জীর্ণতার একশেষ। দিনের আলো, রাতের আঁধার, গোধূলির মায়া -সবই, এই ভুবনের বাইরে। জানলা দরজাহীন এক নড়বড়ে পরিকাঠামো। যেকোনো মুহূর্তে নিজেকে উজাড় করে মাটিতে মিলিয়ে দিতে পারে সে। তবু, টিকে থাকার অদম্য বাসনায়, জীর্ণ শরীরেও রাজকীয় অহংকার মেখে তার অদৃশ্য জয় পতাকা, দূরের কোনো পথিক কে আহ্বান করে। একবার দেখে যাও, ছুঁয়ে যাও ... ...
অদ- ভূত!..হেমন্তের বিকেলগুলো একদম আলাদা। উদাসী আলোয় ভেসে চলে যায়, স্বপ্নের মতো আলতো ছুঁয়ে। দিনশেষের আলোর কাছে, শেষ বিকেলে কাকেদের কা কা স্বরেও যেন ম্লান অনুযোগ। ধীর গতিতে যাত্রা করে বাসার দিকে। দূর আকাশের টিয়ার ঝাঁক খুব তাড়াতাড়ি পাড়ি দেয়, বনের মাঝে মনের মতো ঘরের দিকে। চড়াই, বুলবুলি, টুনটুনিরাও তাড়ায় থাকে নিস্তেজ আলোর দিকে তাকিয়ে।কিন্তু, ওই যে দোয়েলটা, ও কিন্তু শেষ বিকেলের মেহমান। আলোর পরিধি ... ...
চিরকাল!....অনলাভ র কথায় খুব মন খারাপ হয়ে গেছে কলির। কিভাবে বোঝাবে ওকে, কলি এসব ঠিক মেনে নিতে পারছেনা। ওর মন এখনো তৈরী নয়, কোনো বন্ধনে জড়াবার জন্য। নিকেতনের এই আকাশ বাতাস ঝোড়ো হাওয়া, ঝরা বকুলের পথ, হাতিপুকুর ' ভালোমন্দ' 'চাতক' নিয়ে ও দিব্যি মেতে আছে। এভাবেই দিন চলুক না..অনলাভ কী সত্যিই ওকে ভালোবাসে!..নাকি শুধুই সময় কাটানোর ছল..সম্পর্কে গেলেই তার সীমারেখা নিয়ে একটা টানাপোড়েন ... ...
ও যে মানে না মানা..পর্ব ১গৌরপ্রাঙ্গনে বসে গল্প করতে করতে হঠাৎ বৃষ্টি এসে গেল। তাপস আর অনুমিতা আগেই চলে গেছে। মৌ, অর্ক, পিয়াসী, বিতান, অনলাভ আর কলি.. গল্পে গল্পে ভুবন তখন ভরা। "চল হস্টেলে ফিরি"..কলির সায় নেই তাতে। দলবল সাইকেল নিয়ে চললো শ্যামবাটি ক্যানেলের দিকে। ভরা বর্ষায় ক্যানেলের গুম গুম আওয়াজ, কত কথা বলে যায়। শব্দে প্রকাশ পায়, যদিও ওই আওয়াজের গভীর অর্থ শুধু ক্যানেলই জানে। বুঝতে না পারা শব্দের অণুগুলো হৃদয় দিয়ে আঁকড়ে ধরতে চায় কলি, কিন্তু পারেনা। এটুকু বুঝতে পারে ওই আওয়াজের গভীরতা কতটা। মনের কোণে ক্যানেল গুমগুম আওয়াজ করে তাই আজও বয়ে চলে।ক্যানেলের পাশেই মিনু বৌদির চায়ের ... ...
আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে..কলম যেখানে মেঘ-বৃষ্টির বন্দনাগীত গাইবে বলে রেডি, ঠিক সেই মোক্ষম মুহূর্তে মিস্টার কাক্বেশ্বরের ভয়ানক মনখারাপ। বিরহে সপ সপ করছে মন। ঝরঝর করে জল গড়িয়ে পড়ছে চোখ দিয়ে। মেঘ কতো করে বোঝালো। বৃষ্টি সুন্দর নৃত্যগীত পরিবেশন করলো। কিন্তু নাহ, কোথায় কী ! ভগ্নহৃদয়ে, চোখের জল আড়াল করতে উড়ে ... ...
যে ছায়ায়, যে রোদ্দুরেদিনগুলো কেটেছে..তারই মধ্যে একটি দিন।সেদিন বিশ্বভারতীর বাস মিস করলাম। সাইকেল চালাতে জানিনা। প্রথম বছর, হোস্টেল পাইনি। তাই সীমান্তপল্লীর শেষ প্রান্তে 'সূর্যাবর্ত' বাড়ির দোতলায়, আমরা দুই বন্ধু থাকি। বন্ধুটি সাইকেল নিয়ে আগেই বেরিয়ে গেছে।আমি এগোতে থাকি বালিপাড়ার মধ্যে দিয়ে। ভাবনার পালে দোলা লাগে যেদিকেই তাকাই। লাল মাটির পথ, দেওয়ালে আঁকা মাটির বাড়ি, গাছে গাছে সাদা শিম, সজনে ... ...
হে অচেনা..সক্কাল সক্কাল ঠাস ঠাস দ্রুম দ্রুম। হস্টেলের জানলার সপাট আস্ফালন। পূবের জানলার সামনে পড়ার টেবিল। সব ভিজে একসা। বইগুলো চুপচুপিয়ে ভিজেছে। ইস .. কী অবস্থা!.. ধড়ফড় করে উঠে বসে কলি। বৃষ্টির ছাঁটে ঘুম ভেঙে যায়।সক্কাল সক্কাল এমন ভিজে সোদা গন্ধে ঘুম ভাঙলে কার না ভালো লাগে..জানলা বন্ধ করতে গিয়ে নিজেও ভিজে গেল কলি। শ্রীনিকেতন গার্লস হস্টেলের একতলায় ... ...
তালান্ডু স্টেশন পেরিয়ে ট্রেন ছুটে চলেছে দুর্বার গতিতে। আকাশে ঝিমঝিমে মেঘ। ট্রেনের পিঠে চেপে পাড়ি দিচ্ছে মেঘেদের ছানারা.. মা মেঘেরা পাল্লা দিয়ে ছুটেছে আকাশের বুকে।রসুলপুরে শ্লথ হয়ে আসে ট্রেনের গতি। জানলার বাইরে থেকে হাত বাড়ায় মাঝারি এক আম গাছ। খুশি খুশি মুখে বলে, রোজ খুব ভোরে নাকি একটা ছোট্ট নীল পাখি আসে ওর কাছে। আমাকে জিজ্ঞেস করে আম গাছ, ' জানো ওর কি নাম!' আমি বলি 'তুমিই তো ... ...
--------------------------- কলির শান্তিনিকেতন, শান্তিনিকেতনের কলি। প্রায় দু-মাস গরমের ছুটি কাটিয়ে, এবারে ফেরার পালা। এই দু -মাসে চিঠি সঙ্গী। ইনল্যান্ড কিংবা খামবন্দী গন্ধ মাখা চিঠি। কত, কত চিঠি!!..পরস্পরকে এভাবেই ছুঁয়ে থাকা। এবারে ফেরা। প্রথম প্রথম বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা। এ-বাড়ি। ও-বাড়ি। সীমান্তপল্লীতেই ঘোরাফেরা। বালি পাড়ার কাছাকাছি দোতলা বাড়ি। ফুল ফল সবজির বাগান। কলিদের ঘর ... ...
শুনেই উথাল পাথাল মন। আসছে..সে আসছে। তার পৌঁছবার পদধ্বনি ওই শোনা গেল বুঝি। দিনের গতির সাথে, আলোর বাড়া কমা। মধুমালতীর পাতায় পাতায় ছায়ামাখা মেঘের ইশারা। চামেলীর সরু সরু ডালে, পাতার ঝিলিমিলি ছায়ায় প্রতীক্ষার প্রহর কি শেষ হবে তাহলে.. দক্ষিণের বারান্দার পুবের কোণে থামের আড়ালে, শ্বেত অপরাজিতা আর ছোট টবে আমগাছের কচি পাতায় ছায়াদের লুকোচুরি। আজ খুব ভোরেই চলে এসেছে পটা। ওহ্, চিনতে পারোনি বুঝি ... ...