নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যে, ২০০২ সালে ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখে, অযোধ্যা থেকে ট্রেনে চড়ে ফেরার পথে গোধরায় ট্রেনের মধ্যে আগুনে পুড়ে ৫৯ জন কর সেবকের মৃত্যু হয়। কোনও তদন্ত ছাড়াই মোদী সেদিন জানান, মুসলমান জঙ্গিরা ট্রেনে আগুন লাগিয়েছিল। এরপর গুজরাটে পরিকল্পিত ভাবে যে ব্যাপক হিংসা ছড়িয়েছিল তাতে প্রায় ২০০০ জনের মৃত্যু হয়। দাঙ্গা (গণহত্যা) হলে, বিভাজন হলে বিজেপির ভোট বাড়ে। সেই থেকে ওই রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপি কখনও হারেনি।
গুজরাত দাঙ্গার সময় রাস্তায় উন্মত্ত হিন্দু গোষ্ঠীর লোকেরা শুধু স্থানীয় মুসলমানদেরই হত্যা করেনি, এক হাজারের বেশি ট্রাকও জ্বালিয়ে দিয়েছিল। জেনারেল মোটরস কারখানায় তৈরি জাহাজে পাঠানো ‘ওপেল অ্যাস্ট্রা’ গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে হেডলাইন হয়েছিল। এক হিসাবে দেখা যায় দাঙ্গায় গুজরাটের দু’হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল। ওই সাম্প্রদায়িক হিংসা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের ভীতিগ্রস্ত করে তোলে। শিল্পপতিদের ধারণা ছিল পরে গোলমাল আরও বাড়বে। সেই বছর সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে গুজরাতে ফরেন ডায়রেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) আসা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
সাংবাদিক বিনোদ কে জোস জানিয়েছেন, পরে ভারতের কর্পোরেট জগতের মাথারা প্রকাশ্যে দাঙ্গা বা গণহত্যার জন্য প্রধান প্রশাসকের প্রতি তাদের রাগ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের সিইও দীপক পারেখ বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ভারতের মুখ পুড়েছে এবং গুজরাটে যা ঘটেছে তাতে তিনি লজ্জিত। ইনফোসিসের নারায়ণ মূর্তি এবং উইপ্রোর আজিম প্রেমজিও কড়া বিবৃতি দেন। গুজরাতের মুসলমানদের যন্ত্রণা নিয়ে ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে সিআইআই-এর জাতীয় বৈঠকে শক্তি সংস্থা থার্ম্যাক্সের সভাপতি অনু আগার আবেগদীপ্ত ভাষণের পর শ্রোতারা উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে অভিবাদন জানান।
দাঙ্গার দশ মাস পর বিজেপি বিধানসভা ভোটে গুজরাটের মানুষের বিপুল সমর্থন নিয়ে জয়ী হলেওi মোদী একেবারে চাপ মুক্ত ছিলেন না। ভোটে জিতে এসেও তাঁকে শিল্পপতিদের কড়া সমালোচনা শুনতে হয়েছে, ওদিকে বিধ্বংসী হিংসার পর রাজ্যের অর্থনীতি ধুঁকছে। তবে তিনি জানতেন, দাঙ্গা হোক আর না হোক বড় শিল্পপতিদের কাছে গুজরাট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মোদী তাঁর সরকারের (অপকর্মের) সমালোচনাকে গুজরাত এবং গুজরাতিদের উপর আক্রমণ বলে অভিযোগ করলেন। এরপর ২০০৩ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে উন্নয়নের ‘গুজরাট মডেল’ গড়ে তুললেন এবং দশের দশকের শেষ দিক থেকে তিনি রাজ্যের উন্নয়নের অলৌকিকতা নিয়ে প্রচার শুরু করলেন। এই কাজে তিনি বহু অর্থের বিনিময়ে পৃথিবীর প্রথম সারির মার্কিন কোম্পানি ‘অ্যাপকো ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ii -কে নিয়োগ করলেন। কর্মদক্ষ প্রশাসন, দ্রুত নির্মাণ ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিয়ে সরকার মিডিয়াকে অবিরত অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী সরবরাহ করা শুরু হলো।
ইমেজ ফেরাতে দরবার
বিনোদ কে জোস লিখেছেন, ভোটে জেতার পর মোদী তাঁর ইমেজ বদলাতে দিল্লি এসে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিস (সিআইআই)-এর সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁর বিশেষ অনুরোধে ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিআইআই দিল্লির অডিটোরিয়ামে “মিটিং উইথ নরেন্দ্র মোদী, দ্য নিউ চিফ মিনিস্টার অফ গুজরাত” শিরোনামে এক বিশেষ অধিবেশন ডেকেছিল। স্টেজে মোদীর সঙ্গে সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল তরুণ দাস ছাড়া ছিলেন দুই বড় শিল্পপতি জামশিদ গোদরেজ এবং রাহুল বাজাজ। শিল্পপতিরা তাঁকে মোটেই বন্ধুত্বমূলক অভ্যর্থনা জানাননি। আগের মাসে গুজরাতের নির্বাচনে তাঁর বিজয় উদযাপন করতে মুম্বাইয়ের সভায় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক অধ্যাপক দাঙ্গা বা গণহত্যার জন্য তাঁকে অপদস্থ করেছিলেন। সেই ঘটনার সূত্রে গোদরেজ বলেন, মানুষের ভোটে তাঁর বিজয়ের রায়কে সম্মান জানিয়ে তিনি যেন সমস্ত গুজরাতির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করেন।
বাজাজ ছিলেন আরও স্পষ্টভাষী। তিনি বলেন, গুজরাতের জন্য ২০০২ সাল হল হারিয়ে যাওয়া বছর। শেষে মোদীর দিকে তাকিয়ে বলেন: কাশ্মীর, উত্তর-পূর্ব, উত্তরপ্রদেশ, বিহারে কেন বিনিয়োগ আসে না? শুধু পরিকাঠামোর অপ্রতুলতাই নয়, নিরাপত্তাহীনতার বোধও তার কারণ। আশা করি গুজরাতের ক্ষেত্রে তা ঘটবে না। বলেন, গত বছরের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা প্রবাহের জন্যই এসব কথা মনে পড়ছে। জানতে চাই আপনি কী মনে করেন? আপনি কীসের পক্ষে? কারণ নেতৃত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার দল এবং গুজরাত সরকারের আপনি অবিসংবাদী নেতা। আমরা আরও ভাল করে আপনাকে জানতে চাই। আমরা সব ধরনের সরকারের সঙ্গেই কাজ করতে তৈরি। কিন্তু সমাজের জন্য কোনটা ভালো, কোনটা তার পক্ষে কাজ করে তা নিয়ে আমাদের নিজেদেরও মতামত রয়েছে।
মোদী ধৈর্য ধরে তাঁদের কথা শুনছিলেন, মন যতই শান্ত হোক। বললেন: এর উত্তর খুঁজতে হলে আপনি এবং আপনার ছদ্ম-ধর্মনিরপেক্ষ বন্ধুরা গুজরাতে আসতে পারেন। রাজ্যের মানুষের সঙ্গে কথা বলুন, গুজরাত দেশের মধ্যে সবচেয়ে শান্ত রাজ্য। উত্তেজনায় ঘর থমথম করছিল। গোদরেজ ও বাজাজের দিকে ফিরে তিনি জিজ্ঞেস করেন, “গুজরাতকে কলঙ্কিত করায় অন্যদের কায়েমি স্বার্থ রয়েছে, কিন্তু আপনাদের স্বার্থ কী?”
তাঁর মনের মধ্যে জমে ওঠা সেই ক্রোধ মোদী গুজরাতে বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সিআইআইকে এক হাত নেবেন বলে তৈরি হলেন। কয়েকদিনের মধ্যেই আদানি গোষ্ঠীর গৌতম আদানি সহ তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা একটি প্রতিযোগী সংগঠন তৈরি করলেন, যার নাম দেওয়া হল ‘রিসার্জেন্ট গ্রুপ অফ গুজরাত’ (আরজিজি)। মোদী এবং সমস্ত গুজরাতিদের সিআইআই অপমানিত করেছে বলে তারা সিআইআই থেকে তারা সরে আসে। আরজিজি প্রেস স্টেটমেন্টে জানায়, সিআইআই-এর গুজরাত চ্যাপ্টার সরে যাক, কারণ তারা রাজ্যের স্বার্থ রক্ষায় অপারগ।
সেই সময় গুজরাতের একশোর বেশি কোম্পানি সিআইআই থেকে বেরিয়ে আসবে বলে পা বাড়িয়েছিল। তা যদি বাস্তবে হয়, তাহলে পশ্চিম ভারতে সংগঠনের অস্তিত্বে সমস্যা দেখা দেবে। গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যেiii ওই শিল্পপতিদের এই বিদ্রোহে সিআইআইয়ের প্রধান পরামর্শদাতা তরুণ দাস বিচলিত হলেন। ওদিকে বিজেপি সরকার কেন্দ্রের মন্ত্রীদের কাছে সিআইআই-এর অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে। তার ফলে শিল্পপতিদের হয়ে সরকারের কাছে তদ্বির করার সংগঠন হিসাবে সংগঠনের মূল উদ্দেশ্যে আঘাত লাগলো।
তরুণ দাস মোদী ঘনিষ্ঠ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অরুণ জেটলির দিল্লির বাড়িতে ছুটে গেলেন। আড়াই ঘণ্টা আলোচনার পর জেটলি বললেন, কয়েকদিন পরই তাঁর বাড়িতে মোদীর ডিনারে আসার কথা রয়েছে। তখন তিনি বিষয়টি তুলবেন। সেই মত কিছুদিন পর জেটলি জানালেন, কাজ হয়েছে, তবে সিআইআইয়ের কাছ থেকে মোদী আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশের চিঠি চান।
তরুণ যেদিন সেই চিঠি মোদীকে দিতে গেলেন, তাঁর স্ত্রী বললেন, তুমি এটা করতে পার না। তরুণ বলেন, চিঠি না দিয়ে তিনি পদ ছেড়ে দিতে পারেন, নইলে সিআইআই-এর সদস্যদের ভাল-মন্দ তাঁকে দেখতে হবে। দুঃখ প্রকাশের করে তিনি চিঠিতে লিখেছিলেন, সিআইআইয়ের আমরা আপনার আঘাত ও যন্ত্রণার জন্য খুবই দুঃখিত। ৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লির মিটিং থেকে যে ভুল বোঝাবুঝির শুরু হয়েছে তার জন্য আমি খুবই অনুতপ্ত।
অনুতাপ কাটাতে সিআইআই তিন মাস পর জুরিখে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের পৃষ্ঠপোষকতায় বিনিয়োগকারীদের আন্তর্জাতিক সভার আয়োজন করে। পরের দশ বছরে মোদী শিল্প সমাজের সবাইকে কাছে টেনে নেন। প্রথমেই বাজাজ, গোদরেজ ও অন্য যারা তাঁর সমালোচনা করেছিলেন তাঁদের।
এরপর যে গণহত্যায় প্রায় দু’হাজার গুজরাটির প্রাণ গেছে সেই অতীতকে চাপা দিয়ে ধীরে ধীরে মোদী নতুন ভাবমূর্তি নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। ‘ফ্যাসিস্ট’, ‘গণহত্যাকারী’, ‘ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদী’ বিশেষণের বদলে তাঁরই পছন্দ অনুযায়ী তাঁকে বলা শুরু হয় ‘বিকাশ পুরুষ’। রতন টাটা, মুকেশ আম্বানি, লক্ষ্মী মিত্তাল আবেগদীপ্ত ভাবে মোদীকে ‘ভারতের পরবর্তী নেতা’, ‘এক স্বপ্নদর্শী’, ‘অপ্রতিরোধ্য ঘোড়া’, ‘দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারে যে সিইও’ ইত্যাদি শব্দে ভূষিত করেন। কারণ তাঁরা বুঝেছিলেন মোদীর আমলে গুজরাটে বিনিয়োগ করা সবচেয়ে লাভজনক।
মোদীর হাইপ
সাংবাদিক বিনয় প্রভাকর ও মিতুল থাকার বলেছেন, ২০০৫ সালের ২৫ জুন নরেন্দ্র মোদী তাড়াহুড়ো করে একটি প্রেস কনফারেন্স ডেকেছিলেন। সাংবাদিকদের মনে হয়েছিল যে, সেখানে তিনি কোনও গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করবেন। আগের তিন বছরে তাঁর নাটকীয় ঘোষণার ঝোঁক তাঁরা লক্ষ্য করেছেন। সেদিন তিনি তাঁদের নিরাশ করেননি। ঘোষণা করেন, শীর্ষ কোম্পানি গুজরাট স্টেট পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (জিএসপিসি) গ্যাসের সন্ধান হোঁচট খেয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে কৃষ্ণ-গোদাবরী অববাহিকায় ২০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস অন্বেষণ ছিল দেশে গ্যাস সন্ধানের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। আবিষ্কারটিকে প্রাসঙ্গিক রাখতে তেল ও গ্যাস বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে কী করবেন তা তিনি ভাবতে বলেন।
এক টিসিএফ প্রাকৃতিক গ্যাস ১০,০০০ কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে, অথবা এক বছরের জন্য ১.২ কোটি প্রাকৃতিক-গ্যাস-চালিত যানবাহনের জ্বালানি হিসাবে যথেষ্ট। মোদী বিষয়টি নিয়ে অন্যরকম মোচর দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, কৃষকরা কল খুললে দেখবে জলের বদলে তেল আসছ। জনসভার বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন যে, গোয়ালারা এরপর দুধের পরিবর্তে পেট্রোল ও ডিজেলের প্যাকেট বিক্রি করবে। মোদীর ওই অবিশ্বাস্য কথাবার্তায় বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করলেন। তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রক ডিরেক্টর জেনারেল অফ হাইড্রোকার্বন ভিকে সিবাল বলেন, একটি তেল কূপ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ২০ টিসিএফ গ্যাস আবিষ্কার বড় বেশি লম্বা দাবি বলে মনে হয়। জিএসপিসি-র প্রযুক্তিগত অংশীদার জিওগ্লোবাল রিসোর্সেস বলে যে, এখনই মজুত গ্যাসের পরিমাণ নির্ধারণ করার সময় আসেনি। দুবছর আগে গ্যাসের অনুসন্ধান হোঁচট খাওয়ার পরও, ২০০৭ সালের বেশিরভাগ সময় পর্যন্ত মোদী তাঁর দাবিতে অটল ছিলেন। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল সংশয়বাদীদের কথাই সঠিক, জিএসপিসি ২ টিসিএফের বেশি গ্যাস খুঁজে পায়নি।
সাংবাদিক বিনোদ কে জোস বলেছেন, ২০১০ সাল থেকেই মোদী বলতেন, গুজরাটে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত। ‘গুজরাট মিরাকেল’ নিয়ে ‘বিজনেস টুডে’, ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’-এর প্রতিবেদনে সে কথা লেখা হয়। কিন্তু সঙ্ঘের কৃষক ইউনিয়ন দু’হাজার সাল থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল যে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা মিটছে না। সরকারি তথ্যেও দেখা গেছে যে ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা ৪৩ থেকে কমে হয়েছে ২১ শতাংশ। তিন লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার কৃষক ২০১২ সালেও সেচ পাম্পের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি।
নির্মার সিমেন্ট কারখানা
বিনোদ কে জোস জানিয়েছেন, ২০০৩ সালে গুজরাতের নির্মা কোম্পানিকে সিমেন্টের কারখানা করার জন্য ৭০০ একর সরকারি জমি দেওয়া হয় (নির্মার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান কারসন প্যাটেল রিসার্জেন্ট গ্রুপ অফ গুজরাটের অন্যতম নেতা ছিলেন)। নির্মাকে দেওয়া জমির মধ্যে ৩০০ একর ছিল জলা এবং জলাধার, যা পঞ্চাশ হাজারের বেশি স্থানীয় কৃষক চাষবাস ও পশুপালনের কাজে ব্যবহার করতেন। কৃষকরা ওই চুক্তিতে আপত্তি জানায়। সরকার ও নির্মা কোম্পানি সেই আপত্তিতে আমল দেয়নি। এরপর মাহুভার বিজেপি বিধায়ক কানুভাই কালসারিয়ার নেতৃত্বে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। এগারো হাজার কৃষক ওই চুক্তির বিরুদ্ধে রক্ত দিয়ে চিঠি লেখে। পাঁচ হাজার কৃষক প্রতিবাদ জানাতে ৪০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে আমেদাবাদে যায়।
‘নির্মা’ ও রাজ্য সরকার দাবি করে যে প্রভাবিত এলাকা হল জলাজমি। শেষে প্রতিবাদী কৃষকরা মিনিস্ট্রি অফ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ফরেস্টের কাছে সিমেন্ট কারখানার বিরুদ্ধে আবেদন করলে তারা কৃষকের পক্ষে রায় দিয়ে কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র বাতিল করে। কালসারিয়া ছিলেন বিজেপির তিন দফার (১৯৯৭ থেকে ২০১২) বিধায়ক। পার্টি তাঁকে অনিয়মের অভিযোগে সাসপেন্ড করে, তাঁর উপর গুন্ডাদের আক্রমণ হয়। আজও তিনি গুজরাটের কৃষকদের মুখপাত্র। তাঁর অভিযোগ, মোদী সরকার কর্পোরেটদের স্বার্থে নাগরিকের অর্থ এবং জমির অপব্যবহার করছে। ২০১৪ সালে তিনি আম আদমি পার্টিতে যোগ দেন, ২০১৮ থেকে রয়েছেন কংগ্রেসে।
আদানির জন্য মুক্তহস্ত
সাংবাদিক মেঘা বহরি জানিয়েছেন, মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে আদানি গোষ্ঠী কচ্ছের মুন্দ্রায় সরকারের কাছ থেকে ৭৩৫০ হেক্টর (এক হেক্টর= ১০০০ বর্গ মিটার) জমি ৩০ বছরের জন্য ইজারা পেয়েছে। পেয়েছে নামমাত্র মূল্যে, প্রতি বর্গমিটারের দাম এক মার্কিন সেন্ট (বর্তমানে এক সেন্ট= ০.৭৫৩ টাকা)। সর্বোচ্চ দাম বর্গমিটার প্রতি ৪৫ সেন্ট। মুন্দ্রায় গড়ে উঠেছে তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (স্পেশাল ইকোনমিক জোন বা এসইজেড)। পরিবর্তে আদানি সেই জমি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইন্ডিয়ান অয়েল সহ নানা কোম্পানিকে প্রতি বর্গমিটার ১১ ডলার (বর্তমানে ১ ডলার= ৮৩.৩ টাকা) হিসাবে ভাড়া দিয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, শুধু ইজারা পাওয়া জমির ভাড়া থেকেই আদানিরা কী বিপুল লাভ করেছে!
সেই জমি ছাড়াও, ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে আদানি গোষ্ঠী গ্রামবাসীদের ১,২০০ হেক্টর চারণভূমি দখল করেছে। ওই জমি দেওয়ার মালিক গ্রাম প্রধান। ২০১৪ সালে গ্রামবাসীরা ফোর্বসের সাংবাদিক মেঘা বহরিকে বলছেন যে, তাদের অজ্ঞাতে আগের গ্রাম প্রধানের স্বাক্ষরের বিনিময়ে ওই চারণভূমি আদানির এসইজেডের কব্জায় চলে গেছে। ২০০৫ সালে এবং তার আগে গ্রামবাসীরা সরকারের ওই দুষ্টু বুদ্ধির বিরুদ্ধে গুজরাট হাইকোর্টে একাধিক মামলা দায়ের করে। বেশ কয়েকটি মামলা ২০১৩ সালেও বিচারাধীন ছিল। ওই সব জমিতে আদানি তৈরি করেছে দেশের বৃহত্তম বন্দর এবং ৪,৬২০ মেগাওয়াট কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
জমির মত দুর্লভ সম্পদ শিল্পপতি বা শিল্প প্রতিষ্ঠানকে নামমাত্র মূল্যে কেন দেওয়া হয়? পুঁজিপতিকে ওই ভাবে জমি দিয়ে মোদী রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে বঞ্চিত করছেন। সরকারি কোষাগার দুর্বল হলে অসমতা মোকাবেলা করার জন্য রাষ্ট্রের কাছে পর্যাপ্ত সংস্থান থাকে না। সে কথা মোদীর অজানা নয়। হয়েছেও তাই (তবে পরে আমরা দেখব মোদীর গরীব এবং সাধারণ মানুষের কথা ভাবার ইচ্ছেও ছিল না)।
মেঘা বলেছেন, সেখানে আজ মাইলের পর মাইল মসৃণ রাস্তা, মাঝে মাঝে গোলাপি, কমলা এবং সাদা রঙের বুগেনভেলিয়া দিয়ে সাজানো। রাস্তা পরিষ্কার রাখার জন্য ক্রমাগত সুইপিং মেশিন ব্যবহার করা হয়। আদানির বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) এমনই সুন্দর। আদানির বন্দরের কাছে রপ্তানি-কেন্দ্রিক সংস্থাগুলিকে রাখার জন্যই এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হয়েছিল।
আদানি সেখানে ৪০ মাইল রেললাইন তৈরি করেছে, যা বন্দরটিকে জাতীয় রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করেছে। সেই সাথে তৈরি হয়েছে ১.১ মাইল লম্বা বেসরকারি এয়ারস্ট্রিপ। এসইজেড-এর ভাড়াটে কোম্পানিরা চার্টার্ড ফ্লাইটের জন্য তা ব্যবহার করতে পারে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ২৩টি কোম্পানি সেখানে কেন্দ্র গড়েছে অথবা গড়তে চলেছিল। কচ্ছ বা গুজরাটের আর কোনও সংস্থা আদানির মতো এত কম দামে জমি না পেলেও, শিল্পপতিদের প্রতি মোদীর উদার ব্যবহারে তারাও উপকৃত।
আদানি গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। কিন্তু এর প্রকৃত উত্থান হয়েছে গুজরাটে মোদীর শাসনকালে। তখনই তারা দেশের সবচেয়ে বড় বন্দর ও বিদ্যুৎ কোম্পানির মালিক হয়েছে। এছাড়া ছিল সামগ্রী কেনাবেচার ব্যবসা, বেশিটাই গুজরাটে। এসইজেড নির্মাণ ছাড়াও দেশে তাদের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির জন্য কয়লার স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায়iv খনি কিনেছিল, মুন্দ্রা বন্দরে এশিয়ার বৃহত্তম কয়লা আমদানির টার্মিনাল চালু করেছিল। ২০০২ থেকে ২০১৩ সালের মার্চে ওই গ্রুপের আয় ৭৬.৫ কোটি ডলার থেকে বেড়ে হয় ৮৮০ কোটি ডলার। নেট লাভ বেড়েছে আরও দ্রুত।
কচ্ছের ওই গ্রামগুলো বড় বড় সবেদা, খেজুর, নারকেল, ক্যাস্টর-এর জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন আর সেই অবস্থা নেই। তারা বলেছে, আদানি পাওয়ার এবং কাছাকাছি টাটা পাওয়ার প্ল্যান্টের ফ্লাই অ্যাশ এবং লবণাক্ত জল ফসল নষ্ট করেছে, মাটিকে চাষের অনুপযোগী করে তুলেছে। আগে সেখানে চাষিরা পর্যায়ক্রমে তুলা, বাজরা এবং ক্যাস্টর চাষ করেছেন। এমন লম্বা, সবুজ মাঠের কোনও তুলনা ছিল না। এখন প্রসারিত মাঠ ও খামার জুড়ে শুধু সাদা লবণের ছোপ দেখা যায়। সমুদ্রের লবণাক্ত জল মাটি নষ্ট করে দিয়েছে।
জারাপাড়া খুব বড় গ্রাম। সেখানে ১৫,০০০ বাসিন্দার বাস। এক সময় সবেদার জন্য বিখ্যাত ছিল। মৌসুমে প্রতিদিন পাঁচ ট্রাক ভর্তি সবেদা ওই গ্রাম থেকে বাজারে যেত। এখন এক ছোট ভ্যান ভর্তি সবেদা বাজারে যায়। নোনা জল এবং আদানির তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ফ্লাই অ্যাশের জন্য উৎপাদন কমেছে, পরাগসংযোগ প্রক্রিয়াও নষ্ট হয়েছে এবং ভূগর্ভস্থ জল দূষিত হয়েছে। গাছের পাতা থেকে সকালে মাটিতে শিশির পড়লে কালো শিশিরের ফ্লাই অ্যাশ থেকে মাটি কালো হয়ে যায়।
বেশ কয়েক বছর ধরে পরিবেশগত অপব্যবহারের অভিযোগ পাওয়ার পর, কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক ২০১২ সালে, সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সুনীতা নারায়ণ কমিটি তৈরি করে। ২০১৩-র এপ্রিল মাসে ওই কমিটির প্রতিবেদনে গ্রামবাসীদের অভিযোগ ও আশঙ্কার কথাকে সমর্থন করা হয়। বলা হয় যে, আদানির এসইজেড তার বিশাল প্রকল্পের বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক সবুজ নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। যার মধ্যে ছিল ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করা, খাঁড়ি ভরাট করা এবং ফ্লাই অ্যাশ জমা করে জমি ও জল নষ্ট করা।
এরইমধ্যে সরকার আদানি এসইজেডকে বর্গমিটার প্রতি প্রায় পনেরো টাকা দরে জারাপাড়ার এক হাজার একর চারণভূমি বরাদ্দ করলে গ্রামবাসীরা মামলা দায়ের করে, যা শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছিল। মামলা ফয়সালা হওয়ার আগে আদালতের বাইরেই মীমাংসা হয়েছিল। আদানি গোষ্ঠী দাবি করে, তারা গ্রামবাসীদের ৪০০ হেক্টর চারণভূমি ফিরিয়ে দিয়েছে। গ্রামবাসীরা বলে, কোনও জমি ফেরত পায়নি।
ওদিকে নাভিনাল গ্রামের মানুষেরা বলেন, সরকার আদানির এসইজেডের জন্য গ্রামের প্রায় ৯৩০ হেক্টর চারণভূমি নিয়েছে। আদানি ওই জমি প্রতি বর্গমিটার (এক হেক্টর = ১০০০ বর্গ মিটার) পনেরো টাকার কম দামে পেয়েছে। ২০১১ সালে নভিনাল গ্রামের প্রধান সহ অন্যেরা এসইজেডের জন্য তাদের চারণভূমি হারিয়ে গুজরাট হাইকোর্টে মামলা করে। জানুয়ারি মাসে (২০১২) আদালত এসইজেডকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং সেখানে কারখানা স্থাপনকারী সংস্থাগুলিকে সমস্ত কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। তার কারণ পরিবেশগত ছাড়পত্র না পেয়েই এসইজেড-এর কাজ শুরু করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই সেখানে বহু কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, হাইকোর্ট ওই প্রকল্পটিকে বিলম্বিত পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া যায় কিনা জিজ্ঞাসা করে সেই সিদ্ধান্তের ভার কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ছেড়ে দিয়েছিল। সামনেই লোকসভা নির্বাচন ছিল বলে কেন্দ্র দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবার জন্য কয়েক মাস সময় চায়।
সুপ্রিমকোর্ট আদানির আবেদনে হাইকোর্টের রায় স্থগিত রাখেনি। তবে জানায় যে, এসইজেড-এ বিদ্যমান ভাড়াটেরা যেমন আছে থাকবে। পরবর্তীকালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসে সেই প্রকল্পটিকে বিলম্বিত পরিবেশ ছাড়পত্র দিয়েছিল।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে পাইপলাইনের মাধ্যমে সমুদ্র থেকে জল টেনে এনে জলাধারে রেখে সেই জল থেকে বাষ্প তৈরি করে টার্বাইন ঘোরানো হয়। কমিটি দেখেছে যে, ভূগর্ভস্থ জলকে দূষণ থেকে রক্ষা করার জন্য জলাধারটিতে কোনও আস্তরণ দেওয়া হয়নি। তাই ওই জল মাটির নীচের ভূগর্ভস্থ জলকে দূষিত করে। রিপোর্টে বলা হয়, বিষয়টি পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার শর্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কমিটি সুপারিশ করেছিল যে আদানি জল গ্রহণ এবং পরিত্যক্ত গরম জল সমুদ্রে ফেরত পাঠানোর চ্যানেলের পুনর্গঠন করুক, সেই সাথে জলাধারটির নীচে এবং চারপাশে দুর্ভেদ্য আস্তরণ নির্মাণ করুক। সুপারিশ করার প্রায় এক বছর পরেও সংস্থাটি কিছুই করেনি। ইতিমধ্যে, আদানি গোষ্ঠী ৭,৩৫০-হেক্টর এসইজেডকে ১৮,০০০ হেক্টরে প্রসারিত করার কাজ শুরু করে।
আদানি গোষ্ঠী জানায় যে, ভূগর্ভস্থ জলে লবণাক্ত হওয়া একটি স্থানীয় ঘটনা এবং তারা এমন পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যেখানে কোনও ফ্লাই অ্যাশ থাকে না। তারা সুনীতা নারায়ণ কমিটির পর্যবেক্ষণকে অস্বীকার করে এবং বলে, যে কোনও বড় উন্নয়নের কাজ পরিবেশকে প্রভাবিত করে, তবে এর নেট প্রভাব ইতিবাচক।
আদানির তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উপকূলরেখা বরাবর কয়েক মাইল দূরে টাটার মালিকানাধীন ৪,০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থাও অনেকটা একই রকম। ২০১২ সালের মার্চ মাসে তা চালু হয়েছিল। মৎস্যজীবীরা মাছ না পাওয়ার জন্য কেন্দ্রটিকে দায়ী করে। প্ল্যান্টটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে পাইপের মাধ্যমে সামুদ্রিক জল গ্রহণ করার সাথে ছোট মাছও টেনে নেয় এবং মেরে ফেলে। ওদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের গরম জল সমুদ্রে ছেড়ে দেয়। তা তাৎক্ষণিক ভাবে জলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে আরও মাছ মেরে ফেলে।
মেঘা লিখেছেন, ২০১৩ সালে গোয়াতে গৌতম আদানির ছেলের বিয়ে হয়। আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন দেশের সবচেয়ে ধনীরা – বহু কোম্পানি ও ব্যাঙ্কের শীর্ষস্থানীয় এবং আমলারা। বেশির ভাগই যুগলকে আশির্বাদ করে, রাতটা থেকে পরেরদিন বিয়ের আগেই চলে গেছেন। কিন্তু এক বিশেষ বন্ধু কয়েকদিন ধরে বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠানে ছিলেন। নিরুদ্বিগ্ন, প্রশান্ত, অমায়িক – যেন পাত্রের প্রিয় জেঠু। তিনিই গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অন্য যেকোনো শিল্পপতির চেয়ে তিনি আদানির প্রতি বেশি উদার ছিলেন। তখনই আদানির সম্পত্তি দাঁড়িয়েছে ২.৮ বিলিয়ন ডলার, বিশ্বের বড়লোকদের মধ্যে ৬০৯ নম্বরে – ভারতের বৃহত্তম বন্দর, একটি বিদ্যুৎ কোম্পানি এবং একটি পণ্য ব্যাবসা পরিচালনা করে। ব্যাবসার বড় অংশই ছিল গুজরাটে।