এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জীবন শয্যর নক্সীকাঁথা - ৮

    Sudip Ghoshal লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ অক্টোবর ২০২৫ | ৬ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২
    সৈকত ঐতিহাসিক স্থান ঘোরার জন্য ঠিক করল। সৈকত ঘোরার কথা বাবাকে জানালো।সে বলল আমরা চারবন্ধু গরমের ছুটিতে ঘুরতে যাব ঠিক করলাম।আমি, রাজু, শ্যামলী আর সোমা। চারজনই আমরা ইতিহাসের ছাত্র। এক কলেজে পড়ি। সোমা বলল, সাঁচি স্তুপ দেখে আসি চল। সৈকতের বাবা মা বললেন, সাবধানে যেও।আজ সকলে সৈকতের বাড়িতে আলোচনা করছে ঘুরতে যাওয়ার আগে। 
    শ্যামলী বলল, মধ্যপ্রদেশের রাজধানী শহর ভূপাল থেকে  ৪৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাঁচির বিদিশাগিরিতে অবস্থিত বৌদ্ধ স্তূপ। সম্রাট অশোক এই স্তূপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
    রাজু বলল, হ্যাঁ ইতিহাসে পাওয়া যায় এইসব কাহিনী। অশোককের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরও কলিঙ্গবাসী পরাজিত হয়। এই যুদ্ধে প্রায় এক লক্ষ নরনারী প্রাণ হারায় এবং প্রায় দেড়লক্ষ নরনারী বন্দী হয়। এই যুদ্ধের এই বীভৎসতা সম্রাট অশোক কে বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। পরে তিনি যুদ্ধের পথত্যাগ অহিংসার পথে সাম্রাজ্য পরিচালনার নীতি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ক্রমে ক্রমে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি বিশেষভাবে আসক্ত হয়ে পড়েন এবং উপগুপ্ত নামক এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর কাছে দীক্ষা নিয়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন।  তিনি তাঁর গুরু উপগুপ্তকে সাথে নিয়ে কপিলাবস্তু, লুম্বিনী, কুশীনগর, বুদ্ধগয়া-সহ নানা স্থানে ভ্রমণ করেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার করেন। এই সময় তিনি নানা স্থানে স্তূপ, স্তম্ভ এবং পাহাড়ের গায়ে বুদ্ধের বাণী লিপিবদ্ধ করে রাখার ব্যবস্থা করেন। এই সূত্রে তিনি বর্তমান সাঁচি থেকে দশ কি.মি দুরে বিদিশাগিরি নামক পাহাড়ে একটি বৌদ্ধ স্তূপ তৈরি করেছিলেন।আমি জানি, সম্রাট অশোকের তৈরি মূল স্তূপটির ব্যাস প্রায় ৩৬.৬ মিটার ও উচ্চতা প্রায় ১৬.৫ মিটার। কথিত আছে অশোকের কন্যা সঙ্ঘমিত্রা ও পুত্র মহেন্দ্র শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধধর্ম প্রচারে যাওয়ার আগে, সাঁচিতে এই স্তূপ পরিদর্শন করেছিলেন।  বিদিশাগিরির শীর্ষে রয়েছে সম্রাট অশোকের তৈরি মহাস্তূপ। একে এক নম্বর স্তূপ বলা হয়। মনে করা হয় এই এক নম্বর স্তূপের মধ্যে বুদ্ধদেবের ভস্ম আছে। উল্লেখ্য সম্রাট অশোক যে স্তূপ গড়েছিলেন তা এখনকার স্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেছে। একশ বছর পরে সেই স্তূপের উপর আরো বড় স্তূপ তৈরি হয়। তা ঘিরে তৈরি হয়েছিল পাথরের অলিন্দ। কালক্রমে সে অলিন্দের পাথর অনেকটা ক্ষয়ে গিয়েছিল। এই কারণে পরে স্তূপের পাশে গোল বারান্দার মতন প্রদক্ষিণ পথ তৈরি হয়। এরও প্রায় একশ বছর পর স্তূপের চারদিকে চারটি তোরণ নির্মাণ হয়। এক নম্বর স্তূপের উত্তরমুখী তোরণ এখনও অক্ষত। এতে আছে কাঠ বা হাতির দাঁতের সূক্ষ্ম কারু কাজ। তোরণের স্তম্ভ ও ফলকে বৌদ্ধ জাতকের গল্প খোদাই করা আছে। বুদ্ধের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু দৃশ্য এখানে দেখা যায়। তবে তোরণ বা স্তম্ভে বুদ্ধের কোন মূর্তি নেই। কখনও গাছ, কখনও ধর্মচক্র, কখনও পদচিহ্ন-এসব প্রতীক দিয়ে বুদ্ধের উপস্থিতি বোঝান হয়েছে। এর কারণ সম্ভবত এই যে সে সময় বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ভিতর বুদ্ধমূর্তি পূজোর নিয়ম ছিল না।সৈকত ফিরে অন্যান্য বন্ধুদের  ঘোরার গল্প বলল।সে বলল, আমরা হাওড়া এসে ট্রেনে চাপলাম। তারপর যখন ভূপাল এলাম তখন রাত্রি। আগে থেকে হলিডে হোম বুক করা ছিল। এখান থেকেই আমরা সাইড সিন ঘুরে কভার করব। প্রয়োজনে ফিরে আসব এখানেই। রাজু বলল, এখান থেকে মাত্র ছেচল্লিশ কিলোমিটার দূরে বিদিশাগিরি। সেখানে ভগবান বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বৌদ্ধ স্তূপ সাঁচিতে অবস্থিত। মালপত্তর রেখে রেডিমেড খাবার খেয়ে আমরা বিশ্রাম নিলাম। আমি আসলে সোমার প্রেমে আবদ্ধ আর রাজু, শ্যামলীর প্রেমে হাবুডুবু খায়। পড়াশুনা শেষ হলে চাকরি পেয়ে বা ব্যবসা করে আমরা বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হব একথা আমাদের দুই পরিবারই জানে। আমরা শুয়ে পড়লাম রাত একটার সময়।তারপর সকালে উঠে বাস আসার অপেক্ষা। বাস আমাদের নিয়ে গেল আজ সাঁচী।
    আমাদের গাইড বলছেন, বাবু ইতিহাসের কথা একটু মন দিয়ে শুনে লিবেন। তাহলে মজা পাবেন। সোমা বলল, লোকটা তো ভালো বাংলা বলে। আমি বললাম, হ্যাঁ।গাইড বলতে শুরু করলেন, মৌর্য বংশের অবসানের পর, ব্রাহ্মণরা বেশ কয়েকবার সাঁচির স্তূপ আক্রমণ করে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। এই সময় অশোকের স্তূপ ছাড়াও সাঁচির সমস্ত সৌধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও স্থানীয় গৃহী বৌদ্ধরা নতুন উদ্যমে কিছুটা মেরামত শুরু করেন। কিন্তু তৎকালীন রাজনৈতিক এবং সাম্প্রদায়িক ধাক্কা সাঁচির উপরেও পরে। ফলে নতুন উদ্যমে মঠ স্তম্ভ নির্মাণের কাজেও ভাঁটা পড়ে। এবং শেষে একেবারে থেমে যায়। গুপ্তযুগে দেশে কিছু শান্তি ও সমৃদ্ধি এলে সাঁচিতে কারুশিল্প ও স্থাপত্যের কাজ নতুন ভাবে শুরু হয়। এ সময়ই মূর্তির দেখা মেলে। এসময়ে সতেরো নম্বর মন্দিরটি নির্মিত হয়। এভাবে দুশো বছর কাজ চলতে থাকে। তারপর হুনেরা ভারত আক্রমণ করে। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। ফলে এই স্তূপের নিয়মিত সংস্কার বন্ধ হয়ে যায়।৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজা হর্ষবর্ধনের শাসনকালে বৌদ্ধধর্ম বিস্তার লাভ করে। এই সময় সাঁচিতে বেশ কিছু মঠ ও মন্দির বানানো হয়। এই ধারা প্রায় ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এরপর হিন্দু আধিপত্যের কারণে সাঁচিতে বৌদ্ধ-ধর্মাবলম্বীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ক্রমে স্তূপে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ফলক স্থাপিত হতে থাকে। একসময় সাঁচি বৌদ্ধশূন্য এলাকায় পরিণত হয়। উনবিংশ শতাব্দীর দিকে সাঁচির বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকা একটি পরিত্যাক্ত এলাকায় পরিণত হয়। কালক্রমে স্তূপটি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়।১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ জেনারেল টেলার সাঁচির ধ্বংসস্তূপ আবিষ্কার করেন। এই সময় গুপ্তধনের আশায় লোকজন শেষবারের মতো স্তূপটির ক্ষতি করে। ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে ক্যাপটেন জনসন এক নম্বর স্তূপটি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলে। ফলে স্তূপের গায়ে প্রকাণ্ড ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং পশ্চিমের তোরণ ভেঙ্গে পড়ে। একইভাবে দু নম্বর স্তূপও ধ্বংস হয়। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে আবার দুই ও তিন নম্বর স্তূপ খোঁড়া হয়। এক নম্বর স্তূপের মধ্যে রত্নরাজির সন্ধানে লোহার রড ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এই সময় স্থানীয় এক হিন্দু জমিদার অশোক স্তম্ভটি তিন টুকরো করে বাড়ি নিয়ে যান।১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দের পরে স্তূপটি সংরক্ষণের চেষ্টা করেন মেজর কোল। পরের তিন বছর তিনি এই উদ্যম সচল রাখেন। এর বেশ পরে পরে ভারতের আর্কিওলজিকাল সার্ভের ডিরেক্টর এ কাজে এগিয়ে আসেন। মেজর কোল বিদিশাগিরির জঙ্গল কেটে গোটা পাহাড় পরিষ্কার করান। এক নম্বর স্তূপের ফাটল মেরামত করেন। পশ্চিম ও দক্ষিণদিকের তোরণগুলি তুলে যথাস্থানে স্থাপন করেন। এরপর বাকি কাজ করেন স্যার জন মার্শাল। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে এই স্তূপের যে সংস্কার করা হয়, বর্তমানে তাই পুরাকীর্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। আমরা বাসের সকলে হোটেলে খাওয়াদাওয়া সেরে নিলাম। এখানে দেওয়ালের কারুকাজ দেখলেই সমগ্র ইতিহাস দেখা যায় চোখে। সোমা বলল মহামতি জীবকের কথা দেওয়ালে খচিত আছে।আমরা পড়েছি, জীবক অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা শাস্ত্র এবং ভেষজ বিজ্ঞান অধ্যায় পর চিকিৎসক হিসেবে বিম্বিসারের সভায় যোগদান করেন এবং ভগবান বুদ্ধের শিষ্য গ্রহণ করেন। কিন্তু অজাতশত্রু রাজা হওয়ার পরে বৌদ্ধবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। রাজু পুরোনো অট্টালিকায় দাঁড়িয়ে বলল, আমি অজাতশত্রুর অভিনয় করছি আর তুই হয়ে যা মহামতি জীবক। আমি বললাম, তাই হোক। তারপর আমি বললাম, আজ রাজসভায় অজাতশত্রু কথা বলছেন, রাজু শুরু করল অভিনয়। সেনাপতি সোমা আর রাজপুরোহিত শ্যামলী। সবাই এক্সপার্ট। কলেজের সোশালে ওরা নাটকে অভিনয় করে। 

    - শোন হে পারিষদ বর্গ। আমার রাজ্যে বৌদ্ধগান বন্ধ করতে হবে। সেনাপতি কোথায়?

    - আজ্ঞে  আমি, হাজির। আদেশ করুন।

    - আমার রাজ্যে  আমিই এক এবং একক। আর কেউ ধর্ম প্রচার করে বড় হবে এ আমি কিছুতেই সহ্য করব না।

    - তাই হবে রাজন। আজ থেকে আমি দেখব। আপনার আদেশ শিরোধার্য।

    - না খুব কড়াকড়ি করার প্রয়োজন নেই। রাজার আদেশ তারা যেন পালন করেন এবং কর ঠিকমত দেয় তার ব্যবস্থা  করুন। শুধু ধর্ম নিয়ে পেট ভরে না।
     রাজা অজাতশত্রু আদেশ দিলেন। তারপরও তিনি ভাবছেন বুদ্ধদেবকে সকলে ভগবান বলে মানে। কেন?  তার মধ্যে কি  এমন আছে যে রাজার থেকেও সাধু বড় হয়ে যায়।তিনি রাজপুরোহিতের কাছে যান। রাজপুরোহিত বলেন, বুদ্ধদেব বাল্যকালে রাজপাট ছেড়ে কঠোর সাধনায় ব্রতী হয়েছেন। দীর্ঘ সময় সাধনা করে তিনি সিদ্ধিলাভ করেছেন। তিনি সাধারণ মানুষ নন। তিনি তাঁর ভক্তদের কাছে ভগবানস্বরূপ।রাজা বলেন, হ্যাঁ শুনেছি। রাজপুত্র বাইরে  বেরিয়েছিলেন চারদিন। চারদিন তিনি মানুষের যৌবন, জ্বরা, ব্যাধি ও মৃত্যু দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে মানুষের যদি শেষ পরিণতি মৃত্যু হয়, তাহলে এই যে  সংসার জীবন,এর কোন অর্থ হয় না ।রাজপুরোহিত বললেন, হ্যাঁ ঠিক বলেছেন তারপর তিনি এক গভীর রাতে রাজ্যপাট ছেড়ে মাকে ছেড়ে, বাবাকে ছেড়ে, রাজ্যের লোভ ছেড়ে তিনি বাইরে ফিরছিলেন সন্ন্যাসী হবেন বলে। তারপর বটবৃক্ষের তলায় কঠিন সাধনা শুরু করেছিলেন। সেই সাধনায় তিনি সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। তারপর সুজাতা নামে এক মহিলার পায়েস খেয়ে তিনি সেই সাধনা ভঙ্গ করেন। তিনি বুঝেছিলেন শরীরকে কষ্ট দিয়ে সাধনা করা যায়না। সাধনা করতে গেলে শরীরকে কষ্ট দিতে নেই।নাটকশেষে, গাইড আবার বললেন, ইতিহাসের কথা,  এখন তিনি ভগবান বুদ্ধ নামে পরিচিত। তার কাছে অনেক মানুষ মনের অশান্তি, যন্ত্রণা নিয়ে আসেন এবং মনে সুন্দর এক ভাবনা নিয়ে ফিরে যান। একজন এসে তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন আমার ঘরে মৃত্যু  বারবার প্রবেশ করছে? আমি মরতে চাই না। 

     তিনি বলেছিলেন, ঠিক আছে তুমি এমন কোন বাড়ি থেকে আমাকে একমুঠো সরিষা  এনে দাও যার ঘরে মৃত্যু প্রবেশ করেনি। সেই সরিষা খেলে তুমি অমর হয়ে যাবে।
    সেই ব্যক্তি বক্তব্যের সারাংশ বুঝে চলে গিয়েছিলেন খুশিমনে।
    রাজপুরোহিত বলেছিলেন, কিন্তু বুদ্ধদেবের চিকিৎসা করেন এক চিকিৎসাবিজ্ঞানী, সে মস্ত বড় চিকিৎসক তার নাম জীবক।আমাদের রাজপরিবারের চিকিৎসক তিনি রাজা বিম্বিসারের আমল থেকে। তুমি এই জীবককে প্রাসাদে  এনে রাখতে পারো। সে তোমার চিকিৎসা করবে। রাজপরিবারের চিকিৎসা করবে।অজাতশত্রুর আগে মহারাজ বিম্বিসার সবরকম খোঁজখবর নিয়ে জীবককে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তার রাজসভায় জীবক এসেছিলেন। জীবক রাজি হয়েছিলেন রাজসভায় যোগদান করার জন্য। আবার বুদ্ধদেবের প্রধান শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জীবক। অজাতশত্রু বৌদ্ধ বিদ্বেষী হয়েও জীবককে  মর্যাদার আসনে রেখেছিলেন। মহামতি জীবক রাজপরিবারের চিকিৎসা করতেন। আর যেখানে খবর পেতেন সেখানেই চিকিৎসা করতে চলে যেতেন পায়ে হেঁটে।একবার এক গরীব মানুষ সপ্তপর্ণী গুহাপ্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রাজসভায় মহামতি জীবকের সন্ধান করেছিলেন।
    সেই দরিদ্র রাজপ্রাসাদের গেটের বাইরে অধীর আগ্রহে আশাবাদী হয়ে উঠলেন মহামতির দর্শন পাওয়ার জন্য।
    তিনি প্রহরীকে বললেন, একবার মহামতি জীবকের কাছে যেতে চাই।
    প্রহরী বলল,তোর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। তুই সামন্য এক কৃষক হয়ে রাজার চিকিৎসকের সাহায্য  চাইছিস?  যা পালা। তার সঙ্গে দেখা হবে না। তিনিমএখন চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করছেন।
    লোকটি বলল, আমাকে বাঁচান। আমার স্ত্রী মরে যাবে।
    প্রহরী বলল, তোর মরে যাওয়াই ভালো।
    গরীব কৃষক কান্নাকাটি শুরু করলেন।
    গোলমাল শুনে মহামতি জীবক জানালা থেকে গোলমালের কারণ অনুধাবন করলেন। তারপর তার চিকিৎসার থলে নিয়ে হাজির হলেন গেটের সামনে।
    মহামতি প্রহরীকে বললেন, দরজা খোলো। আর কোনো লোকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে না। জীবনে কষ্ট পাবে খারাপ আচরণের ফলে।
    প্রহরী লজ্জিত হয়ে গেট খুলে দিল।
    জীবক গরীব কৃষকের হাত ধরে চলে গেলেন পায়ে হেঁটে দশ মাইল  পথ।
    তার চিকিৎসায় সেরে উঠেছিল কৃষকের স্ত্রী। 
    কোনদিন কোন গরিব মানুষ তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়নি। তিনি অর্থের বিনিময় চিকিৎসা করতেন না। তিনি চিকিৎসা করতেন মানুষকে ভালোবেসে। ভগবান বুদ্ধের বাণী তার জীবনকে প্রভাবিত করেছিল অনেকখানি।রাজা অজাতশত্রু জীবকের কাছে ভগবান বুদ্ধের বাণী সম্পর্কে অনেককথা শুনেছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি তাঁর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন এবং জীবককে অবসর সময়ে রাজা নিভৃতকক্ষে ডেকে পাঠাতেন। তন্ময় হয়ে শুনতেন জীবকের কথা। জীবক বলতেন, জীবে দয়া, ভালোবাসা আর শান্তি তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। জীবক সময় 
     কাটাচ্ছেন রাজার কক্ষে এবং বুদ্ধের বাণী শোনাতেন রাজাকে।
     জীবন শান্তি ধর্ম আর ভালোবাসার জন্য।  বৌদ্ধ ধর্মের মূলকথা, যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।
    শান্তিই একমাত্র সমস্ত কিছুর সমাধান করতে পারে। ভালোবাসা আর  শান্তি, এই হল বুদ্ধদেবের বাণীর মূলকথা।অজাতশত্রু তার বাবার কাছেও শুনেছিলেন জীবকের কথা। বিম্বিসার জানতেন  বৌদ্ধ যুগের ভারতবর্ষে বিজ্ঞানে, চিত্রকলায়, দর্শনে সর্বত্র নিয়োজিত হয়েছিল এক প্রতিবাদ এবং সেগুলি জগতের কাছে  একটি বিস্ময়।
    মহারাজ বিম্বিসার বলতেন,  মহামতি জীবককে পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম সেরা চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী বলা যেতে পারে কথিত আছে  ইনি বারবনিতার সন্তানরূপে জন্ম নিয়েছিলেন আবর্জনার স্তুপে। পরিণত করেছিলেন তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়। চিকিৎসা শাস্ত্র এবং বিজ্ঞান চিকিৎসক মন্ত্রিসভায় যোগদান করেন এবং ভগবান বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।অজাতশত্রু প্রচন্ড বুদ্ধবিরোধী হলেও এবং পিতাকে বন্দি করলেও জীবকেকে চিকিৎসক পদে বহাল রেখেছিলেন। জীবকের অসাধারণ চিকিৎসা নৈপূণ্যের জন্য। সাধারণ জীবন যাপন করছেন জীবক। ধর্মপ্রচারের পরিবর্তে তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন শেষে তার আচরণ অজাতশত্রু কে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে শত্রুতা করেও তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন এবং তাদের পরামর্শে অজাতশত্রু প্রথম বৌদ্ধ সম্মেলন আহ্বান জানিয়েছিলেন। পর্বতের গুহায় সম্মেলন হয়েছিল এবং ভগবান বুদ্ধের বাণী গুলিকে একত্রিত করা হয়েছিল।অজাতশত্রু একদিন জীবককে বললেন, আমি ভগবান বুদ্ধের শরণাপন্ন হতে চাই।
    জীবক বললেন, চলুন আমি আপনাকে ভগবানের কাছে নিয়ে যাই।
    ভগবান বুদ্ধের কথা শুনে অজাতশত্রুর জীবনে বিরাট এক পরিবর্তন আসে। তিনি বৌদ্ধ মহাসম্মেলনের ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, ভগবান বুদ্ধের বাণীগুলি সংরক্ষণ করে রাখা হবে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য। বৌদ্ধ গ্রন্থগুলি যুবকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। গ্রন্থগুলি থেকে জানা গেছে তিনি দু-দুবার বুদ্ধকে কঠিন রোগ থেকে মুক্ত করেছিলেন। সংসার থেকে বৌদ্ধভিক্ষু 100 বছর বয়সে পদব্রজে বৌদ্ধবিহার গুলিতে যাওয়া আসা করতেন কেবলমাত্র চিকিৎসার কারণে। বহুদূর থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ ছুটে আসতেন চিকিৎসার জন্য। কাউকে বিমুখ করতেন না।  জীবককে বলা হয় বেদোক্ত যুগের ধন্বন্তরি। রোগীকে না দেখেও কিরকম চিকিৎসা  করতেন  তা শুনলে চমকিত হতে হয়। কথিত আছে ভগবান বুদ্ধ একবার কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওষুধগুলো পদ্মফুলে মিশিয়ে রেখেছিলেন। বুদ্ধদেব গ্রহণ না  করায় যুবকদের কাছে প্রেরণ করেছিলেন। ঘ্রাণ  গ্রহণ করেই তাঁর রোগ ভালো হয়েছিল। 
    সেবার কাজে নিজেকে শতত নিয়োজিত রাখলেও বিজ্ঞানকে বঞ্চিত করেননি জীবক চিকিৎসা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। সেগুলো পরের দিকে হারিয়ে গেলেও পরবর্তীকালে ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের যথেষ্ট সাহায্য করেছিল তার শেষ বয়সে শ্রেষ্ঠ রচনা শিশু রোগ চিকিৎসা গ্রন্থ পৃথিবীর প্রথম শিশু চিকিৎসা সংক্রান্ত বই অতি মূল্যবান গ্রন্থ যা পরবর্তীকালে ভারতীয় চিকিৎসকদের শিশুরোগ সংক্রান্ত গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করেছিল।জীবক বলতেন শুধু ধর্মপ্রচার নয় গরীব রোগীদের সেবা করতে হবে তাদের সেবায় নিয়োজিত হতে চাই।
    ধর্ম প্রচার এর পরিবর্তে দীনদরিদ্র, রোগগ্রস্তদের সেবায় তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। শেষে তার আচরণ অজাত শত্রুকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে শত্রুতা ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেও  অজাতশত্রু প্রথম বৌদ্ধ সম্মেলন আহ্বান জানিয়েছিলেন।
    অজাত শত্রু বললেন আমি এক বড় বৌদ্ধ মহাসম্মেলন করতে চাই।
    জীবক বললেন কিন্তু এত বড় মহাসম্মেলন আপনি করবেন কোথায়? ভারতবর্ষের প্রত্যেক প্রদেশ থেকে বহু লোকের সমাগম হবে। অজাতশত্রু বললেন আমি স্থান নির্বাচন করেই রেখেছি গৃধ্রকুট পর্বতে সপ্তপর্ণী গুহায় সম্মেলন করা হবে।রাজপুরোহিত বললেন তার সমস্ত বাণী সংরক্ষণ করতে হবে। তারপর সমস্ত সেনাপতিদের সাহায্যে, সমস্ত নাগরিকদের সাহায্য নিয়ে সেই গৃধ্রকুট পর্বতে বিরাট বড় মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। সপ্ততপর্ণী পর্বতের গুহায় সম্মেলন হয়েছিল এবং ভগবান বুদ্ধের বাণী গুলো কে একত্রিত করা হয়েছিল রাজার কথামত।একবার ভগবান বুদ্ধের শরীর অসুস্থ হয়ে উঠল চরম।
    জীবক বললেন, আপনি ঔষধ সেবন করুন। তাহলেই সুস্থ হয়ে উঠবেন।
    ভগবান বললেন, আমি ঔষধ সেবন করব না। এবার তো বয়স হয়েছে। তোমরা বেশি চিন্তা কোরো না। 
    তাঁকে কেউ রাজী করাতে পারল না।শেষে জীবক এক ফন্দি আঁটলেন। তিনি তার এক বন্ধুকে বললেন তুমি আমার বাড়ি যাবে গোপনে কেউ যেন জানতে না পারে ওখানে আমি ভগবানের ওষুধ দিয়ে দেবো এবং ভগবান সেই ওষুধ ওষুধ ঠিক হয়ে যাবে।যুবকের বন্ধু জীবনের বাড়ি এলেন এবং বললেন আমি এসে গেছি তুমি কি দেবে বলেছিলে দাও। তারপর জীবক করলেন কি ভগবান বুদ্ধের প্রিয় শ্বেত পদ্ম ফুলের ভিতর ওষুধ দিলেন এবং তার মধ্যেই ওষুধের বিভিন্ন রকম পদ্ধতিতে ঔষধ মিশ্রিত  করলেন এবং বন্ধুর হাতে তুলে দিলেন।তারপর মহামতি যুবকের বন্ধু ভগবান বুদ্ধের কাছে গেলেন।
    তিনি ভগবান বুদ্ধকে বললেন আপনার প্রিয় শ্বেতপদ্ম এনেছি।
    ভগবান বুদ্ধ প্রসন্ন চিত্তে তারপর শ্বেতপদ্ম গ্রহণ করলেন । তারপর নাকের কাছে নিয়ে সুগন্ধি পুষ্পের ঘ্রাণ গ্রহণ করলেন।
    কিছুদিন পরে  ভগবান বুদ্ধ সুস্থ হয়ে উঠলেন।সাধারণে এক ভিক্ষুক মত জীবন যাপন করতেন মহামতি জীবক ধর্মপ্রচারে পরিবর্তে দুঃখিত রোগগ্রস্ত সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন শেষে তার আচরন অজাতশত্রু কে খুব মুগ্ধ করেছিল এবং তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন।তুই মহামতি যুবক 100 বছর বয়সেও পায়ে হেঁটে চিকিৎসা করে বেড়াতেন গ্রামে গ্রামে। এবার অজাতশত্রু তাঁকে ডেকে বললেন, আপনি চিকিৎসা শাস্ত্র রচনা করুন ভবিষ্যৎ দুনিয়ার জন্য। জীবনটা শেষ বয়সে শ্রেষ্ঠ রচনা শিশু রোগ চিকিৎসা গ্রন্থ রচনা করেন। পৃথিবীর প্রথম শিশু চিকিৎসা সংক্রান্ত বই, অতি মূল্যবান গ্রন্থ, বৃদ্ধ জীবক তন্ত্র। যা পরবর্তীকালে ভারতীয় চিকিৎসকদের শিশু রোগ সংক্রান্ত গবেষণা যুদ্ধে সাহায্য  করেছিল।
    রাজা বিম্বিসার বুদ্ধকে ধর্মগুরু হিসেবে মান্য করে প্রাসাদে নিয়ে যান। বুদ্ধ তাঁকে চতুরার্য সত্য সম্বন্ধে উপদেশ প্রদান করেন। এরপর বৌদ্ধ সংঘের সহস্রাধিক ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য বেণুবন নামক তার প্রমোদ উদ্যানটি গৌতম বুদ্ধকে প্রদান করেন। পরে রাজা সেখানে একটি বিহার নির্মাণ করেন। এই বিহারটি 'বেণুবন বিহার' নামে পরিচিতি পেয়েছিল।  বিম্বিসারের অনুরোধে বুদ্ধ অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে উপোবাস ব্রত পালনের বিধি প্রচলন করেন। কথিত আছে, বিম্বিসারের অনুরোধেই বুদ্ধ বর্ষাকালে পরিব্রাজন না করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে সাধনার 'বর্ষাবাস' নামক রীতি প্রচলন করেন। ভিক্ষুদের বর্ষাবাসের সুবিধার জন্য কুটীর নির্মাণ এবং বুদ্ধ ও ভিক্ষুদের চিকিৎসার জন্য রাজবৈদ্য জীবককে নিযুক্ত করেন। রাজার  পত্নী  পরবর্তীকালে ভিক্ষুণী সংঘে যোগদান করে অর্হত্ত্ব লাভ করেন।এরপর তিনি তাঁর পিতার অনুরোধে কপিলাবাস্তুতে আসেন। এখানে এসে তিনি তাঁর পিতার শত অনুরোধেও প্রথমে গৃহে প্রবেশ করতে রাজী হলেন না। রাজবাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁর স্ত্রী গোপা পুত্র রাহুলকে ডেকে বললেন -ওই তোমার পিতা মতাকে ডেকে আন। রাহুল নিজের পরিচয় দিয়ে ঘরে যেতে বললেন। গৌতম সে আহ্বান অগ্রাহ্য করলেন। এরপর সকলের কাতর অনুরোধে ইনি বাড়িতে প্রবেশ করলেন কিন্তু কোথাও দাঁড়ালেন না। রাজবাড়ি থেকে শেষবারের মতো বের হওয়ার সময় তাঁর স্ত্রী বুদ্ধের সামনে তাঁর দীর্ঘ চুল বিছিয়ে অপেক্ষা করলেন। গৌতম বিন্দু মাত্র বিচলিত না হয়ে সে চুল মাড়িয়ে রাজবাড়ী থেকে বেরিয়ে এলেন। এই সময় ইনি তাঁর  বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ এবং সাত বৎসরের পুত্র রাহুলকে দীক্ষিত করে রাজধানী ত্যাগ করলেন। এরপর ইনি ১৩ বৎসর ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর ধর্মমত প্রচার করে বেড়ালেন। পিতার অসুস্থাতার কথা শুনে ইনি কপিলাবস্তুতে আসেন এবং পিতার মৃত্যুকালে উপস্থিত হলেন। পিতার মৃত্যুর পর ইনি পুরনারীদের ভিক্ষু বানালেন। এই ভিক্ষুদলের নেত্রী বানালেন তাঁর স্ত্রী গোপাকে। এরপর ইনি তাঁর ধর্মমত প্রচারের জন্য আবার পথে বেড়িয়ে পড়েন। ৮০ বছর বয়সে নেপালের কুশী নগরে ইনি দেহত্যাগ করেন। কথিত আছে তাঁর জন্ম বোধিত্ব লাভ ও মৃত্যু- একই তারিখ ও সময়ে হয়েছিল।বুদ্ধ বেণুবনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ উদ্‌যাপন করেন।শেষ বছরে সারিপুত্র ও মৌদ্‌গল্যায়ন বুদ্ধের শিষ্য হন। 
    গাইড আবার বলতে লাগলেন ইতিহাসের কথা, এই সময় রাজবৈদ্য জীবক তাঁর আম্রকাননে বুদ্ধ সংঘের জন্য একটি বিহার নির্মাণ করে দেন। বর্তমানে এই বিহারটি 'জীবকাম্রবন' বামে পরিচিত।কাছে হিন্দু দর্শনে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। কিন্তু এই জ্ঞানে পরিতৃপ্ত হতে পারেন নি। তাই এখান থেকে তিনি উদ্দক রামপুত্তের কাছে শিক্ষাগ্রহণের জন্য আসেন। এই গুরুর কাছে তিনি সাংখ্য এবং যোগবিদ্যা শেখেন। এই নতুন জ্ঞানও তাঁকে শান্ত করতে পারলো না। এরপর তিনি মগধের রাজধানী রাজগিরীতে আসেন। লোকমুখে নতুন সন্ন্যাসীর প্রশংসা শুনে বিম্বিসার তাঁর সাথে দেখা করেন এবং রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু বুদ্ধ এই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে জানান যে, যদি কখনও সত্যের সন্ধান পান, তাহলে তিনি রাজার আমন্ত্রণ রক্ষা করবেন। এর কিছুদিন পর, রাজা এক যজ্ঞানুষ্ঠানের জন্য ১০০০ মেষ বলির উদ্যোগ নেন। এই কথা জানতে পেরে বুদ্ধ রাজার সাথে দেখা করেন এবং মেষ বলি থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেন। রাজা এই অনুরোধে বলি বন্ধ করে দেন। এরপর বুদ্ধ উরুবিল্ব গ্রামের নিকটবর্তী এক উপবনে এসে তপস্যা শুরু করেন। এখানে তিনি কঠোর তপস্যা শুরু করেন। সে সময় পাঁচজন সন্ন্যাসীও তাঁর সাথে ধ্যান শুরু করেন। বুদ্ধের কঠোর তপস্যা দেখে এই পাঁচ সন্ন্যাসী তাঁর ভক্ত হয়ে পড়েন। এরপর তিনি ভারতের বর্তমান বিহার প্রদেশের গয়া জেলার একটি গভীর অরণ্যের ভিতর, নিরাঞ্জনা নদীর তীরস্থ একটি অশ্বত্থ গাছের নিচে কঠোর তপস্যা শুরু করেন। এই সময় অনাহারে অনিদ্রায় তাঁর শরীরের মেদ-মাংস ক্ষয়ে কঙ্কালসার হয়ে গিয়েছিলেন। এই সময় তাঁর শারীরীক অক্ষমতার কারণে ধ্যানে মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না। তাই তিনি অল্প কিছু আহার করতে থাকেন। এই সময় সুজাতা নামক এক গৃহবধু প্রথম পুত্র সন্তান লাভের পর বনদেবতার পূজা দিতে আসতেন। তিনি সেখানে বুদ্ধকে দেবতা ভেবে পূজা দিতে গেলে, বুদ্ধ তাঁর ভুল ভেঙে দিয়ে বলেন যে, তিনি দেবতা নন। তিনি সুজাতার নিবেদিত পায়েস গ্রহণ করে বলেন যে, তোমার মনস্কাম যেমন পূর্ণ হয়েছে, এই পায়েস গ্রহণের পর আমার মনস্কামও যেন পূর্ণ হয়। বুদ্ধের এই খাদ্যগ্রহণ দেখে, বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে, তাঁর সাথের সন্ন্যাসীরা তাঁকে ত্যাগ করেন। এরপর তিনি একাই ধ্যান করতে থাকেন। প্রায় ৪৯ দিন ধ্যান করার পর, তিনি বৈশাখী পূর্ণিমায় গৌতম বুদ্ধত্ব লাভ করেন। এই সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৫ বৎসর। বোধিপ্রাপ্ত হয়ে তাঁর নাম হল তাঁর বুদ্ধ।  কথিত আছে তিনি এই রাতের প্রথম যামে পূর্বজন্মের জ্ঞান লাভ হয়, দ্বিতীয় যামে তাঁর দিব্যচক্ষু বিশুদ্ধ হয়, অন্তিম যামে দ্বাদশ প্রতীত্যসমুৎপাদ এবং অরুণোদয়ে সর্বজ্ঞাতা প্রত্যক্ষ করেন। বর্তমানে নিরঞ্জনা নদীকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ফল্গু। আর উরুবিল্ব গ্রামের নাম বুদ্ধগয়া এবং তিনি যে গাছের নিচে বসে বোধিত্ব লাভ করেছিলেন, সেই অশ্বত্থগাছের নামকরণ করা হয়েছে বোধিবৃক্ষ। বোধিবৃক্ষ এবং মন্দির ছাড়া এখানে একটি দীঘির নাম সুজাতা দিঘি। কথিত আছে। এই দিঘির জলে স্নান করে বুদ্ধদেবকে পায়েস নিবেদন করেছিলেন। শরীরকে কষ্ট দিয়ে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করা অসম্ভব একথা তিনি বলতেন। 
    আমাদের  গাইড ঘুরে ঘুরে সমস্ত স্থান দেখালেন এবং ঐতিহাসিক বিবরণ  দিলেন। আমরা চুপ করে গোগ্রাসে গিললাম ইতিহাসের কথা।
    লজে ফিরে সোমা বলল, স্ত্রী চুল বিছিয়ে দিয়েছিলেন ৃমায়ার শেকল।
    আমি বললাম, ভগবান মায়ার শেকল ছিন্ন করে সংসার ছাড়লেন। তাই তো মানুষের জন্য কাজ করতে পারলেন।
    শ্যামলী বলল, তাহলে।স্ত্রী র কথাটাও ভাবুন...
    আমি আর রাজু নিরুত্তর হয়ে রইলাম।
    সৈকত তার পরিবার নিয়ে জাপান চলে গেল। অংশুমান ভাবলো, যাক তার কষ্ট করা,সার্থক হয়েছে। একটা বেসরকারি সংস্থার চাকরি নিয়ে জাপানে সংসার হলো সৈকতের। সৈকতের সঙ্গে বিশুদা বেড়াতে এসেছে জাপানে। বিশু ঘুরতে ভালবাসে আবার সৈকতের হেল্প হলো। বিশু থাকলে সকলের ভরসা হয়। বিশু বলল উদীয়মান সূর্যের দেশে আমরা এলাম। । বিশু বললো,   পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র হল জাপান । এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জাপান সাগর, পূর্ব চীন সাগর, চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়ার পূর্ব দিকে উত্তরে ওখোৎস্ক সাগর থেকে দক্ষিণ পূর্ব চীন সাগর ও তাইওয়ান পর্যন্ত প্রসারিত। যে কাঞ্জি অনুসারে জাপানের নামটি এসেছে, সেটির অর্থ "সূর্য উৎস"। জাপানকে প্রায়শই "উদীয়মান সূর্যের দেশ" বলে অভিহিত করা হয়।জাপান একটি যৌগিক আগ্নেয়গিরীয় দ্বীপমালা। এই দ্বীপমালাটি ৬,৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। জাপানের বৃহত্তম চারটি দ্বীপ হল হোনশু, হোক্কাইদো, ক্যুশু ও শিকোকু। এই চারটি দ্বীপ জাপানের মোট ভূখণ্ডের ৯৭% এলাকা নিয়ে গঠিত। জাপানের জনসংখ্যা ১২৬ মিলিয়ন। জনসংখ্যার হিসেবে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯.১ মিলিয়ন। এই শহরটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার ২য় বৃহত্তম মূল শহর। টোকিও ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্য নিয়ে গঠিত বৃহত্তর টোকিও অঞ্চলের জনসংখ্যা ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মহানগরীয় অর্থনীতি।সৈকত  বললো, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদা সাগালিন দ্বীপের কথা বলেছিলেন। মনে আছে তোর বিশু। বিশু বললো, জাপানের সাগালিন এবং ওহোতস্ক সমুদ্র দ্বারা সাখালিনটি ধুয়ে ফেলা হয়, এটি জাপান থেকে লা পেরুজের তলদেশে তাতার তীর দ্বারা মহাদেশ থেকে পৃথক হয়। সাখালিনের মোট এলাকা 76 হাজার বর্গ কিমি। এবং ফর্ম, এটি একটি মাছ অনুরূপ, এশিয়ার তীরে বরাবর প্রসারিত। দ্বীপটির দক্ষিণে, পাহাড়গুলি আয়ত্ত করে, উত্তরের কাছে, তাদের নিম্নভূমি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, এবং শুধুমাত্র শ্মিট্ট উপদ্বীপে, সাখালিনের চূড়ান্ত উত্তর দিকটি হ'ল পাহাড়ের শিখরগুলি আবার দৃশ্যমান। যেমন একটি জটিল ত্রাণ, পাশাপাশি সমুদ্র এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী, উদ্ভিদ এবং প্রাণী বিশ্বের মৌলিকত্ব নির্ধারিত।সাখালিন বৃহত্তম রাশিয়ান দ্বীপ। জাপানীরা এই দ্বীপটি করাফুতোকে উপভোগ করে, যার অর্থ "ঈশ্বরের ভূমি মুখ।" দ্বীপটি 1643 সালে ডাচম্যান দে ভ্রিসের আবিষ্কৃত হয়েছিল। এবং দীর্ঘদিন ধরে, সাখালিনকে উপদ্বীপ বলে মনে করা হয়েছিল। সম্ভাব্য কারণ দ্বীপটি মূল ভূখন্ড থেকে পৃথক হওয়ার স্রোত শীতে ঠান্ডা হয়।জাপানের সাগালিন এবং ওহোতস্ক সমুদ্র দ্বারা সাখালিনটি ধুয়ে ফেলা হয়, এটি জাপান থেকে লা পেরুজের তলদেশে তাতার তীর দ্বারা মহাদেশ থেকে পৃথক হয়। সাখালিনের মোট এলাকা 76 হাজার বর্গ কিমি। এবং ফর্ম, এটি একটি মাছ অনুরূপ, এশিয়ার তীরে বরাবর প্রসারিত। দ্বীপটির দক্ষিণে, পাহাড়গুলি আয়ত্ত করে, উত্তরের কাছে, তাদের নিম্নভূমি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, এবং শুধুমাত্র শ্মিট্ট উপদ্বীপে, সাখালিনের চূড়ান্ত উত্তর দিকটি হ'ল পাহাড়ের শিখরগুলি আবার দৃশ্যমান। যেমন একটি জটিল ত্রাণ, পাশাপাশি সমুদ্র এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী, উদ্ভিদ এবং প্রাণী বিশ্বের মৌলিকত্ব নির্ধারিত।কারণ সাখালিন তাহা তার প্রজাতি বৈচিত্র্যের মধ্যে রাশিয়াতে সবচেয়ে ধনী। নিজের জন্য বিচারক - দ্বীপে প্রায় ২00 টি প্রজাতির গাছ ও ঝর্ণা বেড়ে যায়।সখালিনের প্রধান গাছটি জিমেইলিন লার্চ। অন্যান্য ধরনের গাছগুলি খুব কমই প্রতিনিধিত্ব করা হয়: পাতলা লেইড লার্চ, আইয়ানস্কি স্প্রুস, সখালিন ফির। হোয়াইট এবং পাথর birches, aspens, সুগন্ধি poplars, শিশির উইল, জাপানি elms, হলুদ ম্যাপেল, এবং alder hardwoods মধ্যে prevail।সাখালিন ফল এবং বেরিতে সমৃদ্ধ। চেরি, ক্যারাট, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি, ব্লুবেরি, রেডবেরি এবং ক্র্যানবেরি এখানে বেড়ে যায়। এবং দ্বীপের দক্ষিণে এক অনন্য প্রাকৃতিক সমন্বয় পালন করতে পারে: সাখাওয়ালীন বাঁশের ঝোপঝাড় দ্বারা বেষ্টিত একটি শঙ্কু বন। এই ধরনের ইউনিয়ন বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না। বাঁশ, অবশ্যই, এখানে উচ্চ নয়, তবে এর ঝড় আসলে সবচেয়ে দুর্বল, যেহেতু ইলাস্টিক টুকরাগুলি সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ভাবে আটকে থাকে এবং ছুরিগুলির মত তীক্ষ্ণ পাতাগুলি সহজে ত্বকে কাটাতে পারে।দুর্ভাগ্যবশত, গত কয়েক বছরে সাখালিনের প্রাণীরা উল্লেখযোগ্যভাবে দরিদ্র হয়ে পড়েছে। একবার দ্বীপে, ঘুর্ণিমান হরিণ চারপাশে লাফিয়ে পড়েছিল এবং বন্য ডোরা তাদের কান্না দিয়ে পার্শ্ববর্তী বনগুলিকে পড়েছিল। না যারা অন্য বা বাকি আছে। পরে এল্ক এবং লাল হরিণ বিনষ্ট হয়। শেষ শতাব্দীর মাঝামাঝি বর্ধমান বনজনিত কারণে, সযোগ্য এবং র্যাকুন কুকুর অদৃশ্য হয়ে যায়। পর্বত ভেড়া এবং নদী otters চিরতরে দ্বীপ ছেড়ে। এক স্টাফ নেকড়ে, একবার একবার সাখালিনে ভডিভিশগো, যাদুঘরে একাকী একাকী। সমুদ্রের নিকটবর্তী, উদ্ভিদ এবং প্রাণী বিশ্বের মৌলিকত্ব নির্ধারিত। আমাদের ক্যাপটেন  বিশু আরও বললেন, টোকিও বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলির একটি। এর আয়তন প্রায় ২৪০ বর্গকিলোমিটার। মূল শহরে প্রায় ৯০ লক্ষ লোকের বাস। বৃহত্তর টোকিও মহানগর এলাকাতে প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ লোকের বাস, যা জাপানের মোট জনসংখ্যার এক দশমাংশ; এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল বৃহত্তর মহানগর এলাকা।টোকিও থেকে বন্দরনগরী ইয়াকোহমা পর্যন্ত অঞ্চলটি অবিচ্ছিন্নভাবে জন-অধ্যুষিত বলে কিছু বিশেষজ্ঞ টোকিও ইয়োকোহামাকে একটিমাত্র মহানগর এলাকা হিসেবে গণ্য করেন, যার জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ। জাপান হচ্ছে একটি দ্বীপদেশ যা মহাসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এখানকার মানুষ সবসময় প্রচুর সীফুড খাওয়ার সুবিধা গ্রহণ করেছে। এটি কিছু খাদ্যবিদদের মতামত যে জাপানি খাদ্য সর্বদা উপর নির্ভর করে প্রধানত শষ্যের উপর সাথে থাকে শাকসব্জি বা সামুদ্রিক আগাছা, দ্বিতীয়ত পাখিজাত মাংস এবং সামান্য পরিমাণ লাল মাংস। বৌদ্ধধর্ম প্রসার লাভের আগ থেকেই জাপানে মাংস গ্রহণের এই অনীহা ভাব ছিলো। ইদো যুগে ইয়োতসুশি বা চারপেয়ে জন্তু খাওয়া নিষিদ্ধ ছিলো। এই সত্ত্বেও জাপানে লাল মাংস ভোজন সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়নি। গৃহপালিত পশুদের বিপরীতে বন্য খেলা খাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছিলো। বিশেষ করে ফাঁদ পেতে খরগোশ শিকারের জন্য এমন শব্দ (ওয়া) ব্যবহার হতো যা সাধারণত একটি পাখির জন্য সংরক্ষিত শব্দ। সাধারণ খাদ্যদ্রব্যগুলির ক্রমবর্ধমান খরচের কারণে জাপানী পরিবারের প্রক্রিয়াকৃত খাবারগুলি র ব্যবহার আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিয়োটো সবজি বা কিয়াইয়াই জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং বিভিন্ন ধরনের কিয়োটো সবজির ব্যবহার আবারো ফিরে আসছে। বিশুর কাছে জাপানের কথা শুনে আমাদের একটা মোটামুটি ধারণা হলো। টোকিও ঘোরার ব্যাবস্থা করলো বিরাজুল। সে গাড়ি ঠিক করে আসার পরে আমরা সকলে খেয়ে শুয়ে পড়লাম। সকালে আমরা একজন গাইডকে পেয়েছি। তিনি একটু আধটু বাংলা জানেন। তিনি বললেন যা সেটি আমরা ভালো বাংলাতেই বলব।তিনি বললেন, মূল টোকিও শহরটি ২৩টি বিশেষ প্রশাসনিক এলাকা নিয়ে গঠিত। জাপানের রাজকীয় প্রাসাদটি টোকিও শহরের হৃৎকেন্দ্রে অবস্থিত। প্রাসাদটি পাথরের প্রাচীর, পরিখা ও প্রশস্ত বাগান দিয়ে পরিবেষ্টিত। রাজপ্রাসাদের পূর্ব-দিক সংলগ্ন বর্ণিল মারুনোউচি এলাকাটি জাপানি ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি প্রধান কেন্দ্র। প্রাসাদের দক্ষিণে আছে কাসমিগাসেকি  এলাকাটি, যেখানে বহু জাতীয় পর্যায়ের সরকারী কার্যালয় অবস্থিত। তার পশ্চিমে রয়েছে নাকতোচো উঁচু এলাকা, যেখানে জাপানের জাতীয় দিয়েত বা সংসদ ভবনটি অধিষ্ঠিত। টোকিওতে কোনও কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক এলাকা নেই। শহরটি অনেকগুলি গুচ্ছ গুচ্ছ শহুরে এলাকা নিয়ে গঠিত; এই এলাকাগুলি মূলত রেল স্টেশনগুলিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে, যেখানে দোকান, বিপণীবীথি, হোটেল, ব্যবসায়িক কার্যালয় ভবন এবং রেস্তোরাঁগুলি ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে অবস্থান করছে। এই গুচ্ছগুলির মাঝে মাঝে অপেক্ষাকৃত কম ভবনবিশিষ্ট অনাধুনিক এলাকাগুলি অবস্থিত, যদিও এগুলিতেও একই ধরনের ভবনের দেখা মেলে। টোকিওর ভবনগুলি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এখানে এখনও প্রাচীন জাপানি কাঠের বাড়ির দেখা মেলে, যদিও এদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে। এছাড়া এখানে মেইজি পর্বে (১৮৬৮-১৯১২) নির্মিত অনেক পাথর ও ইটের তৈরি ভবন আছে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে শহরে কংক্রিট ও ইস্পাত দিয়ে অনেক গগনচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণ করা হয়। শহরকেন্দ্রের পূর্বভাগে অবস্থিত আলোয় ঝলমল করা গিনজা নামক কেনাকাটার এলাকাটি বিশ্বখ্যাত। রাজপ্রাসাদের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত কান্দা এলাকাটিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, বইয়ের দোকান ও প্রকাশনী অবস্থিত। টোকিওর নগর-উদ্যানগুলি ইউরোপ-আমেরিকার মত বড় না হলেও সংখ্যায় প্রচুর এবং এগুলিতে প্রায়ই মনোরম সুদৃশ্য বাগান থাকে।টোকিও জাপানের প্রধানতম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। টোকিও শহরে অত্যাধুনিক জীবনধারার সাথে ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ ঘটেছে। এখানে নিয়নের আলোয় উদ্ভাসিত গগনস্পর্শী অট্টালিকা যেমন আছে, তেমনই আছে ঐতিহাসিক সব মন্দির। সমৃদ্ধ মেইজি সিন্ত এর সুউচ্চ প্রবেশদ্বার এবং চারপাশ ঘিরে থাকা বৃক্ষশোভিত এলাকার জন্য পরিচিত।  টোকিও জাদুঘর জাপান ও এশিয়ার ধ্রুপদী শিল্পকলা ও ইতিহাস বর্ণনাকারী অনেক প্রদর্শনী আছে। একই এলাকাতে একটি বিজ্ঞান জাদুঘর, একটি চিড়িয়াখানা এবং দুইটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকলা জাদুঘর অবস্থিত। রাজপ্রাসাদের আশেপাশেও বেশ কিছু বিজ্ঞান ও শিল্পকলা জাদুঘর আছে। এছাড়া শহর জুড়েই অন্যান্য আরও অনেক ধরনের জাদুঘর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।  পুনর্নির্মিত  নাট্যমঞ্চ পরিদর্শন করা সম্ভব। টোকিওর নাট্যশালাগুলিতে নিয়মিতভাবে ঐতিহ্যবাহী কাবুকি নাটকের পাশাপাশি আধুনিক নাটক পরিবেশন করা হয়। এছাড়া ঐকতান, গীতিনাট্য, ইত্যাদি পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সঙ্গীত ও নৃত্যকলা সর্বদাই পরিবেশিত হয়। এদের মধ্যে বিশ্বববিদ্যালয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গাইড বললেন, এলাকার পুরাতন, সরু রাস্তাগুলি দিয়ে হাঁটলে দোকানপাট, -পরিহিতা নারী ও ৭ম শতকে নির্মিত  চোখে পড়বে। এর বিপরীতে  এলাকাতে গেলে উদ্দাম উচ্ছ্বল নৈশক্লাব ও  গান গাওয়ার বার দেখা যাবে। এলাকায় পাওয়া যাবে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির দোকানের সমাহার। মদ্যপান করার জন্য ইজিকায়া নামের ঘরোয়া জাপানি ধাঁচের পাবগুলি টোকিওর সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শহরের কেন্দ্রের কাছে আছে  যেটি টুনা মাছের নিলামের জন্য বিখ্যাত। সুউচ্চ  নামক স্থাপনার শীর্ষে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত পর্যবেক্ষণ মঞ্চ থেকে গোটা টোকিও শহরের বিস্তৃত পরিদৃশ্য অবলোকন করা সম্ভব। টোকিওর খাবারের দোকানগুলি সবসময়ই জমজমাট থাকে।  ও  এলাকাতে গেলে হালের কিশোর-কিশোরীদের পোশাকশৈলী সম্বন্ধে ভাল ধারণা পাওয়া যায়।টোকিও জাপানের পরিবহনের প্রধান কেন্দ্র। এছাড়া এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পরিবহন কেন্দ্র। বৈদ্যুতিক রেল, পাতালরেল, বাস ও মহাসড়কের এক ঘনসন্নিবিষ্ট জালিকা টোকিওর সেবায় নিয়োজিত। রেল সমগ্র জাপানের জন্য কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন।আমরা হিকারি এক্সপ্রেস নামে উচ্চগতিসম্পন্ন  রেলগাড়িতে চাপলাম।  এখান দিয়ে যাওয়া যায় টোকিও থেকে উত্তর জাপান অভিমুখী সমস্ত রেললাইনগুলি,' উয়েনো' এসে মিলেছে। অন্যদিকে  হনশু এবং টোকিওর পশ্চিমের শহরতলী থেকে আগত রেলগাড়িগুলির শেষ গন্তব্যস্থল  পর্যন্ত।  আমরা ঘুরছি আর গাইডের গল্প শুনছি,  কিছু বেসরকারী মালিকানাধীন বৈদ্যুতিক রেলপথ নগরে পরিবহন সেবা দান করে। টোকিওর, চিবা বন্দর শহরে অবস্থিত। অন্যদিকে টোকিও উপসাগরের কাছে অবস্থান আভ্যন্তরীণ বিমান পরিবহন সেবা প্রদান করে।টোকিও সারা বছরই ব্যস্ত থাকে। জানুয়ারির ১ তারিখে গ্রেগরিয়ান মতে নববর্ষ উদযাপন করা হয়; এসময় সমাধিমন্দিরগুলিতে অনেক তীর্থযাত্রীর ভিড় হয়। এপ্রিলে সারা টোকিও শহর জুড়ে চেরি পালিত হয়। মে মাসে  উৎসব পালিত হয়, যেখানে বহনযোগ্য সমাধির শোভাযাত্রা হয়। জুলাই মাসে সুমিদা নদীর আতশবাজি উৎসব হয়। আগস্ট মাসে ওবোন নামে একটি বৌদ্ধ ছুটির দিবসে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করা হয়। একই মাসে উৎসবে কোয়েঞ্জি রেলস্টেশনের আশেপাশে শোভাযাত্রা-মিছিলের আয়োজন করা হয়।২০১৪ সালে  নামক পর্যটকদের সহায়তাকারী ওয়েবসাইটে "স্থানীয়দের সাহায্যদানকারী মনোভাব", "নৈশজীবন", "কেনাকাটা", "স্থানীয় গণপরিবহন" এবং "রাস্তাঘাটের পরিচ্ছন্নতা"-র ক্ষেত্রে "শ্রেষ্ঠ সামগ্রিক অনুভূতি।  গাইড বয় আমাদের সাখালিনের বনভূমির কথাও শোনালেন। সাখালিনের বনভূমিগুলির বৈশিষ্টসূচক প্রতিনিধিরা প্রধান ভূখণ্ডের প্রাণী, চরিত্রগত ও দুধ চাষের দুধঃ এইগুলি অনেকগুলি ভেজাল এবং তরমুজ। দ্বীপের দক্ষিণে কলাম পাওয়া যায়। এই প্রাণী জাপান থেকে আনা হয়েছিল, কিন্তু তাদের সংখ্যা এত ছোট।সাখালিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রবল শত্রু বাদামী ভালুক। এই দৈত্যগুলির বৃদ্ধি দুই মিটার এবং ওজন - 500 কেজি পর্যন্ত পৌঁছায়। লাল, ধূসর এবং রৌপ্য-কালো বনের মধ্যে অনেক লাল শিয়াল আছে। নদী প্লাবনভূমিতে সর্বত্র হরেস এবং গহ্বর পাওয়া যায়, আপনি নদী otters দেখতে পারেন। আমাদের গাইড আমাদের কৌতূহল দেখে হিমবাহ ও সাগালিন সম্পর্কে অনেক অজানা কথা বললেন। জাপান এসেছি বলে কি আর অন্য অজানা খবর শুনব না। হতেও তো পারে কোনদিন হিমবাহের সামনাসামনি হলাম। অতএব, "জানার কোন শেষ নাই "....কিন্তু সাখালিনের হরিণটি বেশিরভাগ পেঁচা দ্বারা পালিত হয়। বন্য দ্বীপ শুধুমাত্র উত্তর অংশে পাওয়া যায়। Srenely দ্বীপ এবং musk হরিণ প্রায় migrates। এটি রেড বুক তালিকাভুক্ত করা হয়।হিমবাহ  হল বরফের বিরাট চলমান স্তুপ বা নদী। সাধারণত পার্বত্য অঞ্চলে শীতকালে তুষার পড়ার হার গ্রীষ্মে গলনের হারের চেয়ে বেশি হলে পাহাড়ের উপরে তুষার জমতে শুরু করে এবং জমে শক্ত বরফে পরিণত হয়। এই বরফজমা এলাকাটিকে বরফক্ষেত্র (Ice field) বলে। যখন এই জমা বরফ নিজের ওজনের ভারে এবং মাধ্যাকর্ষণের টানে ধীরগতিতে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নামতে শুরু করে, তখন তাকে হিমবাহ বলে। তবে জমা বরফ এত পুরু হয় এবং এর নিম্নগতি এতই ধীর যে তাকে স্থিরই মনে হয়।বিশু হিমবাহ সম্পর্কে কিছুকথা বললো, ভারতের উত্তরে পাকিস্তানের কারাকোরাম পর্বতমালাতে অবস্থিত গ্রেট বালটোরা পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহ। এর দৈর্ঘ্য প্রায় আটান্ন  কিলোমিটার। হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের কাছে রংবুক ও কাশৃঙ্গ হিমবাহ অবস্থিত। অস্ট্রিয়া-ইতালি সীমান্তে আল্পস পর্বতমালার সিমিলাউন হিমবাহে উনিশশো একানব্বই সালে একজন মানুষের অবিকৃত দেহের সন্ধান পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় দেহটি প্রায় পাঁচহাজার বছর সেখানে সমাহিত হয়ে ছিল।হিমবাহ ও সাকালিনের বর্ণনা শুনে আমাদের আশ্চর্য অনুভূতি হল। পৃথিবী একটা ছোট গ্রহ। তার সব খবর জানা কঠিন। আর মহাকাশ বা ব্রম্ভান্ডের কথা বাদই দিলাম। অসীম এই মহাকাশ। কত বিচিত্র। তার কিছুই কি আমরা জানি?  নিজেকে খুব বোকা লাগে যখন জ্ঞানের অহংকারে মত্ত হয়ে আস্ফালন করি ডাঁহা আহাম্মকের মত,বিশু বলল।বিশু সৈকতের কাছে বিদায় নিয়ে ভারতবর্ষে ফিরে এল। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন