এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • একই বৃন্তে দুটি ঢ্যাঁড়শ

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ৩১ জুলাই ২০১৮ | ৫০৪৪ বার পঠিত
  • প্রশ্নটা স্রেফ এনআরসি নিয়ে নয়। "অবৈধ অনুপ্রবেশ"এর সন তারিখ ১৯৫১ বা ৭১ বা ৮১ বা ২০১১ যাই হোক না কেন, তাতে কিস্যু এসে যায়না, কারণ প্রশ্নটা সালতামামি নিয়ে নয়। প্রশ্নটা "অবৈধ অনুপ্রবেশ" নামক একটি অদ্ভুত ধারণাকে নিয়ে। বলা ভালো "অবৈধ অনুপ্রবেশ" নামক বস্তুটির বৈধতা নিয়েই। "অনুপ্রবেশ" শব্দটি নতুন। বৃটিশ ভারত এই শব্দটির অস্তিত্ব জানতনা। ভারতে তখন শাসক ছিল, শাসিত ছিল, শোষক ছিল, শোষিত ছিল, ঔপনিবেশিক ছিল, সায়েবসুবো ছিল, জমিদার ছিল, জাতপাত ছিল, চোর-চোট্টা-চিটিংবাজ ছিল, ধান্দাবাজ্ব রাজনীতিবিদ ছিল, বহু রকম উঁচু-নিচুর বিভাজন ছিল, কিন্তু কোনো অনুপ্রবেশকারী ছিলনা। উপমহাদেশের মানুষের এই নতুন শ্রেণীবিভাজনটি একদম খাঁটি বাদামী চামড়ার "গণতান্ত্রিক" শাসকদের সৃষ্টি, যাঁদের কাউকে কাউকে আমরা জাতির পিতা বলি। ১৯৪৭ সাল অবশ্য আমাদের জাতির অভিধানে এই একটিই শব্দ দিয়েছে তা নয়। বহু মানুষ, যাঁরা বাদামী চামড়ার শাসকদের কৃপায় ভিটেমাটি হারিয়েছেন, তাঁরা স্বাধীনতা বলেননা, বলেন পার্টিশন। স্বাধীনতার এই প্রতিশব্দটি নতুন। ১৯৪৭ সাল আমাদের দিয়েছে "উদ্বাস্তু" নামক আরও একটি ঝকঝকে সংস্কৃত ঘেঁষা শব্দ। একটি আস্ত ভূখন্ডের মধ্যে যে "পার্টিশন" বানানো যায়, একদল লোককে ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছিন্ন করে মনুষ্যাধম "উদ্বাস্তু" আখ্যা দিয়ে ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘোরানো যায়, কিংবা অনুপ্রবেশকারী স্ট্যাম্প মেরে দলবদ্ধভাবে জেলের মধ্যে আরও কোনো অন্ধকার কুঠুরিতে ভরে রেখে দেওয়া যায়, এসবই আমাদের উত্তর-৪৭ সালের শিক্ষা।

    প্রশ্নটা তাই এসবের বৈধতা নিয়েই। "অনুপ্রবেশ" এর বৈধতা নিয়ে নয়। উদ্বাস্তুরা বৈধ আর অনুপ্রবেশকারীরা নয়, এসব কূটকচালির কোনো মানেই নেই, কারণ, এসবের জন্ম যে "পার্টিশন" থেকে, সেই "পার্টিশন"টির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় এসে গেছে। ১৯৩০ এবং ৪০ এর দশকের ইতিহাস অব্যর্থভাবেই আমাদের একথা জানায়, যে, এই "পার্টিশন" কোনো গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নয়। এ নিয়ে কোনো গণভোট হয়নি, স্রেফ কংগ্রেস এবং মুসলিম লিগ নামক দুটি ক্ষমতালোভী দল, উভয়েই সর্বেসর্বা হতে চেয়ে একটা আস্ত উপমহাদেশকে বাঁটোয়ারা করে নিয়েছিল। যেকোনো সভ্য দেশে প্রধানমন্ত্রী বা রাশ্ট্রপতি নির্বাচিত হন জনতার ভোটে, যিনি হারেন তিনি বিরোধী আসনে বসেন। কিন্তু এখানে আগে ঠিক হয়েছিল, রাষ্ট্রনায়ক, তারপর দেশকে বাঁটোয়ারা করে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের মধ্যে। তাতে কোটি-কোটি লোককে সীমান্ত পার করে 'নিজের দেশ'এ যেতে হয়েছিল সর্বস্ব হারিয়ে। অনেকেই অবশ্য পৌঁছতে পারেননি। এর চেয়ে ঢের কম আকারে একই রকম কান্ড ঘটিয়ে, দিল্লি থেকে দৌলতাবাদে সমস্ত দিল্লীবাসীকে নিয়ে যাবার ফরমান দিয়ে ইতিহাসে চিরনিন্দিত হয়ে আছেন মহম্মদ বিন তুঘলক। কিন্তু এই অতি-তুঘলকি কান্ডের নায়করা সীমান্তের দুই পারে জাতির নায়ক।

    এবং এ নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই, যে দুটি জাতি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই বিভাজনে, দ্বিখন্ডিত হয়েছিল, সেই বাঙালি এবং পাঞ্জাবিরা কেউই এই বিভাজন চায়নি। পাঞ্জাবে পার্টিশনের সময়ই তার বিরুদ্ধে তীব্র আওয়াজ উঠেছিল, বাঁটোয়ারাকারীরা কেউ কান দেননি। বাংলায় সেসব যাতে না হয়, তাই দীর্ঘদিন ধরে নানা কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। সুভাষ ও শরৎ বসুকে কংগ্রেস থেকে বিতাড়ন, নির্বাচনে কংগ্রেসের কেবলমাত্র হিন্দু আসনে অংশগ্রহণ, ফজলুল হকের সঙ্গে সরকার না গড়া, কংগ্রেসি রাজনীতিতে গান্ধী ঘনিষ্ঠ বিড়লা-খৈতানদের অনুপ্রবেশ, স্থানীয় নেতাদের হাইকম্যান্ডের রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত করে ফেলা এবং দেশভাগের পক্ষে সংগঠিত প্রচার চালানো, সবই এর অংশ। এমনকি কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ একটি পত্রিকা, সম্ভবত ১৯৪৬ সালে নিজেদের মতো করেই একটি সমীক্ষাও ছেপে ফেলেছিল, হিন্দুরা দেশভাগ চায় এই সিদ্ধান্ত প্রচার করতে। আর মুসলিম লিগ তো সরাসরি ডায়রেক্ট অ্যাকশান ডের ডাকই দিয়ে দেয়।

    তা, এইসব পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটার জন্য এই লেখা নয়। বস্তুত এটা কোনো প্রবন্ধই নয়। এখানে স্রেফ ছোটো করে কাজের কথাটা বলা হচ্ছে। কথা হল, অনুপ্রবেশকারীরা বৈধ বা অবৈধ এটা কোনো প্রশ্নই নয়। অনুপ্রবেশের জন্য আগে প্রয়োজন পার্টিশন। সেই পার্টিশনটিই গণতান্ত্রিক নয়। অতএব অবৈধ। এই অবৈধ কাজটি না করলে গোটা উপমহাদেশে কোথাও কোনো অনুপ্রবেশ হতনা। হওয়া সম্ভব ছিলনা। কাজেই পাপ কিছু হয়ে থাকলে সেটা যেমন উদ্বাস্তুদের পাপ নয়, তেমনই অনুপ্রবেশকারীদেরও পাপ নয়, আদি পাপটি এনআরসির চতুর্দশপুরুষের, যাঁদের মধ্যে আমাদের জাতির পিতারাও অন্তর্ভুক্ত। যাঁরা অর্ধেক অর্ধেক তেল ভাগাভাগি করবেন বলে তেলের শিশিটি দু ভাগ করেছিলন। বেচারি অন্নদাশঙ্কর রায় পিতাদের সম্পর্কে হয় এই তথ্যটি জানতেননা, কিংবা সম্ভবত ভদ্রতাবশে উল্লেখ করেননি।

    এখানে "আমাদের পিতারা", বা "পিতাদের" শব্দগুলি লক্ষ্য করবেন। সবই বহুবচন। অর্থাৎ এপারের পিতা এবং ওপারের পিতা সকলকেই গাল দেওয়া হচ্ছে। সবাই "আমাদের" পিতা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে। এবং ছানা-পোনাদের মধ্যে কোনো আমরা-ওরা করা হচ্ছেনা। দুর্ভাগা পিতাদের মাতৃহারা সন্তানদের (দেশেদের শুধু পিতারাই ছিলেন, লক্ষ্য করবেন) মধ্যে বিভাজন, এই লেখায় করা হচ্ছেনা। ওসব নেতাদের বা পিতাদের কারবার, যা তাঁরা করে ফেলেছেন। সেই আদিপাপ ঢাকতে পাবলিকের টাকার শ্রাদ্ধ করে অবিরত যুদ্দু-যুদ্দু খেলে চলেছেন। কখনও পূর্ব-পাকিস্তানে, কখনও কাশ্মীরে। কখনও উগ্রপন্থী ঢোকাচ্ছেন, কখনও এজেন্ট। কখনও মুম্বাইতে বিস্ফোরণ হচ্ছে, কখনও করাচিতে। এপারের লোককে বোঝানো হচ্ছে, ওপারটা স্রেফ সন্ত্রাসবাদীদের আখড়া, আর ওপারের লোকরা জানেন, এপারে গরুখেকো দেখলেই কেটে ফেলা হয়। এই অ্যাজেন্ডারই সুসংহত রূপ হল অনুপ্রবেশ জুজু। নেপাল থেকে লাখে লাখে লোক ভারতবর্ষে কাজ করতে এলে কারো কোনো সমস্যা দেখা যায়না, সমস্যা হল বাংলাদেশের লোক ঢুকলে। আফগানিস্তান-পাকিস্তানে অবাধ মুজাহিদিন চলাচলে কারো কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হল কোনো ভারতীয় 'এজেন্ট' ঢুকে পড়লে।

    তা, এসব আটকানোর একটাই উপায়। আদি-পাপের প্রতিকার। আমরা কিছু বাইবেলীয় মনুষ্যসন্তান নই, যে, আদম-ইভের পাপকার্যের বোঝা আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বয়ে চলতে হবে। তদুপরি আমাদের কোনো মাতা নেই, সবই পিতা। তাঁদের পাপ আমাদের ঘাড়ে বয়ে চলার কোনো কারণ নেই, জাস্ট ঝেড়ে ফেললেই হয়। অর্থাৎ, অনুপ্রবেশ নয়, প্রশ্ন তুলুন পার্টিশান নিয়ে। সে পার্টিশান এখনই মুছে ফেলা সম্ভব নয়। কিন্তু যাতায়াত তো উন্মুক্ত হওয়া সম্ভবই। খুলে যাক ওয়াঘা। খুলে যাক পেট্রাপোল। আর্মি আর সিক্রেট সার্ভিসের দাপাদাপি বন্ধ হোক। লোকে অবাধে এপার থেকে ঠুংরি-ভজন গাইতে হাইতে ওপারে যাক, ওপার থেকে এদিকে আসুক গজল-কাওয়ালির বোল। ১৯৪৭ সালের বিভাজন চুলোয় যাক। প্রতিকার হোক আদি পাপের। ভারতবর্ষে কস্মিনকালেও কোনো অনুপ্রবেশকারী ছিলনা। এখনও থাকবেনা।

    এই দাবী তুলতে হলে আপনাকে আমাকেই তুলতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠিত হল তুলবেনা। কারণ, আদি-পাপের ভাগীদার এরা সবাই। আর ভুল স্বীকার করা উপমহাদেশের রাজনীতির উত্তরাধিকারে কোথাও নেই। যদি দাবী তুলতেই হয়, এই আমি যেমন লিখছি, "অবৈধ অনুপ্রবেশ" নামক হযবরলর চক্করে না পড়ে আপনাকেও লিখতে হবে। পার্টিশনের পাপকে অস্বীকার করে, "অনুপ্রবেশ" এর ডিসকোর্সে ঢুকে, তারপরে সম্প্রীতির হাজারটা বাণী দেবার কোনো মানে নেই। তার চেয়ে বরং নজরুলের গানকে প্যারডি করে গানঃ মোরা একই বৃন্তে দুটি ঢ্যাঁড়শ, হিন্দু-মুসলমান।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ৩১ জুলাই ২০১৮ | ৫০৪৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | ***:*** | ০২ আগস্ট ২০১৮ ১২:৫৭64906
  • 'পুরো উপমহাদেশে মানুষের ভয়েস কিছুই নাই। শুধুই সরকার। তা বাদে ভিসিবল শুধু দাঙ্গাকারী ও লিঞ্চারেরা'

    - সন্ত্রাসবাদ-ও আছে।
  • Atoz | ***:*** | ০৩ আগস্ট ২০১৮ ০১:১৩64917
  • শুধু সরকারের ইচ্ছা দিয়ে হবে না তো। সব পক্ষের সরকারের "লাভ" এর ব্যাপার থাকতে হবে, নাহলে কেন তারা উৎসাহী হবে এত বেশি ঝামেলার এত বেশি ঝুঁকির প্রোজেক্ট হাতে নিতে? বাইরের বড় শক্তির চাপে বাধ্য হয়ে করতে হলে সে অন্য কথা।
    সাধারণ লোক ভদ্র অসভ্য স্বার্থপর পরার্থপর যাই হোক না কেন, বন্দুক হাতেই থাক বা খালি হাতেই থাক, তারা নিজেরা কতটা পারবে কিছু করতে? সরকারী উদ্যোগ উদ্যম ছাড়া প্রথম ধাপই তো পার হওয়া যাবে না!
  • dc | ***:*** | ০৩ আগস্ট ২০১৮ ০২:২৫64918
  • Atoz, সরকারের দিক থেকে কোন উদ্যোগ কখনোই নেওয়া হবে না, কারন পলিটিশিয়ানদের লক্ষ্য থাকে ক্ষমতায় থাকা। আর বর্ডারে মারপিট চললে ভোট পেতে সুবিধে হয় - যেমন ধরুন এই ঢপের এনারসি প্রোজেক্ট, এটা নিয়ে ২০১৯ অবধি হইচই চলবে। কিন্তু সরকার বা পলিটিশিয়ানদের থেকে বেশী পাওয়ারফুল হলো ইকোনমিক বা কমার্শিয়াল ইন্টারেস্ট। সাবকন্টিনেন্টের ব্যাবসায়ীদের যদি মনে হয় যে একটা ইউনিফায়েড মার্কেট তৈরি হলে লাভ হবে, তাহলে আস্তে আস্তে ভিসা ছাড়া যাতায়াতের ব্যবস্থা ঠিকই চালু হবে। আদানি আম্বানি অ্যামাজন বা ওয়ালমার্ট যদি মনে করে পুরো সাবকন্টিনেন্ট এ কমন লজিসটিক্স নেটোয়ার্ক বানাতে পারলে লাভ বেশী হবে তাহলে সরকারগুলো নিয়ম পাল্টাতে দেরি করবে না।
  • Atoz | ***:*** | ০৩ আগস্ট ২০১৮ ১১:১৯64920
  • @ dc, তাহলে ওই আমাজন ওয়ালমার্ট আদানি আম্বানিদেরই ডাকা হোক। কিন্তু তারা তো অনেকেই জয়মাল্য গলায় দিয়ে উড়ে উড়ে পালায়, টাকা মেরে দেয়, সাবকন্টিনেন্টের ব্যাপারে কি আর ওদের ভরসা করা যাবে?
    এক যদি হয়, ওদের টাকা মারার ব্যবস্থা ইউনিফাইড ওয়েতেই বেশি ভালো হবে, সেই টোপে পড়ে হয়তো কিছু স্টেপ নিলেও নিতে পারে। আফ্টার অল দুনিয়ার সব টাকাই তো শেষ অবধি তিরুপতি মহারাজের, টাকা মারলেই বা কী না মারলেই বা কী!
  • Ishan | ***:*** | ০৩ আগস্ট ২০১৮ ১২:৩৩64915
  • এ না বোঝার কী আছে। যখন যুদ্ধ হয়েছিল, তখন ওটা পূর্ব পাকিস্তান ছিল। একই কারণে কোন এক জায়গায় ব্রিটিশ ভারতও বলা হয়েছে। তার মানে কী আর ব্রিটিশরা ভারতে বসে আছে?
  • Ishan | ***:*** | ০৩ আগস্ট ২০১৮ ১২:৪৭64916
  • আর ইন জেনারাল বলি। একদিনে সীমান্ত খুলে দেওয়া যায়না, এ সবাই জানে। যদিও ভাগটা একবছরের মধ্যেই হয়েছিল, সেটা আর অনেক কঠিন কাজ হওয়া সত্ত্বেও। কিন্তু সে প্রসঙ্গ এখানে তুলছিনা। খুব ধীরে সুস্থে করলে কয়েকটা ধাপ পেরিয়ে সীমান্ত খোলা, তারপর একটা কনফেডারেশনে পৌঁছানো। বেশ কয়েক বছরের কারবার। যদি আদৌ করার ইচ্ছে থাকে।

    কিন্তু সরকারের করার ইচ্ছে নেই। কোনো তরফেই নেই। তার চেয়েও যেটা হতাশাজনক, যে, যাদের ইচ্ছে থাকার কথা, ইচ্ছা সত্ত্বেও তাঁরা এটাকে অবাস্তব ভাবেন। আসলে সীমান্তের ওপারে নিরীহ মানুষ কম, সন্ত্রাবাদী বেশি, এটা মাথায় ঢুকে গেছে। ওপারে গাদা-গাদা উগ্রপন্থী বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, খোলা পেলেই এসে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে, এই ধারণা ভারতীয় রাষ্ট্র মাথায় গুঁজে দিতে পেরেছে। কী জানি পাকিস্তানী মানুষ কী ভাবেন। এপারে মুসলমান দেখলেই কেটে ফেলা হয় ভাবেন হয়তো। আমরা বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ভাঙা দেখে আঁতকে উঠি, ওরা বাবরি মসজিদ দেখে। আমরা মুজাহিদিনদের নিয়ে ভয় পাই, ওরা গুজরাতের দাঙ্গা নিয়ে। তফাত কিছুই নেই।

    এর পরেও, যেটা আমাদের বদ্ধমূল ধারণা টপকে কিছুতেই মাথায় ঢুকতে পারেনা, যে, এর পরেও এপারের মতো ওপারেও গাদা-গাদা নিরীহ লোক থাকে। যারা কেউ ভদ্র, কেউ অসভ্য, কেউ স্বার্থপর, কেউ অন্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে, এইসব নানা ভ্যারাইটি। কিন্তু বেশিরভাগ লোকই বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়না। এইটা যে আমরা ভাবতে পারিনা, ভাবি সীমান্ত খুললেই রাক্ষসরা ঝাঁপিয়ে পড়বে, এটা হল আমাদের জাতির পিতাদের সবচেয়ে বড় জয়।

    যুদ্ধপরিস্থিত তৈরি করে রাখলে এমনটাই হয়। মতাদর্শগত জয়লাভ ছাড়া তো আর কোনো যুদ্ধপরিস্থিতি দশকের পর দশক টিকতে পারেনা। জাতির পিতারা মতাদর্শটা তৈরি করে দিতে পেরেছেন।
  • aranya | ***:*** | ০৫ আগস্ট ২০১৮ ০৫:০০64921
  • 'আসলে সীমান্তের ওপারে নিরীহ মানুষ কম, সন্ত্রাবাদী বেশি, এটা মাথায় ঢুকে গেছে। ওপারে গাদা-গাদা উগ্রপন্থী বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, খোলা পেলেই এসে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে, এই ধারণা ভারতীয় রাষ্ট্র মাথায় গুঁজে দিতে পেরেছে'

    - ভারতীয় আম-আদমি-র বুদ্ধি কম, সরকার সহজেই ব্রেইন ওয়াশ করতে পারে, এমনটা ভাবার মনে হয় না।
    'সীমান্তের ওপারে নিরীহ মানুষ কম, সন্ত্রাবাদী বেশি' - এমন অদ্ভুত ধারণায় কজন সাবস্ক্রাইব করে জানি না। নিরীহ মানুষের তুলানায় সন্ত্রাসবাদী অবশ্যই সংখ্যায় অনেক কম।

    কিন্তু সেই কম সংখ্যক সন্ত্রাসবাদী নিয়মিত ভাবে, প্রতি বছর, পাকিস্তানে নিরীহ মানুষদের, বিশেষতঃ সংখ্যালঘুদের হত্যা করে আসছে। এত বেশি টেররিস্ট অ্যাটাক যে সেই নিরিখে পাকিস্তানকে ফেইলড স্টেট বলা যেতে পারে। লিস্টি দেওয়ার প্রয়োজন দেখছি না, অনলাইন সার্চালেই পাওয়া যাবে।
  • সিকি | ***:*** | ০৫ আগস্ট ২০১৮ ০৫:৫৪64922
  • স্টেট আর নেশনের পার্থক্য যারা বোঝে না, তারা ঝাড়েবংশে এইসব ধারণায় সবস্ক্রাইব করে। মন দিয়ে বিশ্বাস করে। পাকিস্তান নিজে কীভাবে সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে, সে সব খবর এদের কাছে পৌঁছয় না, বা পৌঁছলেও কনভিনিয়েন্টলি তারা সে সব এড়িয়ে যায়।
  • aranya | ***:*** | ০৫ আগস্ট ২০১৮ ০৬:৫২64923
  • ধর্মের ভিত্তিতে তৈরী দেশ পাকিস্তান। এখন ধর্মীয় সম্ন্ত্রাসবাদে নিজেই সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। শুধু তো মানুষ মারাই যাচ্ছে না, আজই যেমন কাগজে পড়লাম ১২-টা স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে তালিবান-রা, পড়াশুনো ব্যাপারটা মৌলবাদীরা পছন্দ করে না।
  • aranya | ***:*** | ০৫ আগস্ট ২০১৮ ০৭:০৩64924
  • সব সীমান্ত মুছে যাক, এ আমিও চাই। এটাও জানি, ব্যাপারটা সহজ নয়। ইউরোপের সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের অব্স্থার কিছু পার্থক্য আছে। যেমন পাকিস্তানের সাথে সীমান্ত মুক্ত করে দেওয়া হলে, এখনকার তুলনায় বেশি সংখ্যক সন্ত্রাসবাদী, ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিস্ট ভারতে ঢুকবে, এটা আশা করি সকলেই মানবে।

    বৃহত্তর স্বার্থে হয়ত তা মেনে নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু এটা একটা সমস্যা। এবং এই সমস্যাটা শুধুমাত্র ভারতীয় রাষ্ট্রের তৈরী, তাও নয়
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন