এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  উচ্চশিক্ষার আনাচকানাচ

  • এক নয়, অথচ এক-ই

    ভিক্ষুক
    আলোচনা | উচ্চশিক্ষার আনাচকানাচ | ২৯ জুন ২০২৫ | ২৪৩ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • এক নয়, অথচ এক-ই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি হওয়ার কথা ছিল ছাত্রছাত্রীদের ‘সেফ স্পেস’, নিরাপদ পরিসর, অথচ বাস্তবতা তার ১৮০ ডিগ্রি উল্টোদিকে। কী আরজি কর, কী ল’ কলেজ। আরও একটি সাংঘাতিক, নারকীয় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও, দেখুন কী আশ্চর্য, আমাদের প্রতিক্রিয়া আপাতত অশ্লীল হিসেব-নিকেশ, এতে ’২৬-এর ভোটে কার সুবিধে হ’ল, কার অসুবিধে, ওই যে অপরাধী সে কী রায় না রাই, মিশ্রা না মিশ্র? তাছাড়া যতই নরক হোক আমার রাজ্য, দেশে কী নরকতর কিছুই নেই? তবুও, আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতা, সুযোগসন্ধানীদের ধান্দাবাজি ইত্যাদির ধোঁয়া কেটে গেলে যে বিপন্ন ও সাংঘাতিক সত্যের সামনে দাঁড়াতে হয় সেটা এই যে রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে ঘুঘুর বাসা বানিয়ে বানিয়ে, নিজেদের অপদার্থতম লোককে সেইগুলির মাথায় ও কাঁধে বসিয়ে প্রায় গোটা ব্যবস্থাটাই লাটে তুলে দিয়েছে তৃণমূল সরকার। এরকম-ই অবশ্য হওয়ার ছিল, কী রাজ্যে, কী কেন্দ্রে, হ্যানা আরেন্ট লিখেছিলেন, “Totalitarianism in power invariably replaces all first-rate talents, regardless of their sympathies, with those crackpots and fools whose lack of intelligence and creativity is still the best guarantee of their loyalty.”

    পরিচিত কলেজ-অধ্যাপকদের কাছে সেইসব লাটের দেশের বাটেদের গল্প শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। কোথাও ক্লাস হয় না, তাই পরীক্ষাও হয় না, কিন্তু বর্ষে বর্ষে দলে দলে পাস দিয়ে পরের ইয়ারে পৌঁছে যায় লোকে। কোথাও ক্লাস হয়, কিন্তু রাজনৈতিক স্নেহধন্য ছাত্র একদিনও মুখ না দেখিয়ে পরীক্ষার ফেল করেও দিব্যি উত্তীর্ণ হয়ে যান প্রিন্সিপালের বদান্যতায়। হাওড়ার কাছেই একটি কলেজের এক প্রৌঢ় অধ্যাপক ক্লাসে যান নিয়মিত, একজন এলে সেই একজনের-ই ক্লাস নেন, আর কোনো অধ্যাপক আসেন না ক্লাস নিতে। কোথাও আবার খূঁজেপেতে দেখা যায় নির্ধারিত বাজেটের সিংহ-ভাগ (সিংহ না, আসলে ডাইনো-ভাগ) যায় ইউনিয়নের পকেটে, সেই টাকায় ফূর্তি মারানোর ট্যুর হয়, সঙ্গী থাকেন পার্টির পোষা পেয়াদা আর লোকাল মাফিয়ার চামচে, আর তিন বছর আগে পাশ করা ছাত্রনেতা (এই রে চেনা প্লট, নাকি?)। এরকম একটি কলকাতার কলেজের একজনের দেওয়া হিসেবে, সেখানে ইউনিয়ন-খাতে যদি ব্যয় হয় চল্লিশ লাখের কাছাকাছি, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ টেনেটুনে আশি হাজার, অঙ্কটা আমিই করে দিচ্ছি – ফূর্তি/শিক্ষা = ০.০২ অর্থাৎ ২ পারসেন্ট।

    এই মনোজিত-জায়েব-প্রমিত ইত্যাদিরা এই সিস্টেমের-ই সযত্নে লালিত দৈত্য। এবং এইরকম দৈত্য শয়ে-শয়ে আছে, ধরা পড়ছে না বা পড়ে নি এই যা। পড়বে হয়তো একদিন, হয়তো একদিন রাগের মাথায় দুষ্টুমি করে ফেলবে, মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে, একদিন একজন ছাত্রীকে হকিস্টিক দিয়ে বেধড়ক ঠেঙিয়ে ফেলবে, ধর্ষণ করে ফেলবে, মেরেও ফেলতেই পারে যদি না সে মরার ভান করে, কারণ ইম্পিউনিটিই যদি না থাকলো, তবে নেতা হয়ে লাভ কী হ’ল?

    তো এইসব আজকের নয়, গতকালেরও নয়, অনেকদিনের। এর উপরে বিষফোঁড়ার মত আছে ন্যাক-দুর্নীতি, এন-ই-পি-র যাঁতাকল। সে প্রসঙ্গ টেনে লাভ নেই। তবুও, যারা জনান্তিকে এই সব বন্ধুদের বলেন, ক্ষোভ উগরে দেন, তারা প্রকাশ্যে কেন বলেন না? ফেটে পড়েন না কেন একদিন? ঠিক সেই কারণে, যে কারণে এই লেখাটাও বেনামী। চাকরির বাজার খারাপ ভাই। আর মামলা-মোকদ্দমার ভূত যার ঘাড়ে চড়েছে সে জানে, দ্য প্রসেস ইজ় দ্য পানিশমেন্ট।

    কাজেই কেউ একদিন কিছু নিশ্চয়ই বলবেন এই আশায় বসে থাকলে আমাদের পুচ্ছে শিকড় গজিয়ে যাবে, কিন্তু কিছু হবে না, কেউ লিখবেন না। এমনিও লিখেটিখে খুব যে কিছু হবে এমন মনে হয় না, কারণ এই অন্ধকার থেকে আমাদের উত্তরণ নেই। সেই মহাভারতের গল্পের মত, মত্ত হাতি তাড়া করেছে পিছনে, কুয়োর পাঁচিলে লতাপাতা জড়িয়ে ঝুলছেন আপনি, কুয়োর নিচে ফণা তুলে বিষধর সাপ, আর এরই মধ্যে কুটুর-কুটুর করে সেই লতাপাতা চিবিয়ে চলেছে একদল ইঁদুর। আজকের পুনরাভিনয়ের দৃশ্যে অবশ্যই হাতি, সাপ আর ইঁদুরের কোনটা সিপিএম, কোনটা বিজেপি আর কোনটা তৃণ বলতে পারার জন্য কোনো বোনাস পয়েন্ট নেই।

    তাহলে কিংকর্তব্য? বিমূঢ়? আমি বলি কী, আপনি যদি কলেজের পড়ুয়া বা অধ্যাপক হন, তাহলে তো আপনি বিলক্ষণ জানেন কী অলীককুনাট্য চলছে, সেই বিষয়েই যা আপনি নিজে জানেন এই নিচে মন্তব্য করুন। বেনামেই করুন না হয়। ফেসবুক থেকে চোথা করবেন না খালি। চোথা আমিও পারি।

    রাগের কথাগুলো রেগে থাকতে-থাকতেই লিখে রাখুন। থেকে যাবে। আর সব তো কর্পূর। 
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • PRABIRJIT SARKAR | ২৯ জুন ২০২৫ ১১:৫৬745174
  • চুলকানি অনেকের থাকে। সে যদি দলের বড় নেতার চামচা হয় বেশি সাহস হয়ে যায়। সিপিএম আমলে কলেজে পড়াতাম। তখন ঠিকমত মাইনে পেলেও ক্লাস না নিয়ে বাড়িতে 'চাটাই পাতা' (মাস স্কেলে প্রাইভেট পড়ানো) করত বহু টিচার। তারা পার্টির লোক হত। ইউনিয়ন এস এফ আই হলে এদের কেউ কিছু বলবার ছিল না। ওদিকে ফাঁকা ঘরে লেনিন বোঝানো চলত। যে প্রতিবাদ করত সে হত 'নকশাল'। 
     
    তৃণমূল পার্টিতে তো কোন আদর্শের ভড়ং ও নেই। অনুব্রত মদন কল্যাণ এদের মত লোকজন ভর্তি। এদের চামচারা হল যুব সমাজ। দু চারটে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাড়তে বাড়তে কোথায় পৌঁছাবে কে জানে! কামদুনি বিচার পায় নি। আর জি কর ও তাই বলে অনেকের মত। আমার ও। ল কলেজ নিয়ে কী হয় দেখি।
  • Naresh Jana | ২৯ জুন ২০২৫ ২৩:২২745179
  • তারপরও তৃণমূলই সহি। ফাঁকা ফ্ল্যাটে লেনিন বোঝায় যে সিপিএম। তারচেয়ে ঢের ভালো ইউনিয়ন রুম। এখানে কী এমন রেপ হয়? উত্তরপ্রদেশ নাকি মধ্যপ্রদেশের চেয়ে বেশি। তাছাড়া এখানে রেপ হলে টাকা মেলে। সুতরাং ঠ্যাং ফাঁক করে দেওয়া ভালো। বর্গীরা যেন না আসে। যেমনটা নুসরাত বলে, ঠাপা ঠাপ,ঠাপা ঠাপ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন