এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • ক্যালিডোস্কোপে দেখা – ভো-কাট্টা

    অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ২০ জুলাই ২০২৪ | ৮০৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৪ জন)
  • ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়


    কর্মসূত্রে নিজের বেছে নেওয়া নাগরিকত্বে আমি আমেরিকান। জন্মসূত্রে ছিলাম ভারতীয়। কিন্তু মর্মসূত্রে যে ভূখন্ড, যে সত্তা দূর শৈশব থেকে আমার চেতনায় জুড়ে গিয়েছিল, তার নাম বাংলাদেশ। আমার মা, বাবা, তাদের আগের বহু প্রজন্ম ধরে তারা সেই ভুমির বাসিন্দা ছিল, সেই সত্তার অংশীদার ছিল। আমার সেই অংশীদার হওয়ার অধিকার নেই। কিন্তু মা-বাবা-ঠাকুমা আমাদের বড় করার সময়, তাদের চিন্তা-চেতনা-স্মৃতি দিয়ে আমাদের গড়ে তোলবার সময় একটু একট করে সেই দেশ নিয়ে, সেখানে যাপিত তাদের জীবন নিয়ে, তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা আর অনুভূতিগুলো আমাদের মধ্যে বুনে দিয়েছে। কনিষ্ঠতম ভাই তাদের খ্যাতনামা নাটকের দলের সাথে গিয়ে প্রিয় স্মৃতি বুকে করে ঘুরে আসে সেই দেশ থেকে, মেজভাই তার সুগায়িকা স্ত্রীর গানের অনুষ্ঠান উপলক্ষে বেড়িয়ে আসে সেই স্বপ্নের দেশ থেকে, বাংলাদেশ থেকে।

    আমার কখনও সেখানে যাওয়া হয়নি, আর হবে বলে ভাবিও না। এক সময় সেই দেশেরই কিছু স্বপ্ন দেখা মানুষের যত্নে-ভালোবাসায়-পরিশ্রমে গড়া অনলাইন সাহিত্য মঞ্চ সচলায়তন আমায় এই ক্যালিডোস্কোপ নিয়ে দেখার লেখা লিখতে জায়গা করে দিয়েছিল। প্রিয় সেই দেশ মাথা উঁচু করে এগিয়ে চললে আমিও এগোই, সেই দেশ বিপন্ন হলে আমার যন্ত্রণা হয়; স্বজন রক্তাক্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। আমি অত্যন্ত তুচ্ছ একটি অস্তিত্ব, বাস্তবের নিরিখে এতই বিচ্ছিন্ন, এমনকি নিজের কাছেও দাবি করতে পারি না যে সে দেশের বেদনাকে তার সামগ্রিক কার্য-কারণে বুঝে উঠতে পারি। আতঙ্কিত হই, আবার বুঝি সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। লেখার সূত্রেই পরিচিত বন্ধুরা, যারা জানেন শোনেন, বোঝেন, খবর রাখেন তারা মর্মাহত, চূড়ান্ত উদ্বিগ্ন। এমনও পড়ছি, শুনছি, কেউ কেউ লিখছেন, বলছেন লণ্ডভণ্ড অনেক দিনই হয়ে চলেছে, এখন আর চাপা থাকছে না, থাকবে না। হবেও বা। কত জন যে আবার এই দুর্যোগেকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে নেবে দেশের ভালোর অছিলায় কে জানে! কত মানুষের প্রাণের, অস্তিত্বের বিনিময়ে পাওয়া দেশ, কত স্বপ্ন তার প্রজন্মের পর প্রজন্মে … এই সংকট সে কাটিয়ে উঠবে, উঠবেই। কতটা মূল্যে - জানা নেই।

    বাবা ভালবাসত গুছিয়ে কথা বলতে। যেভাবে যত্ন করে জামা কাপড় ইস্ত্রী করে সাজিয়ে রাখত, কথাও বলত তেমনি করে। পদ্মাপারের বাচনরীতি প্রবলভাবেই হাজির থাকত তার কথায়। বাড়িতে টেপ-রেকর্ডার ঢোকার পর নিজের অজান্তে ফিতে-বন্দী হয়ে যাওয়া ‘বাঙাল ভাষায়’ বলা নিজেরই কথা শুনে আমাদের প্রশ্ন করেছিল ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন নুতন রেকর্ড কিনেছি কিনা আমরা। তার কথায় চলিত শব্দের পাশাপাশি সাধুভাষার শব্দরাও থাকত অনেকই। বড় হয়েছিল সাধুভাষায় লেখা বই পড়ে। হ’তে পারে সে কারণেই। বেশী কথা বলত না বাবা। কিন্তু তার সাধ্যমত আমার মাথায় বিভিন্ন সময় ভরে দিয়েছিল নানা গল্প, ইতিহাস, চিন্তা, দর্শন, জীবনের অভিজ্ঞতা। নিজের আত্ম-পরিজন-বন্ধুদের কথা খুব একটা বলত না। শৈশবে পিতৃহারা মানুষটির মনে হয়ত কোন অভিমান কাজ করত। কিংবা অন্য কোন গভীরতর কারণ ছিল কি?

    পদবী ইত্যাদির কথায় জেনেছিলাম আমরা অনেক প্রজন্ম আগে ছিলাম মুখোপাধ্যায়, এপার বাংলার কোথাও, সম্ভবত বর্ধমান থেকে গিয়ে এক পূর্বপুরুষ হাজির হয়েছিলেন পদ্মাপাড়ের দেশে - ঢাকা, পানাম, সোনার গাঁ। উপাধি পেয়েছিলেন রাজচক্রবর্ত্তী, পরে কেঁটেছঁটে চক্রবর্ত্তী। শৈশবে প্রশ্ন জাগেনি মনে, আজ ভাবি, কি সে কাজ করেছিলেন সেই বহু আগের সময়ের মানুষটি যাতে তিনি রাজচক্রবর্ত্তী উপাধি পান? কবে পেয়েছিলেন, ইংরেজ আমলে? তা হলে নিশ্চয়ই তাদের খুশী করে পেয়েছিলেন, ভালো কোন কাজ কি আদৌ? সন্দেহ হয়। শুনেছি তাদের কাপড়ের বাণিজ্য ছিল। ওনারা কি তবে ওখানে গিয়ে রাজশক্তির সাহায্যে স্থানীয় মানুষদের থেকে তাদের ব্যাবসা ছিনিয়ে নিয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসে গিয়েছিলেন? জানি না। শুধু এইটুকু জানি, বাবা এদের কথা বলতে কখনও কোন আগ্রহ দেখায়নি, আর জানি, ঠাকুর্দা এই ব্যবসায় যোগ দেননি। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পেশা নিয়ে, স্বর্ণকার হয়ে রাজস্থানের বিকানেরে গিয়ে জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা করে নিয়েছিলেন। টাকা-পয়সা জমলে বাড়ি এসে ঘুরে যেতেন। আর বাবা বিনা কপর্দকে ভিটেমাটি ছেড়ে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চলে গিয়েছিল, ফিরে আসে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে। বিশ্বাস করত বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও সে পথে হাঁটা হয়ে ওঠেনি তার, লক্ষ্মীলাভও ঘটেনি। বলাই বাহুল্য, বাণিজ্য করতে পারার মত মানুষ সে ছিল না; চড়াই-উতরাই সামলে চাকরি করেই কেটে গেছে পুরো জীবন। তবে উপরের দিকে চাকরির সুবাদে কুচবিহারের তিনটি বছরেই আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা সবচেয়ে ভাল জায়গায় ছিল।

    ঐ তিনটি বছরে আমি চারপাশের জগৎকে চোখ মেলে দেখতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু যথেষ্ট মনোযোগের সাথে খেয়াল করে, নজর করে সেই দেখার কাজটি করা হয়নি। আর সময়ও হয়ত যথেষ্ট ছিল না। ফলে এমন পরিমাণ বা গুণমানের রসদ আমার সংগ্রহে আসেনি যা দিয়ে ঐ সময়ের বা ঐ ভূখন্ডের মানুষদের জীবন যাপন নিয়ে কোন উল্লেখ করার মত কিছু সৃষ্টি করতে পারি। তিন আয়নার ঘুর্নিকলে দেখা আমার এ স্মৃতিচারণ তাই নিজেকে ফিরে দেখার বেশি কিছু নয়।

    কুচবিহারে গিয়ে অবধি আমার দীর্ঘকালীন অনুভূতি ছিল বিষণ্ণতার, অনেক বন্ধুর ভালোবাসায় ভরে থাকা শহরজীবনের কলকল্লোলে মুখরিত দিনগুলোকে হারিয়ে ফেলার। হয়ত সেই কারণেই নিজের অসম্ভব ব্যস্ততা সত্ত্বেও বাবা চেষ্টা করত যতটা পারা যায় তার সঙ্গ দিয়ে আমাদের ঘিরে রাখার। বড় হয়ে বুঝেছি, বাবাকে এই নিবিড় করে পাওয়া – কখনো আমায় লেখাপড়া শেখানোয়, কখনো গল্প বলায়, খেলায় খেলায়, প্রাত্যহিকের বা ছুটির দিনের সময় কাটানোর আলাপচারিতায়, কখনো বা তার নিজের জীবন যাপনের ধারায়, আমার গড়ে ওঠায় গভীর প্রভাব রেখে গেছিল।

    বাবার বেশ বড় একটি সাইকেল ছিল। তার অনেক বছরের সহযাত্রী। বদলির চাকরির সব কটি কর্মস্থলে সে এটিকে সাথে নিয়ে ঘুরেছে। বাজারে যাওয়া হোক কি অফিসে - ঐটি তার চলাচলের নিত্য সঙ্গী। কখনো কখনো সামনের রডে বা পিছনের ক্যারিয়ারে আমরা, ভাইরাও সওয়ার হয়ে যেতাম। ওই সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসেই কুচবিহারের এয়ারপোর্টে আমার প্রথম এরোপ্লেন দেখতে যাওয়া, রানওয়ের উপর, সামনে থেকে। প্লেন দেখায় মগ্ন আমি খেয়াল করিনি লোকজনেরা কোথায় কি করছে। হঠাৎ দেখলাম বোঁ বোঁ করে প্রপেলার চালু হয়ে গেছে আর হাওয়ার দাপটে পিছু হটতে গিয়ে আমি প্রায় শূণ্যে উড়ে যাওয়ার মত করে ছিটকে পড়েছি। তবে সেদিন আরো দুর্ভোগ এসে জড়ো হয়েছিল। ফিরতি পথে হঠাৎ বিকট আওয়াজ করে সাইকেল থেমে গেল। পিছনের ক্যারিয়ারে বসা আমার ডান পায়ের গোড়ালি চাকার স্পোকের ফাঁকে ঢুকে গিয়ে স্পোকের সজ্জা এবং আমার গোড়ালি দুইই বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। হাসপাতাল হয়ে বাড়ি ফেরা, মোটা চামড়ার বুট জুতো পড়া থাকায় গোড়ালির হাড় ভাঙ্গেনি, তবে প্রবল ভাবে মচকে গিয়েছিল, ভুগতে হয়েছিল অনেক দিন।

    এই সাইকেলটিকে বাবা কিছুদিন পর পর একটি একটি করে বড়-ছোট সমস্ত অংশ খুলে খুলে বারান্দায় সাজিয়ে ফেলত। তারপর চাকার কেন্দ্রে থাকা চাকতির মধ্যে সাজানো বলবিয়ারিং ব্যবস্থার থেকে ইস্পাতের নিখুঁত নিটোল গোল দানাগুলো বের করে এনে, ধুয়ে মুছে শুকিয়ে, কোনটা খারাপ হয়ে গিয়ে থাকলে সেটাকে বদলে দিয়ে, আবার তাদের ঐ চাকতির কৌটোয় খাঁজে খাঁজে বসিয়ে গ্রিজ লাগিয়ে, কৌটোর ঢাকনা আটকে, চাকতিটাকে একটার পর একটা স্পোক লাগিয়ে চাকার বড় বেড়টায় জুড়ে চাকার ধাতুর কাঠামোটাকে তার নিজের চেহারায় ফিরিয়ে আনত। একে একে পুরো সাইকেলটাই আবার যেন এক অলৌকিক দক্ষতায় তার পূর্ণতা ফিরে পেত। এক পর্যায়ে পাতলা রাবারের টিউব ভরা মোটা শক্ত রাবারের টায়ার ঐ চাকার বেড়ে জুড়ে দিয়ে রাবার টিউবে হাত-পাম্প চালিয়ে হাওয়া ভরে নেওয়া, বাবার হাতের পেশীগুলো ফুলে উঠত। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। কয়েক দশক পার করে বাবা যখন একদিন খুলে ফেলা এক কাঠের আলনাকে ফিরে জোড়া লাগাতে গিয়ে আমার হাতে যন্ত্র তুলে দিয়ে নীচু গলায় বলেছিল, আমার হাতে আর তেমন জোর পাই না, নিজের হাতের জোরের স্বীকৃতির আনন্দ চাপা মন খারাপে মিইয়ে গিয়েছিল।

    উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগে আমরা যখন দমদম ক্যান্টনমেন্টে থাকতাম, মাঝে মাঝেই একটি লোকের দেখা মিলত। সে সাইকেলের মত দেখতে একটি প্যাডেল আর চাকাওয়ালা যন্ত্র ঘাড়ে করে ঘুরে বেড়াত। আমাদের বাসার সামনে এসে রাস্তার ধারে সেই যন্ত্র নামিয়ে তাতে চড়ে বসত। ইতিমধ্যে আশেপাশের বিভিন্ন বাসা থেকে মেয়ে-বৌরা, কাজের বাচ্চারা ছুরি, কাঁচি, দা, বটি নিয়ে এসে ঘিরে দাঁড়াত। তারা সব তার কাজের খরিদ্দার। হাতের অস্ত্র শান দিতে নিয়ে এসেছে। লোকটি তাদের কারো কাছ থেকে একটি কাটাকাটির যন্ত্র হাতে নেয়। তার চড়ে বসা যন্ত্রে পায়ের চাপে প্যাডেল ঘুরছে। প্যাডেল লাগানো, স্পোক-ওয়ালা বড় চাকাটাও তাই ঘুরছে। সেই সাথে ঘুরে চলেছে, ঐ বড় চাকার সাথে বেল্ট দিয়ে আটকানো একটা তুলনায় ছোট কিন্তু নিরেট চাকা, শানপাথর বলে বুঝি তাকে। লোকটি তার হাতের ছুরি কিংবা কাঁচির ফলার ধার ঐ ঘুরতে থাকা শানপাথরের গায়ে চেপে ধরে। প্রবল ঘষার ফলে আগুনের ফুলকি তারাবাজির মত ছিটকে বের হতে থাকে, পোড়ার গল্ধ ভেসে আসে। এক সময় লোকটি হাতের অস্ত্রটি তুলে নেয়, চোখের সামনে এনে দেখে, সাবধানে তার গায়ে হাত বোলায়, কখনো সেটাকে আবারো চেপে ধরে ঘূর্ণায়মান পাথরের গায়, অথবা তুলে দেয় তাদের যারা নিয়ে এসেছে তাদের হাতে। কাজের দাম নিয়ে কোমরের থলেতে রেখে দেয়। কুচবিহারের জীবনে এদের দেখা মেলেনি। শান দেওয়ার কাজ বাবা নিজেই করত। নাঃ, ঐ রকম কোন শান দেওয়ার চাকা ছিল না। সেই কাজ সারা হত লাল ইঁটের টুকরোয় ঘষে ঘষে। কোন কোন দিন আবার ঐ ইঁটের টুকরো দিয়ে ভারী লোহার ইস্তিরিটার চকচকে পিঠটাও আরো ঘষে ঘষে আয়নার মত মসৃণ করে তুলত। ঘষার কাজে আরো একটি বস্তুর ব্যবহার হত - একটি ঝামা পাথরের টুকরো। পায়ের গোড়ালি মসৃণ করার কাজে লাগত তা।

    আমাদের সেই ছোটবেলায় তেল কিনে আনা হত টিনের কৌটোয়। শক্তপোক্ত কৌটো। নতুন কিনে আনা কৌটোর পাটা দিক দুটোর যেটা কৌটোর গায়ের ছবির উপরের দিকে, সেইটিতে বাঁকের কানা ঘেঁষে মোটা পেরেক ঠুকে একটা ফুটো করা হত বা একটা মোটা ছুরি ধরে সেটাকে ঠুকে একটু চিরে দেওয়া হত। আর এরপর ঐ পাটা দিকটাতেই যতটা সম্ভব দূরে কানা ঘেঁষে একটা তুলনায় ছোট ফুটো করে দেওয়া হত। কৌটো কাত করে বড় ফুটো দিয়ে তেল ঢালার সময় কৌটোয় হাওয়া ঢুকত ঐ দ্বিতীয় ফুটোটা দিয়ে। পরে একসময় এই বিদ্যে কাজে লেগেছিল ওল্টানো জলভরা পাত্র থেকে ইচ্ছে মত জল পড়তে দেওয়া বা না-দেওয়ার যাদু দেখানোর সময়। সে অবশ্য অন্য ছবির গল্প।

    কৌটোগুলো তেল ফুরিয়ে খালি হয়ে যাওয়ার পর তাদের কোন কোনটাকে ফেলে না দিয়ে অন্য কাজে লাগানো হত, যেমন চৌবাচ্চা কি বালতি থেকে জল তোলবার মগ বানানো বা যন্ত্রপাতি রাখার কৌটো বানানো। ফুটোওয়ালা পাটা দিকটা কানা ঘেঁষে মোটা ছুরি ধরে ঠুকে ঠুকে কেটে কেটে গোল বেড়টা থেকে আলাদা করে ফেলা হত। এই কাটা কাটা ধারওয়ালা চাকতিটা সাবধানে না ধরলে একটুতেই হাত কেটে যেতে পারত। বাবা নিজে হাতে বাড়ির পিছন দিকে এক কোণায় আবর্জনা ফেলার জায়গায় এই চাকতিটাকে সাবধানে ফেলে দিয়ে আসত। এরপর 'পিটানি' দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে খোলা কৌটোর কাটা ধারটা কৌটোর বেড়ের ভিতরের গায়ে মিশিয়ে দিয়ে চমৎকার একটা কৌটো বানিয়ে ফেলত।

    এই রকমই একটা বড় আর একটা ছোট মাপের কৌটোয় বাবা তার সমস্ত যন্ত্রপাতিগুলো রাখত। এই যন্ত্রপাতিগুলোর মধ্যে বাবার নিয়মিত ব্যবহারের তিনটি বস্তু ছিল একেবারে তার নিজের কায়দার। প্রথমটি পেটাপেটি করার – নাঃ হাতুড়ি নয়, অনেক অতীতে যোগাড় করে আনা, বাইসাইকেলের প্যাডেলের একটি ডাণ্ডা। বাবা সেটাকে ‘পিটানি’ বলত। আমি অনেক বয়স হওয়ার আগে পর্যন্ত জানতাম না যে এই কাজের জন্য হাতুড়ি নামের অন্য একটি বস্তু আছে। জানার পরেও ‘পিটানি’ থেকে হাতুড়িতে অভ্যস্ত হতে সময় লেগেছিল আমার। আর দ্বিতীয়টি ছিল বাবার নিজের হাতে বানানো একটি কাগজ কাটার বা পেন্সিল চাঁছার ছুরি। আধা ইঞ্চি চওড়া আর আট ইঞ্চি মত লম্বা একটি লোহার পাত, তার গোলাকৃতি দুই প্রান্তের একদিকের সিকি ইঞ্চি মত ভিতরে একটি ফুটো আর বিপরীত প্রান্তের মাথা থেকে প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত একটা পাশকে একটু আগে বলা ইঁটের টুকরোর গায়ে ঘষে ঘষে ধারালো করে তোলা হয়েছে। এই ছুরিটার মত আরো কয়েকটি পাত ছিল বাবার সংগ্রহে, সম্ভবত কোন যন্ত্রের বাতিল টুকরো তারা, একদিন তাদের একটিকে শান দিয়ে আমার প্রথম ছুরিটি বানিয়ে নিয়েছিলাম। তৃতীয়টি আগেই উল্লেখ করা মোটা ছুরিটি। আকারে আরেকটু বড় আর অনেক মোটা। কামারশালা থেকে বানিয়ে আনা। দরকারমত শান দিয়ে দিয়ে বাবা এটাকে ভোঁতা হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখত। তুলনায় মোটা দাগের কাটাকাটির কাজে যেমন, কাঠের টুকরো কি টিনের কৌটো কেটে ফেলতে, এর ব্যবহার হত।

    আমাদের স্কুল থাকত সোম থেকে শুক্রবার এগারটা থেকে সম্ভবত চারটা পর্যন্ত। আর শনিবারে একটা নাগাদ ছুটি হয়ে যেত। ফলে এই ছয় দিন রোজ সকালে আর সন্ধ্যায় বাড়িতে নিয়মিত পড়তে বসতে হত। স্কুলের পড়ার যে অংশটা বাড়ির কাজ হিসেবে দেওয়া থাকত সেটা ঐ সময়ে সেরে ফেলার চল ছিল। শনিবারের সন্ধ্যায় সেরে রাখবার কাজ রবিবারে গড়িয়ে না গেলে রবিবার স্কুলের পড়া তৈরি করার থেকে ছুটি। এক রবিবার সকালে বাবা ঘরের কোথা থেকে একটা ঘুড়ি ওড়ানোর লাটাই আর এক বান্ডিল নানা রঙের কাগজ নিয়ে চওড়া ভিতর-বারান্দায় পিঁড়ির উপর গুছিয়ে বসল। আমাদেরও ডেকে নিল। কাগজের পাশে দেড় হাত মত লম্বা বাঁশের টুকরো।
    - কি বানাবে তুমি? ঘুড়ি?
    - দেখতেই পাবি। যা, ওই দাওটা নিয়া আয়।

    এই সব দা-কাঁচি-ছুরি-পিটানি-স্ক্রু ড্রাইভার-ছেনি-বাটালি-তুরপুন-ওলন দড়ি ইত্যাদি রাখার দুটি কৌটোর সাথে আরো কয়েকটি অবশ্য প্রয়োজনীয় বস্তু ছিল বাবার যন্ত্রপাতি রাখার জায়গায় – নানা মাপের কয়েকটি কাঠের টুকরো। বাবা বারান্দায় বসে একধাপ নিচের সিঁড়িটায় একটা যুৎসই উচ্চতার কাঠের টুকরো রেখে তার উপর বাঁশের টুকরোটা দাঁড় করিয়ে দা দিয়ে সেটাকে লম্বালম্বি কয়েকটা টুকরোয় চিরে ফেলল। তারপর তাদের একটার গা থেকে দা দিয়ে কয়েকটা ছিলকা বার করে নিয়ে ছুরি দিয়ে সেগুলোকে চেঁছে চেঁছে কয়েকটা মসৃণ এবং নমনীয় কাঠি বানিয়ে নিল।

    এরপর রঙিন কাগজের বান্ডিল থেকে একটা কাগজকে টেনে নিয়ে সেটাকে ভাঁজ করে, ভাঁজ বরাবর ছুরি টেনে তার থেকে একটা বর্গাকার টুকরো বার করে আনল। এরপর ঐ কাঠিগুলোর একটাকে সেই কাগজের টুকরোটার উপর রেখে কাঠির গোড়া যদি এক নম্বর কোণায় রাখা হয়েছে ধরি, তবে অন্য প্রান্তকে তিন নম্বর কোণার দিক করে বসিয়ে কোণা ছাড়িয়ে দুই কি তিন ইঞ্চি দূরে ছুরি দিয়ে কাঠির গায়ে দাগ কেটে তারপর দাগ বরাবর দু’ টুকরো করে, দাগের প্রান্ত আর গোড়ার প্রান্তকে একটা সুতো দিয়ে আলগা করে বেঁধে একটা ধনুক বানিয়ে ফেলল। সুতোটা তখনো ঢিলা রেখে ধনুকটাকে এবার চৌকো কাগজের উপর বসিয়ে ঠিকমত আকারে এনে সুতোর সেই ছিলা টাইট করে বেঁধে ফেলা হল। ধনুকের দুই মাথা কাগজের এক আর তিন নম্বর কোণা ছুঁয়ে আছে। আমরা ভিতরে ভিতরে উত্তেজনায় ছটফট করলেও শান্তভাবে বসে দেখে যাচ্ছি।

    মা ইতিমধ্যে বাটিতে ময়দা জ্বাল দিয়ে আঠা বানিয়ে এনে রেখে গিয়েছে। আর দিয়ে গেছে সুতোর কাটিম।

    ধনুকটাকে কোনাকুনি করে রাখা বর্গাকার কাগজের উপরের অর্ধে ররাকাহ হল। তারপর ছোট ছোট কয়েকটা কাগজের টুকরোয় আঠা মাখিয়ে তাই দিয়ে ধনুকের কাঠিটাকে কাগজের গায় সেঁটে দেওয়া হল। এবার তীরের জায়গায় আরেকটা কাঠি ধনুকের তলা দিয়ে বসিয়ে আঠাওয়ালা ছোট ছোট কাগজের টুকরো দিয়ে আটকে দেওয়া হল। এই কাঠির মাথা উপরে দুই নম্বর কোণা পর্যন্ত আর নীচে চার নম্বর কোণা ছাড়িয়ে একটু বেরিয়ে আছে। এরপর একটা খুব ছোট চৌকো কাগজ ভাঁজ করে মাছের লেজের মত ছোট তিন কোণা লেজ বানিয়ে ঘুড়ির নিচের দিকে আঠা দিয়ে আটকে দেয়া হল। লেজের ছুঁচলো দিকটা উপরমুখী আর তার উল্টোদিকটা তীরের কাঠির নীচের দিকটাকে পকেটের মত করে পেটের ভিতর নিয়ে রেখেছে। এবার এই তিনকোণা লেজের শেষে জুড়ে দেয়া হল লম্বা ফিতের মত লেজ। ঠিক যেমন ছবির বইয়ে দেখা ঘুড়ি!

    এবার ঘুড়িকে ওড়ানোর কল বাঁধা। বাঁকানো কাঠিকে সোজা কাঠি যেখানে ছুঁয়েছে সেখানে কাগজে কাঠিদের দুপাশে কোণাকুণি দুটো ফুটো করে ঐ দুই ফুটোর মাঝের কাগজ আর দুই কাঠিকে একসাথে নিয়ে একটা সুতোর প্রান্ত দিয়ে বাঁধা হল। সুতোর টুকরোটার অন্য প্রান্ত বাঁধা হল ঘুড়ির নিচের প্রান্ত থেকে কিছুটা উপরে সোজা কাঠির দু পাশে, প্রায় গায়ে গায়ে, কাগজে দুটো ফুটো করে সেই ফুটো দিয়ে সুতো ঘুরিয়ে এনে। এবার সুতোটাকে ইংরেজি ভি অক্ষরের মত করে ধরে ভি-র গোড়ায় একটা ফাঁস রেখে গিট্টু পাকিয়ে ঘুড়ি ওড়ানোর কল বানিয়ে ফেলা হল।

    কলের প্রান্ত ধরে হাওয়ায় টান দিয়ে দেখে নেওয়া হল দুদিকের ভারসাম্য রেখে সে ঠিকমত উড়তে পারছে কিনা। বাবার বানানো ঘুড়ি সব সময় ঠিক মত উড়ত। পরবর্তিতে আমার বানানো ঘুড়ি অনেক সময় একদিকে কেৎরে যেতে চাইত। তখন অন্যদিকে কান্নিক গুঁজে মানে ছোট কাগজের টুকরো আটকে ওজনের ভারসাম্য আনা হত। এখন যেমন সার্ভিসিং-এর দোকানে নিয়ে গিয়ে গাড়ির চাকা ব্যালান্স করানো হয়।

    এইবার লাটাইয়ে আচ্ছা করে সুতো পাকিয়ে সুতোর খোলা মাথাটা ঘুড়ির কলের ফাঁসের সাথে বেঁধে দেওয়া হল। ঘুড়ি এখন ওড়বার জন্য প্রস্তুত। আমাদের তিন ভাইয়ের জন্য সেদিন সেই মুহুর্তটা যে কি উত্তেজনার ছিল, এখনো ভাবলে রোমাঞ্চকর লাগে।

    ঘুড়ি বানানো শিখে নিতে সময় লাগেনি। কিন্তু কোনদিনই ঘুড়ি ওড়াতে পারিনি। ভাইয়েরা পারত। কেউ উড়িয়ে দিলে সেটা কিছুটা সময় আকাশে উড়িয়ে রাখার কাজটা মাঝে মাঝে পেরেছি। এইটা আমার সারা জীবনের কাজকম্মের রূপক হিসেবেও সত্যি বলা চলে।

    ঘুড়ি ওড়ানোর দিনগুলোয় প্রবল উত্তেজনার ছিল ঘুড়ির লড়াইয়ে সুতো ছিঁড়ে ভো-কাট্টা হয়ে যাওয়া ঘুড়ি ধরে নিজের দখলে নিয়ে আসা। কনিষ্ঠতম ভাইটি এই ব্যাপারে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করতে চলেছিল। আর সেই করতে গিয়েই একদিন রক্তারক্তি হয়ে গেল।

    তিন পিঠোপিঠি ভাইয়ের সবচেয়ে ছোট হওয়া নিশ্চয়ই বেশ চাপের আর সেই কারণেই ছোটবেলায় তার মেজাজ বেশ চড়া তারে বাঁধা থাকত এবং তার মতিগতি বোঝা বাড়ির বাকিদের পক্ষে কঠিন ছিল। বড়দের জারি করা সতর্কতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোটা সম্ভবত নিজের অস্তিত্বের আবশ্যিক এবং প্রাথমিক শর্ত হিসেবে সে গণ্য করত। ভো-কাট্টা হয়ে হাওয়ায় ভাসতে থাকা ঘুড়ি ধরবার জন্য ছুটে চলবার সময় আর কোনদিকে হুঁশ না থাকায় হোঁচট লেগে উল্টে পড়ার বড় রকম সম্ভাবনা থাকে। ফলে ঐ কাজটায় বারণ ছিল। যত বারণ তত উৎসাহ। এক রবিবারের সকালে স্নানের প্রস্তুতিতে বাবা বাড়ির ভিতরের উঠানে আমাদের তিন ভাইকে সারা গায়ে তেল মাখিয়ে দিচ্ছে। ছোট জনের আগে হয়ে গেছে, সে ভিতরের উঠান আর বাইরের উঠানের মাঝের দরজা খুলে বাড়ির সামনের দিকে আমাদের দৃষ্টির আড়ালে কোথাও অদৃশ্য হয়েছে। হঠাৎ অনেক বাচ্চার আওয়াজ, আর পাড়ার বড়দের কেউ ছোট ভাইকে পাঁজা কোলা করে খোলা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে এল, আরেকজন বড় কেউ তার ডান হাতের একটা আঙ্গুল চেপে ধরে আছে, গলগল করে সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। বিবরণ যা পাওয়া গেল, ভাই একটা নীচু হয়ে ভাসা ঘুড়ি ভো-কাট্টা হয়েছে ভেবে তার সুতো ধরে নিয়েছিল; সুতো ধরে টান দিতে সেই মাঞ্জা দেওয়া সুতো আঙ্গুল কেটে বসে যায়।

    আমাদের বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার বন্দোবস্ত গুছিয়ে রাখা থাকত। তখনো ব্যান্ড-এইডের যুগ আসেনি। ডেটল, মারকিউরোক্রোম, আর গজ-ব্যান্ডেজ-অ্যাাডহেসিভ টেপ। আর শীতকালে বাড়িতে হওয়া গাঁদা ফুলের পাতা থেতো করে পাওয়া প্রাকৃতিক অ্যাান্টিসেপ্টিক। এই সব দিয়ে কাজ সামলাতে না পারলে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সেলাই। অল্পের জন্য তার আঙ্গুলের ক্ষত হাড় পর্যন্ত পৌঁছায়নি। আর বাবার করা ব্যান্ডেজে একসময় রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালেও নিতে হয়নি। আমাদের পরিবারে সেই সকালের গল্প বহুদিন পর্যন্ত করা হত।

    সেই দিনগুলোতে কাটা-ছড়ায় ডেটল, বোরোলীন, মারকিউরোক্রোম আর পোড়া-ছ্যাঁকায় বার্নল লাগানো, গলা ব্যথা কি মুখের ভিতরের ফুস্কুড়ির চিকিৎসায় পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট বা আয়োডিন দিয়ে গার্গল আর কুলকুচি করা, হাত-পা মচকানোয় গরম চুন-হলুদের প্রলেপ দেওয়া, কাশিতে বাসক পাতার রস খাওয়া আর চামচে করে একটু একটু করে চেটে চেটে জেফ্রল সিরাপ … আর চ্যবনপ্রাশ … একটু বড় হয়ে শরীর ভালো করার জন্য কিংবা খেতে পারি তাই খাব, হরলিক্স, ভিভা, বর্নভিটা … মাঝে মাঝে তরল ভিটামিন বি কমপ্লেক্স … হজমের গোলমালে অ্যাকোয়া টাইকোয়াটিস … কোন কোন বাড়িতে ভীষণ দুর্বল শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনতে গরম দুধে কয়েক ফোঁটা ব্র্যান্ডি, এমনকি কৈশোরেও … আর কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, ছোটোরা লুকিয়ে অমৃতজ্ঞানে, দ্রাক্ষারিষ্ট আর মৃত সঞ্জীবনী … জীবন গিয়েছে চলে আমাদের তিন কুড়ি বছরের পার …

    ছবির পর ছবি, আসে, মিলিয়ে যায়। পর্বে পর্বে গোছাতে গিয়ে কিভাবে শুরু করি, কোথায় থামি, খেই হারায়। আজ বরং ঘুড়িতেই ভো-কাট্টা হই। প্রায় দেড় দশক আগে ফ্লিকারে ফটো পোস্ট করা, তাতে মন্তব্য করা রোজকার জীবন যাপনের অংশ হয়ে গিয়েছিল। ফটোগ্রাফার বন্ধুদের পোস্ট করা ছবি মনের গহীনে জমা থাকা ছবিদের তুলে আনত; এক ছবি থেকে অনেক ছবির স্মৃতি, কিংবা নিছকই কল্প-কাহিনি। এক সময় সেই পর্ব থেকে সরে আসতে চেয়ে ফটোস্ট্রীমে শেষ ছবি পোস্ট করে দেওয়ার পর বন্ধু ফটোগ্রাফার অমর আচার্য্য, ‘মনে পড়ে’ এই শিরোনামে একটি ছবি আমায় উপহার দিয়ে পোস্ট করে। ছবিতে দেখা যায় নারকেল গাছের মাথায়, পাতার সারির ফাঁক, আটকে থাকা একটি ঘুড়ি।

    ভালোবাসার, ভালো লাগার পোস্ট। কিন্তু পোস্টের ছবিটি সেখানেই না থেমে আমায় অন্য এক চিত্রকল্পের দিকে নিয়ে যায়। আমি লিখি -

    কাটা ঘুড়ি

    এসে গেছেন?
    ঠিক আছে।
    একটু জিরিয়ে নিন তা হলে।
    আমার আর কি, লটকেই তো গেছি।
    এখানেই আছি,
    যদ্দিন না ছিঁড়ে ফর্দা-ফাই।
    ভাবছেন, তাও কেন বক্‌বক্‌!
    হাওয়া দ্যায় যে!
    জানেন, এখনো বুকের মধ্যে
    শিরশির করে।
    সেই যখন উড়তাম
    তার হাতে, তার মনের সাথে –
    মনে পড়ে।
    উল্লাস – আমার ডাইনে হাওয়া
    বাঁয়ে হাওয়া, উপরে, নীচে –
    যেমন সে চালায়,
    টেনে রাখলে টানটান,
    ঢিলে দিলে ঢিলে।
    জানি, যে কোন মুহুর্তে
    ঘটে যেতে পারে অঘটন
    ছোঁ মেরে নেমে আসতে পারে
    কারো অহংকার
    ছিঁড়ে-খুঁড়ে আমায়
    শেষ করে দেবে বলে।
    শুধু আমি উড়ছি বলে,
    শোভন-সুন্দর-দীপ্ত!
    এমন কি আমার প্রাণ যার হাতে,
    সেও মেতে যেতে পারে
    মরণ খেলায় – আমার!
    আমার বুক কাঁপত,
    কিন্তু উড়াল ছাড়িনি –
    শন্‌-শন্‌, শন্‌-শন্‌!
    প্রেম করেছেন কখনো?
    ভো-কাট্টা হয়েছেন?
    ভো-কাট্টা?
    কি দেখছেন আমার দিকে?
    ছবি নেবেন?
    ছোটবেলার – আপনার?
    মনে পড়ে যায়?
    ঠিক আছে, এবার আসুন তা হলে।
    জল আসছে, বাড়ি যান।
    সাবধানে যাবেন।
    আমি ভিজি,
    গলে যাই …

    একসময় ক্যালিডোস্কোপ ঘোরাতাম একটা সুপ্ত ইচ্ছা নিয়ে – কোনদিন দুই মলাটে দেখা যাবে ভেসে ওঠা ছবিদের। তারপর সময় শিখিয়েছে, সেই ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়ার কোন কারণ নেই। ভো-কাট্টা হওয়ার আগে বরং আরো কয়েকবার ঘুরিয়ে নেওয়া যাক তাকে – লেখার কারণেই পাওয়া সেই সব বন্ধুদের ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিয়ে, এই লেখা থামিয়ে দিলে যারা জানতে চায়, কি হল, পরের পর্ব এল না কেন এখনও …





    ক্রমশ...




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২০ জুলাই ২০২৪ | ৮০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Aditi Dasgupta | ২০ জুলাই ২০২৪ ১৩:৫৬535033
  • সত্যিই ক্যালিডোস্কোপ! কি বৈচিত্রময় গতি, সাথে সাথে স্নিগ্ধ টেকসই জীবন সন্ধান! এই লেখাটি আজই পেলাম, পিছনের গুলিও পড়তে শুরু করে দিলাম। মোট কথা, ভারি ভালো লাগছে!
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২০ জুলাই ২০২৪ ১৮:২৬535044
  • পড়া এবং ভালো লাগা জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ, অদিতি! আশা করি আগের পর্বগুলিও ভালো লাগবে আপনার। ভালো থাকবেন।
  • পাপাঙ্গুল | ২১ জুলাই ২০২৪ ০১:১৯535075
  • 'নিজস্ব ঘুড়ির প্রতি' লেখা এই পর্ব অন্য পর্বগুলোর থেকে একটু অন্যরকম ভাল লাগল। 
  • r2h | 96.23.***.*** | ২১ জুলাই ২০২৪ ০১:৫৩535078
  • এই পর্বটা কী ভালো যে লাগলো।
    সব কটা পর্বই ভালো লাগে, কিন্তু এই পর্বের বিস্তৃতি যেন হঠাৎ করে অনেকটা বেড়ে গেল।

    আর অমিতাভদার বাবার স্মৃতিচারণ।
    অনেকখানি যেন আশ্চর্যজনকভাবে, আমার নিজের কথা। নিজের মত করে যন্ত্রপাতি তৈরি করে নেওয়া, নিজের বাহনগুলির কল কব্জা বলবেয়ারিং নাট বল্টু খুলে কেরোসিন দিয়ে মুছে আবার জোড়া দেওয়া মাসে এক আধ বার - বাবাকে নিয়ে এইসব আমাদের ছোটবেলার স্মৃতি।

    টুলবক্স, নানান সাইজের স্ক্রু ড্রাইভার, প্লায়ার, রেঞ্চ, ছুরি কাঁচি, বাগান করার নানান রকম খুরপি - কলকাতায় ফ্ল্যাটবাড়িতে চলে আসার পর আর তেমন কাজে লাগেনি, তারপর তোরঙ্গ থেকে বেরও করা হয়নি, তাও তো কত বছর হয়ে গেল!

    কিছুদিন আগে গুরুতেই কে যেন কোথায় একটা সম্বোধন বা লেখার ভাষা ইত্যাদি প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, কেউ কেউ মৃত বাবার সম্পর্কে এটা করতো ওটা বলতো (করতেন বা বলতেন না লিখে) লেখেন - সেগুলি খুব চোখে লাগে।
    তাতে খুব অবাক হয়েছিলাম এ তো ব্যক্তি বিশেষে বদলাবে, এর কী কোন নিয়ম হয়, যে মানুষটির প্রিয় শ্লোক ছিল প্রাপ্তে তু ষোড়শ বর্ষে পুত্র মিত্র বদাচরেৎ, শুধুই মৃত বলে তার প্রতি সম্বোধন বদলে যাবে কেন? লেখা হয়নি তখন।

    আজ অমিতাভদার লেখা পড়ে সেটা মনে পড়লো।

    খুবই ভালো লাগলো।

    ও, আর নারকোল তেলের টিন। দুদিকে দুটো ছ্যাঁদা! মাসের বাজারে নতুন মাখনের টিন এলে সেটা কাটাও একটা কাজ ছিল!
  • kk | 172.58.***.*** | ২১ জুলাই ২০২৪ ০৪:১৮535079
  • দ্যাখো দিকিনি! ভাগ্যিস তাড়া দিলাম! আমার সব পর্বগুলোই খুব ভালো লাগে। এই পর্বটাও খুবই ভালো লাগলো। ক্যালিডোস্কোপের সমগোত্রীয়, কিন্তু ঠিক এক নয় এমনি আরেকটা খেলনা ছিলো আমাদের ছোটবেলায়। ফঙফঙে প্লাস্টিকের ক্যামেরা। তা চোখে লাগিয়ে পাশে শাটারের মত জিনিষটায় টান দিলে একটা করে ছবি আসতো। সাতটা আটটা ছবির পরে আবার ঘুরে আসতো। ঐসব ছবি দেখে তখন মনে হতো না ধরতে পারা, অথচ ধরা হয়তো সম্ভব এমন স্বপ্নগুলো চোখের সামনে দিয়ে পরপর চলে যাচ্ছে। তো এই সিরিজটা পড়ার সময় আমার অমনি একটা অনুভূতি হয়। যেন মিল পাচ্ছি, অথ্চ এক্স্যাক্টলি পাচ্ছিনা এমনি ছোটবেলারা চোখের সামনে দিয়ে চলে চলে যায়।
    দ্বিতীয় ধাপে বলি, হুতোর পোস্টের এই কথাগুলো -- 
    "কিছুদিন আগে গুরুতেই কে যেন কোথায় একটা সম্বোধন বা লেখার ভাষা ইত্যাদি প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, কেউ কেউ মৃত বাবার সম্পর্কে এটা করতো ওটা বলতো (করতেন বা বলতেন না লিখে) লেখেন - সেগুলি খুব চোখে লাগে।
    তাতে খুব অবাক হয়েছিলাম এ তো ব্যক্তি বিশেষে বদলাবে, এর কী কোন নিয়ম হয়, যে মানুষটির প্রিয় শ্লোক ছিল প্রাপ্তে তু ষোড়শ বর্ষে পুত্র মিত্র বদাচরেৎ, শুধুই মৃত বলে তার প্রতি সম্বোধন বদলে যাবে কেন? লেখা হয়নি তখন।

    আজ অমিতাভদার লেখা পড়ে সেটা মনে পড়লো।

    খুবই ভালো লাগলো।"

    এর সাথে লাইন বাই লাইন একমত।

    আর শেষে, এই লেখার শেষ কটা লাইন ... এইসব মায়ায় জড়িয়েই এই ধুলোমাটিতে থাকা।
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:bc02:8dff:e19b:***:*** | ২১ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৩535080
  • অমিতাভদার লেখা স্টাইল আমার খুব ভালো লাগে। যদিও স্টাইলের মিল নেই, তাও অমিতাভদার লেখা পড়লেই ডিডিদার কয়েকটা লেখা মনে পড়ে যায়, তার কারন হয়তো পুরনো দিনের নানান কথা মনে আসে বলে। বাংলাদেশ নিয়ে আমার সেরকম কোন ইন্টারেস্ট নেই, কিন্তু আমারও বাবার অনেক কথা মনে পড়লো। বাবার ছিল একটা রেডিও আর গ্রামোফোন, সেদুটো মাঝেমাঝে সমস্ত খুলে রিপেয়ার করতো আর আমি পাশে বসে দেখতাম :-)
     
    কেকে কে ধন্যবাদ, তাড়া দেওয়ার জন্য :-)
  • Aranya | 108.5.***.*** | ২১ জুলাই ২০২৪ ০৮:২২535081
  • সুন্দর 
  • অঞ্জনা ঘোষাল | 2409:4060:2e3b:8b91::e08a:***:*** | ২১ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩০535082
  •  জীবন কে ফিরে দেখার কৌশল টা বেশ লাগছে। কবিতাটাও খুব সুন্দর। অপেক্ষায় থাকলাম। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২১ জুলাই ২০২৪ ১৯:৩৬535109
  • @পাপাঙ্গুল
    ফিরে দেখার এই লেখা সেই ঘুড়িটিকে আমার লাটাই থেকে ভো-কাট্টা হয়ে তোমাদের কাছে ভেসে যেতে দেওয়া। তোমাদের কাছে থাকা আরো কিছু ঘুড়ির সাথে আরও কিছুদিন যদি সে টিঁকে থাকার সু্যোগ পায়। অন্যরকম ভালো লাগার কথা জানানোর জন্য ধন্যবাদ। 

    @r2h 
    তোমার ভালো লাগা আমাকেও তার শরিক করে নিয়েছে। অনেক ধন্যবাদ তোমায়। এই লেখায় তুমিও তোমার বাবাবকে পেয়েছ, সে এক বিশেষ আনন্দের। কলকাতার ফ্ল্যাটবাড়িতে ঐ জীবন আঁটে না, সে বাক্সবন্দি হয়ে থেকে যায়; কি আর করার, জীবন তার নিজের পথে ছড়ায়, গুটিয়ে নেয়। আরও একটি কথা বলার আছে, বলছি, একটু বাদেই।

    @kk 
    সেই ত, ভাগ্যিস তুমি তাড়া দিলে। কিছুতেই আর বসা হচ্ছিল না। বরাবরের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী স্থিতিজাড্য আবার আমায় খুব করে জড়িয়ে নিয়েছিল। অনেক ধন্যবাদ নিও। তোমার বলা ঐ ক্যামেরাও একটি ছিল আমার। সেটি খুলে ফেলে তাতে আবার নিজের আঁকা ছবির 'রীল' বানিয়ে ভরে নেওয়া। laugh
     
    @r2h এবং @kk
    ঐ শ্লোক শুনে, তাতে জারিত হয়ে আমারও বড় হওয়া। সময়ের নিয়মে সে মানুষের শরীর হারিয়ে গেলেও তার সাথে আমার নিত্য কথা বলা থেমে যায়নি। তাকে 'আপনি' বলে আমি দূরে সরিয়ে দেব! সে আমি পারব না, যে যাই বলুন না কেন। সবার মাঝে তাই নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছা হয়নি আমার। আজ তোমাদেরও সাথে পেয়ে ভালো লাগছে খুব। 

    @dc 
    তোমার ভালো লাগা জেনে কি যে ভালো লাগল, আহা! অনেক ধন্যবাদ নিও। ডিডির লেখা অসাধারণ। তাকে মনে পড়ানোয় আমার লেখা ধন্য। তোমার বলা যন্ত্রদুটি আমাদের বাড়িতে ছিল না। তাদের খুলে ফেলা-জুড়ে তোলা দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার। ঃ)

    @Aranya 
    অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

    @অঞ্জনা
    কৌশলটা ভালো লাগা জানানোর জন্য আর কবিতা ভালো লাগায় অনেক ধন্যবাদ নিও। আশা করি পরের পর্ব আসবে। smiley
     
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ২২ জুলাই ২০২৪ ০০:৪০535143
  • ভীষণ ভীষণ ভালো লাগল পর্বটা। ওরকম একটা ক্যামেরা আর ক্যালিডোস্কোপ আমারও ছিল। একটার ছবি সীমিত আরেকটার ছবি অসীম। কিন্তু ক্যামেরার ছবি ফিরে ফিরে আসত, ক্যালিডোস্কোপের ছবি আর ফিরে পেতাম না। কিন্তু এই ক্যালিডোস্কোপ আবার ছোটবেলার সেইসব ছবি ফিরিয়ে দিল। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২২ জুলাই ২০২৪ ০৬:২৯535152
  • পড়া এবং ভালো লাগা জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ, রমিত! ঐ খেলনাদুটো যে তোমার কত আনন্দের উৎস ছিল সেটা বুঝতেই পারছি।  সেই দিনগুলোর ছবি ফিরে দেখতে পাওয়ায় ভালো লাগল আমারও খুব। 
  • | ২২ জুলাই ২০২৪ ১১:০২535157
  • এই পর্বটা অন্যরকম ভাল।  এই ধারাবাহিক পড়েই কিছুদিন আগে আমার ক্যালাইডোস্কোপটা বের করেছিলাম। সেটার আবার সামনের দিকে ডটপেন। ছোট সাইজের রিফিল ভরতে হয়। 
     
     
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২২ জুলাই ২০২৪ ১৬:১১535161
  • ভালো লাগা জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ, দমুদি। কলম-ক‍্যালাইডোর একটা ছবি দেখতে মন চাইছে খুব। হবে কি?
  • | ২৩ জুলাই ২০২৪ ০৯:৩৭535180
  • আচ্ছা কদিন পরে দেব লহমাদাদা।  বাড়িতে বড্ড উল্টোপাল্টা হয়ে আছে সব। 
  • যদুবাবু | ২৫ জুলাই ২০২৪ ০২:৪৮535280
  • আজকে আরেকবার পড়লাম। বড্ড ভালো লেখো। 
     
    তুমি আমার থেকে অনেক বড় কিন্তু কী করে যেন ওই ছোটবেলার গল্পগুলোর মধ্যে অনেক মিল। আমাদের পাড়াতেও দুপুরবেলার দিকে ডাক শোনা যেতো, এই বঁটিধ্ধার।‌ ওই শান দেওয়ার চাকার গা থেকে ছিটকে পড়া ফুলকি দেখে আশ্চর্য রোমাঞ্চ হতো, মনে আছে। আমাদের বাড়ির পাশে খুব ছোট্ট একটা কারখানা ছিল নাট বল্টু ইস্ক্রুপ বোল্ট এসব বানাতো, মাঝে মাঝে ঢুকে ওদের কারিকুরি ভালো করে দেখতাম। 
     
    আর আসত সেই শিল কাটার লোক। একটা ছেনি দিয়ে টুকটুক করে কি সুন্দর প্যাটার্ন হত মুহূর্তের মধ্যে। এখন আসে বলে মনে হয় না। 
     
    আর কী বলি, ঘুড়ি আমিও ওড়াতে পারি না, কিন্তু ওই ... আর সব ঘুড়ি বিষয়ক জিনিষ পারি। সেই নিয়ে কোনো একটা লেখায় ম্যালা ফ্যাচফ্যাচ করেছি তাই আর করলাম না। 
     
    আর আমারও সেই ছোটো থেকে বরিশাল আর যশোরের গল্প। দিদুর কাছে শুনতাম। কোনোদিন যাওয়া হয়নি। আগে সব "হয়নি"র অর্থ ছিল "একদিন নিশ্চয়ই হবে", এখন আর কিছুই ভাবি না। 
     
    আর লেখার সেরা অংশ কিন্তু একদম শেষে, ওই একটি শব্দ — ক্রমশঃ! 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৫ জুলাই ২০২৪ ০৮:০১535290
  • যদুবাবু, তোমার সেই ঘুড়ি ওড়ানোর ছাদের গান পড়েছিলাম। কত কিছু যে তুমি ধরেছিল সেখানে! ভালো লেগেছিল খুব। তোমার এবারের লেখাটা পড়তে বসে সিরিজটার থেকে আরো কয়েকটি চুপচাপ পড়ে এলাম, আগেও পড়েছি। আশা করি, সিরিজে আরও লেখা জুড়বে তুমি।
     
    আমাদের সময়ের ছোটবেলাটা একটু একটু পাল্টে তোমাদের সময় পর্যন্তও হয়ত চলে এসেছিল, তারপর সে বিদায় নিয়েছে ভালো মতন।
     
    পড়া আর তারপর ভালো লাগা জানানোর জন‍্য অনেক ধন্যবাদ‌।
     
    ক্রমশ: - হুমমমম্ :)
  • Prativa Sarker | ২৫ জুলাই ২০২৪ ১৫:২৪535306
  • খুব ভালো লাগল। সল্ট লেকে ছুরি কাঁচি ধার করবার লোক এসেছিল গত পরশু। এখানে তো ছবি দেওয়া যায় না, নাহলে একদম এই বর্ণনার সঙ্গে মিলে যেত। কোচবিহারের কথা কারও মুখে বা লেখায় শুনলে বা দেখলে বড় ভালো লাগে।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৫ জুলাই ২০২৪ ১৮:৩৯535317
  • বহু পুরনো ছবিটির সঠিক হওয়ার কথা জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ প্রতিভাদি। আর ঐ পেশায় এখনো কেউ কেউ যুক্ত আছেন এটা ত একেবারেই ভাবতে পারিনি। 
     
    কোচবিহার নিয়ে কথায় আনন্দ পেলে সে আমার অতিরিক্ত পাওনা। দুঃখের এই যে সে গল্প করার রসদ আমার সামান‍্যই। 
  • অভিজিৎ। | 103.24.***.*** | ২৬ জুলাই ২০২৪ ২০:৪৪535390
  • ছবির রিলের মত লেখা গুলি চোখের সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, এক অনির্বচনীয় আবেগ মথিত করছে মনপ্রাণ। কত কি মনে পড়ছে। পিতৃদেব নিজ ক্ষৌরকর্মে ব্যস্ত, পাশে কনিষ্ঠ পুত্র পিতৃদেব আদিষ্ট কোন একটি কাজে মগ্ন। ঘটনা মঞ্চ ঘরের সামনে বারান্দা। তার পাশে ই রাস্তা। এমন সময় ভ্রাম্যমাণ ঘোষণা গাড়ির রঙ্গিন হ্যান্ড বিল বিতরণ। তারপর যা ঘটিল মুহূর্ত কাল ব্যাপী, যেন হফ স্টেপ জাম্প। কনিষ্ঠ পুত্র রাস্তায় দৌড়ায়মান ভ্রাম্যমাণ গাড়ির পিছনে, অপসৃয়মান। ক্ষণ মুহূর্ত মাত্র।লোককোলে রুধিমাখা কনিষ্ঠ পুত্র। পিতা উঠিলেন, দেখলেন। তার পরের ঘটনা টি ও পলকে ঘটিল। পিতার হস্ত ধৃত শেভিং ব্রাশের পশ্চাদ অংশ টি পোস্ট অফিসের সিল মারার মত  কনিষ্ঠ পুত্রের মস্তকে বসিল, শোণিত ধারা। হৈ হৈ প্রতিবেশী ফায়ার সার্ভিসের স্টাফ দের কয়েক জনের( এই দুষ্টু অভ্যন্ত মেধাবী, বড় পুত্রের ন্যায়, ছেলে টিকে ভালবাসত) ছুটে আসা, হাসপাতাল গমন। পিতৃদেব কে মৃদু অনুযোগ। পরের অংশ গুলি বড়ভাই আরো ভালো জানাতে পারবে। যাক আমিও ক্রমশ র অপেক্ষায়। । 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৭ জুলাই ২০২৪ ০৫:০৮535407
  • অভিজিৎ। | 103.240.99.176 | ২৬ জুলাই ২০২৪ ২০:৪৪
    সেই দিনের ঘটনার ছবি এর থেকে চমৎকার করে আঁকা আমার সাধ্যে নেই। তবে এর চূড়ান্ত বিন্দুটি আমার জন্য তোলা রইল সেটা দেখলাম। আশা করি কোন এক পর্বে যথাযোগ্য মর্যাদায় তুলে আনা যাবে সেই জবাব-নেই উক্তিটিকে। laugh
     
    পড়া আর ভালো লাগা জানানোর জন্য অনেক ভালোবাসা আর ধন্যবাদ।
  • অভিজিৎ। | 103.24.***.*** | ২৭ জুলাই ২০২৪ ০৯:১২535411
  • আমি ও অপেক্ষায় আছি
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন