এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অভয়া কান্ড ও বর্তমান বাঙালি মেয়েদের আর্থ সামাজিক অবস্থা 

    Koushik Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৮ আগস্ট ২০২৫ | ১১ বার পঠিত
  • | | | | | পর্ব ৬ | পর্ব ৭ | পর্ব ৮
    “অভয়া” কান্ডের এক বছর হয়ে গেল। বিচার ব্যবস্থা জনপ্রিয় হিন্দি ছবির সংলাপের “তারিখ পে তারিখ” ই হয়ে যাচ্ছে। অভয়া তাঁর কর্মস্থলে নির্যাতিতা ও খুন হয়ে ছিলেন। অত্যন্ত জঘন্য ও ঘৃণ্য ব্যাপার। যদিও বর্তমানের বাঙালি মেয়েদের অবস্থা এর থেকে কি খুব আলাদা কিছু? আমি মূলত: শহুরে মধ্যবিত্ত শিক্ষিতা চাকরি – বাকরি করা মেয়েদের নিয়েই আলোচনা করব। “বিন্দু তে সিন্ধু দর্শন” বলে একটি বাংলা প্রবাদ আছে, সেই জন্য কোনও একজনের জীবন উন্মোচিত করলে সব মেয়েদেরই প্রকৃত আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির আভাস পাওয়া যাবে। অনিচ্ছাকৃত মিলের জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন। বেশ কয়েকটি পর্ব লাগবে।
     
     সকালে শুধু চা খেয়েই সে রওনা হয়ে গেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। মনটা ভারী হয়ে আছে কিছুই ভালো লাগছিলো না। শরীরও খুব খারাপ, কোন রকমে শরীর কে ঠেলে ওয়ার্ড অবধি নিয়ে গেল। এবার কেমো চালু করতেই তাঁর সর্বাঙ্গ জ্বলতে লাগলো। রাতে ডাক্তারবাবু আসলে তাকে সে সব বলল। সব শুনে ডাক্তারবাবু বললেন” আপনার সঙ্গে কেউ আসেনি?” কি আর বলবে সে। ডাক্তারবাবু বললেন “ আর তো মাত্র দুটো কেমো, দেখবেন তারপর অনেক ভালো লাগবে। আসলে আপনার বিশ্রাম দরকার , রোজ অফিস করলে কি করে হবে?” সে মনে মনে ভাবলো ওটাই তো আমার একমাত্র শান্তির জায়গা। পরদিন বিকেলে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে বাড়ি ফিরে শোনে বাবার কাজের সব আয়োজন হয়ে গেছে। ভাই এসে তাঁকে বলল “ দিদি মোট প্রায় ১,০০,০০০/ টাকার মতো খরচ, মায়ের কাছে হাজার ১০,০০০/ টাকা আছে তুই কত দিতে পারবি?” অবাক কান্ড আমার ক্ষমতা না জেনেই প্ল্যান করে বসে আছে। প্রচণ্ড শরীর খারাপের মধ্যেও মাথা যেন আগুন ধরে গেল !! এরই মধ্যে ঘরে ঢুকলো সুভাষ, বানী দিল “যত টাকাই লাগুক তুমি যা ঠিক করেছ তার থেকে পিছ পা হবে না ভাই, কেউ কিছু না করুক মনে রাখবে আমি আছি “। এত রাগের মধ্যেও হাসি পেল ফুলকির। সে বলল আমি ২০,০০০/ টাকার বেশি দিতে পারব না!! ওর এই দৃঢ় অবস্থান দেখে ওরা বেশ অবাকই হলো। রাতে সে আবার ফোন করলো বড় ননদকে”দিদি সবই তো জানো বাবার কাজ আমার কেমো ও ওষুধের খরচ আমি তো আর সুদ চাইছি না! পারলে পুরো টাকাটাই একবারে দিয়ে দিও।“ দেখি বলে ফোন রেখে দিল বড় ননদ। বাহ সে তো বেশ গুছিয়ে বলতে পারলো!! জীবনই তাঁকে শিখিয়ে নিয়েছে। কাজ হলো। বাবার শ্রাদ্ধের আগের দিন সন্ধ্যায় সে বাকি পুরো টাকাটাই দিয়ে গেল।
     শ্রাদ্ধের দিন সে দেখলো বিশাল আয়োজন ভাইয়ের বন্ধুরা সুভাষের বন্ধুরা তাঁদের আত্নীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী কেউই বাদ নেই!! তাঁর অফিসের কেউ কেউ এসেছিলেন, সে ই সিনিয়র দাদা এসেছিলেন। তিনি যাওয়ার সময় বললেন “ আপনি পদে আমার থেকে উঁচু কিন্তু অভিজ্ঞতায় আমি আপনার থেকে বড়। নিজের খেয়াল নিজেই রাখবেন, কোনও প্রয়োজন হলে অব্যশই যোগাযোগ করবেন।“ ফুলকির খুব ভালো লাগলো কথা গুলো সে তাকে অনেক ধন্যবাদ দিল। সব মিটে যাবার পর সে ঠিক করলো সুভাষদের বাড়ি চলে যাবে। তাঁর এখনও বাবার কথাগুলো কানে বাজছে। শ্বশুরবাড়িই বিয়ের পর মেয়েদের আসল বাড়ি।
     এবাড়িতে এসে সে একটা AC কিনলো। সুভাষের স্পষ্ট কথা এবার থেকে ইলেকট্রিকের বিল তোমাকেই দিতে হবে। তা দেবে, তবে সেও বড় ননদ কে বলল” বড় দি ভাবছি বাবার দেওয়া খাট টা তো ব্যবহার করতে পারলাম না! বিক্রি করে যদি কিছু টাকা পাওয়া যায়!!” বেশ কাজ হলো পরদিন অফিস থেকে ফিরে দেখে সেই খাট খুলে দেওয়ালের পাশে হেলান দিয়ে রাখা, আর পুরানো তক্তপোষ টি পাতা। রাতে সুভাষের যাচ্ছেতাই অপমানজনক কথা শুনতে হলো “ একটা বাচ্চা দেয়ায় ক্ষমতা নেই তার আবার খাটের ঘটা, দিন দিন ঘাটের মরার মতো দেখতে হচ্ছে, আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল, সারাদিন এদের জন্য করে চলেছি নিজের ব্যবসা দেখার সময় পাই না “ আরও কত কি !!!! ফুলকি নতুন ঘুমের ওষুধটা মুখে পুরে শুয়ে পড়লো। সকালে উঠে দেখে সুভাষ উঠে গেছে তৈরি হচ্ছে কোথাও বের হবে হয়ত। সে নিচে বাথরুমে গেল তখনও নতুন ঘুমের ওষুধের ঘোর টা কাটেনি, বাথরুমে ঢুকেই মুখ থুবড়ে পড়তে গিয়েও কোনও রকমে সামলে নিলো, দেখে ঠিক ঢোকার মুখেই অনেকটা Handwash পরে !! বাইরে এসে সে শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞাসা করল আমার আগে কে গেছিলো বাথরুমে? শ্বাশুড়ি বলল কেন সুভাষ । থ হয়ে গেল ফুলকি!!! উপরে এসে দেখলো সে বেড়িয়ে গেছে। আর কত কিছু তাঁকে সহ্য করতে হবে কে জানে। কি পাঠক পাঠিকারা যদি মুখ থুবড়ে বাথরুমে পরে ফুলকির মৃত্যু হতো, তাহলে কি তা “অভয়া” র থেকে আলাদা কিছু হতো ? আপনাদের মন্তব্যর আশায় থাকলাম।
    ক্রমশঃ
     
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | পর্ব ৬ | পর্ব ৭ | পর্ব ৮
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন