আব্বু বলত নামাজির দু-কাঁধে নামাজ কালে নেমে আসে দুই ফরিশতা। ডান কাঁধের জন লিপিবদ্ধ করেন যাবতীয় ভাল কাজের খতিয়ান, বাঁ দিকের জন খারাপ কাজের। মানুষ যা করবে তা লিখে রাখার জন্য প্রহরী তার কাছেই রয়েছে, তবু মনে রাখতে হবে ভালোর ক্ষমতা খারাপের থেকে সর্বদা বেশি। কোনো খারাপ কথা লেখার আগে বাঁ কাঁধের জন ডান কাঁধের অনুমতি চান। বান্দা যখন কোনো ভাল কাজের নিয়ত করেন, ডান কাঁধের ফরিশতা সঙ্গে সঙ্গে সেই পুরো সওয়াব লিখে ফেলেন। কিন্তু মন্দ কাজ করা মাত্রই বাঁ কাঁধের ফরিশতা গোনাহ লিখতে পারেন না। তখনও তাঁকে ডান কাঁধের অনুমতির অপেক্ষায় থাকতে হয়। ডান দিক থেকে আওয়াজ ওঠে, ‘এখনই লিখ না বাপু, হয়তো বান্দা অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে আর পরম করুণাময় তক্ষুনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন।’
এটুকু পড়ার পর একটু জিরিয়ে নিন। ভাবতে থাকুন কী পড়লেন? অবশ্যই মনে হবে এটি মুসলিম সমাজে পাপ পুণ্যের হিসাব-বিধির প্রক্রিয়া। ইসলামি ধর্মবিশ্বাস অনুসারে কেরামন কাতেবিন নামের ফেরেশতা বা দেবদূতগণ মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মের বিশদ বিবরণ লিখে রাখে। উপরের বিবরণ কোনো ধর্মীয় আখ্যান বা প্রবন্ধ গ্রন্থের অংশ নয়, এটি গল্পাংশ। একটি সার্থক গল্প সামাজিক বিশ্বাস ও রীতিনীতির পরিচয় পাঠকের মর্মে প্রবেশে বেশি কার্যকারী ভূমিকা নিয়ে থাকে। প্রতিবেশ ও বিশেষ সমাজের বাস্তব নিষ্ঠ রূপায়ণ চিত্রিত করে থাকে। গল্পকাহিনিতে যাপিত জীবনের কোনও ঘটনা বা দিক অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ ও অকপট ভাষায় প্রকাশিত হয়। সমাজের সামাজিক রূপায়ণ ফুটে ওঠে। উদ্ধৃত অংশটি ‘ফরিশতা’ গল্প থেকে নেওয়া। আমরা আরও কয়েকটি গল্পাংশ পরপর পড়ে ফেলি :
১. পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে। পুরোনো কষ্টও কি মনকে বেশি অসাড় করে! সেই অসাড়তা কাটাবার জন্যই কি না জনি না দিলাম এক মরিয়া মোচড়। পিঠের নীচে ঝনঝন করে মোটা কাচ ভাঙার আওয়াজ হল। বাসের জানালা। আমিও অমনি সেই ফাঁক গলে ফুরফুরে ভঙ্গিতে দিব্যি বেরিয়ে এলাম। দুর্গন্ধময় পাঁকের নাগপাশ থেকে মুক্তি পেতেই আমার শরীরটা প্রজাপতির মত ভেসে বেড়াতে লাগল। কালচে হয়ে জমে থাকা জলঝাঁঝি আমার ক্ষতস্থানে নরম হাত বুলিয়ে দিতে থাকল। বুঝলাম, আমাদের বাসটা ব্রিজের রেলিং ভেঙে সোজা বুলেটের মত গেঁথে গেছে খালের ঢেউহীন গভীর মেঝেতে। …
২. বালার মুখে ব্যঙ্গের হাসি, ‘উঠে যাওয়াটা এত সহজ নয়। অপুষ্টিতে গরিবদের নানা অসুখ করবেই, ফলে দেবীর কাছে বাচ্চাকাচ্চা উৎসর্গ করার মানতও চলতে থাকবে। যোগাম্মা আর যোগাম্মার সাপ্লাই অন্তহীন। এদের বিয়ে বারণ, কিন্তু লাইনে নামা বারণ নয়। ফলে অবৈধ ছানাপোনাও জন্মাবে আর ভবিষ্যতের হাজারটা দেবদাসী বড়ো হয়ে উঠবে ওদের মধ্যে। দিস ইস আওয়ার ইন্ডিয়া—ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া।’ …
৩. কাঁসাইয়ের পুব থেকে দক্ষিণে ছেনালের মত মোচড় মারা বাঁকটা দেখলে কানুর কেবল আহিরডিহির চম্পার কথা মনে হয় মাইরি। মানে চম্পার কোমরের নিখুঁত খাঁজের কথা। এক ধাপ খাঁজকাটা চকচকে ঘামে ভেজা চর্বি, কিন্তু কী খোশবো! কাজ-কাম ফেলে রেখে চম্পার কোমরের ভাঁজে কনুই ঢুকিয়ে পাশাপাশি বসে থাকতে ইচ্ছে করত দিনমান, যখন তারা একা একা দেখা করত অবরে-সবরে। মনে হত সামনে কাঁসাইকে সাক্ষী রেখে পেছনে কোনো অদৃশ্য চোঙায় অনবরত বেজে চলেছে রক্ত উথলপাথল করা গান, ‘কোমরিয়া লপালপ ললিপপ লাগেলু।’ ধানের খেত থেকে শুরু করে গামার, শাল, নিম, সব গাছ মাথা নাড়িয়ে তাল ঠুকছে। …
১ থেকে ৩ উদ্ধৃতি যথাক্রমে ‘আত্মজা’, ‘দেবদাসী’ ও ‘বিবাহ’ নামের গল্প থেকে নেওয়া।
স্বীকার করে নিই এই কথন কোনোভাবেই বইয়ের সমালোচনা বা রিভিউ নয়। এর জন্য যে ন্যূনতম যোগ্যতা লাগে সেটির খামতি আছে আমার। তাছাড়া সাহিত্যের ছাত্র, শিক্ষক বা আলোচকও নই। বছরে মাত্র হাতে গোনা কয়েকখানি গল্প পাঠই সম্ভব হয়। একজন আনাড়ি পাঠকের দু-একটি মামুলি কথা এটি। ‘ফরিশতা ও মেয়েরা’ গল্প সংকলন জানি পাঠকপ্রিয় হয়েছে। সেটি পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও ফেসবুকে স্পষ্ট। ১০৫ পৃষ্ঠার ১৩-টি গল্পের কৃশকায় গ্রন্থ। সবচেয়ে বড় গল্পের পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২ এবং সবচেয়ে ছোট ৩-টি গল্প ৫ পৃষ্ঠা করে। গল্পগুলো গ্রন্থবদ্ধ হয়ে মুদ্রণের আগে বিভিন্ন অনলাইন বাংলা পত্রিকা ও ব্লগে প্রকাশিত। মুদ্রণের প্রকাশকাল বইমেলা ২০২০।
গল্পকার প্রতিভা সরকার-এর সঙ্গে প্রথম পরিচয় তাঁর এক নিবন্ধ পড়ে। নিবন্ধটি ‘আরেক রকম’ (১৬-৩০ নভেম্বর ২০১৭) পত্রিকায় প্রকাশিত। পড়ে বিস্মিত ও বিচলিত হই। সেই রচনার কিয়দংশ এরকম :
‘‘যদি বিবাহবিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে পড়ে তাহলে তালাক দেওয়া যাবে ধাপে ধাপে, সময় নিয়ে। আধুনিক মনস্তত্ত্ব বলে এই ধরণের আবেগজাত সমস্যা অনেকসময় সময় দিলে শুধরে যায়। যার জন্য বিবদমান জুড়িকে আধুনিক বিচারক অনেক সময় পুরী মানালিতে কিছু সময় কাটিয়ে আসতে বলেন। সময়ের মত আরোগ্যোকারী আর কেই-বা আছে। প্রথম তালাকের পর তাই তিন মাস হচ্ছে ইদ্দতকাল। তারপর পুনর্মিলন হতে পারে। তার পরেও যদি মনোমালিন্য হয়, তাই তিনবারের আত্ম সমীক্ষা - এই কারণে এই পদ্ধতি তিন তালাক নামে পরিচিত। তালাক ইসলামে কখনোই আদরণীয় প্রথা নয়। একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছালে এর প্রয়োগ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।’’
‘সাম্প্রদায়িকতা ও নারীর জন্য কুম্ভীরাশ্রু’ শিরোনামে চার পৃষ্ঠার এই নিবন্ধ ভাল লাগে। এ-বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য সংরক্ষিত পুনঃপুন প্রকাশিত ন্যারেটিভের সঙ্গে এটি ছিল বেমানান। রাজ্যের বিশাল সংখ্যক নানা কিসিমের ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির মুসলমান সমাজকে এককেন্দ্রিক শহুরে চিন্তার নিজেদের খুপরিতে পুরে চটকদার বিভিন্ন ক্যাপশন লাগিয়ে পরিবেশনই প্রচলিত রীতি। সেই সব নিবন্ধ, প্রবন্ধ ও আখ্যানে কিছু গ্রহণীয় উপাদান থাকলেও সেটিতে উদ্দিষ্ট সমাজের ইতিহাস, ঐতিহ্য, মিথ ও বর্তমান অবস্থান নিয়ে ‘ধরে নিলাম’ মানসিকতাই প্রবল। সংখ্যালঘু সমাজের স্থবিরতা কুসংস্কার ও বিভিন্ন সমস্যার অস্তিত্ব বাস্তব; কিন্তু নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে নাকে রুমাল সাঁটিয়ে উপনিবেশবাদী বুলির বাংলা তরজমায় সেটি থেকে উত্তরণের পথ নির্ণয় অসম্ভব। সে কারণে প্রতিভা সরকারের উক্ত নিবন্ধ আমাকে বিস্মিত ও তাড়িত করে। কিছুটা হলেও করে অনুরাগী।
এবারে আসি বই প্রসঙ্গে। সবগুলো গল্পই পড়েছি। তিন চারটে গল্প দু-বার করে পড়তে হয়েছে অনুধাবন করার জন্য। তবুও সম্যকভাবে রসাস্বাদন যে করতে পেরেছি সেটি জোর দিয়ে বলা যায় না। তবে কাহিনীগুলি পড়ে বেশ ভাল লেগেছে। মনে হল এগুলি তিনি গভীরভাবেই গবেষণা ও ক্ষেত্র সমীক্ষা করেই রচনা করেছেন। দেশের ভিন্ন ভিন্ন মানুষের, নানা জনপদের, বিবিধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের, রকমারি যাপিত জীবনের অসম্ভব নিখুঁত নির্মাণ করেছেন দক্ষ প্রকৌশলীর মত।
তেরোটি গল্পের সবগুলোরই প্লট আলাদা। বৈচিত্র্যের যে আয়োজন তিনি গল্পে চিত্রায়িত করেছেন সেখানে প্রায় গোটা ভারত উপস্থিত। গ্রাম, শহর, জাতি, ধর্ম, ভাষা, উচ্চনীচ, নারীপুরুষ সবকিছুই বর্তমান। প্রত্যেক কাহিনীর ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের মুখে তাদের স্থানীয় ও গোত্রীয় কৌমের জবান বেশ মানানসই লাগে। ভাষা, ইতিহাস, ভূগোল, মিথ, লোকলৌকিকতা মিলেমিশে হয়ে উঠেছে এক আশ্চর্য সৃষ্টি। পরিশ্রম, দেখার চোখ, ইচ্ছেশক্তি এবং সর্বোপরি মানবিক গীত রচনায় তিনি যে দক্ষ শিল্পী সেটি নিশ্চিত।
প্রথমে সেই দুটো গল্পের কথা বলি যা পড়ে বেশ তৃপ্ত। প্রথমটি ১২ পৃষ্ঠার ‘দেবদাসী’। এমনিতেই দেবদাসী নিয়ে কিছুটা জানতাম। কিন্তু গল্পটি পড়ার আগে বিষয়টির গভীর উপলব্ধির জন্য আরতি গঙ্গোপাধ্যায়-এর ‘প্রসঙ্গ দেবদাসী’ প্রবন্ধ-গ্রন্থ পড়ে ফেলি। দেবদাসী গল্পে লেখিকা আদিম এই ভয়ঙ্কর প্রথাকে অবিকল তুলে ধরেছেন মাটির কাছাকাছি বর্ণনায়। গল্পের মাধ্যমেও তিনি খোঁজ করেছেন এই কুপ্রথার উদ্ভব ও বিকাশ এবং টিকে থাকার পরম্পরা। গল্পকে অতিক্রম করে এটি দেশের সামাজিক ইতিহাস, রীতিনীতি, পবিত্র-অপবিত্র, ধর্মীয় প্রথার বাইরের এক বর্ণময় আখ্যান হয়ে উঠেছে। বালার মাকে আবিষ্কার, বালা ও অনির সম্পর্ক, বালার বাংলা শেখার আগ্রহ এবং শেষমেশ অনির কাছে ‘হাউদু, নান্না আম্মা দেভাদাসী’-র অর্থ পরিষ্কার হওয়া সবকিছু মিলে এটি এক সর্বাঙ্গসুন্দর গল্প। পাঠক অনুভূতিতে যদিও এটি অবশ্যই এক কষ্টকর অভিজ্ঞতা।
অন্যটি ‘তেভাগু’। তেভাগু নামটির মধ্যেই তেভাগা শব্দ জড়িয়ে আছে। লেখিকার কথায়, ‘স্কুলে যেত তেভাগু। ক্লাস এইট পাসের পরীক্ষা দিয়েছে। ভূগোল বই পড়ে জেনেছে তাদের এই বান্ধিয়া জঙ্গল গ্রামটা পূর্ব মেদিনীপুরে হলেও, গোপাল আর তার মত জড়াজড়ি করে আছে উড়িষ্যার সীমানার সঙ্গে। বাপ ছিল ভাগচাষী, লাল পাট্টির মাতব্বর। সেই-ই তার নাম রেখেছিল তেভাগু, আর ভাইটার আকালু…।’ এই গল্পে দেশের পতিতা পল্লীতে যৌনকর্মী সংগ্রহের প্রক্রিয়া এবং সেখানকার বিভিন্ন কুশীলবদের চরিত্র চিত্রণ পুরো মাত্রায় উপস্থিত। তেভাগু প্রেমিক গোপালের মাধ্যমে সোনাগাছিতে এসে পড়ে। কিন্তু তার বয়স প্রাপ্তবয়স্কের চেয়ে ছয় মাস কম হওয়ায় আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে। একটি সম্ভাবনা দেখা দেয়, সে কি ফিরে যেতে পারবে তার জন্মভূমিতে? নাকি দেশের নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে পুরুষতন্ত্র ছয় মাস পরে সাবালক তেভাগুকে এই জতুগৃহতেই পুড়িয়ে মরতে বাধ্য করবে! পুরুষতন্ত্রের সেফটি ভাল্ভ কিন্তু নারীর নরককুণ্ড সোনাগাছির এক মেয়ের আইন-কানুন, সামাজিক প্রতিরোধ ও কায়েমি স্বার্থের লড়াইয়ের জটিল বৃত্তান্ত তেভাগু গল্পটি করুণা জাগায়।
‘ফরিশতা’ গল্পে মানুষকে ফরিশতা অর্থাৎ দেবদূত হিসেবে দেখান হয়েছে। তিনি আদতে এক ভিস্তিওয়ালা। তিনি কবরে জল ছেটান এবং মরে যাওয়া ঘুমন্ত মানুষদের তেষ্টা নিবারণে তৎপর। রূপক এবং সঙ্গে ভিন্ন ধর্মীয় নরনারীর ভালবাসার অসামান্য আখ্যান এটি। জীবনের পবিত্র উদ্দেশ্যে জীবনের জয়গানে মুখর ভিস্তিওয়ালা। ‘ফরিশতা-২: নাপাক’ গল্পের মুখ্য চরিত্র রাবিনা। সমাজে কয়েকটি কুপ্রথার কথা এই গল্পে নিরাভরণ করেছেন লেখিকা। মুসলমান সমাজে কুকুর নিয়ে বিড়ম্বনার অন্ত নেই। এটি গ্রামীণ সমাজে প্রবলভাবেই বিদ্যমান। একদিকে রাবিনার কুকুর বাচ্চা টিটু পোষার ইচ্ছে ও ভালবাসা, অন্যদিকে ধার্মিক শ্বশুরের নাপাক কুকুর আখ্যান এবং মাঝখানে রাবিনার স্বামী সাবিরের হুজুরের মুখে শোনা কুকুর পোষার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিড়ম্বনা। সাবিরের নিখাদ প্রেমিক রূপ এবং রাবিনার ভালবাসাকে আগলে রাখার অদম্য স্পৃহা গল্পটিকে শেষতক টানটান করে রাখে। গল্পকার সাবিরের মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেছেন - ‘আব্বারা সব আগের দিনের লোক, তাদের সঙ্গে লড়ে কী হবে! বোঝাতে হবে ভাল করে। বাইক চালাতে চালাতে মাঝে মাঝেই মাথা ঘুরিয়ে কথা বলে সাবির, তার খাড়া নাকের পাশে অবিন্যস্ত ওড়া-উড়ি দেখতে দেখতে রাবিনার তাকে লাগে ভোরের ফরিশতা।…’ পুরো ছবিটি পরিষ্কার হয়ে যায় এই বয়ানে। পরস্পর বিরোধী বিষয়কে ভালবাসায় জারিত করে উপস্থাপন করেছেন তিনি। এখানেই লেখিকার সার্থকতা। ‘ক্ষত’ এবং ‘আত্মজা’ গল্পদুটিও চমকে দেয় আমাদের। এছাড়া পাগলি, বডিগার্ড, মনের বাঘ, জন্মান্তর, বিবাহ, জল ও মরণ প্রভৃতি সবগুলিই ভাষা বিন্যাসে এবং ভালবাসায় পাঠককে স্নাত করায়। শুধু ভালবাসা নয় প্রত্যেকটি গল্পেই সমাজের প্রচলিত ন্যারেটিভকে প্রশ্নবিদ্ধও করে। পাঠকের জন্য নতুন সমাজ ও পৃথিবী গড়ার হাতছানি দিয়ে যায় গল্পগুলি।
গল্পের একজন সামান্য পাঠকের জন্যও এই পাঠ হয়েছে সুখকর। প্রমিত বাংলার পাশাপাশি দেশের ভিন্ন ভিন্ন ভূখণ্ডের মানুষের মৌখিক বুলি ও আচার ব্যবহার জানা সম্ভব হয়েছে। বেশ কিছু এমন শব্দ তিনি ব্যবহার করেছেন যেগুলি সচরাচর শোনা যায়না। যেমন, হেরিংবেরিং, নাং, বারফট্টাই, অবরে-সবরে প্রভৃতি। প্রতিটি গল্পেই লেখিকার কঠোর শ্রম, পরিশীলিত ভাব-ভাবনা এবং মরমী অনুশীলন স্পষ্ট। স্বীকার করি দেবদাসী নিয়ে প্রবন্ধগ্রন্থে যা পড়েছি, তার চেয়ে কোনো অংশে কম জানতে পারিনি দেবদাসী গল্প পাঠে। মনে হয়েছে যেন এক নিটোল প্রবন্ধ পড়ছি। দুটো সাধারণ কথা বলেই শেষ করি। প্রথম, ছোট অথচ বুদ্ধিমান বৈচিত্র্যময় সমাজ সম্পৃক্ত গল্প বেশি বেশি পড়তে এই গ্রন্থটি হয়েছে আমার জন্য উৎসাহ বর্ধক। এজন্য গল্পকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। দ্বিতীয়, আমার বন্ধু বৃত্তে বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী গল্পকার আছেন। ব্যক্তিগতভাবে তাদের প্রতি অনুরোধ তাঁরা তাদের গল্পের যাত্রাপথকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করতে ‘ফরিশতা ও মেয়েরা’ একবার অবশ্যই পড়তে পারেন। শেষতক একটি কথা বলতেই হল। গল্পকার অমর মিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েও বলি, গ্রন্থটি নিয়ে তাঁর উচ্চাঙ্গের ভূমিকা না-পড়ে গল্পগুলির পাঠ নিতে পারলে হয়তোবা আরও বেশি অনাবিষ্কৃত অভিযানের স্বাদ পেতে পারতাম।
ফরিশতা ও মেয়েরা
প্রতিভা সরকার
গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশনা
দাম- ৯০ টাকা
প্রাপ্তিস্থান :
বইটি অনলাইন কেনা যেতে পারে কলেজস্ট্রীট ডট নেট-এ।
বাড়িতে বসে বইটি পেতে হোয়াটসঅ্যাপে বা ফোনে অর্ডার করুন +919330308043 নম্বরে।