এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ভোটবাক্স  লোকসভা - ২০২৪

  • পশ্চিমবঙ্গ - ফলাফল কী হতে চলেছে

    সঞ্জয় সরকার
    ভোটবাক্স | লোকসভা - ২০২৪ | ২৯ মে ২০২৪ | ১৪২৪ বার পঠিত

  • ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়


    লোকসভা ভোট শেষ দফায়। এবার ভোটে উত্তুঙ্গ কোনো উদ্দীপনা ছিলনা, ছিলনা কোনো হাওয়া, চাপা এক উৎকণ্ঠা নিয়ে ভোট হয়েছে। সেই ধারা শেষ দফায়ও অব্যাহত। রাজনৈতিক পটচিত্রে উত্তেজনার অবশ্য কোনো অভাব হয়নি। অভাব হয়নি নাটকীয়তার। ভোটের ঠিক আগে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত রায় এসেছে সুপ্রিম কোর্টের। নির্বাচনের মধ্যেই এসেছে কলকাতা হাইকোর্টের পরপর দুটি রায়। একটিতে বিপুল সংখ্যক রাজ্য সরকারি শিক্ষককে কর্মচ্যুত করা হয়েছে, অন্যটিতে ২০১০ সালের পর পশ্চাদপদ অংশের সংরক্ষণকে একরকম করে বাতিল করা হয়েছে। দুটির চূড়ান্ত রায়ই অবশ্য সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে। সন্দেশখালি ভোটের আগে থেকেই শিরোনামে। কিন্তু ভোটের মধ্যে এসেছে নতুন চমক। গঙ্গাধর কয়ালের এবং আরও কয়েকটি ভিডিও ফাঁস হয়ে ভাইরাল। এসেছে স্বয়ং রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ।

    এত চাপান-উতোরের মধ্যে, কলকাতায় ভোটের ঠিক আগে, লাখ টাকার প্রশ্ন একটাই। পশ্চিমবঙ্গে কে জিততে চলেছে। কেন্দ্রে সরকার যেই গড়ুক, পশ্চিমবঙ্গে জুন মাসের চার তারিখে কার গলায় উঠবে বিজয়ীর মালা। বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই দাবী করে আসছে, এবার পশ্চিমবঙ্গ তাদের। ৪২ এর মধ্যে ২০ থেকে ৩০ এইরকম নানাসংখ্যক আসনপ্রাপ্তির দাবী শোনা যাচ্ছে কান পাতলেই। তাদের কর্মসূচি পরিষ্কার। একদিকে ধর্মীয় মেরুকরণ তৈরি, অন্যদিকে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে তৃণমূল কংগ্রেসকে অসহায় ঠুঁটো জগন্নাথ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত, অপদার্থ প্রমাণ করা। এই অ্যাজেন্ডায় সন্দেশখালি নিয়ে মিডিয়াজোড়া হইচই তাদের পালে হাওয়া দিয়েছিল নিঃসন্দেহে। হাইকোর্টের দুখানি রায়ই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে, এ নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই। ২১ সালের মতই, ভোট যখন শুরু হয় তখন তাদেরই হট-ফেভারিট মনে হচ্ছিল। প্রথম দফার ভোটের পরও সেই অবস্থা বদলায়নি। কিন্তু একই সঙ্গে এও ঠিক, দ্বিতীয় দফার ভোটের পর থেকেই সেই হাওয় ফিকে হতে শুরু করে। পরের দফার দিনই আসে হাইকোর্টের রায়। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়া এই রায় সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে কোর্টের উপর রাজনৈতিক প্রভাবের ন্যারেটিভকেও সামনে এনে দিয়েছে। এক দফায় এতগুলো চাকরি চলে চলে যাওয়াকে বহু মানুষই সহজভাবে নেননি। তার উপর এসেছে একাধিক ভিডিও এবং রাজ্যপালের উপর প্রভাব। এর মধ্যে কোনো একটা, বা সবকটা কারণেই, বিজেপির অগ্রগতি উত্তর থেকে দক্ষিণে, প্রথম থেকে দ্বিতীয়-তৃতীয় দফায় অনেকটাই ফিকে হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা জানাচ্ছেন, এমনকি শুভেন্দুর গড়ে নতুন দুখানা আসন পেয়ে গেলেও, আগের বারের আসন সংখ্যা ধরে রাখাই বিজেপির সামনে চ্যালেঞ্জ। সেটাও আদৌ সম্ভব নাও হতে পারে।

    উল্টোদিকে তৃণমূলের তরফ থেকেও গোটা তিরিশেক আসনের দাবী শোনা যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে নানারকম দুর্নীতির মামলায় এবং সন্দেশখালির তীব্র মিডিয়া ফোকাসে তৃণমূল এবার কিছুটা বিপাকে ছিল। কিন্তু বিজেপির ফিকে হয়ে যাওয়াটা অবশ্যই তৃণমূলের পক্ষে গেছে। শুধু ভাইরাল ভিডিও বা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগই না, অভিজিৎ গঙ্গ্যোপাধ্যায়ের বিজেপির প্রার্থী হওয়া থেকে শুরু করে আরেক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নিজমুখে আরেসেস যোগের কথা ঘোষণা করা, সবকটাই তৃণমূল-বনাম- বিজেপি বাইনারি তৈরি করতে সহায়তা করেছে এবং ভোট যত এগিয়েছে, সেটা তৃণমূলের পক্ষেই গেছে। লক্ষ্যণীয় এই, যে, ২১ সালে বরং তৃণমূলকে অনেক বেশি নড়বড়ে লাগছিল। দলে দলে নেতা 'দলে থেকে কাজ করতে পারছিলাম না' বলে দল ছাড়ছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে জয়-শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে উত্যক্ত করা হচ্ছিল। এবার সেসবের চিহ্নমাত্র নেই। তৃণমূলের ভিতরে জেতা নিয়ে কোনো সংশয় থাকলে, ওই স্রোত আবারও দেখা যেত, নিঃসন্দেহে। এবার বরং উল্টো হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির প্রার্থীরা বুথের ধারেকাছে গেলে গো-ব্যাক স্লোগান উঠছে। উত্যক্ত করা হচ্ছে। ভোট শেষে নিয়ম করে তৃণমূল কর্মীরা পালন করছেন বিজয়োৎসব। ভাইরাল ভিডিও ছাড়া হচ্ছে নিয়ম করে। তৃণমূলের মতো ক্লাবসদৃশ দলের পক্ষে এ একেবারেই অভূতপূর্ব। সব মিলিয়ে প্রথম দফার পর থেকেই তৃণমূল পরিকল্পনামাফিক এগিয়েছে। তাদের হাঁটু ২১ সালের মতো কাঁপছেনা। গতবারের লোকসভার আসন সংখ্যা এবার বাড়া, আশ্চর্য কিছু না।

    হিসেব গুলিয়ে দিতে মঞ্চে অবশ্যই আছেন তৃতীয় পক্ষ। বাম-কংগ্রেস জোট। শোনা যাচ্ছে, অন্তত কিছু আসনে তাঁদের ভোট বাড়বে। এবং তত্ত্বগতভাবে হিসেব এখানে খুব সহজ। তাঁদের বাড়া ভোট যদি হারিয়ে যাওয়া ভোটব্যাঙ্ক অর্থাৎ রাম-ভোট থেকে আসে, তো তৃণমূলের বিজয়রথের গতি আরও বাড়বে। উল্টোদিকে, সেই বাড়তি ভোট যদি আসে তিতিবিরক্ত তৃণমূল ভোটারদের কাছ থেকে, তাহলে তৃণমূলের এত পরিকল্পনা সত্ত্বেও চাকা বসতে বাধ্য। অবশ্য, এও হতে পারে, বাম-ভোট আদতে তেমন বাড়লনা। ভোটের আগে তেমন মনে হচ্ছিলনা। কিন্তু ভোট যত গড়াচ্ছে, ততই একদিকে অন্তত কিছু আসনে যেমন দেখা যাচ্ছে লাল-পকাকার ভিড়, তেমনই মিডিয়ায় তৈরি হচ্ছে তীব্র বাইনারি। যেকোনো টিভি খুললেই দেখা যায় রাজনৈতিক আলোচনায় কেবল দুটি পক্ষ, তৃণমূল এবং তৃণমূল- বিরোধী, অর্থাৎ বিজেপি। এই দুটি পক্ষের মধ্যেই চাপান-উতোর, এবং বামরা যে বাইনারির বিরুদ্ধে রাস্তায় বলছেন, সেটা তাঁদেরই আলোচকরা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করছেন টিভির পর্দায়। এই গুলিয়ে যাওয় নীতি, সেটা ইন্ডিয়া জোট বনাম সেটিং তত্ত্বের মধ্যেও পরিষ্কার। রাস্তার হিসেব, তরুণ প্রার্থীদের পরিশ্রম ধরলে বামদের কিছু ভোট অবশ্যই বাড়া উচিত, কিন্তু গুলিয়ে যাওয়া আর তীব্র মেরুকরণের মধ্যে সেটা কতটা হবে বলা কঠিন।

    সব মিলিয়ে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবারও তৃণমূল-বিজেপির মধ্যেই। প্রথম স্থান তৃণমুলই পাবে, এখনও মনে হচ্ছে, কিন্তু বিজেপি ভয়াবহ কিছু ইছিয়ে থাকবে এমনটা নাই হতে পারে। বামদের কতটা উত্থান হয় এবং সেটা রাম-ভোট কেটে হয় কিনা, তার উপর ব্যাপারটা অনেকটাই নির্ভর করছে


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ভোটবাক্স | ২৯ মে ২০২৪ | ১৪২৪ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চরকি - Suvasri Roy
    আরও পড়ুন
    দহন - Manali Moulik
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • গৌতম মিত্র | 45.112.***.*** | ৩০ মে ২০২৪ ২২:১৬532516
  • কিছুই বুঝলাম না। কি বলতে চাইছেন? কে জিতবে? নতুন ভোটার, সংখ্যালঘু ভোটার, মতুয়া, আদিবাসী ভোট এগুলো কোন দিকে যাবে? এমনকি tmc র নেগেটিভ ভোট কোথায় যাবে?
  • Aditi Dasgupta | ৩১ মে ২০২৪ ০০:২৭532518
  • ভোটের ফল কী হবে জানিনা,কিন্তু আপনার লেখাটিতে কিছু বিষয় যেন ছোঁয়াই হলোনা, কিছু জিনিস দেখেও বুঝি দেখা হলনা।
  • upal mukhopadhyay | ৩১ মে ২০২৪ ০৯:২৯532524
  • লেখাটার মূল বিষয়বস্তুর মধ্যে যে সর্বগ্রাহী অনির্দিষ্টতা আছে শীর্ষ নাম ততটাই নির্দির্ষ্ট ফলে পাঠকের প্রত্যাশার প্রাপ্তির মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি হয় ।আমি বিষয়ের উপস্থাপনার সঙ্গে একমত ।নানা স্রোতের খেলা দেখাই বিশ্লেষকের কাজ।সিদ্ধান্ত ৪ঠা জুন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন