এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা   সমাজ

  • বাংলাদেশের মহিয়সী জননীদের কথা

    দীপ
    আলোচনা | সমাজ | ৩০ জুন ২০২৫ | ২৭ বার পঠিত
  • অগণিত মানুষের আত্মত্যাগ ও বলিদানের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিলো। বিশেষভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হয় বাংলাদেশের মহিয়সী জননীদের; যাঁদের আত্মত্যাগ সফল করেছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ। এঁদের মধ্যে জাহানারা ইমামের নাম আমরা অনেকেই শুনেছি। জাহানারা ইমামের মতো আরো অসংখ্য জননী সেদিন এই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তাঁদের সবার উদ্দেশ্যে সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করলেন বাংলাদেশের লেখক ইমতিয়াজ মাহমুদ। লেখাটি সবার সঙ্গে ভাগ করে নিলাম।
    বাংলাদেশের মহিয়সী জননীরা, আপনাদের উদ্দেশ্যে সন্তানদের সশ্রদ্ধ প্রণাম!
     
    --------------------------------------------------------------------
     
    কসবা উপজেলার কুল্লাপাথর নামে একটা জায়গায় ৫১জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার একটি সমাধিস্থল আছে। সেটা কিভাবে গড়ে উঠেছে জানেন? তারজাতুন নেসা নামের এক মা, ওঁর সুপুত্র ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল করিম, তিনি তাঁর স্বামী আবদুল মান্নানকে নিয়ে সেই এলাকায় এবং এলাকার আশেপাশে যুদ্ধে যেসব মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হয়েছেন ওদের মৃতদেহ সংগ্রহ করে নিয়ে আসতেন। এই দুইজন পিতামাতা সেইসব মৃতদেহ পরম যত্নে গোসল করিয়ে দাফন করতেন। মোট একান্ন জন্য শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে পরম সম্মান ও মমতার সাথে সমাধিস্থ করেছেন এই নারী ও তাঁর স্বামী। এইভাবে গড়ে উঠেছে সমাধিস্থলটি।   
     
    আজ যখন আমি আম্মা জাহানারা ইমামের কথা স্মরণ করবো বলে ফেসবুক খুলে লিখতে বসেছি, কেন জানিনা আমার আরেক মায়ের কথা মনে পড়লো- তারজাতুন নেসার কথা। আম্মা জাহানারা ইমামের সাথে এমনিতে তাঁর কোন মিল খুঁজে পাবেন না। জাহানারা ইমাম ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত, আধুনিক, লেখক, সংগ্রামী। তারজাতুন নেসা নিতান্ত অজ পাড়াগাঁয়ের একজন নারী; হয়তো লেখাপড়া সেরকম কিছু করেননি। ওঁদের দুইজনের মিল কেবল একটি জায়গায়; ওঁরা দুইজনই মুক্তিযোদ্ধার জননী। কেবল একটা জায়গায় ওঁরা দুইজনই অনন্যা, মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ এই দুই নারীকেই আমাদের সকলের আম্মার আসনে বসিয়েছে। 
     
    জাহানারা ইমামকে স্মরণ করি। সারা বছর আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপন, পেশগত কাজ, রাজনীতি, শিল্প সাহিত্য কতো কিছু করি- সবসময় জাহানারা ইমামকে স্মরণ করি না। কেবল বিশেষ দিন এলে তাঁকে আমরা মনে করি। আজ সেরকম একটি দিন, আজ আম্মার মৃত্যুবার্ষিকী। 
     
    কথাগুলি লিখতে লিখতে মনে হলো, আমাদের দেশের না জানি কতো মা আছেন যাঁরা নিজের কলজে কেটে দিয়েছেন আমাদের স্বাধীনতার জন্যে। জাহানার ইমাম তো একদিম মুখ ফুটেই বলেছিলেন ওঁর পুত্র রুমিকে; "যা, তোকে দেশের জন্যে কোরবানি দিয়ে দিলাম।" মুখে বলে ফেলেছেন বটে, বলে সারাদিন সারারাত আম্মা কেঁদেছেন; "হায় হায়, এটা কি বলে ফেললাম।" তিনি লিখেছেন এইসব কথা তাঁর বইতে। পড়বেন আপনারা। বাংলাদেশে জন্মেছেন, বাংলায় পড়তে পারেন লিখতে পারেন, আর মুক্তিযুদ্ধের সময় নিয়ে জাহানারা ইমামের এই স্মৃতিকথাটা পড়বেন না, এটা কি করে হয়! 
     
    জাহানারা ইমাম ছিলেন বাংলাদেশের সকলের কাছে সেইসব মায়ের প্রতিনিধি, সেইসব মায়ের প্রতীক, যে মায়েরা ওদের বুকের ধন্য উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্যে। তারজাতুন নেসা বলেন বা জাহানারা ইমাম বলেন বা এইরকম আরও অসংখ্য মায়েরা যারা ছিলেন, কেউ কেউ এখনো আছেন, ওঁদের নিয়ে আমরা খুব বেশী কিছু বলি না, লিখি না, আলোচনা করি না। এটা তো আমাদের স্বভাবের মধ্যেই আছে- মহিমময়ী মায়েদের কথা আমরা আলোচনা করতে চাই না। এই মায়েরা তো কেবল পুত্রকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েছেন সেটাই তো কেবল না, তরজাতুন নেসা পুত্রের যুদ্ধে শরিক হয়েছেন ভিন্নভাবে, জাহানার ইমাম পুত্রের যুদ্ধের একটি অসমাপ্ত কাজ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। 
     
    আমাদের এই জননীরা, আমার দেশের পবিত্র ভূমি যতদিন থাকবে, মাগো, এই মৃত্তিকায় মিশে থাকবে তোমাদের আঁচলের সুবাস। এই দেশের প্রতিটি বৃক্ষে যত পুষ্প বিকশিত হবে, সেগুলিতে মিশে থাকে তোমাদের হাসি। আমরা যখন 'মা তো বদনখানি মলিন হলে' বলে গাইতে গাইতে কাঁদি, আমরা তোমাদের কথা মনে করে কাঁদি। যতবার যতদিন আমরা মুক্তিযুদ্ধের রণহুংকার 'জয় বাংলা' চিৎকারে আকাশ বিদীর্ণ করি, আমরা তোমার জন্যে করি। যখন বিজয়ের অহংকারে আমাদের মাথা আকাশ ছাড়িয়ে যায়- তখনো আমরা জানি, তোমাদের সন্তান হওয়ার চেয়ে বড় অহংকার আর কিছু নয়। 
     
    জাহানারা ইমামের বিদায়ের এই দিনে তাঁকে স্মরণ করি- আমাদের আম্মা। তোমাদের চরণে রাখি হাজার সালাম গো মায়েরা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন