শংকর ভগমান কি চমৎকার?
ট্যাঙ্কশংকর শংকর ভগমান রূপে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিলেন কিনা তা এই কাহিনীর উপজীব্য নয়। ট্যাঙ্কশংকরের ভর হয়েছিলো, এমন একটা কথা এসেছে। এখন, রেট্রোস্পেক্টিভ বিশ্লেষণে মনে হয়, যেটাকে ভর বলা হচ্ছে সেটা আসলে বাইপোলারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কিম্বা রোদ লেগে বায়ু চড়ে গিয়েছিলো, পিত্ত প্রকুপিত হয়েছিলো, এসবও হতে পারে। মোদ্দা, ট্যাঙ্কশংকর শংকর ভগমান রূপে আবির্ভুত হয়ে লুঙ্গি কোমরে তুলে অর্থাৎ নিচের যন্ত্রপাতি বার করে কতক্ষণ নেচেছিলেন সে সব উদলা প্রসঙ্গে এ কহানি বিলকুল ঢুকবে না। হতে পারে, তিনি এখনো নাচিতেছেন। চারপাশে দীনদুনিয়া বালবাদামি ঝরাহলুদ হয়ে ঝটাপট মরেহেজেখসে যাচ্ছে, পৃথিবী সৌরজগত ছায়াপথ য়্যান্ড্রোমিদা মায়াবিড়েইলের ন্যায় বেমালুম উবিয়া গিয়াছে, ফলত
কুকুর-ছাগল-ভিকিরিনিকিরি-ঝালমুড়ি-ইস্টেশন-ভিড়ভাড়-মাঠপাথার-বারান্দাপরিন্দা-লোকফোক-মাংসটাংস-কাচ্চাবাচ্চা-ছেলেবউ-লালকালো-আগুনবেগুন-ঘুপঘাপচাপঠাপ-টিকিটমিকিট কিচ্ছু নেই, শুধু সেই বেবাক না থাকার নাইমূলে ওমওম ঢেকুর তুলে তুলে ট্যাঙ্কশংকর না না শংকর ভগমান অদৃশ্য ঘূর্ণির ন্যায় বোঁবোঁ সনসন পাক পাক পাকাপ্পাক খাইতেছেন, হতে পারে। যাই হোক, সে সব বিতর্কিত ও ঐশ্বরিক শৈবকেচ্ছা এই কহানিমধ্যে হারগিস ঢুইকবেক লাই। একইভাবে, ২নং প্ল্যাটফর্মে ডাউন গাড়ি আল্টিমেটলি এলো কিনা এবং লোকটা সেই গাড়িতে চড়ে কোথাও গিয়েছিলো কিনা ও তৎপরে কি কি ঘটেছিলো সেই সব ফালতু বেফালতু পাতি লিনিয়র কিচাইনের চোরাবালিতে আপদশির ফেঁসে গিয়ে এই কাহিনী একদম দিকভ্রান্ত হবে না, এটি বলা আছে। মোদ্দা, প্ররোচনায় পা দিবেন না। আরো মোদ্দা, কহানি আপন দমে আগে বাইড়বেক, অর্থাৎ লোকটার সঙ্গে শংকরট্যাঙ্কের ম্যারাথন কথোপকথন জারি থাকবে। হতে পারে সেক্ষেত্রে স্পেস হিসেবে স্টেশন/হাফবেঞ্চি/প্ল্যাটফর্ম নেই, ইএমইউ কোচের কামরা, কিম্বা স্টেশন থেকে বারান্দা ও ট্যাঙ্ক যাবার ইঁটরাস্তা কিম্বা পাগলাগারদ কিম্বা ঘনঘোর মহাশূন্যমাঝে উন্মত্ত উপগ্রহ, সিন চেঞ্জ করে করে সেই সব বিভিন্ন বিচিত্র লোকেশনে লোকটা ও শংকরট্যাঙ্ক খুচখাচ করছে। অথবা, স্পেস বিষয়টাই থাকবে না। মোদ্দা, এই অনিশ্চিত বেপথু পরম্পরায় কাহিনীসূত্র পুনরায় তুলে নেওয়া হলো। লক্ষ্যণীয়, যাবতীয় ভড়কানি, কুচক্রান্ত, কানভাঙানি ও আতঙ্কবাদী প্ররোচনা উপেক্ষা করে বারবার ট্র্যাকে ফিরে আসা হচ্ছে। ফিরতেই হবে। কোন মাইকিলাল কিছু বিগড়োতে পারবে না, উই শ্যাল ওভরকম, জয় ভারত জয় হিন্দ।
মহাপ্লাবন
অতঃপর, শংকরট্যাঙ্ক লোকটাকে বললো, দিনকাল খুব খারাপ। লোকটা বললো, খুব খারাপ। এখানে বলে রাখা ভালো, এই কাহিনীতে লোকটা অনিচ্ছুক অংশী মানে পার্টিসিপ্যান্ট। হাফবেঞ্চিতে শংকর ভগমান ইয়ে ট্যাঙ্কশংকরের উটকো ও নোংরা আবির্ভাব ইস্তক লোকটা থেকে থেকেই খুব বোর হচ্ছে। বিরক্তও হচ্ছে। খচেও যাচ্ছে। মোদ্দা, বিষয়টা তার ভালো লাগছে না। কতকিছু ভালো ভালো হতে পারতো। এই যে বিচ্ছিরি ছ্যারছেরে বৃষ্টি হচ্ছে, কোথাও যাবার উপায় নেই, চাদ্দিকে কাদা আর কোমরজল, থেমে গিয়ে সুনীল রোদঝলমলে আকাশ দেখা দিতে পারতো, আহা রোদের কোলে মেঘ না না ভুল হলো মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি। লোকটা গুনগুন করে একবার গেয়েও ফেললো। অবস্থার পরিবর্তন হলো না দেখে লোকটা মন্দিরা তালুকদারের নরম বাদামি থাই আর উদ্ধত চোখা বুক এসবের কথা মন দিয়ে ভাবতে থাকলো। কিস্যু হলো না। দিনও যেমনকার তেমন, বদলালো না। বদলাবে যে, সে ভরসাও বিশেষ নেই। লাল বাংলা বাঁড়া বোর হয়ে চামচিকেকালো হয়ে গেলো। দোর বাঁড়া। দো ওওও ওওও ওওও র বাঁড়া। খুব হেজেহুজে গিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে লোকটা দেখলো দিন না রাত বোঝা যাচ্ছে না, চারদিক থেকে দুনিয়া ঝাপসা অন্ধকার করে অসংখ্য ধারায়--যেন তামাম পৃথিবীর মাথায় ঢেউ খেলানো করুগেটেড টিনের বা য়্যাসবেস্টসের চাল বসানো--জল পড়ছে তো পড়ছেই। তার মধ্যে লোকটা শুনলো, ট্যাঙ্কশংকর গাইছে থইথই শাওন এলো ওই। বিস্তর খচে গিয়ে লোকটা ট্যাঙ্কশংকরকে গাল দিতে যাবে, দেখা গেলো ট্যাঙ্কশংকর গানটান কিছু গাইছে না, ঝিমুচ্ছে। কি খিট? তাহলে শাওন এলো গাইলো কে? ভাবতে ভাবতেই লোকটা আবার পষ্ট শুনলো থইথই শাওন এলো ঐ। চাদ্দিকে ঝুপঝাপ টুপটাপ ঝরঝর ছ্যারারারা ভিন্ন শব্দ নেই, জনমনিষ্যি গরুছাগল কিচ্ছু নেই, গান গায় কে? লোকটা আবার ট্যাঙ্কশংকরের দিকে সন্দেহকুটিল দৃষ্টিতে তাকালো। ট্যাঙ্কশংকর পিটপিট করে তাকাচ্ছিলো দেখে লোকটার কূট সন্দেহ আরো ঘনীভূত হলো। ট্যাঙ্কশংকর মালটা সুবিধার নয়। কোনভাবে অন্য একটা গোপন ডাইমেনশনে ঢুকে গিয়ে তার মাথার ভিতর সেঁধিয়ে যায়নি তো? কি খিট, কি খিট! এখন উপায়? ইতিমধ্যে জল ঢুকছিলো। পা ছাড়িয়ে হাঁটু ছাড়িয়ে কোমর অবধি ধড়াদ্ধড় জল পৌঁছে গেলে লোকটার মনে হলো, ট্যাঙ্কশংকর চুলোয় যাক, এরপর তো জলে ডুবে মরতে হবে, তারপর জলখাওয়া ফোলা সাদা লাশ ভেসে ভেসে চলে যাবে বাগজলা খালে, কুকুরশিয়ালে ছিঁড়ে খাবে, কাকশকুন ঠুকরোবে। কেননা বোঝাই যাচ্ছে, বন্যা হবো হবো বা শুরু হয়ে গেছে। তারমধ্যে লোকটা সাঁতার জানে না। জলের মধ্যেই লোকটা হাঁটতে শুরু করলো। করে দেখলো, ট্যাঙ্কশংকর মালটা আগে আগে যাচ্ছে। অন্ধকার জল থইথই করছে, এক হাতে চটি, প্যান্ট হাঁটুর ওপরে গুটিয়ে লোকটা ছপাত ছপাত করে হাঁটছিলো। কিছুদূর যাবার পর বোঝা গেলো জল বাড়ছে তো বাড়ছেই। কোমর ছাড়িয়ে বুক টপকে গলা ছুঁইছুঁই হলে লোকটা জেনুইন ঘাবড়ে গেলো। শংকরদা--আ--আ--আ বলে আর্তচিৎকার করতে যাবে, ট্যাঙ্কশংকর পিছনে তাকিয়ে তৃপ্ত দাঁতক্যালানে হেসে বললো, কি সুন্দর, না? লোকটা রাগতে পর্যন্ত ভুলে গেলো। গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছে না, জল চার হাত পা ও অসংখ্য মৃত্যুময় করাল শুঁড় বার করে ক্রমাগত বাগজলা অভিমুখে টানছে। তবু সে বললো, ডুবে যাচ্ছি তো। ট্যাঙ্কশংকর উত্তরে ফিক করে হেসে বললো, দূর ফাগল! জলে কেউ ডোবে নাকি। দ্যাখো না কি সুন্দর। চারপাশে কত সুন্দর ছোট ছোট ব্যাঙ ডাকছে। ব্যাঙ। ব্যাঙ ব্যাঙ ব্যাংব্যাঙ। বলে দু হাত গৌরাঙ্গ সদৃশ ওপরে তুলে ট্যাঙ্কশংকর চিৎকার করে বললো, ব্যাঙ ব্যাঙ ব্যাঙ ব্যাঙাচি, করিস না বে আমড়াগাছি। তারপরে আরো জোরে চিৎকার করে বললো, আছি আছি আমি আছি। তারপরে মরণাপন্ন জলে ডুবুডুবু লোকটার চুল ধরে টেনে তুললো। এতে পরিষ্কার বোঝা গেলো ট্যাঙ্কশংকর আসলে হয় অপদেবতা বা পিশাচ কিম্বা অন্য গ্রহের লোক(আসলে লোকটা বোঝেনি যে এই প্লাবনটি বস্তুত মহাপ্লাবন, এবং এর সঙ্গে পূর্বোক্ত প্রলয়নাচনের নিগূঢ় যোগাযোগ আছে, সবই মূলত শংকর ভগমান কি আনোখা চমৎকার)। অবশ্য সে সময় লোকটার অতশত ভাবার সময় ছিলো না। ট্যাঙ্কশংকর তার মুখের সামনে মুখ নিয়ে বললো, ঝটপট বলুন, জলে কি থাকে? এক্ষুনি বলুন। বলুন বলছি। মাইরি নইলে জলে ফেলে দেবো। লোকটা আকপাক করতে করতে বললো, ব্যাঙ। আর? ব্যাঙাচি। ঠিক। আর। লোকটা বললো, কুমীর। হাঙর। শুশুক। ভোঁদড় ইয়ে। ইয়ে ইয়ে। ট্যাঙ্কশংকর ধমকে বললো, কি ইয়ে? ঠিক করে বলুন। লোকটা খচমচ হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে বললো, মাছ। কি মাছ? ব্যাং মাছ চ্যাং মাছ খলসে মাছ পুঁটি মাছ। ট্যাঙ্কশংকর বললো, ঠিক। আর কি থাকে? সময় এক মিনিট। লোকটা অনেক ভেবে টেবে বললো, জলজল, জজ্জ্বল, জলজল, জলপিপি, ইয়ে মানে জলঢোড়া সাপ। ট্যাঙ্কশংকর তাতে উদোম খচে গিয়ে বললো, ইয়ার্কি হচ্ছে? ইয়ার্কি? শুধু জলঢোড়া? বললেই হলো? জলের মুখ থাকে না? হাত থাকে না? নুনু থাকে না? পাছা থাকে না? জল খায় না, মোতে না, হাগে না? ইয়ার্কি হচ্ছে? লোকটা হাঁপাতে হাঁপাতে খাবি খেতে খেতে বললো, মাইরি না, বিশ্বাস করুন, ইয়ার্কি না। জলের নুনু পাছা পিত্ত কফ সব আছে। বলেই তার মাথায় বিদ্যুৎচমকের মতো খেলে গেলো এক অমোঘ সঙ্কেত বা দিকনির্দেশিকা। লোকটা চিৎকার করে বললো, ট্যাঙ্ক! জলে ট্যাঙ্ক থাকে। ট্যাঙ্ক! ট্যাঙ্ক! ট্যাঙ্ক! যেই না বলা, পুরো মন্ত্রের মতো কাজ হলো। পৃথিবীর ভরকেন্দ্রে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। ধাঁইধাঁই ধমাধম যেখানে যত কালো জল ছিলো ও আছে সব এক মহা মহাঘূর্ণি তুলে নিচের দিকে নামতে শুরু করলে দেখা গেলো, সে ঘূর্ণির পরতে পরতে পাকে পাকে থিকথিকে সোনা, কুনো ও গেছো ব্যাঙ, তদীয় ব্যাঙাচি, হাঙর কুমির শুশুক চ্যাং মাছ খলসে মাছ পুঁটি মাছ ইত্যাদি ও লোকটা আটকে আছে। ট্যাঙ্কশংকরকে কোথাও দেখা গেলো না শুধু লোকটার মাথার ভিতর ঢুকে কে যেন বলতেই থাকলো, জলের নুনু জলের পাছা, নিজে বেঁচে তুই বাপকে বাঁচা। মহাজাগতিক দ্রুতগতিতে নীচে নামতে নামতে লোকটা দেখলো ঘূর্ণির পাক থেকে একদল জঙ্গি ব্যাঙাচি মাথায় লাল ফেট্টি বেঁধে জোরালো স্লোগান দিয়ে বলছে, জলের বাল, জলের দেশ, এল সি এস এল সি এস। জ্ঞান হারাবার বা ফাইন্যালি ভেসে যাবার আগে লোকটা পলকের জন্য দেখলো, মূর্তিমান গডজিলা বা কিংকং বা জুরাসিক পার্কস্থিত ডাইনোসরের মতো বিপুল একগাদা ট্যাঙ্ক গ্যাগ্যা গরররর রবে ক্রুদ্ধ গর্জন করছে।
উপরোক্ত বানভাসি টুকরোটি কোন স্বপ্নদৃশ্যের অংশ হতেও পারে, নাও পারে। যেহেতু পূর্বে বিবৃত নিয়মাবলী অনুযায়ী এই কহানিগেম নানারূপ সিনারিওতে ঢুকবে বেরুবে, এবং ভাঁড় মে যায়ে প্রতিক্রিয়াশীল স্থানকাল মানে স্পেসটাইম নির্ধারিত স্থিতাবস্থা, যা যা বলা হয়েছে কিচ্ছুটি ফেরত নেওয়া হবে না, মাল ওয়ন্স সোল্ড হার্গিস নট রিটার্নড। যে খেলার যে নিয়ম। যার ভালো লাগবে না ফুটে যাও।
বামফ্রন্ট সরকার
যাই হোক, ধরে নিই, লোকটা ও ট্যাঙ্কশংকর এক অনন্ত স্থানকালরহিত কথোপকথনে, বা দ্রুত পট পরিবর্তনশীল দৃশ্যাবলীর ভিতরে বহুবিধ ডায়ালগে লিপ্ত। ১৩৭৬৫, লোকটা ও ট্যাঙ্কশংকর হাফবেঞ্চিতে বসে আছে। ঐ ৬৬, লোকটা ও ট্যাঙ্কশংকর ছপাত ছপাত জল ভাঙছে কিম্বা বানে ভেসে যাচ্ছে। ঐ ১৩৯, লোকটা ও ট্যাঙ্কশংকর ওই মহাব্যোমের মহাভ্যন্তরে পা নিচে মাথা ওপরে করে নাকের পোঁটার মতো খসে পড়বো-পড়বো-পড়লো-বলে ভঙ্গিতে ঝুলে আছে। ঐঐ ২৫২ এন্ড হাফ, একটি হাইব্রিড বেগুনের ক্ষেতে কড়ে আঙুলসমান কিউট সবজে গোলাপি বেগুন ফুটে আছে, লোকটা সেখেনে খয়েরি বেগুনপাতা থেকে অতীব কুদর্শন গেঁড়ে গেঁড়ে বেগুনপোকা ছাড়াচ্ছে, ট্যাঙ্কশংকর বিড়ি খেতে খেতে তা অবলোকন করছে। ঐ ৪৮৭.৫৬, লোকটা আর ট্যাঙ্কশংকর হাত ধরাধরি করে ফুলছাপ আন্ডারওয়ার পরে রিঙ্গা রিঙ্গা রোজেস খেলছে। ঐ পুনশ্চ, লোকটা ও ট্যাঙ্কশংকর হাফবেঞ্চিতেই বসে আছে, কোথাও যায়নি। সেইমতো, ছিন্ন কাহিনীসূত্র আবার জোড়া লাগুক, লেট দ্য কিউ বি পিকড আপ, রোল ক্যামেরা, য়্যাকসান।
ট্যাঙ্কশংকর বললো, বামফ্রন্ট সরকার, সংগ্রামের হাতিয়ার। বলে লোকটার দিকে তাকালো। ঠিক কি বলে লোকটার কাছ থেকে বিড়িসিগ্রেট হাতাতে হয়, যত বাইপোলারই হোক, এতদিনে ট্যাঙ্কশংকর সেটা শিখে গেছে। লোকটা কোনরকম তাপউত্তাপ দেখালো না, থেবড়ে হাঁটুতে মাথা গুঁজে ঝিম খেতে থাকলো। লোকটার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ট্যাঙ্কশংকর বেদম চেঁচিয়ে বললো, বামফ্রন্ট সরকার! লোকটা ধড়মড় করে উঠে বসে হাইটাই তুলে বললো, নেই। কিচ্ছু নেই। বাম নেই ফ্রন্ট নেই বামফ্রন্ট নেই সরকার নেই সংগ্রাম নেই হাতিয়ার নেই কিচ্ছু নেই। তারপর লোকটা শংকরট্যাঙ্ককে জ্বলন্ত চোখে মাপতে মাপতে খেঁকিয়ে বললো, নেইইইই। শংকরট্যাঙ্ক তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বললো, হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ। বলছি একটা বিড়ি হবে? লোকটা বিড়ি বার করে দিলো কিন্তু রাগ দেখানোর জন্য নিজে একটা আস্ত সিগ্রেট ধরিয়ে টানতে থাকলো। হাফবেঞ্চির ঠিক সামনে ও ১নং এর ধার ঘেঁষে ডাইনে বাঁয়ে রেললাইন পূর্ববৎ আছে। স্টেশনের মরাহলুদে-কেলটে-ছাপ বডিতে পুরু ও ঘন গেরুয়া কোট পড়েছে। ঢিলের গতিপথ বরাবর প্যারাবোলাকৃতি উড়ালপুল হয়েছে, তার নীচে ঠেলাগাড়ি, ভাঙা রিক্সা, গুটিকয় নতুন ঝুগগি তার ভিতরে ডাই করা ছেঁড়াফাটা লালনীলহলদেবেগুনি পুরোনো প্লাস্টিকভর্তি বস্তা, এসব পিন্ড পাকিয়ে পড়ে আছে। হাফবেঞ্চি থেকে ডাইনে ও বাঁয়ে রেললাইন বরাবর চলে গেলে যতদূর চোখ যাবে ছোটবড় ঝুগগি। ২নং পার করে যে পানাপুকুরসকল ও রড-ও-ইঁটখেঁচা-আধা-ন্যাংটা বাড়িটাড়ি ছিলো সে জায়গায় যথাক্রমে সানরাইজ, আশীর্বাদ, মেরে পেয়ারে, নবদিগন্ত, অন্নপূর্ণা, ধনধান্যে ও লালঝুঁটি ইত্যাদি নামে সরু সরু পাঁচিলঘেরা লোহার গেটওলা আবাসন হয়েছে। ইতিপূর্বে এলসিএসের কথা এসেছে, এল সি বা সর্বশক্তিধর লোকাল কমিটির মাথায় থাকা প্রায়শই ধবধবে ধুতিপাঞ্জাবি পরিহিত এবং মার্ক্সএঙ্গেলসলেনিনস্টালিন ইত্যাদির সারিবদ্ধ ছবির নীচে অধিষ্ঠানরত যে সব সুভদ্রজনকে এলসিএস বলে অভিহিত করা হইতো তাঁহাদের দিন গিয়াছে। কোন বাড়ি কোন ডোবাপুকুর কোন মাঠ কোন হাফবাক্স ফুলবাক্সের মর্যাদা পাইবার উপযুক্ত, এবং তজ্জনিত নির্মাণকর্মে কোন ঠিকাদার কয় গাড়িঠেলাগাড়ি ইঁট, রড ও বালিবজরি যোগান দিবার অধিকার পাইবে ও সেই যোগানশৃঙ্খলে কোন কোন সিন্ডিকেট যুক্ত থাকিয়া ভারসাম্য রক্ষা করিবেক এই সকল গূঢ় তত্বচিন্তন করিবার, বা কোন কারখানা যথাসময়ে বন্ধ করাইয়া সেখানে ঝলমলে সেন্ট্রালি এসি শপিং মল ও ঝাকাস মুদিদুকান উঠাইবার উৎপাদিকা শক্তির রুদ্ধমুখ খুলিয়া দেওয়া যাইবে ইত্যাকার প্রয়োজনীয় আর্থ-সামাজিক সিদ্ধান্ত নিবার যে দায়িত্ব তাঁহাদের উপর অর্শাইয়াছিলো, তাহা হইতে তাঁহাদের আত্মা ও বডি খালাস পাইয়াছে। স্পেসটাইমের মধ্যে বসবাস না করার কারণে অথবা বাইপোলারজনিত অক্ষমতাবশত, শংকরট্যাঙ্ক এসবের কিছুই জানতো না, হতে পারে। আবার জেনেবুঝেও সে স্রেফ নছল্লা করছিলো, এমনও হতে পারে। মোদ্দা, লাল বাংলা থেকে তামাম লাল কুত্তাহিসির মতো উবে গেছে, শুধু খানিক রেসিডুয়াল দুর্গন্ধ বিভিন্ন ক্রুশিয়াল মোড়ে, চত্বরে ও কনডেমন্ড চা দোকানে টিঁকে আছে। লোকটার এখন, বলা বাহুল্য, বয়স হয়েছে, বাল বাদামিহলুদ ঝরোঝরো, ঠ্যাংয়ে ব্যাথা, অনেকগুলো দাঁত নেই। শংকরট্যাঙ্ক অবশ্য একরকমই আছে।
ফলত লোকটা এবং শংকরট্যাঙ্ক, যে কোন গিভন ম্যাটারে এদের প্রতিক্রিয়া একরকম হবে না, এটি প্রত্যাশিত। তার ওপরে, ধরে নিই, লাল বাঙলা ও তদসংক্রান্ত বিষয়াবলী নিয়ে প্রচুর ক্ষোভ বিক্ষোভ দুঃখু লোকটার ভিতরে বায়ুপচা ভসভস গুড়রগুর করছে তো করেই যাচ্ছে। মোদ্দা, লোকটা বিশ্রীরকম খিঁচ খেয়ে গুটলি পাকিয়ে আছে। সেটা অন্যভাবে, অর্থাৎ ব্যাক ক্যালকুলেসন করেও বোঝা যায়। লোকটা এখন হাফবেঞ্চিতে বসে ট্যাঙ্কশংকরের ভাট না শুনে কত অন্য কিছু, গঠনমূলক(ফেসবুকে লাল বাঙলা নিয়ে ভচাভচ পোস্ট দেওয়া, শেয়ারবাজারে তিন লগ্নি করে মোকামতো তিনশো তুলে নেওয়া, টবে লংকাগাছ লাগানো, এক ঠ্যাং কাঁধে অন্য ঠ্যাং পাছাচাপা যোগা, নাতিকে ইস্কুলে পৌঁছনো, কিম্বা পাড়ার ইয়ে হাউসিংয়ের রাস্তায় বদ পড়শিদের কুকুরগু পড়ে থাকে কেন তা নিয়ে রাইচ্যাস ইন্ডিগনেসন প্রকাশ করা) বা নিখাদ বিনোদনময় (চুপিচুপি অন্ধকারে/লালনীল ন্যাংটা ঝরে, মানুষ সাপ ও সাপ মানুষ হয়ে অগ্নিসাক্ষী রেখে বিয়ে করেছে এমন গা ছমছম মেগাসিরিয়াল মসালা চা ও বাদামভাজা খেতে খেতে, কিম্বা টি টোয়েন্টি ম্যাচে উল্টোব্যাটে বাঁ হাতে ছক্কা, কিম্বা নির্মল ঝকঝকে ইঁদুরবিড়ালহাঁসমুর্গি সম্বলিত ডিসনি কার্টুন এসব খুব নিমগ্ন তন্ময় হয়ে দেখা) য়্যাকটিভিতে মন দিতে পারতো। এমনকি নাতনির চম্পু টিউটর মিস, হাসপাতালের হাতাহীন লালঠোঁট রিসেপসনিস্ট, মোহময় হাসিহাসি ব্যাংককর্মী, নিদেন ষোড়শী ফেসবুকবন্ধু, এদের কারুর সঙ্গে বুড়ো বয়সে হলেও জম্পেস একটা প্রেমমতো করতে পারতো। কিম্বা সন্নেসী হয়ে গেলেও একটা বোঝা যেতো। সেসব কিছু না, সেই হাফবেঞ্চি এবং শংকরট্যাঙ্ক। ছ্যা, ছ্যা, ছ্যাছ্যা। এ কহানির গান্ডি যে সর্বৈব মারা গেছে, সন্দ কি?
যাই হোক, মরা ব্যাঙ জ্যান্ত হয়ে নাপানাপি কর্বে, পচা গপ্পো ভুরভুর কস্তুরিসুঘ্রাণ ছড়াবে, মঙ্গলা গরুর পেটে শয়তান আগাকাটা মোচলমান বাচুর জন্মাবে, চেনা হাতে অচেনা গেঁটেবাত হবে, তবে না কাহিনী দইজমাট জমবে, টি আর পি সাঁইইইইইইই করে মাতায় চড়বে। বর্তমান যে কাহিনীর কথা হচ্ছে, তাতে এমন সব দড়ামধ্রম মিরাকললীলে পাওয়া যাবে, তার অবশ্য কোন মানে নেই। হাফবেঞ্চিটা রেললাইনের ধারে, রেললাইন দিয়ে হামেশা বুনো ষাঁড় যথা ইএমইউ গাড়ি গোঁগোঁ ছুটছে, কুকুরছাগলবাছুরগরু ও কানেমোবাইল কিশোরকিশোরী ও হতাশ কি আত্মহননে-উদগ্রীব জনতা যখনতখন ঘচাঘচ কচাকচ কাটা পড়ে প্রেতযোনি প্রাপ্ত হচ্ছে বা পঞ্চভূতে বিলীনমতো হচ্ছে। লোকটার যে তেমন কিছু খারাপভালো হয়ে যাবে না, তা কে বলতে পারে। অন্যদিকে, ট্যাঙ্কশংকর যে উবে গিয়ে অন্য ডাইমেনশনে টেলিপোর্টেড হবে না, তাইই বা বলা যায় কি করে। সবচেয়ে চিন্তার কথা, যতই আদরপূর্বক আপললু লালুভুলু আয়রে তুতু আয়রে ভুতু বলে গায়ে মাথায় হাত দেওয়া হোক, কহানিটি ভটকেভড়কে গিয়ে বা নাশকতাময় চক্রান্তের জটাজালে রামফাঁসা ফেঁসে লাইনে চলে গিয়ে পার্মানেন্টলি ডিরেইল্ড হয়ে যেতে পারে। কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
যাই হোক। শংকরট্যাঙ্ক লোকটার হস্টাইল প্রতিক্রিয়ায় ঘাবড়ালো না। লোকটা চেঁচাচ্ছিলো নেইইইই। না থাকতেই পারে। এতে আর আশ্চর্য কি? এই তো মোড়ের মাথায় হালদারবাড়ি, সিধুর চা দোকান, গোবরার পানবিড়িসিগ্রেট এমনকি একটা আস্ত পার্টিঅফিস সহ আরো কি কি সব ছিলো। এখন সেসব আছে? শংকরট্যাঙ্কের মুখের দুটো আঁচিলের মধ্যে একটা খসে পড়ে গেছে, মানে নেই। অমন হয়। থাকে, থাকে না, থাকে না। থাকে না, থাকে না, থাকে। থাকে থাকে। আছে নেই আছে নেই নেই নেই আছে আছে। ভাবতে ভাবতে শংকরট্যাঙ্ক আবার ফুল বিভোর হয়ে উঠে দাঁড়ালো। লুঙ্গিটাকে থাইয়ের মধ্যিখান বরাবর টেনে বেঁধে লোকটাকে বললো, সে এক দিন ছিলো, তাই না? লোকটাকে, ইতিপূর্বেই চেতাবনি দেওয়া হয়েছে, বাধ্যতামূলকভাবে এই ডায়ালগে অংশ নিতে হবে, নো একজেমপশান। সুতরাং ৩০৯৮৭, সে বললো, ছিলো বোধহয়। যা ছিলো, ছিলো। যা নেই নেই। ওসব নিয়ে ভেবে কি হবে? ইতিহাসটাস সব শেষ হয়ে গেছে। শংকরট্যাঙ্ক হাফবেঞ্চির ডানধারের ঝুগগিক্লাস্টার আঙুল দিয়ে দেখিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক হাসি হেসে ও গলা নিচু করে বললো, ওই ওখানে না, চুল্লু বিক্কিরি হয়। আরো ছ্যাচড়া টাইপ হাসি দিয়ে বললো, আরো অনেক কিছু হয়। তারপর একদম ফিসফিস করে বললো, আমি জানি। এটা শুনে লোকটার হঠাৎ কি মনে হলো কে জানে, সে একইরকম ফিসফিসে উত্তর দিলো, আনি মানি জানি না। শংকরট্যাঙ্ক তাতে খুব নিশ্চিন্তমতো হয়ে বললো, ঠিক ঠিক ঠিক ঠিক। তারপর বললো, ভবা পাগল না, মারা গেছে। ওদিকে বালক ব্রহ্মচারীও নেই, শুনলাম। নেতাজি তো আর ফিরলেনই না। কে আর থাকলো তাহলে? শংকরট্যাঙ্ক মুষড়ে পড়ছে দেখে লোকটা বললো, না না, এরকম চলতে পারে না। লিখে দিলাম, দিন বদলাবে। বলেই দেখলো, দুটি ন্যাংটো বালকবালিকা হাফবেঞ্চির গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নুলো বাড়িয়ে বলেই যাচ্ছে, এই দাদা, দে না। দে না। দে না। দেনাদেনাদেনা এই দাদা। লোকটা আটানা বার করে দিয়ে দ্যাখে শংকরট্যাঙ্ক খুব ক্রুদ্ধ হয়ে ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাস ফেলছে আর বলছে, ভিকিরি ভিকিরি ভিকিরি ভিকিরি ভিকিরি। যত বলছে তত গলার জোর বাড়ছে। ভিকিরি! ভিকিরি। দাঁত কিড়মিড় করে, ভি কি রি! চিৎকার করে, ভি--কি--রি! ভি--কি--রিইই ইইইইইই! এসব শুনে ন্যাংটো শিশুদ্বয় ঝুগগি অঞ্চল অভিমুখে পালিয়ে যায়। লোকটা চাইলেই শংকরট্যাঙ্ককে ন্যাংটাশিশুদ্বয়ের সঙ্গে আদমইভ, আদি মানব, জিনজেনোম, শয়তানচক্রান্ত ও লিবিডোনখরা ও শেষত মানবসভ্যতার বিবর্তন, এসবের আর্ন্তসম্পর্ক নিয়ে একটা নাতিদীর্ঘ লেকচার দিতে পারতো। চাইলে কলকাতার যীশু পদ্যটা আবৃত্তি করে শোনাতেও পারতো। বা পথশিশুদের কল্যাণে অক্সফ্যাম কত ভালো কাজ করছে সেসব বলতে পারতো। সেসবের কিছুই না করে, শংকরট্যাঙ্কের ভিকিরি চিৎকারে বেমালুম গলা মিলিয়ে লোকটা বলতে থাকলো, ভিকিরি! নিকিরি! লেহারি! ভিকিরিনিকিরিলেহারি ছু! (সম্ভাব্য পাদটীকা--ভিকিরি মানে সবাই জানে। নিকিরি মানে যারা ভিকিরির কাছ থেকে ভিক্ষে করে, মানে আন্ডার সাবঅল্টার্ন, লেহারি মানে যাদের আধারভোটার কিস্যু নেই, আন্ডার আন্ডার সাবঅল্টার্ন, নিকিরিরও অধম, সর্বক্ষণ লেই লেই করে) এটা শুনে শংকরট্যাঙ্কের হেভভি ফুর্তি হলো, সে সুর করে বলতে থাকলো, ভিকিরিনিকিরিলেহারিছু:! ভিকিরিনিকিরিলেহারিছু:! ভিকিরিনিকিরিলেহারিছুছু:!! লোকটা বললো, দাউদ!(সম্ভাব্য টীকা: দাউদ দাদের প্রকারভেদ, ক্রস রেফারেন্স রিংফো মলম, এবং ‘দাদার জাঙ্গিয়া পায়জামা ও আন্ডারপ্যান্টের তলায় বাজে জায়গায় খুব গরম একটু কুটকুট কুটকুট দাদা একটু চুলকোলেন খুব আরাম পেলেন দাদা আরো চুলকোলেন পরের দিন আবার চুলকাচ্ছে আবার ঘ্যাসঘ্যাস তারও পরের দিন পরের পরের দিন চুলকায় চুলকায় চুলকায় সে কি চুলকানি আর দাদারও হাত চলছে তো চলছেই ঘ্যাসঘ্যাসঘ্যাসঘ্যাচ ওঃ কি আরাম যেন রাজধানী এক্সপ্রেস দৌড়োচ্ছে’ ইত্যাদি লোকাল ট্রেন ও বাসে যাঁরা যাতায়াত করতেন তাঁদের পরিচিত ফোক হিস্ট্রি) তারপর বললো, খাউজ! বিখাউজ! চটা! (সম্ভাব্য টীকা: খাউজ বিখাউজ চটা দাদের বিভিন্ন স্তর। জনশ্রুতি, চটা স্তরে পৌঁছালে দাদ থেকে রস গড়ায়।)। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে শংকরট্যাঙ্ক আরো গলা চড়িয়ে বললো,ভিকিরিনিকিরিলেহারিছুছু:!! লোকটা বললো, দাউদখাউজ বিখাউজচটাআআআ!!! এরকম বার কত হবার পর শংকরট্যাঙ্ক লুঙ্গি আরো তুলে হাত মাথার ওপরে তুলে গাইতে লাগলো, ন্যাংটা কালি ন্নেংটু কালি, গাঁড়পিঁয়াজি করিস খালি, চলছে না চলবে না। যিনি কালি তিনিই শিব প্রকৃতি ও পুরুষ ইন ও ইয়াং সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে এখান থেকে বিষয়টা আবার এক আধিভৌতিক টার্ন নিতে চলেছে। ব্রেক নিতে হয়।
জোড়জমজ ও শংকর ভগমান কি নই চমৎকার
স্বপ্নদৃশ্য। বাদামি-হলদে মায়ামেঘের মধ্য দিয়ে তিনটে লোক ভেসে আসছে। কাছে এলে বোঝা যায়, তিনটের মধ্যে দুটো জোড়যমজ, সিয়ামিজ টুইন। আর একটা বামন। জোড়জমজ দুটো কোমরের ওপর থেকে ফিতে বা ব্যান্ড দিয়ে জোড়া। ব্যান্ডটা সচরাচর মাংসের হয়ে থাকে, এক্ষেত্রে সেটা কখনো মাংস কখনো চর্বি, এই জিম যোগা করা টাইট পেশী ছলকাচ্ছে, এই তেলচুকচুকে চর্বি গলে গলে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। যমজদের সচরাচর একরকম দেখতে হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে সেই নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়াছে, যেটা ডানদিকের সেটি চালকুমড়োমোটা, গালফোলা দুই থুতনি টেকো ও দাঁত কিড়মিড়ে, আর বাঁদিকেরটি বিষ্ণু যথা সুদর্শন ও সুবেশ, শরীরের কোথাও বাড়তি মেদ নেই, তিল আঁচিল দাগ দাদ খাউজ বিখাউজ কিস্যু নেই, পুরোটা টানটান চকচকে, যেন ইন্সটাগ্রামে ওয়ার্ক আউটের ছবি, ছবি থেকে মাসল ঠিকরে পড়ছে, চিরঞ্জীব ও চিরযৌবন, লয় নাই ক্ষয় নাই। বামনটা বামনেরা যেরকম হয়, তিলেখচ্চর ও ছ্যাচড়া টাইপ, বাঁদিকের লোকটার গা ঘেঁষে থাকছে। যা দেখা হচ্ছে, সবটাই, বলা বাহুল্য, লোকটার পারস্পেক্টিভ। লোকটা কোথায় ছিলো বা আছে এবং কেন, সেসব ফালতু প্রশ্ন আসবে না, এলে লাথিয়ে ভাগানো হবে। যাই হোক, ৪৫৬৭৮, লোকটা দেখলো, জোড়জমজ ও বামন আসছে। মেঘ সরে যাচ্ছে, আকাশ পূর্ণ বেগুনি, সেখান থেকে রাঙাজবা, গোলাপি গোলাপ, ঘিয়ে চম্পা, কন্ঠালচম্পা ও পাতিগাঁদার পাঁপড়ি নিরন্তর নীচের পৃথিবী বা লোয়ার ডেপথসএ বর্ষিত হইতেছে। লোকটা পষ্ট শুনলো, পিছনে ঝংঝনাঝন ঝ্যাকরঝোকর ঝুমঝুমি, প্যাঁকপ্যাঁকপোকরপুক ক্ল্যারিনেট, টিংলিংভোঁপরভপ কিবোর্ড, চুঁইইইইইইই বেহালা, ও থেমে থেমে টিংটিং বীণ ধাক ধাক ধক ধক মৃদঙ্গ এবং মাঝে মধ্যে দ্রুমদ্রাম ড্রাম সহযোগে নিত্যই বাজিতেছে। এমন হতে হতে চুঁইইইই চুঁইইইইইই ইইইই রবে বেহালায় লম্বা ছড় পড়লো। লোকটা এতক্ষণে দেখলো জোড়জমজের ডানদিকেরটার পরনে সিল্কের লুঙ্গিতে সোনাজরির কারুকাজ, বাঁদিকেরটার পরনে হেভভি ঐ কুর্তাপাজামা, তাতে হীরের বোতাম। বামনটার কোন আক্কেলজ্ঞান নেই, পুরো ন্যাংটো, তায় মুখভর্তি আঁচিল। বামনটা দু হাতে করে কি সব নিয়ে আসছে। লোকটা মন দিয়ে নিরীক্ষণপূর্বক বুঝতে পারলো, চালকুমড়োমোটা লোকটার লুঙ্গির তলা দিয়ে লম্বাপানা সরুমতো একটা বুটিদার নিকষকালো মাল বেরিয়ে এসেছে, বামনটা বাঁ হাতে সেইটা পাকড়ে ধরে আছে। তারপরে আরো দেখলো, ও বাবা একি কি কান্ড, বাঁদিকের জিমযোগা চোস্ত জমজ ২ এর হীরের বোতাম বসানো পাইজামার মাঝখানে গোল করে কাটা, সেখান থেকে গোলমতো একদলা মাংস বেরিয়ে মাটিতে লুটোচ্ছে প্রায়, লাগলেই বামনটা ডান হাত বাড়িয়ে সেটাকে তুলে নিচ্ছে, কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে সেটার এত ভার যে বামনটা সামলাতে পারছে না, থেকে থেকেই একদিকে টাল খেয়ে যাচ্ছে। বেহালা চুঁইইইইইইই করেই যাচ্ছে, লোকটা হাঁ করে দেখলো, জোড়জমজ ও বামন সম্বলিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। বামনটা কাত হতে হতে মাটিতে বা অন্য অজানা কোথাও(শালা মেঘের মধ্যে মাটি আসবে কি করে, অবশ্য সিজি দিয়ে কি না করা যায়) বসে পড়লো। লোকটা তাতে খুব কাছ থেকে দেখতে পেলো যে হীরে বসানো পাইজামার ফুটো থেকে যে মাংসপিন্ডটা বেরিয়ে বামনটার ঘাড়ে মাথায় থপ করে পড়লো, সেটা কেমন চেনা চেনা থলিমতন, বামনটা বাঁ হাতে কাছিমতো যেটা তখনো পাকড়ে ধরে আছে সেটাও মাংস তবে সরুলম্বা। খুব, খুব ভালো করে দেখলে বোঝা যায় একটা অন্তর্ঘাত পেকে উঠছে, থলিমতনটা কচ্ছপচলনে ইদিক ওদিক যাচ্ছে বামনটা কোনরকমে ফিরিয়ে আনছে আর কাছিমতোটা বামনটার হাত ছাড়িয়ে কেবলি পালাতে চেষ্টা করছে। লোকটা পষ্ট বুঝলো এখানে একটা খুব বেসিক রক্তমাংসের ধমধমাধম, একটা খুব অবিচ্ছেদ্য অংশ, একটা খুব ফান্ডামেন্টাল নিরাপত্তা অখন্ডতার, একটা খুব সর্বজনীন সার্বভৌম লদকালদকির কেস আছে, যাকে বলে ফ্লেশ অব ফ্লেশ। বামনটা এখানে মেটাফর, সে না থাকলি এই ভার বহন করবে কেডা? কিন্তু শোভাযাত্রা থমকে দাঁড়ায় কেন। চুঁই ইইইইইই রবে বেহালা আর বাজে না, নো ঘুমঘাম টুংটাং, এই সম্যক অব্যাখ্যাত সান্নাটা কেন? তাহলে কি রহস্যের কোন নতুন খাসমহল, দেখতে রহিয়ে আগে কেয়া হোতা হ্যায়? তাহলে কি বেগনি আকাশের নীচে পুষ্পবৃষ্টিশোভিত জোড়জমজের লুঙ্গি পাজামা থেকে নির্গত অন্তর্গত মাংসরক্ত ফ্লেশ এন্ড ব্লাড কচাকচ কেটে নিয়ে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়বে নই কোন মেঘনাদ? ভাবতে ভাবতেই লোকটা শুনতে পেলো, ধূমবাজনা ফের শুরু হয়ে গেছে, ফুলটুল সব রানিং, তার মধ্যে ফিসফিস করে ও মন্দ্রকন্ঠে কে বা কারা বলে উঠছে, জয় শিবসম্ভো হর হর মহাদেও, রিয়ালিটি শোয়ে যেমন পিছন থেকে হাসি বসিয়ে দেওয়া হয়, অনেকটা সেরকম। লোকটা দেখলো, জোড়জমজ থেবড়ে বসে মাটিতে(বা অন্য কোথাও) বারবার মাথা ঠুকছে আর ক্রমাগত বলছে, শিবজীকা কৃপা হো ঠনঠনাঠনঠন, ওয়াপস লে তেরা কম্পোজিট লোন। তারপরে প্রায় কান্নার সুরে, কেয়া করে কহা চলে, ওয়াপস লে, ওয়াপস লে। বামনটা প্রায় শুয়ে পড়েছে। এমন সময় ঘোয়াঘ্যাঙ বলে একটা বিকট শব্দ হলো। লোকটা অবাক হয়ে দেখলো কোথাও কিছু নেই দুমফটাস করে সবকিছু ফেটে গেলো। ফাটার মধ্যে নীলচে সবুজ ধোঁয়া। তার মধ্যে শংকরট্যাঙ্ক একটা হুমদো ট্যাঙ্ক নিয়ে লোফালুফি খেলছে আর ন্যাংটা কালি, উলিবাবালি বলে কিত্তন গাইছে। নীচের দিকে দেখছেই না। এমন সময়ে জোড়জমজের দিক থেকে একটা সুতীব্র হাহাকার ভেসে এলো--শংকর ভগমান শুন মেরা কহানি, ডুব মরনে কে লিয়ে দে চুল্লুভর পানি। প্রথমে শংকর ভগমান, শংকর ভগমান ও পরে চুল্লুভর পানি চুল্লুভর পানি বলে প্রচুর ইকো হতে থাকলো। কিছুক্ষণ এমন চলার পর ট্যাঙ্কশংকর ব্যম কালি বলে একটা বিকট চিৎকার ছেড়ে এক পা তুলে দাঁড়িয়ে রইলো। তাতে জোড়জমজ হাত জোড় করে মাথা তুলে সেদিকে কিছু হলেও হতে পারে এমন ভাব করে তাকালো। ট্যাঙ্কশংকর এক হাতে তুড়ি বাজালো। অন্য হাতে হুমদো ট্যাঙ্কটা উপুড় করে ধরা। সেখান থেকে পিচিক পিচিক করে দুধ বেরুচ্ছে। সেই দুধ জোড়জমজের ওপর(মূলত) কিছুটা বামনটার ওপর পড়ছে। জোড়জমজ জিভ বার করে এবং গ্র্যাজুয়ালি লুঙ্গি কুর্তাপাজামা হীরেমোতিসোনাদানা সব খুলে পুরো দিগম্বর হয়ে সেই দুধ গায়ে মাথায় মাখছে, জিভ দিয়ে চেটে চেটে খাচ্ছে আর ওএমজি এ শালা কি দেখা যায় সেই কাছিমতো কেসটা স্রেফ একটা গিরগিটির মতো তুরুক লাফ দিচ্ছে তৎসহ কাছিমগোছের জিনিসটা গুটি গুটি পায়ে অনেকদূর চলে গেছে, বামনটা হাঁচড়েপাঁচড়ে সেগুলোকে ধরে দুধ মাখাবার চেষ্টায় রত। লোকটা ওপরে তাকিয়ে দেখে যে ট্যাঙ্কশংকর ততক্ষণে লুঙ্গিমুঙ্গি খুলে পুরো দশাপ্রাপ্ত, ট্যাঙ্ক থেকে দুধমুধ কিছু বেরুচ্ছে না, ওদিকে ট্যাঙ্কশংকরের গেঁড়ে কেলেকুষ্টি ননটাটা বিশ্রীরকম ফুলেটুলে খাড়া হয়ে রয়েছে। সেটাকে বডিশেক দিতে দিতে ট্যাঙ্কশংকর নেচে নেচে বলছে, ঝিঙ্গা দোলে, ঝিঙ্গা দোলে, ঝিঙ্গা দোলে এ এ এ রে। প্রচুর মেঘ এসে গেছে বলে জোড়জমজ বা বামন, এবং গিরগিটি বা কাছিম কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। এমন সময় বেগনি আকাশ আলো করে ফ্লুরোসেন্ট আলতা রঙের বৃষ্টি নামলো। বিশ্বচরাচর স্তব্ধ নিঝুম, শুধু মাঝে মাঝে কুঁক কুঁক নিনাদে দিব্য হেঁচকি উঠিতেছে।
ফাঁকের ঘর ছুঙ্কু কর
ব্যাম্বুর ওপর ব্যাম্বু খাড়া/তাহারে কয় চ্যাগড়াবেড়া/সেই বেড়ার মইদ্দে ফাঁক/দূরদিগন্তে বিড়েইল ডাক/যত দুষ্ট পাজি লোকগুলো/ বেড়ার খোপে কোপ দিলো/চাকু ছুরি ঘপাঘপ/বেড়ার খোপে খপাখপ/খোপ থেকে ফাঁক উঠাইলো/ফাঁকে ফাঁকে ফাঁক বসাইলো/চৌকা চৌকা ফাঁকের ইঁট/মানেই খিট গন্ধা খিট/চৌকা খোপের চৌকা ফাঁক/অবিশ্বেসী দূরে থাক/ ফাঁক ফাঁকা ফাঁক ফাঁকের ঘর/হাওয়াই কিল্লা হাওয়াই গঢ়
কহানিটি এই বিন্দুতে আসিয়া কি ফাইন্যালি ফাইন্যালি ভটকাইতেছে? ওপরের পদ্যটি কেন? কে ইহার রচয়িতা? ট্যাঙ্কশংকর দু এক লাইন ছড়া কাটিয়া থাকে বটে, কিন্তু ওপরের অত্যন্ত গোলমেলে কেসটি তাহার ব্রেইনচাইল্ড নহে। লোকটা একসময় পদ্য লিখতো এমন খবর ছিলো। কিন্তু এখন সে বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত ক্লান্ত হতাশ, আগেই বলা হয়েছে। তাহলে বেড়া, খোপ, ফাঁক ও ইঁট ইত্যাদি নিয়ে উপরোক্ত খুবই আপত্তিকর মালটির কি মানে?
উপরোক্ত প্রশ্ন ও খিটসমূহ, তৎসহ বেড়াফাঁক পদ্যটিতে যে যে খিট উল্লেখিত ও অনুল্লেখিত, তাদের উত্তর বর্তমান কাহিনী মারফত পাওয়া যাবে, না ভাবাই ভালো। বিষয়টি বেয়াড়া ও বিদঘুটে, কোন ফাঁক দিয়ে গলে গিয়ে কি ঢুকে আসবে বা কি বাইরে যাবে তার স্থিরতা নাই। তদুপরি, বেড়া মানেই দখলদারি, ফাঁক মানেই মেলা ঝামেলি, এবং ইঁট হামেশা চোরাই হয়ে থাকে, এরকম জানা যায়। হতে পারে যে গোটা পদ্যটাই চোরাই মাল, এখানে বড় কাইদায় চালান করা হয়েছে। এমনও হতে পারে, এটি সবটেক্সট মাত্র। প্রথমটায় ভাবার ব্যাপার আছে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে না ভাবলেও চলবে। যাই হোক, বিষয়টা অর্থাৎ ফাঁকপদ্যটা যখন ঢুকেই পড়েছে, মেনে নেওয়া ভিন্ন গতি কি?
সুতরাং, মেনে নিই এবং ধরে নিই, চ্যাগড়াবেড়ার খোপ থেকে নৃশংসভাবে খুবলে আনা ফাঁকের ওপর ফাঁকের ইঁট বসিয়ে যে ফাঁকের ঘর ও অন্তে যে হাওয়াই গঢ় নির্মিত হয়, আপাতত তার বুরুজের ওপর লোকটা এবং ট্যাঙ্কশংকর সেট হয়ে আছে। সমগ্র বিষয়টি ফাঁকময় ও হাওয়াই হওয়ায় সুবিধাটা এই যে, যে কোন কিছুর মধ্যেই গোটা মালটা ঘুপুত বসে থাকতে পারে, তা সে বারান্দা হোক, ট্যাঙ্ক হোক আর স্টেশন/হাফবেঞ্চি হোক। অথবা এখানে মহাজাগতিক ডিস্ট্যান্সিং এরও একটা কেস থাকতে পারে। অর্থাৎ হাওয়াই গঢ় অর্থে হাইটেক স্পেসশিপও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে। যাই হউক, লোকটা বললো, এক অর্থে ভালোই হলো। শংকরট্যাঙ্ক বললো, তা হলো। তারপরেই খুব খচে গিয়ে বললো, কেনকেনকেনকেন? ভালো কেন? লোকটা বললো, ভালো কেননা রফা হয়ে গেলো। এই যে দেশের অবস্থা, পৃথিবীর অবস্থা, জীবন কি ও কেন, বিপ্লব হবে কি কিনা এসব নিয়ে কত ভাবতাম। ভাবতে ভাবতে লোকটা ফোঁসফোঁস দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো। তারপর বললো, এখন আর ভাবি না। শংকরট্যাঙ্ক খুব কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কেনকেন, ভাবো না কেন? লোকটা বললো, ভেবে কি হবে? যা হওয়ার হয়, যা ঘটার ঘটে, যা থাকার থাকে। যা থাকে না, থাকে না। শংকরট্যাঙ্ক বললো, কিরকম কিরকম? লোকটা বললো, এই যে ছাড়া পাচ্ছি না। কত কি করার ছিলো, কিচ্ছু হলো না। সেই ঘুরেফিরে বাঁড়া তোমার বিষথোবড় দেখতে হয়। এখানে একটা বড় চক্কর আছে। গ্রহনক্ষত্র বলো, ডায়ালেকটিক্স বলো, জিন বলো, ল এন্ড অর্ডার বলো। দোর বাঁড়া। ভাবতে ভাল্লাগে না। ভা-ব-তে ভাল্লাগে না। মুহ্যমান হয়ে লোকটা একাধিক হাই তুললো। শংকরট্যাঙ্ক বললো, আমার দাদাও বলতো। লোকটা আনমনা হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি বলতো? শংকরট্যাঙ্ক বললো, বলতো, শংকর, তুই একটা পাগলাচোদা বাল। লোকটা বললো, ঠিকই তো বলতো। শংকরট্যাঙ্ক বললো, জানি তো। লোকটা বললো, তাহলে দুঃখের কি আছে? শংকরট্যাঙ্ক বললো, ওই যে। লোকটা বললো, কি? শংকরট্যাঙ্ক বললো, ওই যে তুমি বললে, কত কি হলো না। লোকটা বললো, হলোই না তো। শংকরট্যাঙ্ক নন একজিসটেন্ট হাঁটুতে হাওয়াই চাপড় মেরে বললো, ওটাই তো বলছিলাম গো। ওটাই। বলে হাসাহাসি মুখে গাইতে থাকলো, লাল গান নীল হলো, হলো না, হলো না। হলো হলো হলো না। হলো হলো হলো হলো হলো না। লোকটা খেঁকিয়ে উঠে বললো, দোর বাঁড়া থামো না। শংকরট্যাঙ্ক খুব বাধ্য গলায় বললো, আচ্ছা। লোকটা অনেকক্ষণ গুম হয়ে থাকলো। তারপর বললো, আচ্ছা, বিপ্লবটা তো হতেই পারতো। শংকরট্যাঙ্ক তাতে প্রচুর খচেমচে গিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে উঠে বললো, হুঁ বিপ্লব! কিসের বিপ্লব? কার বিপ্লব? বিপ্লব হলে কি ভাঙা বিচির উপরে নতুন বাল গজাতো? বিপ্লব! আলবাল বোকো না বলে দিলাম। লোকটা বললো, খিস্তি দেবে না বাঁড়া বলে দিচ্ছি। শংকরট্যাঙ্ক কিছু নরম হয়ে বললো, আর বিপ্লবটা করতো কে শুনি? একটা পাট্টি আপিস খোলা আছে? মোড়ের মাথায় ভজবাবু এলসিএস, নেই। দেয়ালে ছবি আঁকতো ফোগলা গুপী, মরে গেছে। পোস্টার লিখতো, কেলে সুভাষ, নেই। সেই যে গো বীরেনের ভাই ধীরেন, নকসাল। নকসাল বলেই শংকরট্যাঙ্ক অভ্যেসবশত গলা নামিয়ে চারদিক দেখে নিলো। তারপর খুব ফিসফিস করে বললো, সেও মরে গেছে। শংকরট্যাঙ্ক এইসব বলছে শুনে লোকটার খুব নস্ট্যালজিয়া হলো। সে দেয়ালে দেয়ালে মাওয়ের মুখ, সাইট ফর সিপিএম ১৯৮২-২০১২ লেখা এবং রেললাইন দাপিয়ে চলে যাওয়া লাল ঝাণ্ডায় আগাপাছতলা মোড়া একের পর এক ট্রেন, এবং গোপন মিটিং ও হোয়াট ইজ টু বি ডান এসব ভাবতে থাকলো। ভাবতে ভাবতে তার মনে হলো, সেই সব ঝোড়ো সময়ে পাখির মতো ভেসে ভেসে না না পাখি নয় দুর্বার বাজপাখী কিম্বা ঈগল ভেসে ভেসে নয় ছোঁ মেরে, মোদ্দা, চলে যাওয়া যায় নাকি। অসমাপ্ত বিপ্লব আবার একহাত শুরু করা যায়, অন্যদিকে বালচুল ন্যাচুরালি কালো হয়, আকাশ আবার দূষণমুক্ত নীল হয়, পানাপুকুর ও ব্যাং ব্যাঙাচি, চড়াই ও ছাতারের দল কাতারে কাতারে ফিরে আসে, মরা গাছ নব কিশলয় হয়। সবচাইতে বড় কথা, লাল বাংলা লাল থাকে, কালো সবুজ গেরুয়া কিচ্ছু হয় না। আহা, এমনটি হলে বড় ভালো হয়। লোকটা উৎসাহিত হয়ে বললো, মাইরি খুব ভালো হয়। মনে করো, নেই। আবার মনে করো, আছে। শংকরট্যাঙ্ক জুলজুল করে তাকালো। লোকটা বলতে থাকলো, নেইনেইনেইনেআছেআছেআছেআছে। শংকরট্যাঙ্ক বললো, কি আছে আর কি নেই? আছে না নেই? টু বি অর নট টু বি?
নেগেশন অফ নেগেশন
লোকটা এমন স্মৃতিমেদুর ডাউন মেমারি লেন ছায়াময় চারুবীথি ট্রিপে ছিলো যে শংকরট্যাঙ্ক হ্যামলেট আওড়াচ্ছে দেখেও অবাক হলো না। হওয়া উচিত ছিলো। এনিওয়ে, লোকটা চিৎকার করে বললো, আছে আছে! আবার নেই নেই! মানে যা আছে তা নেই। কিন্তু যা নেই তা আছে। নেগেশান অব নেগেশান! হাত পা নেড়ে লোকটা বলতেই থাকলো, এসব কিচ্ছু নেই। শংকরট্যাঙ্ক তাতে খুব ঠান্ডা গলায় বললো, সে তো নেইই। ফাঁকের ঘর হাওয়াই গঢ়। কি থাকবে? এ আর নতুন কি? লোকটা শুনলোই না। বললো, ভাবো জাস্ট ভাবো! ভাবো যে পৃথিবী নেই, চাঁদ নেই, সূর্য নেই, সৌরজগত ছায়াপথ কিচ্ছু নেই...শংকরট্যাঙ্ক এতক্ষণ কান চুলকোচ্ছিলো। এবার একগাল হেসে বললো, দূর ফাগল, ওরম হয় নাকি? চাঁদ সূর্য না থাকলে হয় নাকি? না না। ওসব কাজের কথা না। নানানানা। বলে আর একবার ফিক করে হাসলো। লোকটার বেশ ফ্লো এসে গিয়েছিলো, সেটা বিগড়ে যাওয়ায় সে যারপরনাই ব্যাজার হলো। এদিকে থিওরিটাকেও মাঝরাস্তায় ছেড়ে রাখা চলে না, একটু ভেবেটেবে নিয়ে বললো, এই তোমার দোষ শংকরদা, এত বয়স হয়ে গেলো, তবু ভাবতে শিখলে না। ভাবতে হবে, গভীরভাবে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে, বিষয়টার গভীরে গিয়েও ভাবতে হবে। যা আছে তা কি সত্যিই আছে? যা নেই তা কি সত্যিই নেই? কি নেই তা ভাবতে ভাবতে আমরা ক্রমশ কি আছে তার ম্যাজিক রিয়ালিজমে ঢুকে পড়বো, বন্ধুগণ..। বলতে চাইছিলো বন্ধুগণ, আপনারা ধৈর্য ধরে শুনুন, সব খোলসা হয়ে দুধ কি দুধ পানি কি পানি হয়ে যাবে, আশেপাশে শংকরট্যাঙ্ক ছাড়া জনমনিষ্যি কাকপক্ষী নেই দেখে চেপে গেলো। ওদিকে শংকরট্যাঙ্ক ঘুরে ঘুরে ফাঁকের ইঁটগুলোর জোড়ের জায়গাগুলোয় হাত দিয়ে দেখছিলো সরু সরু চাকলি ফাঁক ফিতের মতো কিম্বা গুঁড়ো করে বসানো হয়েছে কিনা। এতে শংকরট্যাঙ্ক যে বস্তুত ও আদতে বাইপোলার, বেশ বোঝা যাচ্ছিলো। ফাঁকের সঙ্গে ফাঁক তো অটোম্যাটিক্যালি জোড়া লেগেই যায়, সবাই জানে খাপে খাপ পঞ্চুর বাপ, শুধু ওই জ্যামিতি মানে আয়তক্ষেত্র বর্গক্ষেত্র ব্যাপারটা খ্যাল রাখতে হয়, রাউন্ড পেগ ইন স্ক্যয়ার হোল হলে চলবে না। যাই হোক, লোকটা বললো, ভাবতেই হবে। ভাবো ভাবো ভাবা...এই পর্যন্ত বলতেই ট্যাঙ্কশংকর ফাঁকটাক ভুলে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বললো, পেরাকটিস করো। লোকটা খুশী হয়ে মাথা নাড়লো, একবারও ভাবলো না এই ডায়লগটা ট্যাঙ্কশংকর জানলো কোত্থেকে। বাহাত্তুরে হলে এমনই হয়ে থাকে নিশ্চয়। যাই হোক, লোকটা বলতে থাকলো, ভাবো যে যা যা তুমি বা তোমরা এতকাল ভেবে এসেছো আছে জেনে এসেছো আছে তা তা আসলে নেই, যেমন তুমি, তোমার বৌ, তোমার ছেলেমেয়েনাতিনাতনি, তোমার মরে যাওয়া বাপমা(ফ্লো-র এই মুশকিল, কি বলতে গিয়ে কি বলা হয়ে যায়, মরে যাওয়া লোক আবার 'আছে' কি করে হয় তারা তো শালা পার্মানেন্টলি নেই--অবশ্য ভূততত্ত্বের কথা হলে আলাদা), ইয়ে তোমার অবৈধ প্রেমিকা, তোমার বাড়ির সামনের কাঁঠালগাছ, কাঠালগাছে কাঠপিঁপড়ে, তোমার পোষা জিমি কুকুর, তোমার মেয়ের পোষা ম্যাওবিড়াল, তোমার বাথরুমের সাদাসবুজচকরাবকরা টালি, তোমার রান্নাঘরের ছ ছটা ডিনার সেট, একটা ইম্পর্টেড, তোমার ছেলে যে ফুল্লি এয়ারকন কনভেন্ট ইস্কুলে পড়তে যায় সেটা ও বিশেষত তার সর্বানী মিস, তোমার অনলাইনে কেনা যোগা ম্যাট, তোমার ঐ ট্রেডমিল, তোমার হাইকিং শু ও হাওয়াই চটি, তোমার বাড়ির পাশের সানরাইজ, নই সুরজ, লছমিমাই, রামনবমী, আপ্যায়ন, জলখাবার, মাটি ও লালদিগন্ত হাউসিং ও য়্যাপার্টমেন্ট, সেখানে পৌঁছোতে গেলে যে সব ইঁট, কংক্রিট ও পিচরাস্তা পেরিয়ে যেতে হয়, সেই রাস্তাগুলোয় যে সব ভুলুলালু কুত্তারা শুয়ে থাকে এবং তাদের যারা মাংসের ছাঁট দিয়ে পুষ্টিকর স্টু বানিয়ে খাওয়ায় ও ঘায়ে লাল মারকুরওক্রম ঢেলে চিকিৎসা করে সেই গৃহবধু, কিশোরকিশোরী ও পশুপ্রেমীগণ, এই পথকুত্তাদের যারা সাধারণত ঘৃণা করে সেই বাইকবাজ তেজী মাতালকুল, যারা না থাকলে এই শহর, অর্থাৎ পাইখানাহলুদ রডখ্যাচা ইটখ্যাচা আলফাল বাড়ির জায়গায় মনোরম ঔন পার্কস, প্লেগ্রাউন্ডস য়্যান্ড কমিউনিটি হল সহ গড়ে ওঠা চম্পু টাউনশিপ তৎসহ পাড়ায় পাড়ায় গলিতে গলিতে আশীর্বাদ ও নবদিগন্ত হাউসিং ইত্যাদি এবং ঝাকাস শপিং জোন, এসব কিছুই তৈরি হতো না সেই রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীবর্গ ও প্রোমোটারকুল, তৎপ্রসাদধন্য রডইঁটবালিবজরি ও সিমেন্ট সাপ্লাইকারি নওজোয়ান সিন্ডিকেট ও লেবার সরবরাহকারি তামাম ঠিকাদার পেটিদার। বন্ধুগণ, এখানে থামলে চলবে না, ভাবা চালিয়ে যেতে হবে। ভাবুন দিল্লি মুম্বাই বেঙ্গালুরু চেন্নাই গুরুগ্রাম নয়দা গাজিয়াবাদ হাউজখাস এমনকি ক্যালিফোর্নিয়া বস্টন লন্ডন ওমান দুবাই সিঙ্গাপুর এবং এসব জায়গায় যে সব কৃতী বালকবালিকা চাকরি করতে ও কালক্রমে রেমিটান্স পাঠানো এনআরআই হতে সম্বৎসর গিয়ে থাকে তারা এবং তারা ও তাদের তামাম বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন যাদের সঙ্গে তারা ১৬৮ নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্কড পৃথিবীতে জোড়জমজের চেয়েও অনেক বেশি সংযুক্ত থাকে এবং সেই সংযোগের অসলি যোগসূত্র যে যাবতীয় স্টিল গ্রে, গোল্ডেন ইয়েলো, ব্ল্যাক ক্যাট ও অবিরল ছবিময় কলকাকলিমুখর স্মার্টফোন এবং উক্ত ছবি ও কলকাকলি যাদের নিরলস প্রচেষ্টা ভিন্ন সম্ভব হতো না, সেই টেলিকম কোম্পানিসমূহ, এবং যারা তাদের লাইসেন্স ও ঠিকা দিয়ে সেবা দেবার সুযোগ করে দেয় সেই রাজাধিরাজ কিম্বা নির্বাচিত জনপ্রিয় সরকার, সেই সরকারের সমস্ত প্রয়োজনীয় আমলাগামলাঘটিবাটিউকিলহাকিমজজম্যাজিস্টরমন্ত্রীসান্ত্রীপুলিশমিলিটারি এবং তাদের বিরুদ্ধে নিরন্তর ষড়যন্ত্ররত আতঙ্কবাদী এবং যারা এই চক্রান্ত দিনরাত ফাঁস করতে করতে হাঁপিয়ে পড়ে সেই মিডিয়া, এসব কিচ্ছু নেই। ভাবুন, কিচ্ছু কিচ্ছু কিচ্ছু নেই। একটু থেমে লোকটা এবার সামনে রাখা একটা গ্লাস থেকে জল খেলো। লোকটা যখন জল খাচ্ছে সেসময় ট্যাঙ্কশংকর আবার লুঙ্গিটুঙ্গি খুলে দিগম্বর হয়ে গেছে। কালি ও শিব, এঁরা যে আদ্য/আদ্যা শক্তির প্রকারভেদ এবং কেনই বা শিব খামোখা লুঙ্গি পরে ঘুরে বেড়াতে যাবেন এবং অথবা কেনই বা মহাকালি লেহেঙ্গাঘুঙুর পরে লাচালাচি করবেন, এবং তার চাইতেও বড়ো কথা কিছুই যদি না থাকে তাহলে লুঙ্গি বা লেহেঙ্গাই বা থাকতে যাবে কেন, এসব নিয়ে তলিয়ে না দেখে লোকটা ট্যাঙ্কশংকরের এই বেয়াড়া ও দুরপনেয় অশ্লীলতার প্রদর্শন দেখে খুবই রেগে গেলো। ট্যাঙ্কশংকর ততক্ষণে ট্যিপিক্যাল ন্যাংটো নাচ আরম্ভ করে দিয়েছে ও সুর করে বলছে, কিচ্ছু কিচ্ছু কিচ্ছু নেই। নেই নেই গাব্বা নেই। ডাব্বা সাব্বা কিচ্ছু নেই। নিকটতম ফাঁকের ইঁটে কোমর বেঁকিয়ে সজোর ধাক্কা মেরে ন্যাংটো ট্যাঙ্কশংকর বললো, ব্যম কালি ব্যম শংকর। তারপর লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল, চালিয়ে যাও বন্ধু, আমি আছি। লোকটা ট্যাঙ্কশংকরকে পাত্তা না দিয়ে বলতে থাকলো। ভাবো, না থাকাটা কী ব্যাপক! তুমি নেই মানে তোমার দাঁত চোখ নাক মুখ নেই, তোমার পেটবুক শিরাউপশিরাপিত্তঅন্ত্র নেই, তোমার কোমর নেই...। লোকটার কথার ওপর কথা চাপিয়ে ট্যাঙ্কশংকর বললো, পাছা নেই নুনু নেই বাল বিচি কিছু নেই। এই অবধি বলেই তারপর ট্যাঙ্কশংকর গম্ভীর হয়ে গেলো। লোকটা জ্বলন্ত দৃষ্টিতে ট্যাঙ্কশংকরকে মাপছিলো। বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে ট্যাঙ্কশংকর বললো, কুঁচি নেই চুঁচি নেই, বোঁচা বুচি কিছু নেই। শুক্র নেই ডিম্ব নেই। জন্ম নেই মৃত্যু নেই। নেইইইই। লোকটা কিউ নিয়ে বললো, নেই, নেইইইই, কিন্তু আছে। বন্ধুগণ ভেবে দেখুন, প্রত্যেক নেইয়ের পিছনে অন্তত একটা করে আছে আছে। মনে করুন আপনি নেই। কিন্তু না থাকলে কি হবে? প্রকৃতি শূন্যকে ঘৃণা করে, সুতরাং আপনি না থাকলে আপনার মতো অন্য কেউ আছে,(ট্যাঙ্কশংকর বললো, আপনি নয় কোপনি)যা আপনার ক্লোন, প্রতিচ্ছায়া, সিমুলাক্রা, যা ইচ্ছে হতে পারে। আপনার বৌ না থাকলে অন্যের বৌ। কিম্বা প্রেমিকা(ট্যাঙ্কশংকর বললো, ওই একই হলো)। আপনার মেয়ের জিমি কুকুর না থাকলে টমি কুকুর। রোদ না থাকলে ছায়া। জল না থাকলে স্থল, ইয়ে স্থল না থাকলে জল। নবদিগন্ত আবাসন না থাকলে মিত্তিরদের পানাপুকুর। টাউন্সিপ না থাকলে ডুমুরজলা। প্রোমোটার না থাকলে এল সি এম। সিন্ডিকেট না থাকলে পাড়ার ঠেক। সাপ্লায়ার না থাকলে একনিষ্ঠ পার্টিকর্মী। দিল্লি না থাকলে দেলহি, আওরঙ্গজেব, শাজাহান। ক্যালিফোর্নিয়া না থাকলে নাভাজো। (ট্যাঙ্কশংকর হাউমাউ করে বললো, খাবো খাবো সব খাবো)। লোকটা আবার পাত্তা না দিয়ে বলতে থাকলো, মূলে ফিরে যেতে হবে বন্ধুগণ। গিয়ে দেখতে হবে। বুঝতে হবে। ভাবতে হবে। ভাবুন ভাবুন ভাবুন(ট্যাঙ্কশংকর বললো, ভাবুন গাবুন বেবুন!, বলে দাঁত খিঁচোলো)! ট্যাঙ্কশংকরের দিকে বিলকুল না তাকিয়ে লোকটা একটানা বললো, ভাবুন চ্যাং ব্যাং ক্ষার ক্ষীর কিচ্ছু নেই। ভাবুন নদী নেই গদি নেই কারবালা নেই মক্কা নেই শুভ জেরুজালেম নেই বাবা বিশ্বনাথ নেই এয়ারপিলো কালাশনিকভ রাশিয়া চীন আমেরিকা ইসরায়েল ইহুদি জিহাদি হিন্দু রাষ্ট্র ধৃতরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী ষড়যন্ত্রী রঙ মিলন্তি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক উইপোকা ঘুসপেটি অটোমোবাইল সুপার ডুপার হাই ফাই ওয়াই ফাই করঞ্জাই তালুকদার গোলমরিচ পোদ্দার আগলি বার অচ্ছে দিন ঘাই হরিণ দুঃখ সুখ পেরেক কাঠ ধাপার মাঠ কিচ্ছু নেইই(লোকটার ভাষণ চলাকালীন নেপথ্যে নানারকম ঘ্যাঙ ঘোঙ ধূপ ধাপ দুম ফটাস ক্রিং লিং শব্দ হইতেছিলো, সম্ভবত অবাঞ্ছিত স্ট্যাটিক ঢুকিয়া পড়িয়াছিলো কিম্বা জিনভূতদানোফ্যান্টাজম কিম্বা শ্রী শংকরের ছয় লক্ষ বিংশতি হাজার চেলাচামুন্ডাগণ এইরূপ আঁকাড়া ব্ল্যাসফেমিতে খুবই রুষ্ট কুপিত হইয়া গোলযোগ করিতেছিলো, অথবা এইগুলি ট্যাঙ্কশংকরের ঘৃণ্য চক্রান্তের অংশ হিসাবেও দেখা যেতে পারে)। ভাবুন প্রিয় বন্ধুগণ, নোংরা স্থিতাবস্থায় ফাটল দেখা দিয়েছে, এই ঘোর অসাম্যের অমানিশায় এক চিলতে নতুন দিনের আহ্বান ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত অনুরণিত, বন্ধুগণ আপনারা কি এখনো শুনতে পাচ্ছেন না ওই ঝড় উঠছে ডাক আসছে ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও নিশ্চিহ্ন করো না না এমনিতেই এই হারামী গেরুয়া স্টেশন হারামীতর হাফবেঞ্চি হারামীর হারামী বালছাল রেললাইন কিচ্ছু নেই। এই পর্যন্ত বলার পর লোকটা দম নিলো। ট্যাঙ্কশংকর তখন এক অজানিত ভয়াল বিপদের আশঙ্কায় নাচ পুরো বন্ধ করে প্রগাঢ় টেনশানাক্রান্ত পশ্চারে খচাখচ বিচিকুঁচকি চুলকোচ্ছিলো। (কি কেলো/কলি। ভাইরাস না না ফাঙ্গাস বাঁড়া ভগমানকেও মানে না।)। লোকটা কিচ্ছু দেখলো না। দমসম নিয়ে আবার বলতে থাকলো, পা ঠুকে ঠুকে থেমে থেমে কেটে কেটে, ভাবুন ভাবুন কিচ্ছু নেই। শালিক নেই মালিক নেই মা নেই বাপ নেই অনাথ নেই ত্রিনাথ নেই মাটি নেই বাটি নেই কৃষি নেই হিসি নেই যোগা নেই রোগা নেই মানুষ নেই ফানুস নেই ঘাস নেই বাঁশ নেই জল নেই ছল নেই বারান্দা নেই বাড়ি নেই সুপুরি নেই খুপুরি নেই। বলে লোকটা আবার থামলো। ট্যাঙ্কশংকর হঠাৎ উৎসাহিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো, নেইনেইনেইনেই। সব থাকার গাঁড়ে বেঁকা। লোকটা চুপ করে থেকে বললো ধনী নেই খনি নেই শীত নেই গ্রীষ্ম নেই সে যেন এক চিরবসন্তেরি দেশ গাছে গাছে আপেল কমলালেবু ঘরে ঘরে চিকেন দোপিঁয়াজা মানে আগে সব জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক। ট্যাঙ্কশংকর বললো, যাক যাক যাকযাক। যাক ফাক। ফাক যাক। লোকটা তখন পুরো ট্রিপে। চোখ বন্ধ করে নিজের পেটে খোঁচা মেরে বললো, নেই। চোখ খুলে ট্যাঙ্কশংকরের পেটে আর একটা খোঁচা মেরে বললো, নেই। ফাঁকের ইঁটে ইঁটে লাথি মেরে বললো, নেই। বাইরে তখন তুমুল ঝঞ্জাবায় বহিতেছে ও সৃষ্টি আলোড়িত। সে কি দশ দশ মিটার উঁচু ঢেউ। লোকটা ভাবলো, জীবনমৃত্যু পায়ের ভৃত্য ড্যু অর ডাই হয় বিপ্লব নয় ঠিকাদারি, সুতরাং, হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সে পোস্ট বিপ্লব পৃথিবীকে স্বাগত জানালো। তারপর বললো, অফিস নেই টপিস নেই ইস্কুল নেই হুস্কুল নেই কলেজ নেই নলেজ নেই ব্যাংক নেই ট্যাঙ্ক নেই(লোকে যে বলে বাড় খেয়ে ক্ষুদিরাম, সে এমনি নয়। ফ্লো কিম্বা হিট কিম্বা আবহাওয়ার খামখেয়ালি কিম্বা অজানা আতঙ্ক যেকারণেই হোক লোকটা খামোখা ‘ট্যাঙ্ক’ বিষয়টাকে টেনে আনতে গেলো। কোন দরকার ছিলো না।)। যেই বলেছে ট্যাঙ্ক নেই, একটা অশরীরি আর্তচিৎকার শোনা গেলো। লোকটা ঘাবড়ে গিয়ে পষ্ট দেখলো, ফাঁকের মধ্যে ফাঁক তৈরি হচ্ছে, জোড় আলগা হয়ে একের পর এক ফাঁকের ইঁট খসে পড়ছে তারাখসা নির্জন নৈঃশব্দ্যে, ধসে পড়ছে হাওয়াই কিল্লা হাওয়ার গঢ়। আর সেই ধ্বংসস্তুপের মধ্যে ফাঁক খামচাতে খামচাতে ভেঙেচুরে বেমালুম উবে যাচ্ছে ট্যাঙ্কশংকর, ফাঁকের পর ফাঁকের গভীরে ঢুকে যাচ্ছে তার পা, হাটু, কোমর, পিঠ, বুক, মাথা। লোকটার শরীরে অস্বস্তি বাড়ছে তো বাড়ছেই, ভয়ঙ্কর আতঙ্ক নিয়ে লোকটা পরিষ্কার দেখলো যে সেও নিশ্চিতভাবে স্লো মো বিলীন হয়ে যাচ্ছে, তার কোষজিন অনুপরমাণু অদৃশ্য ড্রপলেটের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে বেমক্কা ও অসম্ভব ফাঁকতরঙ্গে। লোকটা শুনতে পেলো তার মাথার মধ্যে কেউ বলছে, বলেই যাচ্ছে, ফাঁকের ঘর ফাঁকলা গঢ়, কোমরগাছ না গাছকোমর? তারপরই বলছে, এবার ঝর, মাইরি ঝর। লোকটা একমুহূর্তের জন্য বুঝতে পারলো অবজেক্টিভ কন্ডিশন ব্যাপারটা কি এবং হঠকারি নিখিল নেতি মানে শেষমেষ প্রতিবিপ্লবী নিহিলিজম, এবং ফাইন্যালি, নেগেশন অব নেগেশন ব্যাপারটা আদতে একটি খুব গড়বড়ে রফুচক্কর। সার্বিক নেগেশন বলে কিছু হয় না। নেহাৎ সে উবে গেলো, নচেৎ সে আরো বুঝতে পারতো কেন সাধারণ ধর্মঘট বা সার্বিক তালাবন্ধের সময়েও কিছু ছাড় দিতেই হয়, সবকিছুকে মুখ ভেংচে উদক্যালানের মতো নেইইইই বলে দেওয়া যায় না।
কাহিনীমৃত্যু ও(?!)মাল্টিভার্স
আসলে লোকটা ইন দ্য হিট অব দ্য মোমেন্ট বিস্মৃত হয়েছিলো যে শংকর ও ট্যাঙ্ক অবিচ্ছেদ্য অভেদ অদ্বৈত, ট্যাঙ্ক না থাকলে শংকর থাকে না, এবং ভাইসভার্সা, ওয়ান মেকস দ্য আদার পসিবল। হয়তো কোন অন্তর্লীন ডেথড্রাইভ বা গূঢ় মৃত্যুএষণা তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিলো। সে ভুলে গিয়েছিলো যে বর্তমান কিস্যার উৎসে বহুবিধ জ্যামিতিক প্রতিপাদ্য উপপাদ্য আদি ক্রিয়াশীল, স্রেফ ভাট কথাবাজি দিয়ে যে জ্যামিতিশৃঙ্খলাকে বিপর্যস্ত করতে গেলে দাম ধরে দিতে হবে, আজ নাহয় কাল কড়া কীমত চুকানি পরেগি। লোকটা এক সাধারণ পাতিস্য পাতি অতীব ধুঁধুলচোদা গাড়োলের মতোই আচরণ করে, কেননা সে এই গোদা বেসিকটি ভুলে যায় যে বর্তমান কহানির বিশ্বজগতে অর্থাৎ কিনা ন্যারেটিভ ইউনিভার্সে সে ও শংকরট্যাঙ্ক শেষাবধি আখরি দম তক পরস্পর পরস্পরের প্রতি সম্পূর্ণ ও উপায়হীনভাবে নির্ভরশীল। লোকটা বুঝতে পারেনি যে সে যতই শংকরট্যাঙ্ককে বাইপোলার বালছাল বলে দুচ্ছাই করুক না কেন, এবং শংকরট্যাঙ্ক যতই ন্যাংটো হয়ে নেচে অশ্লীল স্বপ্নদুষ্ট চমৎকার ছড়িয়ে বেড়াক না কেন, আসলে পাগলাচোদা শংকরট্যাঙ্ক নিজের থাকা দিয়ে লোকটার থাকাটাকে সম্ভব করে তুলছিলো। লোকটার নিহিলিস্টিক অতিবাম হঠকারি বিচ্যুতির ফলে শংকরট্যাঙ্কের--ফলে তার নিজেরও--গাঁড় সম্যকরূপে মারা যায়। আল্টিমেটলি, এর ফলে কাহিনীটিরও এক অর্থে নিজলিঙ্গম পোঁদে পুরম বা আত্মঘাতী সেল্ফ সোডোমি হয়ে যায়। ঢিলটা ঢিলের মতো চলতে থাকে। কিন্তু সেই চলন ধরে ধরে যে কহানিজাল বিস্তৃত হচ্ছিলো, তা ছিঁড়েখুঁড়ে ত হে চ ন হে চ হয়ে যায়।
হতে পারে আবার জিরো থেকে শুরু করে বিষয়টাকে পুনরপি গুছিয়ে নেওয়া যাবে। এটাও হতে পারে যে যাবতীয় ধ্বংস ভাঙচুর না থাকার অশ্রুসজল দুর্জ্ঞেয় কোয়ান্টাম ওধারে অন্য বহু জ্যামিতি ও ফলত আরো আরো বারান্দা/স্টেশনলোক ও শংকরট্যাঙ্ক কুলুকুলু রবে বহিয়া চলিতেছে। হতে পারে যে অভাগার ধন কিছুই যায় না ফেলা এবং পুনঃ, তোমারি এ মহাবিশ্বে হারায় না তো কিছু ম্যাটার কামস ব্যাক টু ম্যাটার--এ বিশ্বে না হোক অন্য কোন সমান্তরাল বিশ্বে ঝকঝকে ফুলবেঞ্চিতে বসে ট্যাঙ্কশংকর সোনাজরি বসানো কুর্তা ও হীরের বোতাম দেওয়া পাইজামা পরে ল্যাভেন্ডার ফুলের গন্ধ শুঁকছে। হতে পারে অন্যতর আর এক বিশ্বে বিপ্লব পরবর্তী সময়ে লোকটা বাড়িঘরপ্রোমোটার সব মুছে দিয়ে মেঘপাখিজলা ও জলঢোড়া ইত্যাদি ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। অথবা হতে পারে যে জলের ট্যাঙ্কের মধ্যে রবারের টেবিলক্লথে মোড়ানো ডায়নামাইট স্টিক ও গোটা দশ অটোম্যাটিক পিস্তল রাখা আছে। লোকটা আর শংকরট্যাঙ্ক সহ-ষড়যন্ত্রকারী, দুজনে মিলে বিপ্লবী নাশকতার ছক কষছে। কিন্তু এসবই অন্য অন্য সম্ভাব্য বিশ্বের কথা।