এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  পর্যালোচনা (রিভিউ)  সিনেমা

  • পহেলগাঁও, মিউনিখ এবং কিছু কথা

    রানা সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    পর্যালোচনা (রিভিউ) | সিনেমা | ১০ মে ২০২৫ | ৬৪ বার পঠিত
  • তাহলে বদ্দা মানে বিগ ব্রাদার আবার তার খেল দেখালেন! নাকি গোটা ব্যাপারটাই প্রি প্ল্যান্ড! মাখন আর মাইলেজ সেই তিনিই পাবেন। কিন্তু পুতিন?

    এবার তাহলে হবে কী?

    পাকিস্তানের মুনীর মানে মিলিটারি, রেঞ্জার থেকে শুরু করে আই এস আই-এর হোমরাচোমরারা কি বাজারের থলি নিয়ে চীন, তুরস্ক – এদের যুদ্ধাস্ত্রের ভ্যাট থেকে পচাধ্বচা অস্তর কিনতে যাবে?

    আর চীন? সে কি করাচী বা ইসলামাবাদে এসে তার কাঁধের ঝোলা দুলিয়ে গান গাইবে –
    ‘আমার এই ছোট্ট ঝুলি
    এয়ার ক্র্যাফট, মিসাইল আছে
    দেখে যা নিজের চোখে
    ড্রোন ড্রোনী কেমন নাচে?
    এ সুযোগ পাবে না আর
    বল ভাই কী দাম দেবে?
    অস্তর নেবে গো; অস্তর’।

    আমাদের এখানে আবার অর্থমন্ত্রী মাসিমা খরচা তুলতে তেল, সাবান, ন্যাপকিন, সিঁদুরে সেস বসাবেন। বাংলা আর বিহারে বড় বড় হোর্ডিং-এ লেখা থাকবে – ‘পাকিস্তানকা দিল্কি করার লুটনে / ম্যায় আয়ি হু বাংলা বিহার লুটনে’।

    আমাদের এখানে অবশ্য মিসাইল প্রযুক্তি বা ক্রয়োজেনিক টেকনোলোজি নিয়ে কিছুই এখনও শোনা যায় নি। শুধু জানা গেছে যে শ্রীলঙ্কা হল পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী দেশ!

    অপরদিকে বাংলাদেশে তো উৎসব লেগে যাবে। ফেবুতে লুঙ্গি ড্যান্স নাচতে নাচতে লেখা হবে – আমাগো ‘F16 রিক্সা মিসাইল’ এমন আন্ধাধুর ড্যান্স দেহাইলো য্যা এক্কেরে ভারতে হান্দাইয়া সব হালার হাওয়া ফুস কইর‍্যা দিসে! ফুডা ছাতা দিয়া হালায় এমন রাডার আর বঙ্গবল্টু স্যাডেলাইট বানাইসি, তয় কী কমু, হোগগল ঘডনা ঘডাইয়া তাগো চক্ষে বেবাক ঝিকিমিকি কইর‍্যা এক্কেরে গ্যাঞ্জাম কইর‍্যা দিসি। আর আমাগো পায় কেডা!         

        
    একদিকে এইসব ঘটছে আর আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন যে কোথায় কাশ্মীরের পহেলগাঁও আর কোথায় জার্মানির মিউনিখ!

    গত এপ্রিল মাসের ২২ তারিখ আমাদের সবাইকে হতচকিত করে দিয়ে এবং কিছু পরিবারকে তছনছ করে দিয়ে এক ভয়াবহ জঙ্গী আক্রমণ হয়ে গেল কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ। মোট ২৬ জন সিভিলিয়ান, আরও ভালো করে বললে নিরীহ পর্যটক, তাদেরকেও রেয়াত করল না জঙ্গিরা। মানে আর শুধু সেনাবাহিনীর লোক নয়, নিরীহ মানুষ বলি হতে শুরু হল কদর্য জঙ্গিদের হিংস্রতায়।

    তারপরে আমরা একদিকে দেখলাম কাশ্মীরি ভাই বোনেরদের মানবিক মুখ এবং কর্মকান্ড আর অপরদিকে দেখলাম ইসলাম ধর্মকে জঙ্গি ধর্ম হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া।

    হ্যাঁ, এটি বলাই বাহুল্য যে গত ৫০ বছরে সারা দুনিয়া জুড়ে যে জঙ্গি কর্মকান্ড ঘটে গেছে, তার বেশিরভাগটাই করেছে ইসলাম ধর্মের লোকজন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাদেরকে লজিস্টিক্স থেকে শুরু করে গোপন তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে কিন্তু অন্য ধর্মের লোকজনরাও।

    সেইজন্য চিন্তাশীল বোধ সম্পন্ন মানুষ মাত্রেই বলেছিল যে জঙ্গিদের কোনও ধর্ম হয় না। মৌলবাদীদের কোনও ধর্ম হয় না। সন্ত্রাসবাদীদের কোনও ধর্ম হয় না।

    তাই যারা যারা জঙ্গিদের ধর্ম নিয়ে নানা জায়গায় সোচ্চার হলেন, তাঁদের বিনীতভাবে বলবো, যে এই জঙ্গিদেরকে যে যে অন্য ধর্মের মানুষজন নানাভাবে সাহায্য করেছিল বা যে যে অন্য ধর্মের মানুষজন জঙ্গি হয়ে ধর্মের নামে কিছু নিরীহ মানুষ মেরেছিল, সেইসব ঘটনার কথাও মনে করতে।   

    এদিকে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেল যে পাকিস্তানের আই এস আই, লস্কর-ই-তৈবা, জৈশ-ই-মহম্মদ এবং পাকিস্তান মিলিটারিদের মিলিত হামলার ফলে প্রাণ দিতে হল নিরীহ নিরপরাধ কিছু মানুষকে।

    স্কেচ আঁকা হল। নামও জানা গেল।

    নেটে পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে যে কাশ্মীরকে নিয়ে গত প্রায় ৩৪ বছর ধরে চলে আসা জঙ্গি হামলা এবং তার প্রতি হামলায় প্রায় ৩,৫৯০ জন ভারতীয় সিকিউরিটি ফোর্সের জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন; ১৩,৩২১ জন জঙ্গি মারা গেছে; আত্মসমর্পন করেছে প্রায় ৮৪৭ জন জঙ্গি; গ্রেফতার হয়েছে ৫,৮৩২ জন।

    আর সিভিলিয়ান মারা গেছেন প্রায় ২০,০০০ জনেরও বেশি।

    গত ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামাতে আর্মি কনভয়ের ওপর যে আত্মঘাতী মানব বোমা হামলা হয়েছিল তাতে প্রাণ হারিয়েছিল ৩৯ জন নিরাপত্তা রক্ষী। আহত হয়েছিলেন প্রায় ৩৫ জন।

    এবং তার পরে একটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছিল যেখানে জঙ্গিদের মধ্যে কে যে মারা গেছিল বা কতজন মারা গেছিল সেটা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। তবে তৎকালীন জম্মু কাশ্মীরের মাননীয় রাজ্যপাল কী যেন একটা বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেছিলেন।

    এই পহেলগাঁও-এর ক্ষেত্রেও নাকি আগে থাকতে খবর ছিল বলে সংবাদ সংস্থা উল্লেখ করেছিলেন। তাহলে?  

    এদিকে বেঁচে ফেরা পর্যটকদের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে সেই পহেলগাঁও উপত্যকায় নিরাপত্তা রক্ষী ছিল অপ্রতুল।

    আর আমি খালি ভাবছি যে ঠিক কীভাবে, কত সন্তর্পনে স্থানীয় কিছু জঙ্গি সমর্থকদের সাহায্যে ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণ নিয়ে কেমন করে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল তারা!

    এ কি ভোজবাজি! নাকি অন্য কিছু? যেখানে রাস্তায় রাস্তায়, মহল্লায় মহল্লায় নিরাপত্তা রক্ষী!
     
    কেউ কেউ আবার হেরোইন ধরা পড়ার কথা বলছেন। বলছেন যে এটা নাকি তারই প্রতিশোধ। আবার প্রশ্ন উঠে গেল যে কোন কোন উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিক বা নেতাদের আত্মীয় ভাই বন্ধু পাকিস্তানের সঙ্গে এই এতো বিরূপ সম্পর্কের মধ্যেও স্মুথলি কীভাবে ব্যবসা করে চলেছে? 

    তাহলে ব্যাপারটা কী?

    জীবনানন্দ তাঁর একটি লাইনে লিখেছিলেন – ‘বিপুলা এ পৃথিবীর আমি কতটুকু জানি”। তাঁর সেই লাইন ধার করে লিখতে ইচ্ছে করছে – ‘বিপুলা এই ষড়যন্ত্রের আমি বা আমরা কতটুকু জানতে পারি?”

    একদিকে দেখা যায় কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলা হলেই সর্বাগ্রে অ্যামেরিকা প্রশাসন তার নিন্দা করে করে গলা ফাটিয়ে দেন, ওদিকে আবার তারা বা চীন, এরা পাকিস্তানকে তাহলে নানারকম সাহায্য করেন কী করে?

    কারণ সেই সাহায্যের বেশ অনেকটা পরিমাণ কিন্তু চলে যায় জঙ্গিদের কাছে। তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল?

    অ্যামেরিকা সাহায্য করল পাকিস্তানকে => পাকিস্তান সাহায্য করল জঙ্গীদের => অ্যামেরিকা সাহায্য করল জঙ্গিদের!

    পাকিস্তান এবং অধুনা বাংলাদেশকে যারাই সাহয্য করবেন, সেই টাকার ভাগ কিন্তু জঙ্গিদের কাছে যাবেই। 

    তাহলে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তান মিলিটারির মদতপ্রাপ্ত জঙ্গিরা জেহাদ ও জন্নত নামক দুই ভূতের দ্বারা ভারতবর্ষে তাণ্ডব করে চলেছেন।

    ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া এবং সেই বলি হওয়া প্রাণের অনন্ত স্বর্গ সুখের লোভনীয় হাতছানি দিয়ে ধর্মান্ধদের চোখে ছানি ফেলে অনেক নেতা মাতব্বর কিন্তু সভ্যতার শুরু থেকেই বেশ করে কম্মে খেয়ে চলেছেন।
     
    তাদের উদ্দেশ্যে লিখি – ‘পশুশ্চেন্নিহতঃ স্বর্গং জ্যোতিষ্টোমে গমিষ্যতি । স্থাপিতা যজমানেন তত্র কস্মান্ন হিংস্যতে’।।

    এই জ্যোতিষ্টোম যজ্ঞে পশু বলি দিলে নাকি সরাসরি স্বর্গে চলে যাওয়া যায়! কিন্তু মজার কথা হচ্ছে যে এতো সহজে স্বর্গে যাওয়ার এই রাস্তা কোনও পুরোহিত কিন্তু গ্রহণ করেন না; অন্যদেরকে গ্রহণ করতে বলেন।
     
    আবার এই জ্যোতিষ্টোম যজ্ঞে মতো মুসলমানদের জেহাদে প্রাণ গেলে নাকি রবার্তো কার্লোসের ডাইরেক্ট ফ্রিকিকের ফলে বলের সরাসরি গোলে ঢুকে যাওয়ায় মতো সরাসরি নাকি জন্নতে চলে যাওয়া যায়!

    তবে সেই জেহাদে বলি হতে জঙ্গিদের মদতদাতারা কেন নিজেরা যান না? কেন তারা তাহলে কচি কচি ছেলেপুলেদের মাথা খেয়ে নিজেরা জন্নতে না গিয়ে তাদেরকে কেন পাঠান?

    যারা, বা যে যে ধর্মের মানুষেরা এই চালাকিটা বুঝতে পারবেন তাদেরকে কিন্তু আর ধর্মের নামে জঙ্গি বানানো যাবে না।

    যাই হোক, এবার চলে আসি মিউনিখে।

    মিউনিখ প্রসঙ্গে আসবার কারণ হল যে এই পহেলগাঁও হামলার পর জঙ্গিদের জবাব দেওয়া হবে কোন পথে?

    সময়টা তখন ১৯৭২। সেবারের সামার অলিম্পিকের আসর বসেছিল মিউনিখে। আর সেই অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে অন্য সব দেশের মতো গিয়েছিল ইসরায়েলের কিছু নিরীহ অ্যাথলিট।

    এদিকে প্যালেস্টাইনের জঙ্গি সংগঠন, তাদের অন্ধ আক্রোশে আসল জায়গায় আঘাত করতে না পেরে ধ্বজভঙ্গের মতো সেই মিউনিখ অলিম্পিক ভিলেজের হোটেলে মেরে ফেলল ১১ জন নিরীহ ইজরায়েলের অ্যাথলিটদেরকে। যেমন ভাবে কাশ্মীরে মারা হয়েছিল নিরীহ পর্যটকদের।

    ইতিহাসে এই ঘৃণ্য ঘটনাটা পরিচিত হয়ে আছে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর নামে।

    জর্জ ইয়োনাস কিছু মোসাদ এজেন্ট এবং অ্যাসাসিনদের সঙ্গে কথা বলে ১৯৮৪ সালে লিখে ফেললেন একটা উপন্যাস – ‘ভেঞ্জেন্স’। আর ২০০৫ সালে সেই উপন্যাস থেকে স্পিলবার্গ মানে আমার স্পিলু কাকু বানিয়ে ফেললেন সিনেমা; ‘মিউনিখ’।

    যারা যারা এই সিনেমাটি দেখেছেন তারা তারা জানেন। আর যারা যারা দেখেন নি তাঁদের জন্য বলি মোসাদ, মানে ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা, তাঁদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার অনুমোদনে একটা দল গড়ে তুলে সেই জঙ্গিদের বেছে বেছে মেরেছিলেন। হ্যাঁ, সেই ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের জঙ্গি এবং তার হোতাদের। বেছে বেছে মেরেছিলেন।

    ভারত কি পারবে? পহেলগাঁও থেকে শুরু করে পুলওয়ামা বা তারও আগে যে সমস্ত জঙ্গি হানায় নিরীহ, নিরপরাধ মানুষদের মারা হল, সেইসমস্ত জঙ্গি বা তাদের মাষ্টার মাইন্ডদের বেছে বেছে মারতে?

    একেই তো কানাডার ঘটনা নিয়ে কী সব হইচই হয়ে গেল বা সমালোচনার ঝড় গেল বয়ে।

    বলি কোনও জঙ্গি যদি ভারতে সন্ত্রাস চালিয়ে অন্য কোনও দেশে আশ্রয় নেয়, তাহলে সেই সেই দেশের অবশ্য কর্তব্য হল তাদেরকে ধরে ধরে ভারতে প্রত্যার্পন করা। কিন্তু তারা যদি সেই সব দেশে বহাল তবিয়তে ঘুরে ফিরে বেড়ায়, আর ভারত যদি তাঁদেরকে এক এক করে নিকেশ করে তবে এতো চিৎকার উঠে কেন?

    চলে আসি মিউনিখের গল্পে।

    তার হ্যান্ডলার এফ্রাইমের নির্দেশে অ্যাভনার কাউফম্যান নামের একজন মোসাদ এজেন্ট তার কাজ থেকে ইস্তফা দিয়ে গড়ে তুললেন একটি দল। ইস্তফা দেওয়ার কারণ হল ধরা পরে গেলে যেন মোসাদের নাম আন্তর্জাতিক খবরে প্রকাশ না পায়।

    সেই দলে কাউফম্যান ছাড়া ছিলেন স্টিভ নামের একজন দক্ষিণ আফ্রিক্যান ড্রাইভার, রবার্ট নামের বেলজিয়ান খেলনা প্রস্তুতকারী ও বিস্ফোরক এক্সপার্ট, প্রাক্তন ইজরায়েলের সৈনিক কার্ল এবং হ্যান্স নামের একজন জার্মান অ্যান্টিক ডিলার যিনি জাল সরকারি কাগজ বানাতে দারুণ ওস্তাদ।       
     
    এরা কিন্তু সকলেই ইহুদী এবং সকলেই প্রতিশোধের আগুণে টগবগ করে ফুটছিলেন।

    আপনারা জানেন না জানেন না যে বিভিন্ন দেশের গুপ্তচরদের এইসব সন্ত্রাস বাদী বা উগ্রপন্থীদের ব্যাপারে তথ্য ও গতিবিধি জোগাড় করতে হয়। আর সেইসব ডেটা বেচার জন্য অনেক এজেন্সি রয়েছে।

    কাউফম্যানরা লুই নামের একজন খবরির থেকে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের সেই টেরোরিস্টদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করলেন। এই লুই ছিলেন ফরাসী এবং তার পরিবার দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে ফেঞ্চ রেজিস্টেন্স গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

    মোটামুটি পরিকল্পনা করে রোমে তারা প্রথমে মারলেন ওয়ায়েল জ্বোয়াইতারকে। তারপর মোহাম্মদ হামসারির প্যারিসের বাড়িতে একটা বোম্ব ডেটোনেট করা হল। সাইপ্রাসে তারা হুসেইন আব্দ-আল-চিরের হোটেলের রুমে বোমা মেরে তাকে খতম করলেন।

    এরপর তারা ইসরায়েলের কিছু ডিফেন্স কম্যান্ডোর সাহায্য নিয়ে এক এক করে কয়েকজন প্যালেস্টাইন মিলিট্যান্টদের নিকেশ করলেন। এরা হলেন – মহাম্মদ ইউসুফ আল নাজ্জার; কামাল আদওয়ান এবং কামাল নাসের। বেইরুটে প্যালেস্টাইন গার্ডদের কম্পাউন্ডে ঢুকে ডিফেন্স কম্যান্ডোদের সাহায্যে তাদেরকে চমকে দিয়ে এই ৩ জনকে খতম করেছিলেন কাউফম্যানরা।

    যদিও এসবের মাঝে তারা নিজেদের মধ্যে কর্ম পন্থা নিয়ে, নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে, লজিস্টিক মিশন নিয়ে তর্ক করে গেছেন। যেমন অ্যাথন্সেসের একটা সেফ হাউজে তারা যখন জায়েদ মুচাসি বলে অপর এক মিলিট্যান্টকে খতম করতে গিয়ে দেখেন যে তাদের খবরি লুই সেখানে তাদেরকে আলি নামের অন্য একজন প্যালেস্টাইন মিলিট্যান্টের সঙ্গে থাকবার বন্দোবস্ত করেছে।

    কাউফম্যান আলির সঙ্গে দেশ এবং কে হল আসলে দেশের প্রকৃত শাসক – সেইসব নিয়ে আলোচনা করলেও, কার্ল কিন্তু মুচাসিকে মারবার সময় আলিকেও নিকেশ করে দিয়েছিল। এটা কিন্তু কাউফম্যানের প্ল্যানে ছিল না।

    এবার তারা যায় লন্ডনে। সেখানেই ছিল এই ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর ম্যাসাকারের মাষ্টার মাইন্ড আলি হাসান সালামিহ। কিন্তু সি আই এ প্রচুর টাকার বিনিময়ে সালামিহকে শুধু বাঁচায় না, ব্যাপারটায় নাক গলিয়ে ফেলে।

    অন্যদিকে একজন স্বাধীন ডাচ কন্ট্র্যাক্ট কীলার কার্লকে মেরে ফেলে। তিনি ছিলেন একজন মহিলা। পরে বাকি দলবল নিয়ে কাউফম্যান সেই মহিলা কীলারকে ট্র্যাক ডাউন করে নেদারল্যান্ডের একটা ছবির মতো সুন্দর হাউজ বোটে তাকে খতম করে।

    এরপর হ্যান্সকে একটা পার্কের বেঞ্চে ছুরিকাঘাতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং রবার্ট তার ওয়ার্কশপে বিস্ফোরণে মারা যান।

    শেষমেশ দলে বেঁচে থাকা কাউফম্যান এবং স্টিভ সালামিহকে স্পেনে ট্র্যাক ডাউন করে, কিন্তু তখন সালামিহ ছিল হেভিলি গার্ডেড। কাউফম্যানের সন্দেহ হয় যে লুই কি তাহলে তাদের প্ল্যান সালামিহকে ফাঁস করে দিয়েছে?

    লুই এবং সি আই এর কর্মকান্ড এবং হ্যান্স, রবার্ট এবং কার্লের এইভাবে মারা যাওয়া নিয়ে বিভ্রমে বিভ্রান্ত হয়ে কাউফম্যান দেশে ফিরে গিয়ে তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে, নতুন নাম এবং পরিচয় নিয়ে চলে আসেন অ্যামেরিকার ব্রুকলিনে। যদিও ইজরায়েল তাকে বীরের সম্মান দিতে চেয়েছিল কিন্তু তার কাছে সম্মানের থেকে বেশি প্রিয় ছিল তার পরিবার। পরে কাউফম্যান পোষ্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজ অর্ডারে ভুগেছিলেন এবং তার সেই হ্যান্ডলার, এফ্রাইম তাকে বলা সত্ত্বেও তিনি আর দেশে ফিরে আসেন নি।

    সিনেমার শেষে অবশ্য টাইটেল কার্ডে লেখা ফুটে ওঠে যে সালামিহ সহ ১১ জন মিলিট্যান্টকে নিকেশ করা হয়েছিল। সালামিহকে খতম করা হয় ১৯৭৯ সালে।

    যদিও এই সিনেমার গল্প নিয়ে বিরাট বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। অনেক প্রো- ইজরায়েল গ্রুপ এই সিনেমা বয়কট করেছিলেন। আবার যেমন এদেরকে মারতে গিয়ে কিছু নিরীহ মানুষও মারা গেছিলেন।

    তবে বেছে বেছে মারার ব্যাপারে এই ঘটনা বিশ্বে একটা সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছিল যা এখনও মোসাদ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন।

    আমার তো নিজের মনে হয় কাশ্মীরের এই জঙ্গী দমনের ব্যাপারে ভারত ইজরায়েলের সাহয্য নিতেই পারে। এতে কো-ল্যাটারাল ড্যামেজ হওয়ার ঘটনা কম ঘটবে।

    আর যদি অ্যামেরিকা সত্যি সত্যিই দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি চান তাহলে চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন, ই ইউ এবং ক্যানাডার সঙ্গে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণ ভাবে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর পাকিস্তানকে ভাগ বাঁটোয়ারা করে গণভোটের মাধ্যমে এক, স্বাধীন করে দিতে পারে, নয়তো, দুই, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে ভারত আর চীনের মধ্যে ভাগ বাঁটোয়ারা করে দিতে পারে।

    তবে তাতে অস্ত্র তৈরির কারখানা গুলো আবার…, বন্ধ না হয়ে যায়!

    শেষ করি একটু মজা দিয়ে –
     
    পোষ্টটা ফেবুতে ঘুরছে। 

    এরপর গ্যালপিং রাজধানী এয়ারলাইন্স চড়ে সেই আইটিকাকু আবারও দিল্লি যাবেন। আচমকা উঠে পড়া আর্মি অফিসারদের নিজের পয়সায় চিকেন জংলি স্যান্ডউইচ আর ডায়েট কোক খাওয়াবেন। তারপর অন্য প্যাসেঞ্জারদের থেকে চাঁদা তুলে মেজরসাহেবের মেজোপকেটে গুঁজে দিয়ে বলবে - নীচে নেমে মিষ্টি খেয়ে নিও।
    বছরপাঁচেক পর তাকে জংলিশ্রী দেওয়া হবে হয়তো।

    ফেসবুকে সেই ব্যক্তিও বারবার পরমাণু বোমা থেকে বাঁচার দশটি সহজ উপায় শিখিয়ে যাবে। ঘরের দরজা জানলা বন্ধ করলে যে রেডিয়েশন ঢোকে না সে ব্যাপারে আবারও আশ্বস্ত করবে। জামাকাপড় খুলে পলিপ্যাকে রেখে শাওয়ারে গা ধুয়ে নিতে বলবেন।

    শুনতে শুনতে হিরোসিমা-নাগাসাকিতে বাস্প হয়ে যাওয়া লাখো মানুষের আত্মা মুক্তি নিয়ে বাঁচবে।

    সুমন্দে আর অর্ণব ওগো স্বামীর হানিমুন হবে।

    আবার অন্য একজন একটা পোষ্টে লিখছেন - প্লেনে উঠেছি, দিল্লি যাচ্ছি, প্রায় ছ’ঘন্টার রাস্তা। ভেবেছিলাম—চুপচাপ বসে বই পড়ব একটু, আর মাঝপথে একটুখানি চোখও বুজব।

    ঠিক টেকঅফের আগে দেখি প্লেনের দরজা খোলানো হল আর একদল ভারতীয় জওয়ান উঠে এল—দশজন মতো। আমার চারপাশের সিটগুলোয় বসে পড়ল একে একে। মুখগুলো কেমন শান্ত, গম্ভীর।

    পাশে বসা এক জওয়ানকে জিগ্যেস করলাম, “কোথায় যাচ্ছেন আপনারা...!”

    সে বলল, “[ ]?"

    আমার চটকা ভাঙল। এ কী ভাষা! ভালো করে চোখ রগড়ে দেখি, এ তো [ ] সৈন্য! আর তাই তো হবে, [ ] থেকে ফ্লাইটে উঠেছি, [ ] সৈন্যই তো উঠবে।

    আলাপচারিতা এগোনোর জন্য যেটুকু [ ] জানি বলতে থাকলাম, "[ ] , ফাঁকা ফ্ল্যাট..."

    এক সেনা বলল, "[ ]", বলে একটা ভদকার পাঁইট হাতে ধরিয়ে দিল।

    অরিজিনাল [ ] ভদকা! কী যেন হয়ে গেল ভেতরে! উড়ানসেবিকার থেকে একটুকরো লেবু চেয়ে চুপচাপ পান করতে থাকলাম। বুঝলাম, সেনা যার যার, লেবু দিয়ে ভদকা সবার!

     
    আবার একজন জনৈক এই গল্পটাই বললেন খালি কয়েকটি জায়গায় পরিবর্তন করে। যেমন [] ভাষার জায়গায় [ ] ভাষা। [] ফাঁকা ফ্ল্যাট।     

    আর [ ] ভদকার জায়গায় গোচনা এবং গোমূত্র!

    ‘উড়ানসেবিকার থেকে এক বোতল গোচনা এবং গোমূত্র চেয়ে চুপচাপ পান করতে থাকলাম। বুঝলাম, সেনা যার যার, গোচনা এবং গোমূত্র সবার!’

    এই গল্পটা শেয়ার করবেন কি না সেটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু আমি জানি, যতবার পড়বেন—চোখটা ভিজে যাবে। আর [] – এই জায়গায় নিজেরা নিজেদের মতো ফিল ইন দ্য ব্ল্যাংক্স করে নেবেন প্লিজ।            
                 
    সংগৃহীত।

    তবে, এই লেখা শেষ করবার সময় আরও একটা হৃদয় বিদারক পোষ্ট দেখলাম। সত্যি মিথ্যে জানি না। আই এস আই নাকি ইমরান খানকে জেলের মধ্যে অকথ্য অত্যাচারের পর বিষ দিয়ে খুন করেছে। ইসস! কতখানি নির্মম আর পশু প্রবৃত্তির হলে কেউ এমন করতে পারে।

    কিন্তু ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে শরিফ এবং জারদারি-ভুট্টো পরিবারের পথের কাঁটা সরিয়ে ফেলা হল। শেষ হয়ে গেল ইমরানের মুক্তির আশা। কারণ ইমরান মুক্তি পেলে এবং ক্ষমতায় ফিরে এলে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি ফিরে আসত যে।

    পরিশেষে, সেইসমস্ত নিরীহ মানুষজন যারা জঙ্গীদের হাতে প্রাণ দিলেন তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের শান্তি কামনা করি। কামনা করি তাঁরা যেন ন্যায় বিচার পান।   
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • পর্যালোচনা (রিভিউ) | ১০ মে ২০২৫ | ৬৪ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বাবর - upal mukhopadhyay
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রানা সরকার | ১০ মে ২০২৫ ২২:৩১731243
  • ধন্যবাদ।  গুজব যে কীভাবে বুদ্ধিমান মানুষকেও কাবু করে ফেলছে, না দেখলে বিশ্বাস হয় না। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন