১৯৯৮ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে স্কুল সার্ভিস কমিশন গঠনের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ-এর মাধ্যমে রাজ্যের সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের কাজ শুরু হয়েছিল। তার আগে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে যে নিয়োগ হত তাতে একটা সময় পরে ব্যাপক স্বজন-পোষণের অভিযোগ উঠতে থাকে। কমিশন গঠন করে নিয়োগের পরেও যে একেবারে কোনও অভিযোগ ওঠেনি, কোনও স্বজন পোষণ হয়নি তা হলফ করে বলা যাবে না। কিন্তু ২০১১ এর পরিবর্তনের পর নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে ২০১২ সালের ২৯ জুলাই প্রথম এসএসসি্র পরীক্ষা হয়। সেই এসএসসি পরীক্ষার গায়ে এমন দাগ লাগল যে তা আর ওঠেনি। এত বিশৃঙ্খলা এত গোলমাল আগে কখনও দেখেনি রাজ্যের মানুষ। পরবর্তীতে ২০১৬ তে আবার একটি পরীক্ষা হয়। কিন্তু এই পরীক্ষায় যে জট পেকেছে তার থেকে মুক্ত হতে গেলে বিস্তর কাঠ খড় পুড়বে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোগ হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ।
এখন এই ২০১৬ এর SLST এর নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ ও শূন্যপদে কারচুপি, প্যানেলে গোলমাল, মেরিট লিস্টে সব তথ্য দেওয়া ও অন্যান্য বেশকিছু দাবিতে কলকাতার মেয়ো রোডে অনশনে বসেছেন চাকুরি প্রার্থীরা। তাদের অনেকগুলি দাবির মধ্যে মূল দাবি হল তাদের সবাইকে চাকরি দিতে হবে। যদিও তারা এমপ্যানেল্ড নন, ওয়েট লিস্টেড কিন্তু তাদের বক্তব্য এস এস সি শূন্যপদ চেপে দিয়েছে এবং ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতি হয়েছে কিনা বলতে পারব না। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ।কিন্তু শূন্যপদ কমে যাওয়া নিয়ে যে দাবিটা হচ্ছে তা আসলে কতখানি সঠিক তা দেখা যেতেই পারে। আসুন পুরো ব্যাপারটার ওপর আলো ফেলা যাক। বিষয়টি আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে খুব সরল। এত দিন এস এস সি হল না তাও সীট কেন ততখানি বাড়ল না। ভিতরে অনেক কথা আছে। এক এক করে আলোচনায় আসা যাক।
প্রথমেই দুটো কথা পরিষ্কার করে নিই।
১.অনশনরতদের দাবি মেনে কখনও সবাইকে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয় বা ওয়েট লিস্টেড মানেই চাকরি নিশ্চিত এমনটা নয়।
২. এস এস সি এত টালবাহানা না করে সম্পূর্ণ মেরিট লিস্ট প্রকাশ করুক যেখানে সব তথ্য থাকবে।
এরপরে যে কথাগুলো বলব তার আবার দুটো দিক আছে।বারবার অভিযোগ উঠছে এতবার কেন নিয়ম পাল্টাচ্ছে? এখানে যে দুটি প্রশ্ন উঠছে তা হল--
১. প্রশ্ন ::কেন এতবার নিয়োগের নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে?
উত্তর:: এখানে রাজ্য সরকারের কিছুই করার ছিল না। সবটাই NCTE এর রুল মেনে তিনটে ধাপে নিয়োগের রুল করতে হয়েছে। এবং এই কারণেই RLST এর বদলে SLST হয়েছে। আর একাদশ দ্বাদশ নবম দশম ও আপার এই তিনটে স্তরে পরীক্ষা হচ্ছে।
২. প্রশ্ন :: কোন পনেরো দিন আগের ভ্যাকান্সি নেওয়া হবে?
উত্তর:: গেজেট অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষার রেজাল্টের পনেরো দিন আগের। নিয়োগের পনেরো দিন আগের নয়।
এইবার আসি মূল তিনটি বিষয়ের কেন্দ্রে।
এই যে তুমুল বিক্ষোভ এই যে অনশন এই যে কেস পাল্টা কেস এর মূলে রয়েছে দুটি সমস্যা।
প্রথম সমস্যাটি হল এই সাতবছরে মাত্র দুটি SSC হওয়া।
যতই গেজেট ও রুল এর পরিবর্তন হোক না কেন পরীক্ষা যদি নির্দিষ্ট সময়ে হত তাহলে এত হতাশা জমত না। স্কুলগুলিতে তৈরি হওয়া ভ্যাকান্সি ফাইল আপডেট করে তা থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক পোস্টে পরীক্ষা হলে এবং বারবার পরীক্ষা দিতে পারলে আজকের মত এত ডেসপারেটলি কেউ অনশনে বসত না। সে জানত যাক এই এস এস সি হল না যখন আসছে বছর দেখা যাবে। কিন্তু ২০১২ এর পর ২০১৬। এখন ২০১৯ চলছে। অথচ গেজেট অনুযায়ী ২০১৭ এর শূন্যপদ পর্যন্ত কাউন্ট হবে। তারপরের ভ্যাকান্সি এই এস এস সির নয়।
এখানে অভিযোগ উঠেছে এই ২০১৭ পর্যন্ত শূন্যপদের সংখ্যায় নাকি পরিবর্তন হয়েছে।
দুর্নীতি কি এখানেই?
আপাত দৃষ্টিতে দুর্নীতি মনে হলেও বা সত্যিই যদি দুর্নীতি হয়েও থাকে তবুও একটি টেকনিক্যাল বিষয় আছে এর মধ্যে।
তা হল NCTE রুল বলছে একাদশ দ্বাদশে কেবলমাত্র পিজি পোস্ট থাকবে। নবম দশমে কোনও পিজি পোস্ট থাকবে না।
স্বাভাবিকভাবেই নবম দশমের পিজি পোস্টগুলি পাসে কনভার্ট হয়েছে এবং পিজি পোস্টের সংখ্যা কমছে।
দাড়িভিট ঘটনার আগেই এটা যারা এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল তারা জানতেন।
যারা গোঁয়ার্তুমি করে মানেননি তারাই এই জটিলতার মূল কারণ।
আবার নবম দশমে পিজি পোস্ট পাসে কনভার্ট হওয়ার জন্য পাসের শূন্যপদের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। কেন এত দীর্ঘ ওয়েটলিস্ট রাখা হল তারও এটা কারণ যে পরিবর্তিত পিজি পোস্টগুলি পাসে কনভার্ট হলে সংখ্যা বাড়বে। তবে এই সংখ্যাটা অসীম নয়। যতগুলো পিজি ছিল নবম দশমে ঠিক ততগুলি পাসে বাড়ছে।
আবার কোনও কোনও স্কুলে একাদশ-দ্বাদশের কিছু পোষ্টকে পাসে কনভার্ট করে নবম-দশমে দেখানো হয়েছিল। পরে সেগুলি আবার একাদশ-দ্বাদশে পিজিতে দেখানো হলে নবম-দশমে সীট কমে। এইভাবে বারবার সাফলিং -এর ফলে একটা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
দ্বিতীয় সমস্যাটা হল স্পেশাল গ্রাউন্ড জেনারেল ট্রান্সফার যার দ্বারা অনেক শূন্যপদ পূরণ হয়েছে এবং সেই তথ্য স্কুল থেকে ডি আই অফিসে জমা হলেও এস এস সি জানে না। ফলে এখন যে পোস্ট শূন্য দেখাচ্ছে সেখানে অলরেডি শিক্ষক এসে গেছেন। আর ভয়াবহ ব্যাপার হল কিছু পোস্ট ডি আই অফিসের দ্বারা প্রভাবশালী শিক্ষক যাঁর টাকা আছে তিনি স্পেশাল গ্রাউন্ড ট্রান্সফার নেবেন বলে আগে থেকেই টিকিট কনফার্ম করে রেখেছেন ও সেই শূন্যপদ এস এস সি পর্যন্ত যায়নি। এই রকমের পোস্ট আছে ২০১৬ এর এপ্রিল পর্যন্ত। অর্থাৎ এমন চেপে রাখা পোস্ট কতগুলি আছে আর কারা চেপে রেখেছে খুঁজে বের করা দরকার। স্পেশাল গ্রাউন্ড জেনারেল ট্রান্সফার নিয়ে একটি তদন্ত হওয়াও দরকার।এসএসসির শূন্যপদের এই গোলমালের একটি বড় কারণ এই স্পেশাল গ্রাউণ্ডের জন্য সীট চেপে রাখা।
তিন নং বিষয়ে আমি বহুবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছি যে সবই যখন NCTE রুল মেনে সরকার করতে বাধ্য হচ্ছেন তখন PTR রুল মেনে সারপ্লাস ভ্যাকান্সি অ্যাডজাস্টমেন্ট করতেই হবে।
আমাদের সমস্যা হল নতুন কিছুকে আমরা কোনও মতেই মেনে নিতে পারি না।
কিন্তু সরকারকে একদিন এটা করতেই হবে।
আমাদের স্কুলে তিনটে পোস্ট ফাঁকা । দুটো ২০১৬ এর ভ্যাকান্সি তে দেখানোর কথা থাকলেও একটা দেখিয়েছিল। কেন দেখিয়েছিল?
বাঁকুড়া ডি আই অফিস কি ভুল করে একটা পোস্ট চেপেছিল?
নাহ,
ওনারা PTR মেনে একটা পোস্ট দেন। এটাই NCTE NORMS ।
ছাত্র অনুযায়ী শিক্ষক থাকার কথা সব স্কুলে।
আবার মুশকিল হচ্ছে আপারে মোট পাঁচটি পোস্ট দিতেই হবে। না হলে বেসিক স্টাফ প্যাটার্ন ফলো করা যাবে না। মাধ্যমিক স্কুলে ১২ টি পোস্ট দিতেই হবে। তারপর PTR মানা উচিত।
সেই হিসেবে আমরা আরও তিনটে পদেই শিক্ষক পাব।
তাহলে সারপ্লাস কারা? এই PTR ও সারপ্লাসের মধ্যে একটি গোলমাল আছে বলেই এখনও এই বিষয়ে তেমন স্পষ্ট দিক নির্দেশ নেই।
আর এই নিয়ে সুস্পষ্ট রুল নেই বলেই একটি ভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
তবুও বাঁকুড়া ডি আই অফিস সূত্রে এই সারপ্লাস শিক্ষক কীভাবে বিচার হবে তার একটি চার্ট আছে। এই লেখার সঙ্গে যুক্ত করে দিচ্ছি।
গত ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্কুল শিক্ষা দপ্তর সারপ্লাস তথ্য জমা নেওয়ার উদ্যোগ নেন।সেই তথ্য জমাও হয়েছে। কীভাবে এই সারপ্লাস দেখা হয়েছে তার বাঁকুড়া মডেলটির উদাহরণ এখানে দিচ্ছি।
ধরুন কোনও জুনিয়র হাইস্কুলে 70 জন ছাত্রছাত্রী। চারজন শিক্ষক শিক্ষিকা আছেন। এই মডেলে 40:1 রেশিও ধরা হয়েছে যদিও তা 35:1 হওয়ার কথা। কিন্তু বাঁকুড়া ডি আই অফিস 40:1 ধরেই হিসাব করতে বলেছিল।
এখন 70/40= 1.75 অর্থাৎ দুজন শিক্ষক শিক্ষিকা লাগবে। এইবার চার্টের একদম প্রথম লিস্ট দেখুন।
দু জন লাগলে Language group ও সায়েন্স গ্রুপে একজন করে শিক্ষক শিক্ষিকা থাকবে। সুতরাং দুজন সারপ্লাস।
এবার ঐ চারজনের মধ্যে ধরুন Language group এ একজন, সায়েন্স গ্রুপে দু'জন এবং সোশ্যাল সায়েন্স গ্রুপে একজন করে আছেন। তাহলে সারপ্লাস শিক্ষক শিক্ষিকা হবেন সায়েন্স গ্রুপের একজন এবং সোশ্যাল সায়েন্স গ্রুপের একজন। এইবার সায়েন্স গ্রুপের দুজনের মধ্যে জয়েনিং এর দিক হিসাব করে যিনি জুনিয়র তাকে সারপ্লাস ধরা হবে। এখানে চাকরি তে প্রথম যেটা জয়েনিং ডেট সেটা ধরা হচ্ছে। মিউচুয়াল বা জেনারেল ট্রান্সফার নিয়ে এলে শেষ জয়েন হলেন এমন নয়।
আর সোশ্যাল সায়েন্স গ্রুপের একজন যিনি আছেন তিনি সারপ্লাস এই উদাহরণের সাপেক্ষে।
এইভাবে তিনজন শিক্ষক শিক্ষিকা লাগলে কিভাবে সাজানো হবে সেটা দেখুন।
কোনও স্কুলে 20 জন শিক্ষক শিক্ষিকা আছেন অথচ লাগবে পনেরো জন। তখন ঐ পনেরো জনের জন্য তালিকা দেখুন। বাকি পাঁচ জন সারপ্লাস কে গ্রুপ অনুযায়ী ও জয়েনিং ডেট অনুযায়ী জুনিয়র হলে সারপ্লাস ধরা হবে।
সারপ্লাস শিক্ষক শিক্ষিকার নাম লিখে সাইন করতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষক বা ইনচার্জকে। অর্থাৎ হেড স্যার এর জানা রইলো কে সারপ্লাস এবং দায়িত্বও রয়ে গেল অবশ্যই।
সারপ্লাস ট্রান্সফার হোক বা না হোক, সরকার এই তথ্য জমা নিয়েছে। পরে কি করবে তা সরকার জানে।
আগাম এই সারপ্লাসের খবর দিতে গিয়ে অনেক গালমন্দ শুনেছি। তখন কেউ কেউ ভবিষ্যৎ বক্তা বলেও গালাগালি দিয়েছিল। ব্যক্তিগত আক্রমণ ফোনে হুমকি সব হয়েছে। তখন বলেছিলাম শুধু অনার্স পিজিদের তুলবে। কিন্তু এখন যা দেখা যাচ্ছে তাতে পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র এই সারপ্লাস ইস্যুতে চর্চা চলছে। পাশ না অনার্স না পিজি কিছুই দেখছে না। তুলুক আর নাই তুলুক তথ্য যে নিচ্ছে এবং সারপ্লাস বিষয়টি যে আমার কষ্ট কল্পনা নয় তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। বিভিন্ন ডি আই অফিসে বিভিন্ন রকমের ফর্মাট। তবুও বাঁকুড়ার ফর্মাটটি আমার কিছুটা যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে।
আর অনার্স পিজি প্রসঙ্গে এক আধিকারিক এর বক্তব্য জুনিয়র হাইস্কুলে অনার্স পিজি পোষ্ট এ কর্মরত শিক্ষক শিক্ষিকা দের তুলে নেওয়া অবশ্যই উচিত। NCTE এর রুল অনুযায়ী পিজি পোষ্টের শিক্ষক শিক্ষিকা দের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলেই নিয়োগ করা যায়।
চার্ট অনুযায়ী দেখাচ্ছে জুনিয়র হাইস্কুলে চারজন শিক্ষক শিক্ষিকা ছাত্র ছাত্রী অনুযায়ী প্রয়োজন হলে 2+1+1 এবং যদি ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা বেশি হয় এবং পাঁচ জন শিক্ষক শিক্ষিকা লাগে তাহলে 2+2+1 আর যদি ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা কমে যায় এবং তিন জন শিক্ষক শিক্ষিকা লাগে তাহলে 1+1+1 এবং দুজন শিক্ষক শিক্ষিকা লাগলে 1+1 জন শিক্ষক শিক্ষিকা রাখা হবে। এই রুলের জটিলতার জায়গা হল ঐ বেসিক স্টাফ প্যাটার্নের রুল। PTR মেনে সারপ্লাস দেখালে বেসিক স্টাফ প্যাটার্ন ভেঙে যাবে। সরকার কীভাবে এই সমস্যা থেকে বের হবে তা সময়ই বলবে। তবে কেন্দ্রীয় রুল মেনে PTR অনু্যায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করলে স্টাফ প্যাটার্নের রুল চেঞ্জ করলেই কাজ হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে দুজন শিক্ষককেই স্কুল চালাতে হতে পারে যদি স্কুলে ছাত্র কমে যায়। তখন আর স্কুলে কয়টি ইউনিট তা আর দেখা হবে না।
আমি এমন স্কুলের কথা জানি যেখানে ৮০০ ছাত্রছাত্রী অথচ শিক্ষক শিক্ষিকা ছ'জন মাত্র। তাদের প্রাপ্য মাধ্যমিক স্কুল হিসেবে আরো ছটি। তাহলে ১২ জন শিক্ষক হলে স্টাফ প্যাটার্ন ঠিক হয়। কিন্তু তারপরও শিক্ষক লাগবে PTR মেনে।
আবার এমন স্কুলের কথা জানি যেখানে ৮০০ ছাত্রছাত্রী কিন্তু শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যা ৩০+
তাহলে কোথায় ঘাটতি আর কোথায় উদ্বৃত্ত বোঝা যাচ্ছে?
এইবার সরকার যদি আগে এই সারপ্লাস অ্যাডজাস্ট করে তাহলে চিত্রটা কেমন হত?
যে স্কুলে শিক্ষক বেশি সেখান থেকে তুলে যেখানে দরকার সেখানে দিলেই প্রাথমিক সমস্যা মিটে যাবে।
তাহলে শূন্যপদের কী হবে?
সারপ্লাস অ্যাডজাস্ট হলে এত শূন্যপদ হবেই না। বিশেষ করে জুনিয়ার হাইস্কুলের থেকে পিজি পোস্ট তুলে নিয়ে সেখানে আপারের নিয়ম মেনে টেট পাশ পাস-গ্রাজুয়েট প্রার্থীকে নিলে আর পিজি টিচারদের একাদশ দ্বাদশে দিলে সরকারের বেতন খাতে খরচ কমবে এবং একাদশ দ্বাদশের শূন্যপদও অনেক কমে যাবে। বেতন খাতে খরচ কমবে কারণ তখন আপারে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন পাস গ্রাজুয়েট স্কেল।
এখন সারপ্লাস ট্রান্সফার করলে শূন্যপদ ক্রমশ কমবে। কারণ সরকারি বিদ্যালয়ে আজ নয় কাল PTR মেনে নতুন শূন্যপদ তৈরি হবে। আর ছাত্র না থাকলে কার জন্য শিক্ষক দেবে।
সরকারি স্কুলে ছাত্র ক্রমশঃ কমছে ও সরকারি স্কুলের ভবিষ্যৎ যে ক্রমশঃ খারাপ হচ্ছে তা নিশ্চয়ই আর নতুন করে বলতে হবে না।সরকারি স্কুলে ছাত্র কমে যাওয়ার বিবিধ কারণ আছে। সরকারি পরিকাঠামোর পাশাপাশি আমাদের মানসিকতাও দায়ী।যারা সরকারি স্কুলে চাকরি করেন তারাই তো পরে বেসরকারি স্কুলে পাঠান তার সন্তানদের।
সরকারি স্কুলের নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে অনেকেরই দেখলাম স্পষ্ট ধারণা নেই।
সুতরাং শুধু অনশনরতদের পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন দিলেই তাদের চাকরি নিশ্চিত হবে না।
সরকারি চাকরির এই পরিসরটুকু বাঁচিয়ে রাখতে হলে সন্তানদের সরকারি স্কুলে পাঠাতে হবে।
কারণ আজ নয় কাল ছাত্র শিক্ষক মেনে নিয়োগের পূর্বে সারপ্লাস ভ্যাকান্সি অ্যাডজাস্ট হলে শূন্যপদের সংখ্যাটা কিন্তু এমনি এমনিই কমে যাবে।
এদিকটাও ভাববেন প্লিজ।
অনশনরতদের দেখে নিশ্চয়ই এটা বুঝেছেন চাকরির বাজারে কতখানি মন্দা। তার ওপর দুর্নীতি আছে। সরকারি উদাসীনতা আছে।
সব সরকারের উদ্দেশ্যই তো নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যয় ভার কমানো।যত কম নিয়োগ ততই কম খরচ।সুতরাং ভাবার সময় এসেছে যে সরকারি স্কুলে ছাত্র পাঠানো বন্ধ করে আমরাও সরকারকে সাহায্য করছি না তো?
অনশনরতদের পাশে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলিও ভাববেন।নিজের সন্তানকে কোন স্কুলে পাঠিয়েছেন তাও অনশন মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাববেন। আর নিজের সন্তানকে বেসরকারি স্কুলে পড়ে এসে সরকারি স্কুলে চাকরির আন্দোলন করতে হবে কিনা বা সরকার কেন স্কুল তুলে দিচ্ছে তার জন্যও আন্দোলন করার প্রয়োজন হতে পারে কিনা বা এত শূন্যপদ কেন কমে যাচ্ছে দিন দিন তা নিয়ে কেউ অনশন করবেন কিনা ভাববেন।
আমি সেই সব ছবি এখন থেকেই বেশ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।