এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  পর্যালোচনা (রিভিউ)  বই

  • ‘উৎস মানুষ’ প্রকাশিত নিরঞ্জন ধর-এর "বিবেকানন্দ অন্য চোখে" বইতে বছরের পর বছর ধরে আমার চিঠির বিকৃত রূপ (Distorted Version) প্রকাশ বন্ধ করুন 

    SUBHAS CHANDRA Ganguly লেখকের গ্রাহক হোন
    পর্যালোচনা (রিভিউ) | বই | ২০ জুন ২০২৫ | ১৮৬ বার পঠিত
  • [ভূমিকা:
    সুভাষ চন্দ্র গাঙ্গুলী-র একটিমাত্র লেখা ―“পর্বতের উপরে আমার রক্ষাকর্তা” (Link: https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=27114)― বাইশে এপ্রিল ২০২৩ গুরুচন্ডালি-র “হরিদাস পাল” বিভাগে প্রকাশিত হয়েছিল।

    ছয়ই নভেম্বর ২০২৩ তিনি প্রয়াত হয়েছেন।

    প্রয়াত সুভাষ চন্দ্র গাঙ্গুলী-র অন্যান্য বাংলা লেখাগুলো তাঁর বন্ধুরা একে একে “হরিদাস পাল” বিভাগে প্রকাশ করার চেষ্টা করবেন।

    নিচের লেখাটি দিয়ে এই প্রকাশনা পর্ব শুরু হোলো।]

    উৎস মানুষপ্রকাশিত নিরঞ্জন ধর-এর "বিবেকানন্দ অন্য চোখে" বইতে বছরের পর বছর ধরে আমার চিঠির বিকৃত রূপ (Distorted Version) প্রকাশ বন্ধ করুন

    সুভাষ চন্দ্র গাঙ্গুলী

    ‘উৎস মানুষ’ পত্রিকার অক্টোবর-নভেম্বর, ১৯৮৩ সংখ্যায় নিরঞ্জন ধর-এর লেখা “গৃহী বিবেকানন্দ” নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রবন্ধটি পড়ে আমি একটি চিঠি [letter to the editor] লিখে তা ‘উৎস মানুষ’ পত্রিকার দপ্তরে পাঠিয়েছিলাম। চিঠিটি নিচে দিলাম:

         শ্রী নিরঞ্জন ধর তাঁর “গৃহী বিবেকানন্দ”-এ (উৎস মানুষ, অক্টোবর-নভেম্বর, ১৯৮৩) “ভক্তদের অন্ধ উচ্ছ্বাস ও কতগুলি অলৌকিক কাহিনী”র বদলে বিবেকানন্দের মানস জগতের যে তথ্যভিত্তিক (যার বেশীর ভাগটাই আমার কাছে অজানা ছিল) চিত্র রচনার চেষ্টা করেছেন তা মানুষ-বিবেকানন্দের ব্যক্তিসত্তার উপর যে নানা দিক থেকে প্রশংসনীয়ভাবে আলো ফেলেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।  বিশেষভাবে আমার মত মানুষ (যাদের সংখ্যা খুব কম নয় বলেই আমার ধারণা), যারা শৈশব ও বয়ঃসন্ধিকাল জুড়ে পারিবারিক ও সামাজিক সূত্রে বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণের ‘মহাপুরুষ’ মূর্তি ও  সামগ্রিকভাবে ‘আস্তিক’ চিন্তার প্রভাবে বড় হয়েছি, পরে একসময় অন্ধ উগ্রতায় ‘নাস্তিক’ হবার চেষ্টা করেছি এবং তার পরে একসময় আস্তে আস্তে অনুভব করেছি যে অন্ধ ‘নাস্তিকতা’ (অর্থাৎ ধর্ম বা ঈশ্বরবিশ্বাসের সামাজিক, ঐতিহাসিক, মনস্তাত্ত্বিক উৎসগুলি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক সচেতনতাবিহীন ‘নাস্তিকতা’) অন্ধ ‘আস্তিকতা’র মতই আর এক ধরনের গোঁড়ামী ছাড়া কিছু নয়, তাদের কাছে বিবেকানন্দের এই দ্বিধা-দ্বন্দে ভরা মানবিক চিত্র তাঁকে যে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

         কিন্তু প্রবন্ধটি পড়ে লেখকের চিন্তা বা মানসিকতার কিছুটা স্ববিরোধিতা ও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গীর প্রকাশে যে কতগুলো আপাত অস্বচ্ছতা চোখে পড়ল সে ব্যাপারে আমার নিজের স্পষ্টতার জন্য তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

         ‘সন্ন্যাস-জীবনের’ আদর্শ সম্পর্কে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গী কী তা তিনি পরিষ্কার করেন নি। অর্থাৎ তিনি কি ব্যক্তিগতভাবে এর অংশ বা এটাকে একটা কাম্য জীবনাদর্শ বা জীবনাচরণ বলে মনে করেন? সেটা তাঁর রচনায় স্পষ্ট নয়। যেমন, এক জায়গায় তিনি “ভারতীয় সন্ন্যাসের শাশ্বত আদর্শের” কথা উল্লেখ করেছেন। এতে অনুক্ত ভাবে এই আদর্শের প্রতি তাঁর আনুগত্যই প্রকাশ পায়। অথচ পরক্ষণেই এই আদর্শের সাথে বিবেকানন্দের অসঙ্গতিকে বিবেকানন্দের  চরিত্রের “সর্বাপেক্ষা প্রীতিপ্রদ” দিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

         সন্ন্যাসের আদর্শের প্রতি তাঁর আনুগত্য না থাকলে বিবেকানন্দকে “গৃহী”প্রমাণ করার জন্য তাঁর এই উদ্যোগ কেন এই প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক ভাবেই এসে যায়। যেমন, ‘মার্কসবাদে’ বিশ্বাসী নন এমন একজন ব্যক্তি যদি ঐ মতাদর্শে ঘোষিত ভাবে বিশ্বাসী একজনকে ‘সংশোধনবাদী’ প্রমাণের চেষ্টা করেন, সেক্ষেত্রে এই সন্দেহ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় যে দ্বিতীয়োক্তকে হেয় প্রতিপন্ন করার ইচ্ছে থেকেই তিনি এই চেষ্টা করছেন ─ মূল্যায়নের প্রয়োজনে নয়।

         সেই সন্দেহ গভীরতর হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যদি এই প্রসঙ্গে তির্যক/কটূ/বিদ্রুপাত্মক/পরিহাসমূলক উক্তি চলে আসে। এই রচনায় এই প্রসঙ্গে এই ধরনের উক্তির কয়েকটি মাত্র উদাহরণ ─ “লালায়িত হওয়া”, “প্রলোভিত” হওয়া, “বিবেকানন্দ স্বভাব সন্ন্যাসী ছিলেন না, ছিলেন অভাব সন্ন্যাসী”, “রামকৃষ্ণ একেই বলেছেন ‘পেট-বৈরাগী’ ” ইত্যাদি। একই সুরের ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য রচনাটির নানা জ়ায়গায় ছড়িয়ে ছটিয়ে আছে। স্পষ্টতার অভাবে তথ্যসমৃদ্ধ এরকম একটি রচনা এই সব উক্তি ও সমধর্মী নানা ইঙ্গিতের কারণে বিবেকানন্দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কিন্তু অনুসন্ধিৎসু মানুষের মনে যদি উপরের ধরনের কোন সন্দেহের ছায়াপাত করে, তবে লেখাটির উদ্দেশ্যই ─ অর্থাৎ মানুষ বিবেকানন্দকে বোঝার চেষ্টা করা ─ ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।

         ‘সন্ন্যাস’ যাঁরা গ্রহণ করেছেন তাঁদের অনেকের সন্ন্যাসপূর্ব জীবনেতিহাসে কোন না কোন মর্মপীড়ার বা আঘাতের (শুধু আর্থিক অভাবজনিত নয়) কাহিনী পাওয়া যেতেই পারে (যাবেই এমন নয়)। এবং এই ব্যাখ্যা (বোধ হয় অতিসরলীকৃত) মনে আসতেই পারে যে, তাঁদের সন্ন্যাস গ্রহণের (বা জীবনের অন্য কোন মোড় নেওয়ার) চালিকা শক্তি হিসেবে কেবল ঐ নেতিবাচক অভিজ্ঞতাই কাজ করেছে। মনে হওয়া না হওয়া যার যার নিজ নিজ এক্তিয়ারের ব্যাপার। তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই।  কিন্তু সেই মোড়টা যে বিশেষ দিকে নিল, তাকে উপস্থিত করতে গিয়ে প্রয়াত ব্যক্তির সেই বেদনার অভিজ্ঞতাকে যথসাধ্য শ্রদ্ধা ও সহানুভূতির সাথে বা বিকল্পে নিরাসক্তির সাথে বোঝার চেষ্টার বদলে কটূ বা বিদ্রুপাত্মক উক্তি/ইঙ্গিত কোন মানুষের জীবনকে অনুধাবন (লেখক বা পাঠক উভয়ের দিক থেকেই) করার ক্ষেত্রে (অর্থাৎ সেই মোড় নেওয়াটাকে ‘মেকি’ বলে প্রমাণ করাটা যদি উদ্দেশ্য ─ জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে ─ না হয়ে থাকে) সহায়ক ভূমিকা পালন করে কি’না সেটা শ্রী ধরকে আর একবার ভেবে দেখতে অনুরোধ করব।

    অন্য দিকে বিবেকানন্দের মনোজগতে উপরোক্ত যন্ত্রণাবিদ্ধ অসঙ্গতি, দ্বন্দ্ব ও অপরাধবোধের যে তথ্যভিত্তিক চিত্র যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তিনি উপস্থিত করেছেন, তাকে মনোবিজ্ঞানের আলোতে যথাসাধ্য উপস্থিত করার চেষ্টা করতে পারলে (যত অসম্পূর্ণ ভাবেই হোক ─ সব সময়েই তা অসম্পূর্ণ থাকতে বাধ্য) পাঠকরা (এবং হয়তো তিনি নিজেও) উপকৃত হতেন।

    ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে যে বিবেকানন্দের যে মানস-চিত্র লেখক তথ্যের ভিত্তিতে উপস্থিত করেছেন তার থেকে এই সিদ্ধান্তই বেশী যুক্তিসঙ্গত যে বিবেকানন্দের মধ্যে সন্ন্যাস ও গৃহজীবন দুইয়ের আকর্ষণ সমান্তরালভাবে চলেছে এবং তাঁকে নানারকম যন্ত্রণাদায়ক অসঙ্গতি, দ্বন্দ্ব, ক্ষুদ্রতা, তুচ্ছতা, সংকীর্ণতা (অবশ্য শুধু “গৃহী” জীবনের আকর্ষণই তার কারণ এমন ভাবনা বাস্তবোচিত নয় ─ এদেশেরই পুরাণ মহাকাব্যে অরণ্যবাসী সুপরিচিত ঋষিদের চরিত্র-চিত্রণে শাস্ত্রোক্ত নানা ‘রিপু’র উপস্থিতি দ্ব্যর্থহীন ভাবে বর্ণিত হয়েছে) ইত্যাদির শিকারও তিনি হয়েছেন ও তাঁকে অপরাধবোধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই তথ্যের আলোতেই বিবেকানন্দকে পূর্ণ “সন্ন্যাসী” বলাটাও যেমন একপেশে, “গৃহী” বলাটাও বোধ হয় তাই। মানুষের তৈরী কোন একটা নির্দিষ্ট ‘ছাপ’ বা ‘তকমা’র মধ্যে একজন ব্যক্তিকে পুরোপুরি ফেলা যাবেই (অর্থাৎ এই ‘ছাপ’টা যেন মানুষের ধারণা-নিরপেক্ষ একটা প্রাকৃতিক বস্তু/ঘটনা), এরকম চিন্তা বাস্তবানুগ নয়, যদিও বহু ক্ষেত্রেই এরকম প্রবণতা আমরা অধিকাংশই শৈশব থেকে হয়তো অজ্ঞাতসারেই চারপাশ থেকে অর্জন করে বসি।  শ্রী ধরেরই দেওয়া মূল্যবান তথ্যাবলী থেকে এই ধরনের বাঁধাধরা সংজ্ঞার সীমার মধ্যে কোন মানুষকে বুঝতে চাওয়ার যে ভ্রান্তি সেটাই বেরিয়ে আসে।

    আর দু’টি ছোট ব্যাপারে শ্রী ধরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। মিস্‌ মূলারের ও লিঁও ল্যান্ডস্‌বার্গের অভিযোগের তথ্যগুলির কোন সূত্র তিনি দেন নি। অভিযোগগুলি গুরুতর; কাজেই সূত্রের উল্লেখ বিশেষ দরকার বলে মনে হয়।
                সুভাষ চন্দ্র গাঙ্গুলী

    [শ্রী ধরের রচনা অনুযায়ী, ইংরেজ ভক্ত মিস্‌ হেনরিয়েটা মূলার এই অভিযোগে বিবেকানন্দের “সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছেদ” করেন যে “স্বামীজীকে ‘ভারতীয় কাজের জন্য’ যে অর্থ দেওয়া হয়েছিল তার সিংহভাগ তিনি পারিবারিক প্রয়োজনে ও মঠে বড় বড় তিনটি ‘আরামপ্রদ’ ঘর তৈরী করতে ব্যয় করেছেন”। আমেরিকায় তাঁর আর একজন ‘অনুরক্ত শিষ্য’ লিঁও ল্যান্ডসবার্গ “বিবেকানন্দের রাজকীয় জীবন-যাত্রার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ...... তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন”।

    অনাবশ্যক বিবেচনায় এই পাদটিকাটি প্রায় চল্লিশ বছর আগে পাঠান উপরের চিঠিতে ছিল না।]

    দুঃখের বিষয়, ওপরের চিঠিটির পরিবর্তে‘উৎস মানুষ’পত্রিকার জুলাই ১৯৮৪ সংখ্যায় আমার নামে নিচের চিঠিটি ছাপা হয়:

    লেখক ব্যক্তি বিবেকানন্দের মানস জগতের যে তথ্য ও যুক্তিভিত্তিক দিকটি দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়কিন্তু রচনাটিতে লেখকের চিন্তার স্ববিরোধিতা ও দৃষ্টিভঙ্গির অস্বচ্ছতা চোখে পড়েবিবেকানন্দের সন্ন্যাস গ্রহণের কারণ হিসেবে লেখক অভাবজনিত অবস্থার কথা বলেছেনকিন্তু এই মনস্তাত্ত্বিক দিকটির একটা পূর্ণ বিশ্লেষণ তিনি করেন নিবরং কিছু শব্দ ব্যবহার করেছেন যেগুলোকে কটূক্তি বলে মনে হতে পারে
                                     সুভাষচন্দ্র গাঙ্গুলী
                                    সল্টলেক,কলকাতা

    আমার লেখা চিঠিটি ‘উৎস মানুষ’ পত্রিকায় ছাপা না হ’লে আমার কিছুই বলার থাকত না। কিন্তু তার বদলে “সংক্ষেপ করে প্রকাশ” করাতে আমার লেখা সাতশো চৌষট্টি (৭৬৪) শব্দের চিঠিটা পঞ্চান্ন (৫৫) শব্দের কয়েক পংক্তিতে পরিণত করে আমার লেখা চিঠি হিসেবে পত্রিকার জুলাই ১৯৮৪ সংখ্যায় (‘বিবেকানন্দ বিতর্ক’/‘পাঠকের প্রতিক্রিয়া’ নামক এক বিভাগে) যা বের হয়েছিল সেটা আদতে আমার নয়, অন্য কারও (আক্ষরিক অর্থে) লেখা। ঐ পংক্তিকটি পূর্বাপরহীনভাবে ছুঁড়ে দেওয়া, যুক্তির বালাইমুক্ত, বিশ্লেষণহীন, প্রশ্নহীন, উদাহরণহীন কিছু সমালোচনামূলক মন্তব্য (পত্রিকা পরিচালকদের কারও নিজের ভাষায়) মাত্র, যার কোন দায়িত্ব ওই পংক্তিকটির নিচে লেখা নাম ও ঠিকানাধারী ব্যক্তি অর্থাৎ আমার ছিল না এবং আজও  নেই।

    অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, যে পাঁচটি বাক্য আমার লেখা চিঠি হিসাবে‘উৎস মানুষ’ পত্রিকায় ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয়েছে, তার একটিও কিন্তু আমার লেখা মূল চিঠিতে নেই।

    প্রাপ্ত চিঠি বা রচনা ছাপান বা না ছাপান কোনো পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর খেয়ালখুশীর ব্যাপার হ’লেও ছাপান’র সিদ্ধান্ত একবার নিলে ছাপান’র ক্ষেত্রে “সংক্ষেপ করে প্রকাশ” করার নামে লেখকের অধিকার লঙ্ঘন করে নিজেদের খেয়ালখুশির অবকাশ থাকেনা এই ন্যূনতম ধারণা বা বোধটুকু জন্মান’র আগেই অপরিণতমনস্ক সম্পাদকমন্ডলীর উপর একটা পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্ব এসে পড়াতেই এই বিপত্তি ঘটেছিল। অন্য কারও লেখা ছাপান’র সিদ্ধান্ত নিলে পত্রিকা পরিচালকদের অধিকারের সীমা (অর্থাৎ লেখকের অনুমতি না নিয়ে) এইটুকুই যে পান্ডুলিপিতে সম্ভাব্য ভুল-চুক/পুনরাবৃত্তি ইত্যাদি সংশোধন ও সেই সূত্রে মূল রচনার সামান্য সংক্ষেপিকরণ। এক্ষেত্রে কঠোরভাবে এই মান্যতা’র পরিধির মধ্যেই সমস্ত তথাকথিত ‘বাজারী’ (অর্থাৎ বাণিজ্যিক) পত্র-পত্রিকা’ও চলাফেরা করে। নইলে তাদেরকে আইনী জটিলতার মধ্যে পড়তে হতে পারে। ‘বাজারী’ পত্রিকায় বর্তমান রচনাকারীর যে দু’একটি চিঠি ছাপা হয়েছে (বেশির ভাগই ছাপা হয়নি) সেখানে এধরনের আপত্তির কোন অবকাশই ঘটেনি। অতসব জানা/বোঝা তো দূরের কথা, অন্যের রচনার ক্ষেত্রে এরকম একতরফা খেয়ালি ভূমিকা নিলে রচনাকারীর প্রতি অবিচার করা হয়, সেই বোধটুকুও যে এই অপরিণতমনস্ক সম্পাদকমন্ডলীর মধ্যে তখনও পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি, আগে থেকে তা আঁচ না করতে পেরে ওই লেখা পাঠান’র জন্য অনুশোচনা হয়েছিল। নিজের নামে প্রকাশিত ওই পংক্তিকটি সেসময় আমার কাছে নিরতিশয় অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছিল।

    ‘কুসংস্কারাচ্ছন্ন অজ্ঞ’ জনগণকে ‘আলোকিত’ করার উদগ্র আগ্রহে বহির্জগৎ ও অন্তর জগৎ সম্পর্কে আমাদের নিজেদের বোঝার অনিবার্য অসম্পূর্ণতা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব থেকে জন্ম নেওয়া নম্রতাবর্জিত (devoid of humility) এক ধরনের স্বকপোলকল্পিত ‘বেশী জানি/বুঝি’ (অর্থাৎ তথাকথিত অ-‘যুক্তিবাদী’-দের থেকে) মনোভাবের অনাকাঙ্ক্ষিত একটা সাধারণ বাতাবরণ সে সময় ‘যুক্তিবাদী’, ‘গণবিজ্ঞান’ ‘কুসংস্কার বিরোধী’ আন্দোলনের চালু কর্মকান্ডকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছিল ― তারও একটা অপ্রত্যক্ষ অবদান এই ধরনের বুদ্ধিনাশা একতরফা খাম-খেয়ালি আচরণের একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা বলে মনে হয়েছিল ।

    এনিয়ে তখন আর বেশী মাথা ঘামাইনি এবং কালক্রমে ঘটনাটা স্মৃতিতে খুবই ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি জানতে পারলাম, ‘উৎস মানুষ’-এ ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত অধুনা প্রয়াত নিরঞ্জন ধর-এর এবং অন্যদের সে সময়কার আরও কয়েকটি প্রবন্ধ নিয়ে  (‘উৎস মানুষ’-এর তরফে প্রকাশিত) ‘বিবেকানন্দ অন্য চোখে’ সংকলনে আমার বিনা অনুমতিতে সে সময় মুদ্রিত ওই আপত্তিকর পংক্তিগুলি আমার নামেই সেখানে (‘বিবেকানন্দ বিতর্ক’/‘পাঠকের প্রতিক্রিয়া’ শিরোনামে) ২০১১ সালে মুদ্রিত তৃতীয় সংস্করণে আবার  প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ যেমন ভাবা হয়ছিল ব্যাপারটা তেমন পুরোন বা তামাদি হয়ে যায় নি। এখনও তার পুনরাবৃত্তি হয়ে চলেছে। কাজে কাজেই, দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছর পরে এ প্রসঙ্গের অবতারণা।

    পাঠকদের প্রতিক্রিয়াকে ঘিরে শ্রী ধরের সে সময়েই ‘উৎস মানুষ’-এ প্রকাশিত ‘লেখকের জবানবন্দী’ রচনাটি এই সংকলনে পড়ে আরও সন্দেহ করার কারণ দেখা যাচ্ছে যে আমার লেখা (একেবারে উপরের) মূল চিঠিটি তাঁর কাছে আদৌ পৌঁছেছিল কি’না, অর্থাৎ তিনি মূল চিঠিতে সাড়া দেবার যথাযথ সুযোগ পেয়েছিলেন কি’না।  নাকি ‘উৎস মানুষ’-এ প্রকাশিত গুরুত্ব দেওয়ার অযোগ্য উপরে উদ্ধৃত বিকৃত (distorted) ‘ভাষ্য’টিই শুধু তাঁর গোচরে আনা হয়েছিল ।

    এই পরিপ্রেক্ষিতে ‘বিবেকানন্দ অন্য চোখে’ বইটির প্রকাশক অর্থাৎ‘উৎস মানুষ’-এর পরিচালকমন্ডলীর কাছে আমার অনুরোধ, এই বই-এ আমার বিনা অনুমতিতে, অন্যের লেখা কিন্তু আমার নামে ছাপান পংক্তিগুলি দিয়ে তৈরী ওপরের চিঠিটি যেন পরের সংস্করণে (বলা বাহুল্য যে, আশা করা হচ্ছে প্রকাশকদের স্বাভাবিক কামনা পূরণ হবে অর্থাৎ নতুন একটি সংস্করণ প্রকাশের প্রয়োজন হবে) বাদ দিয়ে দেওয়া হয়

    দ্বিতীয় একটি অনুরোধ এই যে, চালু সংস্করণের এখনও পর্যন্ত অবিক্রীত বইগুলিতে একটি ছাপান চিরকূট যোগ করে দেওয়া হোক, যাতে অন্যের লেখা ওই চিঠিটি ভুলক্রমে আমার নামে ছাপা হওয়ার কারণে বাতিল বলে গণ্য হল  এই মর্মে বা সমধর্মী একটি ঘোষণা থাকবে

    আমার একান্ত অনুরোধ, দয়া করে আপনারা এই চিঠিটির লেখক হিসাবে আমার নাম ভবিষ্যতে  প্রকাশ করা  থেকে বিরত থাকুন

    Copyright (c) 2023 by Subhas Chandra Ganguly. This is an open access article distributed under the terms of the Creative Commons Attribution-Noncommercial-No Derivative License (see http://creativecommons.org/licenses/by-nc-nd/3.0/us/), which permits anyone (if he/she so wishes) to share this article, provided (1) the distribution is only for noncommercial purposes, (2) the original author and the source are attributed, and (3) no derivative works including any alterations are made. For any distribution, this copyright statement should also accompany the article without any alteration and in its entirety, and the publication history should also accompany the article.

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • পর্যালোচনা (রিভিউ) | ২০ জুন ২০২৫ | ১৮৬ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    লাল রঙ - Nirmalya Nag
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন