নেভাডা ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে প্রত্যাশামত জিতলেন বার্ণী স্যান্ডার্স। ৫০% ভোট গণণা শেষ হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে বার্ণী পেয়েছেন ৪৬.৬% ভোট। তার পরে আছেন প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি যো বাইডেন (১৯.২%)। সাউথ বেন্ড শহরের মেয়র পীট বুডাজিজ পেয়েছেন ১৫.৪% ভোট। সেনেটার এলিজাবেথ ওয়ারেণ পেয়েছেন ১০.৩% ভোট।
আমেরিকার ইলেকশানে আইওয়া আর নিউ হ্যাম্পশায়ারের গুরুত্ব আশ্চর্যজনক ভাবে অত্যন্ত বেশি। কারণ দুই দলেরই প্রাইমারি ইলেকশান শুরু হয় এই রাজ্য দুটো থেকে। যদিও আমরা পুরো প্রসেসটাকেই প্রাইমারি বলছি, কিন্তু আসলে দুই ধরনের উপায়ে মূল নির্বাচনের জন্য প্রার্থী নির্বাচিত করে দুই পার্টি। যেহেতু এই লেখার মূল বিষয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারি, তাই বাকি লেখাতেও শুধু সেইটুকু আলোচনা করা হবে।
সেই আলোচনায় ঢোকার আগে বলে নেওয়া ভালো যে রিপাব্লিকান দলের প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইম্পিচমেন্টে সেনেটে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে যাঁর আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। সেনেটে রিপাব্লিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাহায্যে সেরকম কোনও আলোচনা-বিচার-সাক্ষী ছাড়াই মুক্তি পেয়ে গেছেন। রিপাব্লিকানদের মধ্যে একমাত্র মিট রমনি অন্যদিকে ভোট দিয়েছিলেন। দাবী করেছিলেন যে আরো সাক্ষীদের কথা শোনার প্রয়োজন আছে এবং তার পরে সঠিকভাবে বিচার করা সম্ভব। কিন্তু বাকী কোনও রিপাব্লিকান সেনেটার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যেতে সাহস দেখাননি। কারণ সামনেই তাঁদের মধ্যে অনেককে মিড টার্ম ইলেকশনে যেতে হবে। আর এইমুহুর্তে রিপাব্লিকানদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। সাম্প্রতিক গ্যালাপ পোলে দেখা যাচ্ছে ৯৩% রিপাব্লিকান ট্রাম্পের কাজে খুশি। আমার ধারণা ইলেকশান যত কাছে আসবে, রিপাব্লিকানদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে।
এইবারে আসা যাক সেই দুই প্রক্রিয়ার কথায়। প্রথমটি প্রাইমারি। প্রাইমারিও অনেকরকম হয়। তবু মূলত এটিতে লোকজন এসে ভোট দেয় এবং সেই ভোটের শতাংশের প্রেক্ষিতে ঠিক হয় কে কটি ডেলিগেট (প্রতিনিধি) পাবেন। এগুলি সাধারণত সরকারের দ্বারা পরিচালিত হয়। এর মধ্যে আছে ওপেন প্রাইমারি যেগুলিতে যে কেউ এসে দুই পার্টির প্রার্থীর পক্ষেই ভোট দিতে পারেন। ক্লোজড প্রাইমারিতে শুধুমাত্র যে পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হচ্ছে, সেই পার্টির রেজিস্টার্ড ভোটাররাই ভোট দিতে পারবেন। এছাড়াও রয়েছে পার্টি-রান প্রাইমারি, যেগুলি সরকার নয়, পার্টি নিজেই ভোট পরিচালনা করে। দ্বিতীয়টি হল ককাস। ককাস অনেকটা প্রাইভেট ইভেন্ট, যেগুলি পার্টি বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করে। সেখানে পার্টির রেজিস্টার্ড ভোটাররা এসে নিজের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দেখায়। এই সমর্থন কোথাও হাত তুলে, কোথাও ভোট দিয়ে দেখানো হয়।
মোট ৫৭টি নির্বাচনক্ষেত্রে এই প্রাইমারি হয়ে থাকে। ৫০টি রাজ্য, দেশের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি, ৫টি টেরিটরি (যেগুলি রাজ্য নয়), এবং দেশের বাইরে থাকা আমেরিকানদের একটি আলাদা নির্বাচনক্ষেত্র হিসাবে গণ্য করা হয়। মজার ব্যাপার হল, এর মধ্যে টেরিটরিতে থাকা নাগরিকদের ভোট মূল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গণ্য হয়না। এর মধ্যে তিনটি রাজ্য এবং চারটি টেরিটরিতে ২০২০তে ককাস হচ্ছে।
তার মধ্যে প্রথমটি হয় আইওয়াতে। এইখান থেকেই আমেরিকার সবথেকে বড় ইলেকশানের সূত্রপাত হয়। এইবারে সেখান ডেমোক্র্যাটিক ককাসে গন্ডগোল হয়। দূরে থাকা ডেমোক্র্যাটরাও যাতে ভোট দিতে পারেন সেজন্য একটি অ্যাপের ব্যবহার করা হয়, যেটি সময়মত ঠিকভাবে কাজ করেনি। অনেক কনফিউশান এবং সময় নিয়ে হিসাবের পর দেখা যায় মেয়র পীট বুডাজিজ সবথেকে বেশি সংখ্যক ডেলিগেট পাবেন (১৩ বা ১৪), বার্ণী স্যান্ডার্স পাবেন ১২ বা ১৩জন ডেলিগেট। দুজনের সমতুল্য ডেলিগেট শতাংশের মধ্যে ফারাক মাত্র ০.০০৪%। এইখানে যেন পাঠক মনে না করেন এটি তাঁদের পাওয়া ভোটের মধ্যে পার্থক্য। ভোটে (যেটিকে আমেরিকাতে পপুলার ভোট বলে) কিন্তু বার্ণী স্যান্ডার্স অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। মানে আমেরিকাতে একজন ইলেকশানে বেশি ভোট পেয়েও হারতে পারেন। উদাহরণ: ২০০০ এবং ২০১৬র রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এই কারণেই আমেরিকাকে ডেমোক্র্যাসি না বলে রিপাব্লিক বলা হয়।
এর পর নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রাইমারির আয়োজন করা হয় যেখানে ২৫.৭% পপুলার ভোট পেয়ে বার্ণী জেতেন এবং ৯ জন ডেলিগেট পাবেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পীট বুডাজিজও ৯ জন ডেলিগেট পাবেন।
ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারি ইলেকশানে যে শুধুমাত্র ডেলিগেটের সংখ্যা নিয়েই সমস্যা আছে তা নয়, সেখানে সুপার ডেলিগেট নামক একটি ব্যাপার রয়েছে। ৭৭১ জন ডেলিগেট রয়েছেন যাঁরা সরাসরি নিজেদের ভোট যেকোনও প্রার্থীকে দিতে পারেন। এই ৫৭টি নির্বাচন ক্ষেত্র থেকে মোট ৩৯৭৯ জন ডেলিগেট নিয়ম অনুযায়ী ভোট বা সাপোর্ট দেবেন (প্লেজ্ড ডেলিগেটস)। এইবছর ১৩-১৬ জুলাই উইসকনসিন রাজ্যের মিলোয়াকিতে যখন ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশান হবে, যেখানে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী নির্বাচিত করা হবে রাষ্ট্রপতির জন্য, সেখানে প্রথমে দেখা হবে এই ৩৯৭৯ প্লেজ্ড ডেলিগেট্সদের মধ্যে কে বেশি সাপোর্ট পাচ্ছেন। এর পর দেখা হবে ঐ ৭৭১জন সুপার ডেলিগেটদের জোড়ার পর কে বেশি সাপোর্ট পাচ্ছেন।
আপাতত তিনটে রাজ্যেই দারুন ফল করে এগিয়ে আছেন সেনেটার বার্ণী স্যান্ডার্স। ২০১৬তেও তিনি প্রাইমারি লড়েছিলেন এবং শেষে হিলারি ক্লিন্টন প্রার্থী হন। পরে এই ডেলিগেট সংখ্যা, সুপার ডেলিগেটদের ভূমিকা, বার্ণীর ক্যাম্পেইনকে সাবোটাজ করা ইত্যাদি অনেক বিতর্ক উঠে আসে। এবং অনেকেই দাবী করেন যে অপ্রত্যাশিতভাবে ট্রাম্পের ইলেকশান জেতার পিছনে এই কারণগুলো ছিল অন্যতম। চিত্র পরিচালক মাইকেল মূরের মতে বহু বার্ণী সমর্থক শেষে ভোট দিতে যাননি বা পার্টি লাইন অতিক্রম করে ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে এসেছিলেন। মনে রাখবেন ট্রাম্প কিন্তু বেশ কিছু রাজ্যে খুব সামান্য ভোট বেশি পেয়ে জিতেছিলেন। যেমন মিশিগানে পার্থক্য ছিল ১১ হাজারেরও কম ভোট, যেখানে প্রায় ৪৮ লক্ষ লোক ভোট দিয়েছিলেন। শোনা যায় গত ইলেকশনে প্রায় ১০ কোটি ভোটার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি।
চলুন একটু পরিচয় করে ফেলা যাক এইবারের ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে অংশগ্রহণ করছেন যেসব প্রার্থীরা, তাঁদের সঙ্গে।
সেনেটার বার্ণী স্যান্ডার্স সক্রিয়ভাবে নির্বাচনমূলক রাজনীতিতে রয়েছেন বিগত প্রায় ৫০ বছর ধরে। প্রথমদিকে লিবার্টি ইউনিয়ন দলের হয়ে লড়লেও শীঘ্রই তিনি নিজেকে সফল ভাবে ডেমোক্র্যাটিক-ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে অংশগ্রহণ করলেও, সেখানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিসাবে মূল লড়াইতে জিতে সেনেটে যান। বিগত রাষ্ট্রপতি ইলেকশানে হিলারী ক্লিন্টনের মতন হেভিওয়েট ক্যান্ডিডেটকে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে বড় চ্যালেন্জের মুখে দাঁড় করিয়ে চলে আসেন মূল আলোচনার মধ্যে। নিজেকে ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্ট বলে ঘোষণা করেন তিনি। বিতর্কের বদলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর ফ্রি কলেজ, মেডিকেয়ার ফর অল, মিনিমাম ওয়েজ নিয়ে বক্তব্য প্রতিধ্বনিত হয় বহু সাধারণ লোকেদের মুখে মুখে। তাঁর অকৃত্রিম বক্তৃতা, মূল বিষয়েই টিকে থাকা সকলের নজর কাড়ে। এইবারেও তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়, যার ফল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে একের পর এক প্রাইমারিতে। ভদ্রলোকের বয়স ৭৮ হলেও, তাঁর সবথেকে বড় সমর্থনের ভিত্তি হল কলেজ পড়ুয়ারা।
এর পরেই যাঁর কথা বলবো তিনি হলেন সেনেটার এলিজাবেথ ওয়ারেণ। আইনের এই প্রফেসার বহুদিন হল আমেরিকার মূল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বড় কোম্পানি এবং ব্যান্কগুলোর সিইওদের যথাযথ প্রশ্ন করা এবং মুশকিলে ফেলায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তবে তাঁর চিন্তাভাবনা এবং বার্ণীর বক্তব্যের মধ্যে মিল বহুলাংশে। অনেকেরই মতে ব্যালট বাক্সে ওয়ারেণের উপস্থিতি বার্ণীর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনার ক্ষতি করছে। তৃতীয় স্থান নিয়ে আইওয়াতে কিছুটা ভালো ফল করলেও, বাকী দুই রাজ্যে চতুর্থ স্থান পেয়েছেন এলিজাবেথ ওয়ারেণ। এমনকি আশ্চর্য্যজনক ভাবে ডিবেটে তিনি আক্রমণও করেছেন বার্ণীকে বেশ কিছু বিষয়ে। এঁদের দুজনের মধ্যে বহু মিল থাকলেও, দুজনে পরিবর্তন আনতে চান দুটো ভিন্ন উপায়ে। বার্নী মনে করেন যে পরিবর্তন আসবে মানুষের মধ্য থেকেই যাঁকে তিনি পিপলস' মুভমেন্ট বলেছেন। ওয়ারেণ মনে করেন বর্তমান পদ্ধতির মধ্যে থেকেও পরিবর্তন সম্ভব।
মিশিগান লেকের ধারে ইন্ডিয়ানা রাজ্যের একটি ছোট শহর সাউথ বেন্ড। সেখানকার মেয়র পীট বুডাজিজ। তিনিই প্রথম সমকামী মানুষ যিনি রাষ্ট্রপতির প্রাইমারিতে লড়ছেন। সাউথ বেন্ডে থাকে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল কয়েক মাস আগে। তার মতে পীট লড়ছেন নিজেকে জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে নিয়ে আসার জন্য, রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য নয়। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আইওয়াতে ককাস জেতেন তিনি এবং নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকেন তিনি। নেভাডায় তৃতীয় হয়ে এই মুহুর্তে নিজেকে অন্যতম প্রার্থী হিসাবে প্রতিষ্টিত করতে পেরেছেন তিনি। ডিবেটগুলোতে খুব ভালো পারফর্ম করেন তিনি, যার ফল তিনি পাচ্ছেন প্রাইমারিতে।
এর পরে যাঁর নাম করতেই হয় তিনি হলেন যো বাইডেন। ওবামার উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি। আশা করা হয়েছিল যে তিনি অন্যতম এবং অবিসংবাদী নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। কিন্তু এখনও অবধি সেরকম কোনো লক্ষণ দেখতে পাইনি আমরা। আইওয়াতে চতুর্থ এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারে পঞ্চম স্থান পেয়ে তিনি অনেকটাই পিছিয়ে ছিলেন। নেভাডাতে কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে তাঁর ক্যাম্পেইন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এলিট গ্রুপ যাঁরা পার্টির বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত নেন, যাঁদেরকে পার্টির এস্টাব্লিশমেন্ট বলা হয়, তাঁদের প্রিয় প্রার্থী যো বাইডেন। মূল ধারার মিডিয়াও কিছুটা হলেও তাঁকে বেশি সমর্থন দেখাচ্ছে। ফলতঃ তিনি যে সুপার ডেলিগেট্সদের একটা বড় অংশের সমর্থন পাবেন, এটা বলাই বাহুল্য।
পরের প্রাইমারি সাউথ ক্যারোলাইনাতে। সেখানে মাইনরিটি ভোটারদের সমর্থন পেয়ে জেতার আশায় রয়েছেন বাইডেন। নিজেকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সবথেকে বেশি নির্বাচনযোগ্য হিসাবে প্রচার করছেন তিনি। ডিবেটগুলোতেও তিনি এই দুটো কথাই বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন যে তিনি সবথেকে বেশি নির্বাচনযোগ্য এবং ওবামার উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন। ফলে সাউথ ক্যারোলাইনা বাইডেন ক্যাম্পেইনের কাছে অ্যাসিড টেস্ট। এখানে ভালো করতে না পারলে বাইডেনের দুটো দাবী নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। অন্যদিকে যেহেতু এই রাজ্যটিতে বাইডেনের ভালো করার সম্ভাবনা বেশি, তাই এখানে ওয়ারেণ বার্ণীর বেশি ভোট কাটলে সমস্যায় পড়বে তাঁদের অ্যাজেন্ডা।
সাউথ ক্যারোলাইনা খুব গুরুত্বপূর্ণ পীট বুডাজিজের জন্যও। কারণ সাউথ ক্যারোলাইনাতে খুব একটা ভালো না করলেও তার পর ৩রা মার্চ হবে সুপার টিউজডে। একটা বিশাল সংখ্যক রাজ্যতে একই দিনে প্রাইমারি হবে। সুপার টিউজডেতে মোট ডেলিগেটসের সংখ্যা ১৩৪৪। সাধারণত এর পরেই আন্দাজ পাওয়া যায় যে কে হবেন প্রার্থী। এই সুপার টিউজডেতে কিছু উদারপন্থী এবং বড় রাজ্য যেমন ক্যালিফোর্নিয়া এবং কলোরাডোতে বুডাজিজের ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তাঁকে যেন তেন প্রকারে সাউথ ক্যারোলাইনাতে প্রথম তিন চারজনের মধ্যে থাকতে হবে যাতে সুপার টিউজডেতে সমস্ত উৎসাহ এবং উদ্দেপণার সঙ্গে যেতে পারেন ভোট চাইতে।
মজার ব্যাপার হল রক্ষনশীল সাউথ ক্যারোলাইনা এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও মূল নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা কিছুতেই জিতবে না এই রাজ্যে।
এছাড়াও রয়েছেন এমি ক্লোবাচার। এমি মিনেসোটা রাজ্য থেকে নির্বাচিত সেনেটার এবং মিনেসোটার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কৃষক-মজুর অংশের সদস্য। প্রথম থেকেই নিজেকে মডারেট এবং সেন্ট্রিস্ট দাবী করে এসেছেন, বার্ণী-ওয়ারেণের থেকে আলাদা জায়্গা করেছেন। নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারিতে কিছুটা ভালো করলেও, বাকী দুটি রাজ্যে পঞ্চম স্থান পেয়েছেন। এখন দেখার আর কতদিন লড়াইতে থাকেন তিনি এবং শেষে কোন মধ্যপন্থী প্রার্থীকে সমর্থন (এন্ডর্স) করেন।
আরো একজনের নাম না করলেই নয়। নিউ ইয়র্কের নিজের নামের বিখ্যাত কোম্পানির মালিক মাইকেল ব্লুমবার্গ। একসময় রিপাব্লিকান ছিলেন, পরে ইন্ডিপেন্ডেন্ট হয়ে নিউ ইয়র্কের মেয়র হন তিনি। এখন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রথমেই ৩০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে প্রচার শুরু করেন। ইন্টারনেটে বার্ণীর সমর্থকদের খারাপ ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রচার চালান তিনি। কিন্তু শেষ (এবং ব্লুমবার্গের এখনও অবধি একমাত্র) ডিবেটে এলিজাবেথ ওয়ারেণ একাই ব্লুমবার্গকে মুশকিলে ফেলে দেন বিভিন্ন বিষয়ে। বাকীরাও সুযোগ হাতছাড়া করেন না। নিউ ইয়র্কের প্রাক্তন মেয়ররের কিছু উত্তর ছিল বলে মনে হয়্না। পয়সার জোর ছাড়া রাজনীতিতে সফল হওয়ার জন্য তাঁর যে আর কিছুই নেই, সেটা এখন স্পষ্ট। মাঝখানে এও শোনা যাচ্ছিল যে হিলারী ক্লিন্টনকে উপরাষ্ট্রপতি নিয়ে লড়তে চান তিনি। ফলে এখন দেখার যে ব্লুমবার্গের বিজ্ঞাপন বার্ণীর কতটা ক্ষতি করে আগামী দুই সপ্তাহে, সুপার টিউজডের আগে।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে সবথেকে বামপন্থী বার্ণী এবং সবথেকে দক্ষীনপন্থী ব্লুমবার্গ। দুজনেই নিজেদেরকে সাধারণতঃ ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিসাবে পরিচয় দেন। যদিও দুজনেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে সমর্থন করে এসেছেন। তবে দুজনের মধ্যে একটা বিশাল ফারাক আছে। বার্ণী নিজেকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলেন কারণ তিনি মনে করেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি যথেষ্ট বামপন্থী নয়। আর ব্লুমবার্গ নিজেকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলেন কারণ তিনি মনে করেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বড্ড বামপন্থী।
এই মুহুর্তে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত। এক, বামপন্থী ডেমোক্র্যাট (লেফট-লিবারল)। দুই, মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট (মডারেট, সেন্ট্রিস্ট)। দ্বিতীয় দল প্রথম দলকে সোশালিস্ট বলে এবং ভয় পায় যে আমেরিকায় সোসালিজম নিয়ে যে ভয় রয়েছে, তার ফলে রিপাব্লিকানরা লাভবান হবে। অন্যদিকে প্রথম দল দ্বিতীয় দলকে কর্পোরেট ডেমোক্র্যাট নামে ডাকে, কারণ এই দলের প্রার্থীরা কর্পোরেটদের পয়সায় ক্যাম্পেইন চালায় এবং কিছু কর্পোরেট এদের হয়ে প্রচার করে। এবং প্রথম দল মনে করে যে এই কর্পোরেট সেন্ট্রিস্ট ডেমোক্র্যাটদের জন্যই রিপাব্লিকানদের বাড়বাড়ন্ত। যদিও রিপাব্লিকান পার্টিতেও এইরকম দুই ভাগ ছিল এই কয়েক বছর আগে অবধিও: মডারেট দক্ষীনপন্থী এবং চরম দক্ষীনপন্থী । কিন্তু হাউসের এক প্রাক্তন রিপাব্লিকান স্পীকারের মতে এইমুহুর্তে ওটি ট্রাম্পের পার্টি।
তাহলে প্রশ্ন আসে যে আমেরিকার মতন ধনতান্ত্রিক দেশে বার্নী স্যান্ডার্সের মতন একজন ঘোষিত ডেমোক্র্যাটিক সোসালিস্ট এত সফল হচ্ছেন কী করে? শুধুমাত্র জানুয়ারি মাসেই বার্ণীর ক্যাম্পেইন ২৫ মিলিয়ন ডলার জোগাড় করেছে। অথচ গড় অবদান ১৮.৭২ ডলার। অর্থাৎ, বিশাল সংখ্যক সাধারণ লোকেদের পয়সায় চলছে তাঁর ক্যাম্পেইন।
আগের ইলেকশানে সবাই জানত যে হিলারী জিতবেই। বিশেষ করে উল্টোদিকে যখন ট্রাম্পের মতন ক্যান্ডিডেট। এইবারে একটু অন্যরকম আবহাওয়া। প্রথ্মতঃ সেন্ট্রিস্টদের মধ্যে থেকে, আজকাল যাদের কর্পো-ডেম বলা হচ্ছে, তেমন কোনও ভালো প্রার্থী নেই। বাইডেনের তেমন কিছু বলার নেই। এমি ক্লোবাচার নিজেকে সেন্ট্রিস্ট বলে প্রচার করে করে বাইডেনের একটু ক্ষতিই করেছেন মনে হচ্ছে। মাঝখানে ব্লুমবার্গ এসে যাওয়াতে লেফ্ট লিবারলরা খুব সতর্কিত। এছাড়াও এইবারে ট্রাম্পের জেতার সম্ভাবনা প্রবল। সেক্ষেত্রে লেফ্ট-লিবারলরা চাইছে যে তাদের পেট প্রজেক্টগুলোর কথাও লোকে জানুক। ফ্রী কলেজ, মেডিকেয়ার ফর অল, মিনিমাম ওয়েজ, কর্পোরেটদের ট্যাক্স কেন দেওয়া উচিত এগুলো লোকে শুনুক। বার্ণী প্রার্থী হলে প্রচুর রিপাব্লিকানরাও এগুলোর সম্বন্ধে জানবেন। কিন্তু এইমুহুর্তে তাঁদের মুখ্য সংবাদদাতারা তাদেরকে ইমিগ্রেশান, মেরি ক্রিসমাস, সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ডের চক্করে ভুলিয়ে রাখছে আর সোশালিজম নিয়ে ভয় দেখাচ্ছে ।
অন্যদিকে লেফ্ট লিবারল ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্টদের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা হচ্ছে গ্রীন নিউ ডিলকে বাস্তবায়ন করা। গ্রেট ডিপ্রেশানের পর আমেরিকাকে অর্থনৈতিক মন্দার থেকে তুলে আনতে ততকালীন রাষ্ট্রপতি ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন। যার একটি হল সোশাল সিকিউরিটি, যার ফলে আজকেও একটি বয়সের পর সব আমেরিকান সরকারের কাছ থেকে পেনশান পান। গ্রীন নিউ ডিল ক্যাপিটাল-সরকার-সমাজের মধ্যে একটা নতুন চুক্তি। এর ফলে, বামপন্থীদের মতে, কর্পোরেশান এবং বড়্লোকরা ন্যায্য পরিমাণ কর দেবে যেটা দিয়ে শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতন মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটানো হবে। ন্যূনতম আয় বাড়ানো হবে, যার ফলে সাধারণ মানুষ তাঁর কাজের সঠিক মুল্য পাবেন। তাঁদের মতে আমেরিকার মতন বড়লোক সফল গণতান্ত্রিক দেশে সমস্ত নাগরিকদের ভালো থাকার অধিকার রয়েছে এবং সম্পদের সঠিক বন্টনের মাধ্যমে সমাজের সমস্ত স্তরের লোককে ভালো রাখা সম্ভব। এবং সেই দায়িত্ব সরকারের। তার সাথে সাথে তারা এটাও মনে করে যে আমেরিকার পরবর্তী অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূলে থাকবে ক্লিন এনার্জি টেকনলজি। পৃথিবীর পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন করতে অগ্রগামী ভূমিকে নেওয়ার দায়িত্ব আমেরিকার। এই প্রস্তাবনার খ্সড়া যাঁরা বানিয়েছেন এবং প্রচার করছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন নিউ ইয়র্কের ১৪তম কঙ্গ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট থেকে জিতে আমেরিকার হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের নবীনতম সদস্যা আলেকজান্দ্রা ওকাসিও কোর্টেজ (এওসি)। বার্ণী এবং ওয়ারেণ দুজনেই তাঁকে সমর্থন জানান। এওসি ভোটে দাঁড়ানোর আগে অবধিও একটি রেস্তোরায় ওয়েট্রেসের কাজ করতেন। তিনি জানিয়েছেন যে নিজের স্টুডেন্ট লোন শোধ করেছেন কঙ্গ্রেসের থেকে পাওয়া মাইনে থেকে। স্পষ্টবক্তা এবং সুবক্তা এওসি ইতিমধ্যেই আমেরিকার রাজনীতির মূল ধারায় নিজের স্থান করে নিয়েছেন এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন।
যদিও এই মুহুর্তে গ্রীন নিউ ডীল বা ঐধরনের যেকোনও প্রস্তাবনা আইন হওয়ার কোনই সম্ভবনা নেই, তবুও এর কিছু প্রভাব পড়েছে আমেরিকার মূল ধারার রাজনীতিতে। ২০১৮ সালের মিড টার্ম ইলেকশানে বহু রিপাব্লিকান প্রার্থী হেরে যান ওবামাকেয়ারের বিরুদ্ধে গিয়ে। বর্তমান ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারির মুখ্য প্রার্থীরাও সকলের জন্য স্বাস্থ্য বা ঐধরণের বিভিন্ন প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন। এখন প্রায় সকলেই বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন, যাকে এখন ক্লাইমেট চেন্জ নামে ডাকা হয়, স্বীকার করে নিয়েছেন। স্টুডেন্ট লোন আমেরিকার অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। সেই নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। ফলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যে হাওয়া এবারে বামপন্থীদের দিকে. তিনটে রাজ্যের প্রাইমারিতেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।