অনেক দূরের জিনিষ দেখতে পাওয়া আর তার ফলে যে সব তথ্য যোগাড় হল তাই দিয়ে অতীতের বিভিন্ন সম্ভাব্য ছবি ফুটিয়ে তোলা, আধুনিক মহাকাশ গবেষণা আর জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কত রকমের তরঙ্গের ব্যবহার, কত রকমের দূরবীন, কত মাপজোক। অনেকে নিজের দরকারে বা শখে একনলা কি দোনলা দূরবীন কেনেন, ব্যবহার করেন, সাজিয়ে রাখেন। আমি এ পর্যন্ত যে দু-তিনটি কিনেছি, নিতান্ত মামুলি, খেলনার বেশি মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য নয়। হারিয়েও গেছে তারা। তবে অন্য একটি দূরবীন মাঝে মাঝে ব্যবহার করি। স্মৃতির দূরবীন, ফেলে আসা জীবনের ছবি দেখতে। কতটা অতীত দেখতে পাওয়া যায়? যাচ্ছে? বেশীর ভাগ ছবি-ই ফোকাসের বাইরে। তবু শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে, যেন ডিজিটাইজ করে, পিক্সেল জুড়ে জুড়ে রেন্ডারিং করে নানা ভাঙ্গাচোরা টুকরো থেকে এক একটা ছবি বার করে আনা। যা ঘটেছিল তার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া, যতটা পারা গেল।
আর পাঁচটা দিনের-ই মত এক সকাল। আবার এক রকম নয়-ও। শরীর ভালো নেই। শুয়ে শুয়ে বই পড়া চলছে। বাবা এসে কোলে তুলে নিল।
– চল।
– কোথায়?
– স্কুলে।
বাবার কোলে চড়ে স্কুলে যাওয়ার পরে কি হয়েছিল পরিস্কার মনে পড়ে না। শুধু মনে পড়ে একটা ছিল নীচু বেঞ্চ আর একটা উঁচু। বাবা একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে উঁচু বেঞ্চ-টার উপর বসিয়ে দিল। ঘরে আরো অনেক বাচ্চারা রয়েছে। তারা সব নীচু বেঞ্চে বসে আছে। জ্বর হয়েছে বলে আমার মাথাটা সোজা রাখতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই কারো দিকে বিশেষ তাকাতে পারছি না। একসময় কেউ একজন সামনে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল। কতকগুলো প্রশ্ন। মনের আনন্দে প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে গিয়েছিলাম। আর কখনো অত আনন্দে অত নিশ্চিন্তে কিছু লিখিনি। জ্বর একটু কমেছে তখন; বাবা বাড়ি ফিরেছিল কাঁধে বসিয়ে নিয়ে। ফিরে খুশীতে ফেটে পড়েছিল। মা-র কোলে আমায় তুলে দিতে দিতে জানিয়েছিল ভর্তির পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি। হাসি আর আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল বাড়িতে।
খুব ভাল লেগেছিল সেদিন। বুঝতে পারিনি যদিও, প্রথম হওয়া কাকে বলে, কি করে হতে হয়। কিন্তু ভাল লেগেছিল খুব! তার পর সারা জীবন ধরে বুঝে চলেছি প্রথম হওয়া কাকে বলে বা আরো ঠিক করে বললে – প্রথম না হওয়া কাকে বলে। সেই প্রথম-বারের পর আর প্রায় কখনোই কোন কিছুতে প্রথম হইনি। দেশভাগের ফলে সর্বস্ব খুইয়ে, উদ্বাস্তু হয়ে চলে এসে, একটা অজানা ভূখন্ডে মাথা উঁচু করে চলার লড়াই লড়তে থাকা বাবা সবসময় আশা করে গিয়েছে এইবার, এইবার তার এই প্রথম সন্তান এই পরীক্ষাটায় প্রথম হবে। সেই আশা তাকে লড়াই করার শক্তি দিয়েছে, সমস্ত ঝড় সামলে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আর সেই আশার চাপে চাপে সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া, সমস্ত পরীক্ষা আমার কাছে চিরকালের মত বিষ হয়ে গেছে।
তারপরেও কত জনের বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরে এইখানে এসে পৌঁছেছি। এই দেশে আসার অল্প কিছুদিনের মধ্যে মা-বাবা এখানে এসে প্রায় বছর খানেক আমাদের সাথে কাটিয়ে যেতে পেরেছিলেন। দু-কামরার ভাড়ার ঘরে পাঁচটি মানুষের পরস্পরে বিশ্বাসে ভালোবাসায় সে যে কি আশ্চর্য কয়েকটি মাসের দিন যাপন। বিরাট লম্বা ম্যারাথন দৌড়ের শেষে সফল মানুষ যেমন নিশ্চিন্ত, তৃপ্ত আহ্লাদে ঘুরে বেড়ায়, তার মুখে চোখে যে আলো ঘুরে বেড়ায় বাবার চোখে মুখে সেই আলো। নানা ঢেউয়ের প্রতিকূলতায় আর কোনদিন তাদের এখানে নিয়ে আসতে পারিনি। একবার তাদের কাছ থেকে চলে আসার সময় ট্যাক্সির পাশে দাঁড়িয়ে বাবা হঠাৎ করে বলল, “আর কখনও দেখা হইবে না, তাই না।” জানালার অন্য পাশে গাড়িতে বসা আমি এক দন্ড স্তব্ধ হয়ে থেকে না-না-তা-কেন ইত্যাদি। আর দেখা হয়নি। বাবার মুখে তখনও হাসি কিন্তু চোখের সেই অদ্ভুত দৃষ্টি আমি আজও পরিষ্কার দেখতে পাই। কোন আনন্দ যে কি ভাবে চিরবিষাদ হয়ে যায়!
কিছু আনন্দ আবার অদ্ভুত চল ধরে। এক সময় সেটা হয়ে ওঠে লজ্জার। তার পরে সেটা হয়ে যায় একটা স্নেহের ব্যাপার। এই যেমন ছাগলের গু, আমরা বলতাম ছাগলের লাদি, সেই লাদির ব্যাবসা।
ক্লাস ওয়ান-এ পড়ি। এক বন্ধু শেখাল কি করে খাতার আয়তাকার সাদা পাতা ছিঁড়ে বর্গাকার করে নিয়ে এবার চার কোণা থেকে দুই কর্ণ বরাবর প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ফালি দিয়ে, চার ত্রিভুজ-এর আলাদা হয়ে যাওয়া আট কোনার একটা ছেড়ে একটা করে পেঁচিয়ে নিয়ে এসে কাগজের মাঝখান-টায় তলা থেকে কাঠির মাথায় বাঁধা একটা তার ঢুকিয়ে এনে সেই তারের মাথায় ঐ চার কোনা গেঁথে দিলেই চমৎকার একটি চরকি তৈরী হয়ে যায়! মুস্কিল হল ত্রিভুজের কোনারা তারের বন্ধন থেকে বের হয়ে আসতে চায়। এইখানে এল আমার অসামান্য কারিগরী দূরদৃষ্টি। বাড়ির রোয়াকে বসে কাজ চলছিল। একটি ছাগল সামনের রাস্তায় লাদি ফেলতে ফেলতে চলে গেল। ব্যাস! আমি একটি লাদি এনে তার-এর মাথায় গেঁথে দিলাম। আমার যন্ত্র তৈরি, ব্যাবসা চালু হয়ে গেল!
আমায় এনে দিতে হত দুটো কাগজ। একটা দিয়ে খরিদ্দারকে চরকি বানিয়ে দিতাম, আর একটা নিজের জন্য রেখে দিতাম। যারা কাগজ আনতে পারতনা তাদেরকে আমার জমান কাগজ থেকে বানিয়ে দিতাম। বিনিময়ে চানাচুর ঝুড়িভাজা ইত্যাদি। আমাদের কারিগরি বাহিনী ছাগলের লাদি কুড়িয়ে আমাদের বাড়ির ভিতরের উঠানে এনে জড় করত। সকলে মিলেই লাভের অংশ ভাগ করে নেয়া হত। এই করে আমাদের একটা দল-ও তৈরী হয়ে গেল। তারপর যা হয়! ব্যাবসা বেশী বড় হলে আইন রক্ষকদের নজরে পড়ে যায় – পরিবেশ দূষণের দায়ে মা আমাদের ব্যাবসাটা ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিল। সেই যে আমার ব্যাবসায় চোট খাওয়া শুরু হল, বাকি জীবনের সমস্ত বাণিজ্য উদ্যোগেই আমি সেই ধারা বজায় রেখে এসেছি।
দিনে দিনে দলটা বেশ বড় হয়ে গেল। ক্লাসে মনিটর বনে গেলাম। আঃ! নেতা হওয়ার স্বাদ-ই আলাদা!। নেতাগিরির প্রথম পাঠেই যা বোঝার বুঝে গেলাম – ছাড় দিতে হবে। আমায় টিফিন খাওয়ালে ক্লাসে অঙ্ক-খাতার মধ্যে লুকিয়ে গল্প বই পড়া যাবে। একবার জল খেয়ে এসে পরে পরেই বাথরুম? হবে। গিয়ে ফেরার নাম নেই? ঠিকাছে। কিন্তু সেই পুরানা কিসসা। ক্রিটিকাল সাইজের থেকে বড় হয়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ ঢিলা মেরে যায়। মনিটরী-টা গেল। সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। নেতাগিরির ঐ শেষ। তারপর থেকেই আমজনতা।
এই আমজনতা কথাটা অনেক পরে জেনেছি। তার আগে আম আর জনতা আলাদা আলাদা করেই জানতাম। এবং জনতা কথাটার মানে জানতাম জনতা স্টোভ। আমাদের সেই জনতা স্টোভটি একেবারে ঝকঝক করত। মা-বাবা দুজনেই খুব গোছানো মানুষ ছিল। এই যন্ত্রটি দুজনেরই প্রচুর স্নেহ পেয়েছিল। যদি মানুষের ছানা হত তা হলে প্রবচন অনুসারে ও অবশ্যই কালে কালে বাঁদর হয়ে উঠত। স্নেহ না করে অবশ্য উপায়ও থাকত না। বাবা যখন কাজ শেষ করে ঘরে ফিরত আমার তখন রাতের খাওয়া শেষে এক প্রস্থ ঘুম হয়ে গেছে। কোন কোন রাতে আধো-জাগা চোখে দেখতাম মা ঐ স্টোভে তার আর বাবার জন্য খাবার গরম করছে। ছুটির দিন সকালে বাবা স্টোভটা যথা সাধ্য খুলে ফেলত। তারপর আবার এক এক করে জুড়ত। আর জোড়বার আগে দশটা, নাকি অন্য কোন সংখ্যার, ঠিক মনে পড়ছে না, পলতে, কিংবা সলতের প্রত্যেকটির পোড়া অংশ একটি ভারী কাঁচি দিয়ে ছেটে ফেলত। সবকটি পলতেকে এমন নিখুঁত মাপে ছাঁটা হত যাতে স্টোভের চাবি ঘুরিয়ে যখন পলতে ওঠা-নামা করে জ্বালানোর জন্য প্রস্তুত করা হবে, সব কটি পলতের মাথা একই উচ্চতায় থাকবে। তা না হলে হয় ছোট পলতের নীচে নেমে থাকা আগুনের তাপ যথেষ্ট হবে না, প্রার্থিত ফল মিলবে না। “পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।” অথবা, বড় পলতের উপরে উঠে থাকা আগুন পাত্রের তলা পুড়িয়ে কালো করে দেবে। একজনের অতিরিক্ত প্রকাশ, বেতাল চলন পুরো দলের ছন্দ পতন ঘটিয়ে দেবে। তবে সব পলতে সমান ভাবে ছাঁটলেও পলতেগুলো নিজেরাই ভালো মানের না হলে ঠিক মত কাজ হত না। এই সমস্যাটা বেশি করে প্রকট হয়ে উঠেছিল পরের দিকে। বাজারে ভালো মানের পলতে পাওয়া যেত না। সেই সাথে আর একটা সমস্যা হয়েছিল ভাল মানের কেরোসিন পাওয়া যেত না।
অন্য যে স্টোভটি মাঝে মাঝে ব্যবহার করা হত সেটির এই রকম পলতের সংকটা ছিল না – প্রাইমাস স্টোভ। কিন্তু সেটা জ্বালানোর কাজ বাবা নিজে করত। সেটির খুঁটিনাটি এবং তরিবৎ আরও বেশি ছিল। সেই যন্ত্রে জ্বালানি তেলকে পাম্প করে মাঝারি তাপের একটি অংশের মধ্য দিয়ে বইয়ে তাকে গ্যাস বানিয়ে তারপর সেই গ্যাস জ্বালিয়ে অনেক বেশী মাত্রার তাপ বানানো হত। শোঁ শোঁ আওয়াজ করে গনগন করে জ্বলত। বাবা বেশ যত্ন করে বোঝাত তেলকে গ্যাস করে জ্বালানোর এই কৃৎ-কৌশল। যত আগে থেকে সম্ভব বিজ্ঞানে উৎসাহী করে তোলা। পরবর্ত্তীতে বেঁচে থাকার রসদ জোটানোর লড়াইয়ে বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করতে না পারলে বাঁচার লড়াই কঠিনতর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এই স্টোভে ভালো মানের কেরোসিন পাওয়ার গুরুত্ব তুলনায় বেশি ছিল। কম মানের জ্বালানি থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে জঞ্জাল তৈরি হয়ে যেই পথ দিয়ে তেল গরম হয়ে গ্যাস হয়ে বেরিয়ে আসবে সেটা বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। বাবার নিয়মিত কাজ ছিল একটা লম্বা ধাতব পাতের এক প্রান্তে লাগানো একটি অত্যন্ত সরু পিন দিয়ে ঐ নির্গমন পথের ছিদ্রটি জঞ্জাল্মুক্ত করা। জীবিকা অর্জনের এক পর্যায়ে মাস স্পেক্ট্রোমেট্রির কিছু কাজ করার সময় এই পিনের কথা মনে পড়ত খুব।
আমরা বড় হয়ে যাওয়ার পর এই প্রাইমাস স্টোভের নতুন মডেলে জ্বালানি তেলের পাত্র স্টোভ থেকে আলাদা করে দিয়ে উপরে দেয়ালে সুবিধা মত জায়গায় আটকে দেওয়া হল। পাত্রের তেল অভিকর্ষের টানে একটা নল বেয়ে নীচের গরম করার অংশের মধ্যে চলে এল। প্রাইমাস স্টোভের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা – পাম্প করা, আর দরকার নেই। এই নতুন মডেল তার কাঠামোর দিক থেকে আরও সরল এবং ব্যবহারের পক্ষে আরও সহজ। তাই জনপ্রিয়তাও পেল প্রবল। দেখলে মনে হয়, কত সহজ বিকল্প, আসতে লেগে গিয়েছিল অনেক যুগ।
জনতা নিয়ে বকবক করা হল, এবার তা হলে আম নিয়ে দু-এক কথা।
দমদম ক্যান্টনমেন্টে মাত্রই দু’কামরার ভাড়ার ঘরের জীবন ছিল। কিন্তু খাবারের কোন কমতি ছিল না। ফলে গরমের দিনে চৌকির তলার একটা বড় অংশ আম-কাঁঠাল-লিচুদের দখলে চলে যেত। বাজার থেকে কেনা হত, আবার কাশিমপুরে মামাদের বাগান, সেখান থেকেও আম আসত। আমি না ছিলাম খাদ্য রসিক, না ছিলাম চারপাশের জীবন খুঁটিয়ে দেখায় ইচ্ছুক। ফলে বিভিন্ন নামের আমের কার কি মহিমা এই ব্যাপারে অনেকেই যে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবেন আমার দ্বারা সেটা সম্ভব নয়। কায়দা করে বাক্যি ঝেড়ে এঈ অক্ষমতাকে ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেছি মাঝে মাঝে। কিন্তু কোন আম স্বাদে-গন্ধে কেমন, কোন আম খেয়ে কেমন আনন্দ পেয়েছি সেই তালিকার পাতা আজও সাদাই রয়েছে। শুধু কিছুটা দাড়ি বুড়োর কারণে আর কিছুটা আমের নিজের বিশাল আকারের কারণে ফজলিকে ভোলার উপায় নেই। দেশ ছাড়ার পর আর কখনও ফজলি আম খেয়েছি কি? মনে করতে পারছি না। কিন্তু, ঠিক মত আম পেলে একটি শৈশব স্মৃতি এখনও মাঝে মাঝে ঝালিয়ে নিই। লম্বা সরু আম, দুই হাতের তেলোয় চেপে চেপে ঘুরিয়ে তুলতুলে করে ফেলে বোঁটার উল্টো দিকে দাঁতে কেটে সরু ছিদ্র করে সেখানে থেকে চোঁ চোঁ করে তরল আম টেনে নেওয়া, আহা, হামিনস্ত, হামিনস্ত, হামিনস্ত, স্বর্গ এখানেই।
আম খাওয়ার যে কত রকমের মজা ছিল! কাঁচা আমের সরু সরু ছিল্কা নুন, তেল, লঙ্কা, দিয়ে - লিখতে গিয়ে জিভে চল আসছে। কাঁচা আমের খোসা ছাড়ানোয় বড় মাপের ঝিনুকের খোলার একেকটা পিঠ পাথরে ঘষে ঘষে ক্ষইয়ে ফেলে উপবৃত্তাকার ফাঁকের যে ব্লেড তৈরি করা হত, হয়ত নিজে পারতাম না বলেই, সেইটে তখন আমার কাছে কারিগরী উৎকর্ষতার চরমত্বের দাবিদার ছিল। পরে এই মার্কিন মুলুকে এসে তাকেই ধাতুর নির্মাণে নানা ছাঁদে, নানা রুপে 'পীলার' নামে দেখতে পেলামা। আমের প্রাচুর্য ছিল। বেশ কিছু আম শুকিয়ে আমসি করে রেখে দেওয়া হত। আমের টক, পোড়া আমের সরবৎ, কাঁচা এবং চিনিতে আর মশলায় জারানো, সরু ঝিরি ঝিরি এবং বড়ো বডো ফালির আমের আচার আর দত্তপুকুরে মামার বাড়ি গিয়ে আমসত্ত্ব খাওয়া। বড়ো ফালির আমের আচার বানাতে আমের টুকরোগুলোর গায়ে খেজুর কাঁটা দিয়ে প্রচুর ফুটো করে তারপর সেই আম সিদ্ধ করা হত। বাড়িতে নারকেলের কাঠি আর খেজুর কাঁটার বান্ডিল সব সময় মজুত থাকত। আমকাহন হল কিছু। আরো কত ফলেদের কত সব স্মৃতি। লিখব হয়ত কোনদিন। আজ এখানেই থামি।
ক্রমশ...