যে কলকাতাকে ভালোবেসেছি।
আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো।
_________________
নাঃ, এক্ষুণি চলে যাচ্ছিনা। "যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো? তোমাদেরও সাথে নিয়ে যাবো, একাকী যাবো না অসময়ে।"
এই কলকাতা শহরটাকে বড্ড ভালোবাসি। তাই যে বইটা কেউ কিনলো না, পড়লো না, যে বইটার কোনো গতি প্রকাশক করবার প্রয়োজন মনে করলেন না, সে বইটার নাম দিয়েছিলাম এ ভাবেই। কারণ, ওই যে বললাম, মনের কথা।
ওঃ, বলিনি বুঝি? ওই একটা মুশকিল আমার। ভাবি বলে ফেলেছি। কিন্তু বলা হয়না। একজন আমার কথা অনেক আগেই বলে গেছেন -- "আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল, শুধাইল না কেহ।"
সকালবেলায় মনের সুখে বাজার করি রোজ ঘুরে ঘুরে। আর মনের সুখে ওই মানুষগুলোর সঙ্গে গল্প জমাই। ওই যে মানুষগুলো -- দিদিগুলো, ভাইগুলো, হাফ বয়সের ছেলেগুলো একেবারে রাস্তার ধুলোয় বসে থাকে রোজ। আর আমাদের মতো সুখী ভদ্রলোকদের সেবা করে যায়।
বললাম, "ভূমির গান শুনছো?" মুরগির পালক ছাড়াতে ছাড়াতে চোখ তুলে হাসলো একটু। মনসংযোগ না করলে আঙুল কেটে যাবে ধারালো বঁটিতে। মুরগির রক্তের রং মানুষের রক্তের মতোই লাল। বোঝা যায়না কোনটা কার রক্ত।
জ্ঞান দিলাম সেই সুযোগে, "সব সময়ে বাংলা গান শুনবে। আমাদের কত রকমের গান! বাউল কীর্তন ভাটিয়ালি!"
পাশেই যে ছেলেটা মাছ বিক্রী করে, এবারে তার উত্তর। "কাকু, আমি তো শুধু বাংলা শুনি। লোকগীতি, তারপর আপনার রবীন্দ্রসঙ্গীত।" শেষের কথাটা ভদ্রলোক ক্রেতাদের উদ্দেশে, বলাই বাহুল্য।
ওদিকে এক দিদি তার প্রতি তিন মিনিট অন্তর "দাদা আসুন, ভালো টমেটো, পালং শাক, কপি, পটল নিয়ে যান" বলার ফাঁকে ফাঁকে বলে দিলো, "আমিও।" কিন্তু সে তখন হিন্দী ভক্তিমূলক গান শুনছে রেডিওতে।
বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে চুল কাটার দুই ভাই সুশীল আর বংশী। বংশী আমার বাবার চুল দাড়ি কেটে দিতো বাড়িতে এসে। সে অনেকদিনের কথা। এখন দোকানে আমার চুল কাটে।
সুশীলের দোকানে রেডিওতে বাজছে "শাদী হো জায়েগী, বাহোঁ মে খো নে দো"। সেই আশির দশকের "বাগু মে বাহার হে" আর "ঢপনিওয়ালে" ইমবেসাইল যুগের কিশোর কুমার আর ডি বর্মণ। যা বেশিক্ষণ শুনলে নির্ঘাত সারিডন।
বললাম, "এগুলো শোনো কেন?"
তা সুশীলের কথা ভাববার মতো। নির্মলা সীতারামন দিদি বাজেটে অ্যাপেন্ডিক্স যোগ করে দিতে পারেন। খাঁটি অর্থনীতির কথা।
সুশীল বললো, "স্যার, বাংলা গান শুনতে চাই। কিন্তু একটা বাংলা গান দেওয়ার পর পনেরো মিনিট শুধু বিজ্ঞাপন থাকে। ভালো লাগে বলুন?"
বললাম, "তা অবশ্য ঠিক।"
সুশীল বললো, "দোকানে যারা আসে, তারা গান না শুনতে পেলে আসবে না। এফ এম'এ হিন্দী গানে কোনো বিজ্ঞাপন থাকে না। নইলে আমি বাংলাই শুনতাম।"
রাস্তায় কান পাতলে আসল কথা শোনা যায়।
"আমি কান পেতে রই।"
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।