এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • ফেরারী ফৌজঃ পর্ব ১৩

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১২৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ১৩
    মহব্বত কা পঞ্চনামা

    এরপর ক্যালেন্ডারের তারিখের আর কোন তাত্পর্য্য রইল না।
     ঘটনা ঘটছিল দ্রুতগতিতে। সন্তোষ ও জয়শ্রী রাণা ধরা পড়েছেন।
     
     ডেবরা-গোপীব্ল্লভপুরে ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস ও কোলকাতায় সিআরপি দাঁতনখ বের করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
    নেট ঘিরে কুম্বিং এর সময় পাশের বাড়ির ঢ্যাঙা রবিদা পাঁচিলের ওপর থেকে গলা বাড়িয়ে উঁকি মারায়
     সিআরপির জাঠ জওয়ানরা পাঁচিল টপকে ঘরে ঢুকে ওকে টেনে বার করে বন্দুকের কুঁদো দিয়ে বেদম পেটায়। 
    রবিদা রক্তবমি করতে করতে বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি হয়।
     

    তারচেয়েও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় পাড়ায় পাড়ায় সিপিএম-নকশাল সংঘর্ষ।
    ছোটবেলার বন্ধুরা সব হঠাৎ করে শ্রেণীশত্রু, জানী দুশমন হয়ে গেল। অল্প বয়েসিরা কেউ কাউকে দেখলেই সতর্ক চোখ, পকেটে হাত।
    আমি শ্রীকলোনি পাড়া দিয়ে শর্টকাটে আসছিলাম, একটু পরে দেখি চারজন ছেলে আমার পিছু নিয়েছে।
    চারটের সঙ্গে পারবো না।
    আমাদের এলাকা আসতে এখনও দুশো মিটারের মত পেরোতে হবে। ওরা স্পীড বাড়িয়েছে। কী করি?

    সোজা ঘুরে দাঁড়ালাম। পকেটে হাত -- ওরা দেখতে পায় পকেট ফুলে রয়েছে। আমার মুখে বাঁকা হাসি। ডাকি-- আয়! কাছে আয় ! 
    দেখি তোদের ক্যাপা!

    ওরা এগোয় না। দাঁড়িয়ে যায়। ওরা ভাবছে। আমি নড়ি না। ওরা ভাবছে।
    এবার ওদের একজন এগিয়ে আসতে চায়। অন্যরা ওকে টেনে ধরে।
    --যাস না; দেখছিস না পকেটে মাল আছে। ওরা আজকাল দানাও রাখে।
    আমি চোখ সরাই না। 
    ওরা পিছিয়ে যায়। আমি শান্ত পায়ে দশ কদম গিয়ে টেনে ছুট লাগাই । ওরা ভপকিটা বুঝতে পেরে গেছে।
     তাড়া করবে ভাবে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি আমাদের এলাকার কাছে এসে গেছি।
    কবাড্ডির এই দানটা আমিই জিতলাম।

    হল না। কবাড্ডি খেললেই হয় নাকি? দাবাটাও ভাল করে খেলতে হয়।
    কোথাও কেউ অদৃশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক দূর থেকে স্ট্র্যাটেজিক চাল দিচ্ছে, যার আমি কিছুই বুঝতে পারি নি।
     আমি শুধু সামনের ঢাল-তলোয়ার -বর্ম পরা শত্রুদের দেখছি। সে বয়সে জানতাম শত্রু খালি সামনেই থাকে।

    গত সাতদিন ধরে গৌরী আমাকে এড়িয়ে চলছে। বাড়ি গেলে ওর মা বলেন-কোচিং এ গ্যাছে। মাঠে এক-দুবার মাত্র এসেছিল। 
    ঠিক মুখ ফেরায় নি, কিন্তু এমন ভাব করছিল যে অন্য বন্ধুরা আছে, শুধু আমি নেই।
    নান্টু বলল-- তুমি গিয়ে কথা বল গুরু, নইলে ইউনিটে একটা মাত্র মেয়েক্যাডার সে ও হাতছাড়া হবে।
    -- কী ফালতু কথা!
    -- না গুরু! সিরিয়াস কেস। তোমাদের মধ্যে কী হয়েছে তা তোমরাই জান। তবে ও এসে তোমার দেওয়া সব বই প্যাম্ফলেট সব আমার কাছে ফেরত দিয়ে গেছে। 
    বলেছে--এসব আর ও রাখতে পারবে না
    --- ঠিক বলছিস? ঠিক এই কথা বলেছে?
    -- তোমাকে বানিয়ে বানিয়ে তোমার জিএফ এর বিরুদ্ধে কান ভাঙিয়ে আমার লাভ? আর মেজদির সঙ্গেও ওর কিছু হয়েছে।
     গৌরী কাল রামগড়ে গেছল, মেজদির বাড়ি বয়ে কী সব ফ্রেন্ডশিপ গিফট ফেরৎ দিয়ে কথা শুনিয়ে এসেছে।
    আমার গলা শুকিয়ে যায়।
     

    --- মেজদি ওকে কিছু বলে নি।
    -- একটা কথাও না; হ্যাঁ, না-- কিচ্ছু না।এবার তুমি যে করে হোক গৌরীকে পাকড়াও কর। দেখ কী কেস!
    দুদিন তক্কে তক্কে থেকে ওকে সন্ধ্যের মুখে মুদি দোকান থেকে কিছু নিয়ে ফেরার সময় ধরে ফেলি। 
    বেশ জোর করে টেনে নিয়ে যাই স্কুলের অন্ধকার মাঠে , ওকে জড়িয়ে ধরি। আমার সোনামণি!

    ও বিরক্ত মুখে হাত ছাড়িয়ে নেয়।
    -- গায়ে হাত দেবে না বলছি।
    --- তোর সঙ্গে আমার কথা আছে।
    --আমার কোন কথা নেই।
    --শোন, নিশ্চয়ই কোন ভুল বুঝছিস।
    -- কোন ভুল নেই। একজনকে নিয়ে টায়ার্ড হয়ে গেলে আরেকজন। বেশ।
     

    ওর গলা ধরে আসে; মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমি পেছন থেকে ধরে জোর করে আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে আনি। ওর দুগাল বেয়ে জল গড়াচ্ছে।
    আমি আগের মত সেই জল মুছিয়ে দিতে গেলে ও বেড়ালের মত থাবা মারে।
    -- নির্মলা রেস্টোরেন্টে নিয়মিত যাতায়াতটা বিপ্লবের প্রয়োজনেই? কী বল, ঠিক বলছি তো!
    আমার আর কিছু বলার নেই। শুধু হাত জোড় করছি--বেশি বাহাদুরি না দেখিয়ে কালকের মধ্যে নাকতলা ছেড়ে যাও। 
    এই এলাকা আর তোমার জন্যে সেফ নয়।
     

    -- কী বলছিস?
    --- আমার কাছে পাক্কা খবর; তোমার উপর অ্যাকশন হবে; কাল বিকেল নাগাদ। সিপিএম এর বিজয়গড় স্কোয়াড আসবে।
    -- কেন ?
    --- তুমি রামগড় নিয়ে ব্যস্ত ছিলে। আজ ভোরের দিকে মর্নিং ওয়াকে গিয়ে সুদেবস্যার আক্রান্ত হন। পেছন থেকে কেউ মাথায় লাঠির বাড়ি মারে। 
    সবার সন্দেহ নকশালদের কাজ। আর তুমিই নাকি পালের গোদা। 
    জেনে বুঝেই পাড়ায় ছিলে না। কাজেই ওদের তোমাকে সরাতেই হবে।
    আর একটা কথা।
     মার ইচ্ছে নয় যে তুমি আর আমাদের বাড়ি আসো বা আমার সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখ।
    এবার যাও।

    তৃতীয় ভাগ

    আঠের বছর বয়েসের গদ্য

    'তোমাতে নই, আমাতে নই বিষয়ে আমি লিপ্ত,
    লাগাম ছেঁড়া পাগলঘোড়া তিনটে ভীষণ ক্ষিপ্ত।
    বিজন মাঠ, বধ্যভূমি
    ধরতে গেলাম, তখন তুমি
    সরে দাঁড়াও অশ্ববাহন এবং বলদৃপ্ত,
    রক্তে নাচাও মাতাল ঘোড়া তিনটে ভীষণ ক্ষিপ্ত।'
    -----
    শক্তিপদ ব্রহ্মচারী

         ফেরারি ফৌজের রোল কল?

    ডেকচিতে ফুটন্ত ভাত উথলে উঠেছে। বিজনদা উঠে গিয়ে ঢাকনা তুলে দুটো ভাত টিপে আবার  চাপা দিল।
    --আর দু-তিন মিনিট; তার পরেই নামিয়ে দেব।
    --ঠিক আছে; কোন তাড়া নেই।
    শংকর অন্যমনস্ক ভাবে বলে বিজনদার তামাকের প্যাকেট থেকে এক চিমটি তুলে হাতের তেলোয় ডলতে থাকে। 
    আমি মাদুরের কোণা থেকে একটা কাঠি বের করে দাঁত খোঁচাতে থাকি। 
    দরজার ফাঁক দিয়ে জুন মাসের দুপুরের একচিলতে রোদ্দুর মেজেতে মৌরসীপাট্টা নিয়ে বসে আছে। 
    উঠোনের জলের বালতির ওপর বসে একটা কাক ডাকছে।
    মাঝে মাঝে ঠোঁট দিয়ে খোঁচা মেরে জল খাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।
    ওটা বিজনদার বাসন ধোয়ার বা কাপড় কাচার জল। 
    ভাবছি কাকটাকে তাড়িয়ে দেব কি না, ব্যাটা নিজেই বোর হয়ে উড়ে গেল।
     

    বিজনদা ভাত বাড়ছে, সেই মুসুর ডাল, বাগানের গন্ধলেবু, আলুসেদ্ধ আর ডিমের বড়া। আমার কোন অসুবিধে হয় না। 
    আমাদের চিনেমাটির প্লেটে দিয়ে নিজে কাঁসার কানিওঠা থালায় নিল, বাঙাল ভাষায় বলে--কাঁসার বেলি। 
    এই বয়সেও অনেকটা ভাত খায় বিজনদা, এবং কাঁসার থালায়।
    আমি জানি থালাটার গায়ে বিজনদার মায়ের নাম লেখা আছে--সরোজিনী। এই থালাটা ছোড়দি ওকে দিয়ে গেছে। মায়ের নাকি সেইরকমই ইচ্ছে। 
    শেষকাজের সময় বিজনদা পুরুলিয়ার জেলে।
     

    শংকর ভাল করে খায় --ডাল দিয়ে মেখে, লেবু চটকে, একটু হাপুস হুপুস করে। আজ কিন্তু খাওয়ায় মন নেই। কিছু একটা ভাবছে। 
    অন্যদিন হলে আমার ডিমের বড়ার থেকে খামছে অন্ততঃ একটা তুলে নিয়ে নির্বিকার মুখে চিবোতে থাকত--যেন ওটাই স্বাভাবিক। 
    আজকে আমি গোটা ডিমটাই খেয়ে নিলাম-- ও যেন দেখেও দেখল না।

    হাত-টাত ধুয়ে আবার মাদুরে ফিরে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসেছি কি বিজনদা গামছা এনে আমাদের হাত মুখ মুছিয়ে দিল।
    উঃ , এখনও সেই বড়পিসিমাগিরি!
    শংকর আবার তামাক ডলে কাগজ পাকিয়ে একটা সরু ফানেলের মত করে তাতে কাঠি দিয়ে ঠুসতে লাগল। 
    আমি নিজের প্যাকেট খুলে একটা ধরিয়ে অন্যটা বিজনদার দিকে বাড়িয়ে দিলাম।
    আগে আমরা ইচ্ছে করে একটা কাঠির থেকেই তিনজন ধরাতাম-- কুসংস্কারের বেড়া ভাঙতে হবে যে!

    এখন ওসব নিয়ে ভাবি না। জানি, কোন লাভ নেই।
    বিজনদা একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলল-- এবার?
    --এবার কী?
    -- তোরাই বল, আমি খালি জিগ্যেস করছি।
    -- রমেন হিসেব দেবে। ও ফেরারী ফৌজের আটজন ঘোড়সওয়ার নিয়ে চিত্রগুপ্তের লেজার খুলবে--শালা ব্যাংকের ফোতো ক্লার্ক!
    -- কেন? তুই বলবি না কেন?
    -- ফেরারি ফৌজ প্রোজেক্টটা ওর, আমার পিতৃদেবের নয়। ওই বলুক।
     

    আমি কাশতে থাকি, উঠে গিয়ে উঠোনে পেয়ারা গাছের গোড়ায় একদলা থুতু ফেলি। তারপর মাথা নেড়ে বলি--হক কথা।
     হিসেব আমিই দেব। সোজা হিসেব। শুনে নাও, ভুল হলে ধরিয়ে দিও।

    আটজন ঘোড়সওয়ার।
    দু'জন-- রণক্ষেত্রে শহীদ।
    একজন-- দলত্যাগী, রেনেগেড।
    একজন-- কর্কটরোগে প্রয়াত।
    একুনে চারজন।
    হাজির ও সাক্ষাৎ হইয়াছে-- বাকি চারজন।

    এই অবশিষ্টদের ব্যালান্সশিট নিম্নরূপঃ
    একজন--শিল্পপতি, বাড়ি গাড়ি ও ব্যাংক ব্যালান্সের মালিক।
    একজন-- অবসরপ্রাপ্ত সংসারী; দুর্বল হার্ট। কিন্তু স্বাস্থ্যের ব্যাপারে বেপরোয়া।
    বাকি দুইজন-- পত্নীপরিত্যক্তা, এক্কাগাড়ির সওয়ার।
     

    --ব্যস্‌?
    --ব্যস্‌।
    --- তাহলে? ব্যাক টু স্কোয়ার এ?
    বিজনদা যেন খেলনা কেড়ে নেওয়া বাচ্চা।
    শংকর নড়ে চড়ে বসে। নিভে যাওয়া পাকানো সিগ্রেটটা মেজেতে ঘষে ঘরের কোণায় ছুঁড়ে দেয়।

    -- আমি বলি কি আমরা অতীত হাতড়ে দেখি--কেন আমরা পথে নেমে ছিলাম। 
    গোড়া থেকে--মানে বিপ্লবের বুলি কপচেও কেন সেই ডাকাতের দলে ভিড়েছিলাম? সবাই নিজের নিজের কথা বলবে, আলাদা করে। 
    রমেন শুরু করুক। আর খালি গল্প বললে হবে না। কোন যুক্তি দিয়ে জাস্টিফাই করা না, পিওর ফ্যাক্ট বলবে।
     আর শেষে বলতে হবে আজকে কে কী ভাবছে; নাকি ভাবাভাবির দিন শেষ?
    নে, শুরু কর শালা!
    আমাকে অবাক করে বিজনদা বলে ওঠে-ধ্যোর বাল!
    আমরা তিনজনেই হেসে ফেলি।

    -- শংকর কী বললি? আমরা বিপ্লবের বুলি কপচে কেন ডাকাতের দলে ভিড়েছিলাম? ডাকাতের দলে? না তো।
    -- না বললেই হল? আমাদের খাওয়া পরা চলত কী করে? বাপের হোটেলে? বাপের হোটেলে খেয়ে বিপ্লব? 
    তোর, আমার, বিজনদার জন্যে প্রতি মাসে একটা করে সাদা খাম ধরিয়ে দেওয়া হত না? তার উপর নাম ও নামের পাশে টাকার অংক লেখা থাকত না? 
    যেমন আমার খামের উপর লেখা থাকত--" শংকর--১৩৫/-"। এগুলো তাহলে কী?

    -- আমরা ছিলাম প্রফেশনাল রেভোলুশনারি--পেশাদার বিপ্লবী। একেবারে লেনিনের ' কী করিতে হইবে' (What is to be done) মেনে। 
    ওগুলো ছিল আমাদের মাসিক বেতন বা ওয়েজ।
    বিজনদা মুখ খোলে-- এর মধ্যে লেনিনকে নিয়ে টানাটানি কেন?
    --বাঃ! সব ভুলে গেলে? তুমি ছিলে সেকশন কম্যান্ডার। তাই তুমি পেতে ১৫০/-।
    --সেটা কি লেনিন ঠিক করে দিয়েছিলেন ?
     

    -- কথা ঘুরিও না। "কী করিতে হইবে" লেখায় উনি বোঝান নি যে বিপ্লব করতে হলে আগে দরকার পেশাদার বিপ্লবী সংগঠন। 
    কারণ বিপ্লব কোন অ্যামেচার ন্যাকামো ভাব-ভালবাসা নয়। এটা ফুল টাইম ব্যাপার আর --।
    --- আর জনতার অন্ধ ভীড় দিয়ে অরাজকতা হয়, বিপ্লব হয় না। এর জন্যে চাই প্রশিক্ষিত রেভোলুশনারি। তাই আমরা--।

    --তাই আমরা ডাকাতির পয়সায় হোটেলে খেতাম, এক কামরা ঘরের ভাড়া দিতাম, ট্রাম-বাস--ট্যাক্সি চড়তাম?
    --ডাকাতির পয়সায়? ওভাবে কেন বলছিস! আমরা তো মার্সেনারি নই। পেশাদার সৈনিক মজুরি নেবে না? 
    মাওয়ের গণমুক্তি ফৌজের সৈনিকদের বেতন দেওয়া হত না? তাই কুয়োমিন্টাংদের সৈন্যরা দলত্যাগ করে লালফৌজে যোগ দেয় নি? 
    আর তুই বলছিস ডাকাতের দল?

    --শোন শংকর! আজ আমরা অতীত; মানছি হেরে যাওয়া অতীত। তাই বলে নিজেদের ছোট করতে হবে কেন? 
    আত্মগ্লানি আত্মকরুণা ভাল কথা নয়। খেয়াল করে দ্যাখ,--আমাদের সংগঠনের নাম ছিল আরসিসিআই বা রেভোলুশনারি কম্যুনিষ্ট কোঅর্ডিনেশন অফ ইন্ডিয়া।
     আমাদের নেতা যাঁকে তোমরা কোনদিন দেখনি-- আর দেখতেও পাবে না-- ছিলেন অনন্ত সিং। 
    হ্যাঁ, সেই চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের খ্যাতিপ্রাপ্ত অনন্ত সিং,-- মাস্টারদা সূর্য সেনের ডানহাত, মিলিটারি স্ট্র্যটেজিস্ট।
     

    বিজনদাকে এবার লেকচারে পেয়েছে। টিউশনের ছেলেদের বোঝানোর মত করে বলতে থাকে।
    -- সূর্য সেনের ফাঁসি হল, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণে প্রাণ দিলেন। অনন্ত সিংয়ের কালাপানি হল। 
    দেশ স্বাধীন হলে উনি আন্দামান থেকে অন্য অনেকের মত কমিউনিস্ট হয়ে ফিরে এলেন। পার্টির টেকনিক্যাল কোরের দায়িত্ব পেলেন।
    --হ্যাঁ হ্যাঁ; সবটা বল। উনি পার্টির মধ্যে একটি সমান্তরাল গোপন সংগঠন গড়ে তুললেন--নাম ছিল আওয়ার স্ট্যান্ড বা ও-এস। 
    কিছু ডাকাতি করলেন--স্বদেশী গুপ্ত সংগঠনের কায়দায়। কমিউনিস্ট পার্টি প্রমাদ গুনল। এবং ওনাকে পার্টি থেকে বের করে দিল। 
    আসলে যদ্দিন পার্টি নিষিদ্ধ ছিল ততদিন এসব বেশ কাজে দিয়েছিল। 
     
    ---তখন উনি ষাটের দশকের শেষের দিকে একটা ডাকাতের দল গড়লেন--- এমএমজি বা ম্যান-মানি-গান।

    --ফের ডাকাতের দল! ম্যান-মানি -গান নামটা বিদ্রূপাত্মক, আমাদের বিরোধীদের দেওয়া। আমাদের আসল নাম তো বললাম-- আরসিসিআই।
    -- সে যাই বল, বাংলাবাজারে আমাদের সবাই এম-এম-জি বলেই জানে। আর স্বদেশী যুগের মত ডাকাতির পয়সায় সংগঠন চালানো!
    -- কেন? খালি স্বদেশী কেন? লেনিনের পার্টি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের চালাতে, আর্মস জোগাড় করতে এবং গোপনে ইসক্রা পত্রিকা চালাতে ডাকাতি করত না? 
    এন বাউম্যানরা করেন নি? মন্তিস্লাভস্কির "বসন্তের দূত রুক" বইটি আমাদের অবশ্য পাঠ্য ছিল না? স্তালিন বাকু ও জর্জিয়ায় ডাকাতি করতেন না? 
    অবশ্যই ব্যক্তিস্বার্থে নয়; পার্টি ও বিপ্লবের স্বার্থে; কোন সাধারণ মানুষের থেকে কিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয় নি। ট্রেজারি ও জমিদারদের খাজনা --!

    --- হ্যাঁ, স্তালিনের প্রথম জীবনে ওইসব কাজকম্ম ওয়েল ডকুমেন্টেড। কিন্তু আজ মনে হয় ডাকাতিটা ডাকাতিই। 
    নিজের পোঁদ ছোঁচাও কি অন্যের; হাত নোংরা হবেই । 
    তাই যদি বলি যে আমরা ভেড়ার পালের মত অনন্ত সিং নামের এক প্রাক্তন স্বাধীনতা সংগ্রামীর বিপ্লবের ভাঁওতায় ভুলে ডাকাত দলের খোঁয়াড়ে ঢুকেছিলাম
    , সেটা কি খুব ভুল বলা হবে?

    -- বিজনদা! শংকর কি ঠিক বলছে? আমাদের মাসিক ওয়েজ কি ডাকাতির টাকায়? 
    আর অনন্ত সিং কোথায়? আমাদের সিক্রেট সংগঠনের চিফ তো "ওল্ড গার্ড" বা অবিনাশ।
    -- অনেকটা ঠিকই বলেছে। অবিনাশই অনন্ত সিং। ওঁর সঙ্গে দেখা করতে পারত শুধু টপ তিন জন। সিক্রেসির উপর উনি খুব জোর দিতেন।
    আর আমাদের ওয়েজ আসত সদর স্ট্রিট পোস্টাপিস রবারির টাকায়-- যেটা ১৯৬৮ সালে হয়েছিল। পরে ১৯৬৯ সালে স্টেট ব্যাংক ডাকাতির সময় আমরা অলরেডি অনন্ত সিংয়ের দল থেকে আলাদা হয়ে গেছি।
    -- আচ্ছা? আমি এগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। শুধু কিছু শুনেছিলাম, বীরুর কাছ থেকে। মনে হচ্ছে শংকর জানে, হয়ত ও ছিল। এখানে খুলে বলুক। পাপস্খালন বা আত্মার শুদ্ধিকরণ হোক!
    শংকর কিছু ভাবে। তারপর হঠাৎ উঠে বাইরে যায়।
     

    আমি  চুপ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকি। বিজনদা চায়ের জল চড়ায়।
    চা ছাঁকার আগেই শংকর ফিরে আসে। পাড়ার দোকান থেকে দু'প্যাকেট সিগারেট কিনে এনেছে। মাঝখানে একটা প্যাকেট রেখে ধোঁয়া ছেড়ে জানলার দিকে তাকিয়ে বলে-- আজ এতদিন পরে সব গুছিয়ে বলা বেশ কঠিন। তবে চেষ্টা করব। ভুল হলে দাদা ধরিয়ে দেবে।
    প্রথমে সদর স্ট্রিট পোস্টাফিসের ডাকাতি।

    সদর স্ট্রীটের সেই সকালটা
    ==================
    ১৯৬৮ সালের জুলাই মাস; বর্ষাকাল। কিন্তু গত দু'দিনে একফোঁটা বৃষ্টি হয় নি। ভ্যাপসা গরম আরও বেড়েছে। 
    তাই ছেলেছোকরার দলটা যে একঘন্টার মধ্যে বার কয়েক কোল্ডড্রিংকে গলা ভেজাবে, তাতে আশ্চর্যের কি ?
    পার্ক স্ট্রিট ও সদরস্ট্রীটের মোহানার উল্টো দিকে কোণের দোকানটায় চা'-লেড়ো বিস্কুট, ঘুগনি, পাঁউরুটি আলুর দম, ওমলেট সবই পাওয়া যায়। 
    আর কোণের দিকে রাখা আছে কোকাকোলার বোতল।
     

    কিন্তু পাঁচজন ছোকরার দলটি বসেছে দোকানের বাইরে ফুটপাথ ঘেঁষে রাখা বেঞ্চ আর দুটো কাঠের টুলে।
    --- এক প্যাকেট পানামা দিন তো?
    দোকানদার প্যাকেট এগিয়ে দিতে দিতে ভাবে-- এরা ঠিক সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে সিগ্রেট ফুঁকতে আসা ছাত্র নয়।
    আধঘন্টা ধরে বসে আছে। কিন্তু কথা কম। মুচকি চাপা হাসি আর কিছু অঙ্গভঙ্গী। এপাড়ায় কি কখনও আগে দেখেছে? মনে করতে পারছে না। 
    দুজন এই গরমেও ফুলশার্ট পরে আছে। আর একজনের সোনালি চুল। তা এই সাহেব পাড়ায় অমন দু-একজন এখনও দেখা যায়।

    ওর পাশের ছেলেটি ঘড়ি দেখছে। বেলা সাড়ে নয়। এবার ও চোখ তুলে সোনালি চুলের দিকে তাকাল। সোনালি চুল আস্তে করে চোখের পাতা নামাল।
    অন্য একজন এর মধ্যেই দোকানাদারের পয়সা মিটিয়ে দিয়েছে।
    সোনালি চুল ও ঘড়িদেখা ছেলেটি এবার টুল থেকে উঠে রাস্তায় নেমেছে। একটু ক্যাজুয়াল ভাবভঙ্গী; রাস্তার এ'পাশ ও'পাশ দেখছে। 
    কিন্তু বাঁদিকে তাকিয়ে হটাৎ ওদের ঘাড় টানটান। 
     
    অন্ততঃ একশ ফুট দূরে একটি চশমা পরা ছেলে রাস্তার ধারে একটা খালি সন্দেশের বাক্স মত নামিয়ে দিয়ে আস্তে করে হেঁটে পাশের গলিতে মিলিয়ে যাচ্ছে।
    ওরা জানে যে এর মানে ওই চশমুদ্দিন প্রায় একশ ফুট দূরে একজনকে একটা সবুজ রুমাল মাটিতে ফেলে আবার ঝেড়েঝুড়ে তুলে নিতে দেখেছে। 
    আর সবুজরুমাল দেখেছে রাস্তার ক্রসিং এ ধুতিপরা একজনকে ছাতা খুলে রাস্তা পার হতে হতে ছাতাটা আবার বন্ধ করতে। তার মানে ছাতাওলা দেখেছে--। 
    নাঃ, এই চিন্তার সূতোর লাটাই দ্রুত গুটিয়ে সোনালি চুল পেছন ফিরে বাকিদের দিকে তাকাল।
    অন্য ছেলেগুলোও যেন আড়মোড়া ভেঙে ওর পেছন পেছন এগিয়ে গেল।
    দোকানদারের চোখে পড়ল যে দু'জন অনেকটা কোল্ডড্রিংক ছেড়ে গেছে।
     আরে, একটা বোতল তো খোলাই হয় নি। কিন্তু পুরো পয়সা তো আগাম দিয়ে দিয়েছে।

    নাঃ , ও এমন ভাবে দাঁও মারবে না। বারো আনার জন্যে এমনি করলে ধম্মে সইবে না। ও পয়সা ফেরত দিয়ে দেবে।
    -- ও ভাই! শুনছেন? এদিকে দেখে যান।
    কিন্তু ভাই-ভাইপোরা কিছুই শুনছেন না। 
    কারণ, একটা লালরঙা গাড়ি, পেছনে তারের জাল, এসে সদর স্ট্রিট পোস্ট অফিসের সামনে থেমেছে।গাড়ির সামনে ড্রাইভারের পাশে বন্দুকধারী একজন রক্ষী। 
    আর পেছনে জাল ঘেরা জায়গায় একটা বড় ক্যাশবাক্সের সঙ্গে আরও দুজন সশস্ত্র গার্ড হেলান দিয়ে নিশ্চিন্তে বসে।
    এবার ওরা প্রতিবারের মত ভেতর থেকে বন্ধ দরজাটা খুলে বাক্স নিয়ে নামবে। কিন্তু ওরা আর নামতে পারল না।

    দরজাটা খুলে একজন চেন ও তালা লাগানো বড়সড় ট্রাংকের মত বাক্সটাকে ঠেলে দরজার সামনে খালি এনেছে তক্ষুণি দু'জন ছোকরা ওর পেটে ও গলায় ছোঁয়াল পাইপগান । 
    আর একটু হোঁৎকামত তৃতীয়জন ট্রাংকটা টেনে মাটিতে নামাল। সিকিউরিট গার্ডের কিছু করার নেই। 
    এত কাছ থেকে বন্দুক চালানো যায় না।
    কিন্তু দ্বিতীয়জন অবস্থা এঁচে নিয়ে খাঁচাটার কোনার দিকে সরে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে সোজা গুলি চালিয়ে দিল। 
    গুলি সোনালি চুলের কম্যান্ডারের কানের পাশ দিয়ে সোঁ করে বেরিয়ে গেল। মুহুর্তের মধ্যে পাইপগানের জোড়া গুলি লেগে রক্ষী গাড়ির ফ্লোরের মধ্যে ধপাস করে পড়ল।
     পিঠ দেয়ালে , জামাটা রক্তে ভিজে উঠছে।
     

    এদিকে সামনের গেটে ড্রাইভার কানের পাশে ঠান্ডা ধাতব নলের ছোঁয়ায় নেতিয়ে পড়েছে। 
    কিন্তু ওর পাশে বিপরীত দরজার দিকে বসে থাকা রক্ষী জালি লাগানোর জানলার গায়ে ঠেকিয়ে রাখা মাস্কেটটি র ট্রিগারে সকলের অজান্তে চাপ দিল। 
    ফল হল উল্টো।আগুনের রূপোলি ফুলকি ঝলসে উঠল, তবে গুলি কারো গায়ে লাগল না।
    এবার পেছনের গেট থেকে সোনালিচুলো কম্যান্ডার এসে জালির গায়ে নল ঠেকিয়ে ঘোড়া টিপল। রক্ষীর হাতে গুলি লাগতেই ও কাতরে উঠল। 
     
    এই অভাবিত ঘটনায় রাস্তার দুধারের দোকানপাট নিমেষে বন্ধ হয়ে গেল। পার্কস্ট্রীটে সাত সকালে শ্মশানের স্তব্ধতা।
    ইতিমধ্যে ডাকগাড়িটির হাত পাঁচেক দূরে থেমেছে একটি কালো অ্যাম্বাসাডর। তার চালক সিট থেকে নড়েনি, ইঞ্জিন বন্ধ করে নি। 
    তবে সঙ্গীটি নেমে এসে খুলে ফেলল অ্যাম্বাসাডরের ডিকি।
     

    এই পাঁচজনের দলটি দ্রুত হাতিয়ে নিল তিনটি মাস্কেট। ডিকির মধ্যে উধাও হয়ে গেল ট্রাংক আর ওদের পাইপগান। 
    তিনজন উঠে বসল অ্যাম্বাসাডরের পেছনের সিটে।
    কিন্তু গাড়িটি স্টার্ট নিয়ে আটকে গেল। কিশোর ড্রাইভার নার্ভাস হয়ে গেছে, ক্লাচ - একসিলেটর-ব্রেক এর কোঅর্ডিনেশন ঠিক হচ্ছে না। 
    অভিজ্ঞ সঙ্গীটি ওকে সরিয়ে পাকা হাতে স্টিয়ারিং ধরল। গাড়ি একটু বাঁক নিয়ে যেদিক থেকে এসেছিল তার উল্টোদিকে বেরিয়ে গেল।

    রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুজন--হাতে তিনটি দখল করা মাস্কেট,গুলির বেল্ট রয়ে গেছে আহত রক্ষীদের কোমরে। এভাবে গেল দেড় মিনিট। গলির মধ্যে থেকে উঠে এসেছে একটি ফিয়েট। তাতে চালান হয়ে গেল মাস্কেটগুলো। এবার পেছনের সিটে সওয়ার হয়ে মিলিয়ে গেল শেষ দুই অশ্বারোহী।
    গোটা অপারেশন সম্পন্ন হল সাড়ে চার মিনিটে।


    আধঘন্টা পরে সাইরেন বাজিয়ে এম্বুলেন্স ও বিশাল পুলিশ বাহিনী যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছল ।
    তখন সদর স্ট্রিট পোস্ট অফিসের সামনে লালচে গাড়িটিকে ঘিরে মানুষের জটলা।
    এম্বুলেন্স কর্মীরা দ্রুত হাতে দুই আহত সুরক্ষা গার্ডকে স্ট্রেচারে করে তুললেন। পুলিশের একটি দল পোস্ট অফিস ঘিরে ফেলল। 
    চশমা পরা একজন অফিসারের নেতৃত্বে একটি ছোট দল ভেতরে পোস্ট মাস্টার, স্টাফ ও অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নিতে ব্যস্ত হল। 
    আর একটি দল ডাকগাড়ির ড্রাইভার, অক্ষত সুরক্ষা গার্ড ও রাস্তার ওপারের চায়ের দোকানের মালিককে ইন্টারোগেট করবে বলে কালো গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে গেল।

                                                                                                                                                                                               (চলবে)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Manali Moulik | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:৩৭734418
  • সম্ভবতঃ এই আক্রমণাত্মক কার্যক্রমের কারণে আন্দোলনটি বৃহত্তর মধ‍্যবিত্তের জনসমর্থন হারায়। রূঢ় বাস্তবকে অস্বীকার করে লাভ নেই, এর কিছু কারণ ও মূল সমস‍্যাগুলি আজো প্রাসঙ্গিক।
    পর্বগুলি অসাধারণ চলছে।
  • শ্রীমল্লার বলছি | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০২:৪৩734422
  • এমন এক বিষয়কে নিয়ে লিখছেন—যা জানা যতটা জরুরি, বোঝাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি এর আগে কাউকে এভাবে এই বিষয় নিয়ে এত সহজে লিখতে দেখিনি। খুব অবাক হই, যখন দেখি ভাষাটা একেবারেই ধারাবাহিকভাবে সহজ আপনার! দুরূহ কাজ বটে। আপনার ভাষা এবং এমন এক বিষয়, যার ওপরে লিখছেন, দুটোকে পাশাপাশি রাখলে আরও অবাক হই এই ভেবে— দুদিকের কোনওদিকের কোথাওই বিন্দুমাত্র বাধাপ্রাপ্ত ঘটেনি। আপনার সাধনা সার্থক। ভালোবাসা জানবেন। 
  • হীরেন সিংহরায় | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:১৮734428
  • আকস্মিক অতীত বর্তমান মিলে মিশে এককার হয়ে গেল 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন