নোনাডাঙাটা কোথায়?
নোনাডাঙাটা কোথায় বলা ভারি শক্ত। কারণ এই লেখা যারা পড়বেন, তাঁরা মনে হয় কেউই ওদিকে যাননি। এই লেখার লেখক, আমিও না। অবশ্য একেবারে যাইনি একথা বলা ঠিক নয়। পরমা আইল্যান্ড থেকে রুবির মোড়ের কাছে ক্যালকাটা ইন্টারন্যাশানাল স্কুল যাবার রাস্তায় একদিন অবরোধে আটকে পড়েছিলাম। তখন স্থানীয় কিছু মানুষ আমাকে বাঁদিকের একটা রাস্তা ধরে চলে যেতে বলেন। সে রাস্তা দিয়ে গাড়ি চড়ে পাঁচ মিনিট এগোনোর পরই আমি টের পাই, এরকম বিচিত্র ল্যান্ডস্কেপ আমি কখনও দেখিনি। এমনকি সিনেমার পর্দায়ও না। বেশ চওড়া রাস্তা, কিন্তু পিচের নামে যেটা আছে, সেটা প্রহসন মাত্র। আমি গ্রামের ছেলে, এরকম ভাঙাচোরা রাস্তা আমাকে বিচলিত করেনা। কিন্তু এ ঠিক গ্রাম নয়। কারণ রাস্তার দুদিকে পড়ে আছে যে ধরণের আবর্জনা, তা গ্রামে কখনও দেখিনি -- এ হল শহরের আবর্জনা, শিল্পের আবর্জনা। চারিদিকে যা দুর্গন্ধ, তা শহরের অজৈব দুর্গন্ধ, গ্রামের পচে যাওয়া পাটক্ষেতের দুর্গন্ধের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। ফাঁকা রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে এক আধজন গরীব-গুর্বো লোক হেঁটে আসছে ঠিকই, কিন্তু তারা ঠিক গ্রামের লোক নয়। গ্রামের গরীবের সঙ্গে শহরের বস্তিবাসীর যে তফাত আছে, সেদিনই প্রথম বুঝতে পারি। গ্রামে গাড়ি এলে লোকে হাঁ করে দেখে, আর এখানে নোংরা-জামা মানুষেরা অভ্যস্ত পায়ে পথ ছেড়ে দেয় "রুবি কোনদিকে?" জিজ্ঞাসা করলে স্মার্টলি বলে ওই তো সামনে চিনেমন্দির থেকে ডানহাতে। চিনেমন্দির? সেটা কি বস্তু? এদিকে চিনেপাড়াও আছে নাকি? সেদিনই এটাও বুঝতে পারি, কলকাতা শহরের ঠিক কাছে, জনবহুল বাইপাস থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে পড়ে আছে এমন এক বিস্তীর্ণ এলাকা, যা ধু ধু ফাঁকা হলেও তেপান্তরের মাঠ নয়, আবার শহরের উপকন্ঠে হলেও শহর নয়, এ হল শহরের তলানি। এই রাস্তায় আছে অদ্ভুত সব জনপদ। ঝুপড়ি আছে। ফাঁকা মাঠভর্তি আবর্জনা আছে। এমনকি সেই অদ্ভুতদর্শন চৈনিক উপাসনাগৃহটিও বাস্তবিকই আছে, যার স্থানীয় নাম চিনে মন্দির। চিনে মন্দির আছে যখন, তখন চৈনিক লোকজন থাকাও বিচিত্র নয়, কিন্তু সে আমার জানা নেই। সেই চিনেমন্দির থেকে দু দুটো আধুনিকতম হাসপাতালের দিকে এগোলে, মাঝখানে কোনো এক জায়গায় শহুরে মানুষের পা না পড়া সেই জনপদ, যার নাম নোনাডাঙা। যা আমি দেখিনি, কারণ আমি চিনতামই না। নামই শুনিনি, প্রয়োজনও হয়নি। এসব এলাকা তো আদতে কলকাতার তলানি। নেহাৎই বিপদে না পড়লে লোকে সে রাস্তা মাড়ায়না।
"কলকাতার তলানি" কথাটা অমিতাভ গুপ্তর লেখা থেকে নিলাম। অমিতাভ অবশ্য ঠিক তলানি লেখেনি, "টিনের তলোয়ার" উদ্ধৃত করে লিখেছে, "কলকাতার তলায়"। সে একই কথা হল। নোনাডাঙা সম্পর্কে ওই একই অনুভূতি আমারও, সেটা অমিতাভর সঙ্গে এক্কেবারে মিলে যায়। তা, অমিতাভর লেখায় নোনাডাঙা কীকরে যেতে হয়, তার একটা আরও সহজ বিবরণ আছে, সেটাও এখানে তুলে দিই। এই লেখা পড়ে কেউই যাবেন বলে মনে হয়না, তবুও, বলা তো যায়না।"ইস্টার্ন বাইপাসের সমান্তরাল যে রাস্তাটা রুবি হাসপাতালের সামনে থেকে আরম্ভ হয়ে আরও দুটো হাসপাতাল পেরিয়ে ক্যালকাটা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নতুন ক্যাম্পাসের সামনে থেকে ডান দিকে বেঁকে যায়, সেই রাস্তা ধরে দু’কিলোমিটার মতো গেলেই নোনাডাঙা। চওড়া রাস্তা, যদিও এখন ভাঙাচোরা। সেই রাস্তার ওপর হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকশন কম্পানির মস্ত কারখানা। সেই কারখানাকে বাঁ হাতে রেখে আরও খানিকটা এগিয়ে গেলেই নোনাডাঙা মজদুর পল্লি: আসলে একটা খোলা মাঠ, সরকারের জমি, সরকার এখন যার দখল ফিরে পেতে চাইছে।"
কারা থাকেন এখানে?
প্রশ্নটা হল, কারা থাকেন, বা থাকতেন, এই জনামানবশূন্য পোড়ো এলাকায়, যেখানে, নেহাৎই ঘটনাচক্র ছাড়া "সভ্য" মানুষের পা পড়েনা? প্রত্যক্ষজ্ঞানে আমার জানা নেই। তবে জাহাজের ভুলে যাওয়া খোলে যে বাসা বেঁধে থাকে তাড়া খাওয়া ইঁদুরেরা, সিঁড়ির নিচের ভুলে যাওয়া কোন যে ক্রমশ হারিয়ে যাওয়া পতঙ্গদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে সে আর অজানা কথা কি। এদিক-সেদিক থেকে যা জানা যায়, নোনাডাঙাও কিছু ব্যতিক্রম নয়। কলকাতার এই তলানিতে মোটামুটি তলিয়ে যাওয়া লোকজনেরই বাস। এখানে যারা আছেন, তারা কেউ এসেছেন, শহরের অন্যান্য বস্তি থেকে উচ্ছিন্ন হয়ে। কালিকাপুর, খালপাড় থেকে। কেউ এসেছেন সুন্দরবন থেকে, আয়লার পরে। এমনকি সিঙ্গুরের উচ্ছিন্ন কয়েকজন মানুষও নাকি আছেন। এখানকার মানুষদের ইতিহাস মূলত ক্রমাগত উচ্ছেদের ইতিহাস। "সংবাদ মন্থন" এর পক্ষ থেকে শ্রীমান চক্রবর্তী ও শমীক সরকার এরকমই কিছু মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন এ বছরের মার্চ মাসে। কলকাতা কর্পোরেশনের ১০৫ ও ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের তিন নম্বর কালিকাপুর বস্তি থেকে উচ্ছেদ হয়ে নোনাডাঙায় এসেছিলেন শ্যামলী মন্ডল সহ আরও কয়েকজন। কেন এসেছিলেন এখানে? সংবাদ মন্থনের সেই সাক্ষাৎকারে শ্যামলীরা জানাচ্ছেন "ওখানে(কালিকাপুরে) আমরা প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে বাস করছি। হঠাৎ আমাদের এসে বলা হল, তোমাদের এখান থেকে উঠে যেতে হবে, তবে যাদের রেশন কার্ড বা ভোটার কার্ড আছে, তারা পুনর্বাসন পাবে, তার জন্য তোমাদের ছবি তোলা হবে। আমাদের ঘরের পুরুষেরা জোগাড়ে ও মিস্ত্রির কাজ করে, তাই তারা সকালেই বেরিয়ে যায়। আর আমাদের মেয়েরা অনেকেই বাবুদের বাড়ি ঠিকে কাজ করে। অনেক সময়ই আগে থেকে কিছু না জানিয়ে ছবি তুলতে এসেছে, তাই আমাদের প্রায় অনেকেই ছবি তুলতে পারেনি। বাবুদের বাড়ির কাজে এক দু'দিন কামাই করলে মুখ করে, দিনের হিসাব করে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেয়। ওদের মতে আমাদের অসুখ-বিসুখ নেই, ছেলেমেয়েদের সুবিধা-অসুবিধা ওরা বুঝতে চায় না। তা যা হোক করে আমরা ছিলাম ওখানে। ছবি তোলা শুরু হবার পর আমরা বুঝলাম যে আমরা অনেকেই কোন কিছু পাব না, আর মাঝে মাঝে কর্পোরেশন থেকে খোল করতাল বাজিয়ে সন্ধ্যাবেলা মেয়ে-ছেলে এসে আমাদের ওখান থেকে উঠে যাবার কথা বলত। যখন ওখানে আমাদের ঘর ভাঙতে শুরু করল, তখন আশেপাশে যাদের একটু জায়গা ছিল তারা ঘর ভাড়া দিত, তারা তখন ভাড়া ২-৩ গুণ বাড়িয়ে দিল, ঘর পার্টিশন করে ছোটো করে দিল। আমি (শ্যামলী মণ্ডল) বলি, কেউ ভাড়া যাবি না।"
এলেন কিভাবে এই এলাকায়? শ্যামলী বলছেন, "আমি নিজে এসে রুবির পিছনে এই জায়গাটা দেখি। তখন এখানে উলুবাগান সাপখোপে ভরা, ঝোপঝাড় জল কাদায় ভরা। তখন এখানে মানুষ, গরু, কুকুরও মরে পড়ে থাকত। পিছনের দিকের ভেড়িতে মাঝে মাঝেই এখনও আইবুড়ো মেয়ে মানুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। আমি জায়গাটা দেখে আমার ওখানে গিয়ে বলি যে, তোমরা যদি আসতে চাও তো আমার সাথে চলো, আমরা সকলে গিয়ে ওখানে থাকি। ওরা সকলে বলল, মাসি তুমি যেখানে যাবে আমরাও সেখানে যাব। তারপর থেকে আমাদের এখানে আসা। বাধ্য হয়ে আমরা ছেলেমেয়ে নিয়ে এখানে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছি। বলুন আমরা কি অন্যায় করেছি?
অনেকেই আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। কেউ কেউ কষ্ট করে ভাড়া থাকছে। এখানে তখন বাস করার মতো জায়গা ছিল না, সমস্ত নেশাখোরদের আড্ডা। এখানে মাঝে মাঝে বোমা পড়ে আমাদের ভয় দেখানোর জন্য। আমরা ঘর বাঁধছি দেখে টাকা চায় ৫০০/৬০০ যেমন খুশি, কেউ যদি দিতে না পারে বা ৫০/১০০ টাকা দিতে চায় তাহলে তাকে বাপ মা তুলে গাল পাড়ে, বলে তোর বাবার জায়গা নাকি ঘর বাঁধছিস, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের ছেলেরা খুব ভয় পায় ওদের। ওরা ভোর রাতে বেরোতে ভয় পায়, আবার বেশি রাতে কাজ থেকে ফিরতে পারে না। ওরা কারা? কে জানে বাপু!"
বেঁচে থাকেন কিভাবে? "আমরা লোকের বাড়ি খেটে খাই। আমাদের ছেলেরা বেশিরভাগই সব জোগাড়ের কাজ করে। তবুও এখানে আমরা স্বাধীনভাবে চাটাইয়ের ঘর বেঁধে আছি। আমাদের চাটাইয়ের ঘরের ওপরে টালির ছাউনি দেখে ওসব লোকেরা বলে আমাদের অনেক পয়সা আছে। বলি চটার বেড়া দিয়ে ওপরে টালি দিয়ে আমরা যে ঘর বাঁধছি, কিছু অন্যায় করেছি, না আমাদের পয়সা নেই বলে আমরা মানুষ না! ওই যে ওখানে শনি মন্দিরের কাছে যে চাটাইয়ের দোকানদার লোকটা, সেই আমাদের বাঁচিয়েছে। ধারে আমাদের চাটাই দিয়েছে, টালি দিয়েছে ঘর ছাইবার জন্য। বলেছে, মাসে মাসে শোধ দিতে। এখনো অনেকের টাকা বাকি আছে।"
ইত্যাদি। শ্যামলীর আদি বাড়ি সুন্দরবনে। দেশ ছাড়তে হয়েছে বাঁচার জন্য। পরবর্তী ঠিকানা কালিকাপুর। উচ্ছিন্ন হয়ে এই নোনাডাঙায়। পরবর্তী ঠিকানা অজানা।
যুদ্ধ কী নিয়ে?
"জবরদখলকারী"দের উচ্ছেদ কলকাতায় এর আগে অনেক বারই হয়েছে। এবারও সরকারি কাজকর্মে আরেকদফার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। যে, তৃতীয় বারের পর আরও একবার সরতে হবে, উচ্ছিন্ন হতে হবে শ্যামলীকে। শ্যামলীদের। কিন্তু তার পরেও অনিবার্য ভাবেই এই জায়গায় যে প্রশ্নটা মাথায় আসে, সেটা হল, এই পোড়ো জায়গায়, যেখানে, মেরেকেটে ২৫০ ঘর মানুষ থাকেন (শ্যামলীর হিসেবে), সেখানে যুদ্ধটা কী নিয়ে? এই জায়গার দখল নিয়ে কারই বা কী লাভ? যুদ্ধটা আসলে একটাই। কলকাতার বাড়ার যুদ্ধ। রুবির মোড়ের দাঁড়ালে চারিদিকে "আধুনিকতম" হাসপাতালের সারি দেখা যায়। তার মধ্যে দুটো নোনাডাঙার রাস্তায়ই পড়ে। ওই একই রাস্তায় আছে অন্তত গোটা দুই নতুন বিদেশী গাড়ির শো-রুম। কলকাতা বাড়ছে। সে এদিকে বাড়ছে রাজারহাটের দিকে, ওদিকে সোনারপুর পানে। বাড়ার গতিতে যে বুঁজিয়ে দিচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম স্বাভাবিক জলনিকাশী ব্যবস্থাকে, আর নিজেই ফি-বছর বাটির মতো ডুবে যাচ্ছে বন্যায়, সে রুবি থেকে দু-কিলোমিটার দূরের এই লোভনীয় এলাকাখানা ছাড়বে কেন? অতএব, নোনাডাঙার ওই এলাকার "উন্নয়ন" হবে। রাস্তা চওড়াই আছে, তা পিচঢালা মসৃণ হবে। আর পাশেই তৈরি হবে বিরাট আবাসন। অর্থনীতির উন্নতি হবে। শাইনিং নতুন দুনিয়া ঝলমল করবে। সে পথে একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নোনাডাঙার ওই অবৈধ বাসিন্দারা। তারা ওখানে থাকলে, এই কনস্ট্রাকশন হতে পারবেনা। কেন পারবেনা, কী প্ল্যান, জায়গাটা বাঁচিয়েও করা যেত কিনা, সে ডিটেল অতি অবশ্যই আমার কাছে নেই। কিন্তু প্রশাসনের দিক থেকে অবস্থানটা পরিষ্কার। যে, এইটুকু চোনাই পুরো দুধটা নষ্ট করে দিতে সক্ষম।
সরকার অবশ্য সবাইকে এমনি তুলে দেবে বলেনি। সেটাও এখানে বলে নেওয়া দরকার। নাগরিক মঞ্চের রিপোর্টে পাচ্ছি, নোনাডাঙার যে এলাকার কথা হচ্ছে, ঠিক তার পাশেই দুটো আবাসন প্রকল্প আছে। সেগুলো উচ্ছেদ হওয়া মানুষদের আবাসন।একটা গোবিন্দপুর রেল কলোনি থেকে উচ্ছেদ হয়ে আসা মানুষদের ঠিকানা, অন্যটায় থাকেন সিমেন্স খালপাড় থেকে উঠে আসা মানুষরা। সে ফ্ল্যাটের একেকটার সাইজ নাকি ১৬০ থেকে ১৯০ স্কোয়্যার ফুট। ফ্ল্যাটের মধ্যে একটি মাত্র ঘর, যার মাপ সাড়ে পনেরো বাই দশ ফুট। আর আছে লাগোয়া ছ'ফুট বাই তিন ফুট মাপের বারান্দা। আর একটি বাথরুম,চার ফুট বাই পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি মাপের। এই বাথরুমের খানিকটা আবার মূল ঘরের মধ্যে ঠেলে ঢুকে রয়েছে, ঘরের আড়াই ফুট বাই চার ফুট জায়গা তাতে যায়। ঘরের উচ্চতা ন'ফুট দুই ইঞ্চি। সদর দরজা সিমেন্টের তৈরী, তাতে লোহার কব্জা। বাথরুমের দরজা ফাইবারের। ঘরে একটিই মাত্র জানলা, পাঁচ ফুট বাই চার ফুট মাপের, তাতে লোহার ফ্রেমে কাঁচ বসানো। এখানে বলা দরকার যে আলাদা কোন রান্নাঘর কিন্তু নেই। জলের কল ও বিদ্যুতের লাইন আছে। প্রতি ফ্ল্যাটে আলাদা বিদ্যুতের মিটার আছে।
এগুলো নিন্দে করার জন্য নয়, শুধু আকারটা বোঝানোর জন্য বললাম। ঝুপড়ির মানুষরা যেখান থেকে উচ্ছিন্ন হন, তার আকার নিশ্চয়ই এরকমই হয়। তবুও এটা উল্লেখ করলাম এইজন্য, যে, ঝুপড়ি থেকে উচ্ছিন্ন হয়ে ফ্ল্যাটে থাকাটাও, স্রেফ থাকার জন্য খুব উচ্চমার্গের কোনো আকর্ষণ নয়। দুয়ের কমফর্ট লেভেল কাছাকাছিই। ফ্ল্যাটটা, কেবলমাত্র মালিকানার দিক থেকে লোভনীয়। কিন্তু মালিকানাটাও তো কম কিছু নয়। উচ্ছিন্ন মানুষদের এইটুকু দিলে তাঁরা অখুশি হবেন এমন নয়।
মজা হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে নোনাডাঙার অধিবাসীদেরও উচ্ছেদের পর এরকম কিছু ফ্ল্যাট দেওয়া হবে বলা হয়েছে। তাহলে যুদ্ধটা কি নিয়ে? একটা জিনিস নিয়েই, যে, সরকারি ঘোষণার সঙ্গে একটা ছোট্টো ফাইন প্রিন্ট আছে। অন্যান্য বস্তির উচ্ছেদের সময় যেমন, এখানেও সেই একই নিয়ম, যে, উচ্ছিন্ন লোকেরা তখনই পুনর্বাসনের জন্য বিবেচিত হবেন, যদি তাঁদের রেশন কার্ড বা ভোটার আইডি কার্ড থাকে। নোনাডাঙার "জবরদখলকারী"রা এ বিষয়ে সম্যক ওয়াকিবহাল। কারণ এগুলো নেই বলেই তাঁরা অন্য কোথাও পুনর্বাসনের সুযোগ পাননি। এবং বারবার উচ্ছিন্ন হয়েছেন। সংবাদ মন্থন এর রিপোর্টে পাচ্ছি, যে, এখানকার নব্বই শতাংশ মানুষেরই ভোটার বা রেশন কার্ড নেই। অতএব আরেকবার উচ্ছিন্ন হওয়াই তাঁদের ভবিতব্য। এ এক অতি চমৎকার ব্যবস্থা, যেখানে ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ড পেতে গেলে ভোটার লিস্টে নাম থাকতে হয়। আর ভোটার লিস্টে নাম থাকতে হলে একটা বৈধ বাসস্থান থাকতে হয়। আর বৈধ বাসস্থান (পুনর্বাসনের মাধ্যমে) পাবার কোনো প্রশ্নই নেই, কারণ পুনর্বাসন পেতে গেলে ভোটার বা রেশন কার্ড থাকা প্রয়োজন। এই ভিশাস সার্কল থেকে মুক্তি পাবার কোনো উপায় নেই, এটা বস্তিবাসী আর প্রশাসন দুই পক্ষই খুব ভালো করে জানে।
তাই একদিকে প্রশাসনের অবস্থান পরিষ্কার। তারা রেশন কার্ড বা ভোটার আইডি ছাড়া কোনো পুনর্বাসন দেবেনা। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের দিক থেকেও ব্যাপারটা সোজা-সাপ্টা। এত বার এত জায়গা থেকে উচ্ছিন্ন হয়ে এই একটা পোড়ো জায়গায় নিজেদের আস্তানা গেড়েছেন তাঁরা। এখান থেকেও তুলে দিলে কোন ভাগাড়ে আর আশ্রয় হবে? কোথায় পাওয়া যাবে অন্তত কাজ করে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা? আরও প্রত্যন্ত কোনো জায়গায় গিয়ে থাকতে গেলে লোকগুলি স্রেফ মরে যাবে। অতএব একদিকে উচ্ছেদ। অন্যদিকে আন্দোলন। একদিকে ধরপাকড়। এলাকা থেকে লোকগুলিকে তাড়িয়ে পাঁচিল তুলে জায়গাটাকে ঘিরে দেবার আপ্রাণ প্রচেষ্টা। অন্যদিকে মাটি কামড়ে নিজের জায়গায় পড়ে থাকার যুদ্ধ। জমির যুদ্ধ, জায়গার যুদ্ধ। এ যুদ্ধ অনিবার্য। কারণ, কলকাতা বাড়ছে। জমি না পেলে সে বাড়বে কোথায়?
প্রশাসন
এই বৃত্ত, এই ভিশাস সার্কল থেকে বাঁচার দুটো উপায় হতে পারত। (যদি ধরেই নেওয়া যায়, যে সরকারি দিক থেকে "বৈধ" বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের ইচ্ছা আছে) একটা হল এই প্রশাসনিক জটিলতা ভাঙার সদিচ্ছা। কার্ড না থাকলে পুনর্বাসন হবেনা, আর পুনর্বাসন না পেলে কার্ড হবেনা -- এটা যেন কাফকার জগতের কথা মনে পড়ায়, যেখানে বেঁচে থাকা মানেই হল অসম্ভবের একটি বৃত্ত। যেখানে একটি লোক সকালে উঠে স্রেফ একটা পোকা হয়ে যায়। কিংবা একটি লোকের শাস্তি পূর্বনির্ধারিত, সে শুধু আপাতত খুঁজে চলেছে নিজের অপরাধকে। সে নিজের অপরাধকে খুঁজছে দুর্গের গভীর গোলকধাঁধায়, আমলাতন্ত্রের ফাইলের হলদে হয়ে যাওয়া পাতায় পাতায়। সরকারের খাতায় পুনর্বাসন ও তার শর্ত স্রেফ একটা বা দুটো দপ্তরের টেকনিকালিটি হতে পারে, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এটা বাঁচা-মরার প্রশ্ন। এক সদিচ্ছাসম্পন্ন ও সংবেদনশীল প্রশাসন মানুষকে উচ্ছেদ না করে "উন্নয়ন" করতে চাইলে, তাকে সবার আগে নজর দিতে হবে মানুষের বাঁচা-মরার দিকে।
সে অবশ্য হবার নয়, হচ্ছেও না। যদি ধরেও নেওয়া হয়, সদিচ্ছাটি প্রশাসনিক স্তরে বিদ্যমান, তাহলে তার পরেও সদিচ্ছাটি নয়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাগুলিকেই বরং নিজের প্রাণভোমরার মতো করে রক্ষা করা হচ্ছে। এবং সেগুলিকে রক্ষা করার জন্য প্রাণপনে ঝাঁপিয়ে পড়া হচ্ছে। আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে হিংস্রতার। সরকারের গত তিন-চার মাসে কাজকর্ম থেকেই সেটা পরিষ্কার। গত তিনমাসে নোনাডাঙা ঘিরে যে বিপুল প্রশাসনিক হিংস্রতা তার একটা ছোট্টো এবং অসম্পূর্ণ কালপঞ্জি নিচে দেওয়া হল:
এপ্রিল ৮: রুবির মোড়ে উচ্ছেদ বিরোধী মিছিলে লাঠি চালানো হয়। ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ।
এপ্রিল ৯: সাত আন্দোলনকারীর মুক্তির দাবীতে এবং উচ্ছেদের বিরুদ্ধে কলেজ স্ট্রিটে কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি মিছিলের আয়োজন করা হয়। ৬৬ জনকে কলেজ স্কোয়্যার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ মিছিলটি শুরুই করতে দেয়না।
এপ্রিল ২৬: সাত আন্দোলনকারীর মধ্যে দুজন (অভিজ্ঞান সরকার এবং দেবলীনা চক্রবর্তী) কে আদালত নোনাডাঙার মামলায় জামিন দেয় আদালত। কিন্তু তাদের নন্দীগ্রাম ও বিষ্ঞুপুর এর দুটি মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে মুক্তি মেলেনা।
এপ্রিল ২৮: পুলিশ এলাকায় অভিযান করে এবং ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়।
জুন ১৫: শাসক দলের কর্মীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্রমন করে। পুলিশ ছিল দর্শক।
জুন ২০: এসপ্ল্যানেডে শান্তিপূর্ণ জমায়েতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ১৫ জন আহত সহ ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। কেউ ই জামিন পাননি।
এই ঘটনাপঞ্জি আমার বানানো। যে কিনা কখনও নোনাডাঙায় যায়নি। ওয়াকিবহাল মানুষের কাছে খোঁজ করলে এর চেয়ে বেশি সংবাদই মিলবে। কিন্তু এই টুকুতেই যা দেখা যাচ্ছে, তা নেহাৎই কম কিছু না। শহরের এক প্রান্তে একটি ছোটো, অতি ছোটো জনপদ। সেখানে শান্তিপূর্ণ কিছু বিক্ষোভও সরকারি তরফ থেকে সহ্য করা হচ্ছে না। নোনাডাঙা শব্দটিই যেন কলকাতা শহরে নিষিদ্ধ। সে নিয়ে মিছিল করলেই আক্রমন, করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এমনকি কলেজ স্ট্রিটের বুকেও মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছেনা। এর মধ্যেই শ দেড়েক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবং সে নেহাৎই প্রতীকি গ্রেপ্তার নয়। গ্রেপ্তার করে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে, সরকারি উকিল কোর্টে জামিনের বিরুদ্ধে সওয়াল করছেন এই বলে, যে, ধৃতদের মতলবই হল শহরের বুকে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো। এগুলো করা হচ্ছে যাতে যে কোনো মূল্যেই বিরোধী কণ্ঠস্বরকে বন্ধ করে দেওয়া যায়। এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দূর করা দূরস্থান, তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে মিথ্যে মামলা দেওয়ার কাজে, আন্দোলনকারীদের ফাঁসানোর লক্ষে।
নোনাডাঙায় কতজন "অবৈধ" বসবাসকারী থাকেন আমি জানিনা। যদি শ্যামলীর কথামতো ২৫০ ঘর মানুষই থাকেন ধরে নেওয়া যায়, আর ঘরপিছু তিনজন যদি তিনজন মানুষ থাকেন, তাহলে সব মিলিয়ে মেরেকেটে ৭৫০ জন। হিসেবটা সম্ভবত একটু বেশির দিকেই হল। যদি তাও হয়, তাহলেও কি বিপুল এই হিংস্রতা। ৭৫০ জন মানুষের বিক্ষোভ এড়ানোর জন্য ১৫০ জন গ্রেপ্তার। শতাংশের হিসেবে কুড়ি শতাংশ। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়, এটা মুখ বন্ধ করে দেবার হিংস্রতা। সদিচ্ছা থাকলে এত দ্রুততায় এভাবে সমস্ত দাঁত নখ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েনা। সংবেদনশীলতার প্রথ শর্তটিই হল ধৈর্য্য, যার চূড়ান্ত অভাব, কোনো সন্দেহ নেই, সরকারি পক্ষে দেখা যাচ্ছে।
উন্নয়ন
অবশ্য সরকার পক্ষের দ্রুততার, তাড়াহুড়োর একটা কারণ আন্দাজই করা যায়। সরকারের সময় কম, ধৈর্য্য কম, কারণ সরকারপক্ষ তীব্রগতিতে শহরের "উন্নয়ন"এর নেশায় মেতেছেন। কলকাতাকে লন্ডন করতে হবে, এ তো তাঁদের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডাতেই আছে। ধৈর্য্যের অবকাশ কোথায় তাঁদের? সময় কোথায় সমস্যার মূলের দিকে তাকানোর? যদিও ২৩৫-৩০ এর বিরোধিতা করেই তাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন, কিন্তু তাতে কি? এই দ্রুতগতির ইঁদুর দৌড়ে যেকোনো বিরোধিতাই উন্নয়নের গতিকে স্তব্ধ করার "চক্রান্ত", যেকোনো ভিন্নমতই দমনযোগ্য। অথচ এই অন্তহীন বৃত্ত থেকে বাঁচবার একটা উপায় যদি হতে পারত ধৈর্য্য এবং সংবেদনশীলতা, প্রশাসনিক জটিলতা ভাঙা এবং তাকে জনমুখী করে তোলার সদিচ্ছা, তাহলে অন্যটা অতি অবশ্যই, বিষয়টার মূলের দিকে তাকানো এবং সমাধানের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা। হুটপাট অ্যাকশন নয়, দুমদাম কথার ফুলঝুরি নয়, তার জন্য দরকার ছিল ধৈর্য্য, আর পায়ের নিচের জমি পরীক্ষা করার ইচ্ছা। অ্যাজেন্ডা ছেড়ে এসে, রাজনৈতিক স্লোগান ছেড়ে এসে, শুধু নোনাডাঙা নয়, যদি আমরা শহরের যেকোনো বস্তির দিকে তাকাই, তাহলে দেখব, এর অধিকাংশ মানুষই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছেন। এ নিয়ে কোনো সমীক্ষা হয়েছে কিনা জানা নেই, তবে নানা জায়গার লেখা-টেখা পড়ে, লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সেরকমই মনে হয়। প্রশ্নটা হল, এঁরা খামোখা নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে গ্রাম থেকে শহরের বস্তিতে উঠে এসেছেন কেন? কেউ কি এঁদের গ্রাম থেকে তাড়িয়েছে? তা নয়। কেউ, তাড়ায়নি, এঁরা এসেছেন মূলত বেঁচে থাকার জন্য। প্রত্যন্ত যে সমস্ত গ্রামে কাজের অভাব, স্রেফ টিকে থাকার মতো অবস্থার অভাব, সে সমস্ত গ্রাম থেকেই লোকজন উঠে এসেছেন এবং আসছেন শহরের বস্তিতে। তৈরি হচ্ছে জবরদখলী বস্তি। তারপর সেই জবরদখল তোলার পুলিশি যুদ্ধ। পাল্টা আন্দোলন। ইত্যাদি প্রভৃতি।
এই প্রক্রিয়াটির দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন ছিল এবং আছে। এইটিই হল সেই প্রক্রিয়া, যার ফলে নোনাডাঙারা তৈরি হয়েছে এবং হবে। নোনাডাঙা এই লম্বা প্রক্রিয়ার মধ্যের একটি বিন্দু মাত্র। নোনাডাঙা একটি মাত্র জায়গা, নোনাডাঙা প্রক্রিয়ার একটি অংশ। দীর্ঘমেয়াদে এই গোটা প্রক্রিয়ার দিকে নজর না দিলে একটার পর একটা নোনাডাঙা ঘটতেই থাকবে। নিজের জায়গায় বেঁচে থাকার উপকরণ না পেলে, লোকে গ্রাম থেকে শহরে আসবে। আসবেই। সাধ করে কে আর না খেয়ে মরতে চায়। এবং শরমুখী এই জনস্রোত বস্তি ছাড়া অন্য কোথাও থাকবেনা। কোনো অলৌকিক উপায়ে সরকার যদি দুম করে অসম্ভব সংবেদনশীল হয়েও ওঠে, তাহলেও পুনর্বাসন দিতে দিতে একসময় তার ভাঁড়ারে টান ধরবেই। এবং বেরিয়ে আসবে রাষ্ট্রের নখ-দাঁত। আসবেই।
এখানে অবশ্যই সরকারের কিছু করণীয় আছে। কলকাতা লন্ডন হবে কি অন্য কিছু হবে, সে আলাদা প্রশ্ন, কিন্তু "উন্নয়ন"এর নামে যে অর্থব্যয়, যে উদ্যোগ, সেটা যদি স্রেফ কলকাতাতেই হয়, তাহলে কেবলমাত্র অর্থনৈতিক কারণেই বাড়বে "অবৈধ" অভিবাসীদের সংখ্যা। কারণ গ্রামে কাজ নেই, সেটা আছে কলকাতায়। তাই বাড়বে জনস্রোত।বেড়ে চলবে কলকাতার তলানি। একটার জায়গায় একশটা নোনাডাঙা তৈরি হবে। ঝকঝকে লন্ডন বানাতে গেলেই তেকোনা নিয়ন লাইটের নিচে ভিড় বাড়াবে জবরদখল ভিখিরি বালক। ফ্লাইওভারের নিচে আস্তানা গাড়বে উদ্বাস্তু পরিবার। উন্নততম হাসপাতালে ঠিক পাশে তৈরি হবে অদ্ভুত অদ্ভুত অজানা সব জনপদ। কলকাতায় যত বহুতল তৈরি হবে, তত বেশি বাড়বে তার তলদেশ। এসব ঠেকানোর জন্য হয় চৈনিক পন্থায় শহরে ঢোকার জন্য আলাদা পারমিটের ব্যবস্থা করতে হবে। নচেৎ সঞ্জয় গান্ধীর কায়দায় গরীবি হঠাও অভিযান করতে হবে।
এসব ছাড়াও তৃতীয় একটি পন্থা হতে পারে। কলকাতাকে পাখির চোখ না করা। এটা বোঝা, যে, কলকাতাই পশ্চিমবঙ্গ নয়। সুন্দরবনই হোক বা উত্তরবঙ্গ, প্রত্যন্ত গ্রামে-গ্রামে অন্তত কাজ করার সুযোগটুকু পৌঁছে গেলে, সত্যিই এসবের প্রয়োজন আর পড়বেনা। কারো কারো তাতে কিঞ্চিৎ সমস্যা হবে। যেমন, রুবি যাবার রাস্তায় অদ্ভুত একখানি জনপদ "আবিষ্কার" করে চমকে যাবার সুখ থেকে অবশ্য আমি বঞ্চিত হব। বা উঠতি ফিল্মমেকাররা ডকুমেন্টারি বানানোর চমৎকার কিছু সাবজেক্ট হারাবেন। কিন্তু ওই টুকু অসুখ মেনে নেওয়া খুব কঠিন কিছু নয়।