শুনেন, শেখ মুজিবের এমন হুট করেই প্রেমের কোন দরকার নাই। আপনারা গত বছরের মত চুপ করে থাকলেও কোন কিছুই আসত যেত না তাঁর। যদি এই প্রেম স্থায়ী হয় তাহলে ভালো, শুভ কামনা আপনাদের জন্য। আর যদি আপনাদের প্রেম হয় ফারুকির মত, সুযোগ পাওয়া মাত্র সুর পরিবর্তন করে ফেলা তাহলে সমবেদনা। আপনারা ইতিহাসের কৃষ্ণগহ্বরে নিক্ষিপ্ত হবেন। শেখ মুজিবের এমন হুট করেই মতামত ঘুরে যাওয়া অস্থির সমর্থকের দরকার নাই, কেন জানেন? এর উত্তর হচ্ছে আজিজুর রহমান, যে রিকশাওয়ালা ফুল নিয়ে গেছিল ৩২ নাম্বারে। যাকে আপনারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রবল সমর্থন দিয়ে যে মহান ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন তার সরকার জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলায় জেলে পাঠিয়েছে! ফুল দিতে গিয়ে জুলাই হত্যা মামলার আসামি? ইন্ট্রেরিম মহান! যাই হোক, এমন আজিজুর রহমানরা এখনও আছে, এদেরকে সাহস, স্পর্ধা সম্পর্কে কোন ধারনাই নাই অনেকের।
আমার ব্যক্তিগত ভাবে এই সেলেবদের প্রতি কোন রাগ বিরাগ অনুরাগ কিছুই নাই। আমি তো এইটাই বুঝি না আমি কেন একজন অভিনেতার কাছে দেশ কেমন, রাষ্ট্র যন্ত্র কীভাবে কাজ করবে, রাজনীতির মারপ্যাঁচ এগুলা বুঝতে যাব? আমি তার কাছে সে ভালো অভিনয় করে কিনা তাই জানতে চাইব। যে গান গায় সে ভালো গান গায় কি না তাই আমার প্রশ্ন থাকবে। এই তারকাদের দ্বারা উদ্বেলিত হওয়ার কিছু নাই। তার জ্ঞান বুদ্ধি তার ক্ষেত্রে ভালো হতে পারে, হওয়া উচিত কিন্তু তার কাছে আমি অন্য কিছু আশা করি না। শুধু আমাদের দেশ না, তারকাদের কাছ থেকে সারা দুনিয়াতেই আজগুবি আশা করে মানুষ। মেসি রোনালদোর কাছে ভালো খেলা আশা করেন, ঠিক আছে, তার কাছ থেকে বিশ্ব রাজনীতি, ধর্ম জ্ঞান, জলবায়ু সম্পর্কে মতামত কেন আমি আশা করব? তারা স্রেফ একজন ফুটবল খেলোয়াড়! এক বিন্দু বেশি কিছু না। এইটা কেন জানি আমরা বুঝতেই চাই না।
তারকাদের এই মুজিব ভক্তের কারণে এই তারকাদের ছবিতে জুতা মারার কর্মসূচি পালন করেছে মহান ছাত্ররা! এদের যত দেখি তত মুগ্ধ হই। কী দারুণ একেকজন! কত বড় মূর্খ হলে কেউ এমন কাজ করতে পারে? অবিশ্বাস্য না? এদেরকে ভিডিও ডকুমেন্ট করে নেটফ্লিক্সে দেখানোর ব্যবস্থা করা দরকার! এমন চিড়িয়া কবে কে কোথায় দেখছে?
এদের সমীকরণটা সোজা। লীগকে ধ্বংস করতে হবে, এই জন্য লীগের শক্তি মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে খেয়ে দিতে হবে, ব্যাস, সহজ হিসাব। এই করতে গিয়ে নিজেরাই যে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে সেই দিকে খেয়াল নাই মহাজনদের। অথচ যদি উল্টোটা হত, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরত এরা তাহলে লীগই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেত আস্তে আস্তে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লীগ যে দাবি করে তাই সত্য প্রমাণ করে সবাই, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা রক্ষায় লীগের নামই আসে আগে। অবিশ্বাস্য শুনালেও সত্য যে এই প্রমাণে লীগকে সকলে মিলে উদার হস্তে সাহায্য করে সব সময়! লীগের নামে দোষ হচ্ছে তারা মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে কুক্ষিগত করে রেখেছে সব সময়। তো? কেউ উদ্ধার করতে আসছে? নাকি আরও ঠেলে দিয়েছে তাদের কোলে?
নানা জরিপ করে নানা সংস্থা, ভোট নিয়ে জরিপ, ভোটার নিয়ে জরিপ, আগডুম বাগডুম জরিপ। কেউ একজন এদেরকে জরিপ করে দেখাবে কি যে তারা যত মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধুকে হেয় করতে চাচ্ছে তত তাদের জনপ্রিয়তা কমছে, তত যে লীগকে ধ্বংসের জন্য এই আয়োজন সেই লীগকে শক্তিশালী করছে? যদি আমার ধারনা ভুল হয় তাহলে ভালো, চালায় জান আপনারা। লীগের নাম নিশানা মিটায় দেন। আর না হলে আবার একটু বসেন, মাথাটা ঠাণ্ডা করে চিন্তা করেন কেন এক বছর পরেই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে আপনাদের একটা কথারও কেউ পাঁচ পাই দিয়া মূল্য দিল না? ভাবেন, ভাবা প্রাকটিস করেন!
১৫ আগস্ট হুট করেই লক্ষ লক্ষ শোক জানানো পোস্ট দিয়ে ফেসবুক ভেসে গেল। এমন দৃশ্য আপনি আমি, যে কোন বিচক্ষণ ব্যক্তি কীভাবে দেখার কথা? বুঝার কথা না যে বাতাস কোনদিকে যাচ্ছে তা ধরা যাচ্ছে না বা ভুল হচ্ছে কোথাও? কিন্তু শান্তির পায়ারা থেকে শুরু করে তার চেলাচামুণ্ডা কেউ এই সত্যতা ধরতে পারল না যে মানুষ শেখ মুজিব, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এই সব নিয়ে জল ঘোলাকে ভালো চোখে দেখছে না। তাই মানুষের আবেগ একদিকে আর তারা সারাদিন মুজিব প্রথম স্বৈরাচার, খালেদা জিয়ার জন্মদিন ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত রইল। ডক্টর সাহেবের মত লোক খালেদা জিয়ার একটা ভুয়া জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছে অথচ স্বাধীনতার স্থাপতির মৃত্যুদিন উপলক্ষে একটা শব্দ করেনি! সব কিছু ছেড়ে দিলেও তো ছোট একটা শোক বার্তা দেওয়া যেত না? কিন্তু তারা এই পথে হাঁটল না! কারণ এইটা তাদের কোন পথ ছিলই না।
দেশ জুড়ে এমন আবহাওয়া থেকে উদ্ধার করতেই পিনাকীর মত লোক দায়িত্ব নিয়ে নামলেন। হুট করেই মানুষকে জানালেন মুক্তিযুদ্ধে ২০০০ মানুষ মারা গেছে! ব্যাস, সবাই ২০০০ না কয় হাজার এই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল! কই ৩০ লাখ আর কই ২ হাজার! এগুলা নিয়ে কেন এখনও তর্ক করতে হবে? কিন্তু এই তর্ক এখনও চলছে, চলতেই থাকবে। পিনাকীর মত ক্রিমিনালরা এই সবকে ভুলতে দিবে না। মুক্তিযুদ্ধকে একটা স্ক্যাম প্রমাণ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই চেষ্টা ছোট থেকে দেখে যাচ্ছি। এই যুদ্ধ ভাবছি শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমৃত্যুই বুঝি এই লড়াই করেই যেতে হবে। নানা জরিপের নাম, নানা তথ্য উপাত্ত সব সময় মাথায় নিয়েই ঘুরতে হবে, কারণ প্রতি নিয়ত কোথাও না কোথাও মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাকে হেয় করার চেষ্টা কেউ না কেউ করে যাচ্ছে!
এর আগের লেখায় মাহফুজ আনামের সম্পাদকীয়র কথা লিখেছিলাম। ওইটা পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। তিনি মূলত জুলাই সনদ নিয়ে লেখছেন। সেখান কেন ভাষা আন্দোলনের উল্লেখ নাই, কেন বঙ্গবন্ধুর নাম নাই, কেন ৭০ সালের নির্বাচনের কথা নাই এগুলা লিখেছেন। এবং আমি যে কারণে আগ্রহী ছিলাম তাও লিখেছেন, তিনি প্রশ্ন করেছেন জুলাই সনদে যে বাংলাদেশকে ফেইলর কান্ট্রি বলা হল তা কোন যুক্তিতে? শেখ হাসিনার শাসন নিয়ে নানা প্রশ্ন করায় যায় কিন্তু এইটা তো মিথ্যা না যে দেশ স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের দিকে এগিয়ে গেছে। তিনি প্রশ্ন করেছেন উন্নয়নশীল দেশের পথে যে যাত্রা তা তো এই সরকারও জারি রেখেছে। তাহলে কেন ব্যর্থ রাষ্ট্র বলা হচ্ছে? এতে বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না? এই লেখাতেই তিনি একটা প্রসঙ্গে লিখেছেন যে বিদেশিরা তাঁকে প্রায়ই বলে তোমরা এত অতীত নিয়ে পরে থাক কেন? তিনি এই সরকার যে গত আওয়ামীলীগ সরকারের নাম ভুলতে পারছেন না সেই দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন আগায় যাওয়ার জন্য, সব কিছুতেই গত সরকারের সমালোচনা করার কোন যুক্তি নাই।
কিন্তু আমাদের পিছনে যেতেই হয়। কারণ আমরা পিছনের হিসাব মিটাতে পারি নাই। আমাদেরকে তারা করে ফিরছে পরাজিত প্রেতাত্মা। আমরা তো আগায় যেতে চাই পারি কই? তাই এত বছর পরে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে বাংলাদেশে থেকে ঢাবির আগামী ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এমন এক প্রার্থী ফেসবুকে পোস্ট দেয় মতিউর রহমান হচ্ছে বিমান ছিনতাইকারী আর মিনহাজ হচ্ছে বীর, সে জীবন দিয়ে মতিউর রহমানকে বিমান নিয়ে যেতে বাধা দিয়েছে! এর চেয়ে অপমানের আর কী আছে?
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের বীরত্বের গল্প একটু জানিয়ে যাই। যে কোন বিচারেই উনাকে আমার দুর্দান্ত লাগে। হয়ত আব্বা বিমান বাহিনীতে ছিল বলে, হয়ত আব্বাও যুদ্ধের সময় পাকিস্তানে বন্দি ছিল বলে। জানি না আসলে। কিন্তু আমি এই গল্পটা সব সময় বলে যেতে চাই। আমাদের নায়ক মতিউর রহমান।
১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট, করাচীর মাশরুর বিমানঘাঁটি থেকে একটা টি - ৩৩ বিমান আকাশে উড়ে যায়। কন্ট্রোল সেন্টার মুহূর্তের মধ্যেই বুঝতে পারে এই বিমান ছিনতাই হয়েছে। কারণ বিমান থেকে সংকেত দেওয়া হয় যে বিমান ছিনতাই হচ্ছে। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই হুশ করে বিমান আকাশে উড়ে যায়। কোন বিমানঘাঁটি থেকে বিমান ছিনতাই হবে এমনটা কোন স্বাভাবিক ঘটনা না। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে বাঙালি পাইলটদের প্রতি নজর রাখা হচ্ছিল, সবাইকে গ্রাউন্ডেড করে রাখা হয়ে ছিল। কিন্তু সত্য হচ্ছে এমনটা কেউ করতে পারে তা আসলেই কেউ চিন্তা করে নাই। আর এই অকল্পনীয় কাজটাই করেছিল ফ্লাইট লেফটেনেন্ট মতিউর রহমান।
বিমান ছিনতাই করবে এই চিন্তা মতিউর রহমানের বেশ কিছুদিনের চিন্তার ফসল। হুট করে কিছুই করেননি তিনি। ২৫ মার্চ কালো রাতের সময় তিনি দেশেই ছিলেন। সহজেই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে পারতেন। কিন্তু বীরেরা আমাদের মত করে ভাবে না। তিনি চিন্তা করলেন আরও বড় কিছু করার। এমন একটা কাজ করলে পুরো দুনিয়ায় আলোড়ন তৈরি হবে। তখন থেকেই তিনি বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করতে থাকেন। এর আগে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তিনি তার নিজ জেলা নরসিংদীর পাশে ভৈরবে নিজের অভিজ্ঞতা সম্বল করে মানুষজনকে নিয়ে একটা বাহিনী তৈরি করেন। তাদের প্রশিক্ষণ দেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত মুক্তিকামী মানুষদের আনা নানান অস্ত্র নিয়ে ভৈরবে পাকিস্তান আর্মির সাথে যুদ্ধও করেন তিনি। তার ঘাঁটি লক্ষ্য করে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর স্যাবর জেট বিমান গোলা বর্ষণ করেন। মতিউর রহমান আক্রমণের আশঙ্কা আগেই করে ছিলেন। তাই সে যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যান। এরপরেই তিনি শুরু করেন উনার বৃহৎ পরিকল্পনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিবার নিয়ে ৯ এপ্রিল করাচি ফিরে যান। এবং এমন আচারন করেন যেন তার ওপরে কেউ সন্দেহ করতে না পারে। তাকে সেফটি অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি মিনহাজ নামের এক নতুন পাইলটকে নিজের কাজের জন্য নির্বাচন করেন। পরিকল্পনা হচ্ছে মিনহাজ কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে উড্ডয়নের অনুমতি নিবে, উনি পরে কোনভাবে মিনহাজের বিমানে উঠে পড়বেন। উঠে নিজে আয়ত্তে নিয়ে নিবেন বিমান।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫৪ বছর আগে, ২০ আগস্ট সকাল সাড়ে এগারোটার মত বাজে। এই সময় মিনহাজ দ্বিতীয়বারের মত উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কন্ট্রোল টাওয়ার অনুমতিও দিয়ে দিছে। এই সময় মতিউর রহমান ইশারায় বিমান থামাতে বলেন। যেহেতু তিনি ছিলেন মিনহাজের সিনিয়র আর সেফটি অফিসার তাই মিনহাজ বিমান থামাতে বাধ্য হন, ক্যানোপি খুলে জিজ্ঞাস করেন কেন থামতে বলছেন? মতিউর লাফ দিয়ে বিমানে উঠে ক্লোরোফর্ম ভেজা রুমাল মিনহাজের নাকে চেপে ধরেন। তিনি পিছনের সিটে বসে বিমান নিয়ে উড়াল দেন। মুশকিল হয়ে যায় অজ্ঞান হওয়ার আগে মিনহাজ বিমান ছিনতাইয়ের সংকেত পাঠায় দিতে সক্ষম হয়। মতিউর রহমান খুব নিচু দিয়ে রাডার ফাঁকি দিয়ে বিমান চালাচ্ছিলেন। মাশরুর ঘাঁটি থেকে এফ ৮৬ বিমান উড়ে এসেছে এই বিমান খুঁজতে। কিন্তু কোথাও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পাশের আরেক ঘাঁটি থেকেও বিমান এসেছে, তারাও খুঁজছে কিন্তু বিমানের কোন খোঁজ নাই।
মতিউর রহমানের বিমান নিয়ে উড়তে যথেষ্ট ঝুঁকি নিতে হয়। কারণ টি ৩৩ বিমানের পিছনের সিট একটু নিচু, সামনের প্রায় কিছুই দেখা যায় না। অনেকটা অন্ধের মত উড়াল দিতে হয়েছে তাঁকে। অভিজ্ঞ মতিউরের তা সমস্যা হয়নি। কিন্তু বিপদ শুরু হয় যখন মিনহাজের জ্ঞান ফিরতে শুরু করে তখন। মিনহাজ সামনের সিটে, সে ইচ্ছা করলে ইজেক্ট সুইচ টিপে মতিউরকে বিমান থেকে ফেলে দিতে পারবে। মতিউরের সেই সুযোগ নাই। মতিউর রহমান পিছন থেকে জাপটে ধরে মিনহাজকে থামাতে চেষ্টা করেন, কিন্তু সক্ষম হয় না। ককপিটের ভিতরের ওই অল্প জায়গায় শুরু হয় হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি। এক পর্যায় ক্যানোপি খুলে যায়, মতিউর রহমান ছিটকে পড়েন। মৃত্যু হয় অসীম সাহসী এই বীরের। ভারতীয় সীমান্ত থেকে অল্প কিছু দূরে মিনহাজসহ সেই বিমান ধ্বংস হয়। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার জায়গা থেকে অল্প দূরে পাওয়া যায় মতিউর রহমানের লাশ।
মৃত্যুর পরে পাকিস্তানীরা সবচেয়ে ন্যাকারজনক যে কাজটা করে তা হচ্ছে উনার লাশকে কবর দেয় পাকিস্তানের চতুর্থ শ্রেণীর একটা গোরস্থানে। শুধু তাই করেলও সমস্যা ছিল না। তারা কবরের গায়ে লিখে দেয়, ‘ইধার শো রাহা হ্যায় এক গাদ্দার!' এর আগে, নানান নির্যাতনের পরে যখন মিলি রহমানকে ছেড়ে দেওয়া হয় আর তিনি পাকিস্তান ত্যাগ করার আগে যখন একবার দেখতে চান স্বামীর কবর তখন তাঁকে বলা হয় কবরের কাছে যাওয়া যাবে না, দূর থেকে দেখতে হবে। তিনি যখন মৌরিপুর সেনানিবাসে যান, তখন দেখতে পান বড় করে মতিউর রহমানের ছবি লাগানো আছে, আর তাতে লেখা গাদ্দার, থুতু দিয়ে ঘৃণা প্রকাশ করুণ!
বীর শ্রেষ্ঠের এই অপমান ৩৫ বছর বয়ে বেড়াতে হয়েছে আমাদের। ২০০৬ সালের ২৩ জুন মতিউর রহমানের লাশ বাংলার মাটিতে ফিরে আসে। মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয় এই বীরকে।
এমন একজন বীরের কপালে এমন এক জনগোষ্ঠী জুটেছে যে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতিপক্ষকে স্মরণ করে পোস্ট দিচ্ছে মানুষ। আর এই কারণেই আমাদের থামার সুযোগ নাই। আমাদেরকে বারবার করে বলে যেতেই হবে মুক্তিযুদ্ধের গল্প, বলেই হবে আমাদের বীরের বীরত্বের গল্প, বঙ্গবন্ধুর গল্প। হাল ছাড়লেই সর্বনাশ।
এই লেখার যখন লিখছি, ( ২৩ আগস্ট, ২০২৫) তখন ফেসবুক ভেসে গেছে এক করুন সংবাদে। সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার মারা গেছে। স্বাভাবিক মৃত্যু না। তার লাশ পাওয়া গেছে মুন্সিগঞ্জের মেঘনা নদীতে। মুশকিল হচ্ছে ভদ্রলোক একটা খোলা চিঠি লিখে গেছেন। চিঠিটা পড়ে হতভম্ব হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নাই। একটা লোক প্রচণ্ড মনকষ্ট নিয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন। সমস্ত ক্ষোভ, জ্বালাযন্ত্রণা সব যেন একটা চিঠিতে লিখে গেছেন। মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি, আত্মহত্যা করেছেন না অন্য কিছু তা এখনও নিশ্চিত না। কিন্তু অন্য অনেক কিছুই যে হতে পারে তা অস্বাভাবিক না। তিনি তার শেষ লেখায় লিখেছেন তাঁকে চাপে রাখা হচ্ছে। তার লেখার কারণে তাঁর কর্মস্থল, আজকের পত্রিকার সম্পাদক তাঁর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কেন? তিনি খোলা চিঠিতে লিখেছেন তা। বলছেন শেখ হাসিনার পুলিশ মানুষ মেরেছে বুঝলাম কিন্তু পুলিশকে কে মারল? এই প্রশ্ন করা অন্যায়? পুরো চিঠি জুড়ে নিজের জীবনের নানা ব্যর্থতার কথা লিখেছেন, হতাশার কথা লিখেছনে। বুকটা মুচড়ে উঠে এমন লেখা পারলে। খুব বেশি লেখা উনার আমি পড়িনি। এখন খুব খারাপ লাগছে যে কেন পড়িনি! চিঠির একটা জায়গায় লিখেছেন "সত্য লিখে বাঁচা সহজ নয়" আহ! কী মর্মান্তিক সত্য!
যাই হোক, শেষ করি। বাংলাদেশকে ঘিরে কী হচ্ছে আল্লা মালুম। কে যে কি করে যাচ্ছে, কেন করছে বুঝে উঠা মুশকিল। আবহাওয়া আর জলবায়ুর পার্থক্য জানেন তো? আবহাওয়া পরিবর্তনশীল, দ্রুতই পরিবর্তন হয়, ক্ষণে ক্ষণেই হয়। জলবায়ু স্থায়ী জিনিস। কোন অঞ্চলের জলবায়ু হুট করেই পরিবর্তন হয় না। যদি হয় তাহলে তা হচ্ছে মহা ক্যাওয়াস! সর্বনাশের চূড়ান্ত। বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রেও একই সত্য প্রযোজ্য। কিন্তু কেন জানি কোন দৈব শক্তিতে কেউ কেউ দেশের জলবায়ু পরিবর্তন করে দিতে চাচ্ছে। একটা রিসেট বাটনে চাপ দিয়েই দেশের জলবায়ু বদলে দিতে চাচ্ছে। এমন করে জলবায়ু বদলে দেওয়া যায় না। যদি বদলে যায় তাহলেও তা ভালো কিছু বয়ে আনবে না। মহাজন এই সত্য জানে কি?
<a href="
https://freeimage.host/i/KHANUs1"><img src="
https://bangla.bdnews24.com/opinion/67e7d808d8f4