এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে..

    Kasturi Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ নভেম্বর ২০২৪ | ৯৭ বার পঠিত
  • জীর্ণতার একশেষ।
    দিনের আলো, রাতের আঁধার, গোধূলির মায়া -সবই, এই ভুবনের বাইরে। জানলা দরজাহীন এক নড়বড়ে পরিকাঠামো। যেকোনো মুহূর্তে নিজেকে উজাড় করে মাটিতে মিলিয়ে দিতে পারে সে। তবু, টিকে থাকার অদম্য বাসনায়, জীর্ণ শরীরেও রাজকীয় অহংকার মেখে তার অদৃশ্য জয় পতাকা, দূরের কোনো পথিক কে আহ্বান করে।

    একবার দেখে যাও, ছুঁয়ে যাও আমায়!..
    কথা বলো, কাছে এসো..
    খুঁজে নাও আমার অন্ধকারের অতলে ডুবে যাওয়া সেই সিঁড়ি। উঠে এসো সেই অলিন্দে, যেখানে মহীরুহ নিজেদের বিস্তৃতির ঘনঘটায় আছন্ন। তার ডালে ডালে পাখির বাসা, প্রজাপতিদের সংলাপ। নড়বড়ে থামের খাঁজে উঁকি দিচ্ছে শ্বেত আকন্দ, ধুতরো।
    দিনের আলোয় হাওয়াদের হাহাকার। পাল্লাহীন দরজা জানলার পরিসীমায় অনায়াস 'তাঁদের' যাতায়াত।

    এ তো বাইরের দলিল।
    চোখের আলোয় যা উদ্ভাসিত।
    যা দেখা গেলনা, তা যে অপরিসীম সত্য!..
    গমগমে ভরা ভর্তি এক রাজকীয় প্রাসাদ। জমিদার, নায়েব, বরকন্দাজ, হাতি, ঘোড়া, বন্দুক, শিকার, আলোর রোশনাই, ঝাড়বাতির উজ্জ্বল অহংকার, বিরাট বিরাট দরজা জানলায় রঙিন কাঁচের আশ্চর্য বিচ্ছুরণ। মেঝের গালচে, মিনে করা আতরদানি, হাতির দাঁতের কারুকার্য করা বিরাট পালঙ্ক, রুপোর ঝালোর দেওয়া হাত টানা পাখা, ধবধবে ফরাসি চাদর বিছানো বিছানা, দাস দাসী নফর চাকর। রাতের আঁধারে এস্রাজের সুখ নিদ্রা। সবই। ছিল।
    আছে তো..
    যা আছে, তা কালের নিয়ম।
    এখন সবাই রাজা। এখন সবাই চাকর।
    এখন সবাই শিকারি। এখন সবাই শিকার।
    ফরাসি আতর দূরের পানে পথ হারিয়েছে। উঠোনের একপাশে শরতের আলো। ঝরে পরা শিউলির আনন্দ-বেদনা। শিউলির মৃদু সুবাসে বিরাট ওই নড়বড়ে ইমারত শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলে। এস্রাজের সুর গেছে থেমে। তবু কোনো রাতচরা পাখির সুরে ভেসে যায় ওই ভগ্ন ইমারতের হৃদয় অলিন্দ। সুখের নয় আজ শান্তির আয়োজন হয়েছে সারা।

    ভোরের আলোয় ওই ইমারতের চারপাশে, আগাছায় জঙ্গলে জেগে ওঠে পাখিরা। বন টিয়ারা খুনসুটিতে মেতে ওঠে। কচি ছানাদের মুখে খাবার তুলে দেয় মা পাখি। ছাতারের দল ঝগড়ায় ব্যস্ত হয়। বীর হনুমানের দল হুপ হুপিয়ে ঘুরে বেড়ায় ভগ্ন পাঁচিল ধরে।
    সবই আছে। মহিরুহের শিকড়ে শিকড়ে সব কথা বিস্তৃত হয়ে আছে। সোহাগী অনন্তলতা প্রেমে, উষ্ণতায় জড়িয়ে রেখেছে তাকে।
    অমাবস্যায় এই ইমারতে জ্বলে ওঠে বিন্দু বিন্দু আলো। জোনাকিরা আলো নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এ ঘর থেকে ও ঘর, কুঁয়ো তলায়, উঠোন পেরিয়ে নাচ ঘরের অন্তিম অন্ধকারে।
    কোজাগরী পূর্ণিমার আলোয় লক্ষ্মী আসেন ধীর পায়ে। লক্ষ্মীর সোনার কলস ঠিকরে আলোয় আলো হয়ে ওঠে চারপাশ।
    আঁধারের বুকে আলপনা জেগে থাকে। কে দিল, এই ভগ্নপুরিতে আলপনা!..পদ চিহ্ন ধরে এগিয়ে চলেন লক্ষ্মী। বাহন কে সঙ্গে নিয়ে উঠে আসেন চাঁদের আলোয় নিমগ্ন ছাদে। শ্বেত ডানায় জগতের অমঙ্গল ঢেকে দিয়ে মা লক্ষ্মীর পদতলে আসীন হয় লক্ষ্মী পেঁচা।
    ভগ্ন ইমারত হাত জোড় করে চেয়ে থাকে মা লক্ষ্মীর পানে।
    যাবতীয় অহংকার ত্যাগ করে নির্লিপ্তির সাধনাই, আজ তার একমাত্র ব্রত।

    দুর্গাপূজোর নবমীর সকালে পৌঁছেছিলাম বোলপুরের রাইপুর রাজবাড়িতে। সকাল ৮ টার এক নিস্তরঙ্গ রোদ্দুরে, গহন ছায়া মাখা এই জমিদার বাড়িটি যেন ধ্যানমগ্ন তপস্বী, যার ভিতরে বাহিরে মহাকালের স্রোত, অনন্ত কালের ভাসমান গতিতে বিলীন হবার অপেক্ষায় দিন গুনছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন