ডক্টর সাহেব আইন শৃঙ্খলা লাইনে না আনতে না পারলেও অবিশ্বাস্য ভাবে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছে। এমন নির্লজ্জের মত আখের গুছিয়ে নেওয়া সম্ভবত ইতিহাসে আর একটা নজির নাই। এক নজরে সাদা চোখে আমরা যা দেখছি এই কয় মাসে তার একটা লিস্ট দিচ্ছি-
১. আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি পেয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক। এইটা আগেও পেয়েছিল, এবার নিজেই নিজেরটা করে নিয়েছে!
২. গ্রামীণ কল্যাণের বকেয়া ৬৬৬ কোটি টাকার কর আদেশ বাতিল করা হয়েছে। এর যুক্তি দিচ্ছে এইটা পুরোটাই ভুয়া! মামলা চলছিল। তো আদালতে নিষ্পত্তি না করে সরকারি আদেশে কেন বাতিল করল? এর জবাব এখনও ফারুকি লিখে দিতে পারেনি বলে জবাব পাওয়া যায় নাই!
৩.ডিজিটাল ওয়ালেট “সমাধান” এর লাইসেন্স পেয়েছে গ্রামীণ টেলিকম। “নগদ” একক ছিল, অন্য বেশ কিছু টেলিকম কোম্পানি আবেদন করে রেখেছিল, কিন্তু তাদের সাথে কী আর নোবেল বিজয়ী শান্তির দূত আছে?
৪. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নতুন একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে। অনুমান করতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কী? জি হ্যাঁ, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়!
৫. গত ৯ মাসে জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশে একটি মাত্র নতুন লাইসেন্স অনুমোদন পেয়েছে এবং সেই কোম্পানির নাম? গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস!
৬. গ্রামীণ ব্যাংকে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানা ২৫% থেকে কমিয়ে ১০% এ আনা হয়েছে। আরও তেড়িবেড়ি করবি কেউ আমার সাথে?
৭. গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক নূরজাহান বেগমকে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া, তিনি গ্রামীণ শক্তি এবং গ্রামীণ শিক্ষার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং গ্রামীণ ব্যাংক কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
৮. ইউনুস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোর্শেদকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় নিয়োগ দিয়েছেন।
৯. ডক্টর সাহেব অপুর্ব জাহাঙ্গীরকে উপ প্রেস সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। অপূর্ব জাহাঙ্গীর কে? তিনি হচ্ছেন ডক্টর সাহেবের আপন ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের ছেলে, অর্থাৎ ডক্টর ইউনূসের ভাতিজা! যিনি প্রেসের সাথে
কখনোই সংশ্লিষ্ট ছিলেন না।
এখন বলুন, আপনারা শান্তির দূতের কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবেন? নিজের কাজ গুছিয়ে নিতে তিনি কোন রাখঢাক রাখেন নাই। একজন বিশ্ব বরেণ্য ব্যাক্তির ব্যাপারে এগুলা লিখতেই আমার লজ্জা লাগছে, কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে আর তিনি দিব্যি এইসব করে নিলেন!
মহান জুলাই বিপ্লবের প্রচুর সঙ্গী সাথি এখন সরে গেছেন। কেউ আকার ইঙ্গিতে বলছেন এমন হবে জানলে সেই আন্দোলনে সাথে জড়িত হতেন না। আমি এই জিনিসটা মানতেই পারি না। যখন রক্তপাত শুরু হয়ে গেছে তখনের একটা যুক্তি বুঝা যায়। লাশের পর লাশ নেওয়া যাচ্ছিল না। ষড়যন্ত্রের দোষ দিয়ে লাভ নাই, ষড়যন্ত্র কাটায় উঠতে না পারাকেই ব্যর্থতা বলা হয়। আওয়ামীলীগ ব্যর্থ হয়েছে এই ক্ষেত্রে। কিন্তু আমি এই সময়টা আসার আগের মুহূর্তটাকে মনে করায় দিতে চাই। তখন কেউ থামতে বলে নাই। সবাই জোস নিয়ে উৎসাহ দিয়েছে। একজন বলে নাই, আদালতের রায়টা দেখো তোমরা, সরকার নিজেও আপিল করেছে! কেন বলে নাই? কারণ এক এদের বিচার বুদ্ধি বলতে কিছু নাই। আবেগে দৌড় দিছে যেমন বুঝছে তেমন। দুই ষড়যন্ত্রের অংশ তারা! এখানে কোন যদি কিন্তু নাই। এইটাই বাস্তব। হয় আপনি তার অংশ আর না হলে আপনার কথা বলাই উচিত হয় নাই, কারণ আপনি ঘাড়ের উপরে যে বস্তুটা নিয়ে ঘুরেন তার কোন ব্যবহার জীবনেও করেন নাই। হুট করেই আল্লার আরস কেঁপে উঠেছে বলে কান্নাকাটি করা শুরু করে দিলেন। যারা বিটিভি, মেট্রোরেলে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদ করছিল তাদেরকে দোসর গালি দিলেন! এখণ কেমন লাগে যখন ছাত্ররা বলে যে আগুন না দিলে আন্দোলন জমত না!
এই যে মৌলবাদের চরম মাত্রায় উত্থান হল, এই জিনিস কেন ঘটে একটু বুদ্ধি থাকা একজন বুঝবে না? লীগ সরকার কোন এমন মধু ছিল না, কিন্তু আমরা তো জানতাম এ ছাড়া যা আছে তা হেমলক ছাড়া আর কিছুই না! এখন রাজাকার মুক্তি পায়, অবাক হয় এই আবাল গুলো! যত অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাবে রাষ্ট্র তত প্রমাণ হবে আওয়ামীলীগ যে বলত শেখ হাসিনার বিকল্প নাই তা দিনের আলোর মত সত্য। সিনেমা মব করে বন্ধ করে দিবেন, সেই সত্যই প্রতিষ্ঠা পাবে, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর্য ভাঙবেন? প্রমাণ হবে শেখ হাসিনার কঠোর হাতের বিকল্প এখন পর্যন্ত নাই, আসে নাই। এমন শত শত উদাহরণ এই সরকার, কুলাঙ্গার ছাত্ররা, বিখ্যাত বিরোধী দল বিএনপির বিখ্যাত নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত তৈরি করেছে, করে যাচ্ছে।
এই প্রজম নিয়ে আমার রাগ আছে? অবশ্যই আছে। আমি জানি জেনারেশন গ্যাপ একটা জিনিস আছে। সবাই ভাবে তার অনুজেরা সব অপদার্থ। আরিস্টেটলের সময়ও না কি আরিস্টেটল তার পরের প্রজন্ম নিয়ে হতাশ হয়ে ছিলেন! কিন্তু আমি রাগ করছি এই কারণে না যে এরা সব উচ্ছন্নে গেছে আর আমরা সব দুর্দান্ত ছিলাম। আমি জেন জির কাছ থেকে কত কী শিখছি তার কোন ইয়াত্তা নাই। কিন্তু আমি তবু জানি এরাই সর্বনাশ করেছে দেশের। না, জুলাই আন্দোলনের জন্য না। তার আগে থেকেই এরা ধ্বংসের পথে হেঁটে গেছে। এদেরকে বাঁচানোর কোন উপায় না করাটাও লীগ সরকারের ব্যর্থতা। এরা ইতিহাস বিমুখ হয়েছে, এরা অকারণ ভারত বিদ্বেষের যে ফাঁদ তাতে নিশ্চিন্তে পা দিয়েছে। এরা মৌলবাদের খপ্পরে পড়েছে গর্বের সাথে! এরা চোখের পাতা না কেঁপেই বলতে পারে মুক্তিযুদ্ধ একটা স্ক্যাম! এই প্রজন্মের ছেলেরাই টাকনুর উপরে প্যান্ট পরা শুরু করেছে ফ্যাশনের নামে! এই প্রজন্মের মেয়েরাই নানান স্টাইলের বোরকা পরা শুরু করেছে, বোরকার যে এত স্টাইল, ধরণ হতে পারে এই বিদ্যাও আমাদের প্রজন্মের কেউ জানত না। এরা পয়লা বৈশাখ আসলে তার বিরোধিতার জন্য সর্বস্ব ঢেলে দিতে প্রস্তুত হয়ে যেত, এরা ধর্মের নামে অন্য ধর্মের মানুষকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা শুরু করেছিল। আমি এই প্রজন্মকে ভয় পাই।
আমাদের আশার কোন লক্ষণ আছে? না। এইটা হচ্ছে তিতা সত্য। নির্বাচিত সরকার এসে সব উদ্ধার করে ফেলবে? দেখি আম গাছে কাডল ধরে কি না!