এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  নাটক

  • এক চাঁদনী রাতে.......

    Somnath mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    নাটক | ২৩ মার্চ ২০২৫ | ১৭৫ বার পঠিত
  • এক চাঁদনী রাতে…….
     
    সাতসকালেই প্রভাতী শুভকামনা জানিয়ে বড়দা, শ্রী স্বপন চক্রবর্ত্তী , একটা ছোট্ট ছড়া পাঠিয়েছিলেন। ছড়াটি এক পেচক দম্পতির কথোপকথন বিষয়ক। বেশ মজার ব্যাপার রয়েছে ছড়াটির মধ্যে। কে এই ছড়ার রচনাকার তখন তা জানা যায়নি। যাইহোক বড়দাকে কথা দিয়েছিলাম যদি সম্ভব হয় তাহলে এই ছড়াটাকে মাথায় রেখে একটা নাটক লেখার চেষ্টা করবো। বড়দা নাটক অন্তপ্রাণ মানুষ। একজন দক্ষ অভিনেতা ও পরিচালক। তাঁর করকমলেই এই নাটিকা - এক চাঁদনী রাতে…… অর্পণ করলাম। 
    নাটক দৃশ্য কাব্য। মঞ্চস্থ না হলে এর সঠিক মূল্যায়ন করা বেশ কঠিন। তবুও নাটকের কথা, সংলাপের নির্মিতি পাঠকদের মনে একটা ছাপ রেখে যায়। নির্দেশকের নির্দেশক্রমে কুশীলবরা তাকে হৃদয়গ্রাহী করে তোলেন। নাটকের পাঠ সেই কারণে খুব গুরুত্ব পায় নাটককারের কাছে । অবশ্য নাটকের মঞ্চায়ন হলে সেই বেচারির কথা যদিও কেউ মনে রাখেনা। পড়ুন, মতামত দিন।
     
     
    শীতের শেষে গরম পড়তে না পড়তেই দিনের লম্বাই অনেকটাই বেড়ে গেছে। সন্ধে উতরে গেছে খানিক আগেই। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে উড়ে আসেন মিসেস আউলি । গরমে ঘেমে নেয়ে অস্থির অবস্থা। আউলিদের এই ফ্ল্যাটটা নতুন। এখন সর্বত্রই এক‌ই চেহারার বারখাম্বা ফ্ল্যাটের সমারোহ। খানিক সময় এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করে শেষে নিজেদের ছয় ছোট্ট 2 BHK ফ্ল্যাটটা খুঁজে পেয়ে স্বস্তি বোধ করেন। মুখ দেখেই তা বেশ মালুম হয়। শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘামে ভেজা মুখটা মুছতে মুছতে দরজার কড়া নাড়তে থাকেন।
     
    মিসেস আউলি– ( দরজার কড়া নাড়তে নাড়তে ) কিগো ? এতো করে ডাকাডাকি করছি কোনো সাড়া শব্দ নেই। বলি এমন হাপুসহুপুস করা গরমে ঘুমোও কী করে বুঝিনা বাপু। ও নবাবজাদা? আছো না ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই টেসে গেছো ? বলি! ও উল্লুর বাপ, কান দুটো কি গেছে? 
     
    ( দরজা খুলে বাইরে আসেন মিঃ আউল। মৃদু হাই তুলে চোখ কচলাতে কচলাতে বলেন…)
     
    মিঃ আউল – এতো শোরগোল কিসের ? বাড়িতে ডাকাত পড়েছে না কি ?
     
    মিসেস আউলি – পোড়ামুখোর কথার ছিরি দেখো ! বলে কিনা বাড়িতে ডাকা পড়েছে! (কাপড়ের আঁচলটা কষে কোমরে জড়িয়ে নিয়ে…) এই আউলি গিন্নির ঘরে হানা দেয় এমন হিম্মত কার আছে শুনি? তা তুমি যে এখনো ঘরের ভেতরে সেঁধিয়ে বসে আছো ! ডিউটিতে বেরুবে না?
     
    মিঃ আউল –( হাই তুলে )ভাবছি আজ আর ডিউটিতে যাবো না , একটু জিরেন নেবো। গা গতর কেমন ব্যথা ব্যথা করছে। 
     
    মিসেস আউলি – গা গতরে ব্যথা হবে না তো কী হবে? এমন বেহুদা গরমে পেরান তিষ্টনো দায় , ঘেমে নেয়ে পেরাণ অস্থির, আর তেনার গায়ে গতরে ব্যথা! শোনো, গরম গরম চা বানিয়ে দিচ্ছি,আদা আর লং দিয়ে। গলা গড়িয়ে পেটে পড়লেই দেখবে দিব্যি চাঙ্গা হয়ে গেছো । নাও ,নাও ঝট্ করে তৈরি হয়ে নাও দিকি।
     
    মিঃ আউল – সেই ভালো। (স্বগতোক্তি) বাপরে বাপ? ধরমড়িয়ে এসে ইস্তক মুখে একেবারে কথার তুবড়ি ছোটাচ্ছে!
    মনে কোনো রোমাঞ্চ নেই বাপু! এমন সুন্দর বসন্ত দিনের সন্ধে। থেকে থেকে কেমন দোখনে বাতাস ব‌ইছে , খানিক পরেই চতুদ্দিকে আলোর রোশনাই ছুটিয়ে চাঁদ উঠবে। 
    কোথায় দুজনে পাশাপাশি একটু ঘন হয়ে বসে বেশ মাখোমাখো স্বরে কথা ক‌ইবো ,তা না! এসেই একেবারে আদালতের প্যাদার মতো হেঁড়ে গলায় ফরমান জারি করলেন তিনি – যাও, ডিউটি করে এসো । আরে বাবা! আমাদের মতো আউল আউলিদের আবার ডিউটি কি? আমাদের তো আর ঘাড় গদ্দান আলাদা করে বোঝার উপায় নেই। বনবনিয়ে মাথা ঘুরিয়ে চতুদ্দিকে লজর রাখো । তেমন কিছু লজরে পড়লেই এক্কেবারে খপ্ করে……..
     
    মিসেস আউলি – ( চায়ের পেয়ালা হাতে প্রবেশ করে)
    একাএকা বসে কি এমন খপ্ করে ধরছো শুনি? বলি ,গরমে মাথা বিগড়েছে নাকি!
     
    মিঃ আউল – ঘরে ঢোকা থেকে শুরু করে কি যে সব অলুক্ষুণে কথা কচ্চ বলতো? বলি তোমার মাথা বিগড়েছে নাকি ?
     
    মিসেস আউলি – আমি অলুক্ষুণে কথা ক‌ইছি ? আ... আমার মাথা বিগড়েছে? আমি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে পষ্ট নিজের কানে শুনলুম খপ্ করে কি যেন ধরার কথা ক‌ইছো। নিজের কানকে তো আর অবিশ্যেস্ করতে পারিনা!
     
    মিঃ আউল – (হেসে উঠে বলে ) আরে রামো রামো! আমি তো তোমার ড্যাডি , মানে আমার শ‌উর মশাইয়ের কথা ভাবছিলাম।
     
    মিসেস আউলি – “শ‌উর মশাই” আবার কী? ফাদার ইন ল বলতে পারোনা ? শত হলেও তিনি হলেন তোমার গুরুজন। তা এই ভর সন্ধ্যায় তাকে নিয়ে আবার টানাটানি কেন? 
     
    মিঃ আউল – টানাটানি করতে যাবো কেন? সেই সব পুরনো দিনের কথা মনে করছিলাম আর কি!
     
    মিসেস আউলি –পুরনো দিনের কথা! কি কথা শুনি ‌? গুরুজনদের নিয়ে মস্করা আমার মোটেও সহ্য হয়না।
     
    মিঃ আউল –বালাই ষাট । মস্করা করবো কেন? বলছিলাম কি, বলছিলাম কি ….
     
    মিসেস আউলি – কি তখন থেকে ছেঁড়া তেনার মতো পতপত করছো? পুরুষ মানুষ, ঝেড়ে কথা ক‌ইতে পারোনা? সেই থেকে মেনি মাছের মতো কেবলই মিনমিন করছো ?
     
    মিঃ আউল – ( বেশ বিব্রত কন্ঠে ) মিনমিন করবো কেন? এই তো বলছি, বলবো? 
     
    মিসেস আউলি – আ মরণ! মিনসের কাণ্ড দেখে তো আর বাঁচিনা! বলি পষ্ট করে কথা ক‌ইবে কিনা বল , নাহলে আমি উঠলাম। আমার মেলা কাজ আছে….( উঠতে উদ্যত হয় )
     
    মিঃ আউল –( গলায় সোহাগের সুর। একটু কাছে সরে আসে ) বলছিলাম কি! এমন মনোরম পরিবেশে, জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া চরাচর! তোমাকে দুহাত দিয়ে একবার খপ্ করে জড়িয়ে ধরতে বড্ড ইচ্ছে করছে। তুমি মুখে হাসি এনে একটু টুসকি দিয়ে বলো ইয়েস।
     
    মিসেস আউলি –( আৎকে উঠে দূরে সরে যায় ) আ মরণ। বলি মিনসের আজ হলোটা কি? এই ভর সাঁঝবেলায় কিসব অকথা কুকথা ক‌ইছো , তার খেয়াল আছে। হায় হায় হায়! শেষমেশ কিনা ভীমরতিতে ধরলো গা আ আ ! গরমের জ্বলুনিতে বাঁচিনে , গরমে গায়ে কেমন বড়ো বড়ো ফোক্সা পড়েছে! সে সব সমস্যার সুরাহা করার কোনো ইচ্ছে নেই, উনি চাঁদের আলোয় চরাচর ভেসে যাচ্ছে দেখে একেবারে সোহাগে উথলে উঠেছেন ! ছিঃ ছিঃ ছিঃ। মাগো,মরণ হয়না কেন? আমি এখন‌ই ছেলেকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি তোমার এই পাগলামির কথা। ফোনটা কোথায় গেল? এখানেই তো রেখেছিলাম…..( খোঁজাখুঁজির পর্ব চলতে থাকে )
     
     
    মিঃ আউল – ( বিস্মিত হয়ে ) হরি হে দয়াময়! আমার কপালে কি কোনো সুখ‌ই লেখনি ? ক‌ইগো ! কোথায় গেলে? আমি একটু ঘুরে আসছি। দরজা খোলা র‌ইলো । ( প্রস্থান। )
     
    মিসেস আউলি – ( ফোন হাতে ঢোকে ) বাবা উল্লু , কী করছিস? আজ ফোন করতে একটু দেরিই হয়ে গেল বোধহয়। তোর আজ আপিসে যাওয়া নেই?.... দেরিতে কেন? শরীর ঠিকঠাক আছে তো?... আমার তো থেকে থেকেই চিন্তা হয়। ..
    না, না, এই গরমে ডে শিফটে ডিউটি করা মুশকিল। আমাদের ঐ নাইট ডিউটিই ভালো।…. রাতে খাবি কী ? … ঠিক আছে পরে আবার খবর নিচ্ছি।… আমার সঙ্গে ঝগড়া করে উনি এখন হাওয়া খেতে গেছেন।… ঠিক আছে বাবা! 
     
    মিঃ আউল – ( ঘরে ঢোকে। হাতে একটা প্যাকেট ) এইযে রাজনন্দিনী ! ধরো এই প্যাকেটটা। লোটে মাছের চপ । তুমি ভালোবাসো, তাই গরম গরম খান কতক নিয়ে এলাম।
     
    মিসেস আউলি – ( গদগদ স্বরে ) লোটে মাছের চপ্ ? হাউ ছুইট। এজন্যই তো তোমাকে আমি ডিয়ার ডার্লিং বলি । তুমি কি মন পড়তে পার ? না হলে আমার লোটে মাছের চপ্ খাবার ইচ্ছের কথা তুমি জানলে কি করে? ( মিঃ আউলের দিকে এগিয়ে যায় )
     
     
    মিঃ আউল – ( পিছিয়ে যায় ) দাঁড়াও,দাঁড়াও। তুমি সত্যি সত্যি আমার চেনা আউলি তো ! 
     
    মিসেস আউলি – এ আবার কী কথা ক‌ইছো ডার্লিং? আমি গো আমি । তোমার আউলি সোনা , পঞ্চু মনা , তোমার ডার্লিং, তোমার .. তোমার.. । এই,শোননা ,তখন মুখ ফকসে কি না কি বলে ফেলেছি তা নিয়ে এতো আগ করলে চলে? ( আউলির থুতনি ধরে নাড়া দেয় ) বাবু সোনার গোঁসা হয়েছে! দাঁড়াও, আমতেল দিয়ে একটু হুড়ুম মেখে আনি। 
     
     মিঃ আউল – ( নিজের হাতে সজোরে চিমটি কাটে ) না ! এতো আমার‌ই হাত। সাধে কি গুণী মানুষরা বলেছে – স্ত্রীর চরিত্র বোঝা দায়। খানিক আগে কি যাচ্ছেতাইভাবে গালাগালি করে আমাকে একরকম তাড়িয়েই দিল। আর এখন? হাতের প্যাকেট দেখেই ছিরিমতির কি আশ্চর্য রূপান্তর! ওরে আউল ! জীবনে কিছুই শেখা হলোনা তোর! বেথাই গেল তোর পেচক জীবন। ( গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে আউলি ঘরে ঢোকে )
     
    মিসেস আউলি – ঘরেতে মোর ডার্লিং এলো গুণগুণিয়ে
                               হাতের ঐ ঠোঙায় ভরা লোটে চপ্ নিয়ে,
                               উ উ উ উ উহু,.... গুণগুণিয়ে।
    ( আদুরে গলায় বলে) কি গো অতো দূরে সরে বসেছো কেন? আমার কাছ ঘেঁষে বসো। এমন চাঁদের আলোয় বাঁধভাঙা জোছনার উচ্ছ্বাস, তোমার মনে পুলক জাগছে না? এই নাও তোমার মুড়ি আর চপ্। আরে এদিকে এসো না! তুমি যেন কেমন বুড়িয়ে গেছো ।
     
    মিঃ আউল – ( কাতর কন্ঠে ) সত্যি করে বলতো তোমার হঠাৎ করে এমন ভাবান্তর হলো কেন? নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে তোমার মাথায়। 
     
    মিসেস আউলি – ( আরও খানিকটা সরে আসে ) তুমি এখনও আমার ওপর রেগে আছো ? ও মা! ঘেমে নেয়ে একেবারে একসা হয়ে গেছো দেখছি। দেখি,দেখি ! মুখটা মুছে দিই। ( আঁচল দিয়ে মুখ মুছে দেয় । আদুরে গলায় বলে ) একটা সত্যি কথা বলবো? বলছি,রাগ করবে না তো?
     
    মিঃ আউল – ( একটু রাগত স্বরে ) তোমার মতো যখন তখন রেগে যাওয়া আমার স্বভাব নয়। কী বলবে বলো ।
     
    মিসেস আউলি – বলছিলাম কি,রাগলে না তোমাকে ভীষণ কিউট লাগে! তখন তুমি আরো যেন হ্যান্ডসাম হয়ে যাও।
     
    মিঃ আউল – ( লজ্জা পেলেও মনে মনে খুব খুশি হয় ) কি যে আবোল তাবোল বলনা তুমি, কোনো মানেই খুঁজে পাইনা। আরেক বার বলো ঐ কথাগুলো। এসব কথাতো তুমি ক‌ইতেই ভুলে গেছো আজকাল। বলোনা আবার। 
     
     
    মিসেস আউলি – ( স্বগতোক্তি করে ) মনে হচ্ছে বরফ গলছে একটু একটু করে। যা বলার এই সুযোগেই বলতে হবে। আবার যদি মর্জি বিগড়ে যায় তাহলেই মুশকিল।আর দেরি করা ঠিক হবে না। ( আহ্লাদী সুরে ) এসব কথা ক‌ইতে আমি ভুলে গেছি ? আমি যা বলবো তা তুমি শুনবে? মানবে? আগে হ্যাঁ বলো । তাপ্পর আমি মুখ খুলবো। আমার‌ও তো একটা পেস্টিজ আছে না কি? আমার কথার কোনো ভেলু নেই তোমার কাছে,তা বেশ বুঝতে পারছি। ( ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে)
     
     
    মিঃ আউল – ( বিব্রত হয়ে ) আহাহা! আবার এসব কেন? তু... তু তুমিতো জানো, এই মহিলাদের চোখের জল আমি একদম সহ্যি করতে পারিনা। কী বলবে বলো ।
     
    মিসেস আউলি – ( প্রচণ্ড উৎসাহিত হয়ে ) বলছিলাম কি, এখন‌ই তো গরম পড়েছে খুব। এরপরে আর‌ও আরও পড়বে…তাপ্পর ঐ লা নিনা না কী সব আসবে বলছে। আমি বাপু ঐ নিনা, মীনাকে ঘরে ঢুকতে দেবোনা। আচ্ছা,গরম আরও পড়বে?
     
    মিঃ আউল – সেতো পড়বে , প্রতি বছরই তো পড়ে। এইসব ছাইপাশ কথা কবার জন্য তুমি চোখের জল ফেলছো? আমিতো অন্য কিছু ভাবছিলাম।
     
    মিসেস আউলি – তুমিও ভাবছিলে? কি অদ্ভুত মনের মিল আমাদের।একেই বলে রাজযোটক।এই গরমে সুস্থ থাকার জন্য একটা এসি লাগাতে হবে ঘরে। আমি আর কোনো কথা শুনবো না। এই হলো আমার ওয়ান পয়েন্ট অ্যাজেন্ডা। এই আবদার না মানলে আমি বুঝবো - ইউ ডোন্ট লভ মি।
     
    মিঃ আউল – আহা হা! করো কি? সামান্য একটা যন্তর, তার জন্য মনের ভেতর এতো যন্তনা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছো তুমি? আহা এসব কথা আগে বললেই তো হতো। তারজন্য এতো কথা, এতো ব্যথা? তুমি হলে গিয়ে আমার প্রাণের মানুষ,সোহাগী ব‌উ। তুমি দাবি করবে না তো কি ও পাড়ার পেঁচি এসে বায়না করবে?
     
    মিসেস আউলি – ( মিঃ আউলের এই পরিবর্তন দেখে খুব অবাক হয়ে বলে ) মা গো! একি শুনি! তুমি তো দেখছি আমার থেকেও বড়ো খেলুড়ে! পাছে আমি কথার প্যাঁচে জড়িয়ে ফেলি, তুমি তার আগেই আমায় একেবারে বোল্ড আউট করে দিলে? এসো আমার পাশে, এসে একেবারে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসো। একেবারে ফিলিম আটিস্টদের মতো করে। একেই বলে ওস্তাদের মার শেষ রাতে!
     
    ( দুজনে পিঠোপিঠি বসে । কেউ কোনো কথা বলে না। কেবল অনেক দূরে একাকী ডেকে চলা পাপিয়া পাখির পিউ কহা,পিউ কহা ডাক ভেসে আসে। আর‌ও খানিকটা সময় চুপচাপ বসে থাকে দুজনে। এক সময় নীরবতা ভেঙে মিঃ আউল প্রথম কথা বলে ওঠে …..)
     
    মিঃ আউল – পেঁচি ,ও আমার পেঁচি সুন্দরী! বলি, ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? একটা গান ধরো। এমন খুশির মুহুর্ততো সবসময় জীবনে আসে না। আজ আমাদের না জানিয়েই সে যখন আমাদের গুমরে থাকা মনের ভিড় ঠেলে ঢুকেই পড়েছে আমাদের মনের আঙিনায় তখন একটা উদযাপন হোক, আমাদের মতো করেই। ছেলেটা কাছে থাকলে আরও ভালো লাগতো। নাও শুরু করো।
     
    মিসেস আউলি – ঠিক বলেছো।উল্লুটা কাছে থাকলে আরও ভালো লাগতো। সেই গানটাই তাহলে গাই, আমাদের একসাথে পথচলার প্রথম রাতে যে গানটা গেয়েছিলাম ফুলশয্যার রাতে। গাইবো সেই গানটা ?
     
    মিঃ আউল – গাও । প্রতিদিনের প্যাঁচ প্যাঁচানির ঠেলায় তার কথা যে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। তোমার মনে আছে? গাও।
     
    মিসেস আউলি – 
    এই মোম জোছনায় অঙ্গ ডুবিয়ে 
    এসোনা গল্প করি।….
     
     
    গান চলতে থাকে।এক সময় তা থেমে যায় অনেকখানি রেশ ছড়িয়ে দিয়ে।
     
     
     
                                   যবনিকা   
     
     ** এই নাটিকাটির অভিনয়ের বিষয়ে কেউ আগ্রহী হলে নাটককারের অনুমতি বাঞ্ছনীয়। ধন্যবাদ।
     
     
     
     
     
     
     
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • নাটক | ২৩ মার্চ ২০২৫ | ১৭৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সৌমেন রায় | 2409:40e1:10b5:72b6:8000::***:*** | ২৪ মার্চ ২০২৫ ০৬:৪৪541869
  • বেশ রসালো। নির্ভেজাল আনন্দ।
  • #:+ | 2405:201:8000:b11b:3cfa:3049:469f:***:*** | ২৪ মার্চ ২০২৫ ১৯:৫২541882
  • খুব রসালো নাটক। মিসেস আউলিরা এখন প্রতিঘরেই আছেন। দাম্পত্য জীবনের সাফল্যের পেছনে কাজ করে সমঝোতা। এ নাটকে দুই চরিত্রের একজন অন্যজনের পরিপূরক। কেউ অভিনয়ের আয়োজন করলে জানাবেন। দেখতে যাবো।
  • পৌলমী | 2405:201:8000:b11b:3cfa:3049:469f:***:*** | ২৪ মার্চ ২০২৫ ২১:১৮541886
  • এতো "ঘর ঘরকি কহানি" ! স্বপন বাবুকে ধন্যবাদ নাটককারের কাছে ছড়াটা পাঠানোর জন্য। তারজন্য‌ই এমন মনোগ্রাহী রচনার স্বাদ উপভোগ করতে পারলাম। পড়তে গিয়ে খুব আনন্দ পেয়েছি। সত্যিই যদি কেউ এই নাটকের অভিনয় করেন জানাবেন।
  • দিয়ালী চট্টরাজ | 2409:40e1:3093:bd87:78a5:9733:3106:***:*** | ২৬ মার্চ ২০২৫ ১১:৪১541932
  • ভীষন উপভোগ্য।
  • Ritabrata Gupta | 117.199.***.*** | ৩০ মার্চ ২০২৫ ১৯:১০542003
  • হা হা হা ! দারুন লেখাটি দাদা ! আরো লিখুন এমন করে !
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন