তাপবিদ্যুৎ থেকে মুক্তির পথ কতদূরে
কার্বন নিঃসরণের ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী কয়লা পোড়ানো। সিংহভাগ কয়লা পোড়ানো হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এবং বাকিটা শিল্পের জন্য। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হয় প্রায় ৭২ শতাংশ, গ্যাস থেকে ২২ আর তেল থেকে ৫ শতাংশ। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) জানিয়েছে, উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রির মধ্যে বেঁধে রাখতে হলে ২০৪০ সালের মধ্যে পৃথিবীর সব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে। তার মানে এখন থেকে পৃথিবীকে গড়ে বছরে প্রায় ১০০ গিগাওয়াট (১ গিগাওয়াট = ১০০০ মেগাওয়াট) ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে হবে। কিন্তু নানা দেশে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিকল্পনা এখনও রয়েছে তা থেকে বোঝা যায় তা হওয়া খুবই কঠিন।
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে রাষ্ট্র সংঘ কার্বন নিঃসরণের ফলে উষ্ণায়ন ও জলবায়ু বদল নিয়ে বিশ্বকে সচেতন করেছে। অথচ, ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ বেড়ে ১,০৬৬ গিগাওয়াট থেকে হয়েছে ২,১২৫ গিগাওয়াট। ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর সাসটেনেবেল ডেভেলপমেন্ট (আইআইএসডি) ২০২০ সালে জানিয়েছে যে, তিন জীবাশ্ম জ্বালানি – কয়লা, তেল ও গ্যাসে বছরে ৩৭,০০০ কোটি ডলার ভর্তুকি দেওয়া হয়, আর নবায়নযোগ্য শক্তিতে (সৌর, বায়ু-বিদ্যুৎ জৈবভর, ভূতাপ ইত্যাদি) ১০,০০০ কোটি ডলার। তার মানে মুখে বললেও কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার সত্যিই বন্ধ হোক তা পৃথিবীর নানা দেশ চায় না। জলবায়ু বদল নিয়ে রাষ্ট্র সংঘ এবং পৃথিবীর বিজ্ঞানীকুল প্রবলভাবে শঙ্কিত হওয়ার প্রায় তিরিশ বছর পরেও এই ছবি অত্যন্ত হতাশ করে।
কয়লা পুড়িয়ে এখনও পৃথিবীর প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। ২০০০ সালে তাপবিদ্যুৎ (কয়লা চালিত) উৎপাদন করত ৬৬টি দেশ। সেই সংখ্যা বেড়ে এখন হয়েছে ৭৮। মোট ২৩৬ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কয়েকশো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কাজ চলছে। নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্ধেকের বেশি রয়েছে চিনে (উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে ১২৯ গিগাওয়াট)। নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিনিয়োগ কমলেও বিপুল সংখ্যক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমেনি, বরং বাড়ছে।
ইউরোপ ও আমেরিকায় চাহিদা কমেছে বলে ২০১৯ সালে কয়লার চাহিদা কমেছে। সে বছর শতকরা ৩ ভাগ কম তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। তারপরও মোট নিঃসরণ হয়েছে ৪,০৫৭ কোটি টন, ২০১৮-র চেয়ে ২৫.৫ কোটি টন বা ০.৬ শতাংশ বেশি। আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে নিঃসরণ কমেছে ১.৭ শতাংশ, চিনে বেড়েছে ২.৬ শতাংশ, ভারতে ১.৮ শতাংশ। কয়লার মোট চাহিদার ৬৫ শতাংশই হল চিন ও ভারতের চাহিদা। একা চিনের চাহিদাই মোট চাহিদার অর্ধেক। চিনের সঙ্গে ভারত সহ জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চাহিদা যোগ করলে হয় মোট চাহিদার ৭৫ শতাংশ।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রভাবে অর্থনীতির নিম্নগতির জন্য ২০২০ সালে বিশ্বে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে ০.৬ শতাংশ (২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছিল গড়ে ৩ শতাংশ)। কোভিড-১৯-এ বিপর্যস্ত ইউরোপে অর্থনৈতিক সংকটের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে ৪.৬ শতাংশ, ভারতে কমেছে ২.৫ শতাংশ। চিনে কিন্তু চাহিদা বেড়েছে ৩.৭ শতাংশ, আমেরিকায় ৩.১ শতাংশ। বিদ্যুৎ সেক্টরের বিচারে - তাপবিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে ৪.৫ শতাংশ, পরমাণু-বিদ্যুৎ কমেছে ৩.৫ শতাংশ। ওদিকে বায়ু-বিদ্যুৎ বেড়েছে ১২ শতাংশ, সৌর-বিদ্যুৎ ২০ এবং জলবিদ্যুৎ ২ শতাংশ।
একই বছর তাপবিদ্যুতের চাহিদা কমেছে ৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে ২০২১ সালে অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে বিদ্যুৎ ও শিল্পক্ষেত্রে কয়লার চাহিদা ৪.৫ শতাংশ বাড়বে। তবে ২০২৫ সালের মধ্যে চাহিদা বৃদ্ধি সম্ভবত থেমে যাবে। তখন গ্যাসই হবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল জীবাশ্ম জ্বালানি, তারপরই নবায়নযোগ্য শক্তি।
বিশ্বের সব বড় অর্থনীতি ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনবে বলে অঙ্গিকার করলেও সেই লক্ষ্য অনুযায়ী নীতি নির্ধারণ করেনি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উষ্ণায়ন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা থামাতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ অর্ধেক করে ফেলতেই হবে। ইউরোপের ২৭টি দেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ৮ শতাংশের জন্য দায়ী হলেও তারা জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে নিঃসরণ ৫৫ শতাংশ কমিয়ে ফেলবে। এখন দেখা যাক সেই লক্ষ্যে বাকি দেশগুলো কতটা এগিয়েছে।
আমেরিকার তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৬১ গিগাওয়াট, উৎপাদন বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। ২০১১ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে সে দেশে ৪৯ গিগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। ২০২০ সালে বন্ধ হয়েছে ১০ গিগাওয়াট। ওদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষণা করেছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী আমেরিকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ গিগাওয়াট। এর শতকরা ৪৪ ভাগ জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাস, ১৯ ভাগ কয়লা চালিত তাপবিদ্যুৎ। সৌর-বিদ্যুৎ ৪ শতাংশ, বাকি ৩৩ শতাংশ পরমাণু-বিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ এবং বাকি নবায়নযোগ্য শক্তি। সে দেশের ২৬১ গিগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ এবং ৫০০ গিগাওয়াটের বেশি গ্যাসবিদ্যুৎ ১৫ বছরের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব কি না তা নিয়ে গভীর সন্দেহ থেকে যায়। তবে প্রায় দেড়শো বছর ধরে ইউরোপ ও আমেরিকা সবচেয়ে বেশি কয়লা পুড়িয়েছে। ঐতিহাসিক ভাবে উষ্ণায়ন থামানোর বড় দায়িত্ব পশ্চিমী শিল্পোন্নত দেশের হলেও সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব আমেরিকার (এখন নিঃসরণ ১১ শতাংশ)।
আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নই সবচেয়ে বেশি হারে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করেছে। ২০০০ সালে ইউরোপের তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা যা ছিল এখন কমে হয়েছে তার এক তৃতীয়াংশ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ৩৭ শতাংশ বিদ্যুৎ জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে এলেও নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কোনও পরিকল্পনা নেই (২০২০ সালে জার্মানিতে একটি শেষ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে)। বেলজিয়াম আগেই সমস্ত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছিল, ২০২০-তে অস্ট্রিয়া ও সুইডেনও তাই করেছে। সে বছর ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (২৭) ও ব্রিটেনে ২০টির বেশি কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে। ফ্রান্স ২০২২, ইতালি ২০২৫ এবং পর্তুগাল ২০২৩ সালের মধ্যে সব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেবে। পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক ও জার্মানি ছাড়া ইউরোপের সব দেশ ২০৩০-এর মধ্যে সমস্ত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেবে। উষ্ণায়ন রোধে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার কথা। তবে জার্মানির সব কেন্দ্র বন্ধ করতে দেরি হবে, বন্ধ হবে ২০৩৮-এর মধ্যে। পোল্যান্ডের ৩০ গিগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হবে তারও পরে।
জি-২০ দেশের মধ্যে পাঁচটি দেশের ৭৫ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে -- সৌদি আরবের ১০০, দক্ষিণ আফ্রিকার ৮৬, ইন্দোনেশিয়ার ৮৩, মেক্সিকো ও অস্ট্রেলিয়ার ৭৫ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে কয়লা পুড়িয়ে। ২০০০ সাল থেকে এশিয়ায় তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৬৩ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চিনে। ২০১৯ সালে যোগ হয়েছে ৩০ গিগাওয়াট। একই বছর জাপানে চালু হয়েছে ২ গিগাওয়াট, আরও ৭.৪ গিগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। ভারতে যোগ হয়েছে ২ গিগাওয়াট, আরও ৩৫ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা তৈরির কাজ চলছে। এশিয়ার অন্য কয়েকটি দেশে ৫ গিগাওয়াট নির্মাণের কাজ চলছে। তবে উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশে নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির হার আগের থেকে কমেছে। কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইন্স, ভিয়েতনাম, মিশর এবং বাংলাদেশের মত অনেক দেশ ভবিষ্যতে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের পথ বদল করতে উদ্যোগী হয়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতায় চিন কয়েক বছর আগেই আমেরিকাকে ছাপিয়ে গেছে। ২০১৯ সালের শেষে তা হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষ মেগাওয়াট। ভারতের (৩.৭৫ লক্ষ মেগাওয়াট) পাঁচ গুণ বেশি। চিনের তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ, সৌর-বিদ্যুৎ ও বায়ু-বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। ২০০০ সাল থেকে ২০১৮-র মধ্যে চিনের তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে পাঁচগুণ। হয়েছে ৯৭২.৫, পৃথিবীর ৪৮ শতাংশ। তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৭০ শতাংশ আসে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে (ভারতের ক্ষেত্রে তা ৬৫ শতাংশ)। সে দেশের চতুর্দশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, বিদ্যুতের বর্ধিত চাহিদার জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হয়তো আরও ১০০ থেকে ২০০ গিগাওয়াট বাড়াতে হবে। সেদেশে যত পুরনো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে নতুন কেন্দ্র চালু করছে তার চেয়ে বেশি। ২০২০ সালে পৃথিবীতে বন্ধ করে দেওয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা যা ছিল চিন একাই তার চেয়ে বেশি কেন্দ্র চালু করেছে। এক ২০২০ সালেই ক্ষমতা বাড়িয়েছে ৩৮ গিগাওয়াট, পৃথিবীতে মোট যা বেড়েছে তার ৭৬ শতাংশ।
অনেকগুলি বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থার যৌথ ভাবে প্রকাশিত রিপোর্ট ‘বুম অ্যান্ড বাস্ট’ অনুযায়ী ২০২০ সালে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নতুন চুল্লি চালু করার ক্ষেত্রে প্রথম চিনের পরই রয়েছে ভারত। তবে দুই দেশের মধ্যে তফাৎ বিপুল। চিনে তাপবিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ও প্রস্তাবিত কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, ভারতে অতটা নয়। অবশ্য তার কারণ ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কম। বেশিরভাগ কয়লা পোড়ায়, সবচেয়ে বেশি নিঃসরণ করে চিন (২৭ শতাংশ), ভারত করে তার তিন ভাগের এক ভাগ (৯.৭শতাংশ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ বেশি)। ভারতের তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৯৯.৮ গিগাওয়াট (উৎপাদন ক্ষমতার তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, তাই তাপবিদ্যুৎ অলাভজনক হয়ে পড়েছে)। কিন্তু চিন, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ আজও কমন বাট ডিফারেনশিয়েটেড রেসপন্সিবিলিটির কথা বলছে।
চিন, আমেরিকা ও ভারত ছাড়া বেশি তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা যোগ করেছে জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম ৪২ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, এর মধ্যে ১০ গিগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র তৈরির কাজ চলছে। সে দেশ গ্যাস থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে চায়, নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনেও গুরুত্ব দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে বেশ কয়েকটা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা বাতিল হবে। ইন্দোনেশিয়া সরকার এখনও তাপবিদ্যুৎ প্রসারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আগে যা পরিকল্পনা ছিল তা ছেঁটে ১০ গিগাওয়াট কম করেছে। ওদিকে আমদানি করা কয়লার দাম বেড়েছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করেছে বলে বাংলাদেশ ন’টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের (৭,৪৬১ মেগাওয়াট) পরিকল্পনা বাতিল করেছে।
২০০০ সাল থেকে ২০১৮-র মধ্যে এশিয়ার নানা দেশ তাপবিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছে ১৯১ গিগাওয়াট, আরও প্রায় ১০৪ গিগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ২০১৬ সালে যতগুলো নতুন কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল তার এক-তৃতীয়াংশ বাতিল অথবা মুলতুবি রাখা হয়েছে। তারা জানিয়েছে যে, তারা নতুন তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হয় বাতিল করেছে, নয়তো পুনর্বিবেচনা করছে। তাদের বহু প্রকল্পে টাকা ঢালছে চিন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক সংস্থা।
২০২০ সালে ভারতের তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে মোট ২ গিগাওয়াট, বন্ধ হয়ে গেছে মোট ১.৩ গিগাওয়াট, তাই উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে ০.৭ গিগাওয়াট। এখন নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র যা আছে সবই তৈরি করছে এনটিপিসি অথবা অন্য কোনও সরকারি কোম্পানি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক থেকে দেখলে তার কোনও প্রয়োজন নেই, কারণ বিদ্যুতের চাহিদা তেমন বাড়ছে না এবং নবায়নযোগ্য শক্তির চেয়ে তা বেশি খরচ সাপেক্ষ। আরও বিপদ হল নানা রাজ্যের ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সস্তার বিদ্যুৎ (নবায়নযোগ্য-শক্তি) বাদ দিয়ে বেশি দামে ওই বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য হবে। এদেশের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র শুধু যে ভয়ানক দূষণ ছড়ায় তাই নয়, তা রুগ্ন এবং অনেকক্ষেত্রে অন্যতম বৃহৎ স্ট্র্যান্ডেড অ্যাসেট। আমাদের যা চাহিদা সেই সাপেক্ষে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি।
এইসব কারণেই জাতীয় বিদ্যুৎ পরিকল্পনায় ২০২৭ সালের মধ্যে ৪৮ গিগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ করে দেবার কথা বলা হয়েছে। নতুন নির্মাণের পরিকল্পনা কম, চালু বিদ্যুৎকেন্দ্রের পিএলএফ কম (প্ল্যান্ট লোড ফ্যাক্টর – বিদ্যুৎকেন্দ্রের গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নির্ধারিত সময়ে যতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত তার অনুপাত, পিএলএফ বেশি হলে আয় বেশি হয় বলে বিদ্যুতের দাম কমে)। পর পর দু’বছর কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে আসা, কোভিডের জন্য অর্থনীতির স্লথতা এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমেই বেড়ে চলা দেখে মনে হয় আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতের তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন তুঙ্গে উঠবে, তারপর তা কমতে থাকবে।
অনেকদিন ধরেই ভারতের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের গড় পিএলএফ বা প্ল্যান্ট লোড ফ্যাক্টর ৬০ শতাংশ বা তার কম। প্রাইভেট সেক্টরে তা আরও কম। কাম্য পিএলএফ হল ৮৫ শতাংশ। সৌর ও বায়ু-বিদ্যুতের দাম কমে আসা এবং কম পিএলএফ-এর জন্যই প্রাইভেট সেক্টর নতুন কেন্দ্র নির্মাণ থেকে সরে গেছে, তবে পাবলিক সেক্টর সরেনি। তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার সেকথা সরকার ছাড়া বাকিরা বুঝেছে। কারণ তা শুধু পরিবেশ, মানুষের স্বাস্থ্য ও উষ্ণায়নের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বিদ্যুৎ সেক্টরের আর্থিক ক্ষতির দিক থেকেও হানিকর। অনেক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি নেই, যার ফলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্ট্রেসড ও স্ট্র্যান্ডেড অ্যাসেট বেড়েছে। এসব দেখে-বুঝেই প্রাইভেট সেক্টর এই ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ করতে চায় না।
মাদ্রিদে ২৫তম শীর্ষ সম্মেলনে (সিওপি২৫) নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চেয়েছিল ২০৫০ সালের মধ্যে নিঃসরণ শূন্যে নিয়ে আসবে। কিন্তু পোল্যান্ড সেই সিদ্ধান্তে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রায় সব দেশই চাইছিল চিন দু-এক বছরের মধ্যে নিঃসরণ সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে আসুক। কারণ ১৯৯৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে, ২০ বছরে চিনের বার্ষিক নিঃসরণ ৩২০ কোটি টন থেকে বেড়ে হয়েছে হাজার কোটি টনের বেশি। চিন নিঃসরণ করে পৃথিবীর শতকরা ২৭ ভাগ। নিঃসরণের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে যারা রয়েছে সেই আমেরিকা (১১ শতাংশ), ভারত (৬.৬) ও রাশিয়া (৪.৫) মোট যা নিঃসরণ করে চিন একাই করে তা চেয়ে ঢের বেশি। চিন যদি নিঃসরণ না কমায় তাহলে পৃথিবীর কোনও ভবিষ্যৎ নেই। তাই মাদ্রিদে কয়েকটি দেশের আবেদন ছিল চিন ও ভারত যেন স্বেচ্ছায় নিঃসরণ কম করে। চিনের নিঃসরণ অতি দ্রুত সর্বোচ্চ হওয়া প্রয়োজন, তারপর তা কমিয়ে ফেলা দরকার। কিন্তু চিন জেদ ধরে রইলো, প্যারিস চুক্তিতে যেমন বলা হয়েছে, ২০৩০ সালেই তারা সর্বোচ্চ নিঃসরণ করবে। অথচ চিনের তাপবিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা এখনই প্রায় সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে। ভারতও পারে, ভারতের তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় এক-চতুর্থাংশ কাজে লাগে না। আর্থিকভাবে সেইসব কেন্দ্র বিপন্ন, অনেক কেন্দ্র নন-পারফর্মিং অ্যাসেট হয়ে রয়েছে।
২০১৯ সালে বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, গ্যাস, তেল ইত্যাদি) থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছিল ৬৪ গিগাওয়াট, ২০২০ সালে বেড়েছে ৬০ গিগাওয়াট। আইইএ জানিয়েছে, কয়লায় বিনিয়োগ কমছে। তার মানে তাপবিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতার বৃদ্ধিও কমেছে। ২০১১ সালে উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছিল ৮২ গিগাওয়াট। ২০১৮ সালে কমেছে ২০ গিগাওয়াট। ২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মোট ২২৭ গিগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে আরও ১৮৬ গিগাওয়াট ক্ষমতার পুরনো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হবে। তবে বিশ্বের তাপমাত্রা বে-লাগাম বাড়তে দিতে না চাইলে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার কমাতে হবে ৮০ শতাংশ, একই সঙ্গে (নব) নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন তুমুল বাড়াতে হবে।
গ্যাস-বিদ্যুৎ
গ্যাস থেকে পৃথিবীর শতকরা ২৩ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২০ সালে কয়লা থেকে উৎপাদিত তাপবিদ্যুৎ কমলেও গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে ৪০ গিগাওয়াট। বেড়েছে বেশি আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও চিনে। গ্যাস-বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতায় সবচেয়ে আগে রয়েছে আমেরিকা, ৫০০ গিগাওয়াটের বেশি, বিশ্বের ২৮ শতাংশ। আমেরিকার ৪০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ আসে গ্যাস জ্বালিয়ে। ২০২০ সালে সে দেশের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে প্রায় ৮ গিগাওয়াট। মধ্যপ্রাচ্যের গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২০ গিগাওয়াট। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কয়লা নির্ভরতা থেকে মুক্তি চাইছে।
গ্যাস-বিদ্যুৎ তাপবিদ্যুতের প্রায় অর্ধেক নিঃসরণ করে। তাই আমেরিকার মতো কয়েকটি দেশে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াচ্ছে বলে তাদের নিঃসরণ কমছে। পৃথিবীতে পরিবর্তনশীল নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন যত বাড়ছে তাপবিদ্যুতের বদলে গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে। ২০১৬ সাল থেকে গ্যাস-বিদ্যুতে বিনিয়োগ কমছিল, ২০১৯ থেকে তা ফের বাড়ছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিচারে এশিয়ার মধ্যে প্রথম চিন, উৎপাদন ক্ষমতা ৯৬ গিগাওয়াট, ২০২০-তে বেড়েছে প্রায় ৬ গিগাওয়াট। চিন ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শতকরা প্রায় ৪ ভাগ গ্যাস-বিদ্যুৎ। বিশ্বে ক্রমবর্ধমান গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদন তাপবিদ্যুতের উপর চাপ তৈরি করছে।
নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার কতটা হল
২০২০ সালে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিশ্বের শতকরা ২৮ ভাগ বিদ্যুৎ এসেছে। এরমধ্যে জলবিদ্যুতের ভাগ ১৬ শতাংশ। বাকি ১২ শতাংশ আসে অন্য (নব) নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে।
গত এক দশকে পৃথিবীতে নবায়নযোগ্য শক্তি ও গ্যাস-বিদ্যুতের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি দেশেই সৌর ও বায়ু-বিদ্যুৎ সবচেয়ে সস্তা হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে সৌর ও বায়ু-বিদ্যুতে জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে অনেক বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছর এই দুই নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ক্ষমতা জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে বেশি বাড়ছে। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সৌর ও বায়ু-বিদ্যু্তের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে।
২০১৯ সালে জলবিদ্যুৎ বাদে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছিল ১৮১ গিগা-ওয়াট, জীবাশ্ম জ্বালানির ৬৪ গিগা-ওয়াট আর পরমাণু বিদ্যুতের ৮ গিগা-ওয়াট। পৃথিবী কোভিড অতিমারীর কবলে পড়ার পর ২০২০ সালে জলবিদ্যুৎ ছাড়াই নবায়নযোগ্য শক্তি বেড়েছে ২৬০ গিগা-ওয়াট। সৌর-বিদ্যুৎ বেড়েছে ১২৭ গিগা-ওয়াট, বায়ু-বিদ্যুৎ ১১১। আর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৬০ গিগা-ওয়াট।
২০২০-র শেষে নবায়নযোগ্য শক্তির মোট উৎপাদন ক্ষমতা হয়েছে ২৭৯৯ গিগা-ওয়াট (১ গিগা-ওয়াট = ১০০০ মেগাওয়াট)। এরমধ্যে জলবিদ্যুৎ ১,২১১ গিগা-ওয়াট (৪৩ শতাংশ), সৌর-বিদ্যুৎ ৭৫৪ এবং বায়ু-বিদ্যুৎ ৭৪৩ গিগা-ওয়াট। শেষ দুইয়ে মিলে এখন মোট বিদ্যুতের প্রায় দশ শতাংশ উৎপাদন করছে। একই সময়ে জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে সবচেয়ে দূষিত কয়লার ব্যবহার কমেছে প্রায় ১ শতাংশ। সূর্যালোক ও বাতাস কোনওদিন বন্ধ হবে না। ওই দুই ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে বিনিয়োগের সুবিধাও রয়েছে। কয়লা, তেল, গ্যাস ও ইউরেনিয়ামের সরবরাহ সীমিত এবং একবারেই বিপুল বিনিয়োগ করতে হয়।
২০২০ সালে চিন জলবিদ্যুতে ব্যয় করেছে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে মোট ব্যয়ের ২০.৫ শতাংশ, বাকি নবায়নযোগ্য শক্তিতে ৬১.৭ এবং পরমাণু বিদ্যুতে ৭.২ শতাংশ, বাকিটা তাপবিদ্যুৎ ও গ্যাস-বিদ্যুতে। সম্প্রতি চিন জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ২০০৫ সালের চেয়ে শতকরা অন্তত ৬৫ ভাগ নিঃসরণ কম করবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে নিঃসরণ পুরোপুরি বন্ধ করবে।
একই বছর চিনের বায়ু-বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ৩০৮ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে, সৌরবিদ্যুতের ক্ষমতা হয়েছে ২৫৩ গিগাওয়াট। বায়ু-বিদ্যুতে চিন বিশ্বে প্রথম, দ্বিতীয় আমেরিকা, তৃতীয় জাপান, চতুর্থ জার্মানি। তবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দেশ মোট যে পরিমাণ বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন করে, চিন একাই তার চেয়ে অনেক বেশি করে। প্রায় একই কথা সৌর-বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও সত্যি।
ওই বছর (২০২০) আমেরিকার সৌর ও বায়ু-বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে যথাক্রমে ১৬,৫০০ ও ১৭,১০০ মেগাওয়াট। জলবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য শক্তি হয়েছে মোট বিদ্যুতের শতকরা ২০ ভাগ। সে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস পুড়িয়ে তৈরি হয় শতকরা ৪১ ভাগ বিদ্যুৎ, কয়লা থেকে তাপবিদ্যুৎ ১৯ ভাগ (দশ বছর আগেও হত শতকরা ৪৫ ভাগ), পরমাণু-বিদ্যুৎ শতকরা ২০ ভাগ। আমেরিকায় বিদ্যুতের চাহিদা-বৃদ্ধির হার কম। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য শক্তির বৃদ্ধি এবং একের পর এক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার জন্যই তাপবিদ্যুতের উৎপাদন কমছে।
২০২০ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে (২৭) জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ৩৭ শতাংশ (কয়লা থেকে ১৩ শতাংশ) এবং নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে এসেছে ৩৮ শতাংশ। সৌর ও বায়ু-বিদ্যুৎ -- দুইয়েরই উৎপাদন ক্ষমতা ২০১৫ সালের দ্বিগুণ হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করাই নয়, একই সময়ে গ্যাস এবং পরমাণু-বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ করা তাদের লক্ষ্য। ওই সময়ের মধ্যে মোট নিঃসরণ ১৯৯০ সালের চেয়ে শতকরা ৫৫ ভাগ কম করতে চায়। বৈদ্যুতিক গাড়ির বাড়তি চাহিদাও তারা মেটাতে চায় নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে। কাজটা খুবই কঠিন এখন দেখা যাক তারা কতটা করতে পারে!
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) মতে জলবায়ু বদল থামাতে গেলে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বর্তমান বিনিয়োগ যথেষ্ট নয়, তাপমাত্রার বৃদ্ধি ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে বেঁধে রাখতে হলে ২০২৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বর্তমান হারের দ্বিগুণ বিনিয়োগ করতে হবে। তবে শুধু নবায়নযোগ্য শক্তির বৃদ্ধিই জলবায়ু বদল রোখার জন্য যথেষ্ট নয়, সবুজায়ন বৃদ্ধি করলেও তা হবে না। তা করতে গেলে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন বন্ধ করতেই হবে। কেবল কয়লাই নয়, গ্যাস ও জৈবভর পোড়ানোও বন্ধ করতে হবে।
ব্রিটেনের কার্বন ট্র্যাকার এবং কাউন্সিল অন এনার্জি এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটার (সিইইডব্লু) যৌথ ভাবে প্রকাশিত এক স্টাডি রিপোর্ট ‘রিচ দ্য সান’-এ জানিয়েছে যে, উদীয়মান দেশ কম খরচের নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে ঝুঁকেছে, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ প্রায় চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। বিশ্বের নব্বই ভাগ অঞ্চলেই নবায়নযোগ্য শক্তি সবচেয়ে সস্তা। এইসব দেশের বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির মধ্যে ভারতের ভাগ ৯ শতাংশ, আবার আগামী দিনে সম্ভাব্য বৃদ্ধির ২০ শতাংশ। চিনের চাহিদা বৃদ্ধির ভাগ ৫০ শতাংশ, সম্ভাব্য বৃদ্ধির ভাগ ৩৯ শতাংশ। বেশিরভাগ উদীয়মান দেশ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পেরিয়ে যাবতীয় বৃদ্ধি নবায়নযোগ্য শক্তি থেকেই পেতে চলেছে। ২০১০ সালে ভারতে নবায়নযোগ্য শক্তি ছিল ২০ গিগাওয়াটের কম, ২০২১-এর মে মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৯৬ গিগাওয়াট। বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসেবে ধরলে তা হয়েছে ১৪২ গিগাওয়াট বা দেশের মোট বিদ্যুতের ৩৭ শতাংশ।
গত পাঁচ বছরে পৃথিবীর সৌর ও বায়ু-বিদ্যুতের উৎপাদন দ্বিগুণ বেড়েছে। ২০২০ সালে সৌর ও বায়ু-বিদ্যুৎ ২৪৩৫ টেরাওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, যা এখন মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ, ২০১৫ সালে ছিল ৫ শতাংশ (১০৮৩ টেরাওয়াট আওয়ার)। সৌর ও বায়ু-বিদ্যুৎ উৎপাদনে ডেনমার্ক (৬১ শতাংশ), তারপরই উরুগুয়ে (৪৪ শতাংশ)। এরপর রয়েছে ইউরোপের আয়ারল্যান্ড (৩৫ শতাংশ), জার্মানি (৩৩শতাংশ), ব্রিটেন (২৯শতাংশ), স্পেন (২৯ শতাংশ), গ্রিস (২৭ শতাংশ), পর্তুগাল (২৬শতাংশ)। এছাড়া তুর্কিস্তান (১২শতাংশ), আমেরিকা (১২শতাংশ), ব্রাজিল (১১শতাংশ), জাপান (১০শতাংশ), চিন (৯.৫ শতাংশ), ভারত (৯ শতাংশ)। ২০২০ সালে চিন উৎপাদন করেছে ৭২৮ টেরাওয়াট আওয়ার, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ৫৪০ টেরাওয়াট আওয়ার এবং আমেরিকা ৪৬৯ টেরাওয়াট আওয়ার। তিন বছরে ভিয়েতনামে সৌর ও বায়ু-বিদ্যুতের উৎপাদন অতি দ্রুত বেড়েছে। পাঁচ বছরে চিলি ও দক্ষিণ কোরিয়া উৎপাদন বাড়িয়েছে চারগুণ। চিন, ভারত, ব্রাজিল, মেক্সিকো, তুর্কিস্তান ও উরুগুয়ে বাড়িয়েছে তিনগুণ।
আইইএ-র মতে ২০৫০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে নিঃসরণ শূন্য করতে পারলেই উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে মনে রাখতে হবে একই সময়ে সরাসরি বিদ্যুৎ ছাড়া পরিবহন ক্ষেত্র ও তাপ উৎপাদনের চাহিদা মেটাতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে আড়াইগুণ।
সাধারণ ভাবে কয়লা ও লিগনাইট থেকে তাপবিদ্যুৎ এবং পরমাণু-বিদ্যুতের উৎপাদন কমছে, বাড়ছে নবায়নযোগ্য শক্তি ও গ্যাস-বিদ্যুৎ। তবে তা উষ্ণায়ন ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তাছাড়া তাপবিদ্যুতের তুলনায় গ্যাস-বিদ্যুতের নিঃসরণ অর্ধেকের কম হলেও নিঃসরণ একেবারে বন্ধ হয় না। মনে রাখতে হবে আমরা শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিঃসরণ বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা করছি। বিদ্যুৎ ও তাপ উৎপাদনে ২৫ শতাংশ নিঃসরণ হয়। বিদ্যুতের কর্মক্ষমতা অনেকটাই বেড়েছে। তবে পরিবহন, শিল্প, কৃষি ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিঃসরণ হয় ৭৫ শতাংশ, সেসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি খুবই কম হয়েছে।
সূত্রনির্দেশ:
তাপবিদ্যুৎ থেকে মুক্তির পথ কতদূরে ও গ্যাসবিদ্যুৎ
আমার প্রশ্ন গুলো উদ্ধত মনে হলে সেটা নিশ্চয় আমার লেখনভঙ্গির দোষ। সেটা উদ্দেশ্য ছিলনা। আর আমি কোনো পন্ডিতও নয়। খুবই ম্যাংগো লোক। নবায়নযোগ্য শক্তির উপর আমার বিন্দুমাত্র বিরক্তি ও নেই। আমার প্রশ্ন শুধু সেসবের রিলেটিভ কস্ট , তার সাস্টেনেবিলিটি এবং বিভিন্ন দেশে ইমপ্লিমেন্টেশন নিয়ে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং একটা জ্বলন্ত সমস্যা এখন লিটেরালি। কিন্তু হটাৎ করে কালকে তো সব দেশ গাড়িঘোড়া - কলকারখানা সবাই বন্ধ করে দিতে পারেনা বা দেবেনা চাইলেও । অনেক দেশ ই সেক্ষেত্রে স্লো বাট স্টেডি মেসার্স নিচ্ছে এমিশনস কমানোর জন্য। সেখানে রেনেয়াবলস এনার্জি শিফট যেমন আছে , ইলেকট্রিক ভেহিকলস শিফট যেমন আছে - তেমনি অন্য দিকে কার্বন ক্যাপচার , নক্স রিডাকশন থেকে গ্রীন হাইড্রোজেন -অনেক কিছু নিয়েই একসাথে কাজ হচ্ছে। ইলেকট্রিক ভেহিকল যেমন এসে গেছে তেমনই ফুয়েল সেল গাড়ি নিয়ে রিসার্চ চলছে। কোনটা বা কোনগুলো শেষ অবধি সফল হবে, আজকে দাঁড়িয়ে সেটা কেও প্রেডিক্ট করতে পারেনা।
সেখানে প্রদীপবাবু যখন রেনেয়াবলস এর জন্য সওয়াল করছেন , সেটার পজিটিভ -নেগেটিভ নিয়ে প্রশ্ন করাটাও কি অন্যায় ? কে আজকে দাঁড়িয়ে বলতে পারে আজ থেকে ২০-৩০ বছর পরে অন্য কোনো লার্জার প্রবলেম আসবে কিনা ? যেমন ব্রিটিশ আমলে কোবরা ইফেক্ট হয়েছিল ? একটা সমস্যা সামলাতে গিয়ে পরে সেই প্রবলেম আরো বড়ো হয়ে ফিরে আসা ?
আমার বলার ভঙ্গির দোষ মেনে নিয়েও এই ফোরামে যে প্রশ্নগুলো তোলা হয়েছে সেগুলোর উত্তর তো চাওয়াই যায়। মুশকিল হল কিছু সেমিনারে এসব জিগালে সেখানের প্রেজেন্টার দেরও প্রদীপবাবুর মতই খেপে যেতে দেখেছি । প্রশ্ন মানেই যে অন্ধ বিরোধিতা নয় এটুকু অন্তত ম্যাচিউরড লোকজনের থেকে আশা করা যায় ?
১। সুকি যেটা লিখলো , অয়েল এন্ড গ্যাস এ বছরে ৩৭,০০০ কোটি ডলার সাবসিডি দেওয়া হয় , সেটার কোনো রিলিয়াবল সোর্স ?
২। সৌরবিদ্যুৎ সবথেকে সস্তা - এটার কোনো রেফারেন্স আছে -? ফর উদাহরণ - আমার দেশে রুফটপ ৫ কিলোওয়াট সিস্টেম এর কস্ট অফ ইনস্টলেশন আর সেভিংস ধরলে ধরলে ব্রেক ইভেন হতে প্রায় চার বছর লাগছে এখন। আমি নিজেই লাগিয়েছি।
৩। যে পরিমান সাবসিডি আজকে জার্মানি বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো দিচ্ছে ইলেকট্রিক গাড়িতে শিফট করার জন্যে -সেই পরিমান সাবসিডি ইন্ডিয়া , পাকিস্তান ,বাংলাদেশ বা অন্য এশিয়া আফ্রিকার দেশগুলো দিতে পারবে কিনা ? উত্তরটা মনে হয় অবভিয়াস। সেক্ষেত্রে এতগুলো দেশের অপসন কি আজকে দাঁড়িয়ে ?
আরো অনেক প্রশ্ন ছিল । কিন্তু আপাতত এটুকুই থাক।
'ক্ষেপে' যাওয়া, রেগে যাওয়া আর বিরক্ত হওয়া কথাগুলোর মানে আলাদা। বন্ধুদের সঙ্গে কিংবা পরিচিতদের whatsapp group-e ' খেপে' যাওয়া চলতে পারে, এই রকম মঞ্চে একেবারেই নয়। ভাষা ব্যবহারে সাবধনীী হোন।
লিখতে অনেক সময় লাগছে, তাই ছোট করে বলি। যে লেখা নিয়ে আলোচনা করতে চান সেটা অন্তত দুতিনবার পড়া দরকার। জলবায়ু বদল নিয়েও ভাল করে জানা দরকার। এনিয়ে জানতে বুঝতে আমার বেশ কয়েক বছর লেগেছে। আপনার নানারকম মন্তব্য শুনে বোঝা যাচ্ছে এ বিষয়ে আপনার জ্ঞান ভাসা ভাসা। এ নিয়ে জানা সময় নষ্ট করা নয়। কারণ এটাই এখন পৃথিবীর প্রধান সমস্যা।
আমি লেখা সহজ করার পাঠ্য করার জন্য গবেষণাপত্রের মত লেখার মধ্যে রেফারেন্স দিই না। লেখার শেষে দিই। বিষয়টা এমনিতেই ভারি, আরও ভারি করতে চাই না। তার কিছু অসুবিধাও আছে, যাতে আপনাদের কারও কারও অসুবিধাও যাা হচ্ছে। তাা
আমি সেমিনার দিচ্ছি না। একটা লেখা লিখেছি মাত্র। সব প্রশ্নের উত্তর দেবার দায় আমার নেই। বিশেষ করে যখন বুঝতেই পারছি অনেকের নড়ে বসার ইচ্ছে নেই। এইসব বিষয়ে জানতে বা রেফারেন্স দেখতে এখন আর লাইব্রেরী যেতে হয় না। হাতে একটি মুঠো ফোনই যথেষ্ট। কাজেই মনে করি, আগ্রহটাই আসল। তাছাড়া আমিতো আর স্কুল শিক্ষক নই যে ছাত্রদের সব প্রশ্নের উত্তর দেব! বিশেষ করে এই মাধ্যমে লিখতে যখন আমার বেশ অসুবিধা। একটু পড়ে জেনে নিতে হবে।
আমিতবাবুর প্রথম প্রশ্নের জন্য উত্তর: ১ আগস্ট, ২০১৯-এর The Guardian পত্রিকায় Damian Carrington এর প্রতিবেদন Just 10 percent of fossil fuel subsidy cash ' could pay for green transition'।
দ্বিতীয় প্রশ্নটা অর্থহীন। নিজেই বলছেন সৌর বিদ্যুৎ চার বছরে break even হয়ে যাচ্ছে, তারপরে ২৫ বছর ধরে কিন্তু পুরোটাই লাভ।
এই যুক্তিতেই আমাদের আবাসনে পর্যায়ক্রমে ৮০ কিলোওয়াটের সোলার প্যানেল বসেছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে সোলার বিদ্যুৎ চাই বললে লোকে শোনে না। কিন্তু যদি বলা যায় এ ভাবে পাাঁচ বছরেে দ্বিগুণের বেশি আয় হয়, তখন লোকে খুশি হয়়।
ভারতে একটি সোলার প্ল্যান্টের জন্য কোম্পানি দাম ধরেছিল ইউনিট প্রতি ১.৪৪ টাকা।
ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যাপারে আমি এখনো কিছু বলিনি। তবে সে ক্ষেত্রে ভরতুকির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রচুর নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন, প্রচুর মানে সিংহভাগ। এবং দেশ জুড়ে চার্জিং স্টেশন তৈরি করা। নইলে শহরে নিঃসরন কমলেও দেশের nisr, নিঃসরন কমবে না।
এখন অমিতবাবু ও বাকিদের আগ্রহ দেখে ভাল লাগছে। তবে পৃথিবীকে পুরোপুরি বাঁচানো যাবে না নিশ্চিত। ২০৪০ সালের মধ্যে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়াটাও নিশ্চিত। অন্তত তারপরের ক্ষতি থামাতে আমাদের সক্রিয় এখনই হতে হবে। আমাদের বাচ্চাদের স্বার্থে।
নেই নেই করে অনেক কথা বললাম। বাকি কথা কিছুটা লেখায় থাকবে।
আমিতবাবু, মনে হয় আপনি আমার চেয়ে ছোট অনেকটাই। হয়ত একটু আঘাত দিিয়েছি , দাদা ভেবে ক্ষমা করবেন।
পোদিপদা কি গার্ডিয়ানের পোতিবেদন পড়ে বুজেচেন? নাকি চোক বুলিয়ে আন্দো করচেন? ওখানে সাবসিডি ধরা হয়েচে অনাদায়ী কার্বন ট্যাক্সকে। অবশ্যই ফসিল ফুয়েলের ওপর কার্বন ট্যাক্স বেশি চাপবে। সেটা না দিতে হলে মনে হবে ফসিল ফুয়েল বেশি সাবসিডি পাচ্চে।
একে বলে টটোলজি পোদিপদা।
নড়ে বসার ইচ্ছে আছে কিনা আপুনি কি করে জানলেন? ইহা ত whatsapp group নহে।
অমিতবাবু ও অন্য যারা আগ্রহী ফোন নম্বর দিতে পারেন বিস্তরিত কথা বলার জন্য । ফোো