এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  নাটক

  • চোখে_আঙুল_দিদি -২  [একটি প্যারডী নাকট] 

    রানা সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    নাটক | ১২ মে ২০২৫ | ২৫ বার পঠিত
  • | |
    চিঃ বিধাতার লগে ফাইজলামি অইতাসে? ঠাণ্ডা মকরন্দ ফুলের শরবত চলবো?

    দিঃ মকরন্দ? [ভাবে] ওকে বাট, ডান।
     
    চিঃ বাম।
     
    যঃ ও চিতু...
     
    চিঃ [চিত্রগুপ্ত ওয়াকিটকিতে শরবত আনতে বলে। তারপর দিদির দিকে তাকিয়ে] বাড়িতে কী কুনো সহবত শেখায় নাই? যমপুরীতে আইস্যা বিধাতাকে পেন্নাম জানাতে হয়... হেইডা পর্যন্ত খেয়াল নাই?

    দিঃ ধুৎ । ও সব সেকেলে ব্যাপার। হাই বিধাতা, হেলো, টু ডু

    যঃ নাহ। আমার হাই উঠছে না।

    চিঃ আরে এই হাই মানে ঘুমের হাই না। আফনেরে সম্ভাষণ জানাইলো। আফনেও হাই কন।
      
    যঃ [ইতস্তত করে] হাই।

    দিঃ হাউ ক্যাট। হাউ ফ্যান্টাস। [ফস করে একটা সিগারেট ধরায় পকেট থেকে বের করে]
     
    যঃ আহা, আহা করো কী ? করো কী? এটা যে ধূমপান বর্জিত এলাকা। [[ফায়ার অ্যালার্ম-এ ‘হরিবোল’ বেজে ওঠে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও দিদি সিগারেট নেভায়। একজন যমদূত শরবত দিয়ে যায়। এক ঢোকে সেটা পান করে দিদি]  আহা গো। কী তেষ্টা পেয়েছিল তোমার। এখন কেমন লাগছে?

    দিঃ [পাত্র ফেরত দিয়ে] হাউ ক্যাট। এক্সি এক্সি। বাট অনেকটা কক্টেলের মতো লাগল।
     
    যঃ বাট!! কীসের বাট? সোনা বা রূপার?

    চিঃ না প্রভু, এরা কথায় কথায় ইংজিরি বলে। যেমন বাট, এক্সি।
     
    দিঃ আচ্ছা, এসিটা একটু বাড়িয়ে দেওয়া যায় না?

    যঃ ওটা তো এসি নয় ভন্তে। কৈলাস থেকে ডাইরেক্ট পাইপ লাইনে ঠাণ্ডা হাওয়া এনে সেন্ট্রালি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বসো। বসো মা।  [দিদি সামনের একটা সীটে বসে পড়ে] 

    দিঃ ও সব ওল্ড ফ্যাশান। আর আমাকে ওই মা মা, বা ভন্তে বলে একদম ডাকবেন না।

    যঃ বেশ। তাহলে কী বলে ডাকব?

    দিঃ বেইব বা চিক্স।

    যঃ চিত্রগুপ্ত...

    চিঃ আলুর চিপস।

    যঃ আমরা এখানে সবাইকে কজ্জলীতাক্ষি, হংসগ্রীবী, প্রিয়ংবদেসু বা মৃগনয়নী- এইসব নামে ডেকে থাকি। তা, এইরকম একটা নাম তুমি বাগালে কেমন করে?

    দিঃ আসলে আমি বা আমাদের মতো আর সবাই যারা অন্যের খুঁত ধরে বেড়াই আর চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিই, তাদেরকে সবাই চোখে আঙুল দিদি বলে।

    যঃ এ যে বহুব্রীহি সমাস। অহো, অহো। জগতের লোক আমার কাছে কত কাজের কথা শোনায়। অফিস কাছারি, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, চুরি, ডাকাতি...। কোনও দিন শুনিনি পরের ভুল ধরাও কারুর কর্ম। দেখো, কী যেন, হ্যাঁ, বেইব, আমাদের আবার কী হয়েছে, সব রেকর্ড পত্তর না কে বা কারা যেন হ্যাক করে উড়িয়ে দিয়েছে। সব কিছু না জেনে শুনে তো আর স্বগগে প্রবেশের ছাড়পত্র দেওয়া যাবে না। [চিত্রগুপ্তের দিকে তাকিয়ে] এই যা বলছে সব ডেটাবেসে লিখে নাও। [দিদির দিকে তাকিয়ে] ভোরবেলা ক’টায় ওঠো তোমরা?

    দিঃ ভোর!! ভোর কাকে বলে বিধাতা? ভোরের সংজ্ঞাই বা কী?

    যঃ বলে কী? তোমরা কখনো সূর্যোদয় দেখনি? 

    দিঃ আমরা? আমরা দুপুর ১২টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠি।  তার আগে উঠলে নিজেদের কেমন যেন ল্যাদ খাওয়া ল্যাদ খাওয়া লাগে বিধাতা।

    যঃ কী খাওয়া? ল্যাদ!!

    চিঃ তা ঘুম থিক্যা উইঠ্যা আপনেরা পেত্থমে কী করেন?
     
    দিঃ প্রথমে ফেসবুক চেক করি। তারপর হোয়াটস আপ , ইন্সটাগ্রাম চেক করি...

    যঃ কী গ্রাম? মর্ত্যে নতুন কোনও গ্রামের পত্তন হোল নাকি চিতু?

    চিঃ আঁজ্ঞে না। এইডা একডা ভার্চুয়াল গ্রাম।

    যঃ ওহ। তারপর?

    দিঃ তারপর কফি খাই। আবার চেক করি। আবার কফি খাই। আবার চেক করি। দেখি গত দিনের পোষ্টে কত লাইক পড়ল, কে কী কমেন্ট করল। তারপর এর ওর ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম আকাউন্টে যাই। লাইকাই। কমেন্টাই। ঘাঁটাঘাঁটি করি। ঝগড়া করি। খিস্তাই। সবার খুঁত ধরি। ফরোয়ার্ড করে করে পোষ্ট ভাইরাল করে দিই বিধাতা। এই সব করতে করতে ২টে বেজে যায়।

    যঃ তারপর?

    দিঃ তারপর, নায়িকাদের নকল করি। হাঁটি। নাচি। গান গাই। তারপর টিকটকে আপলোড করি। ‘লাইকে’ আপ্লোড করি আর অন্যের খুঁত ধরি।
     
    যঃ বা বা বা বা। টিকটক বস্তুটি কী চিতু? আমাদের এখানে আনালে হয় না?

    চিঃ অ্যাপ।

    যঃ অ্যাপ!!
     
    চিঃ হ্যাঁ, চিড়িয়াখানা দ্যাখসেন?

    যঃ খুব দেখেছি...

    চিঃ তার থিক্যাও ভয়ংকর সব জিনিস দেহন যায়।

    যঃ তাহলে বাদ দাও ওসব। তারপর কী করতে ভন্তে, ইয়ে মানে বেইব?

    দিঃ তারপর চুলে শ্যাম্পু করি আর চিকনা হবার জন্য পার্লারে যাই।

    যঃ চিকনা!! বাবাগো খাবার কিছু খাও না?

    দিঃ হ্যাঁ। সব রেডি টু ইট ...

    যঃ থান ইট!

    দিঃ হট ডগ, পাস্তা, পিৎজা, ... এইসব খাই...

    যঃ ওমা!! কী সব নাম! আমারও কেমন যেন খেতে ইচ্ছে করছে চিতু।

    চিঃ বুড়ো বয়সে ভীমরতি।    

    যঃ কেন দুধ, দই, হাতে গড়া রুটি, তরকারী, ছাতু, ডাল..., এইসব খাও না মা?  

    চিঃ কচু পোড়া খেলে যা।   

    যঃ কিন্তু কাজ কি কিছুই করো না?

    দিঃ হ্যাঁ, ওই যে খুঁত ধরি। যেমন মা কফি বা চাউমিন করে এনে দিলে বলি, কেমন নন্সেনের মতো কফি বানিয়েছ? কেমন ইডিয়টের মতো কফি বানিয়েছ। কেউ কী এ দেশে ঠিক করে কফি বানাতে শিখবে না? বা এটা একটা পাস্তা হয়েছে না পোস্তা হয়েছে...। বাবাকে বলতাম রোজ রোজ মাইল ১৫ হাঁটতে। এতে শরীর ভালো থাকে। কিন্তু নিজে হাঁটতাম না। হাঁটলেও খাটে হাঁটতাম।

    চিঃ বাবা, সোনা মাইয়া। সকাল থিক্যা খাইট্যা খুইট্যা বৃদ্ধা মা রান্না কইরা আনবো, আর উনি পায়ের ওপর পা তুইল্যা সব চাইট্যাপুইট্যা খাইয়া তার খুঁত ধরলেন। হুতোম পেঁচি কোথাকারের।

    দিঃ আবোলতাবোল বকলে চাবকে পিঠের চামড়া তুলে নেব রাস্কেল। [চিত্রগুপ্ত একটু সরে গিয়ে বসে]

    যঃ স্বর্গের ছেলেদের মন্দিরা বাজাতে বলো চিতু। শঙ্খ, খোল, মৃদঙ্গ বাজাতে বলো চিতু। আহা কে এসেছে গো ট্যাপিওকা থেকে... । উনি আমাদের ভুল ধরবেন আর আমরা ফুল দিয়ে বেইবকে স্বর্গ্বে তুলব।

    চিঃ [খিক খিক খিক]

    দিঃ এই যে যমের বাচ্চা, অমন করে হাসছ কেন?

    যঃ তা দিদি ঠাগরুণ, মায়ের চোখ ফুটিয়ে তারপর কী করতেন?

    [যদি কেউ এই নাকটটার অডিও বানাতে চান, তাহলে আমাকে মেইল করতে পারেন – rana.indranil@gmail.com]
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | |
  • নাটক | ১২ মে ২০২৫ | ২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন