শ্রুতি নাটক ; যা আমাকে তথাকথিত নাটকের পাশাপাশি ভীষণ ভাবে আবেদন করে ।......শিল্পীর গলায় যখন অভিনয় ।.....শুধুমাত্র কণ্ঠস্বর কে হাতিয়ার করে নাটকের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা ...... নাটকের ব্যক্তিত্ব গুলি কে জীবন্ত করে তোলা ।...এসব কিছুই আমাকে মুগ্ধ করে .....
মন্তব্যে আমাকে শ্রদ্ধেয় স্যার - ম্যাডামেরা অনেক অনেক শ্রুতি নাটক পাঠিয়েছেন ।।.তাঁদের প্রতি আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ ।....খুব ভালো লেগেছে এঁরা প্রত্যেকেই শ্রুতি নাটক শোনেন ভালোবেসে .....
শ্রুতি নাটকের বিভাগ গুলির মধ্যে যা আমার বেশ দুরূহ বলে মনে হয় , তা হলো এককভাবে পরিবেশিত শ্রুতি নাটক ।। একজন মাত্র শিল্পীর কণ্ঠস্বরই রাজত্ব করবে এক্ষেত্রে ।....একটি পূর্ণাঙ্গ নাটকের পরিবেশনা , নাট্যশৈলী সবই তাঁর কণ্ঠস্বরের দক্ষতায় দর্শকের মনে পৌঁছবে ।....যদি পারতুম অনেকানেক এরমই একক শ্রুতি নাটকের প্রতি ভালোলাগা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ।....বড়ো ভালো হতো .....
কিন্তু অপারক আমি এই স্বল্প পরিসরে খুব সামান্য কিছু ভালোলাগার উদাহরণ নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসলাম ......
প্রথমেই আসা যাক রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের লেখা " দুখে কেওড়া " ।....দেবশঙ্কর হালদার পাঠ করেছেন ।....ওনার মতে সব লেখাতেই নাটক থাকে কিন্তু এই লেখায় নাটক করা আছে তাই পাঠ করতে বেশ ভালো লাগে ।....নাটক টি তে একজন মানুষেরই সংলাপ রয়েছে ।...সেই বলে চলবে ।....তাঁর কথাই পাঠ করে চলবেন দেবশঙ্কর .. মানুষ টি হলেন দুখে কেওড়া ।.ইনি গাঁয়ের এক প্রান্তবাসী মানুষ ।...মা তাঁর নাম রেখেছিলেন দুঃখহরণ ।.যা অচিরেই দুখে হয়ে যায় ।...এক সময়ের কৃষি মজুর দুখে এখন বছর আশির বৃদ্ধ ।.কাজ বলতে কাঁচির ব্যবসা ( দিশি মদ ) ।...বউ বানায় ।..আর সে বেচে ।...এই দুখে কেওড়া ঘর সংসারের পাশাপাশি রাষ্ট্র , সমাজ , সংস্কৃতি নানা বিষয় নিয়ে তাঁর মতামত জানায় ।....তাঁর কাঁচির ঠেকে নানাবিধ মানুষের সমাগম হয় ।।....এইটিই উপজীব্য বিষয় ।...বোঝাই যায় এই লেখায় comedy , satire , parody , সব এলিমেন্টসই রয়েছে বছর আশির এক বৃদ্ধের সংলাপের মাধ্যমেই যা ফুটে উঠবে ।....যে গ্রামের dialect এ দুখে কথা বলে সেই dialect এ এক বৃদ্ধের কণ্ঠস্বরে তাঁর মনস্তত্ব এবং প্রতিটি ইমোশন ; দুঃখ , হতাশা , পরিতৃপ্তি , পরিহাস কে ফুটিয়ে তুলে যেতে হবে অবিরত যাতে সর্বোপরি সমাজ এবং রাষ্ট্রের যে ছবি লেখক এঁকেছেন সেই ছবিটিই যেন দর্শকের মনে ফুটে ওঠে ..
বলাই বাহুল্য ,,,, দেবশঙ্কর হালদার এই গুরুদায়িত্ব সুনিপুণ দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন .
আসা যাক প্রবাদ প্রতিম নাট্য ব্যক্তিত্ব শাঁওলী মিত্র পরিবেশিত " নাথবতী অনাথবৎ " নাটকটিতে ।.যেখানে নাটক , পরিচালনা ও কথকের ভূমিকায় শাঁওলী মিত্র ।....প্রযোজনায় শম্ভু মিত্র ।...১৯৮৩ সালে পঞ্চম বৈদিক নাট্যদল এটি মঞ্চস্থ করে ।...এক কথক ঠাকুরণের ভূমিকায় মহাভারতের দ্রৌপদীর বেদনার কাহিনী শোনান নাট্যকার ।....বিভিন্ন চরিত্র কে অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে থাকেন তাঁদের জন্যে নির্বাচিত সংলাপ গুলির মধ্যে দিয়ে ।....দুর্যোধন , শকুনি , যুধিষ্ঠির , বিদুর ইত্যাদি ।....আবহ সঙ্গীত এ শুধু অট্টহাস্য ।....বাকি টা কণ্ঠস্বরের ম্যাজিক !!
আর না উল্লেখ করলেই নয় মা তৃপ্তি মিত্রের " অপরাজিতা " ।...নাটক শুরু হলো ।.....ল্যান্ড ফোনের ক্রিং ক্রিং আওয়াজে ( আবহে ) ।...চতুর্থ বারের ক্রিং ক্রিং আওয়াজের ক্লু নিয়ে শুরু করে দিলেন পাঠ ।....তারপর রেলগাড়ি ছোটালেন ।...এতো দ্রুত ভাষ্যপাঠ আমি কোথাও শুনিনি ।...প্রথম চার মিনিটে তিনটি চরিত্র করলেন ! আবার ধারাভাষ্যে ফিরলেন আবার চরিত্রে চলে গেলেন ! কি দ্রুত শিফটিং ! যেন কণ্ঠস্বরের রোলার কোস্টার !! একেবারে নির্ভুল উচ্চারণে ।....গলার মডুলেশন এ ।....সব মিলিয়ে অসাধারণ অভিজ্ঞতা !
শ্রুতি নাটক মঞ্চস্থ হতে আলোর ব্যবহার নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে রইলো ...........
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।