এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • প্রয়াত প্রতুল মুখোপাধ্যায় কেও "চটি চাটা" প্রমাণে ব্যস্ত কেউ কেউ

    kalyan sengupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ মার্চ ২০২৫ | ২৬৯ বার পঠিত
  • প্রয়াত প্রতুল মুখোপাধ্যায় কেও "চটিচাটা" প্রমাণে ব্যস্ত কেউ কেউ
    -- কল্যাণ সেনগুপ্ত

    সর্বপ্রথম কবি সুভাষ ও পরবর্তীকালে মহাশ্বেতা দেবী এবং ইদানিং প্রয়াত প্রতুল মুখোপাধ্যায় মমতা বিদ্বেষী বহুমানুষের রোষানলে পড়েছেন বিভিন্ন সময়ে। কারণ তারা মনে করেন, মমতার পক্ষাবলম্বন বা সমর্থন করা হচ্ছে চূড়ান্ত রাজনৈতিক অপরাধ এবং এবিষয়ে তাদের মতামতই চূড়ান্ত ও নির্ভুল। সিপিএমের কেতাবি তত্বের মতোই এদেরও অভিমত, মমতা ও বিজেপি দুইই অতীব নিকৃষ্ট রাজনৈতিক শক্তি ও নিশ্চিত বর্জনীয়। কিন্তু বাস্তবে ও কৌশলের কারণে, এরাজ্যে প্রকৃতপক্ষে বিজেপি নয় আসল লক্ষ্য হচ্ছে তৃণমূল তথা মমতা। সেই কৌশলেরই গোপন স্লোগান - "আগে রাম পরে বাম"।

    এরাজ্যের বহু মানুষ বিজেপির ভয়ংকর বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে ও বিরোধিতার কারণে মমতাকে সমর্থন করে বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে। ফলে চটি না চেটেও গাল খেতে বাধ্য হয় "চটিচাটা" বলে। আর সামাজিক মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে দৃঢ়ভাবে মত প্রকাশের ফলে উগ্র হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীদের পক্ষে যে সব শব্দ প্রয়োগে গালি সহ্য করতে হয়, সেসবের উল্লেখ করাই সম্ভব নয়। ন্যায় ও সত্যের পথে থাকলে গালি খাওয়া একপ্রকার স্বীকৃতি এবং অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। আর যারা এই লড়াইয়ে পেরে উঠছেনা, হেরে যাচ্ছে, তারাতো গালি দেবেই। এটাই স্বাভাবিক।

    প্রশ্ন উঠছে, প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের মতো মানুষ বা এমন উচ্চ মার্গের একজন গণ গায়ককেও এরা লোভী, সুবিধাবাদী বলতে ছাড়ছে না? এই গালি কেন? গায়ের জ্বালা মেটাতে? গায়ের জ্বালা মিটছে কিনা জানিনা, কিন্তু মানুষের চোখে এরা নিজেরা কি পরিমান নিচে নামছে, সেই বোধ বুদ্ধিও সম্ভবত হারিয়েছে।

    তৃণমূল শুধুমাত্র রাজ্যের গরীব মানুষ বিশেষত মহিলাদের ও ব্যাপকহারে সংখ্যালঘুদের সমর্থন পায়। শুধু তাই নয় বহু শিক্ষিত ও রাজনীতি সচেতন মানুষেরও সমর্থন পায়। মমতা বস্তির মেয়ে, কথাবার্তার কোন ছিড়িছাঁদ নেই, মুখ্যমন্ত্রী কেন সামান্য কাউন্সিলর হবার যোগ্যতাও আছে কিনা সন্দেহ - এমনতরো মতামত বা সিদ্ধান্ত থেকেই মমতা বিরোধিতা বহু সচ্ছল বা তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের। কিন্তু বাস্তবে তারা নিতান্তই সংখ্যালঘু এবং পরের পর ভোটে হার তাদের আরও ধৈর্যহীন এবং ক্রমশ অস্থির করে তুলছে চুরান্তরূপে মানসিকভাবে। মমতা নির্ভুল নয়, অনেক দোষত্রুটিও নিশ্চয়ই আছে তবুও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাঁকে সমর্থন করছে সবদিক বিবেচনা করেই। অধিকাংশ সংখ্যালঘু মানুষ বর্তমান সরকারের শাসনে নিশ্চিত নিরাপত্তার কারণেই মমতাকে সমর্থন করেন। এবং গরীব মানুষ বিশেষত মহিলারা বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে যে অর্থিক সাহায্যটুকু প্রতিমাসে পেয়ে থাকেন, সেটা তাদের কষ্টসাধ্য জীবনকে অনেকখানি সহজ করে তুলেছে। ফলতঃ মানুষ কৃতজ্ঞ চিত্তে এই সাহায্যকে গ্রহণ করছে ও ভোটেও তার প্রতিফলন ঘটেছে। এই অর্থ ব্যয় হচ্ছে সংসারের অনেক টুকিটাকি প্রয়োজনে ও সন্তানের শিক্ষায়। সেই অর্থ ব্যয় রাজ্যের অর্থনীতিকে অধিক শক্তিশালী করছে না কি? এটা স্পষ্ট, মমতা নিজে কোন বড় ভুল না করলে তাঁকে এখনই হারানো বেশ কঠিন।

    কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় একদা কমিউনিস্ট দল করতেন এবং পরবর্তীকালে মমতার রাজনৈতিক লড়াইকে সম্মান জানিয়ে তাঁকে অকুণ্ঠ আশীর্বাদ ও সমর্থন জানিয়েছেন এমনটাই শুধু নয়, মমতাকে "অগ্নিকন্যা" রূপে আখ্যায়িতও করেছেন। এর ফলেই বুদ্ধসরকার এমন একজন কালজয়ী কবির মৃত্যুর পরেও যথেষ্ট সম্মান না জানিয়ে সচেতন রূপে এড়িয়ে গেছে। মহাশ্বেতা দেবী রাজনৈতিকভাবে নকশাল আন্দোলনকে সমর্থন করে বহু সাহিত্য রচনা করে বহু স্বীকৃতি লাভ করেছেন ও জনমানসে প্রভুত প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। তিনিও মমতার প্রতিবাদী সত্বাকে গোড়া থেকেই সমর্থন করে এসেছেন। ফলে সিপিএম নেতৃত্ব তাঁকে কোনদিনই বিশেষ পছন্দ করেনি। কিন্তু তাঁর মৃত্যু মমতা শাসনকালে ঘটার ফলে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনে কোন ত্রুটি রাখেনি।

    বাদ্যযন্ত্রহীন এক বিরল আঙ্গিকে গান পরিবেশন করে খ্যাতির এক অসম্ভব উচ্চতায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিলেন গণগায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়। নিজের সুরে, কথায়, অনুবাদে বা বিখ্যাত কবিতায় সুর দিয়ে গানের এক অফুরন্ত সংগ্রহ রেখে গেছেন আমাদের সবার প্রিয় মানুষ, প্রতুল দা। তাঁর রচিত অমর সৃষ্টি - "আমি বাংলায় গান গাই .......", বিশ্বের আপামর বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রিয় গানরূপে স্বীকৃত। আমাদের প্রতুল দা প্রারম্ভে নকশাল রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট বোধ করলেও গানই ছিল তাঁর সংগ্রামের হাতিয়ার। অসংখ্য লড়াই আন্দোলনে তাঁর গান ছিল সবার অনুপ্রেরণা। তিনি রাজনীতি সচেতন হলেও তিনি নিছকই রাজনীতির মানুষ ছিলেন না। কিন্তু সময়ের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি পরিবর্তনের আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে বিজেপির সর্বগ্রাসী রাজনীতির বিরুদ্ধে মমতার লড়াইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কখনোই অন্ধ অনুরাগী ছিলেন না। প্রয়োজনে বিপরীত অবস্থানও নিয়েছেন কখনও। এহেন প্রতুলদাকেও মৃত্যুর পরে নানাভাবে নিন্দে মন্দ করা হচ্ছে যে, তিনি নাকি লোভী, সুবিধাবাদী ইত্যাদি। এসবের জন্য প্রতুলদার প্রতিভাকে যাঁরা সম্মান করেন বা তাঁকে মানুষ হিসেবে অত্যন্ত ভালবাসেন তাঁদের মধ্যে কোন কিছুরই ঘাটতি হবেনা, কিন্তু নিন্দুকরা সবার চোখে মানুষরূপে অত্যন্ত নিম্নস্তরের বলে নিশ্চিতভাবেই গণ্য হবেন।

    """"""""
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন