এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • বল বীর – বল উন্নত মম শির 

    রানা সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ২৯ জুলাই ২০২৫ | ৫২ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • ১৯২১ সালের ডিসেম্বর; ক্রিসমাসের রাত। কলকাতার ৩/৪সি, তালতলা লেনের বাড়িতে বসে কাঠ পেনসিলে এই কালজয়ী কবিতাটি লিখে ফেলেন সদ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ফেরত বাইশ বছরের যুবক কাজী নজরুল ইসলাম।

    ‘বল বীর-
    বল উন্নত মম শির।
    শির নেহারি আমারই নতশির ঐ শিখর হিমাদ্রির।
    বল বীর –
    বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি
    চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি
    ভূলোক দ্যুলক গোলক ভেদিয়া
    খোদার আসন আরশ ছেদিয়া
    উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব বিধাতৃর।
    মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর।
    বল বীর
    আমি চির উন্নত শির’।

    কবিতাটি শুনে শ্রী অবিনাশ ভট্টাচার্য কবিতাটি ‘বিজলী’ পত্রিকায় ছেপে দেন। সেদিন বৃষ্টি হওয়ার পরও সেই কাগজের চাহিদা এতো হয়েছিল, যে সেই সপ্তাহে ঐ কাগজটি দুইবার মুদ্রণ করতে হয়েছিল।

    তিনি আসলে তাঁর এই কবিতার মাধ্যমে বাঙালিকে, ভীরু বাঙালিকে বলেছিলেন উঠে দাঁড়াতে।

    আজ ঐ আধিপত্যবাদী সাম্প্রদায়িক দুর্নীতির চূড়ামণি কেন্ত্রীয় সরকারে আসীন ঐ রাজনৈতিক দলের কাজকর্ম দেখে আমার এই কবিতাটির কথাই মনে পড়ল।

    ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ফেকুজী নোটবন্দীর ঘোষণা করলেন। ভারতীয় অর্থনীতিকে দুর্নীতি (!) ও কালো টাকার কবল (!) থেকে উদ্ধার করতেই নাকি তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা।
     
    ৯ ডিসেম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সব ধরণের ব্যাংকিং লেনদেন। ফলে ভারতীয় অর্থনীতি ও জনসমাজে তৈরি হয়েছিল একটা চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা অবস্থা। সারা দেশ জুড়ে মানুষ ঘটেছিল চরম ভোগান্তি।

    কিন্তু যে জন্য এতো ঢাকঢোল পিটিয়ে ছিলেন ফেকুজী, সত্যিই কি ভারতীয় অর্থনীতিকে দুর্নীতি (!) ও কালো টাকার কবল (!) থেকে উদ্ধার করতে পেরেছিলেন?

    না।

    এই নোট বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেকগুলো ঘোষণা হয়েছিল – জন ধন যোজনা, জি এস টি চালু, বেনামী সম্পত্তি রোধ আইন।

    জন ধন যোজনার কী হয়েছিল তা আমরা সারা দেশের সবাই কিন্তু জানি? ১৫ লাখ টাকা, এসেছিল প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে?

    না।  

    বহু মানুষ শুধু নতুন করে অ্যাকাউন্ট করেছিলেন।

    তাহলে? প্রথম থেকেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া শুরু করে দিয়েছিলেন ফেকুজী এবং তার সরকার। আর দেশের মানসিকভাবে ধ্বজভঙ্গ নাগরিক এখনও বুঝতেই পারলেন না যে দেশের সঙ্গে ফেকুগিরি করা এই ফেকুজি বার বার ফেকুগিরি করছেন। কথায় বলে, Once Gaddar is always Gaddar. তেমনই – Once Fake is always fake.   

    এবং এই নোট বাতিলের পর পরই কিন্তু মানুষ কার্ড আর মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে লেনদেন বাড়িয়েছিলেন, সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন, হয়েছিলেন এবং ইদানীং অনেকেই কিন্তু আবার সেই আগের লেনদেন পদ্ধতিতে ফিরে যাচ্ছেন।

    কোন কোন কোম্পানি সেই ডিজিটাল লেনদেনের অ্যাপ খুলে রাতারাতি ফুলে ফেঁপে উঠেছিলেন?

    নোট বাতিলের পরের ৬ মাসের তথ্য থেকেই দেখা যাচ্ছে যে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমে গেছিল। বিশেষত যে দুটি ক্ষেত্রে সর্বাধিক মানুষ নিযুক্ত ছিলেন, সেই কৃষি আর উৎপাদন ক্ষেত্র দুটিতে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন।

    নোট পাল্টানোর লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে গেছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছিলেন কল্লোল রায় চৌধুরী।
     
    আপনারা হয়তো জানেন বা জানেন না যে ১৯৪৬ ও ১৯৭৮ সালেও হয়েছিল নোট বন্দী হয়েছিল। তখন ১০ হাজার এবং ৫ হাজার টাকার নোট চালু ছিল। আর খুব সামান্য কিছু মানুষের হাতে কেবল এই নোট থাকায়, অর্থনীতিতে এর কোনও প্রভাবই পড়ে নি।

    আমার তো মনে হয়, ডি-মনিটাইজেশনের জায়গায় করা উচিৎ ছিল, ডি-ধনটাইজেশন।

    ডি-ধনটাইজেশন কী?

    আম্বানি, আদানী সমেত ভারতে যত বিত্তশালী মানুষ আছেন, তাদের সমস্ত টাকা দেশের বাকি সমস্ত মানুষদের মধ্যে সমহারে বন্টন করে দেওয়া। তবেই তো হবে দেশের সমস্ত মানুষের আসল সেবা করা হবে। আর তবেই ঘটবে সমস্ত নাগরিকের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।  

    কিন্তু নোটবন্দী করে কাদের কাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল? জানেন কি?

    এবার এসেছে ভোট বন্দী।

    আমাদের একজন তথাকথিত লেখিকা স্টুডিও আলো করে এসে হাত-পা নাড়িয়ে আমাদেরকে জানালেন যে আসলে অনুপ্রবেশ হল দেশের অর্থনীতি আর জাতীয় নিরাপত্তার ওপর এক নির্মম আঘাত। ভাগ্যিস জানালেন। তা না হলে জানতেই পারতাম না।

    সঞ্চালক যত বলছেন যে ঘটনাগুলো সত্যি। উনি ততই তার বিপক্ষে বলতে থাকলেন যে কই, ভদ্রলোকদের সঙ্গে তো এইরকম হচ্ছে না। যাঁদের সঙ্গে হচ্ছে তাদের নিশ্চয়ই কিছু ব্যাপার আছে।

    কিছু ব্যাপার থাকতেই পারে। তবে এভাবে মানুষের সঙ্গে মানুষ আচরণ করছে আর আপনি একজন লেখিকা হয়ে তার প্রতিবাদ করবেন না?

    আর যদি দেশের অর্থনীতি আর জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারটাই মুখ্য হয়ে যায়, তাহলে সেই লেখিকার কথা মতো –

    অনুপ্রবেশ = দেশের অর্থনীতি আর জাতীয় নিরাপত্তার ওপর এক নির্মম আঘাত

    এই সমীকরণটাকে যদি উল্টে লিখি তাহলে পাই –
    দেশের অর্থনীতি আর জাতীয় নিরাপত্তার ওপর এক নির্মম আঘাত = অনুপ্রবেশ। তখন কী মানে দাঁড়াবে?

    মানে দাঁড়াবে যারা যারাই দেশের অর্থনীতি আর জাতীয় নিরাপত্তার ওপর এক নির্মম আঘাত হানছেন তারা তারাই তাহলে অনুপ্রবেশকারী। তাই তো?

    তাই যদি হয় তাহলে তো ‘রাজপাট’ লেখিকার সমীকরণটিকে উভমুখি করে দিয়ে বলতে হয় ঐ আধিপত্যবাদী সাম্প্রদায়িক দুর্নীতির চূড়ামণি কেন্ত্রীয় সরকারে আসীন ঐ রাজনৈতিক দলের বেশিরভাগ লোকই হল অনুপ্রবেশকারী। কারণ ২০১৪ সাল থেকেই তারা তাদের নানান প্রকল্প, অধ্যাদেশ ও আইনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আর জাতীয় নিরাপত্তার ওপর এক নির্মম আঘাত হানছেন; হেনেই চলেছেন।

    ভুল বললে শুধরে দেবেন প্লিজ।

    এখন ভারতে কেউ যদি সম্পত্তির অধিকারী হওয়ার আইনটি দেখেন তাহলে দেখবেন যে তার নানান উপায়গুলির মধ্যে একটি হল Adverse Possession.

    সেখানে বলা আছে – ১২ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে, প্রকাশ্যে এবং তার বিরুদ্ধে যদি সেই স্থানের / জমির অধিকারী কোনও আইনী বন্দোবস্ত না নেন, তাহলে সেই প্রাইভেট জমি ভোগ দখলকারীর নামে হয়ে যায়। সরকারি জমির ক্ষেত্রে সময়টা ৩০ বছর।

    তাহলে এখানে প্রাইভেট জমিতে ১২ বছরের সময় দেওয়া হল, কিন্তু স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ঠিক কী?

    গুগুল করলে যা পাওয়া যাচ্ছে –

    ১) আপনার নাম যদি ২০০২ সালের ইলেক্টোরাল রোলে থেকে থাকে তাহলে আপনাকে কোনও কাগজ দেখাতে হবে না। খালি ভোটার লিস্টের পাতাটি দিলেই হবে। কাগজ দেখাতে হবে তাদের যাঁদের নাম ২০০৩- ২০২৫ সালের মধ্যে উঠেছিল। এক্ষেত্রে তিন ধরণের আবেদনকারী থাকবেন-
    ক) জুলাই, ১৯৮৭ সালের আগে জন্মগ্রহণ করা ভোটার
    খ) ১৯৮৭-২০০২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া ভোটার এবং
    গ) ২০০২ সালের পর জন্ম নেওয়া ভোটার।
         
    ধরা যাক এমন অবস্থায় দেখা গেল যে ১৯৮৭ সালের পর জন্মগ্রহণ করা কোনও ব্যাক্তির কাছে কোনও কাগজ নেই (ভোটার, আধার আর প্যান ছাড়া)। কিন্তু তিনি ১২ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে, প্রকাশ্যে একটা প্রাইভেট জমি ভোগ দখল করে আছেন এবং তার বিরুদ্ধে যদি সেই স্থানের / জমির অধিকারী কোনও আইনী বন্দোবস্তও না নেন, তাহলে সেই প্রাইভেট জমি ভোগ কি দখলকারীর নামে হয়ে যাবে, না যাবে না?
          
    ধরা যাক তিনি ১৯৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছে আর তার বয়স এখন ৩৭। ধরা যাক তিনি হিন্দু নন; মুসলমান। তাহলে? 
                
    তাহলে ভারতে আইনত একজন জমি ভোগদখলকারী কি ভারতের নাগরিক নন?

    দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে/সময় দেশের সাধারণ মানুষ অনেকেই ভোট দিতে পারতেন না। যদি দিতে পারতেন তাহলে হয়তো দেশভাগ হত না। পরে মাননীয় আম্মেদকর সাহেব দেশের সমস্ত মানুষের ভোটাধিকারের কথা বলেই সংবিধান রচনা করেছিলেন।

    মানুষ ভোট দিতেও শুরু করেছিলেন। কোনও কাগজ ছাড়াই। পরে সেই দেশের কেন্দ্রীয় সরকার আইন আনলেন যে ভোটার কার্ড করতে হবে। সাধারণ মানুষ সরল বিশ্বাসে ভোটার কার্ড করালো এবং সেটিই ছিল তার নাগরিকত্বের প্রমাণ।
    তারও আগে ছিল রেশন কার্ড।

    এরপরে ভালোই চলছি। তারপর এলো আধার কার্ড। বলা হল যে এটিই নাকি হবে এখন থেকে নাগরিকত্বের পরিচয়। ভোটার কার্ড দিয়ে মানুষ ভোট দিতে পারেবন। দেশের একজন নাগরিকের সমস্ত কাজে ব্যবহৃত হবে আধার কার্ড।  

    সাধারণ মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে করিয়ে আধার কার্ড করানো হল। নেওয়া হল প্রত্যেকটি মানুষের চোখের মণি এবং আঙুলের ছাপ। মানে? চোখের মণি এবং আঙুলের ছাপ হল একজন মানুষের আইডেন্টিটি। বলা হল সমস্ত কিছুর সঙ্গে আধার সংযোগ করতে হবে। মানুষ তাও করলেন।

    তাহলে আজ, নাগরিকত্বের প্রশ্নে, ভোট দানের প্রশ্নে কেন সেই কার্ড মানা হবে না? ধ্যাষ্টামো হচ্ছে? দেশটা কি মগের মুলুক হয়ে গেল নাকি?

    নাকি দেশের কিছু মানসিকভাবে ধ্বজভঙ্গ মানুষ ঐ আধিপত্যবাদী সাম্প্রদায়িক দুর্নীতির চূড়ামণি কেন্ত্রীয় সরকারে আসীন ঐ রাজনৈতিক দলের সমস্ত রকম অন্যায় অবিচারকে সীলমোহর দিতে চান?      

    কথায় কথায় হিন্দু খতরে মে হ্যাঁয়! দেশের সেইসব মানুষ যারা ঐ আধিপত্যবাদী সাম্প্রদায়িক দুর্নীতির চূড়ামণি কেন্ত্রীয় সরকারে আসীন ঐ রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়েছিলেন তারা দেখুন যে এখনও পাকিস্তানের সঙ্গে কারা কারা ব্যবসা করছে? কারা কারা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করছেন? আর আপনাদের কথায় কথায় হিন্দু খতরে মে হ্যাঁয়! বলে বলে নাচাচ্ছেন।

    পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা চলছে দুবাইয়ের মাধ্যমে। এখান থেকে মাল প্রথমে যাচ্ছে সেখানে, তারপর সেখান থেকে পাকিস্তান। কী কী যাচ্ছে সেখানে? চিনি, ফার্মাসিউটিক্যালস, অটো পার্টস, অর্গানিক কেমিক্যালস, তুলো, টেক্সটাইল এবং পোশাক আশাক।

    আর বাংলাদেশে?
     
    আদানি পাওয়ার, মেরিকো, ইমামি, ডাবর, এশিয়ান পেইন্টস, পিডিলাইট, গোদ্রেজ, ব্রিটানিয়া, সান ফার্মা এড়া ব্যবসা চালাচ্ছে। সেখানে ৩টি ইকোনোমিক জোন তৈরি করাই হয়েছে যাতে ভারতীয়রা সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। মীরসারাই, ভেড়ামারা আর মংলা।

    ব্যবসা হওয়া ভালো। কিন্তু যারা ব্যবসা করছেন তাঁদেরকে বলুন যে বাংলাদেশে যে হিন্দুদের ওপর অকথ্য অত্যাচার হচ্ছে সেটা ইমিডিয়েট থামাতে। যদি সত্যি হিন্দু প্রেমী হন, যদি সত্যি বাঙালি প্রেমী হন, তাহলে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে বলুন। বাংলাদেশে মৌলবাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে বলুন।
     
    যান, গিয়ে তাঁদেরকে প্রশ্ন করুন যে ব্যাঙ্কে বহু অনাদায়ী ঋণ মুছে ফেলা হচ্ছে কেন? কাদের নির্দেশে এইসব হচ্ছে? কারা সুবিধা পাচ্ছেন? কিছু ব্যাঙ্ক কর্তা, শিল্পপতি এবং আরও কাউকে আড়াল করা হচ্ছে কি? ব্যাঙ্কের সম্পদ, দেশের সম্পদ লুট করা কিন্তু আর্থিক অপরাধ।

    যান, যে ঐ আধিপত্যবাদী সাম্প্রদায়িক দুর্নীতির চূড়ামণি কেন্ত্রীয় সরকারে আসীন ঐ রাজনৈতিক দলকে প্রশ্ন করুন।

    যান গিয়ে প্রশ্ন করুন যে বৈধ নাগরিক পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও কেন শুধুমাত্র বাংলা বলবার জন্য কিছু মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করা হচ্ছে? দেশটা কি ছোটলোকদের হাতে চলে গেল নাকি? দেশটা কি ছোটলোকদের হাতে তুলে দিলেন? নিজেকে প্রশ্ন করুন।

    সমস্যা যদি কিছু থাকে, তবে সেটা বন্ধুত্বপূর্ণভাবে, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে স্বস্নেহে আলোচনার মাধ্যমে মেটানো যায়। দেশে আইন আছে; আদালত আছে আর সবার ওপরে আছেন মানুষ।
     
    এছাড়াও যে যে জায়গায় বাংলার শ্রমিক ভাইদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে সেখানকার বড়লোক বাঙালি, হোয়াইট কলার বাঙালিরাও তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠুন।

    “রাজছত্র ভেঙে পড়ে, রণডঙ্কা শব্দ নাহি তোলে,
    জয়স্তম্ভ মূঢ়সম অর্থ তার ভোলে,
    রক্তমাখা অস্ত্র হাতে যত রক্ত-আঁখি
    শিশুপাঠ্য কাহিনীতে থাকে মুখ ঢাকি।
    ওরা কাজ করে
    দেশে দেশান্তরে,
    অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গের সমুদ্র নদীর ঘাটে ঘাটে,
    পাঞ্জাবে বোম্বাই-গুজরাটে।
    গুরুগুরু গর্জন গুন্‌গুন্‌ স্বর
    দিনরাত্রে গাঁথা পড়ি দিনযাত্রা করিছে মুখর।
    দুঃখ সুখ দিবস রজনী
    মন্দ্রিত করিয়া তোলে জীবনের মহামন্ত্রধ্বনি
    শত শত সাম্রাজ্যের ভগ্নশেষ- ‘পরে
    ওরা কাজ করে”।

     
    ঐ আধিপত্যবাদী সাম্প্রদায়িক দুর্নীতির চূড়ামণি কেন্ত্রীয় সরকারে আসীন ঐ রাজনৈতিক দলের বাঙালিদের বলছি, আপনারা নিশ্চয়ই মহাভারত পড়েছেন। কর্ণের কথা পড়েছেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কী হয়েছিল? কর্ণ পান্ডব হয়েও, নিজে একজন পান্ডব জেনেও, যোগ দিয়েছিলেন কৌরবদের দিকে। আর আসল যুদ্ধের দিন তার সমস্ত অর্জিত শস্ত্রবিদ্যা তিনি ভুলে গেছিলেন; তার রথের চাকা মাটিতে গেঁথে গেছিল।

    ঐ আধিপত্যবাদী সাম্প্রদায়িক দুর্নীতির চূড়ামণি কেন্ত্রীয় সরকারে আসীন ঐ রাজনৈতিক দলের বাঙালিদের বলছি, আপনারা সভ্য ভব্য শিক্ষিত হতে পারেন।

    কিন্তু বাঙালি বিদ্বেষের, দেশের ভিতরে বাঙালিদের কোণঠাসা করা, বাঙালি শ্রমিক ভাইদের ওপর অত্যাচার – ইত্যাদির বিরুদ্ধে বাকি বাঙালিরা যে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ লড়ছেন, সেখানে আপনাদের ঐ সভ্যতা, ভব্যতার এবং শিক্ষাদীক্ষা কোনও কাজেই আসবে না। আপনাদের ঐ সভ্যতা, ভব্যতার এবং শিক্ষাদীক্ষার রথের চাকা অলরেডি মাটিতে আটকে গেছে; যাচ্ছে। এরপর একদিন বাঙালি আপনাদের বিশ্বাসঘাতক বলবে।  

    যান, যদি ক্ষমতা থাকে বাংলাদেশের ঐ মৌলবাদী দলের হাত থেকে বাংলাদেশেকে মুক্ত করে দেখান।
     
    যান, পৃথিবীর অর্থনীতির মানচিত্রে ভারতবর্ষকে প্রথম পাঁচে এনে দেখান। এমন উন্নয়ন করুন যাতে দেশের মানুষ আর ইওরোপ, অ্যামেরিকা যেতে না চায়; বরঞ্চ সেইখানকার মানুষজন যেন শিক্ষিত হতে, তাদের চিকিৎসা করাতে, তাদের দেশ চালানোর স্বচ্ছতার পাঠ নিতে, বাসযোগ্য পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে, সবার জন্য কর্ম সংস্থানের জন্য ভারতের নাম নেয়; ভারতে আসে।

    অন্য সব দেশের নাগরিকরা যেন নিজেদের মধ্যে বলাবলি করেন, বলেন যেন ভারতকে দেখে শিখতে।

    আগে সেই জায়গা অর্জন করে দেখান।       

    আর গতকাল (২৮/০৭/২০২৫) মাননীয় সুপ্রীম কোর্ট রায় দিয়েছেন যে গোটা SIR প্রক্রিয়া খারিজ করার ক্ষমতা আদালতে থাকছে (আ বা প)। মাননীয় আদালত জানিয়েছেন যে কমিশনের উচিৎ ছিল ভোটার এবং আধার কার্ডকে মান্যতা দিয়ে বিশেষ পরিমার্জনের তালিকা বানানো।

    এর আগে বাজপেয়ীজীর সরকারও আমরা দেখেছি। উনি ছিলেন একজন শিক্ষিত, কবি মানুষ। কই সেই সময় তো ভোটের বিষয় নিয়ে এইরকম হুলুস্থুলু ব্যাপার স্যাপার দেখিনি।

    যদিও ১৯৯৮-২০০৪ অন্য যা যা হয়েছিল সেসব নিয়েও যথেষ্ট তর্কের অবকাশ রয়েছে।

    এরপর যদি আবার কেউ ১০ বছর পরে (২০৩৫) এসে বলেন যে না ২০২৫ সালের সেই সব ডকুমেন্টস আর চলবে না। কী চলবে? এক বিশেষ আধিপত্যবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের সিম্বলের ছাপ শরীরের কোথাও আছে নাকি দেখাতে হবে আর সেটা থাকলে তবেই তিনি দেশের নাগরিক হবেন, ভোট দিতে পারবেন, মেনে নেবেন?

    বা কেউ যদি এসে বলে যে আরও নিবিড় পরিমার্জনার জন্য ডি এন এ স্যাম্পল করা হোক, তখন তাহলে একমাত্র ভারতের মাননীয় আদিবাসীরা ছাড়া আরও কেউ কি দেশের নাগরিক বলে গণ্য হবেন?
    না।   

    অথচ সেই মাননীয় আদিবাসীদের সঙ্গেও আপনারা কি ন্যায় বিচার করছেন? যারা হিউম্যান রাইটস নিয়ে লড়ছেন তাদের সঙ্গেও আপনারা কি ন্যায় বিচার করছেন?  

    তাই বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দুটি লাইন ধার করে লিখতে হচ্ছে –

    মানুষ যখনই চায় বস্ত্র ও খাদ্য
    সীমান্তে বেজে ওঠে যুদ্ধের বাদ্য।
    আর যখনই চায় হক, নিরাপত্তা
    অনুপ্রবেশ ঢোকে স্যাট খেয়ে গোত্তা
    আর এসব চেঁচায় যারা গদ্যে ও পদ্যে
    আসলেতে আছে ভূত তাদেরই তো মধ্যে
    ঝেঁটিয়ে বিদেয় করো সেইসব ভূতকে
    সাম্প্রদায়িক যত পুঙ্গির পুতকে
    তবেই হবে এ দেশ শান্ত ও শিষ্ট
    সবার মধ্যে হবে অনন্য; বিশিষ্ট।

    আমরা আপনাদের স্বচ্ছ অভিযান দেখেছি। দেখেছি তার বিজ্ঞাপণে গান্ধীজীর চশমার যেদিকে ‘স্বচ্ছ’ কথাটা লেখা আছে, সেদিকে ‘ভারত’ নেই।

    তাই তথাকথিত বাঙালি হিন্দুবীরদের অনুরোধ করছি, আপনারা সঠিক অর্থে বাঙালি বীর হোন। দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস পাঠ করুন। আধিপত্যবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের সঙ্গ ত্যাগ করুন।

    নয়তো বাঙালি একদিন বলবে যে আপনারা হলেন সেই বাঙালির পরবর্তী প্রজন্ম যারা একদিন সূর্য সেনকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন; যারা প্রফুল্ল চাকিকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। আপনারা হলেন নরেন গোঁসাইয়ের বংশধর। কারণ স্বাধীনতা আন্দোলনকে যারা একদিন সাবোতাজ করছিল, আপনারা তাদের হাত ধরেছেন।

    আর গাইবে –
    “মার ঝাড়ু মার ঝাড়ু মেরে ঝেঁটিয়ে বিদেয় কর
    যত আছে নোংরা সবই খ্যাংড়া মেরে ঘর থেকে দূর কর।
    ঘরের ফিরিয়ে দে না হাল। 
    না না না না মর্জিনা। তার চেয়ে তুই বল
    কী?
    ছিঃ ছিঃ এত্তা জঞ্জাল
    ছিঃ ছিঃ এত্তা জঞ্জাল
    আহ! মার ঝাড়ু মার ঝাড়ু মেরে ঝেঁটিয়ে বিদেয় কর”।

    ফিরে আসুন। আপনাদের চৈতন্য হোক। সমস্ত রকমের ধর্মভিত্তিক ও সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল ছেড়ে নিজেরা বাংলা গড়ার কাজে হাত লাগান।  
         
     
     
         
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৯ জুলাই ২০২৫ | ৫২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন