প্রতিবছর গরম বেড়ে উঠলেই মানুষজন ব্যস্ত হয়ে পড়েন ‘চলো গাছ লাগাই, এক্ষুণি লাগাই’ করে। আমাদের বাঙালবাড়ির ভাষায় যাকে বলে লোকে একেবারে ‘উসুইল্যা উঠে’।
তা গাছ লাগানো খুবই ভাল উদ্যোগ। তবে পরিবেশ রক্ষায়, পরিবেশের উন্নতিকল্পে গাছ লাগাতে হলে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার মাধ্যমে বনসৃজন করা প্রয়োজন। আমি যে সংস্থায় কাজ করি তাদের সিএসআর প্রোগ্রামের সূত্রে ২০১৬ থেকে কোভিড লক ডাউনের আগে পর্যন্ত পুণে ও পুণের আশেপাশে এবং আহমদনগর জেলায় এরকম বনসৃজন প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলাম। এই সময় আমরা প্রায় ১৮ হাজার গাছ লাগিয়েছি, এলাকা ভেদে যার ৭০-৭৫ শতাংশ বাঁচিয়ে রাখতে পারা গেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই কয়েকটা কথা বলি।
১) ছোটখাট পাতাবাহার, ফুলগাছ মানে গুল্ম বা বীরুৎ, ঘাসের লন, ব্যালকনি বাগান ইত্যাদি দেখতে ভাল লাগে, মানুষের স্ট্রেস কমায়। যথেষ্ট সংখ্যায় থাকলে সংলগ্ন ঘরের তাপমাত্রাও একটু কম লাগে বটে তবে সমগ্র পরিবেশের উন্নতি খুব কিছু ঘটায় না। আর কৃষ্ণচূড়া, অমলতাস, রাধাচূড়া, এরিকা পাম, আকাশমণি ইত্যাদি তো মাটির থেকে এত জল শুষে নেয় যে গোটা এলাকার জলস্তর হু হু করে নামে। এই শেষ কটি গাছ একেবারেই পথের ধারে ধারে লাগানোর উপযুক্ত নয়, এদের কন্ট্রোলড এনভায়রনমেন্টে অল্প কিছু লাগানো যেতে খুব সীমিত এলাকায়। এমনিতে এই গাছগুলো সৌন্দর্য্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন সংস্থা এমনকি পৌরসভা থেকেও রাস্তার ধারে লাগানো হয়, যা ভূগর্ভস্থ জলস্তরের অবনমন ঘটিয়ে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের ক্ষতি করে। এই সম্পর্কে জন সচেতনতা প্রয়োজন। এর বদলে জারুল, মাদার, কদম ইত্যাদি সুন্দর ফুলের পরিবেশোপযোগী গাছ লাগানো যেতে পারে। মহারাষ্ট্র বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেছিলেন যে গাছে কোন পাখি বসে না সেই গাছ সেই এলাকার পরিবেশের জন্য ভাল হয় না বরং অনেকক্ষেত্রে ক্ষতিকর হয়।
২) প্রত্যেক অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি অনুযায়ী উপযোগী গাছের তালিকা সেই অঞ্চলের বনদপ্তরের কাছে থাকে। পরিবেশের উন্নতির জন্য বনসৃজন করতে চাইলে আগে সংশ্লিষ্ট বনদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপযোগী গাছের তালিকা নিয়ে নিতে হবে। ভারতের নদীবিধৌত সমভূমি অঞ্চলের উপযোগী আম, জাম, কাঁঠাল, নিম, সজনে, করঞ্জা, বট অশ্বত্থ, জারুল, কদম ছাতিম ইত্যাদি। সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে নারকেল সুপারি মিষ্টি জলের পুকুর জলাভূমির আশেপাশে তাল, শ্যাওড়া ইত্যাদি। প্রতিবছর বর্ষা আসার ঠিক আগে বিভিন্ন রাজ্যের বনদপ্তর রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটির প্রকৃতি অনুযায়ী উপযোগী গাছের তালিকা প্রকাশ করে। ওঁদের সাথে পরামর্শ করে এক একটা এলাকায় কী কী গাছ লাগালে ভাল হবে জেনে নিয়ে সেইমত পরিকল্পনা করতে হবে। এই পরিকল্পনায় সব রকমের গাছই রাখতে হবে জাতে একটা সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠতে পারে।
৩) চারাগাছ লাগিয়ে ছেড়ে দিলে শুধু হয় না তাকে অন্তত তিন বছর দেখভাল করতে হয়। মোটামুটি বড় গাছেরা যারা গ্রিন কভার বাড়ায় এবং পরিবেশে তাপ কম করতে সাহায্য করে, সেইরকম গাছ তিন বছরে মাটির অনেকটা গভীরে শিকড় চারিয়ে দিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে বলা যায়। এর ফলে গরমকালে মাটির অনেকটা গভীর থেকে জল টেনে নিজেকে বাঁচাতে পারে, বড়সড় ঝড়ের সময় মাটিতে শিকড় গেঁথে খাড়াও থাকতে পারে। কচি চারাগাছ খেতে গরু ছাগল খুবই ভালবাসে, তাই চারা বসানোর সাথে সাথে চারদিক ঘিরে বেড়াও দিতে হবে। এই বেড়া লোহার তার দিয়ে দিলে পোক্ত হয় বটে তবে খরচ বাড়ে। বাঁশের কঞ্চি, বড় গাছের কেটে ফেলা বা ঝড়ে ভেঙে পড়া ডাল দিয়েও করা যায়। এতে খরচ অনেক কম হয়। এককোট রঙ লাগিয়ে নিলে চট করে বর্ষার জলে পচে যায় না, মোটামুটি তিন বছর চলে যায়।
তবে এই কঞ্চির বেড়া নিয়ে আমরা একটা বিচিত্র সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম। জুলাই মাসে এক গ্রামের পাশের খেত বরাবর লাইন করে আম, কাঁঠাল আর জামগাছ লাগিয়ে প্রত্যেক গাছ ঘিরে সুন্দর করে বেড়াটেড়া বসিয়ে তো আমরা চলে এসেছি। এমনিতে বর্ষাকালে তো আর জল টল দিতে হয় না তাই একেবারে অক্টোবর মাসে দেখভাল করতে যাবো ঠিক হয়ে আছে। যে এনজিও আমাদের সংস্থার সহযোগী হিসেবে গাছের চারা, বেড়া ইত্যাদি দিয়েছিল তাঁদের সেক্রেটারি হঠাৎ আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ফোন করে বললেন খুব মুশকিলে পড়া গেছে, ওই গাছগুলোতে যতবার বেড়া দেওয়া হচ্ছে ততবারই দুই তিনদিনের মধ্যে প্রায় সব গায়েব হয়ে যাচ্ছে। আবার গেলাম সবাই দলবেঁধে। গ্রামে গিয়ে কথাটথা বলে জানা গেল মূলতঃ মহিলারা এই কঞ্চির বেড়াগুলো জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করার জন্য তুলে নিয়ে যান। দু’একজন তো বললেন তাঁরা ভেবেছেন গ্যাস সিলিন্ডার বা কেরোসিনের আকাশছোঁয়া দামের জন্য সরকার থেকেই এগুলো তাঁদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হচ্ছে।
কবে গাছ বড় হবে তবে তার ফল খাবেন এত লম্বা সময় ধৈর্য্য ধরে থাকা অতি নিম্ন আয়ের এই মানুষগুলোর পক্ষে সত্যিই কষ্টকর। এরপরে আমরা সেখানে পরপর কয়েক সপ্তাহ ধরে কিছু আলোচনাসভার আয়োজন করি। আলোচনার জায়গা হিসেবে বেছে নিই তাঁদেরই গ্রামের আড়াইশো বছরের পুরানো অশ্বত্থ গাছটির নীচ। গ্রামের প্রত্যেকের নাম কোন না কোন বেড়ার গায়ের বোর্ডে মারাঠী ভাষায় লেখানো হয়। এতদিন এই বোর্ডে আমাদের সংস্থা আর সহযোগী এনজিও সংস্থাটির নাম ইংরিজিতে লেখা ছিল, যা ওঁদের কাছে সম্পূর্ণ অর্থহীন। এখন এর সাথে এঁদেরই কারো না কারো নাম এঁদের বোধগম্য ভাষায় লেখা থাকায় প্রত্যেকে গাছগুলোকে নিজেদের সন্তানসম ভাবতে শুরু করেন। এর পরেও পাঁচ দশটা বেড়া যে চুরি যায় নি তা নয়, তবে গ্রামবাসী নিজেরাই চাঁদা তুলে আবার নতুন করে লাগিয়েছেন। শুধু তাই না তিন বছর পরে যে কটি বেড়া মোটামুটি ভাল অবস্থায় ছিল সেগুলো থেকে নিজেদের নামাঙ্কিত বোর্ড খুলে নিয়ে বেড়াগুলো আমাদের ফেরত দিয়ে বলেছেন অন্য কোথায়ও কাজে লাগাতে।
৪) উপরের এত বড় গল্পটা লিখলাম কারণ গাছের রক্ষা আর ধ্বংস দুইই হয় এলাকাবাসীর দ্বারা। কাজেই কোনও রাস্তার পাশে বা মাঠের চারধারে গাছ লাগানোর আগে এলাকার লোকের সাথে কথা বলা প্রয়োজন, তাঁদের বোঝাতে হবে গাছ কেন দরকার। সবচেয়ে ভাল হয় যদি পরিকল্পিত গাছগুলো ঠিক কী কী উপকারে লাগবে সেইটে বোঝানো যায়। যেমন জামগাছের প্রায় প্রত্যেক অংশ কোনও না কোনও কাজে লাগে। তো এলাকাবাসীকে যদি জামফলের সাথে সাথে অন্যান্য অংশের উপযোগিতা ও ব্যবহার শিখিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তাঁরা নিজেদের আগ্রহেই গাছ রক্ষা করবেন। একইভাবে জারুল গাছের বিভিন্ন অংশেরও নানা ঔষধিগুণ আছে। প্রয়োজনে বিভিন্ন ওষুধনির্মাতা সংস্থার সাথে চুক্তি করে গাছের বিভিন্ন অংশ নিয়মিত ব্যবধানে বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ এলাকার উন্নয়নে ব্যবহার করা যায়। আজকাল অনেক হাইওয়ের অংশবিশেষ দত্তক নেওয়া যায়। একইভাবে গাছ লাগানোর সময় গাছগুলো দত্তক নিতে এলাকাবাসীকে উৎসাহ দেওয়া, প্রয়োজনে আলোচনা সভার আয়োজন করা প্রয়োজন। তাতে চারাগুলো অকালমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে।
৫) লাগানোর পরে প্রথম তিনবছর তো যথেষ্ট যত্ন লাগবেই এছাড়াও নিয়মিত নার্চারিং, মাল্চিং আর প্রুনিং দরকার। ইলেকট্রিকের তার বাঁচিয়ে, বড় ঝড়ে যাতে ডাল ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা না ঘটায় সেদিকে নজর রেখে নিয়মিত ডাল ছাঁটা দরকার। আবার ডাল এমনভাবে ছাঁটতে হবে যাতে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত না হয়। এরজন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই এই কাজগুলো করতে হবে। পুণেতে বনদপ্তর খুবই সাহায্য করে এই বিষয়ে। বনদপ্তরের কর্মীরা এসে হাতে কলমে দেখিয়ে দিয়ে যান। এছাড়া পুণেতে মার্চ এপ্রিলের গরমে আবহাওয়া অতি শুকনো হয়ে যাওয়ায় পাহাড়ে অনেকসময় দাবানল লেগে যায়। এতে ঘাস ও গুল্মের সাথে সাথে আগের বর্ষায় বসানো ছোট চারা এমনকি বড়সড় গাছও জ্বলে যায়। এইজন্য বনদপ্তর থেকে ভাগ ভাগ করে আয়তাকার অংশের শুকনো ঘাস ও গুল্ম পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে বড়সড় দাবানল লাগতে পারে না, এছাড়া ঘাসপোড়া ছাই মাটিতে মিশে অ্যাকুইফার পোক্ত করে যা বর্ষাকালে জল ধরে রাখতে সাহায্য করে। বর্ষা আসার ঠিক আগে দুই এক পশলা প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি হয়ে গেলে মাটি তৈরির সময়েও এই ছাই কাজে লাগে। বড় গাছের ডালপালা কাটার পর পাতা ও নরম ডাল জৈবসার তৈরির জন্য দিয়ে শক্ত ডাল জ্বালানী হিসেবে ব্যবহারের জন্য অথবা চারাগাছের বেড়া তৈরির জন্য ব্যবহার করা যায়। পরিকল্পনা করে ছাঁটলে প্রতিটি অংশই ব্যবহার করা যায়, কোন অংশই নষ্ট হয় না।
৬) প্রত্যেক বছর গরমের সময় ফলের বীজ জমা করে রাস্তায় ঘাটে ছড়ানোর আহবানও দেখি বেশ কিছু। এমনিই মুঠো করে বীজ নিয়ে স্রেফ রাস্তার ধারে ছড়িয়ে দিলে সেই বীজ থেকে গাছ হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আর যদি বা এক আধটা হয়েও যায়, বেমক্কা একটা গাছ রাস্তার ধারে গজাতে দেখলে হয়ত স্থানীয় লোকেই উপড়ে ফেলে দেবে ভবিষ্যৎ অসুবিধের ভয়ে। মাটি ও গোবরের সাথে বেশ কিছু বীজ মিশিয়ে সীডবল বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দিলে তবু কিছু গাছ জন্মানোর সম্ভাবনা বাড়ে। তাও মহারাষ্ট্র বনদপ্তরের এক আধিকারিকের ভাষ্যে সীডবল থেকে গাছ হয় মাত্র এক শতাংশ। আর সেই এক শতাংশের কত অংশ বড়সড় গাছ হয় তার কোনও নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। সীডবল ছড়ানোর জন্য বড় ফাঁকা মাঠ বা ছোটখাট পাহাড় বেশি উপযুক্ত। আমাদের সংস্থার তরফে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ছোট পাহাড়ে ড্রোন দিয়ে প্রায় শ’দুয়েক সীডবল ছড়ানো হয়েছিল। বর্ষার পরে গিয়ে ছোট চারাগাছের সংখ্যাবৃদ্ধির হার খুবই অল্প বলে দেখা যায়। বরং বীজ জমিয়ে ছোট ছোট পাত্রে বা টবে অঙ্কুরোদ্গম করিয়ে দেড় থেকে তিনফুট অবধি বড় চারা তৈরি করে তারপর রোপণ করলে বেশি সংখ্যায় গাছ পাওয়া যাবে। অর্থাৎ আবারও আসছে পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা।
৭) বনসৃজন বা বহুসংখ্যক বড় গাছের চারা লাগানো সবসময়ই বর্ষা এলে শুরু করা উচিৎ। গোটা জুলাই মাস জুড়ে বন মহোৎসবের ডাক দেয় বনদপ্তর। এইসময় জলের প্রাচুর্য্য থাকে, গাছ বসে মাটিতে তাড়াতাড়ি। বনদপ্তর থেকে বিভিন্ন গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় জুলাই নাগাদ রথযাত্রা উপলক্ষে মেলা বসে, এইসব মেলাতেও সস্তায় অনেক চারা পাওয়া যায়। গরমকালে মাটি তৈরি ও বীজ থেকে চারা তৈরি করে রাখলে বর্ষাকালে তা জায়গা মত রোপণ করা যায়। মোটামুটি অক্টোবর নভেম্বর পর্যন্ত মাটিতে যথেষ্ট জল থাকে। এলাকা ভেদে তা সেপ্টেম্বর অক্টোবরও হতে পারে। মোটকথা খেয়াল রেখে শুকনো সময় শুরু হওয়া থেকে পরবর্তী বছর বর্ষা আসা পর্যন্ত চারাগাছগুলোতে নিয়মিত জল দিতে হবে। এরকম তিন বছর পর্যন্ত চালালে চতুর্থ বছরে আর তেমন জল দিতে হয় না, নিতান্ত খরা পরিস্থিতি না হলে।
৮) আমাদের দেশে বর্ষাকালে যত জল মাটিতে পড়ে তার অনেকটাই প্রায় ৭০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। এই জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করলে শীতের ও গরমের দিনে কাজে লাগে। এর জন্য বড় ফ্ল্যাটবাড়িগুলোতে রেনওয়াটার হার্ভেস্টিং করা দরকার। রাস্তাঘাট কংক্রিট বাঁধানো হলে জল পুরোটাই গড়িয়ে গিয়ে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। সিমেন্টের রাস্তার পাশে পাশে মাটির অংশ থাকলে জল অনেকটাই মাটিতে শুষে যেতে পারে। এইভাবে মাটির নীচের জলতল বজায় থাকে, বাড়েও। ইঁট বা পাথর কাঠ ইত্যাদি দিয়ে ছোট ছোট অস্থায়ী জলাধার নানা জায়গায় তৈরি করে রাখলে তাতেও জল ধরে রাখা যাবে। পুণেতে শহরের মাঝখানে ও আশেপাশে প্রচুর পাহাড়। এখানে বর্ষার দুই তিনমাস খুব ভারী বৃষ্টি হয়। তা বৃষ্টি হলে এই সমস্ত পাহাড়ে অনেক কুট্টি কুট্টি ঝর্ণা তৈরি হয়ে যায়। এবার তাতে যা হয় জলের তোড় মাটি ছোট চারা সব ভাসিয়ে নীচে এনে জমা করে। আবার বর্ষাকাল শেষ হবার তিন চার মাসের মাথাতেই পাহাড়ের গাছগুলো শুকাতে শুরু করে। তো মাঝে মাঝে বড় ও মাঝারি পাথর ঠেলেঠুলে নিয়ে জলের বয়ে যাবার পথে বসিয়ে দিলে জল আটকে যায়। একে বলে LBS বা লুজ বোল্ডার স্ট্রাকচার। ঝর্ণার বদলে তখন কুট্টি কুট্টি ঝোরা তৈরি হয়। বর্ষাকাল শেষ হলে জমে থাকা জল ক্রমশ মাটিতে শুষে গিয়ে পাহাড়ি মাটির নীচের অ্যাকুইফায়ার রিচার্জ করে দেয়।
সেই যে গরমকালে শুকনো ঘাস,গুল্ম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই ছাই মাটিতে মিশে মাটিকে সান্দ্র করে রেখেছে, এখন যেই রোদ্দুর উঠছে, বাতাসের ভেজাভাবে টান ধরছে অমনি সান্দ্র মাটি সেই জল টেনে জমা করছে পাহাড়ের বুকের ভেতরে। বছর পাঁচেক এমন চললেই শুকনো বাদামী পাহাড় ক্রমশ সুজলা সুফলা হয়ে ওঠে। যেমন হয়েছে ‘বানের হিলস’। গুগল করলেই বানের হিলসের সবুজ হয়ে ওঠার গল্প পাওয়া যাবে। এখানে লুজ বোল্ডার স্ট্রাকচার বানিয়ে জল আটকানোর একটা নমুনার ছবি দিলাম।
শেষ কথা হল গাছ লাগানো ও লালন পালন করা একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া। সঠিক পরিকল্পনা করে এগোলে এবং ধারাবাহিকভাবে কাজ করে গেলে তবেই ফল পাওয়া সম্ভব।