প্রশ্ন: কৃষক আন্দোলন নিয়ে আপনাদের কী বক্তব্য? রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্যে এই প্রসঙ্গ খুব একটা উঠে আসছে না।
অচিন চক্রবর্তী: এটা নিয়ে অনেকটাই লেখালিখি হয়েছে। আমরা নিজেরাও কিছু সংবাদপত্রে লিখেছি। সেখানে আমার বক্তব্যটি আমি অনেকটাই বলেছিলাম। আবার বলি সেটা, মানে— কেন কৃষকদের ব্যাপারটা রাজনীতিতে সেভাবে উঠে আসেনি। আসলে কৃষকদের কনস্টিটিউয়েন্সিটা কিন্তু পাঞ্জাব, হরিয়ানা বাদ দিলে, বেশির ভাগ রাজ্যেই আস্তে আস্তে সংকুচিত হচ্ছে। তার মানে এই নয় যে তাঁদের সংখ্যাটা ভীষণ ভাবে কমে যাচ্ছে। আংশিক ভাবে হলেও এখনও অনেকে কৃষির উপর নির্ভরশীল আছেন। এবং কৃষির উন্নয়ন বা অবনয়নের সঙ্গে তাঁদের ভাগ্যও অনেকটা জড়িত আছে। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে যাকে আমরা কনস্টিটিউয়েন্সি বলি, অর্থাৎ একটা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করা, কিংবা একটা স্বার্থগোষ্ঠী হিসেবে কাজ করা, সেটা কিন্তু কৃষকদের ক্ষেত্রে আস্তে আস্তে অনেকটাই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।
তা হলে তাঁরা কি ভোট দেন না? তাঁরাও তো ভোট দেন। হ্যাঁ, তাঁরা ভোট দেন। কিন্তু দেখবেন যে বিভিন্ন রাজ্যে তাঁদের ভোট আকর্ষণ করার জন্য কৃষির কথা খুব কম আসে, যতটা আসে অন্য কিছু। এমনকি সেখানে কোথাও হয়তো জাতপাতটা খুব বেশি আসে, আবার কোথাও হয়তো অন্য কিছু আসে, ধর্মও আসে। অর্থাৎ, আজকে যদি বলা হয় যে শিল্পে কর্মসংস্থান হবে, সেটা একটা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে একভাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকদের জন্য সাধারণত যেটা বলা হয়, সেটা হচ্ছে ওই— কিছু ঋণ মকুব করে দেব, কিংবা এই এখন যেমন কৃষকদের জন্য প্রত্যেক দলের ইস্তাহারেই অল্প অল্প করে কিছু বলা আছে। এর বাইরে কিন্তু কৃষি নিয়ে ভাবনাটা রাজনৈতিক মহলে খুব বেশি দেখা যায় না।
অথচ কৃষি নিয়ে ভয়ংকর রকমের একটা কাঠামোগত সমস্যা গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে কমবেশি সব রাজ্যেই রয়েছে। যদিও রাজ্য থেকে রাজ্যে এর চেহারাটা একটু আলাদা। সেই সমস্যাটার দিকে সাধারণত কেউ লক্ষ রাখেন না। সাধারণত কৃষিকেও ওই খয়রাতিরই একটা অংশ হিসেবে দেখে থাকেন সবাই। কিন্তু শুধু খয়রাতির অংশ হিসেবে কৃষিকে ভাবলে হবে না। কৃষিতে ভর্তুকি নিয়ে একটা বিভ্রান্তি চলেই আসছে। ভর্তুকিটা কৃষিতে অবশ্যই দিতে হবে। পৃথিবীর কোথাও এখন কৃষিকাজ ভর্তুকি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ আপনার আমার মতো মানুষজন তারা সস্তায় কৃষিপণ্য পেতে চায়, সস্তায় খাদ্য পেতে চায়। অথচ কৃষির উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। ফলে একটা ভর্তুকির প্রয়োজন আছে সবসময়। এখানে সরকারের যে ভূমিকাটা, সেটা হচ্ছে বণ্টনের ভূমিকা, অর্থাৎ, কার দিকে কতটা সুযোগ এগিয়ে দেব। এখন যদি দেখা যায়, শহরাঞ্চলের যারা ভোক্তা, সরকারের কাছে তাদের গুরুত্ব অনেক বেশি, তা হলে কিন্তু কৃষি খুব বেশি গুরুত্ব পায় না।
কৃষিতে ভর্তুকি থাকাটা উচিত বলেই আমি মনে করি। কারণ নইলে কৃষি বাঁচবে না। তা হলে অন্য দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করতে হবে। সাময়িক ভাবে আমদানি করাটাতে কোনও অন্যায় নেই, ভুল নেই। কিন্তু দীর্ঘকাল আমদানি-নির্ভর থাকা ভারতবর্ষের মতো একটা এত বড় দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে কৃষিকাজ চালিয়ে যেতে হবে। এবং কৃষিকাজ চালিয়ে যেতে চাওয়াটা সামগ্রিক ভাবে একটা সামাজিক প্রশ্ন, এটা শুধু কৃষক-প্রশ্ন নয়। এটা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে।
অর্থাৎ, যখন কৃষিবিলের মাধ্যমে বিশেষ কিছু স্বার্থকেই আমি উদ্দেশ করছি, তখনই গোলমালটা শুরু হয়ে যাচ্ছে। আমি কিন্তু সামগ্রিক ভাবে সব শ্রেণিকে মিলিয়ে তখন আর দেখছি না। একটা বিশেষ শ্রেণির দিকে তাকিয়েই আমি কৃষিবিলটা আনছি। সমস্যাটা তখনই হয়ে যাচ্ছে। এই নীতির বিরুদ্ধে হয়তো ব্যাপক একটা উত্থানের প্রয়োজন ছিল, হতে পারত। কিন্তু সেটা পাঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। এটা নিয়ে আরও বিস্তৃত আলোচনার প্রয়োজন আছে।
দর্শকের প্রশ্ন: বিভিন্ন শ্রেণি যদি নিজস্ব শ্রেণি রাজনীতি তৈরি করতে না পারে, যেমন, কৃষকদের নিজস্ব শ্রেণি রাজনীতি, তা হলে কি আদৌ এই মানুষগুলোর কথা রাজনীতিতে আসতে পারে?
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়: অচিন যা বললেন সেটার সূত্র ধরেই বলি, কৃষকদের শ্রেণি রাজনীতির প্রশ্নে বলতে পারি— কৃষককে একটা শ্রেণি হিসেবে দেখার সমস্যা আছে। কারণ কৃষক এক রকম নয়, কৃষকের অনেক স্তর রয়েছে। এবং ভারতবর্ষে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রদেশে, বিভিন্ন রাজ্যে এই স্তরবিন্যাসটাও ভীষণ আলাদা। পাঞ্জাব, হরিয়ানায় কৃষকদের যে শ্রেণিবিন্যাস আর আমাদের পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের যে শ্রেণিবিন্যাস— দুটো একেবারেই মেলে না, ঐতিহাসিক ভাবেই মেলে না, খুবই আলাদা। পশ্চিমবঙ্গে কেন কৃষি আন্দোলন খুব একটা জোরদার হচ্ছে না, নির্বাচনী বিষয় হয়ে উঠছে না, তারও একটা কারণ সম্ভবত এই তফাতটার মধ্যেই আছে। এটা একদিক থেকে খুব তাৎপর্যপূর্ণ যে পশ্চিমবঙ্গে তো প্রান্তিক চাষি, খেতমজুর— এঁদের গুরুত্ব ভীষণ বেশি, সংখ্যাগত ভাবে এবং সামাজিক কাঠামোতেও, অথচ এ রাজ্যে দীর্ঘকাল অবধি, এমনকি বামপন্থী দলগুলির মধ্যেও, খেতমজুরদের সংগঠন বিশেষ তৈরি হয়নি। তৈরি হয়েছে অনেক পরে, সাম্প্রতিক কালে এবং তাও এখনও অবধি খুবই দুর্বল। অথচ পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের শ্রেণি রাজনীতি যদি তৈরি করতে হয়, এবং যদি তাকে বড় রকমের রাজনীতির বিষয় হয়ে উঠতে হয়, তা হলে এই প্রান্তিক চাষি, খেতমজুর, একেবারে নীচের তলার সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষিনির্ভর মানুষ, তাঁদের বাদ দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। এইখানে সম্ভবত আমাদের শ্রেণি-রাজনীতিকেও ভেঙে ভেঙে দেখার দরকার হবে।
কুমার রাণা: এই কৃষক প্রশ্নে অচিন বা অনির্বাণদা যেটা বললেন যে সেই সূত্র ধরে বলি, অন্য জায়গার তুলনায় পশ্চিমবাংলার তো একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। এখানে খাঁটি কৃষক বলতে কাউকে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। একটা লোক, শুধু চাষ করে তার জীবন-জীবিকা চলছে, এমনটা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। এটা আবার দুরকম হয়। এক, যাঁরা একটা পজিটিভ ডাইভার্সিফিকেশন করছেন, অর্থাৎ, চাষের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা বা কোনও ছোট চাকরি, বা বড় চাকরি, এইগুলো করছেন। অনেকে আবার তার সঙ্গে জল বিক্রি ইত্যাদি করছেন। এই ভাবে উন্নতি ঘটেছে একটা দলের। এঁদের ক্ষেত্রে চাষেই যে খুব উন্নতি ঘটছে তা নয়, কিন্তু চাষের সূত্র ধরেই উন্নতিটা ঘটছে। আর একটা হল, চাষের অবনতির ফলে যখন মজুরি করতে হচ্ছে। কে বলতে পারে, আমরা জানি না, এই যে কলকাতায় পাঁচজন শ্রমিক ম্যানহোলে নেমে মারা গেলেন, এমনও হতে পারে যে চাষ থেকে উৎখাত হয়েই তাঁদের এখানে আসতে হয়েছিল। যাঁরা গ্রামে ঘোরাঘুরি করেন তাঁরা জানেন, এরকম বহু মানুষ আছেন, যাঁদের চাষ থেকে যথেষ্ট আয় হচ্ছে না, কুলোচ্ছে না বলে কৃষিকাজ থেকে সরে আসতে হয়েছে। এটা হচ্ছে নেগেটিভ ডাইভার্সিফিকেশন। যে কাজটা তিনি করছিলেন তাঁকে তার চেয়ে কম আয়ের বা বেশি পরিশ্রমের একটা কাজে যেতে হচ্ছে।
এর মাঝখানে একটা জিনিস ঢুকে পড়েছে, যেটা হচ্ছে জাতি। জাতির একটা ভূমিকা আছে, এবং সেই ভূমিকাটার সঙ্গে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে, মন্দির থেকে শুরু করে, পরিষ্কার করে বলতে গেলে মুসলমান বিদ্বেষ— ভয়ানক একটা মুসলমান বিদ্বেষ আমরা দেখতে পাই, যেটা লুকিয়েছিল, সেটা স্পষ্ট বেরিয়ে আসছে— এগুলো সব মিলে আছে। এই সব জটিল জিনিসকে আমরা যদি খুব সরল একটা দিক থেকে ধরতে চেষ্টা করি, তা হলে মুশকিল হবে। এটাই হচ্ছে শ্রেণি রাজনীতির মূল অন্তরায়। নিশ্চয় আমি বিশ্বাস করি শ্রেণি রাজনীতি ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। কিন্তু সেই শ্রেণির বিশ্লেষণটা কী হবে, সেটা আমাদের ভাবতে হবে। এগুলো নিয়ে আরও অনেক আলোচনা করা দরকার।
প্রশ্ন: বিভিন্ন দলের নির্বাচনী ইস্তাহারগুলোতে মেয়েদের বিষয়টি এসেছে। তাঁরা কি কোনও রাজনীতি তৈরি করতে পেরেছেন?
কুমার রাণা: কোন মেয়েদের কথা বলা হচ্ছে, সেটা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবাংলার আদিবাসীরা হচ্ছেন ছয় শতাংশ। কিন্তু মোট খেতমজুরের কুড়ি শতাংশই হচ্ছেন আদিবাসী মেয়েরা। সুতরাং মেয়েদের একটা হোমোজিনিয়াস গ্রুপ হিসেবে দেখার সমস্যা আছে।
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়: একেবারেই তাই। আসলে এটা এত বড় একটা প্রশ্ন যে, এ বিষয়ে অনেক বিশদ আলোচনার দরকার। ঠিক যেমন, বামপন্থীদের ভূমিকা যথাযথ কি না, বা এই ধরনের আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হবে— এ রকম কিছু প্রশ্ন শ্রোতাদের কাছ থেকে উঠে এসেছে, যেগুলো সংক্ষিপ্ত আলোচনার বিষয় নয়। তবে কৃষি, মেয়েদের সমস্যা, বামপন্থীদের ভূমিকা— এইগুলো ধরে একটা জিনিস সংক্ষেপে বলতে পারি। সেটা হচ্ছে, সম্ভবত আমাদের ভাবতে হবে যে, বিভিন্ন ধরনের যে আন্দোলন চলছে— মেয়েদের আন্দোলনেরও অনেক ভাগ আছে, বিভিন্ন ধরনের ‘মেয়েদের’ সমস্যা নিয়ে নানারকম আন্দোলন দীর্ঘকাল ধরে চলছে, কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন আমরা ভারতবর্ষে দেখেছি, পশ্চিমবঙ্গেও দেখেছি— এই বিভিন্ন আন্দোলনের পারস্পরিক সংযোগ তৈরি করাটা খুব দরকারি কাজ। এবং আমি অন্তত মনে করি, সেটা বামপন্থী আন্দোলনের একটা বড় দায়িত্ব। এই সংযোগ ছাড়া আলাদা আলাদা করে কিছু আন্দোলন হবে এবং শ্রেণি রাজনীতি কেবল তার নিজের খোপেই বিচ্ছিন্ন থাকবে, এভাবে চলবে বলে একেবারেই মনে করি না।
কুমার রাণা: আর-একটা জিনিস আমার মনে হচ্ছে। সেটা বামপন্থীদের কর্তব্য বলেই আমি মনে করি। বামপন্থীরা তো বটেই, তা ছাড়া আমরা যারা কোনও দল করি না, দলীয় রাজনীতির মধ্যে নেই, আমাদের একটা বড় কাজ আছে। আমি একটা খুব বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বলি। আমরা জানি পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান জনসংখ্যার বৃদ্ধির হারটা কমছে। মুসলমানদের জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়াটা, তারা চারটে চারটে বিয়ে করছে— এর কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। এবং চারটে করে বিয়ে করলে যে জনসংখ্যা বেড়ে যায় না এগুলো ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, যখন এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে যাব, পশ্চিমবাংলার এটা দুর্ভাগ্য, এই আলোচনাগুলো কিন্তু বিশেষজ্ঞদের আলোচনা হয়ে দাঁড়াবে। ধরা যাক টোটাল ফার্টিলিটি রেট, এ নিয়ে আমরা যখন বলতে যাই, লোকে তাতে উৎসাহ দেখান না। যেটা সমস্যার দিক, বা যেটা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, লোকে যাতে সেটা জেনে নিতে পারেন, আমি কেন সেই চেষ্টা করব না? আমার কাছে এটার কোনও ব্যাখ্যা নেই। আমার মনে হয়, একটু সচেতন ভাবে এটা করা দরকার। আমাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেই এটা হওয়া উচিত ছিল, বা সংবাদপত্রগুলোরও এক্ষেত্রে একটা ভূমিকা ছিল। কিন্তু এটা খুব একটা হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।
এখানে অ্যাক্টিভিস্টদের একটা বড় কাজ আছে। এই যে মিথগুলো তৈরি হয়েছে, পুরোটা আমরা ভাঙতে পারব না। তার কারণ গ্রামের ওই মানুষটি যিনি কোনও ক্রমে নাম সই করছেন, তাঁকে তো পরিসংখ্যান বোঝানো সম্ভব নয়। এবং লেখাপড়ার সামগ্রিক মানটা যদি না বাড়ে তা হলে তো অনেক জিনিসই আমরা আলোচনার মধ্যে সত্যি সত্যি আনতেই পারব না। কিন্তু তার বাইরেও যাঁরা এইটুকু জানেন, জানতে পারেন, তাঁরাও যে বোঝার চেষ্টা করেন না, তাঁদের বোঝাবার একটা চেষ্টা আমরা যদি করি।
অচিন চক্রবর্তী: এই বিষয়গুলি নিয়ে প্রিন্ট মিডিয়ায় আমরা তবু অনেক সময় বক্তব্য রাখার স্থান পেয়ে থাকি। তবে প্রিন্ট মিডিয়ার তুলনায় ভিজুয়াল মিডিয়ার প্রভাব অনেক বেশি বলে মনে হয় অন্তত। প্রিন্ট মিডিয়ার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। কারণ উত্তর-সম্পাদকীয় লেখা কত জন পড়েন! সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিশ্চয়ই পড়েন না। কিন্তু তাই বা হবে কেন? এই বিষয়গুলি তো আমার নিজস্ব জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত। আমি কীভাবে আছি, আমার পাশের লোকটা কীভাবে আছে, এটা জানতে ইচ্ছে করে বলেও তো আমি উত্তর-সম্পাদকীয় পড়তে পারি। এই যে আমরা বলি না—ম্যানেজমেন্ট পড়তে যাওয়া, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যাওয়া— কেন? না, একটা ভাল চাকরি হবে বলে। কিন্তু বিদেশে যেটা হয়, সেখানে চাকরির নিশ্চয়তা কম থাকা সত্ত্বেও কিন্তু কেউ হয়তো উইমেন্স স্টাডিজ পড়তে যাচ্ছেন, কেউ হয়তো কম্প্যারেটিভ রিলিজিয়ন পড়তে যাচ্ছেন। কেন? না, ধর্মগুলোকে আর-একটু ভাল ভাবে বুঝলে আমি আর-একটু ভাল অবস্থান পেতে পারি।
কুমার রাণা: আমরা কেরালাতেও এমনটা দেখতে পাই।
অচিন চক্রবর্তী: হ্যাঁ। আমি বলছি না যে আমাদের মতো দেশে, আমরা এটা অ্যাফোর্ড করতে পারি, এত রকমের জিনিসপত্র জানা হয়তো সম্ভব নয়, কিন্তু আবার এটাও ঠিক যে এত রকমের জানতে হচ্ছে না কিন্তু। যেগুলো নিয়ে আমরা ভাবিত, সেইগুলো তো সাধারণত জেনে যাই আমরা। একটু চোখকান খোলা রাখলে তো জানা হয়েই যায়। অর্থাৎ, আগে কিন্তু ভাবতে হবে। এই ভাবনাটা জরুরি। ভাবার চর্চাটা থাকলে জেনে যাওয়া যায়, যেটা কিনা কেরালায় হয়ে থাকে।
সংক্ষেপে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে, মনভাসি ও তিন প্যানেলিস্টকে ধন্যবাদ।
আমার ব্যক্তিগত মত --জনমানসে এই কথাটা ভাল করে চারিয়ে দেয়া দরকার যে কৃষিতে উৎপাদন বাড়ার লক্ষ্যে যত আধুনিকীকরণ হবে, যত লেটেস্ট টেকনোলজির প্রয়োগ এবং বিনিয়োগ হবে ততই উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। তাই কৃষকদের সাবসিডি না দিলে অকৃষি উপভোক্তাদের জন্যে খাদ্যদ্রব্য আগুন হয়ে উঠবে। ম্যানিলার মত ফুড রায়ট হবে। তাই ফুড সিকিউরিটি এবং সুষম বন্টনের স্বার্থে পিডিএস এবং এমএসপি বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
এটা আমেরিকা ও ইউরোপের উদাহরণ দিয়ে বিশদ বলা দরকার, যেমন অচিন বলেছেন, যে সবদেশেই কৃষককে ভর্তুকি দেয়া এখন গুড প্র্যাকটিস। আমেরিকায় বিপুল উৎপাদন সত্ত্বেও কৃষকদের সরকারি ভর্তুকির উপর নির্ভরতার কথা ডেটা দিয়ে প্রচার করা উচিৎ। দেখাতে হবে বর্তমান সংস্কারের নামে যে মডেলটি মোদী সরকার পেশ করেছে ওটা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বের বহু ব্যবহৃত পুরনো মডেল। এটা কোন ম্যাজিক মন্ত্র নয়।