব্যথাটা হটাৎ ঝিলিক দিয়ে ওঠে।
     একদম জানলেবা! মনে হয় অজ্ঞান হয়ে যাবো বা কাউকে খুন করব।
    ইদানীং আমার জন্যে মরফিন ইঞ্জেকশন বরাদ্দ হয়েছে। 
    নীট ফল ঘন্টাতিনেকের ঝিমুনি।

    কিন্তু চিত্রা এসে সেটুকুরও বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
    আর আশ্চর্য! আমি কি হিংসুটে হয়ে যাচ্ছি। চিত্রাকে হিংসা করব? ভাবতেও পারিনি। 
    কিন্তু ওকে দেখে এত রাগ হচ্ছিল কেন? 
    ভাবতে ভাবতে নিজের নগ্ন চেহারাটা দেখতে পেলাম।

    চিত্রা বেঁচে থাকবে, আর আমি চলে যাব? এখনও ওর শরীরের ভূগোল পুরুষের চোখে বেশ আকর্ষণীয়। 
    সেই ভূগোলের কন্ট্যুর ম্যাপ আমার অতি পরিচিত।
    সেই শরীরের আমার আর কোন অধিকার নেই।
     বরং ওর শরীর, ও কাউকে দান করতেই পারে। আমার কি! 
    কিন্তু আমি যে জ্বলে যাচ্ছি।

    সময় তোমাকে সব দান করে চলে গেছে বলে
    সুদর্শনা তুমি আজ মৃত।


    এই রকম লাইন কে লিখেছিলেন? জীবনানন্দ বোধ হয়।
    আচ্ছা, উনি কি নিজের নায়িকার মৃত্যু কামনা করেছিলেন? কবিরাও কি হিংসুটে হয়?
    -- কেন হবে না? কবিরাও মানুষ, ষড়রিপুর বশ।
    ও এসে গেছ? এসেই শালা জ্ঞান দিচ্ছ? ফিলজফি মারাচ্ছ? নিঘঘাৎ আজ তোমার কোথাও ভূরিভোজ জুটে গেছে। মাছের কানকো? নাকি নাড়িভুঁড়ি?
    --ছ্যাঁচড়ামি করছ কেন?
    --ভরাপেট না হলে কি কেউ মাঝরাত্তিরে ফিলজফি ঝাড়তে আসে?

    -- হিংসে কর না। তোমার পেটও এমন কিছু খালি নেই।গাল না দিয়ে দেখ, চিত্রা তোমার জন্যে কি এনেছে?
    -- কী আবার আনবে? আপেল, কমলা আর বেদানা! রোগীর সঙ্গে দেখা করতে এলে সবাই যা নিয়ে আসে! আমি সহ্য করতে পারি না।
     মনে হয় হবিষ্যির আয়োজন।

    -- তুমি এত অকৃতজ্ঞ কেন? ও এসে রেসিডেন্ট ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলেছে। 
    জেনে গেছে তোমাকে রাইল টিউবে করে খাওয়ানো হয়। তাই ফলটল আনে নি।
    -- তবে কি এনেছে? কোকাকোলা?
    -- উঃ! নিজের বিষে নিজেই জ্বলে পুড়ে মরছ! শোন, ও জেনেছে যে রোজ তুমি দিনের বেলায় ব্যথা না থাকলে বই পড়। 
    তাই ও দুটো পূজো সংখ্যা আর একটা অন্য বই নার্সের কাছে ছেড়ে গেছে। সকালে পেয়ে যাবে।
    --অন্য বই! সেটা আবার কী?
    -- ও তোমার জন্যে পন্ডিচেরির শ্রীমা'র ছোট্ট লকেট ও জীবনী দিয়ে গেছে। 
    স্নিগ্ধা সিস্টারকে বলে গেছে তোমায় বুঝিয়ে সুজিয়ে বইটা পড়াতে আর লকেটটা বালিশের তলায় রেখে দিতে!

    --- শালা! এটাই বাকি ছিল? যত ঢ্যামনামি! ও বুঝি আজকাল খুব পূজো আচ্চা করছে? পন্ডিচেরিতে নাড়া বেঁধেছে? সে করুকগে!
     কিন্তু আমার সঙ্গে এসব করার সাহস পেল কোত্থেকে? দশ বছর হয়ে গেছে , এখন এল ধর্মপত্নী মারাতে?
    -- আরে! ও বিশ্বাস করে যে শ্রীমার ফটো বালিশের তলায় রাখলে তুমি সেরে উঠবে। 
    ওর ওই চাওয়াটুকুর কোন দাম নেই? এত অহংকার!
    যাকগে, তুমি এখন এসবের বাইরে। তারছেয়ে মূর্তি গাড়ুর গল্পটা শেষ কর। 
     
    সেই যে রাত্তিরে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছিল? সেটা বন্ধ হল তো?

    -- না, বন্ধ হয় নি। হবে কী করে? ওর হাতের তালু চিরে গেছল, দুটো আঙুল নেই। ওই বীভৎস ক্ষতগুলো থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতে সার্জারির দরকার ছিল। সেটা সম্ভব নয়। 
    তাই আমার কমরেড মূর্তি গাড়ু ভোর ভোর শেষ বারের মত চোখ বুজল।

    --- বাজে কথা। ওর শেষবারের মত চোখ খোলা বা বোঁজা তুমি দেখ নি। তুমি কোন ডাক্তার নও। 
    কী করে অমন গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পার যে তোমার কমরেড মূর্তি ঠিক কখন ভাটাপারা এলাকার হাওয়ায় শেষবারের মত শ্বাস টেনেছিল?
    তুমি সেটা দেখ নি। তুমি ওর বুকে হাত রাখনি, ধুকধুকি বন্ধ হয়ে যাওয়া টের পাওনি। 
    ওর তাকিয়ে থাকা নিষ্প্রাণ চোখদুটোর পাতা বুজিয়ে দাও নি-- মানে সিনেমায় যেমনটি হয়। 
    কারণ, তুমি তার আগেই পালিয়ে গিয়েছিলে। 
    পরের দিন স্থানীয় পত্রিকায় নকশালপন্থী ডাকাত মূর্তির রক্তক্ষরণে মারা যাওয়ার খবরটা পড়েছিলে, ব্যস।
    -- না, না; আমি পালাইনি।

    -- ও হো, পালাওনি। আমিই ভুল বলেছি। ওটা ছিল স্ট্র্যাটেজিক রিট্রিট। এবং তোমাকে মূর্তিই বলেছিল অমন করতে।
     বলেছিল তোমার জীবনের দাম বেশি। 
    বলেছিল দুজনে ধরা পরার চেয়ে একজনের বেঁচে থাকা দক্ষিণ পূর্ব মধ্যপ্রদেশে পার্টির সংগঠন গড়ে তোলার জন্যে বিশেষ জরুরী।
    তাই তুমি মূর্তিগাড়ুকে গাছের নীচে শুইয়ে একটু একটু করে মরতে দিয়ে শেষরাত্তিরে পায়ে হেঁটে ভাটাপারার বাসরাস্তায় এসে কয়লার ট্রাকে করে জবলপুর চলে গিয়েছিলে।
    --- একদম তাই। এগুলো তো ডকুমেন্টেড। পার্টির কাছে রয়েছে।
    -- তাই বটে! সে ডকুমেন্ট তোমারই বানানো। তুমি পরে ঘটনাটির যে বিবরণ পার্টির স্টেট কমিটিতে পেশ করেছিলে সেটাই তো ডকুমেন্ট হয়ে গেল।
     কিন্তু কমরেড অলকেশ, আমি তো জানি কী ঘটেছিল।

    --কী জানো, ক্কী জানো তুমি?
    -- কমরেড মূর্তি ওসব বড় বড় মেলোড্রামাটিক ডায়লগ ঝাড়েনি। ও বুদ্ধিজীবি ঘর থেকে আসেনি। ওর গলা শুকিয়ে আসছিল। শুকনো ঠোঁট চাটছিল । 
    ও খালি 'নীর নীর' করছিল আর তোমার দিকে তাকাচ্ছিল। 
    আর তুমি " লেকে আতা হুঁ" বলে সেই যে গেলে আর ফিরলে না। 
    রিপোর্টে লেখা মূর্তির রিকোয়েস্টগুলো আসলে তোমার নিজের তৈরি। 
    কমরেডকে ফেলে রেখে প্রাণ হাতে করে পালানোর জাস্টিফিকেশন, র‍্যাশনালাইজেশন।

    উঃ হাতের কাছে কিছু নেই যে বেড়ালটাকে ছুঁড়ে মারি। তবে সেই মুহুর্তে সিস্টার এসে গেল।
    --সিস্টার, জানলাগুলো বন্ধ করেন না কেন?
    -- সব বন্ধই তো আছে, অলকেশদা।
    এই ক'মাসে আমি অধিকাংশ সিস্টারের দাদা হয়ে গেছি। 
    বেশ, রাগটাকে চেপে রেখে বললাম-- তাহলে বেড়াল ঢুকছে কোথা দিয়ে?
    -- বেড়াল? কোথায় বেড়াল?
    --আমি যে নিজের চোখে দেখলাম। হলদে চোখো কালোবেড়াল এতক্ষণ আপনার টেবিলের ওপর বসেছিল!
    -- ওঃ, সেই মস্ত হুলোটা? রাগ করবেন না অলকেশদা। ওটা আপনার হ্যালুসিনেশন, 
    এই ওষুধের চোটে অনেকেই এরম অনেক কিছু দেখে।
    আমি পাশ ফিরে শুই।
                                                                                                                                                                    (চলবে)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Manali Moulik | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:৫৮733855
  •    কান্না পাচ্ছে ভীষণ।
    রোম‍্যান্টিকতার আচ্ছাদন দিয়ে বর্তমানেও  এই সময়টির কোনো শিল্প-পরিবেশনা দেখলে ভীষণ বিরক্তি লাগে (একান্ত ব‍্যক্তিগত মত)। নাটক বা অন‍্য কোনো মাধ‍্যমে এইসব থ্রিলিং বিষয়গুলি ঠান্ডা অডিটোরিয়ামে বসে দেখলে একইসঙ্গে বিরক্তি আর গলায় পাকিয়ে ওঠা কষ্ট দুই-ই হয়। কারণ, যত যাই হোক, এই ধারণাটির বাস্তবায়ন যেভাবে ঘটেছিলো তাকে সমর্থন করা যায় না। এবং জীবন ও ঔজ্জ্বল‍্যের চূড়ান্ত অপচয়। তবে সাংস্কৃতিক মননের 'প‍্যারাডাইম শিফ্ট' সত‍্যি আজকের সময়েও প্রাসঙ্গিক লাগে...যার জন‍্য সুদীর্ঘ সময় দরকার। হয়তো বেশী কথা বলে ফেলছি , কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ‍্য করেছি বাঙালী জাতির মধ‍্যে।  কেউ যন্ত্রণা পাচ্ছে সেটাকে রোম‍্যান্টিসাইজ করা। যেটা মানিক বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস বা মৃণাল সেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ‍্য। সুভাষ মুখোপাধ‍্যায় সম্ভবতঃ এজন‍্যই লিখেছিলেন মানিক বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের মৃত‍্যুর পর  'ফুলগুলি সরিয়ে নাও,আমার লাগছে।' 
    সত‍‍্যি পীড়াদায়ক। এই উৎসর্গ ঠিক না ভুল তা দেখা ইতিহাসের দায়িত্ব। কিন্তু কোনো প্রতিবাদী, কোনো বিপ্লবী কি কারো সন্তান ছিলো না? ভাই, বন্ধু বা প্রিয় মানুষ? 
    সামগ্রিকতার দিকে না দেখে এই চূড়ান্ত আঁধারের কাব‍্য কেন তারা রচনা করেছিলো তা বোঝা ভীষণ কষ্টসাধ‍্য। অন্তত:, উভয় ধারণায় মূলগত বিষয় ভিন্ন। চিয়াং কাই শেকের নিজস্ব আর্মির কমান্ডার গেছিলেন তাঁর বিপক্ষে। কারণ কুয়োমিনতাং চিনের নায়কের মূলচিন্তার কারণ মাও হলেও, সাধারণ দেশবাসীর চিন্তা ছিলো জাপান। বিদেশী শক্তির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে না লড়ে এই গৃহযুদ্ধ চালাতে তারা অস্বীকার করেন। অপরদিকে এখানে তেমন কোনো পরিস্থিতি উপস্থিত ছিলো না। ভূপ্রাকৃতিক পরিস্থিতি ও সমাজকাঠামো ভিন্ন। আমাদের অজড় - অচল জাতিভেদ ব‍্যবস্থা হলো জন্মনির্ভর। চৈনিক সমাজের স্তরভেদ কর্মনির্ভর। জোসেফ নীডহ‍্যাম যার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। শুধু বুঝতে পারি না, এই উচ্চমেধার মানুষরা কেন তা ভেবে দেখেননি?  কী দৃষ্টিরোধ করেছিলো? 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন