বৈশ্বিক সাহিত্য প্রসঙ্গে গোয়েথে বলেছেন, সাহিত্য যখন ভাষা ও সংস্কৃতির বেড়া পেরিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন নতুন নতুন ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে একটু করে পরিবর্তিত হতে হতে সেটা এক নতুন সাংস্কৃতিক নিদর্শন হয়ে দাঁড়ায় – যা আর ঠিক সাহিত্যে সীমাবদ্ধ নয় – বরং নানা ভাষা, নানা সংস্কৃতি পরতে পরতে মিশে থাকা এক বৃহত্তর আখ্যানমালা। মার্কেজের নিঃসঙ্গতার একশ বছর পড়তে গিয়ে যেমন প্রতি নিবিষ্ট পাঠক খুঁজে নেন তাঁর নিজস্ব এক মাকোন্দো, বুয়েন্দিয়া পরিবারের সাত প্রজন্মের সুখ দুঃখ ভাঙাগড়ার সাথে মিশে যায় পাঠকের নিজস্ব ভুবন চিনুয়া আচেবের ‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’ কিংবা একা কুর্নিয়াওয়ানের ‘বিউটি ইজ আ উন্ড’ একইভাবে পাঠককে অভিভূত করে জড়িয়ে নেয় ঘটনাক্রম ও চরিত্রদের সাথে।
কুররাত উল আইন হায়দারের ‘ফায়ারফ্লাইজ ইন দ্য মিস্ট’ পড়তে গিয়ে উপরে বলা বৈশিষ্ট্যগুলো অনেকটাই দেখতে পাই। কাহিনীর শুরু হয় ১৯৩৯ সালে অবিভক্ত ভারতের ঢাকা শহরে। কাহিনী, ঢাকা-কলকাতা-শান্তিনিকেতন-সুন্দরবন-ঢাকা-লন্ডন-ত্রিনিদাদ হয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ঢাকা ঘুরে বোলপুর ছুঁয়ে কলকাতায় এসে শেষ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শুরু হলেও, ঘটনাক্রম অনায়াসে আগের শতাব্দীর ১৮৭০ থেকে ১৮৯০ ছুঁয়ে আসে, ১৮৯০ সালে হঠাৎ বড়লোক রমেশবাবু সরকারের বংশধর, আর্জুমন্দ মঞ্জিলের নবাব নুরুল জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবার, লিলি কটেজের রেভারেন্ড পল ম্যাথিউ ব্যানার্জি ও তাঁর পরিবার এবং চার্লস বার্লো – এঁদের নিয়ে ১৯৩৯-৪০ সালের ঢাকায় যে কাহিনী শুরু হয়, তার পাত্রপাত্রীদের নাম দেখে বোঝা যায় – এ এক অতি জটিল নকশার গালিচা বুননের শুরু।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর, দেশভাগ, স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধ পার করে পরিবারগুলি ছিন্নভিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে দেশে বিদেশে। কারুর নিজের দেশ এক লহমায় বিদেশ হয়ে যাওয়ায় বিদেশে গিয়ে তাকেই দেশ বলে মেনে ও মানিয়ে নিতে হয়। কেউ বা আবার নিজ-শহরে নিজ-বাড়িতে থেকেই পঁচিশ বছরের ব্যবধানে তিনটি আলাদা দেশের বাসিন্দা বলে পরিচিত হন। সেই যে ছোটবেলার ইতিহাস বইতে থাকত, ‘বাংলার আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা’ – সেই বাক্য আক্ষরিক অর্থেই দীপালী সরকার, জেহান আরা চৌধুরী, রোজি ব্যানার্জি, ইয়াসমিন মজিদ বেলমন্ট, উমা রায়দের জীবনে ফলে গেছে। উপমহাদেশের রক্ত-ভেজা, আগুনে-পোড়া সময় এদের তুলে ছুঁড়ে দিয়েছে সময়ের ঘূর্ণিপাকে। কেউ প্রায় অক্ষত বেরিয়ে এসেছে, কেউ বা টিকে থাকার যাবতীয় চেষ্টা সত্ত্বেও ভেঙে-চুরে গেছে।
হায়দারের উপন্যাসের পাঠক-মাত্রেই জানেন, অজস্র চরিত্র ও দ্রুতগামী ঘটনাক্রমের সাথে তাল রাখতে গেলে পাঠককে সদা সতর্ক থাকতে হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ, তাদের সামাজিক অবস্থা, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্তরগুলির মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া – এমন অনায়াস বয়ানে বুনে চলেন, যেন এক মহানদী – যাতে এসে মিশছে শাখানদীরা, বেরিয়ে যাচ্ছে উপনদীরা, আবার ঘুরে এসে হয়ত মিশছে মূল নদীতে। এই বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা ও সামাজিক স্তরের চরিত্রগুলো এত নিখুঁত বিস্তারিত – তাদের প্রায় রক্ত-মাংসের মানুষের মতই অনুভব করা যায়। এই উপন্যাসে রসবোধ আর দুঃখ হাত ধরাধরি করে চলে। এক প্যারাগ্রাফ পড়ে হেসে ফেলতে না ফেলতেই, পরের প্যারাগ্রাফ প্রায় বিধ্বস্ত করে দেয়। অথচ কোথাও একটুও তাল কাটে না, একটুও আরোপিত মনে হয় না।
দীপালী আর রোজি অনুশীলন সমিতির সাথে যুক্ত হয় তাদের প্রায় কিশোরী বয়সে। বিপ্লবীদের ‘টেররিস্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন হায়দার দেখে হঠাৎ কেমন চমক লাগে। ভগত সিং-ও তো ‘আই অ্যাম আ টেররিস্ট’ বলে আত্মপরিচয় দিয়েছেন। এক একটা শব্দ কেমন শতাব্দীর পর শতাব্দী অপরাধীই থেকে যায় তাই না। রেহান আহমদের প্রভাবে দীপালী ক্রমশ কমিউনিস্ট পার্টির সাথে জড়িয়ে পড়ে। ঘনিষ্ঠ বন্ধু রোজিকেও টানে তাদের পাঠচক্রে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যত ছড়ায়, মেয়েদু’টি আরও বেশী করে গোপন কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়তে থাকে। উপন্যাস যত এগোয়, আমাদের সামনে খুলে যেতে থাকে পরচর্চা, ভারতীয় খ্রীশ্চানদের মধ্যে জাত-বেজাতের সমীকরণ, বড়লোকদের শ্রেণিগত উন্নাসিকতা, দৃষ্টিকটু-ভাবে আত্মতৃপ্ত কিছু মানুষের অপরকে হেয় করে চলা। রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যায় প্রেম।
রেহান আহমদ, আত্মগোপন করে পালিয়ে বেড়ানো কমিউনিস্ট রেহান – তার জ্যাঠা, মুসলিম লীগ অনুগামী, নেতা, নবাব নুরুল জাহানকে বোঝায় – মুসলমান ধর্ম আর সোশ্যালিজমে খুব তফাত নেই। তাই মুসলিম লীগ ও কমিউনিস্ট পার্টির একসাথে হাত মিলিয়ে চলাই বাংলার মুসলমানদের পক্ষে ভাল হবে। খেয়াল রাখতে হবে, মুসলিম লীগ তখন মোটামুটি মুসলমানদের আলাদা দেশের পক্ষে অনেকটাই হেলে গেছে। অন্তত নবাব-সাহেব তো বটেই। এর বিপরীতে আমরা দীপালীর সাথে নবাব সাহেবের এই বিষয়ে আলাপ যদি দেখি, তাহলে দেখব, দীপালী এক দেশ, একতার পক্ষে সওয়াল করছে। এবার এই কথোপকথন যেখানে হচ্ছে, নবাবের সেই ব্যক্তিগত পাঠাগারের বর্ণনায় হায়দার দেওয়ালে ঝোলানো তিনজনের ছবির উল্লেখ করেন – স্যার সৈয়দ আহমেদ খান, মহম্মদ আলি জিন্নাহ আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
পাঠাগারের এই সজ্জা বুঝিয়ে দিচ্ছে, নবাব সাহেবের আইডেন্টিটির জটিল স্তরগুলো। একইসাথে তিনি রবীন্দ্রনাথের ঐক্য ও মানবতার ভাবনা এবং জিন্নার স্বতন্ত্র মুসলিম আইডেন্টিটির সাথে একাত্ম-বোধ করছেন। তাঁর পাঠাগারের বাইরের বারান্দায় পাকিস্তানের মানচিত্র ঝোলানো। এখানে যেটা লক্ষ করার, তিনি দীপালীকেও পাকিস্তানী আইডেন্টিটিটির অঙ্গ বলে ভাবছেন – তাকে ‘হিন্দু’ আইডেন্টিটির খোপে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন না। এই অংশটা বই থেকে উদ্ধৃত করি -
She asks him what it is and he replies “Ah, that! You ought to know. When, Inshallah, Pakistan comes into being, you too shall be a Pakistani….” Deepali then follows the Nawab into his library, where they discuss why he believes that India should be partitioned.
‘Uncle…’ she said now, a little uncertainly, “I merely wished to say that we could work together for unity instead of partition.’
‘Where the hell is unity? The anti-Muslim Arya Samaj of Punjab and the Hindu militancy of Maharashtra and Bengal… are they symbols of peace and goodwill? Don’t forget that these movements were started before we thought of setting up a separate political platform.’
‘I don’t know about other provinces, but in Bengal Hindus and Muslims share a common culture.’
‘Did your community ever admit the fact that the folk music and folk literature of Bengal are largely the contribution of the Muslims? By ‘Bengali culture’ you only mean Hindu culture. During the last century your press even started the language controversy. They said Bengali was not the language of the Muslims, they declared that Bengali literature and culture were exclusively the heritage of the Hindus…By God, Deepali, we wanted unity. But now, such hatred for us! Such contempt. Like the Christians have for the Jews in Europe….…. ‘But. Uncle,’ she cut in impatiently, ‘both communities started their revivalist movements and were encouraged by the…’
‘British! I agree. Well why did we let ourselves be manipulated by them?’ He collected his papers and carried them to the writing table.”
নবাব এবং দীপালীর মধ্যে এই তর্ক পাকিস্তানের পক্ষে ও বিপক্ষে হলেও একটা জিনিস পরিষ্কার, যে নবাব-সাহেব পাকিস্তানকে একেবারে আলাদা হিন্দু-বিহীন রাষ্ট্র হিসেবে কল্পনা করছেন না, চাইছেনও না। বরং চাইছেন হিন্দুদের সক্রিয় অন্তর্ভুক্তি। এই ব্যাপারটা হায়দারের অন্য উপন্যাসেও এসেছে। অঞ্চল মেরহোত্রার বইতেও একজন মহিলার সাক্ষ্য পাই, যিনি পাকিস্তানের জন্য গলা ফাটিয়ে আল্লাহু-আকবর ধ্বনি দিয়ে মিছিল করেছেন, কিন্তু আসলে আলাদা একটা হিন্দু-শূন্য-দেশ চাননি, ৪৭-পরবর্তীতে পাকিস্তানে গিয়ে ঠিক খাপ খাওয়াতেও পারেননি। এইটা যেমন একদিকে দূরদৃষ্টির অভাব ও হঠকারী চাহিদার ফলাফল কেমন হয় – সেইটে দেখায়, তেমনি অন্যদিকে এক হতাশ শূন্যতার জন্ম দেয়। মনে হয়, কোন নেতা যদি একটুও মন দিয়ে মানুষের প্রাথমিক চাহিদাগুলো একটু বোঝার চেষ্টা করত!
এখানে পাঠককে আরও একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। হায়দার নিজেও ৪৭-এ ছদ্মবেশে লুকিয়ে ট্রেনে চেপে ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেখানেই তাঁর দাদা, পরিবারও গেছিল। পরিবার সেখানেই থেকে যায় বটে, হায়দার আবার একদিন হঠাৎ-ই ভারতে ফিরে আসেন এবং আমৃত্যু এখানেই থেকে যান। এর স্পষ্ট কোনও কারণ তিনি কোথাও দেখাননি। স্রেফ বলেছেন ‘বাস অ্যায়সেই আ গ্যয়ে’। তাঁর লেখালেখি অনুসরণ করলে বোঝা যায় - ‘দেশভাগ’ এই ধারণাটাই তিনি কোনোদিন মেনে নিতে পারেননি। এই বইটায় মোট তিনটে ভাগ। এর প্রথম দু’টো ভাগে আদর্শের কথাই মূলত জায়গা পেয়েছে। তা বিপ্লবী, জাতীয়তাবাদী, কমিউনিস্ট, মুসলিম লীগ-পন্থী যা-ই হোক – চরিত্রগুলো মোটামুটি যাই করছে, নিজ নিজ আদর্শকে সামনে রেখে করছে। কিন্তু তৃতীয়-ভাগে মূলত তিক্ততার প্রাধান্য।
প্রথম দু’টো ভাগের সময়কাল ১৯৩৯ থেকে ৪৩-৪৪ অবধি। এইসময়ে রেহান-দীপালী স্বাধীন ব্রিটিশ-মুক্ত ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর আশাবাদী। তাদের কমিউনিস্ট আদর্শ তাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে যে স্বাধীনতা, গরীব ও সুবিধা-বঞ্চিত শ্রেণির জন্য অনেক উন্নয়নের সুযোগ নিয়ে আসবে। আর রেহান তো বিশ্বাস করত, পাকিস্তান এক সোশ্যালিস্ট রাষ্ট্র হবে – কারণ ইসলাম আর সোশ্যালিজম খুবই কাছাকাছি। কিলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’তেও আমরা দেখেছি, মুসলিম লীগ আর কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীদের নৈকট্য। ৪৭-এর আগে-পরেই মোটামুটি এই স্বপ্ন দূরে সরে যেতে থাকে। নিজেদের মধ্যে সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যায়। তৃতীয় ভাগের সময়কাল ১৯৫০ থেকে ৭১ পরবর্তী। এই গোটা সময়টাই ভারত ও পাকিস্তান গেছে নানা ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যে দিয়ে। সদ্য স্বাধীন হওয়া দুই দেশের মানুষের, স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে অন্যপারে যাওয়া মানুষের নিজের পায়ের নীচে মাটি জোগাড়ের মরিয়া চেষ্টার সময়।
স্বাধীন, নতুন দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার সময় দুই প্রতিবেশীর মধ্যে কাম্য ছিল সদ্ভাব ও পরস্পরকে সহায়তার মনোভাব। তা তো হয়ই নি, উলটে একে অপরের সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছে বারবার। আদর্শবাদী রেহান ততদিনে সুযোগসন্ধানী রেহানে রূপান্তরিত। দেশভাগের পরপরই পশ্চিমবঙ্গে এসে প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী হয়ে বসে। কিন্তু ৭১-পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে রেহান তার জ্যাঠা আর্জুমন্দ মঞ্জিলের নবাব সাহেবের উত্তরাধিকার, নবাব পদবী - গ্রহণ করে, হয়ে ওঠে ঢাকার এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। উমা রায়ের কাঁকড়া-মুষ্টি থেকে বাঁচতে দীপালীর বাবা দীপালীকে নিয়ে ত্রিনিদাদে অভিবাসী হন। বাঙালি-খ্রীশ্চান রোজি বিবাহসূত্রে দিল্লির অভিজাত-মহলে নিজের স্থান করে নেয়, গরীব বাবা-মায়ের পরিচয় দিতে সে নারাজ, তাঁরাও ঢাকা ছাড়তে চান না, থেকে যান প্রতিবেশীর ভরসায়।
ঢাকা – প্রাচীন এই শহরটা, মাত্র পঁচিশ বছরের মধ্যে, তিন তিনটে দেশের অংশ হয়েছে। অবিভক্ত ভারত, পূর্ব পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশ। আর এই ভূখণ্ডের মানুষগুলো? তারাও কি এত দ্রুতই বদলে নিয়েছে নিজেদের আত্মপরিচয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে, নিজের অতীতকে ছুঁয়ে-ছেনে দেখতে দীপালী ফেরে দেশে। দেশের নাম বারবার বদলালেও, হত-দরিদ্র, সুবিধা-বঞ্চিত মানুষদের জীবনযাত্রা বদলায় না, দীপালীর কথায় তিক্ততার রেশ থেকে যায়। এখানে আবার একটু উদ্ধৃত করি ঢাকা ক্লাবের ডিনারে দীপালীর বক্তব্য থেকে –
“If Mr. Jinnah had not created Pakistan, there would have been no Bangladesh today. Actually, he is the founder of this new country as well.”
People looked at her in surprise and said nothing. She continued to hold forth: “The concept of Mother India was given to the rest of the country by the terrorists of Bengal. They worshipped Divine Power in the image of Kali, the destroyer. They believed in the prehistoric Dravidian concept of the Mother Goddess. The British branded them as terrorists. Indians called them revolutionaries. Many among them were anti-Muslim as well. Bankim Chandra’s novel Anand Math was their Bible. The crosscurrents of the politics of Bengal’s Hindu bhadralok and Muslim gentry gave birth to East Pakistan, and the internal politics of West and East Pakistan created Bangladesh. Individual personality clashes, and the temperaments and actions of political leaders build or destroy entire nations.”
ব্যক্তিগতভাবে দীপালীর এই বক্তব্যের সাথে আমি অনেকটাই একাত্মবোধ করি।
১৯৭৯ সালে উর্দুতে প্রকাশিত ‘আখির–এ-শব–কে–হামসফর’ হায়দার নিজেই ইংরাজি রূপান্তর করেন, প্রকাশিত হয় ২০০৮ নাগাদ। সাহিত্যিক বিচারে ফায়ারফ্লাইজ ইন দ্য মিস্ট নিখুঁত বলা চলে না। এত বড় আর জটিল পশ্চাৎপটে আরেকটু আঁটসাঁট হওয়া দরকার ছিল। এক-এক জায়গায় অতি বিস্তারিত আখ্যান ক্লান্তি জাগায়। রোজির কারাবাস ও পরবর্তী রাধিকা সান্যালের জীবন, বা বলা ভাল, রোজি চরিত্রটাই – খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য লাগেনি আমার। অথচ রোজির বাবা-মা, বাঙালি খ্রীশ্চানদের দৈনন্দিন খুঁটি-নাটি, শ্রেণিগত অপমান – এ সবই খুব বাস্তব, জীবন্ত। ইয়াসমিনের শ্রেণিকে পিছনে ফেলে অভিজাত মহলে স্থান পাওয়ার মরিয়া চেষ্টায় জ্বলে-পুড়ে যাওয়া - বড্ড মন খারাপ করায়। মন খারাপ করায় নবাব-কন্যা জেহান আরার জীবনও – অতি-অভিজাত-শ্রেণিতে জন্ম তাকে একটা সুখী, সফল জীবন দিতে পারল না।
ওই যে শুরুতে বলছিলাম বৈশ্বিক সাহিত্য – সমস্ত দোষ-গুণ মিলিয়েও এই বইটা আমার মতে বৈশ্বিক সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত। উপমহাদেশের সামাজিক ইতিহাসে আগ্রহীদের অবশ্যই পড়া উচিৎ। সবচেয়ে বড় কথা – ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতেও তুলে দেওয়া উচিত। ধর্ম-ভিত্তিক দেশের মোহ ঘুচে যাওয়া, বাঙালি – হিন্দু, মুসলমান, খ্রীশ্চান ধর্মের মধ্যে শ্রেণিভেদ, তাদের মধ্যে যোগাযোগ ও আদানপ্রদানে বিভিন্ন স্তরের সূক্ষ্মতা অনুভব করার জন্যও – এই বইটা পড়া দরকার।