জনগণ কি এই সবের ম্যান্ডেট দিয়েছিল ৫ আগস্ট? বলেছিল তোমরা সংবিধান বদলে দেও? বলেছিল দল গঠন কর? বলেছিল মুজিবের বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেও? তার কবরে ঝাঁপিয়ে পড়তে রউনা হও গোপালগঞ্জ? বলেছিল সমস্ত জঙ্গিদের ছেড়ে দেও? বলেছিল তোমরা ঝাঁপিয়ে পর হিন্দুদের বাড়ির উপরে? অথচ কথায় কথায় জুলাই আন্দোলন তাদেরকে সব কিছু করার ম্যান্ডেট দিয়েছে এমন কথা শোনায় এই নেতারা। এরা একটু লাইনে থাকলেই আমাদের মত লাখো মানুষকে কাছে পেত অনায়সেই। মুক্তিযুদ্ধ শুধু লীগের সম্পত্তি না, বঙ্গবন্ধু লীগের একার না। এইটাই তো মূল মন্ত্র ছিল। এক বাম নেতাকে এমন কথা বলতে দেখলাম গত দশ পনেরো বছর ধরে। অথচ তিনি এখন এই কথা বলেন না! তিনিও এদের সুরেই মুজিব আবার ক্যাডা বলেন! ভণ্ডামি রন্ধ্রে রন্ধ্রে এদের। ... ...
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এইটা নিয়ে বেশ সরব। তীব্র ভাষায় শুধু মাত্র বাংলায় কথা বলে দেখে ধরে ধরে বাংলাদেশে পাঠায় দেওয়ার সমালোচনা করেছেন তিনি। এইটা শুধু মমতা কেন করছে আর বাকিরা কেন চুপ করে রয়েছে তা আমার জানা নাই। এইটা নিয়ে তো রাজনীতি অন্তত পশ্চিমবঙ্গে থাকার কথা না। কিন্তু অবাক হয়ে দেখতে হচ্ছে যে তাই হচ্ছে। শাসক দলের কর্মকাণ্ড চোখ বন্ধ করে সমর্থন দেওয়ার যে রীতি প্রচলিত আছে তা এখানেও কাজ করে চলছে। অথচ এই বিষয় নিয়ে দলমত নির্বিশেষে এক থাকলে চেহারাটা অন্য রকম হতে পারত। গুজরাটে হাসান শাহর কথা লিখেছি ওপরে, তাঁকে সম্ভবত ধর্মের কারণে ধরে ফেরত পাঠিয়েছে, বাংলাদেশের মিডিয়া তেমনই প্রচার করেছে। যদিও তার পরিবার পশ্চিমবঙ্গের বলে সে জানিয়েছে। কিন্তু বাকিদের ক্ষেত্রে? বীরভূমের বাসিন্দা আর্জিলা বিবি সুইটি বিবি ও দুই নাতি– ১৬ বছর বয়সী কুরবান শেখ ও ছয় বছরের ইমাম শেখকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে জানা যায় দিল্লীতে বাংলাদেশী বলে আটক হয়েছে তাঁরা। একই রকমের গল্প হচ্ছে সোনালি খাতুন, তার স্বামী দানেশ শেখ ও তাদের ছেলে সাবির শেখের। বীরভূমে বাড়ি তাদের। বাংলাদেশী বলে আটক! এই দুই পরিবারকে ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে! এমন আরও কত কত নাম আছে। মুর্শিদাবাদের লোক আছে, পুরুলিয়ার লোক আছে। ভাষার কারণে বাংলাদেশে বিপদে পড়ছে। এমন একটা সময় যখন এই দেশে ভারতীয় নাগরিক এইটা খুব স্বাচ্ছন্দ্যকর তথ্য না। তাই তারা কেমন আছে, সুস্থ আছে না বিপদে আছে তা জানাও এখন সহজ না। বাংলাদেশের মিডিয়া পুশ ইন নিয়ে যতটা আগ্রহী, পুশ ইন হয়ে যারা আসল তাদের অবস্থা কেমন, কই আছে তা নিয়ে তাদের আগ্রহ কম। ... ...
ভাইরাল হওয়ার জন্য বুদ্ধি দরকার? কত বুদ্ধি আছে ভাই। এমন এমন সব কাজ করবেন যা কোনদিন কেউ করে নাই। মায়ের দাফনের সময় ডিজে পার্টির আয়োজন করলেন, ভালো ক্যামেরায় সব ধারণ করে ছোট ছোট রিলে মুক্তি দিলেন অনলাইনে! কিংবা আবহ সংগীত সহ বাপের লাশ দাফন! মিউজিক ভিডিওর মত করে বাপের লাশ নামানো দেখাইলেন, কোটি কোটি ভিউ! বা ধরেন কেউ আপনার বোনের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছে, আপনি বাধা দিবেন? না। আপনি ভিডিও করুন। ভিডিওতেই রাগ করুন প্রচণ্ড, ওকে পাইলে ছিঁড়ে ফেলবেন, মাথা ভেঙ্গে দিবেন ইত্যাদি বলতে থাকুন। ভিউ নিশ্চিত। টাকা কামাই করা হচ্ছে মূল কথা, বাকি সব গৌণ। তার জন্য যদি আগুনে পোড়া শিশুকে দিশেহারা হয়ে দৌড়াতে দেখেন তখন দ্রুত ক্যামেরা চালু করুন, ভিডিও করুন। এই ভিডিও ক্লিপই আপনার ভাগ্য বদলে দিবে। কয়জনের কাছে আছে এমন ভিডিও? ভাগ্য দেবতা আপনাকে আজকে এখানে মোবাইল সহ উপস্থিত করেছে, আপনি তো ঘুমায় থাকতে পারতেন, বা আপনার মোবাইলে সময় মত চার্জ নাও থাকতে পারত, পারত না? সব মিলিয়েই তো মোক্ষম সুযোগটা পেয়েছেন আপনি, ভিডিও করবেন না? ছবি তুলবেন না? আশ্চর্য! ... ...
এনসিপির গোপালগঞ্জ সফর চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এবং এর রেশ বহুদূর পর্যন্ত যাবে আমার বিশ্বাস। এনসিপি এখন এইটাকে পুঁজি করে রাজনীতি করবে। মুজিববাদকে কবর দিবে বলে আসছে ওরা, এর অর্থ হচ্ছে ৭২ সালের সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলা হবে, জুলাই সনদ ঘোষণা হবে। লাশ না পড়লে এই রাজনীতিটা তারা সহজেই করতে পারত। কিন্তু চারজনের লাশ, তাদের পরিবারের আহাজারি এখন পর্যন্ত ভারি হয়ে আছে পরিবেশ। রমজান নামের যে ছেলেটাকে মারছে তাকে পুলিশ ধরে রেখেছে এমন ভিডিও দেখা গেছে। পরে তাকে মৃত পাওয়া গেছে। যদিও এই সব জালিমদের হৃদপিণ্ডে বিন্দুমাত্র কাঁপন ধরায় না। আর্মির একটা ভিডিও দেখলাম, রাতে গোপালগঞ্জে কারফিউর সুযোগে রীতিমত ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে সম্ভবত। কারণ ভিডিওতে সেনা সদস্যরা উদ্যম নৃত্য করতে দেখা গেল! এইটা কবের কিংবা ফেক কি না জানি না। পেজটা আর্মির নানা খবরাখবর দেয়, তারাই দিয়েছে এই ভিডিও! কতখানি নিষ্ঠুর হলে এমন করা সম্ভব? ... ...
আগামীকাল ১৬ জুলাই হয়ত আরেকটা ম্যাসাকার হতে পারে। এনসিপি গোপালগঞ্জ যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সারজিস, হাসনাত মুজিববাদকে কবর দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে গোপালগঞ্জ যাচ্ছেন। গোপালগঞ্জে কালকে কী হবে তা বলা মুশকিল। যদি টুঙ্গি পাড়ায় ঢোকার চেষ্টা করে? যদি বঙ্গবন্ধুর কবর ভাঙার চেষ্টা করে? এরপরে কী হবে আমি জানি না। আবার একটা রক্তপাতের দিকে যদি দেশ এগিয়ে যায় আমি অবাক হব না। কোন পক্ষের রক্ত আমি জানি না। এখন তো সব তাদের হাতেই। এবার হয়ত রক্ত আরেক পক্ষের যাবে? এবার হয়ত রক্ত আমারও যাবে! আমি আসলেই জানি না কালকে তেমন কিছু হলে আসলে কেমন হবে পরবর্তী বাংলাদেশের চেহারা! সবাই শান্ত থেকে যদি এমন একটা হঠকারী আয়োজন শেষ করে আসতে পারে তাহলে ভালো। আর রক্ত দেখতে চাই না, কোন পক্ষেরই না। ... ...
আমরা এই নিয়েই আছি। আমাদের সামনে অন্ধকার। শালার আবাল জনগণ নিজের সামনে অন্ধকার এইটাও বুঝতে অনলাইনে খুঁজে। কেউ যখন বলে কই অন্ধকার, সব তো ঝকঝক করছে। খুশি হয়ে অন্ধকারে উস্টা খাইতে খাইতে বাড়ি ফিরে। আগের থেকে তিন চারগুণ বেশি দামের ইলিশ মাছ দেখে আসছে বাজারে। সেই গল্প করতে করতে ঘুমায় যায়। আমরা পণ করে বসে আছি আমরা চোখ খুলব না। আমরা নিয়ত পাকা করে বসে আছি ছাগলের চাষ অব্যাহত থাকবে এই দেশে। ছাগলের দেশে নোবেল ম্যান! কম্বিনেশন জবরদস্ত, তাই না? ... ...
এবার আরেকজনের গল্প বলি। জিজ্ঞাস করলাম সব ওইপাশ থেকেই আসে, এদিক থেকে কী যায়? ও এক আশ্চর্য পণ্যের কথা বলল। কমন যেগুলা তা তো জানিই, আমি শুনে আশ্চর্য হয়েছিলাম যে এখান থেকে ফগ বডিস্প্রে যায়! ধমক দিয়ে বলেছিলাম, আরে ধুর, ফগ তো ইন্ডিয়ান জিনিস, ওইটা এই পাস থেকে যাবে কেন? ও হাসতে ছিল। আমি ওর হাসি দেখেই বুঝে ফেললাম কাহিনী কী! আমাদের মহান চকের মাল! চকে তৈরি হয় না এমন প্রসাধনী এই দুনিয়ায় সম্ভবত নাই। সেই দুই নাম্বার জিনিস দুই নাম্বার পথে ভারতে যাচ্ছে! চকের এই স্প্রেয়ের চাহিদা না কি খুব বেশি ভারতে, মানে দুই নাম্বার ব্যবসায়ীদের কাছে। ... ...
প্রতি বছর ১ জুলাই গুলশান দুইয়ে হোলি আর্টিজেন শহীদের স্মরণে তৈরি একটা ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হত। নিহত পুলিশ সদ্যসদ্যের জন্যই এইটা বানানো হইছিল। বিভিন্ন দূতাবাস যাদের নাগরিক মারা গেছে এই ঘটনায় তাদের লোকজন ফুল দিয়ে স্মরণ করত হোলি আর্টিজেন বেকারির ওই বাড়িটায়। মহান ৫ আগস্টের পরে হিযবুত তাহরীরের লোকজন ভেঙে গুড়িয়ে দেয় এই ভাস্কর্য। দিয়ে খেলাফতের ঘোষণা সম্বেলিত পোস্টার লাগিয়ে দেয়। কোন দূতাবাস আর এবার সেই ৫ নাম্বার বাড়িতে শ্রদ্ধা জানাতে জান নাই। ইতালির দূতাবাসের একটা ছবি দেখা গেছে, তাঁরা দূতাবাসের ভিতরেই স্মরণ করেছে তাঁদের নিহত নাগরিকদের। কতখানি নতজানু মৌলবাদের প্রতি তার আরেকটা উদাহরণ না দিলেই না। চিন্ময় দাস প্রভুকে দেশদ্রোহী মামলায় আটক করা হইছে। কী করেছেন তিনি? কোথায় জানি ইস্কনের পতাকা জাতীয় পতাকার ওপরে লাগানো ছিল! এই হাস্যকর কারণে তাঁকে দিনের পর পর বন্দি করে রাখা হচ্ছে। জামিন আবেদনে আইনজীবী দেওয়া হয় নাই প্রথম দিকে। চট্টগ্রামে এই নিয়ে গণ্ডগোলে একজন আইনজীবী মারা গেছে। এখন সেই মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে চিন্ময় দাসকে! তিনি পুলিশ হেফাজতে থেকে ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেলেছেন একজন আইনজীবীকে! আইনজীবী আলিফ হত্যার প্রধান আসামি চিন্ময় দাস! এই হল নোবেল জয়ী সরকার প্রধানের কাজকাম! ... ...
ওই সীমান্তে সন্ত্রাসী এসে ঢুকে মানুষ মেরে যায় আর আমাদের এই সীমান্তে ১৪ বছরের স্বর্ণা দাস গুলি খেয়ে মারা যায়। ভারতের সীমান্ত রক্ষীদের যোগ্যতা নিয়েও তো সন্দেহ করতে পারে কেউ। কেউ তো প্রশ্ন করতে পারে যে অমিয় ঘোষদের সব বীরত্ব শুধু ফেলানি আর স্বর্ণা দাসের মত কিশোরীদের সাথেই, অন্য দিকে মানুষ মরে ২৬ জন! ... ...
তিনি ব্রিটিশ রাজের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা পুরস্কার পেয়েছেন, সেই পুরস্কার নিতে তিনি যাবেন ইংল্যান্ড। এই ছোট্ট সুন্দর একটা কাজকে তিনি ঘাপলা লাগায় দিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কিছু না বলা হলেও ডক্টর সাহেবের প্রেস সচিব এবং পরে তিনি নিজেও জানালেন এইটা রাষ্ট্রীয় সফর! এখন রাষ্ট্রীয় সফর বলতে আমরা কী বুঝি? যাই বুঝি তার কিছু দেখা গেল না এই সফরে। কেউ বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে আসল না, কোন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হল না, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী দেখাও দিল না! দেখা না পাওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়া হল তিনি সম্ভবত দেশে নাই, কানাডায় গেছেন! না, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী দেশেই ছিলেন, তিনি দেখা দেন নাই। এইটা যে অসম্মানের, এইটাও এই দলের কারো মাথায় ঢুকে নাই, স্বয়ং ডক্টর সাহেবেরও না। তারা নানা জায়গায় সাক্ষাৎকার দিয়েছে এবং নানা আবোলতাবোল বলে বেড়িয়েছেন। ... ...