এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • ক্যালিডোস্কোপে দেখি - মন বসানো

    অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ১৮ মে ২০২৪ | ১৩৫৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়



    কুচবিহারে সবচেয়ে আনন্দের স্মৃতি ছিল বিভিন্ন মেলায় যাওয়ার। প্রত্যেক মেলাতেই কিছু না কিছু খেলনা কেনা হত। একবার কর্কের ছিপির গুলি ছোঁড়ার একটা এয়ারগান কেনা হল। ঠিক মত ব্যবহার করতে না পারলে আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকত। তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় হিসাবে এই ধরণের খেলনাগুলোয় আমার অগ্রাধিকার থাকত। আমার পরেই মেজভাইও প্রায় সমান সমান খেলার সু্যোগ পেত। সমস্যা হত সবচেয়ে ছোটটিকে নিয়ে। তাকে কি করে আমাদের সমান যোগ্যতার ভাবা যায়! অথচ, ঠিক সেইটিই তার দাবি। এবং, অবশেষে সমঝোতা করতেই হত। তা না হলে তিনজনেরই ক্ষতি।

    এই রকমই এক মেলায় গিয়ে কিনেছিলাম তিন আয়নাভরা নলের ক্যালিডোস্কোপ। খেলনাটা একটু করে ঘোরালেই তার ভিতরের অপূর্ব নক্সাদার ছবিটা টুক করে পাল্টে যায়, ক্রমাগত পাল্টে যেতে থাকে। পুরানো ছবি আর ফিরত না। জীবনের ক্যালিডোস্কোপেও ফেরে না। নানা টুকরো ছবির গড়ে ওঠা নকশায় পার হয়ে আসা জীবনকে দেখে নিই, যতটা পারি, যতটা মনে পড়ে।

    দমদম ক্যান্টনমেন্টের জীবনে সবচেয়ে আনন্দের ছিল দত্তপুকুরে মামাবাড়ি বেড়াতে যাওয়া। বেশির ভাগ সময় মায়ের সাথে আমরা তিন ভাই, কখনও কখনও বাবাও থাকত সাথে। মাত্রই কয়েকটা স্টেশান, কিন্তু আমার মনে হত, চলেছি ত চলেইছি। সেই যাত্রার যে কয়েকটি ছবি মনে পড়ে, গাড়ি ফাঁকা হোক কি ভীড়, মা সবচেয়ে ছোট ভাইটিকে কোলে নিয়ে বসে আছে। মনে হয় সীট ফাঁকা না থাকলে কেউ না কেউ উঠে গিয়ে মাকে জায়গা ছেড়ে দিতেন। আমরা বড় আর মেজ দুই ভাই দুই সারি সীটের মাঝখান দিয়ে জানালার পাশে চলে যেতাম। বসে থাকা যাত্রীরা জায়গা করে দিতেন। বিনিময়ে তাদের কেউ না কেউ কথাবার্তা শুরু করে দিতেন। আমাদের কাছে কেউ অপরিচিত ছিলেন না। ‘স্ট্রেঞ্জার’-ধারণাটির সাথে আমাদের বা আমাদের অভিভাবকদের তখনও পরিচয় ঘটেনি। বিপরীতে যেই বাগধারাগুলিকে আমি শৈশবের দূরতম বিন্দুটি পর্যন্ত দেখতে পাই, তার একটি হচ্ছে, বসুধৈব কুটুম্বকম, এই দুনিয়ার সবাই আমার আত্মীয়। সহযাত্রীদের সাথে গল্প করতে করতে, মানে তাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে, একটা-দুটো ছড়া শোনাতে শোনাতে দত্তপুকুর স্টেশান এসে যেত। ট্রেন থেকে নেমে স্টেশানের বাইরে এসে যেমন দরকার, একটি বা দুটি রিক্সায় সওয়ার হয়ে যেতাম। স্টেশনের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে আমরা একটি আধা-শহর, আধা-গ্রাম জীবনের দিকে এগিয়ে যেতাম। পরবর্তীকালে পরিচিত হওয়া কল্পবিজ্ঞানের ধারণায় যেন বা একটি ছবির ভিতর দিয়ে একটু অন্য রকমের একটি জগতে ঢুকে যাওয়া। তারপর কয়েকটি দিন আনন্দের জোয়ারে কাটিয়ে আবার রিক্সা-ট্রেন, নিজের পাড়া, রোজকার জগৎ।

    উত্তরবঙ্গে কয়েকটি সপ্তাহ কাটিয়ে বুঝে গেলাম এইবারে এক সম্পূর্ণ আলাদা দুনিয়ায় এসে হাজির হয়েছি। এবং এখান থেকে আর আগের জগতে ফিরে যাওয়ার কথা বড়োরা কেউ ভাবছে না। মন বসাতে সময় লেগেছিল। তারপর একটু একটু করে সেই নতুন জগৎ আমায় ঘিরে নিল।

    আমাদের পাশের বাড়িতে একটি চমৎকার কুল গাছ ছিল। দুই বাড়ির মাঝে যে বেড়া ছিল, বাড়ির বাচ্চাদের সুকীর্তির ফলে মাঝে মাঝেই সেটার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা বলে কিছু থাকত না। একদিন বেড়ার ফাঁক গলে ওপারে গিয়ে দাঁড়ালাম। ফলভরা কুল গাছ। গাছের সামনে মানুষ-জন। আমায় যে প্রশ্ন করা হল আমি তার অর্থ বুঝলেও নিশ্চিত হতে পারলাম না, চুপ করে থাকলাম। তারা আর আমায় বিব্রত না করে আঁজলা ভরে কুল দিয়ে দিল। আমি বাড়ি ফিরে এসে ঠাকুমার কাছে হাজির হতেই ঠাকুমা বলল
    – হাতে কি আনছ, কুল?
    – মনে ত হয়। কিন্তু, ওরা বলল বড়ই।
    ঠাকুমা একগাল হেসে বলল,
    – একঅই কথা।
    বুঝতে পারলাম না ‘বড়ই’ শব্দটা ঠাকুমার আগেই জানা ছিল কি না। নাকি প্রতিবেশীদের সাথে গপ্পো-গাছা করার সময় জেনে নিয়েছিল। কিন্তু আমি শব্দটা শিখে গেলাম।

    একদিন ঠাকুমার সাথে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে হাজির হলাম এক পাড়ায়। সমস্ত বাড়িগুলি মাটির উঁচু ভিতের উপর টালির চাল মাথায় ধরা মাটির দেয়ালে গড়া। আমার প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতার সেই ভিতে থাক কেটে বানানো সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে ঠাকুমা গল্প জুড়ে বসল। আমার জন্য মুড়ি এল। ঠাকুমা এবং সমবেত মহিলারা আসর জমালেন পান-খয়ের-সুপারির। কিন্তু সেই সুপারি আমাদের বাড়িতে দেখা শুকনো সুপারি নয়। কাঁচা সুপারি। আর তাকে সুপারি বলেও না তারা, বলে – গুয়া। এক বিশেষ গন্ধ আছে তার। ছোটদের খেতে নেই তবে আমি চাইলে এই এত্তটুকু এক কুচি মুখে নিয়ে দেখতে পারি, রস গেলা চলবে না। আমি একবার দাঁতে কেটে আর মুখে রাখার উৎসাহ পাইনি। সেদিনের সেই আড্ডায় অংশ নেওয়া মহিলারা বাংলা ভাষাতেই গল্প করেছিলেন, কিন্তু ঠাকুমার একেবারে গা ঘেঁষে বসেও সেই সব আলাপের বেশির ভাগ আমি বুঝতে পারিনি, বেশ কিছু অচেনা শব্দ ছিল আর চেনা কথারও সুর অচেনা ছিল।

    আস্তে আস্তে এই রকমের অনেক শব্দের সাথে পরিচয় ঘটে গিয়েছিল যাদের অনেককেই আজ আর মনে পড়ে না। উত্তরবঙ্গ ছেড়ে আসার পর আমার জীবনচর্যা থেকে এরা হারিয়ে গিয়েছে। বছর দশেক আগে সেই সময়ে অনলাইন লেখকদের জমজমাট সাহিত্য আড্ডার সমাবেশ ‘সচলায়তন’-এ, জনাব আব্দুল্লাহ এ.এম.-এর পোস্ট “আমাদের ভোটবর্মী ঋণ”-এ এই শব্দদের অনেককে ফিরে পেয়েছিলাম। অনেক কৃতজ্ঞতা তাঁকে। এই লেখাটির মধ্যে কোচদের থেকে আসা শব্দগুলিকে পড়ে মনে হয়েছিল পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে গেল।

    ঠাকুমাও হয়ত এই উত্তরবঙ্গের জীবনে ফিরে পেয়েছিলেন পুরনো বন্ধুকে, তাঁর আবাল্য পরিচিত ভাষাকে। বহুকাল বাদে তিনি যেন কথা বলার স্ফুর্তি খুঁজে পেয়েছিলেন। এমনিতে আমার বাবা এবং ঠাকুমা বেশী কথা বলার মানুষ ছিলেন না। কিন্তু কোচবিহার বসবাসের ঐ তিন বছরে ঠাকুমাকে তার চারপাশের মানুষদের সাথে অনেক বেশী গল্প করতে দেখেছি।

    এমন হতে পারে যে সেখানে তিনি বেশ কিছু মানুষ পেয়েছিলেন যাঁদের সাথে তাঁর প্রাক-উদ্বাস্তুজীবনের মানুষদের জীবনচর্যার নানা মিল ছিল। আত্মীয়তার একটা টান অনুভব করেছিলেন তিনি। আর সেই টানের মধ্যে ভাষার টান-ও হয়ত একটা বড় ভূমিকা নিয়েছিল।

    টান এক মজার অনুভূতি। যে তিন বছর উত্তরবঙ্গে ছিলাম, যখন তখন ভাবতাম কবে আমাদের দমদম ক্যান্টনমেন্টের ভাড়াবাড়ির ঘরে ফিরব। আর উত্তরবঙ্গ ছেড়ে আসার কয়েকবছর পর থেকে কি যে এক চোরাটান ছেয়ে থেকে অস্তিত্ব জুড়ে – সেই তোর্সাতীর-এর জন্য!

    অরণ্যষষ্ঠীর সকালে মা, আরো প্রতিবেশী কাকি-পিসী-মাসীরা দলবেঁধে নাইতে যেত তোর্সা নদীতে। সাথে নূতন কেনা তালপাতার পাখা, নানা রকম গোটা ফল, দুর্বা। আমি আর মেজভাইও যেতাম সাথে। আমরা জলে নামতাম না। মা-মাসীরা সবাই নামত। স্মৃতিজলে নানা ছবি থেকে থেকে ভেসে যায়, খুঁটিনাটি ডুবে যায় হামেশাই। তাই নিশ্চিত করে বলবার দাবি নেই কোন। কেউ কেউ স্নান করার সময়, না কি স্নান শেষে, গোটা আম, হয়ত অন্য ফলও, ছুঁড়ে দিত তোর্সার জলে। আমাদের-ই বয়সী কিছু দামাল ছেলে যারা ঐ সময় সর্বক্ষণ জলেই রয়েছে, ঝাঁপিয়ে ডুব দিয়ে তুলে নিত সেই সব ফল। নদীর সন্তান তারা, নদীতে উৎসর্গের ফলে তাদেরই অধিকার।

    স্নান সেরে ঘরে ফিরে মা এক এক করে, সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের তিন ভাইয়ের মাথায়, গায়ে ভেজা পাখা দিয়ে বাতাস করে দিত। সে পাখা ধরারও রীতি ছিল। ডাঁটিতে ধরা নয়। পাখা যেন থালা, তাতে ধান, দুর্বা আর গোটা গোটা ফলেরা বসে আছে। মা এক হাতে আঙ্গুলের চাপে সেই ঢেউখেলানো থালাকে ধারণ করে আছে নীচে থেকে, আরেক হাত রেখেছে ফলেদের উপরে যাতে তারা গড়িয়ে না যায়। তারপর সেই থালা উঠছে, নামছে, উঠছে, নামছে, আর বারি-বিন্দু-সিঞ্চিত আশীর্বাদী বাতাস ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের শরীরে, মননে, শুদ্ধ হয়ে উঠছে তার সন্তানেরা, পূর্ণ হয়ে উঠছে। এই ছবি কি ঠিক এই রকম-ই ছিল? কি এসে যায়! আমার মনে এ ছবি এ ভাবেই আঁকা আছে। সকল আশীর্বাদ-এ আমাদের ভুবন ভরিয়ে দিয়ে জীবন নদীর পাড় ছেড়ে মা চলে গেছে একদিন। আমার কোন ঈশ্বর নেই, কোন প্রার্থনা নেই। শুধু আকাঙ্ক্ষা আছে, মা’র হাতের ঐ ঠান্ডা বাতাস যেন আমায় ঘিরে রাখে, যতদিন আমার স্মৃতি থাকে, যতদিন চেতনা থাকে। যেন শুনতে পাই, প্রায় নিজের ভিতর, নিজের অন্তরাত্মাকে শুনিয়ে আমাদের জন্য বিড়বিড় করছে, ‘বাঁইচ্যা থাকো, বড় হও, মানুষ হও’। বেঁচে আছি, বড় হতে হতে বুড়ো হয়ে আজকের যুগের মানুষের গড় আয়ুর থেকে এক দশকেরও কম দূরত্বে এসে গেছি। শুধু, কতটুকু যে মানুষ হতে পারলাম!

    কুচবিহারে আমাদের জীবন আজকের প্রেক্ষিতে বিচিত্র সব, ...

    বাকিটুকু দুই মলাটের ভিতর। চলে আসুন গুরুচণ্ডা৯-র স্টলে সামনের বইমেলায়।







    ক্রমশ...




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৮ মে ২০২৪ | ১৩৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Prativa Sarker | ১৮ মে ২০২৪ ১৪:৩৪531910
  • খুব ভালো লাগছে। উত্তরবঙ্গ ঠিক এইরকমই। এখনও অনেকটা এইরকমই আছে। নাটাই ব্রত আমিও দেখেছি। মানসাইতে সেই কথা লিখেছি। সত্যি, আর কোথাও দেখিনি কিন্তু।
  • প্রিয়জিৎ ঘোষ | 2402:3a80:4114:c406:e555:3a36:106f:***:*** | ১৮ মে ২০২৪ ১৫:১৩531911
  • গুরুচণ্ডাঌ'র লেখাপত্তর আমার চোখের সামনে একটা নতুন জগৎ খুলে দিয়েছে ৷ আমি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি !
  • যদুবাবু | ১৮ মে ২০২৪ ১৮:১০531913
  • খুব ভালো লাগছে। তোমার লেখার আশ্চর্য মেলানকলি বেশ অনেকক্ষণ থেকে যায়। 
     
    আসলে এইসব পড়ে বিভিন্ন হারিয়ে যাওয়া মানুষের জন্য, জিনিসের জন্য মন কেমন করে।
     
    অবশ্য এই মেলানকলি অবশ্যম্ভাবী, হয়তো ভালোও। আমার এক বান্ধবী আমাকে একদিন বলেছিল, sadness brings clarity! মাঝে মাঝে মনে পড়ে। 
  • kk | 172.56.***.*** | ১৮ মে ২০২৪ ১৮:২৩531914
  • মেলানকলি নিয়ে যদুবাবুর সাথে একমত। একটা কোমল বিষন্নতা লেখার লাইনগুলো থেকে এসে মনের মধ্যে ছেয়ে যায়। এছাড়াও এই লেখাটা পড়ে আমার কেমন একটা চালচিত্রের কথা মনে হলো। অনেক কিছু আঁকা, অনেক স্মৃতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি, আবেগ, কিন্তু সাধারণ দর্শক সবসময় তা দেখার কথা মনে রাখেনা। বেশির ভাগ মানুষের চোখে জীবনের 'প্রতিমা'গুলোই চোখে পড়ে, কিম্বা ঢাকের আওয়াজ কানে আসে। ধুনোর গন্ধ, মাইকের গান। সেগুলোই প্রধান জায়গা নেয়। আমি চালচিত্র দেখতে চাই, কলাবৌকে দেখতে চাই, মাটিতে নামানো চার থাক প্রদীপের পিলসুজ দেখতে চাই। এইরকম লেখা সেগুলো দেখায়। এই সিরিজটা শুরু হয়ে খুব ভালো হয়েছে।
  • অভিজিৎ চক্রবর্তী। | 103.24.***.*** | ১৮ মে ২০২৪ ১৯:২৮531916
  • গোগ্রাসে খাওয়ার মত এই অনন্য স্মৃতি চারণ এক নিশ্বাসে পড়ে ফেল্লাম। এই অনুভূতি ব্যাখ্যার অতীত। 
    যাক দাদার স্নেহ মিশ্রিত নির্দেশ ( অনেক টা সেই বিধি সম্মত নির্দেশীকরণ করে ফেলেছি, না মানার প্রবণতা ই বেশি, খেসারত কাকে বলে তা মালুম হয়ে গেল।) মান্যতা দিয়ে এই লেখার সাথে দু একটা স্মৃতি র অস্পষ্টতা যোগ করি। হয়ত তখন সমাজ সরল ছিল, এই ভাবনা জাবর কাটার মত নিয়ে আসে মনকে ।বাবার অফিসের মঞ্জুলাল এর উপস্থিতি। সে ছিল বাবার অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। জীবনের সেই অংশে শ্রেনি বলতে স্কুল কক্ষের শ্রেণি বুঝতাম, সমাজের স্তরবিন্যাস এর শ্রেণিগত ধারণা পরিবারের বড়দের আদবকায়দা থেকে বোধের মধ্যে আসে নি। এই মনজুলাল ছিল আমাদের মুশকিল আসান। বিশেষ করে ছোট ভাইয়ের আদিষ্ট আলাদিনের
    জিন। এর কথা কোন এক সময় আসতে পারে। বলে শেষ করা যাবে না। শুধু বলি, কুচবিহার ছেড়ে কাঁচড়াপাড়া বসবাস কালে মনজুলাল নিজ খরচে কুচবিহার থেকে দেখা করতে এসেছিল আমাদের জন্য। আর একটি স্মৃতি লটকা ফল। হুরমুড়িয়ে - - -আর একটি সেই প্রথম দেখা মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন ও তার জন্য বিশাল জাল সৃষ্টি র শিল্পকলার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা অর্জন। কত রঙ্গিন কাঁচ ঘুরে ঘুরে আসছে। 
     
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:7858:ea03:9b0d:***:*** | ১৮ মে ২০২৪ ১৯:৩২531917
  • আগেরগুলোর মতো এই পর্বটাও ভীষন ভালো লেগেছে। ক্যালেইডোস্কোপ ছোটবেলায় আমারও খুব প্রিয় ছিল। বারবার ঘুরিয়ে বোঝার চেষ্টা করতাম কিভাবে প্যাটার্নগুলো তৈরি হচ্ছে, দুয়েকবার খাতাতেও আঁকার চেষ্টা করতাম। 
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ১৮ মে ২০২৪ ২০:৫৩531920
  • খুব ভালো লাগলো এবারের পর্বটাও। ছোটবেলায় দেখা বাঁদর নাচ, (ভালুক খুব অল্প,  দুবার দেখেছি), বহুরূপী মনে পরে গেল। 
     
    পুরানো ছবি আর ফিরত না। জীবনের ক্যালিডোস্কোপেও ফেরে না - এই লাইনটা ভীষন ভালো ছুঁয়ে গেল। 
     
    কেকে আর যদুবাবু যেটা ইতিমধ্যে উল্লেখ করেছেন, একটা মেলানকলি আবছা চাদর পেতে রেখেছে গোটা লেখা জুড়ে।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১৮ মে ২০২৪ ২৩:৫১531930
  • প্রতিভাদি, প্রিয়জিৎ, যদুবাবু, কেকে, অভিজিৎ, ডিসি, রমিত 
    মন্তব্য করা আর ভালো লাগা জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।

    প্রতিভাদি, মানসাইতে নাটাই ব্রতর কথা খুব সুন্দর করে বড় মায়া নিয়ে লিখেছিলে তুমি। 

    প্রিয়জিৎ, আশা করি আপনার বিস্ময় আপনাকে এই নতুন জগৎটিতে লেখালেখির জন্য ইচ্ছুক করে তুলবে।

    যদুবাবু, তোমার বান্ধবীর কথাটির সাথে পূর্ণ সহমত।

    কেকে, আমাদের বিভিন্ন পোস্টে তোমার মন্তব্য গুলি প্রসঙ্গের উল্লেখ-সহ জড়ো করে আনলে একটি চমৎকার লেখার সৃষ্টি হয়ে যায়। 

    অভিজিৎ, 'নির্দেশ' মানার জন্য অনেক আদর-ভালোবাসা। হ্যাঁ, মঞ্জুলালের কথা আনার ইচ্ছে আছে। মাছ চাষের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। কত যে গল্প! 

    ডিসি, তোমার মত, আমিও একসময় ক্যালেইডোস্কোপের ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সফটঅয়্যারে এঁকেছি, হালে এআই দিয়েও বেশ কিছু এঁকেছি। কিন্তু মনের মধ্যে যে নকশাগুলো আছে, সেই রকমটি হয়নি।  

    রমিত, মনে হচ্ছে, আমাদের সময়টা তোমাদের যুগ পর্যন্তও অনেকটা ছুঁয়ে গিয়েছিল। 
  • পাপাঙ্গুল | ১৯ মে ২০২৪ ০০:১৫531932
  • এই লেখাগুলো সচলের পর্বগুলোর থেকে অনেকখানি বদলে যাচ্ছে , আরো ভাল হয়েছে yes
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১৯ মে ২০২৪ ০৪:৫৩531949
  • পাপাঙ্গুল, এইটা এই সিরিজের জন্যে একটা দরকারি তথ্য‌। অনেক ধন্যবাদ তোমায়।
  • ইন্দ্রাণী | ২২ জুন ২০২৪ ১৮:১৮533604
  • কলকাতায় মায়ের মামাবাড়িতে (আদি পূর্ববঙ্গ) নাটাই ব্রত দেখেছি। অঘ্রাণের রবিবার সন্ধ্যায় হত, ব্রতকথা পাঠ, তারপর চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি ছোট্টো ছোট্টো সেঁকা পিঠে -তার কিছু আলুনি (যেমন আপনি লিখলেন); খেতে হত অন্ধকারে, কেউ জোরে জোরে বলতেন-" জোছনায় পোড়ে, আন্ধারে খায়, যেই বর মাগে সেই বর পায়।" তারপর কেউ জিজ্ঞেস করতেন, " লবণ না আলুনি?"নোনতা হলে প্রার্থনা সফল এই রকম কিছু একটা ব্যাপার ছিল।
    এইটুকুই মনে আছে। সংশ্লিষ্ট গুরুজন সবাই প্রায় গত। আর কিছু জানবার সুযোগ নেই।

    আপনার লেখা ভালো লাগছে। মে মাসের পরে আর নতুন কোনো পর্ব আসে নি- খেয়াল করেছি।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২২ জুন ২০২৪ ২০:৩২533615
  • হা হা, খেয়াল করার জন্য অনেক ধন্যবাদ গো, ছোটাইদি! কুঁড়েমি করতে কি ভালো যে লাগে! 
  • Kasturi Das | ২২ জুন ২০২৪ ২৩:০৫533630
  • আহা, কী যে ভালো লাগলো!.. 
    খুব মায়াময়.. 
  • Suvasri Roy | ২৩ জুন ২০২৪ ১০:২৪533636
  • অসাধারণ একটা লেখা পড়লাম। 
  • kk | 172.58.***.*** | ১৭ জুলাই ২০২৪ ২২:২২534839
  • ক্যালিডোস্কোপ আবার কবে আসবে? ও অমিতাভদা ...
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১৭ জুলাই ২০২৪ ২২:৪৪534840
  • kk | 172.58.245.152 | ১৭ জুলাই ২০২৪ ২২:২২
    সেই ত। কিছুতেই আর এই কাজটি করা হয়ে উঠছে না। 
  • Aditi Dasgupta | ২৫ জুলাই ২০২৪ ১৮:৩৯535318
  • বড্ড আরাম লাগছে! যৌথ যাপন আহা!  খোঁজ নেওয়া ---এতদিন কোথায় ছিলে? সবাই মূল্যবান, আমার বেঁচে থাকার চালচিত্র! 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৫ জুলাই ২০২৪ ১৯:০৬535322
  • অদিতি, এক এক করে আগের পর্বগুলো পড়ে ফেলে ভালো লাগা জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। 
     
    এখানেই আছি অনেকদিন যাবৎ। তবে কুঁড়েমি আমার বড় প্রিয় তাই লেখার সংখ্যা কম, খুব কম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
  • টইপত্তর, ভাটিয়া৯, হরিদাস পাল(ব্লগ) এবং খেরোর খাতার লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব, গুরুচণ্ডা৯র কোন দায়িত্ব নেই। | ♦ : পঠিত সংখ্যাটি ১৩ই জানুয়ারি ২০২০ থেকে, লেখাটি যদি তার আগে লেখা হয়ে থাকে তাহলে এই সংখ্যাটি সঠিক পরিমাপ নয়। এই বিভ্রান্তির জন্য আমরা দুঃখিত।
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন