এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পাঁচু পাল, দ্য রেবেল [পর্ব ৩]

    Arkajay Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ বার পঠিত
  • সূর্য-চন্দ্র-দারিদ্র
     
    পাঁচু। ভালো নাম- পঞ্চানন পাল। জন্ম ১৯৮২ সালে। বাপ প্রফুল্ল পালও ছিলো তারই মতন চাষা। অত্যন্ত সুভদ্র, সদা হাস্যময় ব্যক্তি ছিলো সে। শুধু তাদের গ্রাম নয়, আশপাশের বহু গ্রামে তার পরিচিতি ছিলো।

    গোড়াতে অভাবেই দিন গুজরান করতো প্রফুল্ল পাল। পাঁচুর ঠাকুরদা, বংশী পাল ছিলো ভবঘুরে, ক্ষ্যাপাটে, মাতাল। বেসুরো-বেতালা একটা ডুগি বাজিয়ে গান গেয়ে ভিক্ষে করতো মন্দিরে মন্দিরে। স্ত্রী মণিবালা ঠিকে ঝিয়ের কাজ করে দুই ছেলেকে মানুষ করে। বড়ো ছেলে নির্মাল্য বাপের মতোই অকম্মা। অল্প বয়সেই গাঁজায় আসক্ত হয়ে পড়ে থাকতো যেখানে সেখানে, কাজেই ছোট ছেলে প্রফুল্লকেই সংসারের হাল ধরতে হয়। বংশী এমনিতেও বাঁচেনি বেশি দিন। প্রফুল্ল জমিতে জমিতে চাষাবাদ করে যা আয় করতো, তাতে মোটামুটি কষ্টেসৃষ্টে চলে যেতো তিন জনের। একই সঙ্গে সে আদাড়ে বাদাড়ে ঘুরে নানাবিধ গাছ-গাছড়ার সন্ধান চালাতো এবং তা দিয়ে টোটকা চিকিৎসা করতে পারতো।

    প্রফুল্লদের প্রতিবেশী ছিলো ব্রজেশ্বর সরকার। পয়সাওলা লোক। একবার তিনি ভয়ানক জ্বরে পড়েন। সাতদিনেও জ্বর না ছাড়ায়, প্রফুল্ল নিজে গিয়ে কীসব লতাপাতা বেটে খাইয়ে দেয় তাঁকে। ম্যাজিকের মতো রাতারাতি জ্বর ভ্যানিশ! ব্রজেশ্বর বেজায় খুশি। প্রফুল্লকে ডেকে, তার ছেলেবেলা থেকে করা অবিরাম খাটুনির ভূয়সী প্রশংসা করে, ঝোঁকের বসে নিজের একটা বড়ো তার নামে লিখে দেন। বলেন, "যা ব্যাটা, নিজের জমিতে চাষ কর গে!" প্রসঙ্গত, ব্রজেশ্বর সরকারের আরো খান তিনেক জমি ছিলো।

    দিন যায়, রাত যায়। প্রফুল্লর বয়স বাড়ে। নিজের জমিতে চাষ করে পয়সা বাড়ে। প্রফুল্ল ছাদনাতলায় বসে। পাত্রী পাশের গাঁয়ের ম্যাট্রিক পাশ করা মেয়ে কঙ্কাবতী। বিয়ে থা করে প্রফুল্লর কপাল খুলে গেলো আরো। বউ কঙ্কা সেলাই-ফোঁড়াই করতো  আর প্রাইমারি ইস্কুলের পাঁচটা ছেলেকে টিউশন পড়াতো বাড়িতে। প্রফুল্ল ক্ষেতে মাইনে করে মজুর রাখলো দুটো। সপ্তাহে চারদিন তারা কাজে যেতো। গোয়ালে দুধেল গাই কিনলো একটা। আর সন্ধেবেলা কোবরেজি করতো তার বৈঠকখানায় বসে। সব মিলিয়ে, গাঁয়ে তখন তার বেশ বোলবোলাও। যে প্রফুল্ল পাল খাটো ধুতি আর আদুড় গায়ে, হাড় জিরজিরে শরীরে ঘেমে নেয়ে জমিতে লাঙল চালাতো, সে এখন ধোপদুরস্ত ধুতি শার্ট পরে, বাবরি দুলিয়ে বিকেলে রোজ হাঁটতে বেরোয়। 

    বিয়ের তিন বছরের মাথায় একটি মেয়ে হলো প্রফুল্লর। পার্বতী। সে এখন চার সন্তানের মা। একজনের ঠাকুমা। অঙ্গনওয়াড়িতে কাজ করে। তারও দুবছর পর হলো পঞ্চানন। পাঁচু।

    পার্বতী স্বভাবতই চুপচাপ। সাত চড়ে রা নেই। গোছানো। দিব্যি কাটছিলো দিন, হঠাৎ একদিন সে তার প্রেমিক প্রদীপের সঙ্গে এক কাপড়ে পালিয়ে ঘর ছাড়ে। সেই থেকে বাপ-মার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই তার। 

    পাঁচু বরাবর ছিটিয়াল। বুদ্ধির ঢেঁকি। লেখাপড়ায় ঢুঁ ঢুঁ। বাপ-মা টের পেয়ে গেছিলো এর দ্বারা স্কুলটুল হবে না। সে বাড়িতেই থাকতো। মাকে ঘরের এটাওটা করে সাহায্য করতো। দিদি তাকে পড়াতে বসালে আঁকিবুকি কেটে স্লেট-খাতা বরবাদ করে দিতো। 

    একটু বয়স বাড়লে, পাঁচুকে বাপের ক্ষেতে কাজ করতে যেতে হতো। বাকি কজনের সঙ্গে হাতে হাতে এগিয়ে ফেলতো কাজ। তদ্দিনে তার দিদি পলাতক। সারাদিন ধরে সে মাঠে থাকতো, প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুতা করতো, দুপুরে অবসরে গাছে গুলতি মেরে ফল পেড়ে খেতো, সমবয়সীদের সঙ্গে বনে বনে ঘুরে পাখির ছানা, কাঠবেড়ালি ধরে বেড়াতো, আর কাজ শেষে, অবেলাতে রোজ পুকুরে ডুব মেরে চান করতো।

    বুলান-ঘোষ বাড়ির ছোট ছেলে ছিলো পাঁচুর হরিহর-একাত্মা। এই বুলানের সঙ্গে ছেলেমি কুস্তি লড়তে গিয়েই প্রথমবার দুজনে দেহের প্রবল সুখের খোঁজ পেয়েছিলো। হাফপ্যান্ট হালকা ভিজে থাকায় মাকে বাড়ি এসে বলেছিলো, "ঘাম।" অনেক রাত অবধি পাঁচু জেগে ছিলো সেই রাতে। 

    পরদিন বুলান আর পাঁচু দুয়ে মিলে লুকিয়ে 'দিপালী' সিনেমায় শাহরুখ-কাজলের সুপারডুপার হিট্ ছবি দেখতে গেছিলো। বুলানই ঘর থেকে ঝেড়ে পয়সা আনে। ঘরে ফিরে বাবার হাতে সপাটে চড় খেয়েছিলো পাঁচু।
    (ক্রমশ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন