এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জীবন শয্যার নক্সীকাঁথা

    Sudip Ghoshal লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ অক্টোবর ২০২৫ | ১৩ বার পঠিত
  • 101 | ত্রয়োদশ পর্ব | ত্রয়োদশ পর্ব
    অশােক ও শােভন গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর থেকে দুই বৎসর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু দুজনের কারাের কোনাে চাকরী হয়নি। শুধুমাত্র তাদের টিউটোরিয়াল হােমের উন্নতি হয়েছে। তাদের এই হােম থেকে অনেক ছাত্র ফাস্ট ডিভিশনে মাধ্যমিক পাশ করেছে এমন কি দুই একজন ছাত্রছাত্রী স্টারও পেয়েছে। ফলে তাদের হােমের’ ছাত্রছাত্রী সংখ্যা এখন অনেক। দুইবেলা তারা হােম খােলে। সকাল সাত ঘটিকা থেকে দশ ঘটিকা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ছয় থেকে নয় ঘটিকা পর্যন্ত। প্রত্যেক গ্রুপে তিরিশ জন করে ছাত্রছাত্রী থাকে দুইজনে পনেরজন করে প্রতি সপ্তাহে চারদিন শিক্ষাদান করে। শুধুমাত্র নব এবং দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীই এখন পড়াশুনা করে। দুইবেলায় মােট ৬০জন ছাত্রছাত্রী পঁচিশ টাকা করে দেয়। মােট দেড় হাজার টাকার মতাে মাইনে দেয়। এতে দুজনের মােটামুটি অপেশাদারি খুশী মন। দিন  যায় এবং তাদের পড়াশুনার অভ্যাসও বজায় থাকে। এটাই ছিল তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।তা হােক দেবিকা এবং অপর্ণা দুইজনেই এখন বারাে ক্লাসের গন্ডী পেরিয়ে কলেজে  ভর্তি হয়েছে। অপর্ণা তার দাদা অশােককে দেবীকার কথা এই প্রথম অশোক অপর্ণার মুখে দেবীকার কথা শুনে বুঝতে পারলাে দেবীকার অনুতাপের কথা। কিন্তু শুধু মনে পড়ে যায় সেদিনের অপমানের কথা। সেদিন রাস্তায় অশােক যেখানে ছােটো হয়েছিল জীবনে আর কোনদিন সেরূপ অপমানিত সে হয়নি। অতএব মনােবাসনা পূর্ণ হল না।অপর্ণা দেবীকাকে একদিন তার বাড়ী নিয়ে এলাে। দেবীকা বাড়িতে প্রবেশ করেই  দুচোখ দিয়ে শুধুমাত্র অশােককে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু কোথাও অশােকের দেখা নেই। শেষে অধৈর্য হয়ে দেবীকা অপর্ণাকে তার দাদার কথা জিজ্ঞাসা করে। অপর্ণা দাদার ঘরের দিকে আঙুল দেখিয়ে দেয়। দেবীকা ধীর পদক্ষেপে দৃঢ় চিত্তে জয়ের বাসনা নিয়ে দরজার দিকে এগােতে থাকে। প্রবেশের মুখেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। দেখে বিছানায় অশােক ছটফট করছে আর বীথিকা তার পাশে বসে তার মাথায় হাত দিচ্ছে। দেবীকা আড়ালে সরে গিয়ে সব দেখতে লাগলাে। শুনতে পেল অশােক বলছে। ‘বীথিকা শােভন কেন এল না? ওকে এইসময় আমার বিশেষ দরকার। শােভন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু, আর তুমি তার ভাবী বধু, আমার বােন বীথিকা তুমি কত স্নেহশীলা, তুমি কত সুন্দর। বীথিকা অশােককে চুপ করিয়ে ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ খেতে দেয়। ইতিমধ্যে শােভন এসে দেখে দেবীকা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে। সে তাকে হাত ধরে নিয়ে ধরে প্রবেশ করে। অশােক দেবীকাকে দেখে চমকে ওঠে। কিন্তু পরক্ষণেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়। বীথিকা ও শোভন তাদের ঘরে বসিয়ে অপর্ণার ঘরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে দেবীকা ডুকরে কেঁদে ওঠে। আর হাত জোড় করে ক্ষমা প্রার্থনায় ভঙ্গিতে অশােককে ডাকতে থাকে। অশােক দেবীকার দিকে আজ অনেকদিন পর তাকিয়ে দেখলাে, দেবীকা আগের থেকে অনেক সুন্দরী হয়েছে। দেবীকা একসাথে অনেক কথা বলতে চায় কিন্তু কিছুই। বলতে পারে না। শুধুমাত্র তাদের দুজনের হাত পরস্পরের হাতের মুঠোর মধ্যে থাকে। ইতিমধ্যে শােভন ও বীথিকা অশােকের কাছে এসেছে। কিন্তু অপর্ণা শােভনের বােন দেবীকাকে কোনমতে এবেলা বাড়ী যেতে দিল না। দেবীকার এই প্রথম অশােকদের বাড়ী থাকা।অশােক যখন নিদ্রাচ্ছন্ন হল তখন অপর্ণা ও দেবীকা গৃহকর্মে যুক্ত হল। মাসীমা, মেসােমশায় অর্থাৎ অশােকের বাবা মা দুজনেই দেবীকাকে খুব ভালােবাসেন। দেবীকাকে কাছে পেয়ে তাদের আর আনন্দের সীমা নেই। দেবীকাকে কাছে বসিয়ে তারা গল্প করলেন। খাওয়া দাওয়া সারা হওয়ার পর দেবিকা আর একবার অশােকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে অশােক তাকে চুম্বনে সিক্ত করল। তাদের ভুল বােঝাবুঝির অবসান হল।অশােকের বিছানায় বসে দেবীকা তার মনের গভীরে আশঙ্কার জল ঢুকতে লাগল। হঠাৎ সে দেখলাে অশােক পৃথিবীতে নেই। সে নিঃসঙ্গ একাকী। পৃথিবীতে তবে থাকার আর কোন আশা আকাঙ্খা নেই। শুধুমাত্র মরুপ্রান্তর। দেখলাে অশােক ভেসে চলেছে অজানা পৃথিবীর উদ্দেশ্যে। তাকে ফেলে একা রেখে। হায়রে অবুঝ প্রেম। প্রেমের রূপ এরূপই হয়ে থাকে। যাকে তুমি আপন হৃদয়ের অন্তঃস্থলে ঠাঁই দিয়েছ তার অমঙ্গল চিন্তা  আগে আসবে মনে, তবেই তােমার সার্থক ভালােবাসা। প্রিয় যখন কাছে থাকে তখন তাকে অবজ্ঞা কর না, প্রিয় দূরে গেলে প্রিয় আরও প্রিয় হয়ে ওঠে এই হল অবুঝ প্রেম।দেবীকার হঠাৎ মনে হল সে মৃত অশােকের পাশে বসে। সে ভয়ে আর্তনাদ করে ঘুমন্ত অশােককে জড়িয়ে ধরলাে নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে। ঘুমন্ত অসু্থ অশােক তখন স্বপ্ন দেখে গোলাপ ফুলের মত দেবীকার সুন্দর মনের। সে অনেক কিছুই দিল দেবীকাকে। দেবীকা নিশ্চিন্ত হল অশােক মরেনি।অরিন্দম তার গতবারের অভিনয়ের বদনাম ঘুচিয়ে চার রাত্রিতেই সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান নিয়ে ফিরলেন। আর সঙ্গে নিয়ে ফিরলাে দশ হাজার টাকা। ফিরে এসে প্রথমেই অরিন্দম অপরূপার সঙ্গে দেখা করতে গেল। অপরূপা অরিন্দমকে দেখেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে অরিন্দমকে জড়িয়ে ধরলাে। অরিন্দম তার জয়ের কথা অপরূপাকে বলল তারপরে গােপালবাবুর কাছে গিয়ে শরীরের উত্তাপ এবং হার্টবিট দেখে অপরূপাকে অন্য ডাক্তার দেখাবার জন্য বললাে। অপরূপা অর্থের অভাবে অন্য ডাক্তার আনার ভরসা পাচ্ছিল না। অরিন্দম একথা বুঝতে পেরে নিজে গিয়ে কলকাতা থেকে বড় ডাক্তার নিয়ে এলাে।। যেদিন অরিন্দম কলকাতা থেকে ডাক্তার নিয়ে এলাে সেইদিন এসেই দেখতে পেল সুদর্শন সান্যালের ডাক্তার গোপালবাবুকে দেখছেন। অরিন্দম ডাক্তারবাবুকে অপরূপার ঘরে বসিয়ে রেখে তাকে আপ্যায়ণ করার জন্য অপরূপাকে বলল। সুদর্শন সান্যাল ডাক্তার নিয়ে চলে যাবার আগে ফি বাবদ টাকা অপরূপার কাছে নিতে আসে। সেদিন টাকা নিতে এসে অন্য আর একজনকে দেখে সুদর্শন সান্যাল অপরূপাকে বাইরে ডাকলাে। আর ঠিক সেইসময় সুদর্শন সান্যাল তার মনের বাসনা চরিতার্থ করার জন্য অপরূপাকে জড়িয়ে ধরে বলল “অপরূপা আমি তােমায়” কথা আর শেষ হতে হল না। অপরূপার চিৎকার অরিন্দম এসে সুদর্শন সান্যালের কেশ আকর্ষণ করে অপরূপার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলল। প্রত্যুত্তরে সুদর্শন সান্যাল কে থেকে ভোজালি বের করে অরিন্দমের প্রতি অগ্রসর হতে থাকল।  আগত বাবু একটি লাঠি ছুড়ে অরিন্দমকে সূদর্শন সান্যালের থেকে রক্ষা করলেন। সুদর্শন সান্যাল সুযােগ বুঝে পালালো। কলকাতা থেকে আগত ডাক্তারবাবু তারপর রোগীর কাছে গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ব্যাপী গোপালের শরীর পর্যবেক্ষণ করে বললেন একে ড্রাগ এডিকেটেড করা হয়েছে । এর প্রেসার একটু বেশি হলেও অন্য কোন কঠিন ব্যাধি নেই এবং পরিকল্পপনা মাফিক একে রোগী বানিয়ে রাখা হয়েছে। এর প্রেসার বাড়িয়ে,ওষুুুুধ না দিয়ে  প্রতিদিন তাকে মেরে দেবার চক্রান্ত চলছিল। ভাক্তারবাবুকে ট্রেনে তুলে দেবার পর অরিন্দম সােজা নিজের বাড়ী গিয়ে  কথামত ঔষধপত্র কেনার জন্য শহরে গেল। প্রায় আড়াই মাস ব্যাপী চিকিৎসার ফলে গােপালবাবু প্রায় স্বাভাবিক ও সুস্থ হয়ে উঠলেন এবং হাত ভরে অরিকে আশীর্বাদ করলেন। ঈশ্বরকে প্রণাম জানালেন এক বিরাট দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য। গোপালবাবু  আজ অরিন্দমকে বলছেন আগে তো যাত্রাদলের নারী পাওয়া যেত না তখন পুরুষ মানুষই নারী সেজে যাত্রাদল অভিনয় করত। পুরুষরা কিন্তু নারীর অভিনয় কম যেত না তারা বেশ সুন্দর অভিনয় করত। এমন অনেক পুরুষের নারীর ভূমিকায় অভিনয় করেই নাম হয়েছে যাত্রা জগতে। তিনি আরও বলেন, নারীদের মঞ্চে আগমনের আগে যে সকল পুরুষ-অভিনেত্রী এদেশে ছিলেন তাদেরকে ‘রানী’ বলা হত। সেই রানীদের মধ্যে রেবতীরানী, হরিপদ বায়েন, নিতাইরানী, সুদর্শনরানী, সুধীররানী, ছবিরানী প্রমুখের অভিনয় দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।যাত্রা-গবেষক গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষের ধারণা যাত্রার জন্ম তৃতীয় শতকে। ডক্টর হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য মনে করেন যে দ্বাদশ শতকের আগেই যাত্রার জন্ম হয়েছে। দ্বাদশ শতকেই যাত্রার জন্ম এমন মতের সমর্থক প্রবোধবন্ধু অধিকারী, ডক্টর আশ্রাফ সিদ্দিকী, নাট্যকার মমতাজদদীন আহমেদ প্রমুখ। পালাসম্রাট ব্রজেন্দ্রকুমার দে এবং সাহিত্যিক সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মনে করেন পঞ্চদশ শতকের আগেই যাত্রার জন্ম। নাট্যব্যক্তিত্ব অহীন্দ্র চৌধুরী অবশ্য পঞ্চদশ শতককেই যাত্রার জন্ম বলে চিহ্নিত করেছেন। ডক্টর সুরেশচন্দ্র মৈত্র, গবেষক কপিলা বাৎসায়ন, ডক্টর সুশীলকুমার দে, নাট্যকার মন্মথ রায়, নটসম্রাট অমলেন্দু বিশ্বাস, ডক্টর প্রভাতকুমার দাস, ডক্টর প্রভাতকুমার গোস্বামী, ডক্টর মণীন্দ্রলাল কুণডু, ডক্টর সৈয়দ জামিল আহমেদ প্রমুখের ধারণা বিশ্লেষণ করলে যাত্রার জন্ম ষোড়শ শতক বলে প্রতীয়মান হয়।নাট্যকার জিয়া হায়দার বলেছেন,- ‘অষ্টাদশ শতক থেকে, সম্ভবত তার আগে থেকেই ভ্রাম্যমাণ যাত্রাদল গড়ে ওঠে’। ডক্টর সেলিম আল দীন বলেছেন,-‘অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে যাত্রা কথাটার অর্থ সঙ্কুচিত হতে থাকে এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই মূলত যাত্রা নাট্যাদি অর্থে পরিচিতি লাভ করে’। সেলিম আল দীনের এই মত মানলে যাত্রা এই আাধুনিককালের শিল্পআঙ্গিক বলে ভাবতে হয়। কিন্তু সেটি সম্ভবপর নয়। নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায় তো বলেছিলেন,- ‘...এসব থেকে নিঃসংশয় হয়ে বোঝা যায় যে, খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকেই নিয়মিত কৃষ্ণযাত্রার অভিনয় হতো এবং ভারতের সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছেই তা জনপ্রিয় ছিল’। এখানে আর সংশয় থাকে না। দ্বাদশ শতকের কবি জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’কে যাত্রা-নাট কিংবা নাটগীত হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। ষোড়শ শতকের প্রথম দশকে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর কৃষ্ণলীলার অভিনয়কে যাত্রাগান মনে করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। যাত্রার জন্ম নিয়ে সকল অভিমতকে আমলে নিয়ে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, উৎসব-অর্থে যাত্রা-র উন্মেষ প্রাচীনকালে কিন্তু অভিনয়কলা-অর্থে যাত্রা-র উন্মেষ ষোড়শ শতকে, গ্রামীণ আসরে বা চাঁতালে। অষ্টাদশ শতকে যাত্রা চাঁতাল বা আসর থেকে উঠে আসে বাঁধামঞ্চে। অষ্টাদশ শতকের পর থেকে যাত্রা উৎসব কিংবা গীতাভিনয়ের আবরণ ঝেড়ে পরিণত হয় স্বতন্ত্র এক অভিনয়কলায়।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশেই যাত্রা-র চলন, বিকাশ এবং প্রবাহ। আমরা জানি, যাত্রা-র জন্ম এই সমতটে। অর্থাৎ আমাদের বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডেই যাত্রা-র জন্ম। যাত্রা বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি। যাত্রা শুরুতে ছিল দেববন্দনার অংশ, কালে তা পৌরাণিক উপাখ্যান বয়ানের মাধ্যমে লোকশিক্ষার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। চারণকবি মুকুন্দ দাসের হাতে যাত্রা তার বিষয় ও উপস্থাপনার গুণে রূপান্তরিত হলো ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে। পালাসম্রাট ব্রজেন্দ্রকুমার দে যাত্রাপালায় নিয়ে এলেন কাল্পনিক ইতিহাস, লোককাহিনী, জীবনী এবং সাম্প্রতিক সমাজিক উপাদান। যাত্রা হয়ে উঠলো সামাজিক বিনোদনের বিশাল মাধ্যম। এসব এখন জানা যায় ইন্টারনেট, গুগুলের মাধ্যমে। অনেক গ্রন্থ পাঠ করতে হয়। অরিন্দম  বলে আপনার সাধনাকে কুর্ণিশ  জানাই। পরিশেষে আজ গােপালাবাবু তার একমাত্র কন্যা অপরূপার জন্মদিনের আয়ােজন করেছেন বিপুল আয়োজনে । আজ তিনি সকলের সম্মুখে অরিন্দম ও অপরূপার বিবাহের ঘােষণা করবেন অরিন্দমের বন্ধু সুব্রত সকল ব্যবস্থার দায়িত্বে। | অপরূপার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন আজকে। আজ অরিন্দম তার একেবারে নিজস্ব হবে। সারাদিন সে কল্পনার জাল বুনে চলেছে। আজ সে বাধাহীন উচ্ছাসে আনন্দিত। কখনও গাইছে কখনও নাচছে। বনের ময়ূরী বর্ষার জলে সিক্ত হয়ে যেরূপ পেখম তুলে নৃত্য করে সেই আনন্দের নৃত্যে। সন্ধ্যা সাতটার সময় অরিন্দম তার পিতামাতাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে গােপালবাবুর গৃহে উপিস্থত হলো। গোপালবাবুর ব্যবহারে এবং বিনম্র আচরণে তারা খুব আনন্দিত হলে আরও খুশী হলেন অপরূপাকে দর্শন করে। | সানাই বাজিয়ে উদ্বােধন করা হল আসরের। গান গাইলেন গােপালবাবু এবং তার আজ মিলনের পথে নেই কোন বাধা। জীবনের দিন আজ এসে গেছে রাজা। অরিন্দম গানের মধ্যে ডুবে যায় কল্পনার সমুদ্রে। গােপালবাবু তার ফ্রেন্ড, অফার এ গাইড। সেই গােপালবাবব কন্যাকে সে আজ বিবাহ করতে চলেছে। একটা কথা অনুষ্ঠানের শেষে গোপালবাব অরিন্দমকে এবং অপরূপাকে  ্পূর্ব পাশে নিয়ে তাদের আসন্ন বিবাহের পাকা কথা ঘােষণা করলেন। হাততালি বেজে উঠলাে। আজ অপর্ণার বিবাহ বিবাহ  সিউড়ি শহরের বিখ্যাত পরিবারের প্রভাত ঘােষালের ছােটো পুত্র বাবুর সঙ্গে।সব সাজানো এবং শরণার্থীদের আপ্যায়ন কগ্রান্ত ব্যয় খরচ অশোক এবং শােভন দুই বন্ধুতে দায়িত্ব নিয়েছে। বরপক্ষ থেকে কোনাে দাবা নেই। তবু অশােকের পিতামাতা কন্যাকে সাজিয়ে দিয়েছেন। শোভনের 'আজকে অন্য রূপ। সারাদিন সে আজ ব্যস্ত। এমনকি বাথিকার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেনি। অশোক  আহ্বান করছে। অশােকের নিজে। মাসী, পিসী ব্যতীত  আছেন শােভনের বাড়ীর সকলে। অপর্ণার বাবা হিসাবে বীথিকা এবং তার পিতামাতা আর অরিন্দমের ভাবী শশুর এবং বধু হিসাবে গােপালবাবু এবং অপরূপা। অরিন্দম আজ চুড়িদার পাজামা পাঞ্জাবী আর অপরূপা লাল বেনারসী পড়ে এসেছে। যেন বিবাহের পূর্বে একবার মহড়া দিয়ে নিচ্ছে। অপর্ণার বান্ধবী বীথিকা আর দেবীকা দুজনেই কনে সাজাতে ব্যস্ত। এদিকে সুরেন্দ্র ক্যাটারার লাভপুর থেকে এসেছে। তাদের কাজকর্ম প্রায় শেষ। করে ফেলেছে। তাদের খাবার দাবারের আয়ােজন প্রায় শেষ। এখন বাকি শুধু বরের আগমন। বর এসে গেছে, বর এসে গেছে বলে চেঁচাতে লাগলাে বাচ্চা ছেলেমেয়েরা। বরকে কোলে করে তুলে বরাসনে বসালাে শােভন। বাবু ও শােভনের পরিচয় হতে বেশী সময় লাগলাে না। অপর্ণার আর একটি দাদা হিসাবে অশােক তাকে পরিচয় করিয়ে দিল। সুন্দর ব্যবহারে শােভন অভিভূত। অপর্ণার যােগ্য বর বাবু ঘােষাল। শােভনের মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠলাে। আজ অনেকদিন পর সে বিশ্বজয়ের মানসিকতা অর্জন করেছে। এমনিতে শােভন খুবই প্র্যাকটিক্যাল কিন্তু আজকের দিনে সে ভাবের আবেশে নিমজ্জিত। | দেবীকা ও বীথিকা মিলিতভাবে অপর্ণাকে প্রেজেন্ট করলাে একটি সুন্দর হারমােনিয়াম। অরিন্দম প্রেজেন্ট করলাে একজোড়া সােনার চুড়ি। গােপালবাবু দিলেন একটি দেওয়াল ঘড়ি। কিন্তু শােভনের প্রেজেন্ট সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয়। এক গােছা সাদা ফুলের তােড়া। অশােক আজ খুব কম কথা বলছে। শােভন এর কারণ বুঝতে পারছে না। কিন্তু অশােক আজ বেশী কথা বলতে চাইছে না। ভাবাবেগের ফলে হয়ত মনের বাসনা ভাষা হয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। সে আজকে শােভনকে সারপ্রাইজ দিতে চায়। তাই সে শােভনকে এড়িয়ে চলছে। অশােক যখন দেবীকাকে আজকের সারপ্রাইজের কথা বললাে তখন থেকে দেবীকার মন ঠিক নেই। এ ব্যাপারটি বীথিকাও লক্ষ্য করেছে। সে বারবার দেবীকাকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি। কিন্তু সঠিক কারণ বুঝতে পারেনি।যাইহােক বিবাহ কার্য সমাপ্ত হওয়ার পর বর কন্যা ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে সকলের সম্মুখে অশােকের পিতা অশােক এবং দেবীকার বিবাহের কথা ঘােষণা করলেন। সঙ্গে সঙ্গে আসরে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেলাে। শােভন ও বীথিকা হতভম্ব, বিহ্বল হয়ে পড়েছে। তাদের মুখে কোনাে ভাষা নেই, শুধু পরস্পরের প্রতি দুজনের মৃদু হাসির ঝিলিক। | ঘােষণা পূর্বের পরেই শােভন অশােকের পিঠে সজোরে আঘাত করে তাকে আদরে সিক্ত করে তুলল। শােভনের চোখে অশ্রু অশােকের চোখে পড়ল শােভনকে অভয় দিয়ে অশাের আর একবার তার সঙ্গে কোলাকুলি করল। আজ তাদের বন্ধুত্বের দৃঢ় বন্ধন হল। এ বন্ধন জন্ম-জন্মান্তরেও অটুট থাকবে। রাত্রিতে যখন সবাই নিদ্রাচ্ছন্ন কেউ ঘরােয়া আসরের গল্পে মত্ততখন কিন্তু শােভন এবং বীথিকা অশােকদের দোতলা ছাদের উপর ঘনিষ্ঠ ভাবে বলে তাদের সুন্দর অবকাশ যাপন করছে। ছাতে পূর্ণিমার আলাে উদ্ভাসিত। বীথিকা তাজমহলের রাগী সেজে বসে আছে। আর সম্মুখে শােভন কল্পনা প্রবণ শিল্পীর মতাে যেন তুলি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আজ অপর্ণার বিবাহ হয়ে গেল। অশােক ও দেবীকা বন্ধনে আবদ্ধ হল। কিন্তু শােভন বীথিকার পরিণতি কি হবে? তাদের মিলনের পথে যেতে আর কত পথ অতিক্রান্ত করতে হবে। বীথিকা তার বান্ধবী অপর্ণার কাছে জেনেছে কি পরিমাণ ভালাে সে শােভনকে বেসেছে। শােভন কিন্তু অন্য মানসিকতা নিয়ে তাকে দেখেছে তাও জানে। কিন্তু বীথিকা তার ভালােবাসায় শ্রেষ্ঠ পাত্র শােভনকে কিন্তু তিরস্কার করতে ছাড়ে না। সে শােভনকে জানায় ভালােবাসা কোনদিন কোনাে বাধা মানে না। জলের স্রোতের মত এগিয়ে চলে। কিন্তু শােভন কি করে বােঝাবে বীথিকাকে কোন চোখে সে দেখে? সে যে তার মনের গহন বনের অধিবাসী। তার প্রত্যেকটি অণু পরমাণু শােভনের জন্ম জন্মান্তরের চেনা। বীথিকা বিহীন শােভন জল ছাড়া মাছের মত এক মুহূর্তও বাঁচতে পারবে না। তবে তার কি ব্যবস্থা হবে? বীথিকা এই প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পায় না। কেবল শােভনের বুকে মাথা গুঁজে দিয়ে আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়ে। শােভন বীথিকার মিলনের পথে আর কোনাে বাধা নেই। শােভন বীথিকার জীবনে শান্তি আসুক আর সারা পৃথিবী শান্তির পরিবেশ গড়ে তুলক।।যাত্রাদলের শিল্পী অরিন্দম ভেবেছিল বড় যাত্রাশিল্পী হবে কিন্তু সে হতে পারে নি।  রিপ্রেজেন্টেটিভ নাম করেছিল তার চিরকাল একলা সুরে হেঁটে গেছে সারা জীবন এক অজানা তুলিতে কে গেছে তা রঙিন জীবন।জীবনে সকলের স্বপ্ন পূরণ হয়না। কিন্তু হেঁটে চলে আমৃত্যু। তাকে হেঁটে যেতে হবে। হেঁটে যাওয়াই পথের নিয়ম। অংশুমান তার জীবনে কত জীবন দেখেছে কত চরিত্র দেখেছে তাদের ওঠানামা উন্নতি-অবনতি সবকিছু দেখে এসে আজ অভিজ্ঞ।তার বয়স হয়েছে তার ছেলে এখন সংসার চালায় কিন্তু তবু সে কর্ম করে নিজের উঠোনে গাছ লাগায় এবং বাগান পরিচর্যা করে সংসারের বাজার করে দেয় কিন্তু সে আজীবন সন্নাসীর মতো জীবন কাটায় । সৈকত জাপানে থেকে গেছে। সে জাপানে চলে গেছে এটা বেসরকারি সংস্থার কাজ নিয়ে সেখানেই তার পরিবার সেটল্ হয়েছে আর এখানে আসে না। বিশুর অনেক কথা মনে পড়ে তারা এখন কাটোয়া স্টেশনে বসে থাকে ছোটবেলার বন্ধুদের নিয়ে। তারা সকলেই বুড়ো হয়েছে। বয়স হয়েছে। এখন তারা কাটোয়া স্টেশনের প্লাটফর্মে আড্ডা মারে সেখানে বসে থাকে, সময় কাটায়।
     
    সমাপ্ত।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    101 | ত্রয়োদশ পর্ব | ত্রয়োদশ পর্ব
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন