এ এক অদ্ভুত, কিম্ভুত উল্টো-লজিকের যুগে বাস করছি আমরা।
ক্রিমিনাল গণহত্যার দায়ে যাদের বিচার হওয়া উচিৎ, জেল হওয়া উচিৎ, সেই টাটাদের প্রশংসায় একদল ভারতীয় ও বাঙালি পঞ্চমুখ। কেন?
না, এক কোটি টাকা করে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। অহো, কী বদান্যতা, কী প্রোফেশনালিজম! চোখে জল এসে যায়!
হিসেবটা হলো, ধরা যাক ২৬০ জন মারা গেছে -- কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পরিবারই মৃত -- তাদের টাকা পাবে হয়তো তাদের নিকট আত্মীয়, যারা হয়তো সে পরিবারকে কোনোদিন দেখাশোনাই করেনি। যাক সে কথা।
এখন আসল হিসেবটা হলো, টাটা মোদীদের কাছ থেকে মাত্র ১৮,০০০ কোটি টাকায় সম্পূর্ণ এয়ার ইন্ডিয়া কিনে নিয়েছিল (রেফারেন্স নিচে দেওয়া হলো) -- অসংখ্য প্লেন, ক্রু, ইনস্ট্রুমেন্ট, হ্যাঙ্গার, আরো হাজার জিনিসপত্র সমেত, যার জন্যে ভারতের জনগণের টাকা থেকে অন্তত এক লক্ষ কোটি টাকা টাটা কোম্পানি ঝেড়ে দিয়েছে, কারণ মোদীরা জলের দরে এয়ার ইন্ডিয়া তাদের বেচে দিয়েছে -- এবং ক্ষতিটা ভাগ বাঁটোয়ারা করে দিয়েছে হিন্দু ও মুসলিম আমজনতার মধ্যে। ব্যাস, দায়দায়িত্ব শেষ। কোনো রেগুলেশন আর নেই এই মার্কিনি মডেলের পুঁজিবাদে।
এখন মোদী-সমর্থক হনুমান বাহিনী বলছে, মোদীদের কোনো দোষ নেই এই দুর্ঘটনায়, দোষ সব টাটাদের। নন-বায়োলজিক্যাল মোদীকে কোনো কিছুর জন্যেই কোনো দোষ দিওনা আমায় বন্ধু, আমার কোনো যে দোষ নাই।
টাটা কোম্পানি গণখুনের মামলা ও রেপুটেশন শেষ হয়ে যাওয়া থেকে নিজেদের বাঁচাতে মাত্র ২৬০ কোটি টাকা খরচ করবে এখন, প্লাস আরো কয়েক শো কোটি -- আহতদের চিকিৎসার জন্যে। কিন্তু আহত আর বিশেষ কেউ নেই। সুতরাং, সিম্পল একাউনটেন্সি করে দেখুন ফুলস্কেপ কাগজে। লাভ কত, ক্ষতি কত।
প্রশংসা করছে তাদের, যারা নিয়ে নেওয়ার পরে তিন চার বছর ধরে কোনো মেন্টেনেন্স, কোনো আপগ্রেডিং করেনি। আমরা ভয়ে ও ডিসগাস্টে এয়ার ইন্ডিয়াতে দেশে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি -- সিটগুলো দড়ি দিয়ে বাঁধা, টিভিগুলো খারাপ, আর বাথরুমগুলো সমস্তিপুর এক্সপ্রেসের থার্ড ক্লাসের বাথরুমের মতো দেখে। জিনিসপত্রও অনেক হারিয়ে গেছে তার আগে। কিছু কিছু যাত্রী প্লেনের কার্পেটেই থুথু ফেলে -- নিজের চোখে দেখা, দাদারা ও দিদিরা। ভারতীয় কিনা! আর ফ্রী ড্রিংক পেলে চারবেলা খায়।
যে কোনো ভারতীয় যারা এয়ার ইন্ডিয়াতে যাওয়া আসা করে বিদেশে, তারা জানতো একটা বিশাল ডিজ্যাস্টার শুধু সময়ের অপেক্ষা।
বোয়িং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে ঝড়তি পড়তি মাল প্লেনগুলো বিক্রি করে -- তার টেণ্ডারের জন্যেও শাসকশ্রেণীর মাফিয়া কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেয়। সেসব তো কোলাব্যাঙ মিডিয়া কখনো বলবেই না।
কোলাব্যাঙ মিডিয়া এখন ওই একজন জীবিতকে নিয়েই গপ্পো ফাঁদতে ব্যস্ত। তাঁর সঙ্গে গীতা ছিল কিনা, এগারো নম্বর সিট হিন্দু জ্যোতিষ মতে পলা কিংবা চুনী ধারণের মতো শুভ কিনা। বাগেরা বাগেরা।
মোদীর এগারো বছরে এগারো সংখ্যাটা শুভ কিনা, তা অবশ্য আর এক উল্টোরাজার উল্টো-লজিক বিচার করবে।
আমরা কে? একদল ইডিয়েটস। আমরা এই অশ্রুসজল দিনেও রাজনীতি করছি। আমাদের মতো দেশদ্রোহী আর কে আছে? তার ওপর আবার অঙ্ক কষছি এই শোকের সময়ে।
মোদী কেন মণিপুরে যান না, কিন্তু আহমেদাবাদে যান, তা নিয়েও আবার প্রশ্ন করছি আমরা।
ছিঃ!
____________
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।