এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো

  • বনপলাশীর ট্র্যাজিক বসন্তোৎসব

    অতনু বিশ্বাস
    গপ্পো | ১৭ মার্চ ২০২২ | ১০৬২ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • মূল ছবি


    ছোট্ট স্টেশনটাতে ট্রেন থেকে নামল মিঠু, তার বাবা, আর বাবার বন্ধু অজিতকাকু। মিঠুর বাবা প্রিয়দর্শীর খুব ছোটবেলার বন্ধু এই অজিত। খুব ভাল বন্ধু। অজিতের আবার ফুটবল-অন্ত প্রাণ। ফুটবলের জন্যে মন দিয়ে কোনও চাকরি-বাকরিও করল না ঠিকঠাক। প্রতিমা আন্টির স্কুলের চাকরিটা না থাকলে অজিতকাকুর সংসার কীভাবে চলত, তা নিয়ে বাবা-মার উদ্বেগময় আলোচনা ছেলেবেলা থেকে অনেকবার শুনে এসেছে মিঠু। মিঠুর কিন্তু অজিতকাকুকে খুব পছন্দ। আজ পর্যন্ত যত চকোলেট সে খেয়েছে, তার অর্ধেকের বেশিই যে অজিতকাকুর আনা, সেজন্য অবশ্য নয়।

    গুটিকতক মাত্র লোক নেমেছে ছোট্ট এই স্টেশনটাতে। তার মধ্যেও চেহারায় আর পোশাকে একেবারেই স্বতন্ত্র এই তিনজন। পাশের দোকানে গনগনে আঁচে প্রচুর পরিমাণে দুধের মধ্যে চা ফুটে চলেছে। এক ঘন মিষ্টি গন্ধ। উনুনের ধোঁয়া আর চায়ের ধোঁয়া একাকার। ভাঁড়ে চা খেতে খেতে মিঠু ভাবে সমুদ্রমন্থন নামে দেবতা-দানবের জয়েন্ট প্রোজেক্টটার কথা। যার শেষে অমৃতের কলসী নিয়ে উঠেছিল ধন্বন্তরি। আচ্ছা, সাগর ছেঁচে ওঠানো সেই অমৃতের রেসিপি কি এমনটাই ছিল? স্টেশনের মুখে লোকজনের ইতস্তত আনাগোনা। নিজের মনেই বলে ওঠে মিঠু, “ব্যস্ত হয়ে ওরা টিকিট কেনে,/ ভাঁটির ট্রেনে কেউ বা চড়ে, কেউ বা উজান ট্রেনে।” প্রচুর কবিতা পড়া আর কথায় কথায় সেই কবিতা আর ছড়া আওড়ানো মিঠুর অভ্যাস। ওদিকে বাবা আর অজিতকাকু দোকানির কাছ থেকে বুঝে নিচ্ছে তাদের আজকের অ্যাডভেঞ্চারের পথনির্দেশ।

    এখান থেকে মাইল তিনেক দূরে নাকি নদীর সেই বাঁকটা। ঝিরঝিরে জল, বালি, ছোট ছোট সাদা পাথর, প্রচুর পাখি, ঝকঝকে আকাশ, মুক্ত বাতাস, আর পৃথিবী মাতানো রক্তিম আগুণ-রঙা পলাশের বন। বনপলাশী। অন্তত শ’পাঁচেক পলাশের গাছ নাকি আছে সেখানে। ওদের আজকের দিনটার ঠিকানা সেখানেই। না, ঠিকানা নয়। আজ ওদের হারিয়ে যাওয়ার দিন। মিঠুর মা অফিসের কাজে কলকাতার বাইরে। এমন অবশ্য প্রায়ই হয়। মা কর্পোরেট অফিসের বড় চাকুরে। বাবাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেই বড় হয়েছে মিঠু।

    হঠাৎ করেই ঠিক হল আজকের বেড়ানোর পরিকল্পনাটা। দোলের আগের দিনটাও ছুটি পড়েছে এবার। অজিতকাকু কোত্থেকে শুনে এসেছে এই পলাশবনের কথা। খুব সকালে শিয়ালদা স্টেশন থেকে ট্রেনে ঘণ্টা দুয়েকের পথ এই ছোট্ট অনামিকা স্টেশনখানা। এখান থেকে ভ্যানরিক্সায় যেতে হবে বনপলাশীতে। আসার পথে পইপই করে মিঠুকে পলাশ আর শিমূলের পার্থক্য বোঝাতে বোঝাতে এসেছে অজিত।

    স্টেশন থেকে বেরিয়ে এল ওরা। দু’-চারটে টিমটিমে বিবর্ণ দোকান। এরই মধ্যে একটা সাইকেল সারাবার দোকান বেশ ব্যস্ত। ওদিকে ভ্যানরিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছোট ছেলে। মোটামুটি মিঠুরই বয়সী। অজিতকাকু ওকেই জিজ্ঞেস করলেন, “কী রে, বনপলাশীর নদীর বাঁকে যাবি?” ছেলেটার চোখ দুটো বেশ বড় বড়। বিবর্ণ একটা গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট। কোমরে একটা নীল রঙের গামছা। গোল গোল চোখ করে ওদের ভাল করে দেখল ছেলেটা। বোধহয় বোঝার চেষ্টা করল ওদের সম্মিলিত ওজন। ওকেই তো নিয়ে যেতে হবে তিন মাইল পথ। এখানে ব্যাটারিতে চালানো ভ্যান কি নেই একটাও? ফাল্গুন মাস। গরম কিন্তু বেশ চড়েছে। এ অঞ্চলটাতে গরম তো এমনিতেই বেশি। ছেলেটা কোনও এক অচিন দিকে নির্দেশ করে বলে, “সে তো অনেক দূর। যেতে পারি, তবে পঞ্চাশ টাকা লাগবে।”
    “ঠিক আছে, ঠিক আছে, চল।” বলেই অজিত তড়াক করে লাফিয়ে ভ্যানে চড়ে বসল। ছেলেটা বোধহয় ভেবেছিল শহরের বাবুরা একটু দরদাম করবে। সেটা না হওয়ায় খুশি মনেই সে মাথায় গামছাটা জড়িয়ে নিল।

    ভ্যানে বসে প্রথমে একটু অস্বস্তি হচ্ছিল মিঠুর। কলকাতায় বড় হয়ে ওঠা মিঠু টিভিতে ছাড়া আর কোথাও দেখেনি এতটা ফাঁকা জায়গা, হাওয়া, আলো, একসঙ্গে। প্লেনে সে চড়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু লোকাল ট্রেনের ভিড়ে প্রতি স্টেশনে থামতে থামতে এমন যাত্রার কোনো অভিজ্ঞতা তার ছোট্ট জীবনে ছিল না। শিয়ালদা স্টেশনখানা দেখে অবাক হয় মিঠু। কত বড় স্টেশন। কত ট্রেন। কত লোক। ট্রেনে তার মুখ দিয়ে বেরোতে থাকে একের পর এক ছড়া। তাদের কামরায় বাউল উঠেছিল একজন। বাউলের গানগুলির মধ্যে লালনের গানও ছিল। “লালন বলে, ও মন মাঝি-ভাই/ মাছ ধরার কায়দা-কানুন শিক্ষা কর নাই” শুনেই সেটা বুঝতে পারল মিঠু। জানলার বাইরে মুক্ত প্রকৃতি, আর ভিতরে আবিষ্ট করা সুর আর কথার জাদু।

    অজিত কথায় জমে গেল ভ্যানচালক ছেলেটার সঙ্গে। নাম তার হারু। ইস্কুলে পড়ে বটে, তবে রোজ যেতে পারে না। মিড-ডে মিল থাকা সত্ত্বেও। বাবাকে দিনে তাকে পঞ্চাশ টাকা দিতেই হবে। অম্লানবদনে বলল হারু। তবে কিনা ইস্কুলে যেতে তার খুব ভাল লাগে। বাবা মজুর খাটে। ছোট্ট হারুর একটা ভাই আর দুটো বোন। একটা বোন নাকি আবার হামাগুড়ি দেয়।
    অজিত হারুকে জিজ্ঞেস করে, “এবার পরীক্ষায় অঙ্কে কত পেয়েছিস?”
    “বিরাশি।” হারু প্যাডেল করতে করতে বলে।
    “বা! তুই তো বেশ ভালো পড়াশুনায়।” অজিত মন থেকেই বলে। “জানিস, আমি একবার অঙ্কে মাইনাস পাঁচ পেয়েছিলাম।”
    হারু হেসে ওঠে। মিঠু অবশ্য গল্পটা জানে। অজিতকাকু নাকি একটাও অঙ্ক পারেনি সেবারের হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষায়। আর এমন একটা বোকা-বোকা ভুল করেছিল যে রাগী শুভেন্দু মাস্টারমশাই রেগে মাইনাস পাঁচ দিয়েছিলেন। অনেকটা তাদের ইস্কুলের জয়তী মিসের মত রাগী ছিলেন বোধহয়।

    এঁকেবেঁকে এগোতে থাকে ভ্যানটা। কাঁচা রাস্তা। তবে মাটি বেশ শক্ত আর খানিকটা ঝুরঝুরে। খানিক লালচে। রাস্তার লোকজন তাদের দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে। মিঠু যেমন আজ এসেছে অন্য জগতে, তেমনি ওদের চোখে এরাও অন্য গ্রহের জীব। আজকাল মাঝেমধ্যে সে গ্রহের লোকজন এ তল্লাটে আসে বটে। স্টেশন থেকে দূরে গ্রামের রাস্তায় লোকের সংখ্যা কমে আসে। মিঠু দু’চোখ দিয়ে গিলছে সব। তার চিরচেনা সহস্র গাড়ির ধোঁয়ায় মাখামাখি আর ঝকঝকে শপিং মলের চাকচিক্যময় বিপণির বাইরেও যে এমন আকাশ আর লালচে মাটি, গাছ, পাখি আর খোলা হাওয়ায় মাখামাখি পৃথিবীর অস্তিত্ব আছে, তাতো এমনি করে অনুভব করতে পারেনি সে কোনোদিন।
    একটা বাড়ির সামনেটা শালিখের ঝগড়ার খণ্ড ছবি। বইয়ের পাতায় ছাড়া শালিখ দেখেনি মিঠু। মিঠু সুর করে বলে ওঠে, “শালিখরা সব মিছিমিছি...”। ওর মুখের কথা যেন কেড়ে নেয় হারু। বলে ওঠে, “লাগিয়ে দেবে কিচিমিচি”। বিস্মিত হয় প্রিয়দর্শী। সমবায়ের সামনের উঠোনে ঢেঁকি। মিঠু কখনো ঢেঁকি দেখেনি এর আগে। দেখার কথাও নয়। তবে কোথায় যেন দেখেছিল হাতে আঁকা একখানা ছবি। অজান্তেই তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায় ইস্কুলের নীচু ক্লাসে পড়া ছড়া, “ঢেঁকি পেতে ধান ভানে বুড়ি।” ভ্যানে প্যাডেল করতে করতে হারু সঙ্গে সঙ্গেই বলে ওঠে তার পরের লাইন, “খোলা পেতে ভাজে খই মুড়ি।” তাল পায় মিঠু। মজা পায় অজিত। আর আশ্চর্য হয় প্রিয়দর্শী। হারুকে প্রথম থেকেই অন্যরকম লেগেছে তার। উজ্জ্বল। প্রাণোচ্ছ্বল। একটা অশ্বত্থ গাছ থেকে হঠাৎ উড়ে গেল একঝাঁক টিয়া। গাছের ডালে কাঠবিড়ালি। মিঠু বলে ওঠে, “কাঠবিড়ালি! তুমি আমার ছোড়দি হবে? বৌদি হবে? হু।” হারু কিন্তু বলতে ভুল করে না, “রাঙা দিদি? তবে একটা পেয়ারা দাও না! উঃ!” নিখুঁত ভাবে সঙ্গত দিয়ে চলেছে সে। এটা নিশ্চয়ই খুব সহজ নয় এই প্রত্যন্ত গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের খেটে খাওয়া শিশুর পক্ষে। হারুও খুব মজা পেয়েছে আজ। এক বাড়ির উঠোনের এক পাশে মস্ত বড় চাকা। “গোরুর গাড়ির চাকা না?” বলে উঠল অজিত। গোরুর গাড়ি কক্ষনো দেখেনি মিঠু। তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে চিরচেনা পঙক্তি, “কুমোর-পাড়ার গোরুর গাড়ি”। একটু থামে। হারুকে একটু সুযোগ দেওয়ার জন্যই। সবাই যখন হারুর মুখে পরের লাইনটা শুনবে বলে অপেক্ষা করছে, সে বলে ওঠে “আজকাল আর তো গোরুর গাড়িই নাই। আর এটা তো বংশীবদনের গাড়িও নয়। ভোলাদাদার গাড়ি। আর আমাদের এদিকে কোন কুমোর-পাড়াও নাই।” অবাক হয় প্রিয়দর্শী। তার বুকের ভেতরটা মুচড়ে ওঠে। মিঠুর বয়সী বা কাছাকাছি বয়সের কাউকে জীবনধারণের বেয়ারা প্রয়োজনে এ ধরণের কায়িক শ্রমের কাজ করতে দেখলেই মন খারাপ হয় প্রিয়দর্শীর। তার পিতৃসত্ত্বা মিঠুকে ছাড়িয়ে ব্যপ্ত হয়ে ওঠে।

    হাটের পাশ দিয়ে চলেছে তারা। লোকজনের আনাগোনা, বিকিকিনির মেলা। “দাঁড়া দাঁড়া, একটু ঘোল খেয়ে নেওয়া যাক এখান থেকে।” অজিতকাকু দাঁড় করায় হারুকে। ঘোলটা মিঠুদের ইস্কুলের পাশের রামলালের দোকানের লস্যির মত অতটা সুস্বাদু নয়। জিলিপিটা কিন্তু দুর্দান্ত। হারুও খায় তৃপ্তি করে। মিঠু খুঁটিয়ে দেখে গ্রামের হাটকে। কল্পনার সঙ্গে পরতে পরতে মিলিয়ে। নগর কলকাতার ঝাঁ চকচকে মলের সঙ্গে তুলনা করে নিশ্চয়ই। জায়গাটার নাম বক্সীগঞ্জ কিনা তাও জানে না মিঠু। কিংবা হাট যেখানে বসে তারই নাম হয়ত বক্সীগঞ্জ, কে জানে! উচ্ছে-বেগুন-পটল-মুলোর মত তরি-তরকারির পসরা চোখে পড়ছে বটে। অত মোটামোটা সজনে ডাঁটা সে দেখেনি কক্ষনো। কিন্তু অন্ধ কানাই কোথায়?

    কাল দোল। রঙের পসরা নিয়ে বিক্রি করতে বসেছে একজন। অজিত জিজ্ঞেস করে হারুকে, “কীরে, দোল খেলিস না তোরা?”
    বড় শীর্ণ হারুর উত্তর। “আবির আর রঙের অনেক দাম, বাবু। একটা পিচকিরিই তো আট-দশ টাকা হবে। অত টাকা কোথায় পাবো?”

    দারিদ্র্যকে ঘাঁটানো ঠিক নয়। জীবনের অভিজ্ঞতায় শিখেছে প্রিয়দর্শী। একথা জানে অজিতও। প্রিয়দর্শীর বুকের মধ্যে কোথাও একটা বেদনার সুর বাজে। সন্তানের বয়সী একটা বাচ্চা এই রোদে কষ্ট করে তাদের বয়ে নিয়ে চলেছে এটা মানতে বেশ কষ্ট হচ্ছে তার। কিন্তু এটাই জীবন। এটাই বাস্তব। এটাই সভ্যতা।

    লোকালয় ছাড়িয়ে এবার ফাঁকা জায়গা। এ রাস্তায় লোকজন খুবই কম। সামনে চাষের জমি। জমির সীমানা ভাগ করা হয়েছে আল তুলে। অজিত সেটা দেখিয়ে বুঝিয়ে দিল মিঠুকে। মিঠু সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে, “চাষী ক্ষেতের সীমানা দেয়/ উঁচু করে আল তুলে”। বেশ কঠিন কবিতা। হারু যে এটার পরের লাইন বলতে পারে তা ভাবতেই পারেনি প্রিয়দর্শী। সে কিন্তু বলে ওঠে, “নদীতে জল কানায় কানায়,/ ডিঙি চলে পাল তুলে।” বিস্ময়, বিস্ময়!

    সরু রাস্তাটা একটা বাঁক নিতেই সামনে দিগন্ত প্রসারিত খোলা আকাশ। আর তাতে যেন আগুন ধরেছে। পলাশের রঙে। একেই তো বলে বসন্তোৎসব। শয়ে শয়ে পলাশ আর তার লাল ফুলে রাঙা হয়ে আছে পৃথিবী। লাল বেনারসিতে পৃথিবী যেন বিয়ের কনে। প্রিয়দর্শীর চোখে-মুখে মুগ্ধতা ঝরে পড়ে। খানিক দূরে ঝিরঝিরে নদীটা বয়ে চলেছে। জল কম, কিন্তু যেটুকু আছে তা একেবারে কাঁচের মত স্বচ্ছ। নদীর ওপারে মাঠ আর মাঠ। খানিকটা হলদেটে সবুজ। খানিকটা লাল মাটি। বড্ড বেশি পরিষ্কার আর চকচকে আকাশটা। মাটির সঙ্গে মিশেছে অনেক দূরে কোথাও। খুব বেশি লোক এখনো খোঁজ পায়নি এই অপার্থিব জায়গাটার। এখনো তাই নদীটা তিরতিরে, পলাশে আগুন, আর বাতাসে এমন স্বচ্ছতা। অজিত যেন উচ্ছ্বাসে শিশুতে পরিণত হয়েছে। দু’-হাত প্রসারিত করে চোখ বুজে শ্বাস নিচ্ছে ঘন করে। চোখ চিকচিক করছে মিঠুর। পলাশের লাল আভা যেন প্রতিবিম্বিত হচ্ছে তার আনন্দঘন মুখে। ভ্যান থেকে নেমে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট বের করে হারুর হাতে দিয়ে দেয় প্রিয়দর্শী। ক্লান্ত হারু সেটা ঢুকিয়ে দেয় তার হাফ-প্যান্টের পকেটে। মাথার গামছা খুলে ঘাম মোছে। অজিত হঠাৎ ফেরে তার দিকে। পকেট থেকে কুড়ি টাকার একটা নোট বার করে হারুকে বলে, “এই নে, কাল দোল খেলিস।”

    হারু খানিক থমকে যায়। একবার অজিতের মুখের দিকে তাকায়, একবার প্রিয়দর্শীর দিকে। অজিতের মুখে স্মিত হাসি, চোখে নীরব প্রশ্রয়। প্রিয়দর্শীর চোখে শান্ত স্নিগ্ধতা। হারু ইতস্তত করে। তারপর টাকাটা নেয়। হয়ত অজিতের দৃষ্টির প্রশ্রয়ের প্রভাবেই। জিজ্ঞেস করে, “পুরোটা?” মাথা নাড়ে অজিত।
    হারু বলে, “পঞ্চাশ টাকাটা বাবাকে দেব। দিনে পঞ্চাশ টাকা না দিতে পারলে বাবা খুব পেটায়। আর এই কুড়ি টাকায় কাল আমার দোল খেলা হয়ে যাবে।”
    বলেই মুহূর্তের মধ্যে তড়াক করে ভ্যানটা ঘুরিয়ে নেয় একশ আশি ডিগ্রি। দ্রুত প্যাডেল করতে থাকে ফেরার পথে। কুড়িটা টাকার দাম তার কাছে যেন রাজার ভাণ্ডারের সমান। অজিতের মুখে স্নিগ্ধ হাসি। মিঠু ততক্ষণে অবাক বিস্ময়ে পলাশবনের সেই অপার্থিব প্রকৃতির রূপ দেখতে ব্যস্ত। প্রিয়দর্শী পাশ থেকে এক ঝলক দেখল হারুর মুখ। পরম আনন্দে উদ্ভাসিত এক শিশুমুখ। ওই পলাশের মতই প্রস্ফুটিত। মিঠু না হারু -- কার চোখে এখন বেশি আনন্দের অভিব্যক্তি তা বলা সত্যিই কঠিন।

    প্রিয়দর্শীর বুকটা কিন্তু আবারও মোচড় দিয়ে ওঠে। হারুর ওই আনন্দিত চোখের থেকে বেশি ট্র্যাজিক কিছু সে তার জীবনে দেখেনি কখনো!



    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ১৭ মার্চ ২০২২ | ১০৬২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন