এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মে দিবসের ডাক -- মোদীমোহনমোহম্মদীয় মার্কিনি সাম্রাজ্যবাদ ভোগে যাক। 

    Partha Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০১ মে ২০২৫ | ৯৫ বার পঠিত
  • এখানে আমেরিকায় মে দিবস পালিত হয়না। এখন ভারতেও আর সরকারিভাবে পালিত হয়না।

    ভারত-বাংলাদেশ এখন মার্কিনি মডেলের চামচা। যে মডেল শুধু ওয়ান পার্সেন্টকে খুশি রাখে, আর বাকী ৯৯ পার্সেন্টকে মেগা মেশিনের নাটবল্টুর মতো ব্যবহার করে, এবং দরকার ফুরিয়ে গেলেই ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

    এসব কথা বিস্তারিতভাবে আমি আমার বই "আমেরিকা স্বপ্নপুরী না হত্যাপুরী?"তে লিখে রেখেছি। কিন্তু যেহেতু আমার সে বই এখনও পর্যন্ত এই দু বছরে সাড়ে পঁচাত্তর কপি বিক্কিরি হয়েছে, কারণ আমি সিপিএম নই বলে গণশক্তি সে বইয়ের রিভিউ প্রকাশ করতে রাজী হয়নি, তাই এই ফিরি ফোরামই আমার ফাইনাল ভরোসা।

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একসময়ে মধ্যবিত্তদের জন্যে, শ্রমিকদের জন্যে স্বর্গরাজ্য ছিল। লিবারাল ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট রুজেভেল্ট অথবা কেনেডি-জনসনের সময়ে তো বটেই, গোঁড়া কেরেস্তান রিপাবলিকান আইজেনহাওয়ারের সময়েও আমেরিকায় প্রতি একশো জন খেটে খাওয়া পুরুষ ও নারীর মধ্যে চল্লিশ জন ছিল সংগঠিত শ্রমিক, অর্থাৎ লেবার ইউনিয়নের সদস্য।

    "দ্য আমেরিকান ড্রীম" কথাটার উৎপত্তি সেই সময়েই। মধ্যবিত্ত মানুষের নিজেদের বাড়ি, নিজেদের গাড়ি, ঋণহীন জীবন, সপ্তাহে চল্লিশ ঘন্টা কাজ, আর বাকী সময়টা ফ্রী। সাপ্তাহান্তিক দুটো দিন ছুটি। সরকার তোমার স্বাস্থ্য ও স্কুল শিক্ষার খরচ বহন করবে, যদি তুমি ইউনিয়ন সদস্য হও।

    হ্যাঁ, মার্কিনি পুঁজিবাদী মডেলেই সেসব সুখের দিন কাটিয়েছে আমজনতা। কমিউনিস্ট হতে হয়নি। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান নেমে এসেছিলো ন্যূনতম ১:৪০ রেশিওতে। অর্থাৎ, কোম্পানির মালিকের উপার্জন সাধারণ শ্রমিকের চল্লিশ গুণের বেশি নয়। আরো সহজ করে বললে, সাধারণ মার্কিনি ইউনিয়ন শ্রমিক যদি রোজগার করে ঘন্টায় পাঁচ ডলার, তার সিইও রোজগার করবে ঘন্টায় ২০০ ডলার। তার বেশি নয়।

    ইউনিয়ন শ্রমিককে -- সে ইলেক্ট্রিকাল ওয়ার্কার হোক, রাজমিস্ত্রি হোক, কর্নফিল্ডের চাষী হোক অথবা স্কুল টীচার -- কোনোভাবেই যখন তখন ছাঁটাই করে দেওয়া চলবে না। এমন কি, ছাঁটাই হয়ে গেলেও ইউনিয়ন ও সরকার তাকে বেকার ভাতা দিতে বাধ্য থাকবে।

    তারপর এলো ১৯৮০। ব্রিটেনে মার্গারেট থ্যাচার, এবং এই আমেরিকায় রোনাল্ড রেগান। শ্রমিক ইউনিয়নকে ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো। মার্কিন পুঁজিবাদ ও ব্রিটিশ পুঁজিবাদ ঘোষণা করলো, মানুষ মানুষের জন্যে। অর্থাৎ, ইউ আর অন ইওর ওন। নিজের বেওস্তা নিজে করো। আরো সহজ বাংলায়, তুমি ভোগে যাও।

    আজ রেগান-থ্যাচারের পঁয়তাল্লিশ বছরের শুভলাভ অ্যানিভার্সারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি একশো জন খেটে খাওয়া পুরুষ ও নারীর মধ্যে মাত্র ৯জন ইউনিয়ন মেম্বার। ভারতে আরো কম -- ৭জন।

    *আমেরিকায় কোম্পানির সিইও অর্থাৎ মালিক সেই কোম্পানির সাধারণ শ্রমিকের উপার্জনের এক হাজার গুণ রোজগার করে। অর্থাৎ, আমার ছাত্রছাত্রীরা হিসেব কষে বের করেছিল -- ডিজনি বা আমাজন বা টেসলা বা ফোর্ডের একজন মালিক মাত্র এক ঘন্টায় যা রোজগার করে, একজন সাধারণ শ্রমিকের সেই পরিমাণ উপার্জন করতে লেগে যাবে চার থেকে ছয় মাস।*

    ভারতে কতদিন লাগবে, তার অঙ্ক আবিষ্কার হয়নি এখনো।

    তা, আমার ওই সাড়ে অষ্টাশি কপি বিক্কিরি হওয়া বইটাতে অন্য কিছু অঙ্ক আমি দিয়েছি। তার একটা হলো, সারা পৃথিবীর ভোগবাদী, ধনী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা কোন দেশের? অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা তো এক্ষুণি বললাম। এবারে যোগ করুন স্বাস্থ্য (কোভিডে সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু -- বারো লক্ষ মানুষ ভোগে গেছে এই আমেরিকায়), শিক্ষা (একশো জনের মধ্যে মাত্র চল্লিশ জন কলেজে যায় এই আমেরিকায়), সারা পৃথিবীর টোটাল বন্দী সংখ্যার এক চতুর্থাংশ এই আমেরিকায় -- কিন্তু তাকে বলা হচ্ছে ল্যান্ড অফ দ্য ফ্রী -- ভানু জহরের হাস্যকৌতুকের থেকেও মজা, টিন প্রেগনেন্সি, ড্রাগ ব্যবহার, পর্নোগ্রাফি, ওবেসিটি, জাঙ্ক ফুড, রাস্তাঘাটে মলে সিনেমা হলে স্কুলে বন্দুকবাজি, পুলিশি নির্যাতন ইত্যাদি ইত্যাদি ভালো ভালো জিনিস -- সবকিছুতেই আমেরিকা সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে। 

     
    মানে, পিছিয়ে।

    ব্যাংকে আপনার টাকা রাখলে সুদ পাবেন ০.৫% .হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন, ০.৫%. কিন্তু আপনি সেই একই ব্যাংক থেকে গাড়ি বা বাড়ি কেনার জন্যে লোন চাইতে গেলে আপনাকে দিতে হবে ১২ থেকে ২০ পার্সেন্ট। এদেশে কেউ কোনো প্রশ্ন করেনা। যারা প্রশ্ন করতো, তাদের ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

    তাদের নাম ছিল শ্রমিক ইউনিয়ন।

    ভারতে ও বাংলাদেশে মোদীমোহম্মদমোহন মডেল এই আজকের আমেরিকার মডেলের অতি বাধ্য ছাত্র। অনুগত, প্রশ্নহীন শিষ্য।

    ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি, মে দিবসের ইতিহাস কিন্তু আসলে মার্কিনি ইতিহাস। শিকাগো বলে একটা ভীষণ শীতের জায়গায় এই দারুণ উষ্ণ ইতিহাসের শুরু -- পুলিশের বন্দুকের গুলিতে। গরম রক্ত ঝরেছিল মার্কিনি শ্রমিকদের সেই ঐতিহাসিক দিনে।

    মার্কিনি মিডিয়া মানুষকে ভুলিয়ে দিয়েছে। যদি আমার ওই বইটা পড়তেন, মিডিয়ার দরকার হতোনা। বইটারও আরো গোটা পঞ্চাশ বিক্কিরি হতো।

    যাক সে দীর্ঘশ্বাসের কথা।
    ____________
    মে দিবস, ২০২৫
    নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০১ মে ২০২৫ | ৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • r2h | 134.238.***.*** | ০১ মে ২০২৫ ২১:২২731011
  • প্রথম বাক্যটাই মিসলিডিং।
    মে দিবস পালিত হয় না মানে শ্রমিক দিবস পালিত হয় না তা না- আমেরিকায় লেবার ডে সেপ্টেম্বরর মাসের প্রথম সোমবার।

    ব্রিটিশরা যে দিনটাকে যে দিন হিসেবে পালন করে, আমেরিকানরা সেটা অন্যরকম ভাবে অন্য দিনে করতে চাইবে তাও ধরেই নেওয়া যায়।
    উনবিংশ শতক থেকেই তো বোধয় এই ব্যবস্থা।
  • কৌতূহলী | 115.187.***.*** | ০১ মে ২০২৫ ২২:৫৮731013
  • হমম বুঝলাম। আমেরিকার বাস্তবতা কিছুই জানি না, তাই পক্ষে বিপক্ষে মন্তব্য করার যোগ্যতা নেই। আপনার কিছু বই পড়েছি, এটা পড়িনি, পড়ার ইচ্ছে রইল। কিন্তু একটা বই সাড়ে পঁচাত্তর কপি বা সাড়ে অষ্টআশি কপি বিক্রি হয় কী করে? মানে বাকি আধখানার রহস্যটা ঠিক বুঝলাম না। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন