অতীতে ইহুদিরা ইউরোপে যে জাতিবৈষম্য ও অত্যাচারের শিকার হয়েছে, অনেককাল ধরে তারা প্যালেস্টাইনের আরবদের উপর তাই করছে। কম সময় নয়, অন্তত ৭৫ বছর ধরে এই চলছে। উত্তোরত্তর অত্যাচার বেড়েছে। আমেরিকা চিরকাল তাদের সংগত দিয়েছে। সাম্প্রতিক হামাস-ইজরায়েল যুদ্ধে অত্যাচার চরমে পৌঁছেছে। এখন যা চলছে তার চেয়ে বেশি কিছু হওয়া সম্ভবই নয়।
ব্রিটিশ শাসনাধীন প্যালেস্টাইনে উপনিবেশ গড়ার ছাড়পত্র পেয়ে ইজরায়েল তৈরি হওয়ার সময় থেকে ইহুদিরা প্যালেস্টাইনের গাজা ও জর্ডন নদীর পশ্চিম তীরের মানুষের উপর প্রবল অত্যাচারি হয়ে ওঠে। কয়েক লাখ প্যালেস্টাইনি নাগরিক তাদের শত শত বছরের বাড়ি-ঘর ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে জর্ডন, লেবানন, সিরিয়া, মিশরে ছড়িয়ে পড়ে। জর্ডন নদীর পশ্চিম পাড়ের সিংহভাগই রয়েছে এখন ইজরায়েলের কব্জায়। জেরুজালেম, গাজাতেও রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণ।
অত্যাচার থাকলে প্রতিবাদ হবেই। এক সময় ইয়াসের আরাফতের প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাজেশন (পিএলও) সেই প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিয়েছে। তারপর আশীর দশকে পিএলও-র কাজকর্মে অসন্তুষ্টি থেকে হামাসের জন্ম হয়। সেই সময় হামাসকে পিএলও বিরোধী শক্তি হিসাবে দাঁড় করাতে ইজরায়েলে ক্ষমতাসীন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার (১৯৯৬-১৯৯৯) এবং তাঁর লেকোয়েড পার্টি (দক্ষিণপন্থী দল) আর্থিক সাহায্য করেছিল। মতলব ছিল প্যালেস্টাইনিদের মধ্যে বিভাজন করা। সেক্ষেত্রে বলা যাবে, শান্তির জন্য কথা বলব কার সঙ্গে। আবার সেই বিভাজনের সুযোগে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা জর্ডন নদীর পশ্চিম তীরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।
১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির মাধ্যমে আরাফাত ইজরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেছিলেন। ২০০৬ সালে গাজার সাধারণ নির্বাচনে হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে শান্তি প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ পশ্চিমের বেশিরভাগ দেশই হামাস বিরোধী। তবে মিত্র দেশও আছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগী কাতার। তুরস্কেরও সমর্থন রয়েছে। আর রয়েছে অসহায় নিপীড়িত প্যালেস্টাইনিদের স্বাভাবিক সমর্থন। দীর্ঘদিন ধরে তারা অস্ত্র হিসাবে রকেটের জন্য ইরানের উপর নির্ভরশীল ছিল। সুদান ও মিশরের মধ্য দিয়ে গোপনে সেই অস্ত্র চালান হতো। পরে গাজাতেই তারা রকেট বানিয়েছে বলে মনে করা হয়।
প্যালেস্টাইনের সর্বত্র ইহুদিরা বসতি গড়েছে। অনেককাল ধরেই সেখানকার পরিকাঠামো, সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ির উপর চলছে ইজরায়েলের নিয়ন্ত্রণ। প্যালেস্টাইনের মানুষের চলাফেরা, বিনোদন—সবই ইজরায়েলি সেনারা (আইডিএফ বা ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস) নিয়ন্ত্রণ করে। ২০০৪ সাল থেকে তারা স্থলপথে গাজায় ঢোকা-বেরোনো নিয়ন্ত্রণ করছে। আইডিএফ প্যালেস্টাইনে কোনও বিক্ষোভ, সমাবেশ করতে দেয় না।
১৯৬৭ সালে ইজরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে। ওদিকে এই যুদ্ধের আগে থেকেই গাজার এক-পঞ্চমাংশ ইজরায়েলের দখলে। ২০০৪ সালের পর থেকে গাজাও যেন জেলখানায় পরিণত হয়েছে। ইজরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ইচ্ছেমত প্যালেস্টাইনিদের পশ্চিম তীরের বাসস্থান থেকে হঠিয়ে দিয়েছে। আরবরা যখনই প্রতিবাদ করেছে, তাদের বা আইডিএফের হিংসার শিকার হয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে আরবরা বসতি দখল ও নির্যাতন সইছে। ইজরায়েলিরা পশ্চিম তীরের ৫৯ শতাংশ দখল করে নিয়েছে, ইজরায়েলি বসতি বানিয়ে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন পৃথিবীর নজর যখন গাজার উপর, সেই অবকাশে ইজরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা পশ্চিম তীরে আরবদের বাড়িতে ঢুকে বাসিন্দাদের মারছে, গাড়ি, ফলের বাগান জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বসতিতে ঢুকে এমন সন্ত্রাস করছে যে ভয়ে সবাই বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে। অত্যাচারিত প্যালেস্টাইনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের কথা কেউ বলে না।
৭ অক্টোবরের (২০২৩) হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র হানার আগের ৯ বছরে (২০২১ ব্যাতিক্রম) গাজায় যা ঘটেছে ইজরায়েলের খবরের কাগজেও তা কদাচিৎ হেডলাইন হয়েছে। হামাস বিক্ষিপ্ত ভাবে বার বার ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে, ইজরায়েলের বোমারু বিমান বোমা ফেলে বহুগুণ বেশি ধ্বংস করেছে। ২০০৬ সাল থেকে আট দফায় বোমা ফেলেছে। ইজরায়েলের মিত্র দেশ আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স বা জার্মানি—কেউই এইসব ঘটনাকে আমল দেয়নি। ইদানীং ইউক্রেনের যুদ্ধই ছিল বড় ঘটনা, প্যালেস্টাইনের কথা পৃথিবী যেন ভুলে গিয়েছিল। তবে ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণ ইজরায়েলের কাছেও ছিল অভাবনীয়।
আমেরিকার ৯/১১ যেন ইজরায়েলের ১০/৭। হামাসের আক্রমণে বারোশো ইজরায়েলির মৃত্যু ছাড়া ‘মসাদ’ (ইন্সটিটিউট ফর ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অপারেশনস, হিব্রুতে মসাদের অর্থ ইনস্টিটিউট), ‘শিন ব্যাট’ (আমেরিকার এফবিআই-এর মত ইজরায়েলের আভ্যন্তরিন নিরাপত্তা সংস্থা) এবং সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ ‘আমান’-এর সুনামেরও ক্ষতি হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে ৭ অক্টোবরের আক্রমণের খবর যদি আগাম জানা যেত তাহলে ইজরায়েল তা রুখতেও পারত। প্যালেস্টাইনের মানুষ হামাসের সঙ্গে আছে বলে তারা গোপনে ১০/৭-এর হানা ঘটাতে পেরেছে।
তারপর থেকে চার মাসের বেশি গাজায় ইজরায়েলি হানা চলছে। উত্তর গাজার সর্বত্র বোমা ফেলছে। বোমা-গুলিগোলা বর্ষণে কাতারে কাতারে সাধারণ মানুষ মারা গেছে। জানুয়ারি পর্যন্ত নিহত হয়েছে ২৭ হাজার ৭০০-র বেশি। তারপরও অগুন্তি মৃতদেহ ধ্বংসস্তুপের মধ্যে পড়ে রয়েছে। জখম ৬০ হাজারের বেশি। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বলেছেন, গাজা শিশুদের কবরস্থান হয়ে গেছে। ‘সেভ দ্য চিল্ড্রেন’ জানিয়েছে, প্রতিদিন ১০০-র বেশি বাচ্চার মৃত্যু হচ্ছে, এরইমধ্যে অন্তত ১০ হাজার শিশু মারা গেছে।
সাংবাদিক ইউভাল আব্রাহাম জানিয়েছেন, এত প্যালেস্টাইনি নাগরিকের মৃত্যুর বড় কারণ হল, আইডিএফ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স চালিত সিস্টেম হ্যাসব্রো ব্যবহার করছে। এই সিস্টেমে লক্ষ্যস্থল অনেক দ্রুত নির্দ্ধারণ করা যায়। তবে সেখানে কতজন নাগরিক রয়েছে তা দেখা হয় না। সে কারণেই গাজায় এত বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
১০ ডিসেম্বর আইডিএফের মুখপাত্র বলেছিলেন, নিপুণতা নয়, কতটা ক্ষতি হল তাতেই আমরা জোর দিচ্ছি। একই দিনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমি সংযম আরও কমিয়েছি, যাদের বিরুদ্ধে লড়ছি তাদের সবাইকে মারব, তার জন্য সব পন্থাই নেব।” বোঝা যায় সাধারণ মানুষকে হত্যা করাও ইজরায়েলের লক্ষ্য। তাই লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানতে ইজরায়েল সেনার নিপুন হওয়ার প্রয়োজন নেই। আগে একটি হামাস জঙ্গিকে মারতে লক্ষ্যস্থলে হয়তো দশজন নাগরিকের মৃত্যু হত, এখন হয় তার দশ থেকে কুড়িগুণ বেশি।
অক্টোবরের ৯ তারখে ইজরায়েল জানিয়েছিল, গাজা সম্পূর্ণ অবরোধ করা হয়েছে। সেদেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউয়াভ গ্যালান্ট ৯ অক্টোবর বলেছিলেন যে, তাঁদের “বাহিনী গাজা সম্পূর্ণ দখল করছে। বিদ্যুৎ, খাবার, পানীয় জল ও জ্বালানি—সবকিছুর সরবরাহই একেবারে বন্ধ। আমরা জন্তুর মত মানুষদের বিরুদ্ধে লড়ছি, সেই মত পদক্ষেপ নিচ্ছি”। ইজরায়েল হাসপাতাল ধ্বংস করেছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলেছে। ২৩ লক্ষ প্যালেস্টাইনবাসীর বেঁচে থাকার জন্য পানীয় জল, খাবার, জ্বালানি, ওষুধ, শীতের বস্ত্র, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট যোগ—কিছুই নেই। ছোঁয়াচে রোগ দ্রুত ছড়াচ্ছে। এই যুদ্ধের আগে ১৭ বছর ধরে ইজরায়েল প্যালেস্টাইন অবরোধ করে রেখেছিল। তাই অনেকদিন ধরেই গাজার অর্ধেক মানুষের খাদ্য সরবরাহ ছিল অনিশ্চিত। মানুষ মানবিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল ছিল। এখন তাও বন্ধ।
আইডিএফের নজর এড়িয়ে বহু মানুষ উত্তর গাজায় লুকিয়ে চুরিয়ে যেমন তেমন করে বেঁচে রয়েছে। তবে ২৩ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১৯ লক্ষকে ঘর ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ নিজের দেশেই বাস্তুচ্যুত। দেশের ৮৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, গাজার প্রতিটি মানুষ ক্ষুধার্ত হয়ে রয়েছে। পৃথিবীর যত মানুষ দুর্ভিক্ষ বা ভয়ঙ্কর ক্ষুধার সম্মুখীন তার শতকরা ৮০ ভাগই গাজার বাসিন্দা। মানুষ পানীয় জল ও খাবারের সন্ধানে মাথা কুটছে। বাচ্চারা খালি পেটে দিন কাটাচ্ছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। ইজরায়েলি সেনা গাজার খাদ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, ত্রাণ সরবরাহ আইডিএফের বাধায় সীমান্ত পেরতে পারছে না। ইজরায়েলের আক্রমণে ত্রাণ দিতে আসা রাষ্ট্রসংঘের ১৩৬ জন কর্মী নিহত হয়েছে। উদ্দেশ পরিস্কার, প্যালেস্টাইনিদের জন্য কোনও ত্রাণ নয়। অর্থাৎ প্যালেস্টাইনের সাধারণ মানুষকে মারার জন্য অস্ত্র হিসাবে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। মানুষ গৃহপালিত জন্তুর শস্যদানা পেষাই করে খাচ্ছে, এখন তাও আর নেই। কম করে ৩ লক্ষ মানুষ মৃত্যুর দোরগোড়ায়।
২৭ অক্টোবর আইডিএফ স্থলভাগে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে সেনারা উত্তর গাজার ২০ শতাংশের বেশি চাষের জমি, বাগান, গ্রিনহাউস, ৭০ শতাংশ মাছ ধরার নৌবহর ধ্বংস করেছে। চাষিরা কৃষিজমিতে, মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারে না। বেকারির জন্য জ্বালানি, জল, আটা-ময়দা নেই। বেকারির কাজের জায়গাও ধংস করেছে। গাজায় রুটি, বিস্কুট, কেক-- কিছুই তৈরি হয় না। ইজরায়েল শুধু বোমা ফেলেই প্যালেস্টাইনের মানুষকে হত্যা এবং পরিকাঠামো ধ্বংস করেনি, পরিকল্পিত ভাবে জরুরী সরবরাহ বন্ধ রেখে, অনাহার, অসুখ, অপুষ্টি ও জলশূন্যতার মধ্যে রেখে মানুষকে তিলে তিলে হত্যা করছে। সেখানে গণহত্যা একটি ঘটনা নয়, একটি চালু প্রক্রিয়া। এই ভাবে ধীরে ধীরে মেরে ফেলাটা গণহত্যারই প্রক্রিয়া।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন সহ যেসব আন্তর্জাতিক সংগঠন প্যালেস্টাইনিদের ত্রাণ দিতে গিয়েছে তারা প্রবল বৃষ্টিতে গাজার রাস্তা ডুবে গেলে কলেরা সহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাবের ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু ইজরায়েলের প্রাক্তণ জেনারেল এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান গিওরা এইল্যান্ডের মতে, তা ইজরায়েলের জয়ে সাহায্য করবে। এক প্রবন্ধে তিনি লেখেন, “আন্তর্জাতিক সমাজ আমাদের সতর্ক করছে যে, ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ও মহামারী লাগবে। তাতে আমাদের পিছিয়ে আসার কিছু নেই। গাজার দক্ষিণে ভয়াবহ মহামারী দেখা দিলে আমরা জয়ের কাছে চলে আসব।”
আইডিএফ উত্তরের বাসিন্দাদের বন্দুক দেখিয়ে ঘর থেকে বার করে ঠেলে দক্ষিণে মিশরের সীমান্ত লাগোয়া ছোট শহর রাফায় আসতে বাধ্য করেছে। তারপর বসতি ঘন হলে সেখানেও বোমা ফেলেছে। দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষকে-- অসুস্থ বা আহত হলেও রাফায় যেতে বাধ্য করেছে।
নানা ত্রাণ সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক সমাজ বলছে যে, ইজরায়েল রাফায় আক্রমণ হানলে তা ভয়ানক বিপর্যয় ডেকে আনবে। কারণ ২ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষের সেই শহরে এখন ২৩ লক্ষ মানুষের দেশের অর্ধেক আশ্রয় নিয়েছে। মাথা গুঁজবার জন্য কবরস্থানেও তাঁবু খাঁটাতে হয়েছে। এক ত্রাণকর্মীরা কথায়, তারা যেন হাতাশার প্রেশার কুকার। অনেকে জানিয়েছেন, ইজরায়েলি সেনাদের হানার ভয়ে বাচ্চারা রাতে জেগে থাকছে, ঘুমচ্ছে না। ইজরায়েলি স্থলবাহিনী শহরের খুব কাছে চলে এসেছে। ওদিকে মিশর সীমান্ত বন্ধ। উদ্বাস্তুদের সামনে এখন দুটি রাস্তা— হয় ভিড়ে ঠাসা সেই শহরে কোনওমতে মাথা গুঁজে ইজরায়েলের আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করা, অথবা যেখানে লড়াই চলছে ধ্বংস হয়ে যাওয়া সেই উত্তরে ফিরে যাওয়া।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউয়াভ গ্যালান্ট সহ ইজরায়েলের মন্ত্রী ও সামরিক কর্তারা বারবার রাফা আক্রমণের কথা বলছেন। নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, “সেনারা রাফায় এগিয়ে গেলে যুদ্ধ বন্ধের জন্য পণবন্দিদের ফেরানোর আলোচনা হাওয়া হয়ে যাবে। আমরা রাফায় আশ্রয় নেওয়া বাকি হামাস সন্ত্রাসবাদীদের পেয়ে যাব। তাই করতে চলেছি, ওটাই তাদের শেষ দুর্গ।” গ্যালান্ট বলেছেন, “রাফায় লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদীদের বোঝা উচিৎ যে তাদের পরিণতি হবে খান ইউনিস এবং গাজার মত।” অবশ্য রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বর্তমানে ১৩ লক্ষ নাগরিকের ওই ছোট শহরে আক্রমণের ফল হবে ভয়াবহ। উদ্বাস্তুদের কেউ কেউ বলছেন, কোথায় যেতে হবে তা নিয়ে ইজরায়েলের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। রাফাই আমাদের শেষ জায়গা। গাজা স্ট্রিপ ছেড়ে অন্য কোথাও যাব না। হয় বাসস্থানে ফিরে যাব, নয়তো এখানেই মরব।
গাজায় বাড়িঘর পরিকাঠামো ধ্বংস হলেও হামাসের লড়াইও জারি রয়েছে, ইজরায়েল আকাঙ্খিত জয় পায়নি। মাত্র একজন পণবন্দিকে মুক্ত করতে পেরেছে, বাকিরা মুক্ত হয়েছে হামাসের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সূত্রে। ইজরায়েল বারবার দাবি করেছে যে, গাজায় হামাস ধ্বস্ত হয়েছে। ওদিকে হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনোয়ার বা তাদের সামরিক বিভাগের সর্বোচ্চ নেতা মহম্মদ ডেইফ যে নিহত হয়েছে ইজরায়েল তার প্রমাণ দেয়নি। এখন বলছে, সিনোয়ার সহ হামাসের বাকি বড় নেতারা রাফার আশপাশেই লুকিয়ে রয়েছে।
তবে ইজরায়েলের রাফা দখলের অন্য একটি উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। সে দেশের কর্তারা ইদানীংকালে বলেছেন, ইজরায়েল ফিলাডেলফি রুটের নিয়ন্ত্রণ চায়। ওই রুট হল মিশরের সীমান্তে সংকীর্ণ বালুময় ১৪ কিলোমিটার রাস্তা। ১৯৭৯ সালের মিশর-ইজরায়েল শান্তি চুক্তির সময় থেকে ইজরায়েল ওই রুটে টহল দিত। ২০০৫ সালের ফিলেডেলফি চুক্তি অনুযায়ী ওই রুট নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল। ইজরায়েলি সেনার মতে, ওই রুটে মিশর থেকে সুরঙ্গ দিয়ে গাজায় অস্ত্র চালান করা হয়।
হামাসের কব্জা থেকে পালিয়ে আসার পর আইডিএফ তিনজন পণবন্দিকে গুলি করে মেরেছে। তাদের গায়ে জামা ছিল না, তারা যে হামাসের লোক নয় তা বোঝাতে সাদা কাপড় নেড়েছিল। তারপরও এক সেনা ‘টেররিস্ট’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে। সেনারা তখনই দুজনকে গুলি করে মারে। তৃতীয়জন কাছের এক বাড়িতে পালিয়ে গেলে সেখান থেকে তাকে বার করে আনার পর সে হিব্রু ভাষায় জীবন ভিক্ষা করলেও তাকে গুলি করা হয়। এই ঘটনা আইডিএফ-এর অপরাধীমূলক অযোগ্যতার চরম দৃষ্টান্ত।
গাজায় আক্রমণের খবর করতে যারা গেছেন সেই সাংবাদিকরাও আক্রমণের শিকার হয়েছেন। ৮৫জন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে প্যালেস্টাইনি ৭৮জন, ৩জন লেবানিজ, ৪জন ইজরায়েলি। আহত ১৬জন, ৪জন নিখোঁজ। উদ্দেশ্য পরিস্কার-- প্যালেস্টাইনের দুর্দশার কথা প্রাচার করা যাবে না। দেড় বছর আগে (২০২২ সালের মে মাসে) আইডিএফ-এর হাতে প্যালেস্টাইনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আখলের হত্যাই প্রমাণ করে যে ইজরায়েলের আক্রমণ নিয়ে লেখা বা খবর বন্ধ করতে সাংবাদিক হত্যায় তাদের কোনও দ্বিধা নেই। পশ্চিম তীরের জেনিনে হানা দেওয়ার সময় আইডিএফ-এর স্নাইপার আবু আখলেকে মাথায় গুলি করে মেরেছে। পরে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট সহ কয়েকটি অ-ইজরাইয়েলি আন্তর্জাতিক সংস্থা তদন্ত করে দেখেছে, তাঁকে লক্ষ্য করেই গুলি করা হয়েছিল। হত্যাকারীদের আজও শাস্তি হয়নি।
আমেরিকার বাইডেন প্রশাসন এই যুদ্ধে যেন চিয়ার লিডার বা উল্লাস নেতার ভূমিকায় রয়েছেন। মার্কিন স্বরাষ্ট্রসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যুদ্ধের প্রথম তিন মাসে ইজরায়েলকে সমর্থন জানাতে পাঁচবার সে দেশে গেছেন। আমেরিকা ইজরায়েলকে ১,৪০০ কোটি ডলারের বিশেষ সাহায্যের প্যাকেজ সহ ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৩০টি যুদ্ধবিমান এবং ২০টি জাহাজ ভর্তি অস্ত্র ও যুদ্ধোপকরণ দিয়েছে। ওদিকে সিআইএ গাজার খবরাখবর সরবরাহ করছে। গাজার চলমান গণহত্যায় রাষ্ট্র হিসাবে আমেরিকার এতটাই মদত রয়েছে।
গাজা স্ট্রিপে ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দেওয়ায় ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ করার প্রস্তাব নিয়ে ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় ভোট হয়। সবাভাবিক ভাবেই আমেরিকা ও ইজরায়েল প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। পরে বাইডেন বলেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশই ইজরায়েলকে সমর্থন করে। অথচ সাধারণ সভায় যুদ্ধ বন্ধের বিপক্ষে ভোট পড়েছিল ১০টি, পক্ষে ১৫৩টি। তাই যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব পাশ হয়। বাইডেন বেশিরভাগ পৃথিবী বলতে বুঝিয়েছেন অস্ট্রিয়া, চেক রিপাবলিক, গুয়াতেমালা, লাইবেরিয়া, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরো, পাপুয়া নিউগিনি এবং প্যারাগুয়েকে। ইউরোপে আমেরিকার পুরনো মিত্র দেশগুলো ভোট থেকে বিরত ছিল।
তার আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব পেশ করা হলে আমেরিকা ভেটো প্রয়োগ করে। এই প্রথম নয়, দীর্ঘকাল ধরে আমেরিকা ইজরায়েলের পক্ষ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়েছে। সাধারণ সভার সদস্য ১৯৩টি দেশ। সভার প্রস্তাব মানার বাধ্যবাধকতা নেই। ওদিকে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ১৫টি দেশ। আন্তর্জাতিক শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব নিরাপত্তা পরিষদের। সংশ্লিষ্ট দেশের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। না হলে রাষ্ট্রপুঞ্জ আক্রমণকারী দেশের বিরুদ্ধে স্যাংশন চালু করা ছাড়া সামরিক পদক্ষেপও নিতে পারে। আমেরিকা সহ পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা রয়েছে। ওই পাঁচটি দেশের বা তাদের মিত্র দেশের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা হলে ভেটো প্রয়োগের জন্য প্রস্তাব কার্যকরী করা যায় না। এই কারণেই ইজরায়েল-হামাস বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ রাষ্ট্রপুঞ্জ থামাতে পারেনি।
ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউয়াভ গ্যালান্ট ডিসেম্বরের ২৬ তারিখে ইজরায়েলের কোনেসুট-এ (Knesset) বৈদেশিক বিষয় এবং প্রতিরক্ষা কমিটির মিটিং-এ বলেছেন, ইজরায়েলকে সাতটা ফ্রন্টে যুদ্ধ সামলাতে হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন—গাজা, লেবানন, সিরিয়া, পশ্চিম তীর, ইরাক, ইয়েমেন এবং ইরান—এই সাতটি ফ্রন্টের মধ্যে ইজরায়েল ছ’টি ফ্রন্ট সামলাচ্ছে। কথার ইঙ্গিতে মনে হয় নেতানিয়াহু এমন যুদ্ধ চাইছে যাতে আমেরিকাকে মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি যুদ্ধে টেনে আনা যায়।
আদর্শগত বা রাজনৈতিক পার্থক্য যতই থাকুক ইজরায়েলের মূলধারার রাজনীতিবিদরা হিংস্র, জাতবিদ্বেষী ভাষায় পরস্পরকে ছাপিয়ে গেছেন। কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী আভি ডিচার জানিয়েছেন, আরেকটি নাকবা চলছে (১৯৪৮ সালে দেশ হিসাবে ইজরায়েল তৈরি হওয়ার সময় ইহুদিদের আক্রমণে আরবদের ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার বিপর্যয়কে ‘নাকবা’ বলা হয়)। অক্টোবর মাস থেকে কথাটা ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইজরায়েলের অনেক রাজনীতিবিদই ‘সেকেন্ড নাকবা’, ‘গাজা নাকবার’ কথা বলেছেন। আবার বিজনেস ম্যানেজমেন্ট গুরু এলিয়াহু ইজরায়েলকে গাজার উপর পরমাণু বোমা ফেলার কথা ভেবে দেখতে বলেছেন।
এই ভয়ঙ্কর আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে, যেন যুদ্ধ বন্ধ করে ইজরায়েলকে গণহত্যাকারী হিসাবে ঘোষণা করা হয়। দুটি দেশই ১৯৪৮-এর কনভেনশন এগেনস্ট জেনোসাইডের পার্টি। ৮৪ পাতার আবেদনে ইজরায়েলের নৃশংসতা ও অত্যাচারের বিবিরণ ছাড়া ন’পাতা জুড়ে রয়েছে সরকারি কর্তাদের উচ্চারিত নিন্দনীয় নানা শব্দ ও বাক্য। ‘নাকবা’ শব্দটি ছাড়াও কর্তারা বক্তৃতা বা বিবৃতিতে প্যালেস্টাইনিদের জাতবিদ্বেষী ‘রাক্ষস’, ‘জন্তু’, ‘জঙ্গল’ ইত্যাদি শব্দ আকছার ব্যবহার করেছেন (শান্তির জন্য নোবেল পাওয়া ইজরায়েলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মেনাহেম বিগেন প্যালেস্টাইনিদের ‘দুপেয়ে জন্তু’ মনে করতেন। লেবার পার্টির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মিয়া সত্তরের দশকের গোড়ায় প্যালেস্টাইনিদের ‘আরশোলা’ বলেছিলেন)। দক্ষিণ আফ্রিকা আবেদন করে, গণহত্যা ঠেকানোর জন্য সরাসরি ও প্রকাশ্যে নিন্দনীয় শব্দ ও বাক্য বলার জন্য ইজরায়েলকে শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে গাজা স্ট্রিপে মানবিক সাহায্যের অনুমতি দিতে হবে। ২৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক আদালত জানায়, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে বিচারকরা গাজায় সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করতে সম্মত হননি, যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দেননি।
ইজরায়েলের প্রথম হিংস্রতা ছিল আরবদের আদিকালের বসতি থেকে তাড়ানো, যদি প্রতিরোধ করে হত্যা করা। অর্থমন্ত্রী বেজল্যাও স্মোট্রিচের ছ’বছর আগে লেখা নথি “দ্য ডিসাইসিভ প্ল্যান” অনুযায়ী তারা এগোচ্ছিল। নথিতে বলা হয়, গোটা পশ্চিম তীরে প্যালেস্টাইনিদের বলতে হবে তারা সেখানে থাকবে না চলে যাবে। যদি থাকতে হয়, না-মানুষ হয়ে থাকতে হবে। যদি অস্ত্র তুলে নিয়ে প্রতিরোধ করে তাহলে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে তাদের হত্যা করতে হবে। শ্রোতাদের কাছে তাঁর পরিকল্পনা উপস্থাপনের সময় স্মোট্রিচকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কি নারী ও শিশুদের কথাও বলছেন? উত্তরে তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় যেমন হয়।
বস্তুত সাধারণ নাগরিকরাও আইডিএফ-এর লক্ষ্যবস্তু। ‘+972’ নামে অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে সে কথা বলা হয়েছে। ‘+972’ হল ইজরায়েল, পশ্চিম তীর ও গাজার কোড নাম। চারজন ইজরায়েলি সাংবাদিককে নিয়ে পত্রিকাটি যাত্রা শুরু করেছিল। এখন কয়েকজন প্যালেস্টাইনি সাংবাদিকও যোগ দিয়েছেন। ৩০ নভেম্বর ওই পত্রিকায় ইজরায়েলি সাংবাদিক ইউভাল আব্রাহাম ‘এ মাস অ্যাসাসিনেশন ফ্যাক্ট্রি’ : ইনসাইড ক্যালকুলেটেড বম্বিং অফ গাজা’ প্রবন্ধে অজ্ঞাতনামা সামরিক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের তথ্য ফাঁসকারীর সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছেন, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, স্কুল, ইউনিভার্সিটি, ব্যাঙ্ক, বাজার—সবই ইজরায়েল সামরিক কর্তৃপক্ষের লক্ষ্যবস্তু। কারণ ব্যাপকহারে সবকিছু ধ্বংস এবং নাগরিকের মৃত্যু হলে হামাসের উপর চাপ তৈরি হবে। আব্রাহাম জানিয়েছেন, সরকারি নথী অনুযায়ী ইজরায়েলের গোয়েন্দামন্ত্রক গাজা স্ট্রিপের সমস্ত প্যালেস্টাইনি নাগরিককে জোর করে মিশরের সিনাই উপদ্বীপে পাঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
অর্থাৎ ইজরায়েলের পরিকল্পনা হল গাজাকে মানুষের বসবাসযোগ্য রাখবে না। ইজরায়েলের নেতারা ভাবছেন, সামরিক শক্তি দিয়েই তা করা যাবে এবং প্যালেস্টাইনের আশপাশের দেশ ঘর ছাড়া প্যালেস্টাইনিদের ঠাই দেবে। কিন্তু সেইসব দেশ এমন অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে যে এখনই তা হবার নয়। তাই গাজাতে আরবদের জন্য আরও খারাপ দিন অপেক্ষা করছে।
মরক্কো থেকে ইরাক পর্যন্ত মুসলমান ও খ্রিষ্টানরা হাজার হাজার বছর ধরে ইহুদীদের সঙ্গে শান্তিতেই ছিল। ওইসব দেশ জানে, ঔপনিবেশিক শক্তি জিয়নবাদী বর্ণবাদী ইজরায়েলকে আরব জগতে গুঁজে দিয়েছে। প্যালেস্টাইনিদের পূর্বপুরুষরা যুগ যুগ ধরে যেখানে ছিল, আমেরিকা বলেছে, সেখানে নাকি তাদের কোনও জমিজায়গা নেই। ইজরায়েল ও আমেরিকা অনেককাল ধরেই দুই রাষ্ট্রের সমাধান মানেনি। অথচ সেটাই একমাত্র সমাধান। এখন ইজরায়েলের মধ্যেই কথা উঠছে যে সেই দেশের বর্তমান নেতৃত্বের জন্যই মধ্যপ্রাচ্যে ভয়ঙ্কর সংকট দেখা দিয়েছে, তাদের সরে যেতে হবে। তবে যুদ্ধের সমর্থক দক্ষিণপন্থীরাই সে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই এখনই ইজরায়েলের আচরণে বদল আসা করা যায় না।
ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের শান্তি, নিরাপত্তার স্থায়িত্বের চাবিকাঠি রয়েছে প্যালেস্টাইনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতিতে। যুদ্ধ বন্ধ করে ইজরায়েলের দখলদারী ছেড়ে আসা তার পূর্ব শর্ত।
সূত্রনির্দেশ: