এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  নাটক

  • চোখে_আঙুল_দিদি -১ / [একটি প্যারডী নাকট]

    রানা সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    নাটক | ১২ মে ২০২৫ | ৪০ বার পঠিত
  • | |
    [শ্রদ্ধেয় শ্রী মনোজ মিত্র মহাশয় রচিত মূলত রেডিও নাটক ‘চোখে আঙুল দাদা’ ইউটিউবে শোনবার সৌভাগ্য হয়েছিল। নাটকটি এখনো রয়েছে সেখানেনাটকে অভিনয় করেছিলেন শ্রদ্ধেয় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রদ্ধেয় চিন্ময় রায় প্রমূখ। এঁদের শিল্প কর্ম দেখে, শুনে ও পড়ে বড় হয়েছি। যদিও অনুমতি নেওয়া হয় নি। শ্রদ্ধেয় শ্রী মনোজ মিত্র মহাশয়ের সঙ্গে একবারই দেখা হয়েছিল দেজে, কলেজ স্ট্রীটেজানিনা কেমন হয়েছে। আপনাদের সমালোচনা আমার পাথেয় হোক]    

    [নাটকটা লিখেছিলাম ২০১৯ এর শেষের দিকে। ইচ্ছে ছিল কোনো পত্রপত্রিকায় দেওয়ার। তেমন ডাক কোথাও থেকে পাই নি। তারপরে বিশ্বজুড়ে চলে এলো কোভিড আর মৃত্যু। অনেক প্রিয়জনকে আমরা হারিয়েছি। যদিও এখনো সেই বিভীষিকাময় অবস্থা থেকে মুক্তি মেলেনি আমাদের।  কিন্তু এখন একটু সুস্থিতি রয়েছে দেখে ফেসবুকে পোস্ট করলাম] 
     

    [চরিত্র]

    যমরাজ
    চিত্রগুপ্ত
    চোখে আঙুল দিদি

    [যমরাজের সভাগৃহ। দুপুরবেলা। যমরাজ সদ্য ভোজন উপরান্তে ভাত ঘুম দিচ্ছেন। থেকে থেকে তার নাক থেকে এক বিদঘুটে শব্দ যাচ্ছে শোনা । এই সময় হন্তদন্ত হয়ে চিত্রগুপ্তের প্রবেশ। হাতে একটা পাতা]

    চিঃ ইস। বুড়াডারে দ্যাহ। ক্যামন ঘুম দিতাসে। কাম কাজের কুনো ঠিক নাই। সব কাইজ এই আমারে করতে হয়, হালায়। আইজ এই শর্মা যদি না থাকড, তহন দ্যাখতাম কেডা চালাইত স্বগগ। [চিৎকার করে] এই যে মহারাজ, এই যে মোষ , বলি ওদিকে যে সর্বনাশ হইয়া গ্যালো, আর উনি নাক ডাকাচ্ছেন? এই, এই  মোষ ...

    যঃ[ধড়ফড় করে জেগে ওঠে] উফফ। বাপরে! এই রকম হেঁড়ে গলায় চিৎকার করছ কেন চিত্রগুপ্ত? আমার বুঝি বুকে লাগে না? উফ, এখনো বুকটা ধড়ফড় করছে গো। প্রেশারটা আবার বাড়ল বোধহয়...

    চিঃ প্রেশার এইবার কুকার অইব। এই ইমেলডা দ্যাহেন...
     
    যঃ [চশমা পড়ে] কী কী ওটা? দেখি... [চিত্রগুপ্ত প্রিট আউটটা দেয়। যম পড়ে] কচু পোড়া খেলে যা। এ আবার কে চিত্রগুপ্ত?
     
    চিঃ হ্যাঁ। হেইবার শুধু মানকচু না। ওল কচু, ঘাটি কচু পোড়া - সব খাওন লাগবো। চোখে আঙুল দিদি আইলো বইল্যা।
     
    যঃ চোখে আঙুল দিদি!! কচু পোড়া..., যাকগে। তা কী চায় সে?
     
    চিঃ মেইল এ লেখা আসে, সে এইহানে ল্যান্ড করিবা মাত্র স্বগগে যেতে চায়...
     
    যঃ [ভেঙিয়ে] স্বগগে যেতে চায়? স্বগগে যেতে চায়? যাওয়াচ্ছি। এই, এক্ষুনি পরিবহণ দপ্তরে হরতাল ঘোষণা করে দাও তো।
     
    চিঃ [ভয় পেয়ে] কী হবে প্রভু। আমরা হেই কবে থিক্যা নানান জীবজন্তু হ্যান্ডেল করতাসি। কিন্তু এই চোখে আঙুল দিদি..., বাবাগো...
     
    যঃ ডেটাবেসে কী লেখা আছে? কী কাজ করেছে সে?
     
    চিঃ আইজ্ঞা, ডেটাবেস হ্যাক অইসে...
     
    যঃ সেকি!! ফায়ার ওয়াল টোয়াল?
     
    চিঃ ঝুইল্যা পড়সে চোয়াল...। আমি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখসি, হগগলডি ডেটা হাওয়া প্রভু।
     
    যঃ উফ। একটু বিশ্রাম নেব। কানের গোড়ায় এসে...। তা, চোখে আঙুল দিদি!! এই নামটা তো কোথাও শুনিনি বাপু!! এই কী মা বাপের দেওয়া নাম?
     
    চিঃ মা বাপ কী সন্তানকে দিদি বইল্যা ডাকবো? তা অইলেই বোঝেন। প্রাইমারী নেম সেকেন্ডারী নেম কিসুই নাই।
     
    যঃ কচু পোড়া খেলে যা। মহাকালে কত টাইটেল যে ঘাঁটলাম। তা ইনি কোন দেশ থেকে আসছেন?
     
    চিঃ ট্যাপিওকা পোলিস... 
     
    যঃ কী!! এও দেখছি ততোধিক বিদঘুটে নাম। ট্যাঁপা না কী যেন বললে?
     
    চিঃ ট্যাপিওকা পোলিস প্রভু।
     
    যঃ চোখে আঙুল দিদি! এর মানে কী চিত্রগুপ্ত?
     
    চিঃ কী জানি?  লোকে কইতাসে এরা নাকি ঠ্যাঙারে ...
     
    যঃ কী!!
     
    চিঃ হ্যাঁ। মর্ত্যে এদের নাকি অহন খুব দেহা যাইতাসে। গায়ে নানান সব বিটকেল পোশাক। উড়ুক্কু ইস্টাইলে চুল। চুলে দশ বিশ রকমের রং। রুটি স্যাঁকা চাটুর মতো দুই চোখে দুইহান বেগনি রঙের কাঁচ। সর্ব অঙ্গে ট্যাটু ...
     
    যঃ কী টু?
     
    চিঃ আজ্ঞেঁ ট্যাটু।
     
    যঃ উফ। কী সব উদ্ভট শব্দ যে যোগাড় করছ চিত্রগুপ্ত? কালে কালে কী যে সব হল ..
     
    চিঃ আমি আবার কী যোগাড় করলাম। ওরাই তো এইসব শব্দ মর্ত্যলোক থিক্যা বহন কইর‍্যা পরলোকে আন্তাসে। গায়ে পরনের সব গয়নাগাটি দ্যাখলে বাপী লাহিড়ীরও ভিরমি লাইগ্যা যাইব...
     
    যঃ বলো কী হে চিত্র...  
     
    চিঃ আরও আসে প্রভু। এনারা কথা কইতে কইতে ফস কইর‍্যা সিগারেট বা বিড়ি ধরাইয়া ধুমপান করেন। মাঝে সাঝে বারে গিয়া হুক্কাও পান করে প্রভু। চুরুট বা পাইপ, ভারী জল, কিসুই বাদ নাই... 
     
    যঃ বিড়ি!! হুক্কা!! পাইপ!! বাপরে!! এরা কি ধুমাবতী নাকি? 
     
    চিঃ হ। এক্কেরে  ঠিক কইসেন।  
     
    যঃ ভারী জল আবার কী বস্তু চিত্রগুপ্ত?
     
    চিঃ ওই আমাগো সোমরসের মতো।
     
    যঃ তা কী করেন, এরা মর্ত্যে?
     
    চিঃ অলসতামি। বর অথবা বুয়ফ্রেন্ডের পকেট ফাঁক কইর‍্যা খাওয়া, কাম কাজ ছাড়াই লগে লগে ঘুইর‍্যা, বাইকের পিছনে জাপ্টাইয়া ধইর‍্যা সেলফি তুইল্যা ঘন ঘন ফেসবুকে পোস্টানো ...।
     
    যঃ সেলফি!! সেটা আবার কী বস্তু চিত্রগুপ্ত?
     
    চিঃ নিজের ছবি নিজে তোলনরে কয় সেলফি। এদের দিনের বেলায় দ্যাখতে পাওন যায় না। সারাক্ষণ ধইর‍্যা কচ কচ কচ কচ করতাসে। নয়তো ফোনে ডুব দিয়া বইস্যা আসে। দেমাগে ইহাগো মাডিতে পা পড়ে না।  
     
    যঃ কেন? এরা কি নিশাচর নাকি?
     
    চিঃ কে জানে কী চর! তবে নির্ঘ্যাত খেচর। আপনে জিগাইবেন আইলে...
     
    যঃ অ্যার পা পড়ে না কেন?
     
    চিঃ স্কুটি, বাইক, চারচাকা ছাড়া ইহারা গমন করেন না মহারাজ। ঘর থেকে বাথরুমে যাইতে অইলেও স্কুটিতে চাইপ্যা যান।
     
    যঃ উফ। অহো, আমার যে আর তর সইছে না চিতু। ওই, ওই কে যেন ডোরবেল বাজাচ্ছে । যাও চিতু, যাও। ওকে বরন করে নিয়ে এসো...
     
    চিঃ মরণ...

    [চিত্রগুপ্ত রিমোট দিয়ে দরজা খোলে। দরজা দিয়ে একজন ‘হাফসুন্দরী’ গোছের চিত্রগুপ্ত বর্ণিত সাজ সজ্জায় সজ্জিত হয়ে প্রবেশ করে। বয়স বছর তিরিশের আশেপাশে। তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন যমরাজ]

    দিঃ [গটমট করে প্রবেশ করে। চিত্রগুপ্তের দিকে তাকায়] এই যে যমের বাচ্চা, ইস্টুপিড কাহাকা শোনো।  [আঙুলে তুড়ি মারে] এই রাস্কেল শোনো...
     
    চিঃ আমারে কইতাসেন?
     
    দিঃ তুমি ছাড়া কাউকে তো আর এখানে দেখা যাচ্ছে না।
     
    চিঃ ক্যান। ওই যে, সিংহাসনের উপর যমরাজ বইস্যা আসেন।
     
    দিঃ যমরাজ! হাউ ক্যাট, হাউ ফ্যান্টাস। একটা সেলফি তুলব।
     
    চিঃ সেলফি ক্যান, যা ইচ্ছা হয় তুইলেন...
     
    দিঃ কানের সামনে বেশি বকবক করবেন না। নয়ত ছাল ছাড়িয়ে ডুগডুগি বাজাবো।

    যঃ [দূর থেকে এই কথোপকথন শোনে। ইশারায় দিদিকে আসতে বলে] বাহ বাহ। অনেক গুণ আছে দেখছি তোমার। তা ডুগডুগি ছাড়া আর কী কী বাজাও?
      
    দিঃ হোয়াট নন্সেন। উফ, আমি বলে এতখানি পথ হেঁটে হেঁটে এলাম। শুনলাম নাকি পরিবহণ ধর্মঘট চলছে। এই, একটু চিল্ড বিয়ার হবে?
    যঃ কী!!

    [যদি কেউ এই নাকটটার অডিও বানাতে চান, তাহলে আমাকে মেইল করতে পারেন – rana.indranil@gmail.com]
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | |
  • নাটক | ১২ মে ২০২৫ | ৪০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন