এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রানি ও কলতান - ১০ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ মার্চ ২০২৫ | ৭৭ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬
    ( ১০ )

    রোদের বেশ তাপ। মাঝে মাঝে গরম হাওয়া বইছে। প্রকাশ কলতানকে নিয়ে বাড়ির পিছন দিকটায় গেল। বোঝা যাচ্ছে এ দিকটা নিয়মিত ঘাস নিড়োন হয়। পরিপাটি ছাঁটা ঘাসে ঢাকা। মাঝে মাঝে অবশ্য মাথার টাকের মতো ন্যাড়া মাটি।

    হাঁটতে হাঁটতে ওরা একটা পাকা ছাদওয়ালা অন্তত কুড়ি ফুট লম্বা, দশ ফুটের মতো চওড়া চুন বালি প্লাস্টার খসা ঘরের সামনে এসে পৌঁছল। ঘরের দরজা ভেজানো আছে। তালা দেওয়া নেই। একপাশে একটা ছোট জানলা আছে। ঘরটার একপাশে একটা ডোবা মতো রয়েছে। এখন জল নেই, শুকনো।

    কলতান বলল, ' এইটা আপনাদের গোডাউন ?
    --- ' হ্যাঁ, টুকিটাকি জিনিস রাখা হয় আর কি ... '
    --- ' টুকিটাকি বলতে ? '
    --- ' এই ... গাড়ির কিছু স্পেয়ার স্পার্টস রাখা হয় ... আমাদের লাগে ... '
    --- ' ব্যস ? আর কিছু নেই ? '
    --- ' আর ... কিছু সিমেন্ট, বালির বস্তা, কাঠের বিম এইসব আনইউজড মেটিরিয়াল আছে কিছু ... কিছু ফেলে দেওয়া শিশি বোতলও আছে ... '
    --- ' ও আচ্ছা ... দেখি একটু ঘরটা ... বেশ একটা অ্যান্টিক লুক আছে ... প্রকাশ কিছু বলবার আগেই কলতান দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়ল।
    প্রকাশ বলল, ' সাবধান মিস্টার গুপ্তা ... অনেক বেজি আছে কিন্তু ... '
    --- ' হ্যাঁ ... সাবধানই আছি ... আপনি বাইরেই দাঁড়ান ... '
    --- ' হাঁ, ঠিক আছে বাঁদিকে সুইচ বোর্ড আছে ... লাইট জ্বেলে নিতে পারেন ... '
    --- ' আচ্ছা আচ্ছা... থ্যাঙ্ক ইউ প্রকাশজি ... '

    প্রকাশ বাইরে দাঁড়িয়ে রইল। কলতান ভিতরে ঢুকে সুইচ টিপে আলো জ্বালিয়ে দিল। অবশ্য না জ্বালালেও চলত। জানলা দিয়ে ভালই আলো আসছে। গুদামের মাঝখানটা সিমেন্টের, এখানে ওখানে ক্ষয়ে গেছে এবং একটু এবড়ো খেবড়ো। কিন্তু ফাঁকা এবং বেশ পরিষ্কার, বোধহয় ঝাঁট টাঁট দেওয়া হয়েছে। বোধহয় মাঝেমাঝেই পরিষ্কার করা হয়। ঝাঁট দেওয়ার কথায় তিন্নির কথা মনে হল। তার এ ঘরে যাতায়াত থাকলেও থাকতে পারে। এ দিকে হাত দেখিয়ে আগের দিন কি একটা বলতে যাচ্ছিল। তার মা কথাটা চাপা দিল।

    গুদামে তিনদিক ঘিরে নানারকম বস্তা বোঝাই জিনিসপত্র। সিমেন্ট বালির বস্তা মনে হচ্ছে। নানা আকারের এবং প্রকারের কাঠ। নানারকম গাদা গাদা লোহার যন্ত্রপাতির টুকরো দেখা যাচ্ছে। দুদিকে মোটামুটি পাঁচফুট উঁচুতে কাঠের সরু পাটাতন মতো করা আছে। যদিও খুবই পুরনো এবং ভঙ্গুর অবস্থায়। কলতান ঘরের চারদিকে চোখ বোলাতে লাগল।

    একটা দিক নানারকম শিশি বোতলে ঠাসা। সবই মনে হচ্ছে খালি। কলতান একদিকের তাকের দিকে এগিয়ে গিয়ে শিশিগুলোর দিকে চোখ রাখল। রকমারি খালি বোতলের মধ্যে অন্তত পনেরটা একই আদলের বোতলে চোখ আটকে গেল কলতানের। কোনটারই গায়ে লেবেল নেই। চোখের পলকে একটা বোতল তুলে নিয়ে তার কাঁধের ঝোলায় ফেলে দিয়ে চেন টেনে দিল কলতান। মোবাইলের টর্চ জ্বেলে ঘরের মেঝেয় চারদিকে চোখ বোলাতে লাগল। শিশি বোতল রাখার তাকের নীচে কি যেন একটা চকচক করে উঠল। বাজপাখির ছোঁ মারার মতো সেটা তুলে নিল কলতান। একটা লজেন্স বা টফির মোড়ক, টফিটা মুখে পুরে দিয়ে যেটা নীচে ফেলে দেওয়া হয়। কলতান ঘরের লাইট নিভিয়ে দিল, মেঝের অংশটার পরিষ্কার দৃশ্য পাবার জন্য। আলো নেভানো মাত্র কলতান আন্দাজ করল প্রকাশ যে কোন মুহুর্তে ঘরে এসে ঢুকবে। সে মোবাইলের আলো ফেলে ঘরের মাঝখানে এল। বাল্বের আলোয় যেটা তার চোখে পড়েনি, এখন পড়ল --- একটা প্লাস্টিকের বোতাম, যে ধরণের বোতাম ছেলেদের জামায় লাগানো থাকে। এক পলক সময়ের মধ্যেও সে বুঝতে পারল বোতামে খুব ছোট একটা চুল জড়িয়ে আছে। রুমাল দিয়ে তুলে খুব সাবধানে তার ঝোলার একটা খাপে ফেলল দ্রুতগতিতে এবং মোবাইলের টর্চ বন্ধ করে দিল।

    ঠিক তখনই প্রকাশ এসে ঘরে ঢুকল।
    --- ' আপনি ঠিক আছেন তো স্যার ? হঠাৎ লাইট অফ হয়ে গেল। আমি ভাবলাম ... কি ব্যাপার ... '
    --- না না ... আয়্যাম অ্যাবসোলিউটলি ওকে প্রকাশজি ... আসলে আমার আবার সবকিছু খুঁটিয়ে না দেখলে মন ভরে না ... আপনাকে বাইরে দাঁড়াতে বললাম, কিছু মনে করলেন না তো ? '
    --- ' আরে না না ... আপনি আমার গেস্ট, আপনার চয়েসকে মানতেই হবে ... এটা আমাদের খানদানের পরম্পরা ... আর তাছাড়া কিউরিওসিটি না থাকলে আপনি এতবড় ডিটেকটিভ হলেন কি করে ... ঠিক কিনা ... '
    --- ' সে যা বলেন ... ঠিক আছে চলুন। একটা বেজে গেল ... আপনার বেগন ভর্তা আর মাছের ঝাল খাবার জন্য আমি ওয়েট করে আছি কখন থেকে ... '
    গুদাম ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসে বাঁদিকে তাকিয়ে কলতান বলল, ' বর্ষাকালে ওই ডোবাটা নিশ্চয়ই জলে ভর্তি থাকে ? '
    --- ' হ্যাঁ তা থাকে ... সেটাই তো ন্যাচারাল ... '
    --- ' হ্যাঁ সে তো বটেই। না ... বলছি যে জলে টইটুম্বুর থাকলে অনেক কিছু বেশ টুক করে ফেলে দেওয়া যায় ওর মধ্যে ... জল শুকোলে হয়ত সেগুলো আবার খুঁজে পাওয়া যেতে পারে ... যদি খুঁজে দেখা হয় ... তাই না ?
    প্রকাশ বলল, ' কিছু বুঝলাম না স্যার ... '
    --- ' না ... এখন তো আর বর্ষাকাল নয়। এখন জলে টলে ফেলার ব্যাপার নেই। এখন সবই ডাঙায় ডাঙায় ... '
    প্রকাশ বোকার মতো হেসে বলল, ' ভাল বললেন কিন্তু ... হ্যাঃ হ্যাঃ হ্যাঃ ... '
    কলতান হঠাৎ বলল, ' সহদেবের মেয়ের, মানে রানির ব্যাড লাক আপনি সেদিন বড়বাজারে ছিলেন। আপনি সেদিন বাড়িতে থাকলে নিশ্চয়ই এ ঘটনাটা ঘটত না ... '
    --- ' কি আর বলব ... ভেরি আনফরচুনেট ... তবে আমি থেকেই বা কি করতাম। ব্যাপারটা তো হয়েছে বাইরে ... মাহিরের মধ্যে তো নয় ... '
    --- ' হ্যাঁ, তা বটে তা বটে ... '
    বলে একটা সম্পূর্ণ অন্য কথা বলল।
    --- ' এই সিজনটা কিন্তু অ্যালার্জিক ইনফেকশানের পক্ষে খুব খারাপ ... আমার তো খুব তাড়াতাড়ি অ্যাটাক হয়ে যায়। কাফ সিরাপও ইউজ করতে হয় হামেশাই... '
    --- ' তাই নাকি। এ একটা বিশ্রী প্রবলেম। ভাগ্য ভাল, আমার ওসব ট্রাবল একেবারেই নেই ... '
    --- ' দেন ইউ আর লাকি এনাফ প্রকাশজি। যাই হোক চলুন এখন ... ওই বেগন ভর্তা আর মাছের ঝাল ... হমম্ ... '

    ( ক্রমশ )

    ****
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন