ছোটবেলা থেকে যে কটি জায়গা নিয়ে অপার কৌতূহল ছিল কৈলাসপর্বত, মানস সরোবর, লাসা তার মধ্যে অন্যতম। উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কৈলাস ও মানস সরোবর গিয়েছিলেন ১৯৩৪ সালে, তার আগে স্বামী প্রণবানন্দ প্রথমবার ১৯২৮ সালে শ্রীনগর, লাদাখ ও গারটকের পথ ধরে গিয়ে নিতি পাস হয়ে ফিরে আসেন। এরপরে প্রত্যেক বছরেই তিনি ঐ অঞ্চলে যেতে থাকেন ভিন্ন ভিন্ন গিরিবর্ত্ম দিয়ে, নিত্য নতুন পথে। ১৯৩৬-৩৭ সালে টানা ১ বছর এবং ১৯৪৩-৪৪ সালে ষোলো মাস মানস সরোবরের তীরে গুম্ফায় কাটান। এদেশ থেকে নৌকা নিয়ে গিয়ে মানস সরোবর ও রাক্ষসতালে নৌকা নিয়ে ঘুরে জলের গভীরতা মাপেন। শীতে হ্রদ দুটি কীভাবে জমে কঠিন হয়ে যায় এবং তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে কেমন করেই বা আবার জলে পরিণত হয় সেসবও লিপিবদ্ধ করেন। তিব্বতও ইংরেজদের অধীনেই ছিল। এঁরা গেছেনও মূলত হিন্দু তীর্থক্ষেত্র কৈলাস ও মানস সরোবরের উদ্দেশ্যে। লাসা ও তিব্বতের অন্যান্য অংশ সম্পর্কে এঁদের লেখায় প্রায় কিছুই নেই।
তিব্বতের সাথে ভারতের যোগাযোগ অতি প্রাচীন হলেও শরৎচন্দ্র দাস, ফ্রান্সিস ইয়ংহাসবেন্ড, স্বেন হেডিনের পর তিব্বতের বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে লেখাপত্র সেভাবে আমার চোখে পড়ে নি। ১৯৫৮ সালে চীনের পুরোপুরি তিব্বত দখল করা এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লব পরবর্তী দীর্ঘ সময় ভারতের তীর্থযাত্রীদের কৈলাস মানস যাওয়া বন্ধ ছিল। ১৯৮১ নাগাদ আবার ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের যাতায়াত শুরু হয়। তো ১৯৫৬য় যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ হবার আগে একটি বাঙালি ছেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে নেপালী সাধুদের দলের সঙ্গে মৌনীবাবা সেজে তিব্বত গিয়েছিল। গ্যাংটক, চেংদু, নাথু-লা, ইয়াটুং, গিয়াৎসে, নাগারৎসে চুসুল হয়ে লাসা পৌঁছায়, ফেরার সময় দলের সাথে না ফিরে সিগাৎসে, ত্রাদুম, লাংবোনা গুম্ফা, দিরাফুক গুম্ফা হয়ে কৈলাস পরিক্রমা করে মানস ও রাক্ষসতাল হ্রদ দেখে গুরলা লা পেরিয়ে তাকলাকোট, লিপুলেখ হয়ে তিব্বত-নেপাল সীমান্ত এড়িয়ে পর্বত টপকে ভারতে ফেরত আসে।
আরো পরে এই ছেলে সাইকেলে বিশ্বভ্রমণে বেরোবে। হ্যাঁ ভূপর্যটক বিমল দে’ই সেদিনের সেই ঘর পালানো মৌনীবাবা। বিমল দে’র সেই অভিজ্ঞতাই ‘মহাতীর্থের শেষ যাত্রী’ নামে ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয়। আজ পর্যন্ত সেই বইয়ের আটটি সংস্করণ নিঃশেষিত, বইয়ের হিন্দি অনুবাদটিও যথেষ্ট জনপ্রিয়। প্রথমবারের তিব্বতযাত্রা একেবারেই আচম্বিতে অনেকটাই ঝোঁকের মাথায় শুরু হয়। ইছাপুরের বাড়ি থেকে পালিয়ে বিমল গয়ায় উপস্থিত হয়ে এক অসুস্থ সাধুর সেবায় লাগেন তখন তাঁর বয়স ষোলো কি সতেরো বছর। নির্দিষ্ট কোনও উদ্দেশ্যে নয় নেহাৎই পথ চলতে চলতে এই সাধুকে তাঁর ভাল লেগে যায়, থেকে যান তাঁর সঙ্গে। সাধুবাবা অবশ্য বারেবারেই ঘরে ফিরে গিয়ে পড়াশোনা শেষ করতে বলেন বিমলকে। সাধুবাবা বেশ সুস্থ হয়ে ওঠার পরে হঠাৎই একদিন তিনজন লামা আসেন সাধুবাবার সাথে দেখা করতে। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর তাঁদের সাথেই বেরিয়ে চলে যান সাধুবাবা।
হতভম্ব বিমল কিছুদূর দৌড়ে গিয়ে জানতে পারেন লামাদের সাথে সাধুবাবা যাচ্ছেন গ্যাংটক। বিমলকে কিছুতেই সঙ্গে নিতে রাজী নন সাধুবাবা, কারণ সে বহুদূর এবং কষ্টসাধ্য যাত্রা। গয়াতে এক হোটেলে কয়েকদিন বাসন মাজা ও ঘরে ঘরে চা দেবার কাজ করে রোজগার করা ৩ টাকা নিয়ে বিমল ধরলেন শিলিগুড়ির পথ, জানা ছিল শিলিগুড়ি হয়েই গ্যাংটক যেতে হয়। হেঁটে, লরির মাথায় চড়ে শিলিগুড়ি তিস্তাবাজার হয়ে একসময় পৌঁছেও গেলেন গ্যাংটক। কিন্তু সাধুবাবাকে খুঁজবেন কোথায়? কীভাবে? সাধুবাবার নাম বা কোন আখড়া, কোন মতের সাধু কিছুই জানেন না। চলল প্রায় দরজায় দরজায় ঘুরে সাধুবাবার সন্ধান, সাথে সাহায্য করে সিকিমি ছেলে আনচু। অবশেষে বেশ কিছুদিন পরে বাসস্ট্যান্ডে শিলিগুড়ি থেকে আসা এক বাস থেকে নামেন সাধুবাবা,সঙ্গে সেই তিনজন লামা। বিমলের আনন্দের সীমা নেই। সাধুবাবার সাথেই গিয়ে ওঠেন এচে গোম্ফায় (Echey Gompha)।
জানা গেল একদল নেপালী লামাকে নিয়ে সাধুবাবা যাবেন তিব্বতের লাসা তীর্থ করতে। বিমল ধরে বসেন তিনিও যাবেন। ততদিনে ভারতীয়দের জন্য অতিরিক্ত কড়াকড়ি শুরু করেছেন চীন গোটা তিব্বত জুড়ে। এমনকি ব্যবসাবাণিজ্যও প্রায় বন্ধই। বিমল নেপালী ভাষা জানেন না, তিব্বতীভাষা জানার তো সম্ভাবনাই নেই। এখন অনুমতি চাইলে পাওয়া যাবে না নিশ্চিত। ভারতীয় পর্যটক হিসেবে ধরা পড়লে শুধু বিমল নয় গোটা দলেরই দুর্ভোগের শেষ থাকবে না। বিমলের বয়সও অত্যন্ত কম, অতি কষ্টসাধ্য সে পথে যাবার জন্য তিনি আদৌ সক্ষম কিনা তাও সন্দেহ। ফলে প্রথমে সাধুবাবা একেবারেই রাজী হতে চান নি। কিন্তু বিমলের নাছোড়বান্দা মনোভাব, সম্পূর্ণ একাকী গ্যাংটকে চলে আসার দুঃসাহসের কাছে হার মানেন সাধুবাবা, মণিমন্ত্রে দীক্ষা দেন বিমলকে। আবির্ভাব হয় নেপালী ত্রাবা, অর্থাৎ শিক্ষানবিশ লামা মৌনীবাবার। শুরু হয় চেংদু নাথু-লা হয়ে লাসার দিকে এক অবিশ্বাস্য যাত্রা।
এতক্ষণ যা লিখলাম সে নিতান্ত ভূমিকা মাত্র। আসল যাত্রাপথের বিবরণ চমকপ্রদ, রোমহর্ষক। সবচেয়ে বড় কথা হল সেই পৃথিবী, পৃথিবীকে আবিষ্কারের সেই বিস্ময় আমরা ফেলে এসেছি বহু বছর আগে, এখন আর চাইলেও সেরকম যাত্রা করা সম্ভব নয়। পদে পদে প্রাকৃতিক বাধা বিপত্তি, চৈনিক প্রহরা সে যাত্রাকে করে তুলেছিল রোমহর্ষক, বিপদসংকুল। ঋতু হিসেবে তখন গ্রীষ্মের শুরু হলেও অধিকাংশ জায়গায় বরফ তখনো গলে নি, রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের অনেকটা নীচে। এই অবস্থায় অধিকাংশ যাত্রাপথ লেখক কাটিয়েছেন জুতো এমনকি মোজা ছাড়া। অনেকদূর এগিয়ে তবে এক তিব্বতি যাযাবর দলের থেকে তিব্বতি উলের মোজা কেনেন, আরো পরে প্রায় লাসা পৌঁছিয়ে কেনেন জুতো। আস্তে আস্তে অভ্যাস করেন নুন মাখন মেশানো চা খাওয়া, সম্পূর্ণ অন্ধকারে পাহাড়ি পথে হাঁটা আর কোনও প্ররোচনাতেই মুখ না খোলা, মৌনী হয়ে থাকা।
তাঁর লেখায় বারেবারে এসেছে ভারতীয়দের প্রতি তিব্বতের সাধারণ মানুষের সহৃদয় ব্যবহার, শ্রদ্ধা, ভালবাসা। হাতে গোণা যে কটা জায়গায় লেখক নিজেকে ভারতীয় বলে পরিচয় দিতে পেরেছেন প্রত্যেক জায়গাতেই পেয়েছেন সমাদর। তিব্বতের সামাজিক রীতিনীতি, তিব্বতিদের পোশাক, আচার ব্যবহারও বিস্তারিতভাবে এসেছে তাঁর বিবরণে। সেই সময়ের তিব্বতে অতিরিক্ত ঠান্ডা ও জলের অভাবের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা তেমন ছিল না। একটি জনপদের বর্ণনায় পাই সেখানকার প্রতিটি বাড়ির চারপাশে এবং রাস্তা বরাবর জঞ্জালের উঁচু স্তূপ। বাড়ির জঞ্জাল লোকে ঘর থেকে ছুঁড়ে বাড়ির সামনে এবং চারপাশে ফেলে, ফেলতে ফেলতে জঞ্জাল জমে শক্ত উঁচু বাঁধের মত হয়ে গেছে। তারই উপরে বসে অবসর সময়ে লোকে গল্প করে। ঘরে গোটা ঘর জুড়ে বিছানা পাতা, জুতোমোজাসহই তাতে উঠে বসা বা শোয়া। জুতোটুতো খোলার কোনও প্রশ্নই নেই, লেখক খুলতে উদ্যত হলেও বাড়ির লোকই তাঁকে নিষেধ করে জুতোশুদ্ধই বিছানায় উঠে বসতে বলে।
লাসায় দালাই লামার প্রধান বাসস্থান পোতালা প্রাসাদ এবং গ্রীষ্মকালীন বাসস্থান নরবুলিংকা দুটোই দেখেন বিমল সাধুবাবার পরিচিত মানুষদের সাহায্যে। ২১ বছর বয়সী দালাই লামা সেই সময় ছিলেন নরবুলিংকায়, লেখকরা যখন বাগান ঘুরে দেখছিলেন সেই সময় চেন-রে-জি অর্থাৎ দালাই লামা হেঁটে যান সেখান দিয়ে। সেই সময় চেন-রে-জি ছিলেন তিব্বতের অঘোষিত রাজা। তাঁর সাথে দেখা করতে চাইলে চীনা কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে অনুমতি নিতে হত। সহসা পথের পাশে এইভাবে দেখা হয়ে যাওয়াকে তাঁরা নিজেদের অসীম সৌভাগ্য বলেই মনে করেছেন। আরো বছর তিনেক বাদে অবশ্য দালাই লামা ভারতে পালিয়ে আসবেন, আরো অনেক বছর পরে বিদেশে বিমলের সাথে তাঁর দেখা ও কথাবার্তাও হবে। কিন্তু সেসব তখন ভবিষ্যতের গর্ভে। কদিনের মধ্যে চীনা কর্তৃপক্ষ আদেশ পাঠায় তাঁদের এবার লাসা ছাড়তে হবে। শুধু তাই না, সবার একসাথে যাওয়াও চলবে না, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যেতে হবে।
বিমলের যাযাবর মন ততদিনে কৈলাস ও মানসসরোবর দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে পড়েছে। দ্রেপুং গুম্ফায় এসে ছোট ছোট দলে একে একে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পরে বিমল একলা রওনা হলেন উল্টোদিকে কৈলাসের পথে। আবারও কঠিন পথ, গ্রীষ্ম সবে শুরু হয়েছে, এখনো অধিকাংশ পথই বরফে ঢাকা, রাত্রিবেলা তিব্বতের খোলা প্রান্তরে তাপমাত্রা নামে শূন্যেরও অনেকটা নীচে। তারই মধ্যে চলেছে এক ভারতীয় কিশোর, মুখোমুখি হচ্ছে কত বিচিত্র প্রথা, মানুষের। এক আধা তান্ত্রিক গোছের সাধুর সঙ্গে রোগ সারাবার নামে ভুত তাড়ানোতে অংশ নেওয়াও হল। প্রচণ্ড শীতে বার দুয়েক মরতে মরতে বেঁচে গেলেন --- তাঁর ভাষ্যমতে এক রহস্যময় সাধুবাবার সাহায্যে। লাংবোনা গুম্ফায় এক সাধুবাবা তাঁকে আবারো দীক্ষা দেন হিন্দু-মন্ত্রে, কৈলাস ও মানস পরিক্রমা করান, বাতলে দেন চীনা বা হানদের পাহারা এড়িয়ে ভারতে ফেরার রাস্তা। নিজের মনে এঁর নাম দেন ‘কৈলাসবাবা’, তাঁর সন্ন্যাস নামটি আর জিজ্ঞাসা করেন নি বিমল।
লাসা থেকে কৈলাস পৌঁছানোর এই অংশটা এতটাই আকর্ষণীয় যে পড়তে শুরু করার পরে ছেড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। ‘মহাতীর্থের শেষ যাত্রী’ বই এই পর্যন্তই। অবশ্য সাধক মিলারেপার কথা আছে পর্যটন বৃত্তান্ত শেষ হবার পরে। এর পঞ্চাশ বছর পরে ভূপর্যটক বিমল দে’র মনে কৈলাসবাবাকে খুঁজে বের করার এবং আর একবার তাঁর মুখোমুখি হবার তীব্র ইচ্ছে জেগে ওঠে। ততদিনে তিনি বিদেশে বসবাসরত। এবারে আর লুকিয়ে ছদ্মবেশে নয় রীতিমত চীন বিদেশমন্ত্রক থেকে ভিসা নিয়ে গুম্ফায় গুম্ফায় খুঁজে বেড়ান তাঁর কৈলাসবাবাকে। এতদিনে লাসার উন্নতি হয়েছে অভূতপূর্ব, দুর্গম পাহাড় ভেদ করে সরাসরি ট্রেন পৌঁছায় লাসায়, প্লেন তো বটেই। ঝকঝকে রাস্তাঘাট চলে গেছে দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। চীনের বেয়ার ফুট ডাক্তাররা ছড়িয়ে পড়েছেন গ্রামে, দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তে। একটা শক্তপোক্ত স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, মানুষকে আর তান্ত্রিকের শরণাপন্ন হতে হয় না রোগ সারাতে।
কিন্তু অনুমতিপত্র ছাড়া, সরকার অনুমোদিত গাইড ছাড়া এক পাও চলার ক্ষমতা নেই। এদিকে লেখক যাকে খুঁজছেন তাঁর নাম বা কোন তথ্যই জানা নেই তাঁর, নেই কোন ছবিও। অতএব আবারও এক অনির্দেশ্য যাত্রায় জ্ঞানগঞ্জের পথে পথে ঘুরে বেড়ান লেখক। তিব্বতি তন্ত্রসাধনার জন্য জ্ঞানগঞ্জ ছিল অতি বিখ্যাত। সাংস্কৃতিক বিপ্লবে অধিকাংশ জিনিষ ধ্বংস হয়েও এখনো রয়ে গেছে কিছু। ভারতীয় মতে যার নাম ‘জ্ঞানগঞ্জ’ তিব্বতি ভাষায় তার নাম ও প্রকৃত অবস্থান খুঁজে পাওয়ার গল্পটাও চমকপ্রদ। সেখানেই এক মঠে দেখা হয় এবং আশীর্বাদ পান ভৈরবী মাতাজীর, তাঁরই নির্দেশে সম্পূর্ণ একা রাত কাটান চুরাশি মহাসিদ্ধ শ্মশানে। মানস পরিক্রমায় পার হয়ে যান ‘পাপ পাথর’। শেষ পর্যন্ত কৈলাসবাবার দেখা পেলেন কিনা জানতে হলে পড়তে হবে ‘মহাতীর্থে কৈলাসবাবার সন্ধানে (তিব্বত-২) বইটা।
লেখক ঈশ্বরবিশ্বাসী, ভারতীয় দর্শনে গভীর আস্থাশীল হওয়ায় বিভিন্ন জেরার মুখে ধর্ম ও দর্শনের বিভিন্ন ব্যাখ্যা করে উৎরে গেছেন সহজেই। প্রথম বইটা দেখায় এক আদিম তিব্বতের ছবি, যেখানে আধুনিক সভ্যতা সবে চীনা পিপলস আর্মির অস্ত্রের ডগায় ঢুকবো ঢুকবো করছে। দ্বিতীয় বইটা দেখায় চৈনিক উপনিবেশ তিব্বতের ছবি। লেখক খোলাচোখে দেখেছেন ও অত্যন্ত খোলামনে আলোচনা করেছেন চীন অধিগ্রহণের পরে তিব্বতের ভাল ও মন্দ দুইই। একদিকে যেমন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে অসংখ্য নিতান্ত নিরীহ সন্ন্যাসী লামা খুন হয়েছেন, ধ্বংস হয়েছে অজস্র পুঁথি, গুম্ফা। অন্যদিকে আধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা, যানবাহন, সুনির্মিত রাস্তাঘাট তিব্বতি জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার ভুত, আত্মা, তান্ত্রিক আচার বা অলৌকিক ব্যাপার স্যাপার তেমন আকর্ষণীয় লাগে নি, কিছু জায়গায় হাস্যকরই লেগেছে। সেটুকু বাদ দিলে প্রাচীন ও নবীন তিব্বতের পথে পথে অভিযান অসম্ভব আকর্ষণীয়, সুলিখিতও বটে।
ভূপর্যটক বিমল দে’র সাইকেলে পৃথিবী ঘোরার কাহিনী ‘সুদূরের পিয়াসী’ পড়েননি এমন ভ্রামণিক বাঙালি হয়ত খুব বেশি নেই। তাঁর তিব্বত ভ্রমণের বইদুটিও অতি জনপ্রিয়।
‘পরিব্রাজকের কর্ম হচ্ছে চলা আর ধর্ম হচ্ছে অনাসক্তি’ তাঁর এই জীবনদর্শনের প্রমাণ পাই তাঁর ভ্রমণ বিবরণীর পাতায় পাতায়। বারেবারে পড়ার মত দুটি বই।
বই – মহাতীর্থের শেষ যাত্রী (তিব্বত)
লেখক – ভূপর্যটক বিমল দে
প্রকাশক – দে বুক স্টোর (আদি)
দাম – ৫২৫/-টাকা
বই – মহাতীর্থে কৈলাসবাবার সন্ধানে (তিব্বত -২)
লেখক – ভূপর্যটক বিমল দে
প্রকাশক – দে বুক স্টোর (আদি)
দাম – ৩৯৫/-টাকা