এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মধুপুর বাগানবাড়ির ভৌতিক মালিক

    Ziauddin Choudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ নভেম্বর ২০২৫ | ৮৭ বার পঠিত
  • মধুপুর বাগানবাড়ির ভৌতিক মালিক
    জিয়াউদ্দিন চৌধুরী

    ফরহাদ আনোয়ার আমার ছোট বেলার বন্ধু। প্রাথমিক স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত আমরা একসাথে পড়েছি। দুজনে একসঙ্গে আমেরিকায় পড়তে যাই যদিও বিভিন্ন স্টেটে। আমি ছিলাম ক্যালিফোর্নিয়া আর ফরহাদ ছিল নিউইয়র্ক। আমি লেখাপড়া শেষে দেশে অর্থাৎ ঢাকা ফিরে যাই, কিন্তু ফরহাদ নিউইয়র্ক থেকে যায়, কারণ নিউইয়র্ক তাকে ভীষণ ভাবে আকর্ষন করে ছিল। এমবিএ পাস করার পর প্রথম একটি ব্যাংকে চাকুরী পায়, কিন্তু এর পর বরাত খুলে যায় তার ওয়াল স্ট্রিটে এক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে বড় চাকুরী পেয়ে। কয়েক বছর পর সে প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হয়ে প্রচুর রোজগার করে। পনেরো বছর কাজ করার পর হটাৎ তার নিউ ইয়র্কের মোহ কেটে গেলে সে ঢাকা চলে আসে, আর এসে দুটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি শুরু করে। গত পাঁচ বছরে ব্যবসা তার রমরমা। গুলশানে বাড়ি কিনে সেখানেই থাকতো সে একাই, বিয়ে থা করেনি, আর করবে বলে বিশেষ সম্ভাবনা নেই। বাড়িতে প্রায়ই বন্ধু বান্ধব নিয়ে পার্টি করে রাতে, আর সারা দিন ব্যবসা নিয়ে থাকে।

    ঢাকা আসার পর আমাদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ, প্রত্যেক সপ্তায় দেখা হত। গত বছর হটাৎ আমাকে ফরহাদ বলে সে একটি বাগানবাড়ি করবে ঢাকার আশেপাশে। বাগানবাড়ি তখন একটি ফ্যাশনে দাঁড়িয়েছে, যার কিছু পয়সা হয়েছে সেই আশুলিয়া, জয়দেবপুর, কিংবা টংগির কাছে জায়গা কিনে বাংলো মতো ঘর বানিয়ে সময় কাটাচ্ছে বন্ধু বান্ধব পরিবার নিয়ে। তাতে আমি অবাক হলামনা, কিন্তু অবাক হলাম শুনে যে সে বাড়ি বানাবেনা, বাড়ি কিনবে এবং তাও একটি একশো বছরের পুরনো বাড়ি। বাড়িটি মধুপুর শালবনের কাছে, প্রথমে এক জমিদারের ছিল, পরে এক মুসলমান ব্যবসায়ী কিনে নেন ভারত বিভক্তির কিছু পর। বাড়িটি বহুদিন খালি পড়েছিল কারণ শেষ মালিক মারা যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারীরা বাড়িটি সামলাতে পারছিলোনা। এছাড়া বাড়ি সম্পর্কে নানা গুজব শোনা যাচ্ছিলো বলে অনেক লোক এতে আগ্রহ প্রকাশ করতোনা কেনার জন্য। ফরহাদ বাড়িটি কেনার পর আমাকে কয়েকবার বলেছিলো বেড়াতে যাবার জন্য কিন্তু কাজের চাপে যেতে পারিনি। ঢাকা থেকে মধুপুর এমন কোনো দূরে নয় তাবু যাব যাব করে যাওয়া হয়নি। গত ডিসেম্বর ফরহাদ আবার অনুরোধ করলে যেতে রাজি হলাম। সে বললো আরো দু তিন জন বন্ধুকে সপরিবারে নিমন্ত্রণ করেছে এবং এবার তার ওখানে সবাই মিলে ইংরেজী বর্ষ বিদায় আর নুতন বর্ষ বরন করবে। আমি বললাম আমিও তাহলে স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে যাব।

    যেমনি প্ল্যান অমনি কাজ। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আমি ফৌজিয়া আর দু ছেলেকে নিয়ে রওয়ানা হলাম মধুপুর বাগানবাড়ির উদ্দেশে। আমি আমার গাড়ি নিয়ে যেতে পারতাম, কিন্তু ফরহাদ বললো গাড়ি না নিয়ে ট্রেনে টাঙ্গাইল চলে আসতে। সেখান থেকে তার জীপ্ আমাদের নিয়ে যাবে তার বাগানবাড়িতে। এর কারণ সে বললো বাগানবাড়ি যেতে রাস্তা খুব খারাপ, জীপ্ ছাড়া চলা যায়না। আমি তাই বৌ ছেলেদের সহ টাঙ্গাইল গিয়ে উপস্থিত হলাম এক সকালে। স্টেশনে দেখলাম একজন ড্রাইভার জীপ্ সহ দাঁড়িয়ে। জীপের গায়ে লেখা ছিল ফরহাদের কোম্পানির নাম,তাই চিনতে অসুবিধা হলনা।

    রাস্তা সত্যিই খুব খারাপ ছিল, বড় বড় গর্ত, চাঁদের গর্তের মত। ইটের রাস্তা কিন্তু ইট গুলো প্রায় বেরিয়ে এসেছে। পনেরো মাইল যেতে আমাদের লাগলো একঘন্টা, আর কোমরের দফারফা। ছেলে দুটো কিন্তু বেশ মজা পাচ্ছিলো জীপ্ লাফানোর সংঘে তারাও লাফাচ্ছিল।তাদের একজনের বয়েস বারো আরেকজন নয়। ফৌজিয়ার তো প্রায় বমি আসছিলো ঝাঁকুনিতে। রাস্তাটি ছিল বেশ আঁকাবাঁকা, এক পাশে শাল বন আর এক পাশে নদী। ভয় হচ্ছিলো কখন না জীপ্ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে। বুঝলাম ফরহাদ কেন আমাকে আমার গাড়ি নিয়ে আসতে মানা করেছিল।

    এ ভাবে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বাগানবাড়ি পৌঁছালাম বেলা দুটোর পর। সে কি মস্ত বাড়ি। বিশাল দোতালা দালান, পুরোনো রাজা মহারাজদের প্রাসাদের আদলে তৈরি। শুনেছিলাম যে বাড়িতে বারোটি শোবার ঘর, একটি বিশাল হল কামরা, তার পাশে পঞ্চাশ জন মানুষের এক সাথে খাবার ডাইনিং হল। বাড়ির সামনে গাড়ি বারান্দা। বাড়িতে ঢোকার আগে উঁচু লোহার গেট, আর গেট থেকে গাড়ি বারান্দা পর্যন্ত লম্বা লাল সুরকির রাস্তা। সামনে সুন্দর সবুজ ঘাসের লন, তাতে নানান ধরনের ফুলের বাগান। দেখেই আমাদের চোখ জুড়িয়ে গেলো, রাস্তার কষ্ট ভুলে গেলাম।

    গাড়ি বারান্দায় নামতে দেখি একজন লোক বেরিয়ে এল, বেশ লম্বা মত, রং ফর্সা পরনে নীল সোয়েটার, সাদা শার্ট আর সাদা প্যান্ট। চোখে রঙ্গিন চশমা। বেরিয়ে সে আমাদের দেখলো কিন্তু কিছু না বলে আবার ভেতরে চলে গেলো। অদ্ভুত লোকতো, আমি ভাবলাম। প্রথমে মনে করেছিলাম সে হয়তো ফরহাদের কোনো কর্মচারী, পরে ভাবলাম সে হয়তো ফরহাদের কোন মেহমান। সে যাই হোক আমরা নামলে ড্রাইভার আমাদের মাল পত্র নিয়ে ঘরে ঢুকালো। সে কি এলাহী বাড়ি, হল ঘরের ভেতর ইয়া ইয়া ঝাড়বাতি, বিরাট বিরাট ঘড়ি, মেঝে ইতালিয়ান মার্বেল দিয়ে তৈরী। আমরা ঢোকার সাথে সাথে ফরহাদ উপর তালা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল। "তোরা এসে গেছিস তাহলে সময় মতো", সে বললো। "তোদের জন্য দুটি কামরা উপর তলায়। বিপিন মালগুলি উপরে নিয়ে যাবে", এই বলে সে একটি লোককে দেখালো, সে ফরহাদের অগণিত সেবকদের একজন। "তোরা উপরে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নিচে চলে আয়, আমরা চারটার সময় একসাথে চা নাস্তা খাব" ফরহাদ বললো।

    আমরা উপরে গিয়ে নিজেদের কামরায় গেলাম। পাশাপাশি দুটো শোয়ার ঘর, দুটিই প্রকান্ড। সেকালের ভারী ভারী পালঙ্ক, সোফা , আলমারি, কিনা আছে। তবে বাথরুম একটি দু রুমের জন্যে। আমরা পালা ক্রমে মুখে হাত ধুয়ে চারটার সময় নিচে নেমে এলাম। এসে দেখি আর মেহমানরা ও উপস্থিত। এদের কাউকে চিনিনা, কারণ সবাই বিদেশী। ফরহাদ তার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিছ লোককে আমন্ত্রণ করেছে। একটি জার্মান দম্পতি, একটি আমেরিকান দম্পতি, একজন কোরিয়ান, আর আরেকজন জাপানী। শুধু কোরিয়ান একা। আমি একমাত্র সন্তান নিয়ে এসেছি। পরিচয় পালা শেষ হবার পর, খাবার আসতে থাকল। খাবার প্রচুর, ঢাকা থেকে আনা পেস্ট্রি, কেক, ঘরে তৈরী সমুসা, সিঙ্গারা, নানা ধরনের ফল। আমরা দুপুরে খাইনি, তাই প্রচুর খেলাম। আরো খেতাম যদি না ফরহাদ বলতো যে আজ রাতে হরিনের মাংস ভুনা আর রাজহাঁসের রোস্ট আছে।

    নিচে কিছুক্ষন গল্প সল্প করে আমরা আবার উপরে উঠে এলাম। আমি উপরে এসে প্রথম যেই ছেলেদের কামরায় ঢুকেছি তখনি দেখি দুপুরের সেই প্রথম দেখা লম্বা লোকটি ছেলেদের কামরা থেকে বেরিয়ে আসছে, চোখে তখনো কাল চশমা। আমি কিছু বলার আগেই সে চুপ করে চলে গেলো। অদ্ভুত তো, লোকটা কে? মেহমান তো নয়, তাহলে তো চায়ে দেখতাম। সেকি ফরহাদের কোনো কর্মচারী?

    উপরে এসে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারবোনা। ঘুম ভাঙলো বিপিনের ডাকে, বললো রাতের খাবার তৈরি সবাই নিচে। তাড়াতাড়ি আমরা সপরিবারে নিচে নেমে এলাম।

    আবার প্রচুর খাবার, হরিনের মাংস ভুনা আর রাজহাঁস ছাড়াও ছিল দু তিন রকমের কাবাব, চিতল মাছের কোফতা; মোটমাট ফরহাদ তার অতিথিদের জন্য আয়োজনের কোন কৃপণতা করেনি। খাবার দাবার শেষ হবার পর আমি ছেলেদের তাদের কামরায় পৌছিয়ে দিয়ে এসে নিচে অন্যান্য অতিথিদের সাথে যোগ দিলাম। আড্ডা বেশ জমে উঠেছিল, তাই ফৌজিয়া আমাকে বললো উপরে গিয়ে দেখে আসতে ছেলেরা ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা। উপরে গিয়ে দেখি ছেলে দুটো মহা আনন্দের সাথে একটি ব্যাটারী চালিত খেলার ট্রেন নিয়ে খেলছে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম তারা ট্রেন পেলো কোথা থেকে। তারা বললো "ওই যে, চশমা ওলা লোক। " আমি আরো অবাক, তাহলে নিশ্চয়ই লোকটি ফরহাদের কোনো কর্মচারী, বাড়ির দেখা শোনা করে। নিচে এসে ফরহাদকে লোকটি সম্পর্কে বললে সে বললো "ও, তুই গোমেজের কথা বলছিস? ও আমার বাড়ির আর জায়গার কেয়ারটেকার।" আমি নিশ্চিন্তের নি:শ্বাস ফেললাম।

    পরদিন একত্রিশ ডিসেম্বর। দিনে শালবনে পিকনিক ছিল। বেশ ভালো কাটলো ফরহাদ আর তার অতিথিদের সাথে। পিকনিকের খাওয়া দাওয়া ইংরেজি কায়দায়। বিভিন্ন রকমের স্যান্ডউইচ, রোস্ট, কেক, প্যাস্ট্রি এসব ছিল। ছেলেগুলো বেশ মজা পেলো জঙ্গলে ঘুরে। আমরা বিকেল নাগাদ ফিরে এলাম বাগানবাড়িতে। রাতে তুমুল পার্টির আয়োজন করেছে ফরহাদ নূতন বর্ষ বরনের জন্য। লনে বেলুন ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। যদিও শীত কাল তাবু বাইরে রাতে বসা যায় সোয়েটার পরে। রাতের খাবার বাইরেই করা হয়েছে টেবিল লাগিয়ে। সন্ধ্যার পর নুতন কয়েকজন অতিথি এলেন টাঙ্গাইল থেকে রাতের অনুষ্টানে যোগ দেয়ার জন্য। এদের মধ্যে দুজন গায়ক গায়িকা।

    রাতের গানের আসর শুরু হওয়ার আগে আমি ছেলে দুটিকে উপরে রেখে আসতে গেলাম কারণ এতো রাত পর্যন্ত ছেলেদের আমরা জাগতে দেইনা। উপর তলায় যেই পৌঁছেছি তখন দেখি সেই লম্বা লোকটা আমার ছেলেদের দিকে তাকিয়ে আছে বারান্দার আরেক পাশ থেকে। আমি কিছু বলতে গেলে দেখি সে কোনার আরেক কামরায় ঢুকে হাওয়া হয়ে গেলো। যাই হোক ফরহাদ যখন বলেছে সে তারই লোক এ নিয়ে আমি আর চিন্তা করলামনা। নিচে বাগানে গিয়ে ফরহাদ আর অন্যান্যদের সঙ্গে পার্টিতে যোগ দিলাম।

    যাবার দিন ফরহাদকে বললাম "তোর কেয়ারটেকার কে বড়বেশি দেখলামনা পার্টিতে। আমার ছেলেগুলো খুব খুশি তার উপর। সে তাদের খেলনা ট্রেন তাদের রুমে এনে দিয়েছিলো সেদিন রাতে।কাল রাতে সে দাড়িয়ে ছিল আমাদের কামরার সামনে। বোধ হয় আমাদের রুম গুলো ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য।" ফরহাদ অবাক হয়ে বললো "কার কথা বলছিস তুই? গোমেজ? সে তো কাল থেকে জ্বরে ভুগছে।" এই বলে ফরহাদ আমাকে বলল "ভাল কথা, চল গোমেজকে একটু দেখে আসি”। আমি চললাম তার পেছন পেছন।

    কেয়ারটেকার বাগানবাড়ির নিচতলার এক কোনায় একটি ঘরে থাকে। ঘরে ঢুকে দেখি একজন ভারী গোঁফ ওয়ালা মোটাসোটা লোক বিছানায় শুয়ে আছে চাদর মুড়ি দিয়ে। ফরহাদকে দেখে সে উঠে বসলে ফরহাদ বললো "গোমেজ, তোমার সাথে আমার প্রিয় বন্ধু মাজহার সাহেবের পরিচয় করিয়ে দিতে এলাম। তা তুমি কেমন আছো এখন? " লোকটি মাথা নেড়ে বললো "কিছুটা ভালো এখন। "ঠিক আছে, তুমি রেস্ট নেও", বলে ফরহাদ আর আমি বেরিয়ে এলাম। আমার তো তখন বিস্ময়ের ঘোর, এ যদি আসল কেয়ারটেকার হয় তাহলে সে চশমাওয়ালা লোকটি কে? ফরহাদ কি জানে যে আরেক ব্যক্তি ঘুরে বেড়াচ্ছে তার বাড়িতে?

    আমি আর চুপ না থেকে ফরহাদকে জিজ্ঞেস করলাম গোমেজ ছাড়া আর কোনো কর্মচারী তার আছে কিনা যে বাড়ির তদারক করে। ফরহাদ মাথা ঝেঁকে বললো না, বাড়ি তদারকির জন্যে আর কেউ না গোমেজ ছাড়া। "তা হলে সে চশমাওলা লোকটি কে যাকে আমি, ফৌজিয়া আর ছেলেরা দেখেছে ?" আমি জানতে চাইলাম। "কি বলছিস তুই, কে চশমাওলা? তোর ভুল হয়েছে। বাড়ির অন্য কোন চাকর কে দেখেছিস হয়তো। আমি আর কথা না বাড়িয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে কামরায় ফিরে গিয়ে ফৌজিয়া আর ছেলেদের আনতে গেলাম।

    আমি আর ফৌজিয়াকে আমার এই অদ্ভুত ঘটনার কথা বললামনা, ছেলেদেরকে তো নয়ই। কিন্তু মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকল চিন্তা আমি কাকে দেখলাম, সে কি কোনো অশরীরি ?

    আমরা আবার জীপে চড়ে টাঙ্গাইল অভিমুখে রওয়ানা হলাম। সেই আঁকাবাঁকা পথ, সেই গর্ত আর পাশে নদী। যেতে যেতে হটাৎ আমাকে ড্রাইভার বলে উঠলো স্যার, এই যে মোড়টা দেখছেন এখানে পাঁচ বছর আগে এক বিরাট দুর্ঘটনা ঘটে ছিল এই বাগানবাড়ির আগের মালিককে নিয়ে। "কি হয়েছিল, আমি জিজ্ঞেস করলাম। "সে এক ভয়ানক ঘটনা। আগের মালিক ছিলেন শাহনাওয়াজ খান, তিনি তার বাবার পর বাড়িতে থাকতেন আর ব্যবসা দেখতেন। তার ছিল দুটি ছেলে, আপনার ছেলেদের বয়সী।" ড্রাইভার বলতে থাকলো। "তার পর কি হল? আমি জানতে চাইলাম। "খান সাহেব নিজে জীপ্ চালাতে পছন্দ করতেন। এক রাতে তিনি আর তার পরিবার টাঙ্গাইল থেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। সে দিন ঘোর বর্ষা, সাহেব গাড়ি চালাচ্ছিলেন, হটাৎ গাড়ি পিছলে গেলে ব্রেক করতে গিয়ে গাড়ি উল্টে নদীতে পড়ে যান। নদী তখন বর্ষার পানিতে গভীর, গাড়ি পড়ে গেলে তারা কেউ উপরে উঠতে পারেননি। পর দিন লোক তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে নদী থেকে। এর পর বাড়িটি বহুদিন পরিত্যক্ত থাকে।" ড্রাইভার এই বলে চুপ করলো কিছুক্ষন। আমি কিছু বলার আগে সে আবার বলতে শুরু করলো,” স্যার, বাড়িটি আমাদের মাজহার স্যার কেনার আগে কেউ কিনতে চাইতো না, জানেন কেন? " আমি বললাম, কেন? "স্যার, সত্যমিথ্যা বলতে পারবনা, তবে আমি শুনেছি শাহনাওয়াজ সাহেব কে কেউ কেউ দেখেছে বাড়িতে ঘুরতে। তিনি নাকি সারা বাড়ি পাহারা দেন।" আমি খালি অবাক হয়ে শুনলাম ড্রাইভারের কথা। তার কথা শেষ হলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি কখনো শাহনাওয়াজ সাহেবকে দেখেছো? " ড্রাইভার বললো, “অবশ্যি, আমি তার ড্রাইভারের সহকারী ছিলাম”। "তিনি দেখতে কেমন ছিলেন? "আমি জানতে চাইলাম। "ও, তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুপুরুষ, লম্বা, ফর্সা, আর ভালো কাপড় চোপড় পরতেন। আর সব সময় তার চোখে থাকতো রঙ্গিন চশমা" ড্রাইভার বললো। আমি আর তাকে কোনো প্রশ্ন করলামনা।উত্তর আমি পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি ঢাকা ফিরে আর কোনোদিন ফরহাদকে বলিনি যে শাহনাওয়াজ খানের প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে আজও তার বাগানবাড়িতে। তাকে শুধু আমি আর আমার পরিবার দেখেছে আমার এ কথা সে কেন বিশ্বাস করবে?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন