সালামদা, আপনাকে সালাম।
আজকেই নিউ ইয়র্ক ফিরে যাচ্ছি। আজকেই এই সংবাদটা পেলাম। আমাদের বহুকালের দাদা ও বন্ধু ব্রুকলিনের সালাম সারওয়ার চলে গেলেন। বৌদিকে ও তাঁদের তিন ছেলেমেয়েকে সমবেদনা জানাই।
সালামদা চলে গেলেন তাঁর প্রিয় ভাইয়ের কাছে, যে ভাইটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হারিয়ে গিয়েছিলো। যার ছবি তাঁর ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউয়ের দোতলার অফিসের দেওয়ালে চিরকাল টাঙানো থাকতো। আর টাঙানো থাকতো ঢাকার এক কৃষ্ণচূড়ায় ঢাকা ঝিলের ছবি। আর থাকতো বাংলাদেশের এক মানচিত্র।
সালামদাকে নিয়ে অনেক কিছু লেখার ইচ্ছে আছে। আজ আর মাত্র কয়েক ঘন্টা ভারতে। তাই খুব সংক্ষেপে লিখছি। এই মানুষটি ছিলেন বলতে গেলে আমাদের নিউ ইয়র্ক জীবনের প্রথম থেকে মেন্টর ও অভিভাবক। আমাদের বাড়ি কেনা হয়েছিল তাঁর সাহায্যে। আমার প্রথম বাংলাদেশ ভ্রমণ হয়েছিল তাঁর সাহায্যে। ব্রুকলিনের বাঙালি কমিউনিটির সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়েছিল তাঁর সাহায্যে।
হ্যাঁ, বাংলাদেশী কমিউনিটি নয় শুধু, বাঙালি কমিউনিটি। ব্রুকলিনের পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালিদের সংগঠন প্রবাসীর দুর্গাপুজোতে দীর্ঘকালের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সালামদা। ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন পঁচিশ বছর। তারপর এলো দিন বদলের পালা। নতুন যুগের নতুন প্রবাসী বাঙালিরা তাঁকে "মুসলমান" হওয়ার কারণে অসম্মানিত করলো। তিনি সরে গেলেন।
আমরা সরে যাইনি। প্রতি সপ্তাহেই দেখা হয়েছে এতগুলো বছর ধরে, তাঁর অসুস্থতার আগে পর্যন্ত। তিনিও আমাদের বাড়ি অনেকবার এসেছেন। আমার বাবার নিউ ইয়র্ক সফরের সময়ে তাঁদের মধ্যে একটা আলগা সখ্য গড়ে উঠেছিল। সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ, আপাদমস্তক বাঙালি সালাম সারওয়ারের সান্নিধ্যে এসে আপাদমস্তক আরএসএস জিতেন্দ্রনাথের মনেও হয়তো একটু পরিবর্তন এসে থাকবে।
তিনি কবিতা ভালোবাসতেন। লিখতেনও। আমরা কবিতা, সাহিত্য, সমাজ, সংস্কৃতি ও বাঙালিত্ব নিয়ে অনেক গল্প করেছি তাঁর ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউর সিপিএ অফিসে বসে। তিনি তাঁর কবিতা আমাকে শুনিয়েছেন। আবার আমার লেখা কবিতা আবৃত্তি করেও শুনিয়েছেন।
বিজয়া দশমীর পরে প্রতি বছর আমি তাঁকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে এসেছি। তিনিও আশীর্বাদ করেছেন।
আজ শেষ প্রণাম করে নিলাম আর একবার।
কোনো কোনো মানুষকে কখনো ভোলা যায়না। তা তিনি যেখানেই থাকুন না কেন।
সালামদা, আপনাকেও কখনো ভুলবো না।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।