এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  নাটক

  • ফিরে আসা - ১ / নাটক  

    রানা সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    নাটক | ১৬ মে ২০২৫ | ৬৩ বার পঠিত
  • |
    [পর্দা পড়ে রয়েছে]

    নেপথ্যেঃ “প্রতিটি আত্মহত্যার পেছনে বহু রকমের কারণ থাকে। কিন্তু যখন আপনাদের সামনে রয়েছে দু’লক্ষ কৃষকের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান, তখন এই সমুহটির পশ্চাতে কয়েকটি সাধারণ সমজাতীয় নিমিত্তকরনের সন্ধান করাটাই যুক্তিযুক্ত। ... পল্লীগ্রামের আগ্রাসী বানিজ্যিকরণ, কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ ভয়ানকভাবে কমে আসা, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রাথমিকভাবে নিবেশ করতে হয় যেসব জিনিসে বা কাঁচামালে, তাদের দাম ঠিক যখন আকাশ-ছোঁয়া সেইসময় ব্যাঙ্কের ঋণদান গুটিয়ে আনা, খাদ্য ফলানো থেকে সরে এসে নগদ টাকা ফলানোর চাষের দিকে লক্ষ লক্ষ প্রলোভিত কৃষকের বৃত্তি পরিবর্তন, বিশ্বজোড়া ফাঁদপাতা কর্পোরেট উদ্যোগ এসে কৃষি উদ্যোগের উপপ্রক্রিয়াগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেওয়া, ক্রমবর্ধমান জলাভাব, প্রাকৃতিক সম্পদগুলির ব্যাক্তিগত মালিকানার হিড়িক, আইন করে পরিবেশ নষ্ট, ধর্মের লজেন্স খাইয়ে সরকারি সংস্থা বিক্রি, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া এবং কিছু কর্পোরেটের হাতে বেচে দেওয়ার পরিকল্পনা, পরিকল্পনা করে অতিমারি ছড়ানো, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন তুলে নেওয়া, রাজ্যে কোটি কোটি টাকার শিক্ষা, রেশন, কয়লা দুর্নীতি, গরু পাচার, সারদা রোজভ্যালির মতো পঞ্জী স্ক্যাম, NEET এবং NET স্ক্যাম – এইসব গভীর স্থায়ী কারণগুলোকে যেমন কে তেমন রেখে সরকার চেষ্টা করছিল এককালীন ভর্তুকি, ক্ষতিপূরণ ও ঋণ মুকুবের দাক্ষিণ্যে এই মহাসংকটের মোকাবিলা করতে এবং মজার বিষয় হল সেই ঘোর সংকট এখনো বহাল তবিয়তে আমাদের মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে” – পালাগুম্মী সাইনাথ।

    [পর্দা উঠল। একটা নির্জন পার্ক। একজন সেখানে বসে মুখ ফিরিয়ে কবিতা আবৃত্তি করছে। রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলে যাওয়ার আওয়াজ। সঙ্গে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে]
     
    বিলুঃ আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ
    এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ
    পুরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা
    আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা
    করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে
    থাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। আমি আক্রোশে
    হেসে উঠি না, আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি,
    মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে; খাঁটি
    অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে-
    (ও-গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই!)

    নেপথ্যেঃ (জোরে জোরে) বিলু এই বিলু, বিলু কি এখানে আছিস?

    বিলুঃআমি স্বপ্নের মধ্যে বাবুদের বাড়ির ছেলে
    সেজে গেছি রঙ্গালয়ে, পরাগের মতো ফুঁ দিয়ে উড়িয়েছি দৃশ্যলোক
    ঘামে ছিল না এমন গন্ধক
    যাতে ক্রোধে জ্বলে উঠতে পারো। নিখিলেশ, তুই একে
    কী বলবি? আমি শোবার ঘরে নিজের দুই হাত পেরেকে
    বিঁধে দেখতে চেয়েছিলাম যীশুর কষ্ট খুব বেশি ছিল কিনা;
    আমি ফুলের পাশে ফুল হয়ে ফুটে দেখেছি, তাকে ভালোবাসতে পারি না।
    আমি ফুলের পাশে ফুল হয়ে ফুটে দেখেছি, তাকে ভালোবাসতে পারি না।
    আমি কপাল থেকে ঘামের মতন মুছে নিয়েছি পিতামহের নাম,
    আমি শ্মশানে গিয়ে মরে যাবার বদলে, মাইরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

    নেপথ্যেঃ (জোরে জোরে) বিলু এই বিলু, বিলু , ওই তো ওখানে। বিলু [চরিত্রটি স্টেজে ঢুকে পড়ে] এই বি ..., দেখেছ! নিজের ঘরবাড়ি থাকতে শেষে এখানে..., আচ্ছা ফ্যাসাদে পড়া গেছে তো। এই বিলু [গায়ে হাত দিয়ে ডাকে] এই, রাত কতো হয়েছে খেয়াল আছে? এখানে আবার কী আবৃত্তি করছিস? একা? একা?  

    বিঃ [কবিতা থেমে যায়] কেন? ক’টা বাজে রে রুবেন?

    রুঃ আর ক’টা। বারোটা প্রায় বাজতে চলল। আর ফোনটাকেও কি সুইচ অফ করে রেখেছিস নাকি? এই নির্জন পার্কে কোনো সুস্থ মানুষ থাকতে পারে? যদি আপদ বিপদ একটা কিছু হয়ে যেত?

    বিঃ[হাই তুলে। চোখ কচলে] আর কী আপদ বিপদ বাকী আছে রে? তুই তো আমার সব কথাই জানিস। [রুবেন একটা সিগারেটের প্যাকেট বের করে] দে, আমায়ও একটা দে। [রুবেন সিগারেট দেয়। দুজনে ধরায়]

    রুঃ একটা ছিনতাই বা খারাপ কিছু যদি হয়ে যেত? তখন কে তোকে এখানে দেখতো শুনি? [পাশে বসে]

    বিঃ যে সমস্ত আত্মীয়দের আগে সাহায্য করেছিলাম, বাবা-মা চলে যাওয়ার পর তারাই উল্টে আমায় বাঁশ দিলো। কী যে নোংরামো করল সে আর বলার না। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করবার জন্য পুলিস থেকে শুরু করে পাড়ার দাদা দিয়ে হেনস্থা করা, হুমকী দেওয়া, নানা জায়গায় আমার নামে মিথ্যে অপবাদ দেওয়া..., কী করে নি বল? They were trying to haunt me down; grind me down.

    রুঃ সে সব তো জানি।

    বিঃ তাহলে? বাড়ি বাড়ি করছিস, বাড়িতে আমার আছেটা কে?

    রুঃ তবুও। এইরকম উড়ুক্কু বাউন্ডুলের মতো জীবন না কাটিয়ে একটা বিয়ে করে থিতু হ।

    বিঃ বিয়ে? [হেসে নিল] তোর কাছে তো সেসবও অজানা নয় বন্ধু। একটা মেয়েকে দেখলাম, তার মা সপ্তাহের একেকদিন একেকজন ছেলের কাছে নিয়ে যাচ্ছে আর তাদের পকেট মাপছে। মেয়েটা আবার ঘুরছে ওর বাপের বন্ধুর সঙ্গে। গিয়ে দেখলাম মেয়েটার মা একজনের আবার রক্ষিতা। আর একটা মেয়ে, সে রয়ে গেছে কম্যুনাল হয়ে। ধর্ম নিয়ে এই ২০২৩ এও কী আদিখ্যেতা। স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়। আহা! আর একটাকে দেখলাম, ভেবেছিল যে আমি মনে হয় সরকারি চাকরি করি। সঙ্গে এও ভেবেছিল আমায় বিয়ে করে পায়ের ওপর পা তুলে দিব্যি বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে; শালা প্যারাসাইট। তারপর যেই শুনল যে না, আমার কাজটা টেম্পোরারি, ব্যাস কেটে পড়ল। খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলল আর একটা ছেলে। বোঝাতে গেলাম, থানা পুলিস করে ফেলল। না রে, এই যে টাকা, গয়না, ভালো থাকার প্রতি লোভ, এই যে ছেলেধরা মোটিভ...

    রুঃ কিন্তু সবাই তো এইরকম নয়।

    বিঃ সেটা ঠিক। সবাই একরকম নয়। যেমন সব পুরুষ প্রতারক আর চরিত্রহীন নয়। কিন্তু ভাব তো, সমাজে কীভাবে শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা কমে গেলো। শালা যে বেশি টাকা রোজগার করছে সেই যেন সমাজের মাতব্বর হয়ে উঠছে। চরিত্তিরের আর কোনও মানেই থাকল না। দিনের শেষে তুমি টাকা আনলেই ভগবান। চতুর্দিকে একটা পুতিগন্ধময় অবক্ষয়। ক্রিমি কীটের মতো সবাই যেন বেঁচে আছে। মর্ডান টাইমসের সেই দৃশ্যটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমরা সব আসলে স্লেভ, দাস; বুঝলি? আর এই সত্যিটা মেনে নেওয়ার ধক আমাদের মধ্যে নেই। শালা! পেটি হিপক্রিটস!  

    রুঃ কিন্তু সবটাই নেগেটিভ বলিস না।

    বিঃ সব নেগেটিভ বলছি না। কিন্তু পজিটিভিটি যেটুকু আছে ভাই, সেটা নগণ্য। সারা পৃথিবীতে দর্শনের একটা ক্রাইসিস চলছে, সুষ্ঠু রাজনীতির একটা ক্রাইসিস চলছে । ভালো নেতা নেই। আর তার মধ্যে প্রতারকে প্রতারকে দেশ ছেয়ে যাচ্ছে। মানুষ মানুষকে লুটছে, ব্যাঙ্ক লুটছে, যৌবন, সম্পর্ক..., সবার চলছে শালা হরির লুট।   

    রুঃ হ্যাঁ। তোর সাথেও তো সেই এক প্রতারণা ঘটল।

    বিঃ ভাবতো, ভাবতো আমার কাছেও আজ বেশ কিছু টাকা থাকার কথা ছিল। একটা সংসার বা প্রাণের সঙ্গিনী থাকবার কথা ছিল। আহ!! কিন্তু হল না। এক বাড়ির প্রতারক আর দুই বাইরের প্রতারক। কার্সিনোমা। we are living in a carcinoma. সব জায়গায় যেন পচন লেগে গেছে। থুঃ... শালা বেঁচে থাকতেই ইচ্ছে করে না বুঝলি। এই তোরা, তোরা ক’জন আছিস, সুখে দুঃখে তোদের বাড়িতে যাই। নয়তো এই পৃথিবীতে কেউ নেই রে আমার, তেমন কেউ নেই।  

    রুঃ [সিগারেট ফেলে] নে চল, এবার ওঠ। ইপ্সিতা তোর জন্য মাংস আর পরোটা করেছে। চল, আমার বাড়িতে গিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়বি। ইপ্সিতা আমাদের জন্যে বসে থাকবে। নে চ।

    [আলো নিভে গেলো। আলো জ্বলে উঠলে দেখা যাবে একটা ড্রয়িং রুম। রুবেন আর বিলু বসে আছে। ঢেঁকুর তুলছে। ওরা আবার সিগারেট ধরায়। ইপ্সিতা ঢুকল। হাতে চিরুনি]

    বিঃ [ঢেঁকুর তুলে] ভালোই খেলাম।  

    ইপ্সিঃ কী, আজকে ঘুমোবার ইচ্ছে নেই বুঝি?       

    রুঃ আমার তো বেশ ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বিলু সাহেবের আবার রকম সকম বোঝা যাচ্ছে না।

    বিঃ আচ্ছা ইপ্সিতা, মানুষ কখন কাঁদে বলতো?

    ইপ্সিঃ সহায় সম্বলহীন হয়ে গেলে।

    বিঃ [উঠে অন্যদিকে যায়। ইপ্সিতা রুবেনের পাশে বসে] আর সহায় সম্বলহীন হওয়ার পরেও যে মানুষ কোথাও কাঁদতে পারে না, কখনও কাঁদতে পারে না। সে কি তখন পাথর হয়ে গেছে?

    রুঃ এই মাঝরাতে আবার এইসব নিয়ে ...

    ইপ্সিঃ পাথরেও তো ফুল ফোটে।

    বিঃ ফোটে। কিন্তু অনেক সময় লেগে যায়, অনেক। আর সেই ফুল আবার সমাজে কোনো কৌলিন্য পায় না।

    ইপ্সিঃ কোনও না কোনও সমাজে তো পায় [চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে থাকে]। কিছু মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিলেও আবার অন্য কিছু মানুষই ঠিক দেখবে তোমাকে সাদরে বরণ করে নিয়েছে। 

    বিঃ আচ্ছা, জীবনানন্দের সেই লাইনগুলো মনে আছে?

    রুঃ উফফ, এতো রাতে আবার কবিতা কেন বাবা?

    বিঃ [উঠে দাঁড়িয়ে স্টেজের সামনের এক কোনায় চলে যায়] “শোনা গেল লাশ কাটা ঘরে / নিয়ে গেছে তারে; / কাল রাতে – ফাল্গুনের রাতের আঁধারে / যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ / মরিবার হ’ল তার সাধ”।

    ইপ্সিঃ কোন কবিতা? নাম কী?

    বিঃ [পায়চারী করে স্টেজের সামনের অন্যদিকে যায়] আট বছর আগের একদিন।... “জীবনের এই স্বাদ – সুপক্ক যবের ঘ্রাণ হেমন্তের বিকেলের / তোমার অসহ্য বোধ হ’লো; / মর্গে কি হৃদয় জুড়ালো / মর্গে – গুমোটে / থ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে”।

    ইপ্সিঃ উফ ...

    বিঃ কেন যে এই কবিতাটা লিখেছিল কে জানে? বেঁচে থাকতে লোকটাকে তো কেউ বুঝতেই পারেনি। তার সেই দারিদ্রতা, তার সেই শিক্ষা, অনুভব, তার সেই বেঁচে থাকা...তার মরে যাওয়া আসলে, আসলে আমাদের মতো শিক্ষিত সমাজের মুখে একটা দারুণ থাপ্পর। আহা, কেউ যদি তাঁকে সাহায্য করতে পারতো সেই সময়, তাহলে বুঝি ...

    ইপ্সিঃ কিন্তু তোমার জন্যে আমরা তো আছি। আমরা কি তোমার কেউ না?

    বিঃ তোমরা আত্মীয়র থেকেও বেশি। এভাবে বোধহয় নিজের লোকও করে না, তোমরা যা করো বা করেছ। কিন্তু এভাবে কেন জানি না আর বোঝা হয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।

    রুঃ [উঠে এসে কাঁধে হাত রাখে] এভাবে কেন বলছিস। আমাদের মেয়ে, যে এখন তার মামার বাড়িতে গেছে, সে কি তোরও মেয়ে নয়?

    বিঃ [রুবেনের থেকে সরে স্টেজের অন্যদিকে যায়]... “জানি – তবু জানি / নারীর হৃদয় – প্রেম – শিশু – গৃহ – নয় সবখানি; / অর্থ নয় – কীর্তি নয় – সচ্ছলতা নয় - / আরও এক বিপন্ন বিস্ময় / আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে / খেলা করে; / আমাদের ক্লান্ত করে / ক্লান্ত – ক্লান্ত করে; / লাশকাটা ঘরে / সেই ক্লান্তি নাই”। বিপন্ন বিস্ময় ... আহ...  

    রুঃ নে। এবার শুয়ে পর ভাই, কাল আবার অফিস আছে। তুমিও চলে এসো আর ওকে ঘুমোতে দাও।

    [ওরা দুজন চলে যায়। বিলু এসে সোফায় বসে। উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকে দূরে। ওর দৃষ্টিতে একটা বিপন্ন বিস্ময়। আধ মিনিট পর আলো নিভে যায়]

    [পরে আলো জ্বলে ওঠে। সকালে পাখির ডাক শোনা যায়। খবরের কাগজওয়ালা ডাক দিয়ে কাগজ দিয়ে যায়। একজন সাইকেল করে দুধ দিতে আসে। ইপ্সিতা ঘরে ঢোকে]

    নেপথ্যেঃ কাগজ ...

    নেপথ্যেঃ দুধ মাইজি

    ইপ্সিঃ যাচ্ছি ... [স্টেজের যে দিক দিয়ে ঢুকেছিল হাতে একটা বাসন নিয়ে তার উল্টো দিকে যায়। ফিরে এসে যে দিকে থেকে ঢুকেছিল সেদিকে ঢুকে যায়। আবার অন্য দিকে দিয়ে স্টেজে আসে। একহাতে ধরা কাগজ আর অন্যহাতে দুধের বাসন ]

    ইপ্সিঃ বিলুদা, ও বিলুদা [স্টেজের অন্যদিকে যায়] বাথরুমে নাকি? [স্টেজ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে আবার ঢোকে] কই নাতো!! এখানেও তো নেই। ছাদেও তো দেখলাম না। এই শুনছো ... [স্টেজের অন্যদিকে যায়। রুবেন প্রবেশ করে গলায় টাই বাঁধতে বাঁধতে]

    রুঃ কী ব্যাপার?

    ইপ্সিঃ সে তো নেই মনে হচ্ছে। চলে গেছে।

    রুঃ ও। গেছে হয়তো বাড়িতে বা অন্য কোথাও। পরে দেখা যাবে এখন। [ইপ্সিতা দাঁড়িয়ে থাকে] আরে চলো, খেতে দেবে যে। আমায় আবার বেরোতে হবে।

    ইপ্সিঃ কিন্তু ...

    রুঃ আচ্ছা বাবা, আমি বাবুলকে বলে দেবো। ও বিলুর খোঁজ করে আনবে। খুশি? এখন চলো তো।

    [ওরা বেরিয়ে যায়। আলো নিভে যায়]

    [খানিকক্ষণ পর আলো জ্বলে ওঠে। একজন মহিলা আর একজন নতুন কোট প্যান্ট পরিহিত পুরুষ দর্শকের দিকে উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের পোশাক আশাক বেশ চকচকে। ট্রেন চলে যাওয়ার ও আসবার আওয়াজ হয়। রাস্তার হাঁকডাক, গাড়ির আওয়াজও পাওয়া যায়। বোঝা যায় যে এটা রেল লাইনের ধার]

    পুঃ আচ্ছা মিসেস বৃন্দা, এই জায়গায় যদি আমাদের অ্যাডটা লাগাই তবে কেমন হবে?

    বৃঃ মিসেস নয় স্যার, মিস।

    পুঃ ও আমি ভুলেই গেছিলাম যে আপনি সেপারেটেড ...। সরি। এবার বলুন।

    বৃঃ হ্যাঁ। মন্দ হয় না।

    পুঃ কারণ এইখান দিয়েই লোকজন যাতায়াত করে বেশি। আর ট্রেন থেকেও দেখা যায় ভালো। This will be the ideal place. Don’t you think so?  

    বৃঃ Absolutely. আচ্ছা, [ঘুরে তাকায়] দূরে একটা আবর্জনা মনে হচ্ছে না?

    পুঃ [ঘুরে তাকায়] ও। আমাদের দেশ তো। একটা না একটা স্বাক্ষর তো থাকবেই। but don’t worry. I will tell the chairman to specially clean this area. আর এখানে দু’চারটে ফুলের টব দেবো লাগিয়ে। কী, কেমন হবে?

    বৃঃ that will be a good idea. কিন্তু মডেল কি কাউকে সিলেক্ট করেছেন? সাবানের বিজ্ঞাপনের জন্য?

    পুঃ হ্যাঁ। সোমাশ্রীকেই তো আমাদের বস সিলেক্ট করেছেন। যেমন আকর্ষনীয় দেখতে, তেমনই ফিগার। সিনেমা দেখো নি ওর?

    বৃঃ শুনেছি নাকি মাধ্যমিকও পাশ নয়।

    পুঃ ওসব পাশ দিয়ে আজকাল কিছুই হয় না। শরীর দিয়েই হয়। জানবে সুন্দর মুখের আর আকর্ষনীয় শরীরের জয় সর্বত্র। সবার ওপর শরীর সত্য।  

    বৃঃ কিন্তু তা বলে একটা থার্ড রেটেড আক্ট্রেস শুধুমাত্র তার শারীরিক সৌন্দর্যের দোহাই দিয়ে কাজ করে বেড়াবে? তার শিক্ষাদীক্ষার কোনো মূল্য নেই?

    পুঃ এইটাই তো এখনকার রীতি ম্যাডাম। বিজ্ঞাপণে কে আবার ওসব দেখতে যাচ্ছে। and don’t forget that you are appointed in our company only for your beauty and attraction, nothing else. আপনি ম্যানেজমেন্ট না কী সব যেন পাশ, ওসব দিয়ে কিন্তু কিছু যায় আসে না। what you need to do to read the mind of the consumer and  sell our product like a hell. Look Miss, Whole world is a market place and we are either buyers or sellers.

    বৃঃ তবুও ...[ হঠাৎ দূর থেকে একটা থ্রু ট্রেনের হর্ন শোনা যায়] আরে! দেখেছ কান্ড! [ সে স্টেজের বাঁদিকে দৌড়ে ঢুকে যায়]

    পুঃ কী হল? what the hell... [একটা ট্রেন চলে যাওয়ার আওয়াজ পাওয়া যায়। এক মিনিট পরে মিস বৃন্দা বিলুকে নিয়ে হাত ধরে টলতে টলতে মঞ্চে প্রবেশ করে]

    বিঃ [জামা প্যান্ট ঝাড়ে] দিলেন তো কেঁচিয়ে..., এহ, বেশ একটা কনসেন্ট্রেশন করে এনেছিলাম। ক’দিন ধরে বুকের ভিতরে একটা সাহস জোগাড় করেছিলাম। এই, কে বলুন তো আপনি?

    বৃঃ আপনি আত্মহত্যা করতে গেছিলেন কেন?

    বিঃ আত্মহত্যা করবো বলে।

    পুঃ কী হয়েছে মিস বৃন্দা ? Is there anything wrong?  

    বৃঃ দেখুন না স্যার, এই লোকটা সুইসাইড করছিল। আমি দেখতে না পেলে ...

    বিঃ আপনি অত্যন্ত বাজে কাজ করেছেন ম্যাডাম। জানেন, অন্যসব অধিকারের মতো আত্মহত্যারও একটা অধিকার সবার আছে?

    বৃঃ তাই নাকি? [অপাঙ্গে দেখে] দেখেশুনে তো ভালো ঘরের বলেই মনে হচ্ছে। তা হঠাৎ এই ভীমরতি কেন?

    বিঃ ভীমরতি? What do you mean?

    পুঃ আবার ইংরেজিও বলছে দেখি!!

    বিঃ why? What do you think of yourself? Wearing stylish coat and pant doesn’t show that you are educated. And what’s a big deal in speaking in English?

    বৃঃ nothing as such. But we are at a loss and trying to evaluate what will be the cause behind your committing suicide?  You seem to be quite educated person. You can easily earn your living.

    বিঃ বেঁচে থাকবার জন্য খালি রোজগার করলেই কি চলে?

    পুঃ আর কী লাগে তাহলে?

    বিঃ আলো, হাওয়া, জল। আর নীল আকাশ, সবুজ অরণ্য, বিশুদ্ধ বাতাস...

    পুঃ ও বুঝেছি। আপনি বুঝি একজন পরিবেশ আন্দোলনকারী আর পরিবেশ যাতে কেউ নষ্ট না করে সেইজন্যই কি আত্মহত্যা করতে চান?

    বিঃ আরে না না। এই, আপনার কাছে সিগারেট হবে? [পুরুষটি তার প্যান্টের পকেট থেকে প্যাকেট বের করে দেয়। বিলু ধরায়] কবিতা পড়ার অভ্যাস আছে? মানে কবিতা পড়েন?

    বৃঃ আরেব্বাস!! আপনি কবি নাকি?

    বিঃ হলে কোনও ক্ষতি আছে?

    বৃঃ নাহ, ক্ষতি নেই। কিন্তু এইভাবে আপনি আত্মহত্যা করতে পারেন না। জানেন আপনার এই দৃশ্য কত লোকের মধ্যে মানসিক রোগ তৈরি করতে পারে? আমারই তো কেমন যেন লাগছিল। জানেন, আত্মহত্যা মহাপাপ? 

    বিঃ হ্যাঁ, আরেকটু হলে আপনিই তো চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু I beg to differ with you madam that suicide is not the great of all crimes, but it is our right, the Right of distressed, civilized and educated person.

    বৃঃ কোথায় লেখা আছে শুনি?

    বিঃ আপনি কামুর আউটসাইডার পড়েছেন? Do you have any idea about the philosophy named existentialism? [সিগারেট ধরায়]

    বৃঃ নাহ।

    বিঃ তবে? [সিগারেট টেনে ধোঁয়া ছাড়ে] “কেন গো কী হয়েছিল তার। / একবার শুধালে না কেহ - / কী লাগি সে তেয়াগিল দেহ? ...... / সে কি কভু ভেবেছিল মনে - / (এতো গর্ব আছিল কি তার) / আপনারে নিবাইয়া তোমাদের করিবে আঁধার”। শুনেছেন বা পড়েছেন এই কবিতাটা?

    বৃঃ রবীন্দ্রনাথ? তারকার আত্মহত্যা?

    বিঃ বাহ! আপনি জানেন দেখছি।

    বৃঃ হ্যাঁ। কাদম্বরীর মৃত্যুর পর কবি লিখেছিলেন...

    পুঃ আচ্ছা, আপনি কি ডেটারমাইন্ড?

    বিঃ একদম।

    পুঃ আমি এবার একটা কথা বলি। let me introduce myself. I am Mr. Bose, Marketing head of ABC Incorporation.

    বিঃ বেশ। [শেষ বারের মতো সিগারেট টেনে ধোঁয়া ছেড়ে পাশে ফেলে দেয়। পা দিয়ে ঘষে নিভিয়ে দেয়]

    বোঃ কিন্তু আপনার এই আত্মহত্যার প্রোজেক্টটা আমার কেমন যেন আলুনি আলুনি লাগছে ভাই। Salt less.

    বৃঃ মানে!!

    পুঃ মানে? Since he is determined to commit suicide, why don’t we make his suicide program a memorable one?

    বিঃ একটু বাংলায় বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ।

    বোঃ বুঝিয়ে বলছি। শুনুন আপনি আত্মহত্যা করতে চান। রাইট?

    বিঃ হুম।

    বোঃ বেশ। আপনি একটা সংকল্প নিয়েছেন, আর আমরা চাইছি প্রচার; বিজ্ঞাপণ। তাই আমরা আপনার এই আত্মহত্যার প্রোজেক্টটাকে আমাদের মতো করে সাজিয়ে এই সমাজকে উপহার দিতে চাই। এমনভাবে উপহার দিতে চাই যাতে আপনিও পরম শান্তিতে আত্মহত্যা করতে পারেন আর আমাদের প্রোডাক্টেরও একটা দারুণ বিজ্ঞাপণ হয়, বিক্রি হয়। [মুচকি হাসে] যেমন, আমরা নানাভাবে প্রচার করি বলেই লোকে ভাত ডাল না কিনে নানান রকম শ্যাম্পু কেনে, বাচ্চার দুধ না কিনে, ওষুধ বা বই না কিনে দশ রকমের কন্ডিশনার বা বিশ রকমের জামাকাপড় বা হাবিজাবি সব প্রসেস্‌ড খাবার কেনে। কী?  

    বৃঃ হোয়াট? কী বলছেন স্যার? Are you out of your mind? You are saying to sponsor his suicide?
     
    বোঃ exactly. Look I have done my MBA from America you know and they taught us to improvise and to fetch new avenues to thrill the customers.

    বৃঃ কী যাতা বলছেন কি? একজন মানুষকে মেরে আমরা আমাদের প্রোডাক্ট সেল করবো?

    বোঃ আলবাত। আর এতে ওর মৃত্যুটাও গৌরবান্বিত হবে। কী মশাই?

    বিঃ দাঁড়ান দাঁড়ান। আমার আত্মহত্যাটাকে নিয়ে আপনারা ঠিক কী করবেন?

    বোঃ দেখুন মিস্টার ...

    বিঃ সামন্ত, ইরাবান সামন্ত।

    বোঃ দেখুন, আমি আমাদের কোম্পানীর মালিককে রাজি করিয়ে আপনাকে একটা লাম্পসাম মানি দেবো।

    বিঃ কতো?

    বোঃ ধরুন এই ত্রিশ বা চল্লিশ লাখ ...

    বিঃ ত্রি শ চ ল্লি শ লাখ!!

    বোঃ হ্যাঁ। এইবার আপনি আমাদের সঙ্গে চুক্তিমত আজ থেকে মাস দুই বা মাস তিন পর আত্মহত্যা করবেন। আর চুক্তির দিন থেকেই আপনাকে আমরা আমাদের টিভি চ্যানেলে নিয়মিত দেখাতে থাকব। আপনার খাওয়াদাওয়া, আপনার স্নান, ঘুমানো, বই পড়া, চা পান, ঘোরাফেরা ইত্যাদি ইত্যাদি। জনগনের কাছে অবশ্য আগেই বলা থাকবে যে আপনি অমুক তারিখে আত্মহত্যা করবেন।

    বিঃ তারপর?

    বোঃ তারপর সেই সময় আমাদের চ্যানেলের টি. আর. পি. রেটিং এমন বেড়ে যাবে যে সমস্ত কোম্পানিগুলো আমাদের কাছে এসে বিজ্ঞাপন দিতে চাইবে। আমরা আপনাকে দিয়ে বেশ কিছু প্রোডাক্ট এন্ডোর্স করাবো। লোকে ভাববে আপনি একদম নির্ভেজাল সত্যি কথা বলছেন...

    বিঃ কেন?

    বোঃ কারণ একজন মৃত্যু পথযাত্রী মিথ্যা কথা বলতে পারে না এই ভেবে। আর যে টাকা আপনাকে দেওয়া হবে তাই দিয়ে আপনি ক’দিন খান দান, ফুর্তিফার্তা করুণ। জীবনে যা অপুর্ণ থেকে গেছে, সেটা করুণ। ব্যাস। আর কী চাই?

    বিঃ [ভাবে] গ্রেট আইডিয়া। দারুণ হবে। আর আমি, আমি সেইসব টাকা দিয়ে ভাবছি, হ্যাঁ, বেশ কিছু বাচ্চাদের জন্য তাদের শিক্ষাগ্রহণের আয়োজন করে যাব একটা ট্রাস্ট মতো করে। কেমন?  

    বৃঃ কিন্তু এ অন্যায়। ক্রিমিনাল অফেন্স। আপনি এইরকম করতে পারেন না। কেউ পারে না।

    বোঃ কী চাইল্ডিস কথা বলছেন মিস বৃন্দা । বসের কাছে রিপোর্ট গেলে কিন্তু আপনার চাকরীটাও আর থাকবে না। চলুন ইরাবান সাহেব, এখানে দাঁড়িয়ে কথা না বাড়িয়ে সোজা আমাদের অফিসে চলুন। সেখানেই বাকি কথা সব হবে।

    বিঃ সেই চলুন। মিসেস বৃন্দা...

    বৃঃ [রেগে গিয়ে] হু।

    [অফিস। কোম্পানীর মালিক চেয়ার টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বসে কাজ করছে। মি. বোস ঘরে ঢুকে তার কোম্পানির মালিকের সঙ্গে দেখা করে]

    বোঃ স্যার আসব?

    মাঃ আসুন আসুন। আমি আপনার আইডিয়াটা নিয়ে ভেবেছি। and I am pretty much exited about your idea. আমায় সব খুলে বলুন।

    বোঃ [চেয়ার টেনে বসে] শুনুন স্যার। এটা হবে একটা গালা ইভেন্ট। সব টিভি চ্যানেলগুলোকে কাত করে দিয়ে সামনের তিন চার মাস এমন টাকা আমরা লুটবো যে সবাই কোটি পতি, না, কোটি কোটি পতি হয়ে যাব স্যার।

    মাঃ আহ, don’t beat around the bush. Tell me. [ মিউজিক বেজে ওঠে। মি. বোস তার মালিককে বোঝাতে থাকে। তবে তাদের কথা দর্শকের কানে পৌছয় না। ২ মিনিট পরে মিউজিক থামে] দারুণ। দারুণ আইডিয়া মি. বোস। আজ থেকে আপনাকে আমি আমার কন্সার্নের পার্টনার করে নিলাম। Go ahead and wish you all success.

    বোঃ হ্যাঁ। আর একবার আমাদের লইয়ারের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। লিগ্যাল সাইডটাও বেঁধে নিতে হবে কষে।

    বৃঃ [ঝড়ের বেগে ঢোকে। হাতে একটা পাতা] Sir, sorry to disturb you. But I would like to resign.

    মাঃ but why? Within three four months from now you will be millionaire.

    বৃঃ কিন্তু স্যার আমি কশাই না।

    বোঃ কশাই!! কী যা তা বলছেন কী আপনি?

    বৃঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ। আপনারা কশাই। সামান্য মানবিক মূল্যবোধ থাকলে বুঝতে পারতেন যে কাজটা করতে যাচ্ছেন সেটা কতো বড় অন্যায়...

    বোঃ ন্যায় অন্যায় কি এবার আপনার থেকে আমাদের শিখতে হবে নাকি?

    বৃঃ হতেও তো পারে। লোভ, অতি লোভ মানুষের মনুষ্যত্ব নষ্ট করে দেয়।

    মাঃ আপনি এক্ষুনি আমার অফিস থেকে বেরিয়ে যান। বোস, টেক হার রেসিগ্নেসন।আর মিস বৃন্দা রেসিগ্নেসনের একটা কপি আপনি মেইল করে দেবেন [মিস বৃন্দা তার হাতের পাতাটা জমা দেয় এবং বেরিয়ে যায়] How disobedient and incorrigible!

    [আলো নিভে যায়। রাস্তা। রাস্তায় মিস বৃন্দা হাঁটছে। এই সময় পেছন থেকে ইরাবান তাকে ডাকে]

    ইঃ এই যে ম্যাডাম, ও মিস বৃন্দা । শুনছেন। আরে দাঁড়ান না। [বৃন্দা  দাঁড়ায়] উফ, এতো তাড়াতাড়ি হাঁটেন কেন বলুন তো?

    বৃঃ আমার সঙ্গে আবার কী দরকার? আপনার তো ষোলকলা পুর্ণ হয়েছে। আবার আমাকে কী কাজে দরকার?

    ইঃ না, মানে শুনলাম নাকি আমার আত্মহত্যার প্রজেক্টে অসন্তুষ্ট হয়ে আপনি চাকরিতে রিসাইন দিয়েছেন?

    বৃঃ তো? এখানেও আপনি আপনার অধিকার ফলাবেন নাকি?

    ইঃ না, মানে রাগ করছেন কেন? বলছিলাম যে এই বাজারে একটা ভালো চাকরী পাওয়াই যেখানে কঠিন, সেখানে এইভাবে মিছিমিছি রাগ করে চাকরি ছেড়ে দেওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ করলেন?

    বৃঃ আমি তো খালি চাকরি ছাড়লাম। আর আপনি যেটা করতে চলেছেন, সেটা কোন কাজের কথা শুনি?

    ইঃ বলবো। নিশ্চয়ই বলবো। একদিন আসুন না আমার বাড়ি। ভেবেছি আমি যে ট্রাষ্টটা করবো সেখানে আপনি সেক্রেটারি থাকবেন।

    বৃঃ কেন?

    ইঃ দেখুন, এই সামান্য ক’ঘন্টায় যতটুকু আপনাকে দেখেছি তাতে বুঝেছি যে আপনি একজন অত্যন্ত দায়িত্বশীল মানুষ। তারপর কবিতা জানেন, বোঝেন। কবিতা পড়া ও বুঝতে পারা মানুষদের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা আছে। না করবেন না প্লিজ। সেই ট্রাস্টে কিন্তু আপনার ওপর আর কোনো বস থাকবে না। নিজের মতো করে, ভালো করে কাজ করতে পারবেন।

    বৃঃ কিন্তু আমি এইসব করবোই বা কেন? আর আপনি, আপনি আজই চুক্তি ক্যান্সেল করে নিজে একটা ভালো কাজের চেষ্টা করুণ দেখি।

    ইঃ চলুন না কোথাও নিরিবিলিতে বসি। একটু ডিনার করি।

    বৃঃ ওহ, সইসাবুদ করে টাকা পেয়ে গেছেন তাহলে?

    ইঃ ওই আর কি...

    বৃঃ আপনার ওই টাকায় খেতে আমার বয়ে গেছে।

    ইঃ তাহলে চলুন আমার বাড়ি। ভয় নেই। সেখানে আপনাকে ডিম টোস্ট করে খাওয়াবো। প্লিজ।

    বৃঃ [হাসে] আচ্ছা চলুন। আপনি দেখছি একটা উঁচুদরের পাগল।

    ইঃ এই, এই এতক্ষণে ঠিক বলেছেন। আমার মাও ওই একই কথা বলতো। আরে, ওই বাসটা যাচ্ছে না। এই রোক্কে রোক্কে। [বাস দাঁড়ানোর আওয়াজ হয়। ওরা স্টেজের যেদিক দিয়ে ঢুকেছিল তার অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। বাস ছেড়ে দেয়। স্টেজের আলো নিভে যায়]

    [কলকাতার বা প্রবাস অথবা বিদেশের কোনও পেশাদার থিয়েটার গ্রুপ নাটকটি মঞ্চস্থ করতে চাইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন]

    ---------------------Interval ---------------------------
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    |
  • নাটক | ১৬ মে ২০২৫ | ৬৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন